করোনা মহামারির মধ্যেই ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালগুলোয় এখন যে বাবা-মায়েরা শিশুদের জ্বর নিয়ে আসছেন, তাদের বড় অংশের ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করছে।
ডেঙ্গুর জটিলতা
কোভিড-১৯-এর মতো ডেঙ্গুও একধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। তবে করোনাভাইরাস সরাসরি শ্বাসনালি দিয়ে মানুষের শরীরে ঢোকে। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করে এডিস মশার কামড়ে। বর্ষাকাল এই মশার ডিম পাড়ার মৌসুম। বাসাবাড়ি বা অন্য কোথাও জমে থাকা পানিতে বংশ বিস্তার করে এরা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরের রক্তনালিগুলোয় প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে রক্তনালি থেকে রক্তের জলীয় অংশ (প্লাজমা) বের হয়ে আসে। এতে রক্তচাপ কমে যায়। একপর্যায়ে মস্তিষ্কসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোয় রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেনের তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়। একই সঙ্গে রক্তের প্লাটিলেট ভাঙতে শুরু করে। প্লাটিলেটের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর উপসর্গ দেখা দিতে ৫ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে।
উপসর্গ
ডেঙ্গুর উপসর্গগুলোকে মোটামুটি তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়।
● প্রথম পর্বে শিশুর বেশ উচ্চ মাত্রার জ্বর হয়। একই সঙ্গে মাথাসহ সারা শরীরে ব্যথা, শরীরে র্যাশ, বমিভাব বা বমি, চুলকানি, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি দেখা দেয়। এ সময় কারও কারও নাক বা দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত আসতে পারে। এ ধাপ সাধারণত ২-৭ দিন পর্যন্ত থাকে।
● দ্বিতীয় পর্বের নাম সংকটপূর্ণ ধাপ। জ্বর কমে যাওয়ার পরপরই শুরু হওয়া এ ধাপে শিশুর তিনটি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে:
১. রক্তচাপ আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করে। ২. শিশুর রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় ত্বকের নিচে রক্ত জমে যায়। এমনকি পায়খানা ও বমির সঙ্গে রক্ত যেতে থাকে। ৩. রক্তনালি থেকে বেরিয়ে আসা জলীয় ফুসফুসের চারপাশে, পেটের মধ্যে জমে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
● তৃতীয় পর্বের নাম পুনরুদ্ধার ধাপ। সংকটপূর্ণ ধাপ ভালোভাবে পার হওয়ার পর এ ধাপে আক্রান্ত শিশু ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে।
করণীয়
● জ্বর হলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে।
● জ্বর কমাতে প্রয়োজনীয় মাত্রার প্যারাসিটামল দিতে হবে।
● তরল খাবার, যেমন পানি, শরবত, ডাবের পানি একটু বেশি দিতে হবে। তবে সবচেয়ে জরুরি আক্রান্ত শিশুকে প্রতিদিন ১-২ প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো।
● খাবার বরাবরের মতোই দিতে হবে। তবে জোরাজুরি করা চলবে না। শিশুকে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিম, ডাল, মাছ, মাংস এবং ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কমলালেবু বা মাল্টার রস একটু বেশি দিন।
● শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
● উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
● মশার বংশবিস্তার রোধে আর শিশুকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করতে হবে।
* অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা, বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল