আর তোমার হাইকমান্ড পার্টিটা চালাচ্ছে। একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে। তুমি দোষ করলেও পার্টির চোখে তুমি দোষী নও। যতক্ষণনা প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আমি মলের কেশটায় এরকম দু’চারজনের প্রমাণ পার্টির হাইকমান্ডের হাতে তুলে দিলাম। ছিঁচকে গুলো তিড়িংবিড়িং করবে পার্টির হাইকমান্ড নয়। অনি! অনি বলে কোনো লাভ নেই। আমি যা করার করে দিয়েছি। ওদের তুমি বাঁচাতে পারবে না। ওরা সাসপেন হবে। হয়তো পার্টিথেকে চিরবিদায় নিতে হবে। তুমি যদি তোমার রাজনৈতিক কেরিয়ার স্ট্রং করতে চাও তাহলে যা বলবো শুনে যাও। আখরে তোমার উপকার হবে। তোমার গদিটা আর তিনবছর। তারপর কি করবে কিছু ভেবে রেখেছো। তুই কি বলছিস আমার মাথায় ঢুকছে না। একটু ভাবো। দীর্ঘদিন পার্টি করছো। তোমাকে আমি বোঝাবো এই ধৃষ্টতা আমার নেই। না মনে হচ্ছে তোর সঙ্গে আমাকে রেগুলার যোগাযোগ রাখতে হবে। তুই আমাকে দিন সাতেক সময় দে। দিনসাতেক নয় তুমি আরো বেশি সময় নিতে পারো। আমার সম্বন্ধে ভালো করে হোমওয়ার্ক করেনাও। নিরঞ্জনদা হেসেফেললো। তুই টিজ করছিস আমায়। তুমি দাদার সমসাময়িক তোমায় টিজ করবো। এবার আমার কাজের কথায় আসি। অনেক হ্যাজালাম। বল। রেজিস্ট্রি বুধবার করবো। সব রেডি করেছো। না। তাহলে ? দলিল তুই লিখবি। যা বাবা তুমি বললে সব রেডি করে রাখবে। চল লোকটাকে ডেকে পাঠাই। দলিলটা নিয়ে আসুক। তুই বানিয়ে নে। সেটা আগে করোনি কেনো। সময় পেলাম কোথায়। তুই যে ভাবে পরপর কাজ করে যাচ্ছিস। তারপর কালকে একটা আনন্দের দিন গেলো ভালো লাগলো না। ঠিক আছে গিয়ে দলিলটা আমাকে এনে দাও। আমি বিনিয়ে নিচ্ছি। কালকে কলকাতায় থাকবে। পর্শু আমার সঙ্গে আসবে। এটা মাথায় রেখো। না আমি চলে আসবো। থাকলে ভালো করতে তোমার উপকার হতো। আবার এখানেও আমাকে ঝোলাবি। তোমার কি কাজ আছে বলোতো। তুই জানিসনা। আমার জেনে লাভ নেই। কাল একজনকে দাদার বাড়িতে ডাকবো। থাকলে তোমার উপকার হতো। কাকে। তোমার জেনে লাভ। উঃ তুই ভীষণ তেঁয়েটে। হাসলাম।
গাড়ি এসে বাজারে থামলো। আমি নামলাম। নিরঞ্জনদাও নামলো। আমি বড়মার গাড়ির কাছে গেলাম। রবিন দরজা খুলছে। বড়মা আমায় দেখে মুখটা গম্ভীর করলো। বাবাঃ গালটা ফুলেগেছে মনে হচ্ছে। একবারে কথা বলবিনা। পারবে অনির সঙ্গে কথা না বলে। ওই জন্যই ……। আমি বড়মাকে জাপ্টে ধরলাম। চা খাবে। কোথায়। তোমাকে ভাবতে হবেনা। বাসু। বাসু পেছনেই ছিলো। কাছে এলো। আমার বাড়িতে চল। বড়মা আর এদিকে আসবে কিনা। কিগো যাবে। কতোক্ষণ লাগবে। এই দু’মিনিট। তোর দু’মিনিট মানে আধঘন্টা। ওঃ বড়মা এতোক্ষণবাদে তুমি একটা শলিড কথা বললে। মন ভরে গেলো। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। তোকে যেতে হবে না। তুই বাসুর দোকানে বোস। আমি বড়মা……। তোকেই বাদ দিয়ে দেবো। তাহলেতো খুব ভালো। চল অনাদি আমরা বাসুর দোকানে বসি। বড়মা হাসছে। তোদের কি বয়স হবেনা। তোমার দাদারতো বয়স হয়েছে। বড়মা হেসে ফললো। তোর সঙ্গে পারবোনা। নিরঞ্জনদাকে বললাম এখানে থাকতে থাকতে আমার কাজ সেরে নাও। চাখাওয়ার মধ্যে যেনো চলে আসে। তুমি ব্যবস্থা করে এসো। নিরঞ্জনদা জিভ বার করে ফেললো। সত্যি অনি ভুলে গেছিলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকালো। চলো আমরা এগোই। কথা বলতে বলতে আমরা বাসুর বাড়িতে এলাম। এই প্রথম বাসুর বাড়িতে আসছি। সত্যিকারের মিনিট দুয়েকের পথ। গেটের মুখে লতা দাঁড়িয়ে ছিলো। এগিয়ে এলো। বাসুর বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো। লাইট আছে। শহুরে একটা বাড়ির ক্ষেত্রে যা যা থাকা দরকার তা আছে। লতা বড়মা ছাটমা মিত্রা এমনকি ইসলামভাইকেও প্রণাম করলো। ইসলামভাই-এর কাছে গিয়ে বাধা পেলো। আমি হাসলাম। বাড়িতে ঢুকেই মিত্রা লতাকে নিয়ে সটকে গেলো। বুঝলাম বাথরুমে গেলো। আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বড়মা ইশারায় বললো যাবে। আমি বললাম যাও। বড়মা ছোটমাও গেলো। আমি বাসুর বাড়িটা ঘুরে ফিরে দেখলাম। চিকনা বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ালো। গুরু চারিদিক মেপে নিচ্ছ। হ্যাঁ। তুই কোথায় গেছিলি। এইযে বিস্কুট নিয়ে এলাম। অনাদি কোথায়। নিরঞ্জনদা কোথায় পাঠালো। আসবেনা। নিরঞ্জনদার সঙ্গে আসছে। নিরঞ্জনদার চেলুয়ারা এসেছে। তারা আবার কোথায় ছিলো। তোর বাড়িতে বসেছিলো। তারপর শুনলো এখানে এসেছে। চলে এলো। কোথায় বসেছে। বাসুর দোকানে। ওদের চা দিতে হবে। রাখতো তুই সব ধর্মাবতার। হাসলাম। চিকনা ভেতরে গেলো। আবার বেরিয়ে এলো। চল একটু অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাই। না। ভালো লাগছে না। তাহলে থাক। চিকনা পর্শুদিন সকালে রেজিস্ট্রি অফিসে যাবি নীপাকে সঙ্গে নিয়ে। ওই দিন কোনো কাজ রাখবি না।
চিকনা মাথা নীচু করে আছে। সত্যি তুই যা বলছিস তাই হবে। আমি কি মিথ্যে বলছি বলে মনে হয়। না ঈশ্বর আমার দিকে এমন ভাবে মুখ তুলে তাকাবে ভাবিনি। চিকনার গলাটা ভারি হয়ে এলো। কেনো অনির ওপর বিশ্বাস নেই। না তুই এভাবে বলিসনা। চিকনা চোখ মুছছে। আমি চিকনার দুই কাঁধে হাত রাখলাম। চিকনা এটা একটা নতুন জীবন। অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা আসবে। তাকে ওভারকাম করতে হবে। লক্ষ্য স্থির রাখবি। তুই আমার কাছে চেয়েছিলি। আমি সময় নিয়েছিলাম। তুই পাশে থাকলে আমি লড়ে যাবো। তুই খালি বলে দিবি এই এই ভাবে কাজ কর। দেখবি একেবারে ফেল হবে না। আমিতো আছি। কোথায় ? তুই ম্যাডামকে আর নীপাকে রেখেছিস। না এটায় আমি আছি। সত্যি। হ্যাঁ। অনাদি বললো আমি নীপা আর ম্যাডাম। না অনাদি জানেনা। এবার মেসিন গুলোর ব্যবস্থা কর। কাল আমি কলকাতা যাচ্ছি। কবে আসবি ? পর্শুদিন আসবো। সঞ্জুকে বলে এদিককার ব্যবস্থা পাকা কর। ঠিক আছে। যার যা পাওনা মিটিয়ে দিয়েছিস। হ্যাঁ। কতো আছে। নীপা জানে। নীপার কাছে আছে। লিখিয়ে নিয়েছিস। হ্যাঁ। নীপা খাতায় লিখিয়ে নিয়েছে। এবার জোড় কদমে লেগে পর। কালকেই একশোমোন ধান উঠবে। রাখার ব্যবস্থা করছিস। তোর বাড়িতে যতটা ধরে ধরাচ্ছি। তারপর স্যারকে বলেছি। স্যার অনুমতি দিয়েছে। দু’টো বড় হামার ঘর তৈরির ব্যবস্থা কর। পাঁচুকে বলেছি। ও সব ব্যবস্থা করছে। তোর হামার ঘরটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওটাকে একটু সারিয়ে নিয়েছি। একটা কথা বলবো। বল। অনাদি ওর পার্টির কয়েকটা ছেলেকে নিতে বলছে। অনাদি বললোনা কেনো। লজ্জাপাচ্ছে। তুই যদি কিছু মনে করিস। তোর দরকার পরলে নে। লাগবে। এবার রাতে শোয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। অনি। বড়মার গলা। যাচ্ছি। দেখলাম মিত্রা গেটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি এগিয়ে গেলাম। তুই অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলি। তোকে দেখছিলাম। চল বড়মা তোকে আচ্ছা করে দেবে। আমি ওর কাছে এসে মুচকি হাসলাম।
ওমা দেখছি সাগরেদ আছে। সাগরেদ নয় তোর বিজনেস পার্টনার। খালি বক বক। দিলো আমার কোমরে চিমটি। বড়মা আমাকে মারলে তুই খুব আনন্দ পাস। তাইনা। মিত্রা মাথা দুলিয়ে বললো, হ্যাঁ। মিত্রার মুখটা দেখলাম। এখন অনেকটা ফ্রেশ। ভেতরে এলাম। বড়মার পাশে বসলাম। ছোটমা ইসলামভাই নীপা খাটে ভজু নিচে বড়মার পাশে। চিকনা খাটে বসলো। বাসু খাটের এককোনে। তুই খাটে যা। কেনো। তুই সবসময় বড়মার পাসে বসবি কেনো। ঠিক আছে আজথেকে ছোটমা আমার তোকে বড়মাকে দিয়ে দিলাম। ইঃ কতো খাতির। একটাও তোর নয়। আমি ছোটমার পাশে গিয়ে বসলাম। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। সব খবর নেওয়া হলো। কার। বাসুর। তুই কি করে জানলি। জানলাম। বিজ্ঞের মতো কথা বলিসনা। মিত্রা তোকে কুচুর কুচুর করে বলেছে। নাগো বড়মা আমি বলিনি ও মিথ্যে কথা বলছে। আমি হাসছি। চা হলো। হয়েগেছে। বাসু বললো। লতা ঘরে ঢুকলো। একবারে শহুরে ঢঙে লতা সব নিয়ে এলো। চা চায়ের সঙ্গে পাঁপর ভাজা। বেশ ভালো লাগলো। পেছনে একটা কাজের মেয়ে। হয়তো পাশেই থাকে। চা নিলাম। বাইরে বাইকের আওয়াজ পেলাম। অনাদির গলা পেলাম। বুঝলাম নিরঞ্জনদা এলো। দুজনে ঘরে ঢুকলো। বাসু উঠে দাঁড়ালো। পাশের ঘর থেকে একটা চেয়ার নিরঞ্জনদার জন্য এনে দিলো। নিরঞ্জনদা এসেই আমাকে দলিলটা দিয়ে বললো। এইনে তোর কাজ করে দিলাম। এবার আমার বৈতরিণীটা উতরে দে। এরি মধ্যে দুবার ফোন হয়ে গেলো। হাসলাম। চায়ে চুমুক দিলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোটমা ইসলামভাই-এর একি অবস্থা। ওরা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারেনি। নিরঞ্জনদা হঠাৎ এই ভাবে কথা বলার কারন কি। খোঁজ নেওয়া হয়েগেছে মনে হয়। কিকরে জানলি। তোমার কথার ভাঁজে। সত্যি অনি তুই একটা ছেলে বটে। তুই কি আমার ফোনেও আড়ি পেতেছিস। ইসলামভাই ফিক করে হাসতে গিয়ে গায়ে চা ফেললো। ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো। আমি গম্ভীর। মিত্রা তুই গিয়ে একটু খাটে বসতো। ওকে এখানে পাঠা। আমি উঠে দাঁড়িয়ে শুর শুর করে চলে গিয়ে বড়মার পাশে বসলাম। বড়মার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিনা। চা খেয়ে যাচ্ছি। বুঝছি বড়মা এবার আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। না জানতে পারলে পেট ফুলে যাচ্ছে।
কিরে নিরঞ্জন কি কথা বলে। জিজ্ঞাসা করো। ওতো বললো। তুই চুপ করে আছিস কেনো। ওর পেছনে আবার লেগেছিস নাকি। যাঃ তোমার ভাই বলে কথা। নিরঞ্জনদার সামনে বলছি। জিজ্ঞাসা করো। কিরে নিরঞ্জন কি হয়েছেরে। না কিছু হয়নি। একটা সমস্য হয়েছে। অনি সমাধান করতে পারবে তাই তেল দিচ্ছি। এইবার ছোটমা হেসে ফললো। তুমি অনিকে তেল লাগাচ্ছ। আর বলিস না। হাতি যখন কাদায়………। উঁহুঁ তুমি হাতি নও। আমি চামচিকে নই। তুমি একথা বলতে পারোনা। তোমাকে তখনো বলেছি। এখনো বলছি। বড়মা দাদা যদি না থাকতো আমি কি করতাম তাও তোমায় বলেছি। কি হয়েছেরে নিরঞ্জন তুই আমাকে বলতো দিই ওর কানটা ছিঁড়ে। তুমি মুখে বলছো কেনো তোমার হাত নেই। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। বড়মা আমার পিঠে হাত রাখলো। কানটা ধরো কানটা। আমি হাসছি। কি হয়েছেরে দুজনে গাড়িতে একসঙ্গে এলি। তুই হাসতে হাসতে নামলি। নিরঞ্জনের মুখটা কেমন কেমন যেনো দেখলাম। বাবা তোমার চোখ আছে। অন্ধকারেও তুমি নিরঞ্জনদার মুখটা দেখতে পেলে। কথা ঘোরাসনা সত্যি কথা বল। নিরঞ্জনদা বলবে আমি বলবোনা। ঠিক আছে। আমি কাল সকালা বেলা কলকাতা যাব। পর্শুদিন দাদাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসবো। কি মজা। থাম তুই। মজা দেখছিস। ও কি পাকিয়ে রেখেছে দেখ। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন চায়ে চুমুক দিয়ে চলেছে। ইসলামভাই ভালকরে মাপছে দুজনকে। ও ধরতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে। চলো এবার উঠি কালকে আবার ভোর ভোর বেরোতে হবে। দাদার সঙ্গে তোমার কথা হয়েছে। কেনো তোর সঙ্গে হয় নি। সকালের পর হয়নি। আমাকে যে বললো। পকেট থেকে ফোনটা বারকরতেই বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো। নিরঞ্জনদা কাল তোমার গাড়িতে যাবো। অসুবিধে নেইতো। নিরঞ্জনদা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে। আরে বাবা আমি যাবো বললামতো। নিরঞ্জনদা ঠায় আমার দিকে তাকিয়ে। আমি উঠে দাঁরালাম। নিরঞ্জনদার কাছে এগিয়ে গেলাম। চলো। আমি যাবো। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তুই দাদার হলে যে ভাবে ইনিসিয়েটিভ নিস আমার জন্য নিচ্ছিস না। তোমার থেকে দাদাকে বেশি ভালোবাসি। তাই। তুমি চাপ নিয়োনা। হেসেফেললাম। সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। ট্রলিতে আমি আলাদা বসতে চাইছিলাম। বড়মা বললো তুই আমার ট্রলিতে আয়। অমনেক ভাবে আমার কাচে জানতে চাইলো। আমি চুপচাপ। বললাম তুমি নিরঞ্জনদার কাছ থেকে জেনে নেবে। শেষে ছোটমা বললো দিদি তুমি থামো কলকাতা থেকে ফিরে এসে তোমায় সব বলবে। ও আগে ওর কাজ সারুক। তাই হলো। যেতে যেতে বিশেষ কথা আর হলো না। সবাই চলে এলাম।
অনেক সকালে আমার ঘুম ভাঙলো। কাল রাতে আমি আগে চলে এসেছিলাম। মিত্রা কখন এসেছে আমি জানি না। আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। মিত্রাও আমাকে ডাকে নি। ঘুম ভাঙতে দেখলাম, মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে। আমি ওকে ডাকলাম। ও উঠে পরলো। কিরে কটা বাজে। আমি মিটসেফের কাছে গিয়ে মোবাইলের ঘরিটা দেখলাম। পাঁচটা বাজে। ওকে বললাম। মিত্রা ওর আগোছালো শারি ঠিকঠাক করে নিলো। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। নিচে নামলাম। এখনো ভোর হয়নি ভোরের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। আমি মুখহাত ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। মিত্রা বিছানা গোছাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছে। আমি পাজামা পাঞ্জাবী ছেড়ে প্যান্ট গেঞ্জি পরলাম। মিত্রা আজ কোনো দুষ্টুমি করলোনা। বুঝলাম কালরাতে একটা গোল টেবিল হয়েছে। হয়তো দাদার সঙ্গেও কথা হয়েগেছে। কিরে এখুনি বেরোবি। হ্যাঁ। বড়মাকে ডাকি। ডাক। যেতে পারবি। পারবো। মনেহচ্ছে মিত্রার একটু একটু পরিবর্তন হচ্ছে। ওর কনফিডেন্টের জায়গায় আবার ফিরে আসছে। বুবুন। উঁ। একটা কথা বলবো। বল। রেগে যাবিনা। রাগ করবো কেনো। ও আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার দু’কাঁধে হাত রেখে বুকে একটা চুমু খেলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবি বল। কাল নিরঞ্জনদা সব কথা বলেছে। তুই কি বলতে চাস বল। নিরঞ্জনদার কোনো খতি হবেনা। নিরঞ্জনদা ব্লাইন্ড হলে খতি হবে। নাহলে কিছুই হবেনা। তোকে সত্যি কথা বলি। বল। বড়মা এই দায়িত্বটা আমার ওপর দিয়েছে। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ফিক করে হেসেফেললাম। তুই হাসলি। বড়মাকে এতো ভালোবাসি তবু আমার প্রতি বড়মার বিশ্বাসের বনিয়াদ ততটা শক্ত নয়। তা নয়। তোকে আমি যেমন ভয় পাই তেমনি বড়মা ছোটমাও তোকে ভয়পায়। ওদের দৃঢ় বিশ্বাস তুই কোনো অন্যায় কাজ করবি না। তবু কোথায় যেনো একটা। জানি। তোর মধ্যেও এই ব্যাপারটা আছে। কেনো ? আমি বাঘ না ভাল্লুক। তুই বড়মাকে বলিস নিরঞ্জনদা তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আমার স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তাই আমি মেনেনিতে পারছি না। দাদা শোনার পর ঠিক এই কথা বলেছে। দাদা তোকে সাপোর্ট করেছে। নিরঞ্জনদাকেও খুব বকেছে। এমনকি বড়মাকে। দাদাকে কাল প্রথম একটু রাগতে দেখলাম। নিরঞ্জনদা বড়মা কি বললো। চুপচাপ দাদার কথা শুনে গেছে। ইসলামভাই ছিলো। হ্যাঁ। ইসলামভাই মনেহয় তোর ছকটা কিছুটা বুঝেছে। কালকে দাদার সঙ্গেও কথা হলো দাদা ইসলামভাইকে সাপোর্ট করলো। ছোটমা। ছোটমা চুপচাপ কোনো কথা বলেনি। খালি একবার বলেছে। দিদি অনি কোনো অন্যায় কাজ করবেনা। কোথায় বসে কথা হচ্ছিলো। ওই বাড়ির বারান্দায়। নিরঞ্জনদা বড়মাকে বললো না বড়মা জিজ্ঞাসা করলো। তুই চলে আসার পর নিরঞ্জনদা সবাইকে নিয়ে বারান্দায় গেলো। সব বললো। তুই নিরঞ্জনদাকে বলেছিস তুমি যদি দাদা বড়মার পরিচিত না হতে তাহলে তোমাকে ছাড়তাম না। হ্যাঁ। নিরঞ্জনদা ওই কথায় আরো ভয় পেয়েছে। বড়মার হাতে পায়ে ধরছে। দিদি তুই আমাকে অনির হাত থেকে বাঁচা। ও যদি একবার লেখে আমার কেরিয়ার ডুম। বড়মা প্রথমে নিরঞ্জনদাকে দেরে মুশে গালাগালি করেছিলো। পরে বলেছে অনি আমাকে এই বিষয়ে পাত্তা দেবে না। তুই তোর দাদাকে ফোন কর। আর এই দায়িত্ব মিত্রাকে দে। তুই কি বললি। আমি বলেদিয়েছি। এই ব্যাপার নিয়ে আমি বুবুনকে কোনো রিকোয়েস্ট করতে পারবোনা। অন্য ব্যাপারে বলো আমি বলছি। হাসলাম। দাদার সঙ্গে আমার ফোন থেকে কথা হলো। রেকর্ডিং করেছিস। না। ছাগল। আমার শোনা হলো না। যাঃ রেকর্ডিং করা যায়। দাদা সব শোনার পর তেরে গালাগাল করলো নিরঞ্জনদাকে। বলেকিনা অনি যদি তোর সম্বন্ধে লেখে আমি ছাপবো। এজ এ এডিটর। তোর কি করার আছে কর। না হলে অনি যা বলবে শুনে যা। ও একটা পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। আর তুইতো চুনো পুঁটি। তোর পার্টির অনেক রাঘববোয়াল ওকে খুব ভালোবাসে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি। হ্যাঁ দাদা ঠিক কথা বলেছে। তুই এতো কানেকসন তৈরি করলি কি করে। জেনে কি করবি। আমারোতো একটু জানতে ইচ্ছে করে। একটা সময় কোনো কাজ ছিলনা লেখা আর আড্ডামারা ছারা। তখন তুইও ছিলিনা যে একটু প্রেম করবো। দেখ দেখ তুই কিরকম লাইট ভাবে কথাটা নিলি। এটা সিরিয়াস ব্যাপার নয়। তোর কাছে কোনটা সিরিয়াস কোনটা সিরিয়াস নয় বোঝা মুস্কিল। ইসলামভাই পর্যন্ত তোর ব্যাপার স্যাপারে ঘবড়ে যাচ্ছে। এই মিটিংথেকে তুই কি শিখলি। একটা ব্যাপার শিখলাম বুবুন ছাড়া আমার বাঁচার কোনো গতি নেই। মিত্রা আমার বুকে মুখ রাখলো। জাপ্টে ধরলো। আমাকে ছেড়ে কোনোদিন চলে যাবিনাতো। যেতেপারি কিন্তু কেনো যাবো। কার কবিতার লাইন বলতো। সুনীলের। পরেছিস।
পরেছি কিন্তু বোধোগম্য হয়নি। পরেনিস ভালো করে। অনি। বড়মার গলা। মিত্রা আমাকে ছেরে দিলো। আমি বারান্দায় গিয়ে বড়মাকে মুখ দেখালাম। কিরে তোর হয়েগেছে। অনেকক্ষণ। নিরঞ্জনদা। তৈরি হচ্ছে। তাড়াতাড়ি করতে বলো। আয়। যাচ্ছি। আমি মিত্রা দুজনে নিচে নেমে এলাম। মিত্রা শাড়িটা আটপৌরে করে পরেছে। বেশ দেখতে লাগছে। ও এখন বেশ ঝকঝকে। আমরা দুজনে এবাড়িতে এলাম। দেখলাম বারান্দায় সবাই বসে আছে। নিরঞ্জনদা ইসলামভাই কথা বলছে। আমায় দেখে একগাল হেসে বললো। কাল দারুন ঘুমিয়েছিস। তোমার ঘুম ভালো হয়নি। তুই ঘুমোতে দিচ্ছিস কোথায়। খালি টেনসনে ফেলে দিচ্ছিস। কেনো। কাল আমি দিদিমনিকে তোর কাছে ছাড়তে গেছিলাম। ডাকলেনা কেনো। তুই যেভাবে ঘুমোচ্ছিলি মায়া হলো। আমি ইসলামভাই-এর পাশে বসলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো। মর্নিং স্যার। আর মর্নিং মর্নিং করিসনা। চা খেয়েনিয়ে তাড়াতারি চল। ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো। বড়মা আমার পাসে এসে বসলো। কি ম্যাডাম কাল সব শুনলে ভাই-এর কাছ থেকে। শুনলাম। বলুন আপনার হুকুম। ছোটমা চা নিয়ে এলো। খামারে অনাদি আর চিকনার বাইক এসে দাঁড়ালো। দাওনা ওর কানটা মূলে। ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। আমি ছোটমার দিকে তাকালাম। হাসলাম। হাসিসনা তোর হাসিটা দেখলে গা জ্বলে যায়। আমার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বললো। নাও চা গেলো। আমি বড়মার দিকে তাকালাম। বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে পড়ার চেষ্টা করছে। তাকিয়ে আছো কেনো। তুই কবে আসবি। পর্শু রেজিস্ট্রি অফিসে দেখা হবে। ওখানে গিয়ে আবার কি গন্ডগোল পাকাবি। আমি চায়ের কাপটা রেখে বড়মার গলা জড়িয়ে ধরলাম। অনিকে বিশ্বাস হয়না। না। কেনো। তুই একটা পাগল। পাগলকে বিশ্বাস করাযায়। তাহলে দাদাকে বিশ্বাস করলে কি করে। তখন বয়সটা অনেক কম ছিল তাই। এখন কমিয়ে ফেলো। পারিনা যে। তুমি যার জন্য চিন্তা করছো। তোমায় কথা দিচ্ছি তার গায়ে একটা আঁচড় পরবে না। যদি পরে দেখবে তার অবস্থা মলের মতো করে ছেড়ে দেবো। তখন অনি সত্যি পাগল হয়ে যাবে। কথা দিচ্ছিস। কথা দিলাম। ঠিক। তিন সত্যি।
নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তুমি ভয় পাচ্ছ কেনো। তুই জানিসনা আমার ওপর কি প্রেসার। নেতা হবে প্রেসার উপভোগ করবেনা তা হয়। তোর জন্য। একটু থেমে মুখটা ঘুরিয়ে। আমি এখানে না এলে ভালো হতো। তোমাকে আমি আসতে বলিনি। বড়মা বলেছে। বড়মার সঙ্গে বুঝে নাও। ইসলামভাই আবার হো হো করে হেসে ফেললো। ছোটমা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মিত্রা মুখ ধুয়ে চায়েরকাপ নিয়ে এসে বসলো। ও চুপচাপ। ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে। খামারে চলো। এখানে বল। বড়মা বললো। হাসলাম। এটা আমার আর ইসলামভাই-এর ব্যাপার। কেউ মাথা গলাতে পারবে না। আর গলালেও ঢুকবে না। ইসলামভাই হাসছে। আমি আর ইসলামভাই খামারে এলাম। আমি রতনকে বলেদিয়েছি। তোর সঙ্গে দেখা করেনেবে। রতনের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। আমার পুরোনো নম্বরে ফোন করবি। রতনেরটা দাও। ইসলামভাই রতনের ফোন নম্বরদিলো। আমি আমার মোবাইলে সেভ করলাম। আমার ফোন নম্বর রতনের কাছে আছে। আছে। তোকে ও একটা ব্যাগ দেবে। নিয়ে আসবি। ওখানকার লেটেস্ট নিউজ। ফাস্টক্লাস। তোর কাজ। কোনো খুঁত নেই। মুখার্জী কোনো খোঁজ খবর করেছিলো। প্রথম দিন তারপর আর করেনি। অবতারের খবর কি। রতন বললো ও খুব ভয় পেয়ে গেছে। তোকে খুব খোঁজা খুঁজি করছে। তোর সঙ্গে দেখা করতে চায়। কেনো ? তুমি কিছু বুঝতে পারছো। তোকে জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছিলাম। তুই যা ব্যস্ত। ভিআইপি মানুষ। ইসলামভাই আমার পেটে একটা গুঁতো মারলো। কেনোরে। মিঃ ব্যানার্জী ওর ঘারে ঝুলে পরেছে। বাঁচতে চায়। ইসলামভাই-এর মুখটা কঠিন হয়ে গেলো। তুই কি ভাবছিস। আমি আগে এদিকটা সামলে নেবো। মলের শেষ পরিণতি কি হয় দেখবো। তারপর হাত দেবো। আমি কালকে হাইকমান্ডে ফোন করেছিলাম। কি বলছে। এই ব্যাপারটায় ওরা খুব খুশি। তুমি কোথায় জানতে চাইলো নাকি। দেখলাম জানে। বললো খুব সেফটি জায়গা। ওখানে থাকো। নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শুনলাম। তুমি কি বলো। তোর জায়গায় তুই ঠিক আছিস। ওই সচিব ফেঁসেছে। অনেক কামিয়েছে। নিরঞ্জনদার কে হয়। মুখে বলছে কেউ নয়। তবে মনে হচ্ছে নিরঞ্জনদার খুব কাছের লোক। এক লবির হবে। আজকে ওর প্যান্ট খুলবো যাই। ওতো এমনিই তোকে ধসছে। একটা আন্ডার স্ট্যান্ডিং-এ যেতে চাইছে। ওকে মনে হয় ট্রান্সফার করবে। তোমায় কে বললো। হাইকমান্ড। আমি আজ অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলবো। কালকে খবর পাঠিয়েছি। তোর লবি আমার থেকে স্ট্রং। এইতো আবার গল্পদিলে। ইসলামভাই আবার হো হো করে হেসে আমার পেটে খোঁচা মারলো। পর্শু চলে যাবে রেজিস্ট্রি অফিসে। আমি সব বানিয়ে নিয়ে আসছি। শোন আমি চল্লিশ আনাচ্ছি আর লাগলে বলেদে রতনকে বলেদিই। আর দশের কথা বলেদাও। লাগলে যাওয়া আসা করছিতো নিয়ে আসা যাবে। আমাকে কবে ছারবি। তোমারকি না গেলেই নয়। ঠিক তা নয়। তুই বললে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসবো।
আমি যাই হালচাল বুঝি তারপর। দামিনী মাসিকে ফোন করেছিলে। হ্যাঁ। ভজুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি। দামিনী কেঁদে ফললো। কি জীবন আছে বলোতো। সত্যি অনি তোর সঙ্গে দেখা না হলে জীবনে অনেক ঘাটতি থেকে যেতো। চলো। আমরা চলে এলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। মিত্রা হাসছে। বুঝলাম ওরা সারাক্ষণ আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওদের চোখমুখ তাই বলছে। চলো এবার বেরিয়ে পরি। নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। নিরঞ্জনদা হতাশার সুরে বললো চল। আজ তোর ওপর আমাকে নির্ভর করতে হবে। এখানে দিদির সামনে এক বলছিস। গিয়ে দেখবো তুই আর এক মূর্তি ধারন করেছিস। আচ্ছা তোমার কত ক্ষমতা তুমি এখুনি একটা ফোন করলে আমাকে এখান থেকে পুলিশে এ্যারেস্ট করে নিয়ে চলে যাবে। মিথ্যে মামলায় ছ’মাস জেল খাটাবে। সেতো বুঝলাম তারপর ছমাস বাদে যখন বেরোবি তখনতো আমার ষষ্ঠীপূজো করে ছেরে দিবি। তোকে বেশি ঘাঁটায়। যে ঘাঁটাবে সে মরবে। মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো। তুই হাসিসনা। যত নষ্টের গোড়া তুই। বড়মা দেখছো। সব দোষ আমার ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছে। থাম তুই। আমি বড়মা ছোটমা সবাইকে প্রণাম করলাম। বড়মা আমার থুতনিটা ধরে চুমু খেলো। আমার সম্মানটা রাখিস। হাসলাম। গাড়িতে যেতে যেতে নিরঞ্জনদা আমার সঙ্গে একেবারেই কথা বলছে না। খালি জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ফোনে কথা বলেচলেছে পার্টির লোক জনের সঙ্গে। সবাইকেই একটা কথা বলে দিচ্ছে আমি কলকাতা যাচ্ছি ফিরতে চার-পাঁচদিন সময় লাগবে। শেষে আমি বললাম। কিগো তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলবেনা বলে ঠিক করেছো। তুই কথা বলছিসনা তাই বলছিনা। তোকে বোঝা মুস্কিল। দাদার সঙ্গে কথা হয়েছে। হ্যাঁ কালকে রাতে বলেছি। সেতো তোর থেকে এককাঁটা ওপরে। উল্টে আমাকে ধমক দিলো। কে ঠিক আমি না দাদা। তোরা দুজনেই ঠিক আমি একমাত্র ভুল। হাসলাম। হাসিসনা তোদের দুজনের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ভদ্রলোক তোমার কতটা কাছের। আরে আমার আত্মীয়। দাদা জানে। না। তাহলে। তাহলে আবার কি জানলে আরো গালাগালি করবে। ভদ্রলোকের ট্রান্সফারের অর্ডার হয়ে গেছে। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তুই এটা কি করলি। আমি করিনি। অনিমেষদা করেছে। নিরঞ্জনদার গালে কেউ যেনো একটা চর মারলো। থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইলো। কিগো বলো কিছু। কি বলবো। কি ভাবছে বলতো পার্টিতে। সকলে একটাই কথা বলবে আমি এর মধ্যে জড়িত। ওই দায়িত্বটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও। তুই দায়িত্বটা নিবি। অবশ্যই নেবো। তুই বিশ্বাস কর আমি অনেকবার বারন করেছি শোনেনি। দাদা তোর কথা বলেছে। গা করিনি। তোকে প্রথম দেখার পর দাদাকে সব বলেছি। পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। নারে বিশ্বাস কর। পার্টিতে অনেকেই জানে ও আমার আত্মীয়। কিরকম আত্মীয়। আমার বোনের হাজবেন্ড। দাদা জানে। না। আমার জন্যই ও ওখানে পৌঁছতে পেরেছে। ভদ্রলোকের আরো দোষ আছে। সেতো কালকে তুই বলার পর খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম। তখন সব পরিষ্কার হল। বোন বললো। তোমার বোনের কপালটা খারাপ। বোনের সঙ্গে আমার কপালটাও পুরলো। তোমারটা পুরবেনা। ভদ্রলোকের এ্যাগেনস্টে তদন্ত কমিশন গঠন হবে। হোক। শালা মরুক। তারপর আমি বুঝবো। তুই আমাকে বাঁচা। পার্টিতে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে। কালকে থেকে আমার অপনেন্ট লবি উঠে পরে লেগেছে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। তোর কথায় আমি বিশ্বাস করিনা। তুই আরএক রাজনীতিবাজ ঝপ পাল্টি খেয়ে যাবি। এইতো তুমি ফর্মায় ফিরে এসেছো। এতো হতাশ হলে পার্টি করবে কি করে। তুই জানিস না অনি এতদিন আমি পার্টি করছি কেউ আমার সম্বন্ধে টেঁফুঁ করতে পারেনি। আজ ওটার জন্য আমাকে পথে বসে পরতে হবে। তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি। যদি তুই আর না লিখিস তাহলে ও হয়তো বেঁচে যাবে। যতোই হোক ওপরের দিকে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পরে। তোমার সঙ্গে অনিমেষদার আলাপ আছে। মুখ চেনে নাম জানে সেইভাবে কথা হয়না। তোর কথা মতো ওরা বড়ভাই আমি ছোটোভাই ফুর্তি করি। কালকে তোর কথাটা শুনে খুব রাগ হয়েছিলো। তারপর ভেবে দেখলাম তুই টোটাল ব্যাপারের নির্যাসটা বলেছিস। এবার বলো তুমি কি করতে চাও। তুই যেভাবে বলবি করবো। দাঁড়াও। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে অনিমেষদাকে ডায়াল করলাম। ভয়েজ অন করলাম। যাতে নিরঞ্জনদা শুনতে পারে। হ্যালো। দাদা আমি অনি। সুপ্রভাত। বাবা খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে।
একেবারেই না। গলাশুনে মনে হচ্ছে। কি করছেন। চা খেতে খেতে তোর লেখাটা পরছি। আর ব্রিফ করছি। কেনো দাদা আমার লেখাটা কি এতই ইমপর্টেন্ট যে ব্রিফ করতে হবে। তুইতো আমায় সমস্যায় ফেলেছিস কিনা। আমি আবার কি সমস্যায় ফেললাম। শুক্রবার মিটিং আমাকে বিষয়টা নিয়ে বলতে হবে। কেনো জেরক্সতো আপনার কাছে আছে। খুঁজে পাচ্ছিনা। তুই কি ফিরছিস। আপনি কি করে বুঝলেন। গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি। হ্যাঁ। আজকে একবার আপনার কাছে যাবো। আমিও তোকে তাই বলবো মনে করছিলাম। তুইতো আমার মুখের কথাটা কেরে নিলি। আমার একটা সমস্যা হয়েছে। তুইতো সমস্যা ছাড়া আমাকে ফোন করিসনা। এটা অভিমানের কথা। তোর বৌদি লেখাটা পরতে পরতে বলছিলো অনি বড্ড ভালো লিখে ফেলেছে। এটা অসম্ভব রকমের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তোর সমস্যার কথা বল। আজ আমাকে সরকারের এক আমলা ডেকে পাঠিয়েছে। তাই যাচ্ছি। আবাসন দপ্তরের। হ্যাঁ। একবারে যাবিনা। লোকটা অনেক দিন থেকে জ্বালাচ্ছে। ওটাকে দূর করতে হবে। ওর আরো অনেক সমস্যা আছে। দাঁড়া ওটাকে এমন জায়গায় পাঠাবো আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তাহলে আমি যাবোনা ? একবারে যাবিনা। তোর কাজ তুই করেছিস। ওর ক্ষমতা থাকলে প্রমাণ করুক। আমিও সেটা দাদাকে বলেছিলাম। তবু দাদাকে ওরা প্রেসার করেছে। দাদা বললো তুই নিরঞ্জনকে নিয়ে একবার যা। কে নিরঞ্জন। বাবা তুমি পার্টির মাথা হলে কি করে বলোতো। অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো। আরে পার্টি ওই একটা নিরঞ্জনকে নিয়ে চলে। বলনা কে সেই মহানব্যক্তি নিরঞ্জনদা আমার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকিয়ে আছে। আমার জেলার সভাধিপতি।
ও হ্যাঁ হ্যাঁ ভদ্রলোকের সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছিলো। মনে পরছে। ওই জেলার দায়িত্বে বিধান আছে। বৌদিকি সকালে চাটা কড়া করে দেয়নি। নারে আজকের চাটা কেমন পাতলা পাতলা করেছে। দাদার সম্পর্কে ভাই হয় আমায় উনি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। বলছিনা একবারে যাবিনা। তুইতো ফাইল নম্বর দিয়ে দিয়ে লিখেছিস। এটার দরকার ছিল। সব জায়গায় কোরাপসন। এত চেষ্টা করেও কিছুতেই বন্ধ করতে পারছিনা। এইসব লোক গুলোর জন্য আমাদের সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তুমি বললে যাবো, না হলে যাবোনা। তুই এক কাজ কর নিরঞ্জনবাবুকে নিয়ে দুপুরে আমার বাড়িতে লাঞ্চের সময় চলে আয়। দাদা মল্লিকদা যদি সঙ্গে যায় আপত্তি আছে। একেবারে না। অনেকদিন দেখা হয়নি কয়েকঘন্টা গল্প করা যাবে। ঠিক আছে। আমি তোর বৌদিকে বলেরাখছি। তুই আসছিস। তুমি বললে আমি যাবোনা তা হয়। ঠিক আছে। ফোনটা আফ করলাম। রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। ফোনটা পকেটে ঢোকালাম। নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে ফললো। অনি আজ আমার দশারফা হয়ে যাবে। কেনো। আমি অনেক অন্যায় করেছি। ভুল স্বীকার করে নেবে। অনিমেষদা নিজের দায়িত্বে সব ঠিক করেদেবে। অনিমেষদার মুখের ওপরে কথা বলার লোক এই মুহূর্তে পার্টিতে খুব কম ব্যক্তি আছে। তোর সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা কি করে হলো। জেনে তোমার লাভ। না বুঝতে পারছি পার্টিতে টিঁকতে গেলে তোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। আমি ব্যবসায়ী লোক। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লাভ নেই। নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে আছে। প্লিজ তুই এরকম করিসনা। আমার তিনশো একর জমি। তুই যা ভাঁজ মারলি তাতে আমি না দিলেও তুই আদায় করেনিবি। বৃথা তুমি বড়মাকে কাল রাত থেকে টেনসনে ফেললে। এই মাথা নিয়ে কি করে যে পার্টি করো বুঝতে পারিনা। সত্যিরে মনেহচ্ছে আমার এখনো অনেক বাকি আছে। কার জোড়ে জেলা সভাধিপতির পদটা বাগিয়েছো। বিধানদাই দিয়েছে। তখন তুমি ভালো ছিলে দুবছরে অনেক কামিয়ে নিয়েছো। তাইনা। তুই এভাবে বলিসনা। পার্টিটা কামানোর জায়গা নয়। ভালোবাসার জায়গা। জানো অনিমেষদার বাড়িতে গেলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু ভদ্রলোক যদি মনে করতেন আমি রাজপ্রসাদে থাকবো। এখুনি তা করতে পারেন। একপয়সাও লাগবেনা। জানি। তাহলে পার্টি তোমাকে পুষবে কেনো। আমার ভুল হয়েগেছে। তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছো। ভুগতে তোমাকে হবে। আমি চেষ্টা করবো রিকভার করার। কিন্তু কতটা পারবো জানিনা। তুই একটু দেখ। আমি তোমার পেছনে বলছিনা। তোমার সামনে বলছি। এখন থেকে তোমার ভগ্নীপতিকে মুখ মুছে ফেলেদাও। নাহলে তোমার সামনে ঘোর বিপদ। আমি কি করি বলতো। আগে বড়মাকে ফোন করে সব জানাবে। বড়মা কষ্ট পাবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা। ঠিক আছে ফোন করছি। তোমার ফোন থেকে নয় আমি ফোন করছি তুমি কথা বলবে। আমার শোনার দরকার আছে। তাই দে। আমি মিত্রার ফোনে ডায়াল করলাম। কিরে ধাবায় বসে গিলছিস না। হ্যাঁ। আলুপরটা চিকেন চাঁপ মটর পনির। দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। ঠিক আছে বড়মাকে দে। বড়মা তোর কথা শুনতে পাচ্ছে। তোরা কোথায়। তোর স্কুলে এসেছি। ঘুরতে। কে কে আছে। সবাই আছে। খুব বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমার গুণকীর্তন করছিস। বেশ করছি। নে বড়মা কথা বলবে। দে। কিগো এখনো অনির ওপর রাগ পরেনি। তোর ওপর রাগ করবো কেনো। তাহলে অভিমান। চুপচাপ। অনি ভুল কাজ করেনা। এটা বহুবার বলেছি। আবার বললাম। নাও নিরঞ্জনদার সঙ্গে কথা বলো। দিদি। বল। আমার সমস্যার সমাধান হয়েগেছে। তাই। বড়মার গলার স্বর পরিবর্তন হয়েগেছে। তোর সঙ্গে আর কথা বলবোনা। অনিকে দে। আমি ইশারায় নিরঞ্জনদাকে বললাম তুমি কথা বলো। আমি বলবো না। কিরে চুপচাপ কেনো। অনিকে দে। অনি তোমার সঙ্গে কথা বলবেনা। তাহলে রেখে দে। তোর সঙ্গে যা কথা বলার হয়েগেছে। মিত্রা ফানটা বন্ধ কর। বড়মা ফোনটা রেখেদিলো। আমি ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে জানলার দিকে মুখ করে বসে থাকলাম। কলকাতার খুব কাছে চলে এসেছি। আবার পকেট থেকে ফোনটা বার করে দাদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজ। মল্লিকদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজ। পকেটে ঢুকিয়ে রেখে দিলাম। জানলার দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছু ভালোলাগছে না। এক স্বপ্নদেখি আর এক হয়ে যায়। মানুষের জীবনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যাপার গুলো মাঝে মাঝে এমন ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তল খুঁজে পাওয়া যায়না। এখান থেকেই মানুষের জীবনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। একে ওপরকে ভুল বোঝে। দূরত্ব তৈরি হয়। ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বারকরলাম। দেখলাম মল্লিকদার ফোন। বলো। সরি স্যার তোর ছোটমার সঙ্গে একটা ভাইট্যাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম। বলো কি বলছো। বাবা খুব গম্ভীর মনে হচ্ছে। না। ঠিক আছি। কলকাতা ঢুকতে আর কতটা বাকি। আধঘন্টা। তোমরা কোথায় ? অফিসে ঢুকে পরেছি। এত সকালে। তুই যা শুরু করেছিস। এরপর খাট বিছানা নিয়ে অফিসেই থাকতে হবে। কেনো। সবাই এসে তোকে খোঁজে। না পেলে দাদা আমি। ভালোই তো ভিআইপি হয়ে যাচ্ছ। ক্ষমাদে। বুঝেছি তোর কথা বলার মুড নেই এখন। অফিসে আয় সব বলছি। ঠিক আছে। অফিসের গেটে গাড়িটা থামতেই সিকুরিটির ছেলেটা এগিয়ে এলো। দরজা খুলে স্যালুট করে পাসে দাঁড়ালো। আমি ভাবলেশহীন মুখে একবার চারদিকটা দেখে নিলাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেচন গাড়ি থেকে নামলো। গাড়িটা ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করদাও।
হ্যাঁ স্যার। আমি দরজা খুলে রিসেপসনিস্ট কাউন্টারের সামনে আসতেই সেই ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়িয়ে মর্নিং স্যার বলে উঠলেন। আমি খুব গম্ভীর হয়ে লিফ্ট বক্সের সামনে দাঁড়ালাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছনে। আমাকে মেপে চলেছে। লিফ্ট ওপরে ছিলো বোতামে হাত দিতে নিচে নেমে এলো। আমি ওপরে উঠলাম। নিরঞ্জনদা তুমি দাদার ঘরে বোসো। চেনোতো ঘরটা। না। এসো। নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন এলো আমাকে দেখেই হরিদা বলে উঠলো। ছোটোবাবু কখন ফিরলে। এইতো এখুনি। দাদা ভেতরে। হ্যাঁ। আমি দরজা খুলতেই দাদা আমার দিকে তাকালেন। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম যাও ভেতরে গিয়ে বসো। আমি আসছি। নিরঞ্জনদা ভেতরে গেলো। তুই আসবি না। আমি ওপর থেকে আসছি। সিঁড়িদিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। সোজা চলে এলাম সনাতন বাবুর ঘরে। সনাতন বাবু আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোটোবাবু সব ঠিক আছে। হ্যাঁ। আমার কাজ সব হয়েছে। রেডি আছে। এখন দেবো। না। ফোন করলে দাদার ঘরে চলে আসবেন। আমি সনাতনবাবুর ঘর থেকে নিউজরুমে চলেএলাম। আমার টেবিলটার সামনে দেখলাম তিনচারটে ছেলে বসে আছে। চিনতে পারলামনা। নিউজরুমে ঢুকতে মল্লিকদা আমায় দেখেছে। আমি একবার দেখলাম তারপর নিজের টেবিলের সামনে গেলাম। ছেলেগুলো প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারপর মল্লিকদার ইশারায় যে যার চেয়ার ছেরে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আস্তে আস্তে নিজের জায়গায় চলে গেলো। আমি টেবিলে বসলাম। নিজের চিঠিপত্রের বান্ডিলটা একবার দেখলাম। দেখলাম ঝিমলি আর তনুর চিঠি আছে। বাকি গুলো সব লেখার ওপর আর ইনভিটেসন কার্ড। মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন। বল। তুই কি অফিসে পৌঁছে গেছিস। এতোক্ষণে খবর চলে যাওয়ার কথা। তোর কি হয়েছে বলনা। কিছু না। যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে গেলি। আমি ঠিক আছি। বড়মা মন খারাপ করছে। দোষ করেছে ফল ভোগ করতে হবে। এখন রাখ কথা বলতে ভালো লাগছে না। আচ্ছা। মল্লিকদা কাছে এলো। শরীর খারাপ। না। মন খারাপ। না। তাহলে কেমন কেমন যেন লাগছে। মল্লিকদার টেবিলের ফোনটা বেজে উঠলো।
যাও তোমার ফোন এসেছে। আমি ঝিমলির চিঠিটা খুলে পরলাম। ফোন না করার জন্য অনেক কথা লিখেছে। অনেক মান অভিমান। ডাক্তারীতে চান্স পেয়েছে। আমি খুব লাকি। আগামী সপ্তাহে ভাইজ্যাক যাবে আমাকে একবার সময় দিতে হবে। মল্লিকদা কাছে এসে বললো। দাদা তোকে একবার ডাকছে। তুমি যাও আমি যাচ্ছি। মল্লিকদা চলে গেলো। আমি তনুর চিঠিটা পরলাম। তনু অনেক কথা লিখেছে। বিবিসির একটা ভালো পোস্ট হোল্ড করছে। আমি মালিক হয়েছি সেই খবরটা কেনো জানাইনি তার জন্য তলব করেছে। পারলে একবার লন্ডন যাওয়ার অনুরোধ করেছে। আমি নিউজ রুম থেকে সোজা চলে এলাম দাদার ঘরে। দেখলাম তিনজনে বসে কথা বলছে। কিরে তোর নাকি মেজাজ বিগড়ে গেছে। আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললাম। এ খবরটা আবার তোমায় কে দিলো। তোর বড়মা বললো। একটু চা খাওয়াবে। সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস। না। কি খাবি বল। ডিম টোস্ট বলো। নিরঞ্জনদাও কিছু খায় নি। দাদা বেলে হাত দিতেই হরিদা ঘরে এলো। হরি চারটে ডিমটোস্ট বানিয়ে নিয়ে আয়তো। হরিদা বেরিয়ে গেলো। তুমি ওরকম ভেটকিমাচের মতো মুখ করে বসে আছো কেনো। দাদাকে বলেছো। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকালো। বলেছি। দাদা কি বললো। তুই চুপ কর। তোর জন্য সব গন্ডগোল। হেসেফেললাম। ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম মিঃ ব্যানার্জীর ফোন। প্রথমে ভাবলাম রিসিভ করবো না। তারপর ঠিক করলাম রিসিভ করি। হ্যাঁ দাদা বলুন। অনি বাবু খবর কি। খুব ভালো আপনার প্রাক্তনস্ত্রীকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করলাম। আপনার কথা রেখেছি। খুশিতো। মিঃ ব্যানার্জী চুপ করে গেলেন। কোনো কথা বললেন না। কি হলো কথা বলচেন না কেনো। আপনি খুশী নন। দেখলাম সবার মুখ চোখের চেহারা বদলে গেলো। আপনার সঙ্গে একটু দরকার ছিলো। আমি জানি। কবে সময় হবে। দিন সাতেকের আগে হবে না। আমার একটু তাড়া ছিলো। আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে নিন। আপনার এখনো বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। আজই একটা সময় দিন। খুব দরকার। হবেনা আমি কলকাতায় কয়েকঘন্টার জন্য এসেছি। আবার ফিরে যাবো। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে। না। রাখি। একটু সময় পাওয়া যাবে না। যাবে সাতদিন পর। ওই যে আপনার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম। ফোনটা কেটে দিলাম। আমার চোখে মুখের চেহারা যে বদলে গেছে দাদা সেটা বুঝতে পেরেছে। আমি দাদার টেবিলের ফোনটা চেয়ে নিলাম। সনাতনবাবুকে ফোনে ধরে বললাম আমাদের কমপিউটার ডিভিসনের চিফ ম্যানেজারকে একটু ডেকে আনুনতো। দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা গম্ভীর। নিরঞ্জনদা ফ্যাকাশে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। হরিদা প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঢুকলো। আমি একটা প্লেট টেনে নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে আরম্ভ করলাম। কিরে ওই ভাবে খাচ্ছিস! দরকার আছে। কোথায় যাবি আবার। দেখোনা রগরটা। ওরা তখনো খাবারে হাত দেয়নি। আমার খাওয়া হয়ে গেলো। ঢক ঢক করে জলটা গিলে নিলাম। আর এক প্লেট আনাই। না। তুই আমারটা খা। মল্লিকদা বললো। উঃ তোমরা বড়ো বিরক্ত করো। ওরা অবাক হয়ে আমার কীর্তি কলাপ দেখছে। সনাতনবাবু ঘরে ঢুকলেন। পেছন পেছন সেই ব্যক্তি। উনি হয়তো আমায় দেখেছেন আমি এখনো পর্যন্ত ওনাকে দেখি নি। আলাপও হয়নি। বসুন। ভদ্রলোক বসলেন। আপনার নাম। দিগন্ত চৌধুরী। আমি অনি ব্যানার্জী। আমি জানি। আজ আপনার সঙ্গে পরিচিত হলাম। আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম। হরিদা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমিতাভদা আমাকে গোগ্রাসে গিলছে। মল্লিকদা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সনাতন বাবু ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছেন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিগন্তবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার একটা উপকার করতে পারবেন। বলুন। দশটা থেকে দশটা পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত আমাদের হাউস থেকে আউট গোয়িং কলের একটা লিস্ট আমাকে একটু বের করে দিতে পারবেন। হ্যাঁ। এই টুকু কাজ। খুব সামান্য। কিন্তু কনফিডেন্সিয়াল। আশারাখি আপনি সেটুকু বজায় রাখবেন। অবশ্যই। এখুনি যাই। চাটা খেয়ে নিন। আর একটা কথা আপনি এটা নিজে হাতে করবেন কাউকে দিয়ে নয়। ঠিক আছে। উনি চা খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি সনাতনবাবুর দিকে তাকালাম। সুনিতদার চিঠিটা রিসিভ হয়ে এসেছে। এসেছে। কিংশুকের। এসেছে। টাকার কথা কি বললো। দিতে পারবে না। ঠিক আছে। আমার কাগজগুলো নিয়ে আসুন। সুনিতবাবু বেরিয়ে গেলেন। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। দাদাকে যাওয়ার ব্যাপারটা বলেছো।
না। কেনো। তুই বলবি। বাঃ আমি কলা ছাড়িয়ে দেবো তুমি খালি খাবে। তুই আর কত অপমান করবি। দেখছোদাদা নিরঞ্জনদা কি বলছে। আমি শুনলাম ওর মুখ থেকে। অনিমেষ কি বলছে। কেনো সব নিরঞ্জনদাকে শুনিয়েছি। কিছু গোপন করিনি। কিরে নিরঞ্জন তুই এটা বলিসনিতো। এমনকি বড়মার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছি। তুই কথা বলিসনি কেনো। একটু কষ্টপাক না হলে শক্ত হবেনা। আমাকে অন্ততঃ ছ’বার ফোন করেছে। তোমার আনন্দ হচ্ছেনা। কেনো। তোমাকে কোনোদিন বড়মা এইভাবে ছ’বার ফোন করেছে। দাদা হো হো করে হেসে ফেললো। মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছে। ভায়ের উপকার করতে যাবে একটু কষ্টপাবে না তা হয়। আমি ফোন করি। সে তুমি করতে পারো আমি কথা বলবোনা। আবার হাসি। কিরে নিরঞ্জন বুঝতে পারছিস। নিরঞ্জনদা মাথা নীচু করে বসে আছে। দাদাকে আর সব খোলাখুলি বলেছো না পেটে রেখে দিয়েছো। সব বলেছি। ওখানথেকে ফোন এসেছিলো। টাইম ওভার হয়ে গেছে। না ফোন আসে নি। তাহলে বুঝতে পারছো। কাজ শুরু হয়েগেছে। নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকালো। তাকিয়ে লাভ নেই। এটাই অনির গর্ব। মুখে যা বলে তা করে। দিদিকে ফোন করেছো। না। কেনো। চুপচাপ। তোমার জন্যই কিন্তু মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। একদিকে অনি আর একদিকে নিরঞ্জন। না পারচে ওগড়াতে না পারছে গিলতে। উভয় সংকট। নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফললো।
দিগন্তবাবু দরজা ঠেলে মুখটা ঢুকিয়ে বললো আসতে পারি। আসুন। ভদ্রলোক আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। আমাকে লিস্টটা দিয়ে বললো। আর কিছু আপনাকে সাহায্য করতে পারি। না। অনেক ধন্যবাদ। আজ আপনার সঙ্গে ঠিক জমিয়ে গল্প করতে পারছিনা। হাতের কাজ সেরে বশে আপনার সঙ্গে কথা বলবো। ঠিক আছে। আমি আসি। আসুন। আমি কল লিস্টের দিকে ভালো করে চোখ বোলালাম। দাদাকে বললাম পেনটা দাওতো। দাদা পেনটা এগিয়ে দিলো। আমি বেশ কয়েকটা নম্বর দাগ দিলাম। ফোনটা তুলে নিয়ে সনাতনবাবুকে রিং করলাম দেখলাম নো রেসপন্স হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে পরেছেন। আমার কথাই ঠিক মিনিট খানেকের মধ্যে সনাতনবাবু দাদার ঘরে ঢুকলেন। বসলেন। আমাকে কাগজগুলো হাতে দিলেন। কি ব্যাপার ছোটবাবু অফিসে সবাই কিরকম তটস্থ তটস্থ মনে হচ্ছে। কি করে বলবো। আপনি এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আপনি খোঁজখবর নিন। কাগজগুলো দেখতে দেখতে হিমাংশুকে একটা ফোন লাগালাম। কিরে কোথায়। অফিসে। একবার আসবি। কেনো। একটু দরকার আছে। একটু কাজ ছিলো। থাক। রেখে চলে যায়। মিনিট দশেকের জন্য। আচ্ছা। সনাতনবাবু আমাদের রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে একটু ডাকুনতো। সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা ঠিক বোধোগম্য হচ্ছেনা। রিসেপসনিস্ট এখানে আসবে ব্যাপারটা কি। কিহলো হাঁকরে তাকিয়ে আছেন কেনো। ডাকুন। এইবার নিরঞ্জনদা একটু নড়ে চড়ে বসলো। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে। সনাতনবাবু ফোন করলেন। দাদাকে বললাম আর এক রাউন্ড চায়ের কথা বলো হরিদাকে। কিছু খাবি। না। কিছুক্ষণপর ভদ্রমহিলা এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেন। সেই ছলবলিয়া ভাবটা এখনো অক্ষুন্ন। আমিও তাকিয়ে একটু হাসলাম। বসুন ম্যাডাম। উনি বসলেন। ম্যাডাম আপনাকে অনেকে বিরক্ত করছে না। একবারেই না। আপনার কাজ করতে কোনো অসুবিদে হচ্ছে নাতো। না স্যার। স্যার! মুখ তুলে তাকালাম। আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন। বলুন। কললিস্টটা দেখিয়ে বললাম এই নম্বরগুলো কারা চেয়েছিলো আপনাকে একটু জানাতে হবে। আপনি নিচে কন্ট্রোল করছেন। এইবার ভদ্রমহিলা যেনো আকাশ থেকে পরলেন। দাদা মনে হয় আমার চালটা এইবার কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছে। মুখ তাই বলছে। নিরঞ্জনদার চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সনাতনবাবু আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। ম্যাডাম আমার সময় কম। মুখ নীচু করে বসে থাকলে চলবেনা। ভদ্রমহিলা কিছুতেই মুখ তুলছেনা। ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে আরম্ভ করলো। কাঁদছেন কেনো। আমি কি আপনাকে কোনো ইনসাল্ট করলাম। ভদ্রমহিলা মাথা নারছেন। না। তাহলে আপনার আপত্তি কোথায়। ভদ্রমহিলা রুমালদিয়ে চোখ মুছছেন। কিগো রনিতা অনি যা বলছে তুমি উত্তর দিচ্ছনা কেনো। আমি বলতে পারবোনা দাদা। কেনো। ওরা আমার ক্ষতি করেদেবে। কে তারা বলবেতো। সনাতনবাবু ওনাকে শোকজ করুন। উত্তর দিতে না পারলে। স্যাক করুন। সনাতনবাবুর মুখটা ফ্যাকাশে হয়েগেলো। স্যার আমি বলছি। বলুন। উনি পর পর নাম বলেগেলেন। তার মধ্যে চম্পকদা যেমন আছে সনাতনবাবুর নামটাও আছে। নিউজ ডিপার্টমেন্টের একজন আছে। আর্ট ডিপার্টমেন্টের একজন আছে। আমি পার্টিকুলার একটা নম্বর টিক দিয়ে বললাম এই নম্বরটা কে চেয়েছে বলতে পারবেন। এটা সনাতনবাবু চেয়েছিলেন। আপনার কাছে নোটিং করা আছে। আছে। আপনি খাতাটা নিয়ে আসুন। ভদ্রমহিলা বেরিয়ে গেলেন। দাদারাগে ফুলছে। আমি কুল। নিরঞ্জনদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। সনাতনবাবু মাথা নীচু করে বসে আছে। কি দাদা এখনো শিক্ষা হলো না। বিশ্বাসকরো ছোটোবাবু ওই মেয়েটার মতো আমাকেও প্রসার করা হয়েছে। কে করেছে। ডঃ ব্যানার্জী। কেনো। আপনার সঙ্গে ওনার হিসাব বাকি আছে। নাহলে। একজন মাস্তান গোছের লোক দিয়ে আপনাকে ফোন করিয়েছে। হ্যাঁ। সবকটাকে এখানে ডাকুন। সনাতনবাবু সবাইকে ফোন করে করে ডাকলেন। সবার মুখ কালি। ঘর ভরে গেছে। চম্পকদা মাথা নীচুকরে ঘরে ঢুকলো। আমি চুপচাপ বসে আছি। মল্লিকদা নির্বাক। আমি রতনকে ফোন করলাম। ভয়েজ অনকরে সবাই শুনুক। হ্যাঁ অনিদা আমি তোমার খুব কাছেই আছি। জানি তুই থাকবি। দাদার হুকুম। ডঃ ব্যানার্জীর ওখানে কে আছে। লোক আছে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। কুত্তাটা কোথায় আছে। তোলতাই করে নিয়ে এসেছি। গ্যারেজে। ঠিকআছে তুই থাক। সময়হলে ফোন করবো। আচ্ছা। দাদার চোখ মুখ লালা হয়েগেছে। বুঝতে পারছি এখুনি পারলে এদের আঁচড়ে কামরে ছিঁরে দেবে। ডঃ ব্যানার্জীকে ফোন করলাম। আমি জানতাম তুমি ফোন করবে। জানতেন। অবশ্যই। আরেদাদা আপনার বুদ্ধির সঙ্গে পাল্লাদেওয়া সহজ কথা নাকি। পাকামথা বলে কথা। লাইনে কতদিন আছেন। যা বলার পরিষ্কার করে বলো। এরকম হিজরেদের ফৌজ বানালে চলে।
কি বলতে চাও। এখনো পরিষ্কার হচ্ছেনা। আপনার সৈন্য সামন্তরা আমার সামনে মাথা নীচু করে বসে আছে। তুমি জানো আমি কি করতে পারি। মহান ব্যক্তি আপনি আপনার কত ক্ষমতা। অনি সে জায়গায় চুনোপুঁটি। বক বক না করে কাজের কথা বলো। যার ওপর আপনি নির্ভর করে এই কীর্তি করছেন সেতো গ্যারেজ। ডঃ ব্যানার্জী হো হো করে হেসে ফেললেন। একবার ফোন করে দেখুন নো রেসপন্স পাবেন। আমার সামনে বসে আছে। ওটা ডেমি। টাকা কামানোর জন্য। কি বলছো। আপনার সামনে যখন বসে আছে জিজ্ঞাসা করুন। কিরে অবতার কি বলছে অনি। উনি ঠিক কথা বলছেন। শুয়োরের বাচ্চা। খিস্তি করবেন না। মাথার খুলি উরিয়ে দেবো এখুনি। তার মানে। আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। ডাক্তার সাহেব এইবার ঝেড়ে কাশুন। কি বলতে চাও। যদি মনে করি আপনার ডাক্তারখানা থেকে এখুনি তুলে আনবো। কাকপক্ষী টের পাবেনা। চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম। চুপচাপ। কি প্যান্টে পেচ্ছাপ করে ফেলেছেন। তুমি কি বলতে চাও। আপনার ডাক্তারি সার্টিফিকেটটা জাল। সেটা আজ এইমাত্র লন্ডন থেকে খবর এলো। অসম্ভব। আগামীকাল কাগজে একটা গুছিয়ে আর্টিক্যাল লিখি। আপনি কোর্টে প্রমাণ করবেন সত্যি না মিথ্যে। এখনতো কয়েকদিন গ্যারেজ হয়ে যান। স্কাউন্ড্রেল। রাগ করছেন কেনো। এতোবড়ো খেলা খেলতে নেমেছেন। এই সময় রাগ করলে চলে। তুমি কি ভাবছো মিত্রা ছাড়া পাবে। ওটা নিয়ে আপনি ভাবছেন কেনো। আপনি আপনারটা ভাবুন। অনি তুমি আমার এতো বরো ক্ষতি করোনা। হঠাৎ গলার স্বরটা বদলে গেলো মনে হচ্ছে। চুপচাপ। আপনার নামে লন্ডনে আর একজন ডাক্তার প্র্যাক্টিশ করছে। তার নাম এবং সার্টিফিকেট ভাঙিয়ে আপনি চালাচ্ছেন। অনি বিশ্বাস করো। আমার লোক আপনার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পালাবার চেষ্টা করবেন না। আমি এখুনি তোমার কাছে যেতে চাই। এতো তাড়াহুড়ো করছেন কেনো। প্লিজ। আপনার বিশ্বস্ত লোকদের কে ধমকেছে। অবতার। এরা তার নাম জানতো। না। কতটাকা দিয়েছেন। না মানে…..। ত ত করবেন না। আপনার অবস্থা মলের মতো করে ছেরে দেবো। বাঁচতে চান না মলের মতো হতে চান। বাঁচতে চাই। বাবা এত কীর্তি করার পরও বাঁচার সখ আছে। আছে। মিত্রা ছাড়া কটা মেয়ের সর্বনাশ করেছেন। তুমি বিশ্বাস করো। এখানে আমার গুরুজনেরা বসে আছে। নাহলে আপনাকে ধুয়ে দিতাম। ইস তুমি এ কি করলে। লজ্জাশীলা সতী। চুপচাপ। আপনার বিশ্বস্ত অনুচরদের জন্য কি ম্যাসেজ রাখছেন। আর কোনোদিন বিরক্ত করবো না। করলে কি হবে। যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো। প্লিজ তুমি আমায় বাঁচাও।
আমি হো হো করে হেসে ফললাম। বাবা আপনি যে সিংহ শাবক থেকে একেবারে পোষা কুকুর হয়ে গেলেন। তুমি যা বলবে। আপনার ওই টমিটাকে আমার কথা শোনাচ্ছেন। শানাচ্ছি। দ্যাটস গুড। ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার কার নামে আছে। কিসের। নার্সিংহোমের। ওটা লন্ডনে আছে। ফাইন্যালি কালকের কাগজে লেখাটা লিখছি। আমার কাছে আছে। এইতো লক্ষ্মীছেলের মতো কথা। তুমি এভাবে বলোনা। বাবা স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটি করবোনা। কারনামে আছে। অমিতাভদা ফিক করে হেসে ফেললো। আমার নামে আছে। আপনার না আপনার ছেলের নামে। আমার নামে। আপনার আর আপনার ছেলের নাম এক। না। নামটা ওর আছে সইটা আমার। বাঃ আপনার গুণে নুন দেওয়ার জায়গা নেই। কজন জানে ব্যাপারটা। কেউ জানে না। মিত্রার কাছ থেকে কটা স্টাম্পপেপারে ব্ল্যাঙ্ক সই করিয়েছেন। সব আছে আমার কাছে। এইতো গুড বয়ের মতো ব্যবহার করছেন। কালকে সকালে দাদার বাড়িতে চলে আসবেন সব নিয়ে। নাহলে বুঝতে পারছেন। হ্যাঁ সব বুঝতে পারছি। কাল পর্যন্ত আপনাকে পাহারা দেওয়ার মতো লোক রেখে দিচ্ছি। কাল কাজ মিটে গেলে তারপর আপনি স্বাধীন। কারুর সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন না। তাহলে সব গড়বঢ় হয়ে যাবে। ঠিক আছে। আজ রাতটা ডিসপেনসারিতে কাটান। কাউকে দিয়ে ফাইল পত্র আনিয়ে নিন। বাইরে বেরোলে আপনার জীবন সংশয় হতে পারে। তার দায়িত্ব আমি নেবোনা। তুমি যা বলবে, করবো। তাহলে আপনার কোন বিশ্বস্ত অনুচরকে সঙ্গে নেবেন বলুন। সনাতনবাবু গেলে ভালো হয়। আমি যাবোনা। শুনছেন। তাহলে অন্য কাউকে দাও। আমরা কেউ যাবোনা। সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো। শুনছেন। হ্যাঁ। তাহলে আমি যাবো। তুমি যাবে! হ্যাঁ। আপনার অসুবিধে আছে। না মানে। আপনার ঘরে যে ছেলেটি বসে আছে তাকে দিন। নাও। দাদা আমি আবিদ। তুই! তুই ওখানে কি করছিস। রতনদা এখানে ডিউটি দিয়েছে। তোকে রতন ওখানে বসিয়ে রেখেছে! হ্যাঁ দাদা। মালপত্র সঙ্গে আছে না খালি হাতে বসে আছিস। সব সাঁটানো আছে। বাইরে কারা আছে। ও নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। মাছি গলবে না। এককাজ কর তোদের গাড়ি নিয়ে ডাক্তারকে সঙ্গে করে ওর বাড়িতে যা। কাগজপত্র সব নিয়ে নিবি। ওর পাসপোর্ট পর্যন্ত। সব দেখে নিবি। তারপর তুলে নিয়ে গিয়ে একটা হোটেলে রেখে দে। আচ্ছা দাদা। ফোনটা কার। ফোনটা আমার সিমটা ডাক্তারের। এত বুদ্ধি তোর হলো কিকরে বলতো। তোমার পাল্লায় পরে। আবার হো হো করে হেসে ফেললাম। তুমি হেসোনা। যা হুকুমদেবে করবো। ডাক্তার শুনছে। সব রেকর্ডিং করছি। এইতো তোদের মাথা খুলেছে। রতনদা ফোন করছে। ঠিকআছে ডাক্তারকে দে। ধরো। শুনলেন আমার কথা। হ্যাঁ শুনছি। তাহলে বুঝতে পারছেন। পারছি।
ছটার মধ্যে সব কাগজপত্র নিয়ে অফিসে চলে আসুন। পালাবার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কালকে সকালের সূর্য আর দেখতে পাবেন না। ওটা আমার হাতে নেই সব এখন ওদের হাতে। তুমি বিশ্বাস করো আমি ঠিক ছ’টার মধ্যে চলে আসবো। রাখছি। ফোনটা কেটেই রতনকে ফোন করলাম। হ্যাঁ দাদা। ডাক্তারের ওখানে কে আছে। আবিদ। বাবাঃ তোর বুদ্ধি দেখছি এই কদিনে একেবারে পেকে আমসত্ব হয়ে গেছে। সব তোমার আর্শীবাদ। আবিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সব ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবু তুই ওকে একবার মনিটরিং কর। ঠিক আছে দাদা। কাজ হয়ে গেলে আমাকে ফোন করবি। আচ্ছা। অবতারকে কোথায় রেখেছিস। আমাদের খাস ডেরায়। ওর সঙ্গে রাতে বসবো। ফোন সুইচ অফ করবিনা। ঠিক আছে। বস ফোন করেছিলো। হ্যাঁ। তুমি বেরিয়ে আসার পর। ঠিক আছে পরে কথা হবে। আচ্ছা দাদা। আমি ফোনটায় সব রেকর্ডিং সেভ করলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে বারোটা বাজে। বেরোতে হবে। ঘরে পিন পরলে শব্দ শোনা যাবে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। দাদার চোখ দুটো লালা ডগডগে। মল্লিকদা থম মেরে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম একটু চা খাওয়াবে। দাদা সঙ্গে সঙ্গে বেলে হাত দিলো। তুমি এদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে বলো। দূর করে দে। এদের কাছে আমার ফোন নম্বর ছিলোনা। একটা কেউ ফোন করতে পারেনি। এটলিস্ট তোমাকে জানাতে পারতো। কিরে চম্পক কবে থেকে এই ঘটনা চলছে। মলের কেশটা যেদিন ঘটলো সেদিন থেকে। আমাকে জানাসনি কেনো। জানাতে এসেছিলাম হরিদা ঢুকতে দেয়নি। ফোন ছিলেনা। যদি ট্যাপ হয়। আমাদের হাউসে এখন এর ফোন সে শোনে। সনাতনবাবু। আমার ভুল হয়েগেছে। আপনাদের। সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। তুমি আবার এদের হয়ে আমাকে বলো। আজ প্রতিজ্ঞা করছি আর কোনোদিন বলবো না। তুমি এদের মানুষ করতে পারবেনা। এরা সবাই মনুষ্যত্বহীন। বুঝতে পারছো কাগজটাকে এরা কোথায় নামিয়ে নিয়ে গেছে। একটা মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কি না করেছে এরা। ম্যাডাম। ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করলেন। আমার ফোন নম্বর আপনার কাছে আছে। না স্যার। নিয়ে নিন। আপনার নম্বরটা বলুন। উনি বললেন আমি ওনার মোবাইলে ডায়াল করলাম। সেভ করে নিন। কাউকে দেবেন না। আপনি মেয়ে মানুষ। পথে ঘাটে যেখানেই কোনো সমস্যায় পরবেন একবার ডায়াল করবেন। আশারাখি আপনার কোনোদিন সমস্যা হবেনা। আচ্ছা স্যার। আর একটা কথা সবার সামনে বললে আপনি অপমানিত বোধ করবেন না। না স্যার। নিজেক সংশোধন করুন। আপনার অনেক মাইনাস পয়েন্ট আছে। আমি জানি। সবার সামনে বলছিনা। নিজেকে বড্ডবেশি আল্গা করে ফেলেছেন। ম্যাডাম কেঁদে ফেললেন। কেঁদে কোনো লাভনেই। অন্য জায়গা হলে আজকে আপনাদের সকলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করেদিত। আমি তা করছিনা। লাস্ট চান্স দিলাম। উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললেন। আমায় ক্ষমা করুন। একি করছেন আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। আমি ক্ষমা করার কে। দাদার কাছে ক্ষমা চান। উনি আপনাদের রক্ষা করছেন। চম্পকদা। আমি কিছু বলবোনা তুই যা শাস্তিদিবি মাথা পেতে নেবো।
