What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected তালাক (Divorce) (1 Viewer)

Able31

Community Team
Elite Leader
Joined
Sep 21, 2021
Threads
25
Messages
5,639
Credits
31,893
Automobile
Mosque
Audio speakers
Watermelon
Thermometer
Pistol
গল্প: তালাক
লেখক: ওমর ফারুক শ্রাবণ


-এক তালাক, দুই তালাক..
কবির মিয়া তৃতীয় শব্দটি উচ্চারণ করার আগে রূপা পা জড়িয়ে ধরে বলল, "আল্লাহর দোহাই, এমন কাম কইরেন না। এইবারের মতন মাফ দেন আমারে।"
কবির দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করছে। কিছুক্ষণ দাঁতের সাথে দাঁতের অদ্ভুত ঘর্ষন দিলো। যেন রেললাইনের উপর দিয়ে রেলগাড়ীর লোহার চাকার ঘর্ষন চলছে। চোখ কোঠর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম। হাত মুটোবন্দী করে পা ঝাড়া দিয়ে রূপাকে একপাশে সরিয়ে ছুটল ধান ক্ষেতের দিকে। রূপা পেছন থেকে একবার বলল, "ভাত হইলে চাইরডা খাইয়া যান।"
কবির ভ্রুক্ষেপ না করে দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছে। তার রাগ এখনো কমেনি। মনে মনে খিস্তি দিয়ে যাচ্ছে রূপাকে। আজকেই তালাক দেয়ার দরকার ছিল। দিনরাত পরিশ্রম করে বাড়ি গিয়ে যদি ভাতই খেতে না পারে তাহলে এমন বউ রাখার চেয়ে না রাখাই ভালো।
রূপার চোখ ভর্তি পানি। মাথায় দেয়ার কাপড়ের আঁচল কাঁধে পড়ে আছে। এমতাবস্থায় যদি তার স্বামী দেখে তবুও ধরে মারধোর করবে। মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে অকথ্য ভাষা। "নাংরে দেখাইতে মাথার কাপড় ফালাইছোস?" রূপা তবুও মাথায় কাপড় দিচ্ছে না। চূলায় লাকড়ি ঠেলে যাচ্ছে। মানুষটা না খেয়েই চলে গেল। অল্পের জন্য তালাক থেকে বেঁচে গেছে আজ। রূপা জানে, যুগ পালটে গেছে। এখন মুখের কথায় তালাক হয় না। তবুও, মুখে দিতে পারলে কাগজ পাঠানো তেমন ব্যাপার না। রূপা চায় না তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিক। সে আর বাবার বাড়ি ফিরতে চায় না। মেঘনার ঐ পাড়ে আর যেতে চায় না।
মিদুল নদীর পাড়ে নৌকা কাত করে আলকাতরা মাখাচ্ছে। কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে থাকলে পঁচন ধরে। আলকাতরা সেই পঁচন রোধ করে। মেঘনা থেকে যে শাখা নদীটি নলবাটা হয়ে পূর্বদিকে বয়ে গেল, মিদুল সেই নদীর খেয়া পাড়ের মাঝি। পুরোনো নৌকায় দুই তিনটা নতুন কাঠ জুড়ে দিয়ে এবারের মতো সেরে নিলো মিদুল। খরচ কম হবে বলেও হাজার দেড়েক টাকা চলে গেল। মিদুলের মা মারা যাবার আগে প্রায়ই বলতো, "বাপরে, ঘরের কাম, নাও এর কাম আর বিয়া শাদির কামে খরচা যতই কমের চিন্তা করিস, চোখের পলকে খরচা হইয়া যায়।"
মিদুল তার মা'কে প্রচণ্ড ভালোবাসত। মায়ের কথাতেই মিদুল বিয়ে করবে না বলেও শেষ পর্যন্ত শারমিনকে ঘরে তুলে আনলো। নয়তো রূপার বিয়ে হয়ে যাবার পর মিদুল এক প্রকার প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছিল, "এই জীবনে আর বিয়াই করবো না।"
রূপার বাবা সুরুজ মুন্সি মিদুলকে দেখে পথ পরিবর্তন করে ফেলেছে মনে হচ্ছে। মিদুল এই মাত্র দেখলো সুরুজ মুন্সি নৌকা থেকে নামলো। এখনই আবার উধাও, কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এমনটা আজ প্রথম নয়। রূপার বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে মিদুলকে দেখলেই তিনি নিজেকে আড়াল করতে চান। নিজের ছেলে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে সুরুজ মুন্সি এক প্রকার অসহায়। তাঁর কোনো মতামতের মূল্য নেই স্ত্রী সন্তানের কাছে। বৃদ্ধ হলে মানুষের মূল্য সত্যিই কমতে থাকে। সুরুজ মুন্সিও এখন বৃদ্ধ। জোর গলায় কথা বলতে গেলেও পারে না।
