What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ডেথ ভ্যালী: অপার ভয়ানক সুন্দর মৃত্যু উপত্যকা (1 Viewer)

SoundTrack

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
530
Messages
13,427
Credits
283,140
Recipe pizza
Loudspeaker
সময় ১৮৪৯ সাল। ডেথ ভ্যালী’র ইংরেজি নামকরণের পিছের কাহিনী। একদল স্বর্ণ সন্ধানীদের দল ডেথ ভ্যালীর মরুভূমি পার হয়ে বিকল্প পথে ক্যালিফোর্নিয়ায় স্বর্ণের সন্ধানে যেতে চেয়েছিল। পথিমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজন সহযাত্রীর মৃত্যু ঘটে এবং বাকিদের মৃত্যুর দোরগোড়া হতে উদ্ধার করা হয়। তাদের একজন মৃত্যুর দোরগোড়া হতে ফিরে আসার সময় পিছে ফিরে তাকিয়ে উক্তি করে,

“বিদায়, মৃত্যু উপত্যকা। (ডেথ ভ্যালী)”

এখান থেকেই স্থানটির নামকরণ হয় ডেথ ভ্যালী হিসেবে।

পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্যজনক স্থান ডেথ ভ্যালি বা মৃত্যু উপত্যকার যেখানে ১৯১৩ সালের জুলাই মাসে ১৩৪ ফারেনহাইট বা ৫৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়েছিলো যা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির তাপমাত্রাকেও হার মানায়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এখানকার ভূমি বাতাসে বয়ে চলা তাপমাত্রা হতেও দ্বিগুণ উত্তপ্ত। ১৯৭২ সালে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যা ছিল প্রায় ২০০ ফারেনহাইট। তবে মজার ব্যাপার হলো, ডেথ ভ্যালির তাপমাত্রাকে ছাড়িয়ে আরেকটা রেকর্ড গড়া হয়েছিলো লিবিয়ায়, তবে ২০১২ সালে রেকর্ডটা আবার ডেথ ভ্যালির ঝুড়িতে ফিরে আসে কারণ লিবিয়ার সেই তাপমাত্রার রেকর্ডটি ছিল ভুয়া।

DBOBS_001.jpg


ডেথ ভ্যালী’র পথে - Source: TripSavvy
 
দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় ২২৫ কিঃমিঃ লম্বা এবং ২৪ কিঃমিঃ চওড়া ডেথ ভ্যালী আমেরিকার পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাডার মধ্যস্থ বর্ডারে যা লাস ভেগাস হতে দুই ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। এই উপত্যকাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক নামে খ্যাত।

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে শুকনো নিম্নভূমি হিসেবে এই স্থানটিকে মানচিত্রে দেখতে অনেকটা খাওয়ার পাত্র বাটির মতো লাগে। বিজ্ঞানীদের মতে, একসময় সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ২৮২ ফুট নিচে অবস্থানরত এই উপত্যকাটিতে বৃষ্টি হয় মাত্র ৫ সেন্টিমিটারের মতো যার কারণে এখানে জলাশয় দেখা যায় মরীচিকার মতো, যা আছে তাও মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত। পুরোটা ঝরঝরে ধু ধু বালিতে ঢাকা উপত্যকাটিতে ১৯২৯ সাল পুরোটা বৃষ্টির একটি বিন্দুরও দেখা মেলে নি। তাছাড়া ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত মাত্র ০.৬৪ ইঞ্চি পরিমাণ ক্ষুদ্র বৃষ্টির নজিরও দেখতে পাওয়া গিয়েছিলো। এই প্রতিকুল পরিবেশে দিনের খরতাপে গাছপালা বেঁচে থাকা দুরের কথা, কোন প্রাণীর দিনের বেলা টিকে থাকা দুষ্কর তবে লিজার্ড নামক একপ্রকার গিরগিটির দেখা পাওয়া যায়, যা এই স্থানে অবলীলায় ঘুরে বেড়ায়। আসলে দিনের বেলা ১৩৪ ফারেনহাইট তাপমাত্রা সহ্য করা যেকোনো প্রাণীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তবে রাতের সময়টা প্রাণীদের জন্য স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এখানে হাজারোধিক প্রজাতির গাছগাছালি, ৫১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী (লম্বা শিং-ওয়ালা হরিণ, সিংহ), ৩৬ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণীর মধ্যে টিকটিকি, সাপ, উভচর প্রাণীসহ ৩০০ প্রজাতির পাখির বসবাস। সাধারণত দিনে এরা নিম্নস্থ ছায়াবিশিষ্ট স্থানে যেখানে গাছগাছালির দেখা পাওয়া যায় ওইখানেই বসবাস করে এবং রাতে বেরিয়ে আসে। বছরের কোনো কোনো সময় ভ্যালী ৭ সে.মি. পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং সেসময় রাতের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসে। চারিদিকে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়।

