What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other ঢাকাই চলচ্চিত্র : হিট ছবির ফর্মুলা (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,016
Credits
220,387
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
757YceQ.jpg


দৃশ্যপট-১:

একবার এক প্রবীণ চলচ্চিত্র পরিচালক এসে আমাকে বললেন-
– আপনি ‘পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ লিখছেন না? জমজমাট ছিল ছবিটা। আমারে একটা স্ক্রিপ্ট লেইখ্যা দেন। সাইমনের ডেট পাইছি। ওরে নিয়া ‘রকোস্টার’ করবো।
– রকোস্টার মানে?

– ওই যে বোম্বের ছবি। দেখেন নাই? রনোবীর কাপুরের !
– ওহ ! রকস্টার???? রানবীর কাপুর?
– জ্বি!
– সাইমনকে কেন রকস্টার করতে হবে? আমি মৌলিক গল্প দিচ্ছি।
– ধুর। মৌলিক গল্প আমগো এইখানে খায় না।

দৃশ্যপট-২:

আরেকবার এক আলোচিত পরিচালক এসে খুব করে অনুরোধ করলেন-
– ভাই, তিনদিনের মধ্যে মুন্নাভাই এমবিবিএস লিখ্যা দেন।
– মানে? রাজকুমার হিরানীর হিন্দি ছবি মুন্নাভাই এমবিবিএস??? ওই ছবি আমাকে নকল করতে হবে?
– আরে মিয়া। আপনে আপনার মত করবেন। বাপ্পীর ডেইট পাইছি। আগামী মাসে শুটিং করমু
– আমি নকল ছবি লিখতে পারবো না। আমার কাছে ১৫টার মত মৌলিক গল্প আছে। শোনেন…
– থামেন। এইতান মৌলিক-ফৌলিক দিয়া হইতো না।

দৃশ্যপট-৩:

হতাশ হয়ে একদিন বসে আছি। এক পরিচালক নক করলেন ফেসবুকে, ইনবক্সে:
– দুই দিনের মধ্যে একটা গল্পের লাইন আপ দিতে পারবেন? গল্প আমি দিচ্ছি।
– আপনি দেবেন? আমার কাছে তো গল্প আছে।
– নাহ। আমি দিচ্ছি। ইশাকজাদে দেখছেন?
– হুম।
– শুদ্ধ দেশি রোমান্স?
– হুম। শুধ্ দেসি রোমান্স দেখেছি।
– ওই দুই ছবি ঘুটা দ্যান।
– ঘুটা দেবো মানে?
– মানে ওই দুই ছবি মিলে যা করা যায়, করেন!
– শুধ্ দেসি রোমান্স তো লিভ টুগেদার নিয়ে। আপনি ওসব দেখাতে পারবেন?
– না না। ওসব বাদ দিয়ে।
– ওসব বাদ দিয়ে ঐ গল্পের কিছুই থাকে না।
– ধুর মিয়া।

নকলের ঘোরাটপে আমি বন্দী হতে পারিনি। তাই চলচ্চিত্রে আমি বেকার। ‘বেকার’ শব্দটি অবশ্য আজ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অনেকের জন্যই প্রযোজ্য। আমরা পাশের দেশ থেকে বিনা অনুমতিতে গল্প চুরি করতে পারি, ঐশ্বরিয়ার ‘কাজরা রে’ থেকে ক্যাটরিনার ‘শিলা কি জাওয়ানি’র কস্টিউম নকল করতে পারি, কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে সত্যি সত্যিই অনুসরণ প্রয়োজন, সেসব আমরা সুনিপুণভাবে এড়িয়ে যাই। সম্প্র্রতি পুনরায় ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। নিশ্চয়ই এই আয়োজনের মাধ্যমে নতুন আরো অনেক প্রতিভার সাথে আমরা পরিচিত হবো। কিন্তু শঙ্কাটা এখানেই: যাদের সাথে পরিচিত হবো, তাদের আসলে ভবিষ্যত কি? এ মুহূর্তে যারা আমাদের চলচ্চিত্র পরিবারের অংশ, তাদের ‘বর্তমান’ তো শোচনীয়। নতুন সদস্যদের আমরা মেধা প্রস্ফুটিত করার জায়গা দিতে পারবো তো?

