What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

এই মহামারিতে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখা ইমানি দায়িত্ব (1 Viewer)

bJrtrR2.jpg


মানুষের প্রথম শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। ফেরেশতারা বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র! আপনি যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনোই জ্ঞান নেই; নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩২)। বিশ্বমানবতার শিক্ষক আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ওহির প্রথম নির্দেশ ছিল, ‘পড়ো তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন “আলাক” হতে। পড়ো, তোমার রব মহাসম্মানিত, যিনি শিক্ষাদান করেছেন লেখনীর মাধ্যমে। শিখিয়েছেন মানুষকে যা তারা জানত না।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১-৫)। ‘দয়াময় রহমান (আল্লাহ)! কোরআন শেখাবেন বলে মানব সৃষ্টি করলেন; তাকে বয়ান করা শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত ১-৪)।

ইতিবাচক আচরণ ও উন্নয়ন সাধনই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষার সঙ্গে যেসব বিষয় সরাসরি সম্পর্কিত: সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, সন্ত্রাস দমন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা। আচরণে (কর্মে) অভীষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধনের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তথ্য প্রদান বা জ্ঞান দান করাকে শিক্ষা বলে।

হজরত ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করলেন, ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদের মাঝে পাঠান এমন রাসুল, যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াত উপস্থাপন করবেন, কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী স্নেহশীল ও কৌশলী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৯)।

মানুষ সামাজিক জীব। পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রভাব সমাজজীবনে প্রকট। সমাজজীবনের প্রতিচ্ছায়া শিক্ষার্থীর মন, মানস ও শিক্ষাকে প্রভাবিত করে।

শিক্ষকদের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মানসিক যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। প্রশংসা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। এরূপ আচরণ করা যাবে না, যাতে তারা হতাশ হয়। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী রূপে গড়ে তুলতে হবে। সদুপদেশ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে হবে ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমার রব আমাকে শিক্ষা দান করেছেন, তা কত-না উত্তম শিক্ষা! আমার রব আমাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন, তা কত-না সুন্দর প্রশিক্ষণ!’

শিশুরা ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে পবিত্র আমানত। এর জন্য ইহকালে ও পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষা মনোবিজ্ঞান শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষককে অবশ্যই শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক আবেগ ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা ও পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

শিক্ষকতার সঙ্গে রবুবিয়াত তথা লালন-পালন বা প্রতিপালনের দায়িত্ব সম্পর্কিত। শিক্ষকতার সঙ্গে নবুয়ত তথা দেখাশোনা ও অভিভাবকত্বের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট। শিক্ষকতার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ও আত্মার আত্মীয়তা অন্তর্নিহিত। তাই কোভিড-১৯ করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন বন্ধ, অভিভাবকেরা যখন দিশেহারা; এমতাবস্থায় শিক্ষকদেরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। অভিভাবকদের যোগাযোগ রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের লেখাপড়াসহ সার্বিক খোঁজখবর নিতে হবে। অসুস্থ হলে পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর পরিবার আর্থিকভাবে অসুবিধায় থাকলে সাহায্য করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সিলেবাসের লেখাপড়া অনুশীলনের পাশাপাশি বিনোদনমূলক ও শরীর গঠনমূলক খেলাধুলা এবং সাহিত্য পাঠ ও ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়নে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে হবে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শ বা মডেল হিসেবে বিবেচিত হন। শিক্ষক মূলত গুরু। তাই শিক্ষার্থীরা যখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, তখন শিক্ষককে অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

শিক্ষকেরা শুধু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকই নন, তাঁরা প্রকৃত অর্থে পুরো সমাজ ও জাতির পথপ্রদর্শক। তাই এই সংকটকালে ছাত্র ও অভিভাবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া শিক্ষকদের প্রধান দায়িত্ব। শিক্ষকেরা বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণকে মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে, মাস্ক পরতে, অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, অভিভাবকেরা সন্তানদের প্রতি সচেতন ও যত্নশীল হতে কার্যকর উপদেশ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।

সর্বোপরি শিক্ষকতা শুধু শেখানোর জন্য নয়, বরং একজন আদর্শ শিক্ষক আজীবন শিক্ষার্থী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নিজেদের আত্ম উন্নয়ন অপরিহার্য। সেহেতু এই সুযোগে তাঁরা নিজেরাও বেশি বেশি পাঠে মনোযোগী হবেন, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট থাকবেন। কারণ, একজন দক্ষ শিক্ষকই পারেন একটি সমাজকে পরিবর্তন করতে ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে।

* মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top