মিদুল আবারও আলকাতরা লাগাচ্ছে। হঠাৎ রূপার কথা মনে পড়ছে। রূপার বাবাকে এক পলক দেখার কারণেই মনে পড়ে গেল। মিদুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, চোয়াল শক্ত করে নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে। "ঘরে এখন বউ আছে। পুরোনো প্রেমিকার কথা ভেবে সময় ও মন খারাপ করার কোনো মানে হয় না।
কবির মিয়া বাড়ি ফিরলো রাত বারোটার পরে। দুপুরে ভাত না খেয়ে রাগ করে বেরিয়ে পড়েছিল ধান ক্ষেতের দিকে। ক্ষেতের আইলে বসে সেচের পানি যাওয়ার ড্রেণ থেকে হাত মুখ ধুয়ে নিলো। হাত ধোয়ার অজুহাতে কৌশলে হাত দিয়ে ড্রেণের তলা থেকে কাঁদা মাটি কিছুটা সরিয়ে দিলো। এতে করে নিজের ক্ষেতেও পানি যাবে। আলাদা করে আর টাকার চিন্তা করতে হবে না। সেখান থেকে গঞ্জে গিয়ে ডিম ভুনা দিয়ে গরম গরম ভাত খেয়ে হাত ধোয়ার সময় পাশের এলাকার মনসুরের সাথে দেখা। মনসুর জানালো উজানচরে যাত্রাপালা হবে। কবির মিয়া গঞ্জ থেকেই নৌকায় উঠলো। তিন ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যা লগনে পৌঁছল উজানচরে। যাত্রাপালায় নাটক মঞ্চায়িত হলো। নাটকের নাম 'কাশেম মালার প্রেম'। নাটকের ফাঁকে ফাঁকে চলে সুন্দরী মেয়ে মানুষের কোমড় দুলানো নাচ। কবির মিয়ার ঠোঁটের কোণ বেয়ে পানের রস পড়ে। গামছা দিয়ে মুছে আবারো তাকায় সামনের রমনীর দিকে।
যাত্রাপালা শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখে রূপা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। কুপি তখনো নিভু নিভু জ্বলছে। কবির মিয়া এখনো রাগ দেখাতে পারতো। কুপির তেল কি গাঙ্গের পানির মতো এমনি পাওয়া যায়? না-কি টাকা লাগে কিনতে। এভাবে কুপি জ্বালিয়ে বসে থাকার তো কোনো মানে হয় না। কিন্তু কবির মিয়া রাগ করেনি। ঘরের বউ না খেয়ে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। এখন আর যাই হোক রাগ দেখানো সাজে না। একসাথে বসে খাবার খাওয়ার সময়ও তেমন কথা হয়নি দু'জনের মধ্যে। খাওয়া শেষে কুপি'টা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিলো কবির মিয়া। তারপর ফিসফিস করে বলল, "বউ এদিক আয় তোরে আদর দেই। উজানচরে গেছিলাম, কবিরাজরে পাই নাই। এইবার আমগো একটা বাচ্চা হইবোই দেখিস।"
রূপা নিজের শরীর সপে দেয় কবির মিয়ার কাছে। পুরুষ মানুষ রাত হলে বেশ বাহানা বানাতে পারে। দিনের আলো আর রাতের অন্ধকারে যেমন প্রার্থক্য। তেমনি দিনের মানুষটা আর রাতের মানুষটার মধ্যেও অনেক প্রার্থক্য থাকে। রূপা দাঁতে দাঁত চেপে রাখে। দুই বছর ধরে তার কোনো সন্তানাদি হয় না। কবির মিয়ার আগের বউয়েরও কোনো সন্তানাদি হয়নি। প্রথম বউ নিজেই চলে গিয়েছিল। কিছু কিছু পুরুষ মানুষ বাইরে ভেজা বেড়াল হলেও নিজের ঘরের বউয়ের সাথে বাঘের মতো গর্জন দিতে ভুলে না। প্রথম বউ চলে যাবার পর কবির মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে রূপাকে। এখনো কোনো সন্তানাদি হয়নি।
শারমিন কাঁথা সেলাই করছিল। বিয়ের দুই মাসও শেষ হয়নি। বলতে গেলে শারমিন এখনো লজ্জায় মিদুলের দিকে তাকাতে পারে না। সারাদিন ঘাটে থাকলেও রাত হলে মানুষটা বাড়ি ফিরে। কুপি মুখের সামনে ধরে মিদুল রোজ নিয়ম করে একই কথা বলে, "আমার বউডা কত্ত সুন্দর। সারাডা দিন আমারে ছাড়া কেম্নে থাকলো বউডা?"