আমরা কথায় কথায় মুম্বাইয়ের ছবির উদাহরণ টানি। অথচ ভুলে যাই সেখানে বিগত ৩০ বছর ধরে তিন খান যেমন রাজত্ব করছে, পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চনও কিন্তু ফুরিয়ে যাননি। তিন খানের পরে এসে (কিংবা কাছাকাছি সময়) অজয় দেবগন, অক্ষয় কুমার, হৃতিক রোশান, রানবীর কাপুর, রানবীর সিং, বরুণ ধাওয়ানরাও কিন্তু পায়ের নিচে নিজেদের মাটি শক্ত করে বলিউডের ঊর্বর জমিতে আরো অনেক সাফল্য রোপণ করছে। এক সময় টানা ১৪টি ফ্লপ ছবির নায়ক অক্ষয় কুমার তো তিন খানকে ছাড়িয়ে এ মুহূর্তে বলিউডের সবচাইতে সম্পদশালী তারকার খেতাবও অর্জন করেছে (‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী)। আমরা কেন শাকিব খানের পর আরেকজন সুপারস্টার তৈরি করতে পারছি না? বাংলাদেশে একজন নায়ক সফল হবার জন্য যে যে উপাদান অত্যাবশকীয় তার প্রায় সব-ই শাকিব খানের আছে, কিন্তু তাই বলে অন্য আর একজন নায়কেরও সে মেধা নেই, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? আমি অন্তত তা মানি না। আমরা খুব সহজেই বলে দেই, অমুক ফ্লপ। অমুকের ছবি চলে না। অমুক ‘অপয়া’, পোস্টারে রাখলে ছবি চলবে না। কিন্তু সেই ‘অমুক’ দের কি আমরা দুর্দান্ত গল্প ও চরিত্র দিয়েছি? একজন গুণী নির্মাতা কি দরদ দিয়ে তাকে পরিচালনা করেছেন? তাদের সেই ছবিগুলো কি দুর্দান্ত প্রচারণার মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে? আমি বছরের পর বছর প্রায় প্রতিটি বাংলা ছবি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখছি। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমরা নতুন আরেকজন তারকা তৈরির ব্যাপারে খুব বেশি সময় খরচ করছি না। শাকিব খানের স্থান কেউ নিতে পারবেন না। কিন্তু একজন আরিফিন শুভ তো বক্স অফিস রাজত্ব করতেই পারেন। ইমন, বাপ্পী, সাইমন, জায়েদ খানরা যথাযথ সুযোগ পেলে কিছু করতে পারবেন না? আমি তো ইমনকে ‘গহীনে শব্দ’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘পদ্ম পাতার জল’, সাইমনকে ‘ পোড়া মন’, বাপ্পীকে ‘সুইট হার্ট’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, জায়েদ খানকে ‘অন্তর জ্বালা’ ছবিতে সু অভিনয় করতে দেখেছি। বলিউডে অর্জুন রামপালরা যদি র্যাম্প থেকে এসে যদি জাতীয় পুরস্কার পেতে পারেন, ইমন সুযোগ পেলে পারবেন না? নায়কোচিত কণ্ঠ না থাকার পরও সাইফ আলী খান যদি জাতীয় পুরস্কার থেকে অন্যতম জনপ্রিয় নায়কের আসনে স্থায়ী হতে পারেন, বাপ্পী-সাইমন-জায়েদ খানরাও সুযোগ পেলে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি সুযোগ পেলে রোশান, এবিএম সুমন, সাঞ্জু জন-ও হতে পারেন আমাদের দেশের টাইগার শ্রফ, বিদ্যুৎ জামওয়াল কিংবা রানবীর সিং। কিন্তু সে সুযোগটা কে দেবেন? আমি তো শাহরিয়াজের মাঝেও অপার সম্ভাবনা দেখি। অবশ্যই অভিনয়শিল্পীদেরও প্রতি নিয়ত শেখার, নিজেকে বদলে ফেলার, পরিশ্রম করার, দেশ-বিদেশের সিনেমা সম্পর্কে প্রতি নিয়ত নিজেকে হালনাগাদ করার বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে, তবে আমরা গল্পকার কিংবা নির্মাতারা কি তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছি? নির্মাতারা কি চিত্রনাট্যকারকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে পারছেন কিংবা চিত্রনাট্যকারের স্ক্রিপ্ট শতভাগ না হোক ৭০ ভাগও পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারছেন?

ভারতে খান কিংবা কুমার-দেবগন-রোশানদের পাশাপাশি কিন্তু মনোজ বাজপায়ী, ইরফান খান, কে কে মেনন, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, রাজকুমার রাওয়ের মত কিছু অভিনেতাকে নিয়ে প্রতি নিয়ত নতুন নতুন নিরীক্ষা হচ্ছে। দর্শক অপেক্ষায় থাকছেন এই অভিনেতাদের ছবি দেখবার জন্য। বক্স অফিসেও ‘হিট’ খেতাব পাচ্ছে ছবিগুলো। কিন্তু আমরা হুমায়ূন ফরীদির মত ক’জন কিংবদন্তী খল চরিত্র দর্শকদের উপহার দিতে পেরেছি? মিশা সওদাগর সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। কিন্তু মিশা সওদাগর ক’টা ছবিতে মন-প্রাণ উজাড় করে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন? দিন শেষে হিসাব করতে বসলে মিশা সওদাগরের ক’টা ছবি আমরা পাবো যে ছবিগুলোর একটা চরিত্রের সাথে আরেকটা মেলানো যাবে না? দোষ কার? অভিনেতার নাকি নির্মাতা-কাহিনীকারের? শহীদুজ্জামান সেলিমের মধ্যে অনেকেই হুমায়ূন ফরীদির ছায়া পান। সেলিম নিজেও ‘চোরাবালি’ কিংবা ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু সেলিমকে কেন আমরা নিয়মিত বড় পর্দায় দেখিনা? সমস্যাটা তার না আমাদের? আনিসুর রহমান মিলনকে ‘দেহরক্ষী’ ছবিতে দেখে চমকে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম বাংলা ছবিতে তিনি অন্তত নতুন কিছু করতে পারেন। ‘অনেক সাধের ময়না’ ছবিতে বাপ্পীকে ছাপিয়ে মিলনের অভিনয় দর্শক-সমালোচক দুই পক্ষেরই দৃষ্টি কেড়েছিল। ‘রাজনীতি’ ছবিতেও শাকিব খান থাকবার পরও মিলন কোনো অংশে কম হাত তালি পাননি। কিন্তু তারপর? কি হলো? মিলনের হাতে কি আমরা নতুন ইতিহাস গড়বার মত কোনো চলচ্চিত্র দিতে পেরেছি? শুধু মিলন-ই বা কেন, ‘গেরিলা’ ছবির অন্যতম প্রাণ শতাব্দী ওয়াদুদকে ক’টা চলচ্চিত্রে আমরা অভিনয় করার সুযোগ দিয়েছি? ‘গহীন বালুচর’ ছবিতে খল চরিত্রে জিতু আহসান এত গুণী অভিনেতাদের মাঝেও নজর কেড়েছেন বেশি। অথচ ছবিটি মুক্তির ৮ মাস পেরিয়ে গেল। নতুন কোনো ছবিতে জিতু আহসানের অভিনয় করার কথা আমি শুনিনি। শাহাদাত ‘আন্ডার কন্সট্রাকশন’, ‘গহীন বালুচর’ ছবিতে কিংবা সাঈদ বাবু ‘পোড়ামন ২’ ছবিতে সমালোচকের দৃষ্টি কেড়েছেন। আম জনতারা তারিক আনাম খানকেও পছন্দ করেছেন (দেশা ছবিতে), ফজলুর রহমান বাবুকে পছন্দ করেছেন (মনপুরা, স্বপ্নজাল, অজ্ঞাতনামা ইত্যাদি), তানিয়া আহমেদকে পছন্দ করেছেন ”কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিতে। কিন্তু তাদেরকে ক’টা ছবিতে আমরা তাদের যোগ্যতা উপযোগী চরিত্র দিতে পেরেছি? আফজাল শরীফ কিংবা কাবিলা’র পর বাংলা ছবির নিয়মিত দর্শকদের জন্য ক’জন অভিনেতা উপহার দিতে পেরেছি, যারা আমাদের দম ফাটানো হাসির মাধ্যমে কষ্ট ভুলিয়ে দেবেন? সাজু খাদেম আমারই লেখা ‘পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ভীষণভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বছর কেটে গেল, মূলধারার আর কোনো ছবিতে তাকে দেখা গেল না। এই ব্যর্থতা আসলে কার? বুকে হাত দিয়ে কেউ কি বলতে পারবে, আমাদের দেশে বর্তমানে গুণী অভিনয়শিল্পীর বড্ড অভাব? আমি অন্তত মনে করিনা।

