বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগেও পৃথিবীর বুকে এমন অনেক অজানা রহস্য রয়েছে যার রহস্য উন্মোচন করা আজও সম্ভব হয় নি। তেমনি একটি রহস্যময় স্থান হচ্ছে দ্যা লেক অফ নো রিটার্ন । ইন্টারনেটের কল্যানে আপনারা অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে এই স্থানটি সম্পর্কে কম আর বেশি জানেন। আজ আমরা একটা বিস্তারিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্থানটির রহস্য তুলে আনার চেষ্টা করবো।
দ্যা লেক অফ নো রিটার্ন
নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যায়গাটা কতটা ভয়ংকর। আপনাকে যদি বলা হয় এমন একটি লেক আছে যার কাছাকাছি গেলে আপনি আর জীবিত ফিরে আসতে পারবেন না তাহলে কি আপনি সেখানে যাবেন? যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না! আপনি কেনো, অনেক সাহসী বীরের পক্ষেও এই স্থানটিতে যাওয়ার সাহস হবে না। শুরুতে যারা না জেনে এই লেকটিতে গিয়েছিলো তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। কোনো এক অজানা কারণে এক লেকটির কাছাকাছি কেউ গেলেই সে আর ফিরে আসে না। ফিরে আসে না বললে আসলে ভুল হবে। সে অদৃশ্য হয়ে যায়। দূর থেকে তাকে আপনি দেখছেন। কিন্তু হঠাৎই দেখবেন সে আর নেই। আপনার চোখের সামনে থেকেই হারিয়ে যাবে।
এই লেকটি উত্তর মায়ানমারের এক ঘন জঙ্গলে অবস্থিত। রহস্যময় এই যায়গাটির কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই হৃদের খোঁজ পাওয়া যায়। সময়টা ছিল ১৯২৩ সালের দিকে। সে সময় এ অঞ্চলে একটি রাস্তা তৈরি হয়েছিল। তখনই এ হ্রদের খোঁজ মিলে। মিলিটারিরা এই লেক পার হয়ে যুদ্ধে যাবার সময় অদৃশ্য হয়ে যেত। তখন ক্ষুব দ্রুত এই লেকের অলৌকিক ক্ষমতার কথা ছড়িয়ে পড়ে। এই সব ভূতুড়ে ঘটনা প্রকাশিত হবার পর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে এই স্থান সম্পর্কে নানা কল্প কাহিনীও লোকমুখে প্রচলিত হতে থাকে। এই অঞ্চলের মানুষজন ভুলেও লেকটির ধারে কাছে যায়না। লেকটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
দ্যা লেক অফ নো রিটার্ন এর রহস্য কি?
আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই লেকের কোনো ছবি নাকি তোলা যায় না। তুললে সেই ছবি অস্পষ্ট হয়ে যায়। অনেকেই হেলিকপ্টারে করে ঘুরেও এই লেকটির কোনো স্পষ্ট ছবি তুলতে পারেন নি। অনেকে ধারনা করেন, পুরো অঞ্চলে রয়েছে অনাবিষ্কৃত কোন এক রশ্মি। যা সবসময় বিকিরিত হচ্ছে। তাই সেখানকার ছবি ফটো প্লেটে ধরা পড়ে না। কিন্তু আজব ব্যাপার হল যদি ছবিই তোলা না যায় তাহলে গুগলে এতো ছবি এলো কোত্থেকে? হতে পারে শুধুমাত্র কয়েকজনের ক্ষেত্রেই এরকমটি ঘটেছিল। অনেক অভিযাত্রী হেলিকপ্টারে করে এই স্থানটির উপর দিয়ে গিয়েছেন। তাদের মতে অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তারা শরিরে বিস্ময়কর শক্তি লাভ করেছিলেন।
এই লেকের আরেকটি রহস্যময় ব্যাপার হল এর ভূ-প্রকৃতি সম্পর্কে হেলিকপ্টার আরোহীদের দেওয়া নানা তথ্য। হেলিকাপ্টারে করে যারা এই লেকটি ঘুরে এসেছেন তাদের কারও সাথে কারো তথ্য মিলেনা। ধারনা করা হয়, এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি অদ্ভুদভাবে সব সময় পাল্টাটে থাকে। যার ফলে এটি সত্যিই কি একটি হ্রদ, নাকি কোন জলাভুমি, না শুধু জঙ্গলে ঢাকা একখণ্ড জমি তা সঠিকভাবে জানা যায়না।
ভয় আরও বেড়ে যাবে যখন শুনবেন নীরব-নীস্তব্ধ এই স্থানটি থেকে গভীর রাতে মানুষের দুর্বোধ্য আওয়াজ ভেসে আসার কথা। স্থানীয় মায়ানমার ও ভারতীয় গ্রামের অধিবাসীরা প্রায়ই এমনটি শুনে থাকেন। তাদের মতে, যেকোনো বড় জনবসতির দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক শোরগোলের মতই শোনা যায় সে শব্দ।
রহস্যময় এই লেক অঞ্চল থেকে কেউ ফিরে আসতে পারে না বলেই এর নাম দেয়া হয়েছে “দ্যা লেক অফ নো রিটার্ন”। দেখা যাক বিশ্বের অন্যসব রহস্যের মতো এই রহস্যও অমীমাংসিতই থাকে নাকি মীমাংসিত হয়। আমরা অপেক্ষায় থাকবো।
আজ এই পর্যন্তই, সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন উইকিপিডিয়া থেকে।