শারমিন তখন লজ্জা পেয়ে মাথা আরো নিচু করে ফেলবে। মিদুল ফুঁ দিয়ে কুপিটা নিভিয়ে দিবে।
কিন্তু সারাটা দিন শারমিনের একা একা থাকতে হয় ঘরে। তাই শাশুড়ির পুরাতন কাপড় জুড়ে দিয়ে কাঁথা সেলাই করছে শারমিন। ওর মা আর শাশুড়ি ছোটোবেলার দুই সঁই। শারমিনের মা যখন তাকে প্রথমদিন বলেছিল, "মা'রে তোর বিয়া কইলাম ঠিক করছি। আমার সঁইয়ের পোলার লগে।" শারমিন সেদিন একবারও জানতে চায়নি ছেলে দেখতে কেমন? কী করে? মায়ের এক কথায় বউ হয়ে এসেছে এই বাড়িতে। বিয়ের পনেরো দিন পরই শাশুড়ি মারা গেল। মিদুল সেই শোক কাটিয়ে উঠেছে।
কবির মিয়া রূপার চুলের মুঠি ধরে উঠানে ফেলল। পা দিয়ে লাথি দেবার সময় বলছে, "আমার টেহা পইসার অভাব আছেনি? বিয়া দরকার অয় আরো চাইরডা করমু। তোরে তালাক দিমু। এক তালাক, দুই তালাক.."
রূপা আজ আর বাঁধা দেয়নি। এতোদিনে বুঝে ফেলেছে, এই মানুষটার সাথে আর সংসার করা যাবে না। সৎ মায়ের সংসারে ফেরার কোনো ইচ্ছে নেই বলেই রূপা এতোদিন মুখ বুজে সহ্য করেছিল। কিন্তু আর না। দরকার হয় গলায় কলস বেঁধে মেঘনায় ডুবে মরবে। তবুও এমন লোকের সাথে আর সংসার করা যায় না। তিন তালাক দেবার সময় রূপা এক কাপড়ে উঠান পেরিয়ে বের হচ্ছে। মাথায় দেয়ার কাপড়ের আঁচল উঠানের মাটিতে লুটিয়ে যাচ্ছে। আজ আর আঁচল ফেলে দেয়ার জন্য গালি খেতে হবে না। রূপা জানে না সে কোথায় যাবে। এপারে কিছুতেই থাকবে না সে। মেঘনার ওপারেও বাবার বাড়ি। বিকেল পেরিয়ে যাচ্ছে। রাত গভীর হলে হয়তো মেঘনায় ডুব দেয়া যেত। দিনের বেলা নদীর চারপাশে মানুষ। চাইলেই ডুবে যাওয়া যায় না। মানুষ জনমভর মানুষের সান্নিধ্যে থাকলেও মরতে চায় একা। সম্পূর্ণ একা, যেন কেউ না দেখে।
রূপা নৌকায় উঠল। মেঘনার ঐ পাড়ে যাবে। দরকার হয় বাবার বাড়ি না যাবে। রাত হলে কিছু একটা করা যাবে। তখন আর কেউ দেখবে না। নৌকায় উঠেও ভাবছে, তার কাছে নৌকা ভাড়া নেই। মরার আগেও বাকি রেখে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? গ্রাম বাংলায় একটা কথা প্রচলিত, "নাকফুল হারাইলে জামাইর অমঙ্গল হয়।" রূপা নাকফুলটা খুলে হাতে নিলো। নৌকার মাঝিকে দিতে হবে। তার কাছে ভাড়া নেই। সে নাকফুল হারায়নি। আর এমন জামাইর মঙ্গল অমঙ্গল দিয়ে আর কী হবে? রূপা শুধু বলেছিল, "আম্নের আগের বউয়েরও পোলা মাইয়া হয় নাই। কবিরাজের কাছে না গিয়া সদরের বড়ো ডাক্তার দেহাইলে তো পারেন।" অমনি কবির মিয়া রেগে গিয়ে রূপার চুলের মুঠি ধরে বাইরে এনে তালাক দিয়ে দিলো। কাগজ হয়তো বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। রূপা কাগজের চিন্তা আর করেনি। যেহেতু বাবার বাড়ি যাবার কোনো ইচ্ছে মনের ভিতর নেই, সেহেতু কাগজের চিন্তা বাদ। যেখানে সংসারই টিকলো না, সেখানে কাগজে কী আসে যায়?