বলিউডে কাজল, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন এখনো বক্স অফিসে উত্তাপ ছড়াতে পারেন। অমিতাভ বচ্চন থেকে অনিল কাপুর এখনো পর্দা কাঁপানোর মত সুযোগ পান। তথাকথিত নায়িকাদের মত শারীরিক গঠন না থাকলেও বিদ্যা বালন একের পর এক দুর্দান্ত ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করার সুযোগ পান। আমরা কেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও জনপ্রিয় মৌসুমী, শাবনূর, পপি, নিপুণ, সিমলা, রিয়াজ, ফেরদৌসদের বসিয়ে রেখেছি? কিংবা যাচ্ছেতাই ছবি কিংবা চরিত্র দিয়ে তাদের অবমূল্যায়ণ করে যাচ্ছি? কেয়া, ওমরসানি, আমিন খানদের মত এক সময়কার জনপ্রিয় তারকারাও মনের মত চরিত্র পাচ্ছেন না। পূর্ণিমার মত আরেক আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রীও দীর্ঘদিন ধরে বসে ছিলেন। কিন্তু কেন? জয়া আহসান যদি ভারতীয় বাংলা ছবিতে এ মুহূর্তে সবচাইতে কাঙ্খিত ও দামী নায়িকা হতে পারেন, একের পর এক বক্স অফিস হিট ছবি উপহার দিতে পারেন, ‘ক্রিসক্রস’-এর মত ছবিতে গ্ল্যামারাস অবয়বে পর্দায় হাজির হতে পারেন, আমরা কেন জয়া আহসানকে মূল ধারার বানিজ্যিক ছবিতে ব্যবহার করতে পারলাম না? ওপার বাংলার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অসাধারণ অভিনয় প্রতিভাকে ব্যবহার না করে আমরা কেন বছরের পর বছর পর্দায় তার শরীরটাকেই ব্যবহার করলাম? সোহানা সাবা, জাকিয়া বারী মম, তিশা, নওশাবাসহ আরো অনেকেই আছেন, যারা একটি ভালো চলচ্চিত্রের জন্য সর্বস্ব মমতা উজাড় করে দিতে রাজি। মনিরা মিঠু, রুনা খান, বন্যা মির্জা, অপর্ণা ঘোষ, নাজনীন হাসান চুমকি, দীপা খন্দকার, সাবেরী আলমদের কি আমরা সে সুযোগটা দিচ্ছি? ছোট পর্দার মৌ, নোবেল, তারিন, মোনালিসাদের কেন আমরা একটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করাতে পারলাম না? জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ-এর মত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় অভিনেতদের, এমনকি অপূর্ব, সজলদের কেন তাদের উপযোগী চরিত্রে না নিয়ে ছকে বাঁধা ফর্মূলার মাঝে বন্দী করে ‘চলচ্চিত্রে ব্যর্থ অভিনেতা’র খেতাব দিলাম?

