“ডেলিভারী ম্যান”
লেখকঃ আসিফ রহমান জয়
দৃশ্য-১
আজ প্রচন্ড গরম পড়েছে। রাশেদ চট করে ঘড়ি দেখলো। দুপুর বারোটা পেরিয়ে গেছে দশ মিনিট হলো। এখনো আরো তিনটা ডেলিভারী বাকী আছে। রাশেদের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ডেলিভারীর বড় কালো ব্যাগ পিঠে নিয়ে সে দর দর করে ঘামছে। এক গ্লাস পানি খেতে পারলে খুব ভালো হতো। পিছনের রাস্তায় একটা টংগের দোকান ছিলো কিন্তু চলমান এই লকডাউনে দোকানের ঝাঁপ ফেলা। আর অভিজাত এই এলাকায় যতোদূর চোখ যায় রাস্তার পাশে ছোট-বড় কোনো দোকানও নেই যে বাইকটা রেখে একটু চা-পানি খাবে। সে পানি খাবার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পথচলতি একজনকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করলো
-ভাই, ২৩/এ বাড়ীটা এই রাস্তার কোন মাথায়?
দৃশ্য-২
পাপিয়ার আজ সকাল থেকে করার কিছু নেই। টানা লকডাউনে ছেলেদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। মাহতাব সকালেই অফিসের কাজে বেরিয়ে গেছে, ফিরতে বিকাল হবে। আজ বিকালে তাদের বাসার ছাঁদে একটা ঘরোয়া পার্টি আছে। খুব সিলেক্টিভ কিছু গেস্ট আসবে। পার্টির জন্য অবশ্য তার নিজের কিছুই করতে হবে না। ফ্রি-ডিপ ফ্রিজ ভর্তি বাজার আছে। এই বাড়িতে একজন কুক, একজন মালি ছাড়াও দুইজন পার্মানেন্ট কাজের বুয়া আছে। খাবার-দাবারের আয়োজন সব তারাই করবে।
তার দায়িত্ব হলো, ছেলে দু’টোকে রেডি করা আর পার্টির জন্য নিজে রেডি হওয়া। সে তাই করছে। আলমিরা থেকে একগাদা শাড়ী নামিয়ে আয়নার সামনে বসে আছে। শাড়ি বাছাই শেষ হলেই সে চুলের সেটিং ঠিক করতে বসবে। করোনার জন্য এখন আর পার্লারে যাওয়া যাচ্ছে না।
গতপরশু সে অনলাইনে নতুন একটা ফেয়ারনেস ক্রীমের অর্ডার দিয়েছে। আজ সকাল সকালই ক্রীম চলে আসার কথা। এই পেজের অন্যান্য প্রোডাক্টগুলোর রিভিউ বেশ ভালো। এরা সরাসরি কোরিয়া থেকে ইম্পোর্ট করে। পাপিয়া অবশ্য দেশ-বিদেশের অনেক ক্রীমই ট্রাই করেছে। তবে এতে তার গায়ের চাঁপা কালো রঙের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
পাপিয়া ঘড়ি দেখলো। দুপুর বারোটা পেরিয়ে গেছে। অপেক্ষা করতে করতে তার চরম বিরক্তি ধরে গেছে। সে রেগে গিয়ে ফোন দিলো। ঝাঁঝের সাথে বললো-
-কি ব্যাপার? আপনাদের প্রোডাক্ট তো এখনো এলো না?
দৃশ্য-৩
রাশেদ বাড়ির গেটের সামনে পৌছে গেছে। ওরেব্বাবা... এ যে বিশাল বাড়ি! বাড়ির গেট থেকে সদর দরজা পর্যন্ত হেঁটে যেতেই তো মিনিট খানেক লেগে যাবে মনে হয়!
রাশেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলো-
-কিছু কিছু মানুষের কেন এতো টাকা থাকবে? আর কিছু কিছু মানুষ কেন সকাল থেকে শুধু একটা পাউরুটি আর একটা কলা খেয়ে থাকবে?
সে দারোয়ানকে বললো-
-ভাই, এই ঠিকানা থেকে একটা অর্ডার ছিলো। আমি পার্সেল নিয়ে এসেছি, ডেলিভারী করতে হবে।
দারোয়ান অবহেলা ভরে বললো-ভিতরে ফোন করেন। ভিতর থেকে পারমিশন পাইলে গেট খুলুম।
দৃশ্য-৪
রাশেদ ফোন করলো। অনেকবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে পাপিয়া ফোন ধরলো।
-স্লামালিকুম ম্যাডাম। আমি “গ্লো-স্কিন” কোম্পানির পক্ষ থেকে এসেছি। আপনার একটা ডেলিভারীর অর্ডার ছিলো। আমি পার্সেলটা নিয়ে এসেছি।
পাপিয়া রাগের সাথে বললো-
-আপনার তো আরো আগে আসার কথা। আপনাদের কি কোনো সময়জ্ঞান আছে?
-সরি ম্যাডাম। আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার আসলেই দেরী হয়ে গেছে।
পাপিয়ার রাগ একটু কমলো-
-আচ্ছা। আমি গেটে ফোন করে জানাচ্ছি।
চলবে...
