What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other এ জে মিন্টু ‘মাস্টার মেকার’ ছিলেন-আছেন (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
H4OXUxd.jpg


উপমহাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক আমাদের জন্য তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীকে রেখে গিয়েছিলেন কিন্তু আমরা তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি, চিনতে পারেনি। লেখার সঙ্গে ব্যবহৃত পত্রিকার ক্লিপটি ১৯৯২ সালের সাপ্তাহিক চিত্রালীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের। ওই বছর ১৯৮৯, ৯০ ও ৯১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্রের পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৮৯ সালে এ জে মিন্টু প্রযোজিত ও পরিচালিত ‘সত্য মিথ্যা’ সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ একাধিক শাখায় পুরস্কার অর্জন করে, যার পরবর্তীতে বিশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আহমেদ জামান চৌধুরী সম্পাদিত বিখ্যাত সিনে পত্রিকাটি।

বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে কত রথী-মহারথী, কত মেধাবী মানুষদের একদিন আনাগোনা ছিল সে কথা আজ রূপকথার গল্পের মতো শোনায়। স্বাধীনতার পর এই দেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্ব ও উপমহাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সাথে খাপ খাইয়ে শক্তিশালী একটি ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন যারা সেই সব মেধাবী কীর্তিমান মানুষদের মধ্যে আব্দুল জলিল মিন্টু নামটি চিরকাল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লিখা থাকবে। সংক্ষেপে সবাই চিনতো ‘এ জে মিন্টু’ নামে এবং বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে ‘মাস্টারমেকার’ উপাধি অর্জন করেছিলেন।

FbgIFkz.jpg


কাজী হায়াত, মৌসুমী, ওমর সানী ও দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর সঙ্গে এ জে মিন্টু (নিচে/বাঁয়ে)

১৯৬৯ সালে আমজাদ হোসেনের সহকারী হিসেবে এ জে মিন্টু চলচ্চিত্রে যুক্ত হন। এরপর কাজ করেন ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে, যেখানে মিন্টু ছিলেন সহযোগী পরিচালক অর্থাৎ ঋত্বিক ঘটকের পরপরই ছিল তার অবস্থান। দেশ বরেণ্য চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন ও বিশ্ব বরেণ্য ঋত্বিক ঘটকের কাছ থেকে পাওয়া দীক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৭৮ সালে ‘মিন্টু আমার নাম’ ছবি দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আর এরপর শুধুই এগিয়ে গেছেন নিজের মেধা ও স্বকীয়তায়।

oIWsRJo.jpg


‘এ জে মিন্টু’ নামটির সাথে সেই ছোটবেলায় সপরিবারে সিনেমা হলে ছবি দেখাকালেই পরিচয় হয়। একটা সময় আমি বিশেষভাবে খেয়াল করলাম যে চলচ্চিত্রের পোস্টারে ‘এ জে মিন্টু’র নাম থাকে সেইছবিগুলো যেন একটু অন্যরকম। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ছবি কিন্তু তার মাঝেও ব্যতিক্রম। ছবিগুলোতে নেই অযাচিত ‘সিনেমাটিক’ কারিশমা, সবকিছু যেন বাস্তবের সাথে মিল রেখে গল্প বলা। প্রতিটি চরিত্র যেন সমাজের বসবাসরত একেকটি চরিত্র। আমার চিন্তাটির যথাযথ প্রমাণ পেলাম ১৯৮৭ সালে যখন দেখলাম শাবানা, জসিম, আজিম, আনোয়ারা, আহমেদ শরীফ অভিনীত ‘লালু মাস্তান’ ছবিটির জন্য এ জে মিন্টু সর্বপ্রথম শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করেন। অথচ সেই বছর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হয়েছিল ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’র মতো সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র এবং আরও ছিল সন্ধি, অপেক্ষা, সহযাত্রী, সারেন্ডার, স্বামী স্ত্রী, দায়ী কে’র মতো একাধিক দর্শক ও সমালোচক নন্দিত চলচ্চিত্র। এতো দারুণ দারুণ ছবির ভিড়ে এ জে মিন্টুর ‘লালু মাস্তান’ ছিল পিতৃহত্যার প্রতিশোধ ঘরানার গতানুগতিক গল্পের ছবি, আজকে যে ধরনের গানকে আমাদের নতুন ধারার পরিচালকরা আইটেম গান হিসেবে চালিয়ে দেন সেরকম আইটেম গানও ছিল। লালু মাস্তান ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্রের আর কোন শাখায় মনোনয়নও পায়নি। এমন মশালাদার ছবির জন্য মিন্টু শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন যাতে প্রমাণিত হয় মিন্টু কেমন ছিলেন! হ্যাঁ, এ জে মিন্টু এখানেই সবার চেয়ে আলাদা, একটি গতানুগতিক কাহিনীকেও তিনি জীবন ঘনিষ্ঠ ছবি হিসেবে নির্মাণ করে ফেলতে পারেন যা সবাই পারতো না।