কবরী, আলমগীর, ববিতা, ফারুক, সুচরিতা, সোহেল রানা, নূতন, রোজিনা, রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চন, সুবর্ণা মুস্তাফা, চম্পা, শাকিল খান, অপু বিশ্বাস, আঁচলদের কাছে আমরা এমন কোনো চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেন যাচ্ছিনা, যে চরিত্রের কথা শুনলে তারা এক বাক্যে অভিনয়ের জন্য সায় দেবেন? কেন বড় পর্দায় তাদের জন্য আলাদা জায়গা তৈরি করছি না? বিজলী ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনকে পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী সঠিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন। দর্শকও পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু সেখানেই শেষ। আমরা ভুলে যাই মূল নায়ক নায়িকার চরিত্রগুলো মনে দাগ কাটার পেছনে পার্শ্ব চরিত্রগুলোর ভূমিকাও থাকে সমানে সমান।

ভারতে একজন কার্তিক আরইয়ান কিংবা ঈশান খাট্টার-জাহ্নবী কাপুর সফল হবার পর তাকে নিয়ে সবাই যতটা আশায় বুক বাঁধেন, আমরা কি সিয়াম-পূজার সাফল্যকে খোলা মনে নিতে পারি? কার্তিকের সঙ্গে তো ওরা কেউ খানদের তুলনা করে না। আমরা কেন এক ছবির তারকা সিয়ামের খুঁত খুঁজতে বসে যাই? কেন সম্ভাবনার দিকগুলো নিয়ে কথা না বলে, সিয়ামকে তারকা হবার ক্ষেত্র তৈরি করে না দিয়ে অযথাই শাকিব খানের সাথে তুলনা করি? নায়ক রাজ রাজ্জাকের আসনে কি কখনো মান্না কিংবা সালমান শাহ বসতে পেরেছিলেন? মান্না কিংবা সালমান শাহকে কি শাকিব খান ছাপিয়ে যেতে পারবেন কখনো? শাকিব খানের নজীরবিহীন জনপ্রিয়তার সাথে কি সিয়াম কখনো পাল্লা দিতে পারবেন? সম্ভব নয়। প্রত্যেকের জায়গাই আলাদা। তবে আমরা যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি, আমাদের (দর্শক, প্রর্দশক, নির্মাতা) প্রত্যেকেরই উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে ব্যক্তি অবস্থানকে ভুলে সার্বিকভাবে দেশের কথা ভাবা। ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবা। ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত না হলে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেবেই। আর দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিলে প্রেক্ষাগৃহ একের পর এক বন্ধ হবেই। কথাগুলো বলার একটিই কারণ, বিগত দুই বছরে প্রতিটি বাংলা ছবি দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমার উপলব্ধি: ৯০ ভাগ পরিচালক এবং প্রযোজকই মন-প্রাণ উজাড় করে দর্শকের কথা ভাবেন না। দর্শকের বিনোদন কিসে, কোন সময়ের জন্য কোন ধরনের বিনোদন উপযোগী-এসব নিয়ে গবেষনা করেন না। আমি বিশ্বাস করি, দর্শক যে কোনো বৈরী মুহূর্তেও সিনেমা দেখতে চায়, যদি সিনেমাটি দেখার মত হয়। প্রবল বন্যার মাঝে মৌসুমীর ‘খায়রুন সুন্দরী’ মুক্তি পেয়েছিল, শাবনূরের ‘কাজের মেয়ে’ মুক্তি পেয়েছিল। দর্শক কিন্তু দেখেছিল।