সূর্য ডুবেছে ঘন্টাখানেক হলো। ঝিঁঝি পোকা সুর করে গান তুলেছে। নদীর কিনারায় খানিক বাদে ঢেউ আছড়ে পড়ে। মিদুল এখনো বাড়ি ফিরেনি। রাত করে কেউ তেমন একটা নদী পেরুতে আসে না। খুব দরকার হলে ছোটো গঞ্জের উপর দিয়ে পুল পেরিয়ে যায়। মিদুল নৌকায় বসে পা দু'খানা পানিতে মেলে বসে আছে। পানিতে চাঁদের আলো। ভরা জ্যোৎস্না আজ। কেউ এখন ঘুম থেকে উঠলে দিন না রাত সেটা বুঝতে বেশ সময় লাগবে। মিদুলের হঠাৎ চোখ গেল অদূরে শুয়ে থাকা আম গাছটির দিকে। এক নারী তার আঁচল আমগাছের ডাল ডিঙানোর চেষ্টা করছে। এই নারী কি ফাঁস লাগাবে না-কি গলায়? মিদুল বুঝে উঠতে পারে না। নৌকা ছেড়ে মিদুল এগিয়ে গেল। সেই নারী কাউকে আসতে দেখে আঁচল নামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। রূপার চিনতে কষ্ট হয়নি। যে লোকটি নৌকা ছেড়ে এগিয়ে আসছে, সে মিদুল। কতগুলো দিন পেরিয়ে গেল মিদুলকে দেখা হয়নি। নদীর পাড়ের দুর্বা ঘাসে বসে কত সন্ধ্যা কাটানো হয় না আর। মিদুল এগিয়ে এসেও দাঁড়িয়ে গেল। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে, রূপা এখানে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে এসেছে। মিদুল আলগোছে জানতে চাইলো, "ক্যান রূপা? বড়ো গেরস্তের ঘরে বিয়ে হবার পরও ক্যান ফাঁস লাগাইতে হইবো?"
-বড়ো ঘর থাকলেই সুখ পাওন যায় মাঝি?
-তাই বইলা বাপের বাড়ি না গিয়া মরতে আইছিলা?
-যেই বাপের বাড়ি তোমারে পর করলো, আজ আমি সংসার হারা, সেই বাপের বাড়ি যাওনের চাইতে মরা ভালো।
মিদুল আর রূপা গাছের শিকড়ে বসে আছে। দু'জনই নীরবতাকে বড্ড আপন করে নিয়েছে। দূরে শিয়ালেরা দলবেঁধে ডাকছে। মিদুল ভাবছে এখন কী করবে? রূপাকে রেখে গেলে সে নিশ্চিত একটি অঘটন ঘটাবে। বাড়িতে শারমিন নিশ্চয় কুপির আলোতে সাজতে বসেছে। রাত করে রূপাকে নিয়ে বাড়ি উঠলে মেয়েটা কষ্ট পাবে। শেষ অবধি ভেবে ঠিক করলো, শারমিনকে পরে হয়তো বুঝিয়ে বলা যাবে। কিন্তু রূপার এখানে একা থাকা ঠিক হবে না।
-কালকে শুনমু তোমার কাহিনী, এহন আমার বাড়ি আসো।
-বউ হইয়া তোমার বাড়ি যাইতে পারি নাই। এহন কোন মুখে, কী পরিচয়ে যামু?
-পরিচয় হইলো তুমিও মানুষ আমিও মানুষ। আগে উঠো, সাপ গোপের আস্তানা এই গাছের গোঁড়ায়।
মিদুল আগে আগে গেলেও পেছন ফিরে দেখে রূপা পেছনে আছে কি-না। মিনিট পাঁচেক হাঁটলে মিদুলের ঘর। যে ঘরে শারমিন কুপির আলোতে সাজতে বসেছে।

#প্রথম পর্ব
 

Users who are viewing this thread

Back
Top