D95UJYc.jpg


এরপর মিন্টু তিনবার শ্রেষ্ঠ পরিচালক (সত্য মিথ্যা, পিতা মাতা সন্তান ও বাংলার বধূ) ও দুইবার (সত্য মিথ্যা ও বাংলার বধূ) শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। চারবার শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও দুইবার শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়ে মিন্টু প্রমাণ করেন তিনি আসলেই বাণিজ্যিক ছবির ‘মাস্টারমেকার’।

উল্লেখ্য যে, তিনি যে চারবার শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছিলেন সেই চারবারের ‘শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র’ হিসেবে তার ছবিগুলো পুরস্কার পায়নি এবং পুরস্কার পাওয়া সবগুলো চলচ্চিত্র ছিল মিন্টুর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘সানফ্লাওয়ার মুভিজ’। আরও মজার ব্যাপার হলো ঐ চারটি ছবির সবগুলোতে ছিলেন শাবানা যার বিপরীতে একটি ছবিতে ছিলেন জসিম (লালু মাস্তান) ও বাকী তিনটিতে ছিলেন আলমগীর (সত্য মিথ্যা, পিতা মাতা সন্তান ও বাংলার বধূ)। কিন্তু একটি ছবির জন্য শাবানা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেননি বরং ‘পিতা মাতা সন্তান’ ছবির জন্য আলমগীর শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন।

V6BxG7e.jpg


কেমন ছিল এ জে মিন্টুর ছবিগুলো: এ জে মিন্টুর ছবিগুলোকে ‘অসাধারণ’, ‘দুর্দান্ত’ বলেই শেষ করা যাবে না। কেমন ছিল সেটা জানতে ও বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে। এ জে মিন্টুর ছবি মানে পর্দায় প্রতিটি দৃশ্য ধরে ধরে এগিয়ে যাওয়া হৃদয়ছোঁয়া কোন গল্পের ছবি। তার গল্প বলার ধরন খুবই সাদামাটা কিন্তু ব্যতিক্রম। সাদামাটা বললাম এই কারণে যে— সিনেমা হলে যাওয়া শিক্ষিত-অশিক্ষিত এবং সমালোচকসহ সবশ্রেণীর দর্শকদের কাছে ছিল বোধগম্য। এ জে মিন্টু গল্প বলায় খুব বেশি চতুরতা, জটিলতার আশ্রয় নিতেন না। প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা দৃশ্য, প্রতিটা চরিত্রের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে ধীরে ধীরে বিন্যাস করে গল্পটা বলতেন। ছবির প্রতিটা দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে মনোযোগ সহকারে দেখতে হবে, কারণ একটি দৃশ্য বাদ দিলে বুঝতে পারবেন না পরের দৃশটিতে কেন জটিলতার সৃষ্টি হলো। দৃশ্য পরম্পরায় সুত্র দিয়ে যেতেন মিন্টু এবং খেয়াল করলে দেখবেন ৭ নং দৃশ্য তিনি ২০ নং দৃশ্যর ঘটনার সুত্রপাতের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সবই যেন বাস্তবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সাথে আরেকটি ঘটনার মিল রেখে চলা ক্রমকে ক্যামেরায় ধারণ করে এনেছেন।

9JwM0ST.jpg


মিন্টু কত যত্ন করে প্রতিটি দৃশ্য তৈরি করতেন সেটার ছোট্ট দুটো উদাহরণ দেই ‘সত্য মিথ্যা’ ছবি থেকে। প্রায় চলচ্চিত্রে আমরা দেখতে পাই যে আনোয়ার হোসেন, গোলাম মুস্তাফা, শওকত আকবরের মতো প্রবীণ অভিনেতারা হুট করে হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে। অধিকাংশ পরিচালক একটি দৃশ্যই হার্ট অ্যাটাকে অভিনেতা-অভিনেত্রীকে মেরে ফেলেন কিন্তু ‘সত্য মিথ্যা’য় মিন্টু নায়িকা নূতনের বাবার চরিত্রে অভিনেতা গোলাম মুস্তাফাকে তিনবার হার্ট অ্যাটাক ঘটান এবং তৃতীয়বারে তাৎক্ষনিক মৃত্যু ঘটে। কারণ এ জে মিন্টু অন্য পরিচালকদের মতো এই ধরনের চিত্রগুলোকে চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে সিনেমাটিক ভাবে এক দৃশ্য না ঘটিয়ে বাস্তবের সাথে মিল রেখে ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন।