নিকট অতীতে আমরা শাবানা-ববিতা, ববিতা-দিতি, দিতি-চম্পা, চম্পা-পূর্ণিমা, পূর্ণিমা-শাবনূর, শাবনূর-মৌসুমী এরকম অনেক তারকাকেই সমান্তরাল চরিত্রে দেখেছি। রাজ্জাক-আলমগীর কিংবা আলমগীর-ফারুক, ফারুক-সোহেল রানা, সোহেল রানা-ইলিয়াস কাঞ্চন, ইলিয়াস কাঞ্চন-মান্না, মান্না-রিয়াজ, রিয়াজ-ফেরদৌস, ফেরদৌস-শাকিব খান এরকম অনেক তারকাকে একই ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখেছি। সারা বিশ্বেই বহু তারকার সমাবেশ রয়েছে যে ছবিগুলোতে, সেগুলো একটু বেশি আলোচনায় আসে। কিন্তু আমাদের এখানে বাপ্পী সাইমনের সাথে অভিনয়ের প্রস্তাব এলেই ফিরিয়ে দেন। আরিফিন শুভ এখন শাকিব খানের সাথে অভিনয় করতে চান না। বাপ্পী, সাইমন, ইমনদের সাথেও শুভকে দেখা যায়না। নায়িকাদের হিসাব তো আরো জটিল। মাহি-পরি, পরি-ববি, মাহি-ববি, পরি-মীম, ববি-মীম কিংবা মাহি-মীমকে একসাথে দেখা অনেকটা স্বপ্নের মত। অনেকেই এ ক্ষেত্রে অভিনেতাদের ওপর দোষ চাপাতে চান। কিন্তু আমি বলবো দায়টা দুই পক্ষকেই নিতে হবে। বাপ্পী যদি দুই নায়কের ছবিতে অভিনয় করে প্রতারিত হন, আরিফিন শুভ যদি শাকিব খানের সাথে অভিনয় করতে গিয়ে অবহেলার পাত্র হন, ইমন যদি বড় পর্দা থেকে পোস্টারে অবহেলিত হন, তারা কি পরবর্তীতে আর দুই নায়কের ছবিতে কাজ করার ব্যাপারে সাহসী হবে? ‘স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ’ ছবিতে পূর্ণিমা পাশর্^ চরিত্রে অভিনয় করেও কিন্তু দর্শকের হাত তালি পেয়েছিলেন। ‘দুই বধূ এক স্বামী’ ছবিতে শাবনূরের সাথে নায়ক মান্নার মিল দেখানো হয়েছিল ঠিকই। তবে মৌসুমীও কিন্তু সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। যেমন: মৌসুমী-শাবনূর ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ছবিতে সমানভাবে দর্শকনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন কি আমরা সে মাপের সমান্তরাল চরিত্র তৈরি করতে পারছি? শিল্পীদের ভয়/ শঙ্কা দূর করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারছি?

