মানুষ যতই বেশি প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে, ততই যেন ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপের আধিপত্যে বদলে যেতে শুরু করেছে পারস্পরিক ভাব প্রকাশের ভাষা এবং আবেগ। আবার গ্যাজেটনির্ভর জীবনে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সময়ও যেন কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এমন কমিউনিকেশন গ্যাপে নড়বড়ে হয়ে উঠছে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক। তাই কখনো কখনো প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে আপনজনের সঙ্গে একান্তে কিছুটা সময় কাটাতেই পারেন। আমাদের যাপিত জীবনের বড় একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া আর স্যাটেলাইট। এগুলো আমাদের দাপ্তরিক কাজে গতি বাড়ালেও ব্যক্তিজীবনের গতি কমিয়েছে অনেকটাই।
এ জন্য প্রয়োজন কিছুটা সতর্কতা এবং ইচ্ছা।
* প্রযুক্তি ছাড়া আজকাল আমাদের জীবন অনেকটাই অচল। এমনকি অফিস, পড়ালেখা বা বাসার অনেক কাজেই এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে প্রযুক্তি যেন সেই কাজ জগৎ পেরিয়ে আমাদের আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে না পড়ে। গ্যাজেটের ভারে সম্পর্কগুলো যেন আড়াল না হয়ে যায়।
* অফিস থেকে বাসায় ফিরে যদি আবারও বুঁদ হয়ে পড়েন গ্যাজেটে তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা একাকিত্ব বোধ করতেই পারে। তাই অফিসের কাজ বাসায় না নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অফিসের কাজ বাসায় না নেওয়াটাই শ্রেয়
* একটা সময় অনেক যুগলই চোখে পড়ত, যারা মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়াত এখানে সেখানে। কিন্তু আজকাল এমন দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। আবার এমনও দেখা যায়, পাশাপাশি বসে নিঃশব্দে দুজনেই তাকিয়ে আছে যার যার গ্যাজেটে। হয়তো চ্যাট করছে দূরের কোনো বন্ধুর সঙ্গে। এমন ক্ষেত্রে বলা যায়, যন্ত্রের চাপে কোথাও স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে দুজনার কথাবার্তা, প্রেমালাপ।
* একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমরা না চাইলেও অভ্যাসের বশে হাত চলে যাচ্ছে ফোনের দিকে এবং নিজের অজান্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনবরত স্ক্রল করে চলছেন। এতে একে অন্যের প্রতি আকর্ষণও হারাচ্ছে।
* ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সময়ে, গ্যাজেটগুলো নাগালের বাইরে রাখুন। প্রিয়জনের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ কমিয়ে দিন। যতটা সম্ভব সরাসরি বা সমনাসামনি কথা বলার চেষ্টা করুন। বাড়িতে কোনো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলে। সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে সমাধান করুন। এমনকি কোনোভাবেই মোবাইল চ্যাটে ঝগড়াও করবেন না। এতে দূরত্ব আরও বাড়বে।
পারিবারিক সময়ে, গ্যাজেটগুলো নাগালের বাইরে রাখা উচিত
* সাধারণত কর্মজীবী দম্পতি যাঁরা সারা দিনের কাজ শেষে রাতে কিছুটা অবসর পান। কিন্তু রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত গ্যাজেটে ব্যস্ত থাকলে সেই অবসরটুকুও কাজে লাগে না। এ সময়টুকু অন্তত চেষ্টা করুন প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখতে।
* মনে রাখবেন, যোগাযোগ সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলেও কিছু কিছু সম্পর্কে আবেগ, স্পর্শ বা সরাসরি অনুভূতি প্রকাশের ওপর নির্ভর করে। তাই সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে মাঝেমধ্যে দূরত্ব বাড়ানো উচিত।