orA3wW8.jpg


প্রথমবার যখন মুস্তাফা হৃদরোগে আক্রান্ত হোন সেটা স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনার কারণবশত দুর্ঘটনা হিসেবে দেখান, দ্বিতীয়বার ডাক্তারকে দিয়ে দর্শকদের জানিয়ে দেন উনি এখন বিপদমুক্ত কিন্তু খুব সাবধানে থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যে যেন কোন দুশ্চিন্তায় না পড়েন এবং কোনভাবেই যেন উত্তেজিত না হোন। উত্তেজিত হলে ভবিষ্যতে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অর্থাৎ গোলাম মুস্তাফা তৃতীয়বার হৃদরোগে মারা যাবেন যেমনটা সচরাচর একাধিকবার হৃদরোগে আক্রান্তকারীদের বেলায় বাস্তবে ঘটে থাকে।

এ ছবির শেষ দিকের একটা দৃশ্য ছিল যেখানে বিষয়-সম্পত্তি নিজের নামে নেওয়ার জন্য রাজীব ও মিজু আহমেদ মিলে নূতন ও আলমগীর-শাবানার শিশুপুত্রটিকে অপহরণ করে। তাদের একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ৮-১০ তলার উপরে নিয়ে যায়। আলমগীর খবর পেয়ে সেখানে গেলেও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচতলার দিকে ছুটোছুটি করে ফিরে আসে। কিন্তু একবারও ভবনের উপরের দিকে তাকায়নি, যেখানে চিৎকার করলে উপর থেকে ফেলে দিবে বলে ভয় দেখিয়ে মিজু আহমেদ শিশুশিল্পীটিকে এক হাত ধরে ঝুলিয়ে রাখে।

FdGFhMx.jpg


ফিরে যাচ্ছে দেখে শিশুশিল্পীটি বাঁ পা দিয়ে গুঁতিয়ে ডান পা থেকে স্কুলের জুতোটি নিচের দিকে ফেলে ঠিক বাবা আলমগীরের সামনে। উপর থেকে জুতা পড়তে দেখে আলমগীর মোটরসাইকেলের লুকিং গ্লাসটি উপরে দিকে ঘুরিয়ে ঝুলন্ত ছেলেকে দেখতে পায় এবং বিষয়টি কাউকে বুঝতে না দিয়ে মটরসাইকেলটি নিয়ে চলে গিয়ে বিল্ডিংয়ের পেছন দিকে। … এই ধরনের দৃশ্যে অধিকাংশ পরিচালক সরাসরি নায়ককে মটরসাইকেল দিয়ে গ্লাস ভেঙে ভিলেনের আস্তানায় প্রবেশ করান, যা মিন্টু করাননি। এই দৃশ্যটাকেও মিন্টু বাস্তবের সাথে মিল রেখে একটু সময় নিয়ে দেখিয়েছেন। কারণ এটি চলচ্চিত্র কিন্তু বাস্তব জীবনের সাথে দর্শক মিল খুঁজে পাবে।

C32XjHj.jpg


এই এ জে মিন্টুর হাত ধরেই আমাদের চলচ্চিত্রে এসেছিলেন মালেক আফসারী, সোহানুর রহমান সোহান, শাহ আলম কিরণ, মনোয়ার খোকনের মতো সফল পরিচালকরা।

‘মাস্টারমেকার’র ছবিগুলো: মিন্টু আমার নাম, প্রতিজ্ঞা, বাঁধনহারা, চ্যালেঞ্জ, মান সম্মান, অন্যায়, অশান্তি, বিশ্বাসঘাতক, লালু মাস্তান, সত্য মিথ্যা, ন্যায় অন্যায়, পিতা মাতা সন্তান, বাংলার বধূ, প্রথম প্রেম ও বাপের টাকা।

zLwKNfL.jpg


‘মিন্টু আমার নাম’ ছবির দৃশ্য

অতি অল্প পরিসরে মিন্টুর ছবি নিয়ে আলাপ করা যায় না। আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করতে হবে যা পরবর্তী পোস্টগুলোতে জানাবো। আজ আপনাদের শুধু বাংলাদেশের মেধাবী ও গুণী মাস্টার মেকার এ জে মিন্টু সম্পর্কে দুটো কথা বলে গেলাম। তিনি আমাদের চলচ্চিত্রে ছিলেন-আছেন, একজনই— যার মতো আরেকজন পরিচালক এই ইন্ডাস্ট্রি আজো পায়নি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top