আমাদের দৈন্যতা জুটি গড়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে। শাকিব খানের নায়িকার তালিকায় একসময় অপু বিশ্বাসকে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন ক্লান্ত হচ্ছি শাকিব খান-বুবলী জুটিকে। অপু বিশ্বাস কিংবা বুবলীর নায়িকাসুলভ মেধা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু একটি জুটি দেখতে যতই ভালো লাগুক, তাদের নিয়মিত পর্দায় আসাটা তাদের রসায়নের ‘ম্যাজিক’ কতটা ধরে রাখে, এটি কিন্তু তাদের ভাববার বিষয়। সুচিত্রা সেন তার ২৬ বছরের অভিনয় জীবনে উত্তম কুমারের সাথে মাত্র ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘বাজীগর’ থেকে ‘দিলওয়ালে’-২২ বছরে শাহরুখ খানের বিপরীতে কাজল অভিনয় করেছিলেন মাত্র ৭টি ছবিতে। আমাদের দেশেও স্মরণীয় জুটি সালমান শাহ-শাবনূর অভিনয় করেছিলেন মাত্র ১৪টি ছবিতে। অথচ শাকিব খান-বুবলী জুটির মাত্র ২ বছরেই মাত্র ৩ ঈদে মুক্তি পেয়েছে ৬টি ছবি। আরো অনেক ছবি মুক্তি পাচ্ছে, নির্মিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে শাকিব খানের সাথে জুটি গড়তে পারেন এমন কোনো নায়িকা নাকি নেই। সত্যি কি তাই? বিদ্যা সিনহা মীম, পরিমনিদের কেন ‘ফ্লপ নায়িকা’র তকমা ঝুলিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে? ‘আমি নেতা হবো’ ছবিতে কি মীমকে অভিনয় করার নূন্যতম সুযোগ দেয়া হয়েছিল? পরিমনি-শাকিব খানকে ২টি ছবিতে অভিনয় করিয়েই বোঝা গেল এ জুটি ব্যর্থ? শাকিব খান-বুবলী জুটির প্রতিটি ছবিই কি সফল? নতুন আরো অনেক নায়িকাকে নিয়ে কিংবা ছোট পর্দা থেকেও তো অনেক মডেল-অভিনেত্রীকে নিয়ে নিরীক্ষা করা যেতে পারে। খোদ শাকিব খানকেই তো তথাকথিত নায়কের চরিত্র না দিয়ে কিছুটা ভিন্নধর্মী নায়কের চরিত্রে তাকে কাজ করানো যেতে পারে। আমির খান কিংবা হৃতিক রোশানকে যেমন একেক ছবিতে একেক রকম লুকে দেখা যায়, শাকিব খানের লুক পরিবর্তন নিয়ে ক’জন নির্মাতা ভাবেন? হয়তো এ ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্মাতারা আন্তরিক থাকেন। তারকারা সহযোগী মনোভাবসম্পন্ন হন না। কিন্তু এটাও তো সত্যি। অভিনয়শিল্পীরা এক অর্থে খুব স্বার্থপর। তাদের যদি সঠিকভাবে বোঝানো যায়, একটি চরিত্র সফল হবার জন্য প্রতি ছবিতে দর্শকদের চমকে দেয়াটা জরুরী, আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে তারকারাও অনেক বেশি সচেতন হবেন।

আমি প্রতি সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সপরিবারে সবান্ধব বাংলা ছবি দেখি। এটা সত্যি ৯০ ভাগ চলচ্চিত্রই আমাকে বিনোদন দূরে থাক, বিরক্তির উদ্রেক করে। তবে পাশাপাশি এটাও সত্যি, আমি নৈরাশ্যবাদীদের দলে নই। আমি বিশ্বাস রাখি ব্যক্তি স্বার্থ দূরে রেখে সার্বিকভাবে ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবলে মন থেকে চাইলে সব সম্ভব। আমরা নিজেরাই তো নিজেদের সিনেমা হলে গিয়ে টিকেট কেটে দেখিনা। দর্শক কেন দেখবেন? দর্শককে দেখাতে হবে। মনপুরা, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক-এর মাঝে কি এমন ছিল, যা অন্য ছবির মাঝে নেই? গবেষণা করতে হবে। কাহিনীকার থেকে অভিনেতা, পরিচালক থেকে প্রযোজক সবাইকে হালনাগাদ করতে হবে। বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে হবে। একটি চলচ্চিত্র হিট করাবার জন্য একটি ফর্মূলাই যথেষ্ট, আর তা হলো সততা। একটি চলচ্চিত্রের প্রতি নির্মাতা ও পুরো টীমের সততা ও আন্তরিকতাই বক্স অফিসের ফলাফল বদলে দিতে পারে। ঘুরিয়ে দিতে পারে পুরো ইন্ডাস্ট্রি। বিড়ালের গলায় কে ঘন্টা বাঁধবে-এই আশায় বসে না থেকে আমরা সবাই চলুন নিজ নিজ জায়গা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। চোখ খুলেই স্বপ্ন দেখুন। কথা দিচ্ছি, সাফল্য ফিরে আসবেই। আসতে হবেই।

*লেখাটি পাক্ষিক অনন্যায় প্রকাশিত।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top