লেখকঃ আসিফ রহমান জয়
দৃশ্য-১
আজ প্রচন্ড গরম পড়েছে। রাশেদ চট করে ঘড়ি দেখলো। দুপুর বারোটা পেরিয়ে গেছে দশ মিনিট হলো। এখনো আরো তিনটা ডেলিভারী বাকী আছে। রাশেদের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ডেলিভারীর বড় কালো ব্যাগ পিঠে নিয়ে সে দর দর করে ঘামছে। এক গ্লাস পানি খেতে পারলে খুব ভালো হতো। পিছনের রাস্তায় একটা টংগের দোকান ছিলো কিন্তু চলমান এই লকডাউনে দোকানের ঝাঁপ ফেলা। আর অভিজাত এই এলাকায় যতোদূর চোখ যায় রাস্তার পাশে ছোট-বড় কোনো দোকানও নেই যে বাইকটা রেখে একটু চা-পানি খাবে। সে পানি খাবার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পথচলতি একজনকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করলো
-ভাই, ২৩/এ বাড়ীটা এই রাস্তার কোন মাথায়?
দৃশ্য-২
পাপিয়ার আজ সকাল থেকে করার কিছু নেই। টানা লকডাউনে ছেলেদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। মাহতাব সকালেই অফিসের কাজে বেরিয়ে গেছে, ফিরতে বিকাল হবে। আজ বিকালে তাদের বাসার ছাঁদে একটা ঘরোয়া পার্টি আছে। খুব সিলেক্টিভ কিছু গেস্ট আসবে। পার্টির জন্য অবশ্য তার নিজের কিছুই করতে হবে না। ফ্রি-ডিপ ফ্রিজ ভর্তি বাজার আছে। এই বাড়িতে একজন কুক, একজন মালি ছাড়াও দুইজন পার্মানেন্ট কাজের বুয়া আছে। খাবার-দাবারের আয়োজন সব তারাই করবে।
তার দায়িত্ব হলো, ছেলে দু’টোকে রেডি করা আর পার্টির জন্য নিজে রেডি হওয়া। সে তাই করছে। আলমিরা থেকে একগাদা শাড়ী নামিয়ে আয়নার সামনে বসে আছে। শাড়ি বাছাই শেষ হলেই সে চুলের সেটিং ঠিক করতে বসবে। করোনার জন্য এখন আর পার্লারে যাওয়া যাচ্ছে না।
গতপরশু সে অনলাইনে নতুন একটা ফেয়ারনেস ক্রীমের অর্ডার দিয়েছে। আজ সকাল সকালই ক্রীম চলে আসার কথা। এই পেজের অন্যান্য প্রোডাক্টগুলোর রিভিউ বেশ ভালো। এরা সরাসরি কোরিয়া থেকে ইম্পোর্ট করে। পাপিয়া অবশ্য দেশ-বিদেশের অনেক ক্রীমই ট্রাই করেছে। তবে এতে তার গায়ের চাঁপা কালো রঙের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
পাপিয়া ঘড়ি দেখলো। দুপুর বারোটা পেরিয়ে গেছে। অপেক্ষা করতে করতে তার চরম বিরক্তি ধরে গেছে। সে রেগে গিয়ে ফোন দিলো। ঝাঁঝের সাথে বললো-
-কি ব্যাপার? আপনাদের প্রোডাক্ট তো এখনো এলো না?
দৃশ্য-৩
রাশেদ বাড়ির গেটের সামনে পৌছে গেছে। ওরেব্বাবা... এ যে বিশাল বাড়ি! বাড়ির গেট থেকে সদর দরজা পর্যন্ত হেঁটে যেতেই তো মিনিট খানেক লেগে যাবে মনে হয়!
রাশেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলো-
-কিছু কিছু মানুষের কেন এতো টাকা থাকবে? আর কিছু কিছু মানুষ কেন সকাল থেকে শুধু একটা পাউরুটি আর একটা কলা খেয়ে থাকবে?
সে দারোয়ানকে বললো-
-ভাই, এই ঠিকানা থেকে একটা অর্ডার ছিলো। আমি পার্সেল নিয়ে এসেছি, ডেলিভারী করতে হবে।
দারোয়ান অবহেলা ভরে বললো-ভিতরে ফোন করেন। ভিতর থেকে পারমিশন পাইলে গেট খুলুম।
দৃশ্য-৪
রাশেদ ফোন করলো। অনেকবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে পাপিয়া ফোন ধরলো।
-স্লামালিকুম ম্যাডাম। আমি “গ্লো-স্কিন” কোম্পানির পক্ষ থেকে এসেছি। আপনার একটা ডেলিভারীর অর্ডার ছিলো। আমি পার্সেলটা নিয়ে এসেছি।
পাপিয়া রাগের সাথে বললো-
-আপনার তো আরো আগে আসার কথা। আপনাদের কি কোনো সময়জ্ঞান আছে?
-সরি ম্যাডাম। আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার আসলেই দেরী হয়ে গেছে।
পাপিয়ার রাগ একটু কমলো-
-আচ্ছা। আমি গেটে ফোন করে জানাচ্ছি।
চলবে...