DBOBS_002.jpg


ডেথ ভ্যালীর ম্যাপ - Source: alumn.us
 
প্রত্নতাত্ত্বিকরা ডেথ ভ্যালীতে ৯০০০ বছর পূর্বের মানুষের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছে। ধারণা করা হয় তৎকালীন মানুষের পছন্দের জায়গা ছিলো এই ডেথ ভ্যালী। “Timbisha Shoshone Native” নামক আমেরিকান এক উপজাতি ১০০০ বছর পূর্বে এখানে বসবাস করতো।

লোকমুখে শোনা যায়, ডেথ ভ্যালী ভৌতিক শহর দ্বারা আচ্ছাদিত। যেখানে হাজারোধিক জনপদ এই শহরগুলোতে একসময় স্বর্ণ খননকালে গড়ে উঠে, যখন এসব কাজ শেষ হয় তখনই হঠাৎ জনপদ ওই স্থান হতে মুছে যায়।

বিভিন্ন রহস্যে ঘেরা ডেথ ভ্যালী সৃষ্টিকর্তার একটি অনবদ্য সৃষ্টি। তার কিছু নমুনা দেখে নেয়া যাক।

Death Valley বা মৃত্যু উপত্যকায় এক আশ্চর্য ধরণের ব্যাপার লক্ষ্য করা যায় আর তা হলো চলমান পাথর বা Sliding Stones. আসলেই প্রকৃতি কতো রহস্য দিয়ে গঠিত তার অন্যতম উদাহরণ ডেথ ভ্যালির এই পাথরগুলো। একেকটা পাথরের ওজন কয়েকশো পাউন্ডের বেশি হলেও দেখা যায় তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজ হতেই স্থান পরিবর্তন করে। অনেকেরই মনে হতে পারে এসব মানুষ বা পশু-প্রাণীর দ্বারা হয়ে থাকে কিন্তু পাথর হেঁচড়ে চলার ছাপ পাওয়া গেলেও কোন প্রাণীর পায়ের ছাপ ত্রিসীমানায়ও দেখতে পাওয়া যায় না। বিষয়টি ১৯১৫ সালে প্রথম লক্ষ্য করেন নেভাডার পর্যবেক্ষক জোসেফ ক্রোক। বিজ্ঞান কখনো অলৌকিকতায় বিশ্বাস করে না সুতরাং তাদের মতে তীব্র বাতাস, কাদামাটি, বরফ, তাপমাত্রার তারতম্যতার কারণে পাথরগুলো স্থান পরিবর্তন করে কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রহস্য আরো বাড়তে থাকে যখন দেখা যায় এসব পাথর কখনোই সরল পথে গমন করে না বরং কিছু সরল পথে চললে বাকিটুকু চলে বাঁকানো পথে। বিস্ময় জাগানিয়া ভাবে দেখা যায় দুটো পাথর একই সাথে চলতে চলতে একসময় ঠিক বিপরীতভাবে দিক পরিবর্তন করে চলে যায়। একেকটা পাথর ২-৩ বছরে একবার করে পথ পরিবর্তন করে। তারা পথ পরিবর্তন করে এবং পিছে প্রমাণ স্বরূপ তাদের পদাঙ্কের ছাপ রেখে যায়। প্রায় বহু গবেষণার পরে বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করে এই বলে, Windowpane Ice নামে পরিচিত বরফ দ্বারা ভূমি আচ্ছাদিত থাকে। যখন বরফ সকালের রোদে গলতে শুরু করে এবং বরফ খণ্ড হালকা বাতাসে সরে যাওয়ার সময়কালে পাথরগুলোকে মৃদু ধাক্কা দিতে থাকে যার ফলে পাথরগুলো মনে হয় অদৃশ্যে সরে যাচ্ছে। যদিও এই বিষয়ে বহু তর্ক বিতর্ক এখনো চলমান।

DBOBS_003.jpg


পাথর হেঁচড়ে চলার ছাপ - Source: JOIN US
 
সময় ১৯৩৩ সাল। প্রেসিডেন্টের ঘোষণাবলে ডেথ ভ্যালী জাতীয় স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে স্থাপিত হয় এবং ১৯৯৪ সালে ডেথ ভ্যালীকে ন্যাশনাল পার্কে রূপান্তর করা হয়। মে মাস হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেথ ভ্যালী সম্পূর্ণ মানবসমাজের বেঁচে থাকার প্রতিকুল পরিবেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে তবে নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পরিস্থিতির অনুকূলে চলে আসে। তারমধ্যে ফেব্রুয়ারি মাস হলো ডেথ ভ্যালী ভ্রমণের উপযুক্ত সময় এবং ওইসময়ে ভীরও থাকে দেখার মতো কারণ সে সময়ে স্থানটির তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৭২ ডিগ্রী ফারেনহাইট এবং সর্বনিম্ন ৪৬ ডিগ্রী ফারেনহাইটে কমে আসে যা মানবজীবনের জন্য সহনীয়। ডেথ ভ্যালীতে পশু শিকার এবং অস্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ। এখানে দেখার জন্য আছে ২৫ হতে ৫০ হাজার বছর পূর্বে গঠিত লবণের কঠিন আবরণ দ্বারা আচ্ছাদিত খ্যাতনামা “ Devil’s Hole” এবং “Telescope Peak” যা ডেথ ভ্যালী পার্কের সর্বোচ্চ চুড়া হিসেবে খ্যাত, উচ্চতা প্রায় ৩৩৬৬ মিটার।

Devils Hole নিয়ে কিছু চমকপ্রদ কাহিনী হয়েছে। ডেভিলস হোল হলো ডেথ ভ্যালীতে অবস্থিত একটি গভীর খাঁদ যা সম্পূর্ণ পানি দ্বারা পরিপূর্ণ। এই খাঁদটিতে পাপ-ফিস নামক এক প্রজাতির জলচর মৎস্য প্রাণীর দীর্ঘ বিশ হাজার বছর ধরে বসবাস। কিন্তু শুধুমাত্র এটাই কথা নয় বরং শুনলে আশ্চর্য না হয়ে উপায় নাই কারণ এই খাঁদটির পানি বৈশ্বিক ভূকম্পনের আভাস দিতে পারে। যেমন জাপান বা তার পাশাপাশি কোথাও বড় ধরণের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা থাকলে এই খাঁদটির পানিতে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।

DBOBS_004.jpg


লবনাক্ত সমতল ভূমি - Source: Mike Reyfman
 
তাছাড়া ২০১৪-১৫ এর মাঝামাঝি পরিমাণের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত বয়ে আনে এক অপরিমেয় সৌন্দর্যের। এই বৃষ্টির ফলে ধু ধু করা মরুভূমিতে শুরু হয় “Flower Bloom” যার অর্থ হলো প্রচুর পরিমাণে বন্য ফুলে আচ্ছাদিত হয়ে যায় ডেথ ভ্যালীর মৃত্তিকা। ২০১৬ সালের মেইনস্ট্রিম নিউজ ছিলো ডেথ ভ্যালীর এই ফ্লাওয়ারব্লুম সম্পর্কেই।

আমরা যারা হলিউড মুভি দেখতে অভ্যস্ত তাদের মধ্যে “Star Wars” মুভি সিরিজের নাম শুনে নাই এমন দর্শকের সংখ্যা নেহায়েত কম। এই মুভির, স্পেশাল Episode IV – A New Hope এবং Episode VI – Return of the Jedi এর অন্তর্গত অনেক লোকেশনের শ্যুট এই ডেথ ভ্যালীতেই করা হয়। শুধুমাত্র ডেথ ভ্যালীকে নিয়েই আলাদা ডজন খানেক সিনেমা এবং টিভি সিরিজ বানানো হয়েছে। তাছাড়া প্রায় শ-বিশেক মুভির শ্যুট করা হয়েছিলো যাদের লোকেশন ছিলো হয়তো ডেথ ভ্যালীর কাছাকাছি বা ডেথ ভ্যালীর ভেতরেই।

DBOBS_005.jpg


ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক - Source: Los Angeles Times

Scotty’s Castle নামের এক ভিলায় টুরিস্টদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় যা ১৯ দশকের শুরুতে শিকাগো লাখপতি এবং কনম্যান হিসেবে খ্যাত ওয়াল্টার.ই.স্কট নির্মাণ করেন। এখানকার গাইডের বেশভূষা ১৯৩০ শতাব্দীর আদলে পড়া হয় তৎকালীন ঐতিহ্য রক্ষার্থে।

বছরে প্রায় লক্ষাধিক ভ্রমণবিলাসী পর্যটকের আবির্ভাব ঘটে ডেথ ভ্যালীতে। এরমধ্যে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ পর্যটক ২০১৪ সালে ভিজিট করে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির এক অপার ভয়ানক সুন্দর সৃষ্টি এই ডেথ ভ্যালী যা সম্পর্কে আজও চলছে গবেষণা।
 
বের ভ্যালির কথা আগে শুনেছি এই প্রথম বিস্তারিত পড়লাম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top