এই নিয়ে কবার হলো। জানি। সনাতনবাবু। চম্পক যা বললো আমারও তাই মত। যান আপনারা। আপনাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না। ছোটোবাবু বিশ্বাসকরো আমরা কলুর বলদ হয়ে গেছি। কি করবো। সুনিতের ঘটনার পর সবাই তোমাকে দেখে তটস্থ। তারমানে! আপনারা সবাই দোষী। তাই অনির ভয়ে তটস্থ। সুনিতদার মতো কটালোক এই হাউসে আছে। জানাবো। নামগুলো দিন আমাকে। দেখি তার বুকের খাঁচাটা কতো ইঞ্চি। চম্পক না করলেও আমি তার লিস্ট তোমাকে দেবো। দিন। তারপর দেখছি। আমি এখন বেরোবো। ঠিক ছটার মধ্যে ঢুকবো। আচ্ছা। সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। দাদাকে বললাম হরিদা চা দিলোনা। দাদা বেল বাজাতেই হরিদা মুখ দেখালো। ঢালছি। নিয়ে আয়। হরিদা একে একে চা নিয়ে এলো। তিনজনেই থম মেরে বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন। ভয়েজ অন করলাম। বল। সত্যি অনি তুই আমার গুরু। মিত্রার ফোন থেকে ফোন করছো। আমারটায় ভয়েজ নেই তাই। পেছনে লোক লাগিয়েছিলে কেনো। হো হো করে হেসে ফেললো। ফোনটা যেনো ফেটে যাবে। সত্যি তোর চোখ। অনেক কষ্টে বানাতে হয়েছে। মনে রাখবে যেদিন অনির চোখটা নষ্ট হয়ে যাবে সেদিন অনি মরেগেছে। তুই এই কথা বলিসনা। আমরা তাহলে কোথায় যাবো। তোমার গাড়ির নম্বর কোথা থেকে ফলো করছিলো বলবো। না। আমি জানি। সত্যি কথা বলো। সকালে তুই যখন রতনের ফোনটা জোড় করে চাইলি তখনই বুঝেছি তুই আজকে কিছু একটা খালা খেলবি। তোর নেক্সট টার্গেট আমার জানা ছিলো। তাই ঘুটি সাজালাম। অন্যায় করেছি বল। না। আমি বড়দিদের সব বলেছি। কেনো। বড়দি মাথায় হাত রেখে বললো বল অনি কেনো আমার সঙ্গে কথা বললো না। তখন সব গড় গড় করে বলে দিলে। কি করবো বল। হার্টবিটটা দেখেছিলে। ওখানে দশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ডাক্তার নেই। কিছু হবেনা। ইসলামভাই মরে যায়নি। আল্লা কসম। রতনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আবিদ রওনা দিয়ে দিয়েছে। তুমি মনিটরিং করো। অবতারকে এখন কিছু কোরোনা। তুই না বলা পর্যন্ত কিছু করবোনা। তোমরা এখন কোথায়। তোর ঘরে। আর কে আছে। আমরা তিনজন। ও। স্নান খাওয়া দাওয়া হয়েগেছে। না। সবাই তোর শেষ রেজাল্টটা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। মিত্রার হার্টবিটটা ছোটমাকে দেখতে বলো। ফিক করে হাসির আওয়াজ হলো। কে হাসলো। মিত্রা। বাবা। আমরা সবাই টেনসড ও একবারে নর্মাল। তুই এতদিনে ওর মনের মতো কাজ করছিস। শেষ রেজাল্ট কাল সকালে জানতে পারবে। কেনো লেট করছিস। এখন অনিমেষদার ওখানে যাবো সবার লাঞ্চের নেমন্তন্ন। তুই নিরঞ্জনদাকে বাঁচিয়ে দিলি। ওকে মারার ইচ্ছে ছিলো। বড়মার জন্য এযাত্রায় রক্ষা পেলো। এভাবে বলিসনা। তুই এখন কোথায় ? দাদার ঘরে। তোমার কথা সবাই শুনছে। বড়দির সঙ্গে কথা বল। দাও। কিরে এখনো রাগ করবি। আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই। চুপচাপ। চুপকরে রইলে কেনো। তুই এভাবে বললিকেনো বড়মা কাঁদছে। মিত্রার গলা। কাঁদতে দে। এভাবে বলিসনা। তাহলে কিভাবে বলবো। মিত্রা সব বলেছে। আর কোনোদিন হবে না। আমি তিন সত্যি করছি। বড়মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো। দাদার সঙ্গে কথা বলো।
দে। দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। হরিদা পেছন থেকে ডাকলো। ছোটোবাবু। কিগো হরিদা। হিমাংশু সাহেব অনেকক্ষণ এসেছে। দিদিমনির ঘরে বসিয়ে রেখেছি। এমা আমাকে আগে বলবেতো। তুমি ঘরের মধ্যে যা শুরু করেছিলে। দুবার গিয়ে ফিরে এসেছি। চা দিয়েছো। হ্যাঁ। আমি মিত্রার ঘরের দিকে গেলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই হিমাংশু উঠে দাঁড়ালো। আবার কি হলো। আর বলিসনা। সব শালা হারামী। হিমাংশু মুচকি হাসলো। আমি ওর পাশে বসে সংখেপে সব বললাম। ও শুনে থ। কালকেই রেজিষ্ট্রি করবো। সব ব্যবস্থা কর। আজ বিকেলে অফিসে একবার আয়। তুইতো আমাকে মেরে দিবি। কি করবো তুই বল। সেও ঠিক মালিক হওয়ার পর নিঃশ্বাস নিতে পারছিস না।। দাঁড়া। মিত্রার টেবিলের ফোনটা নিয়ে দাদার ঘরে ফোন করলাম। হ্যালো। দাদা নিরঞ্জনদার কাছে একটা দলিল আছে। হরিদাকে দিয়ে মিত্রার ঘরে পাঠিয়ে দাও। ফোনটা রেখে দিলাম।
হরিদা কিছুক্ষণপর এলো। এই নাও। হরিদা তোমার ছেলে কোথায়। দাদা নিউজ রুমে ডিউটি দিয়েছে। বলেছে দিদিমনি এলে দিদিমনির ঘরে থাকবে। তাই। তুমি খুশি। হ্যাঁ ছোটবাবু। ছেলেটা একেবারে বকে যাচ্ছিল। একবার কথা বলিয়ে দিও। ঠিক আছে। হরিদা চলে গেলো। হিমাংশুকে সমস্ত পরিকল্পনার কথা বললাম। তুই কি করতে যাচ্ছিস একবার ভেবে দেখেছিস। আমি ভেবে চিন্তেই সব করছি। এখানে আমার লোককে ফুল টাইম রাখতে হবে। ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তাই কর। না হলে আমার পক্ষে ম্যানেজকরা সম্ভব নয়। বলছিতো তাই হবে। তুই এই দুটো আগে সাল্টা। বিকেলে একবার অফিসে আয়। ঠিক আছে। এখন উঠি। শোন স্টাম্পপেপার কিনে নে। কতোটাকার কিনবো। লাখখানেক টাকার। তোর আগের বিলগুলো পেয়ে গেছিস। হ্যাঁ। ঠিক আছে যা আমি কিছু কাজ সেরে নিই। হিমাংশুকে ছেড়ে সোজা নিউজরুমে চলে এলাম। আমাকে দেখেই ঘরটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। সন্দীপ উঠে এলো। আর সেই ছেলে দুটো। অনিদা শরীর খারাপ। না। তোমার মুখটা কেমন কেমন লাগছে। আমি একটার পিঠ চাপরে বললাম, সব সময় অনিদার মুখটা ঝকঝকে থাকবে তা হয়। চেষ্টা করি। হয়না। চা নিয়ে আসবো। খাওয়াবি। তোমাকে চা খাওয়াবো এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। যা বলে আয়। ছুটে চলেগেলো। সন্দীপকে নিয়ে আমার টেবিলে এসে বসলাম। সন্দীপ বুঝলো জরুরি কথা আছে। বল। আমি পর্শুদিন ব্যাক করে যাবো। আমার সঙ্গে দাদা মল্লিকদা যাবে। কাগজ সামলাতে পারবি। এই কাজ। সন্দীপ এমন ভাবে কথা বললো যেনো কিছুই না। সাতদিন আগেও সন্দীপ কিছু বলতে গেলে সাতবার ভাবতো। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তাকিয়ে আছিস কেনো। বিশ্বাস হচ্ছেনা। হাসলাম। আমি কথা দিচ্ছি। তোর ওই দুটো পোলা যদি থাকে আমার কাউকে দরকার নেই। তৈরি করে নিয়েছিস। কাজের ব্যাপারে দারুন সিরিয়াস। এরি মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে লেগে গেছে। কেনো। ওরা রিপোর্টিংয়ে ভুল ধরে। হাসলাম। সলিড মাল। চা এলো। কিরে তোরা ঝগড়া করছিস সিনিয়ারদের সঙ্গে। সন্দীপদা বলেছে। হাসলাম। সন্দীপকে বললাম জলের বোতলটা এগিয়ে দে। ছেলাটা এগিয়ে দিলো। ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। চায়ে চুমুক দিলাম। দুদিনের কাগজের খবর কি। হট কেকে। নো রিটার্ন। কালকেরটা বেরোতে দে। বেরোতে দে মানে। এতোক্ষণে ছাপা হয়ে বাইরের কাগজ চলে গেছে। ফলোআপ করে যাচ্ছিস। তোর চেলা দুটো এঁটুলে পোকার মতো লেগে আছে। নাম ফাটছে না। হরিদা এসে দাঁড়ালো। দাদাবাবু ডাকছে। কেনো। কোথায় যাবার আছে উনি ফোন করেছেন। যাও যাচ্ছি। সন্দীপের সঙ্গে কথা শেষ করে দাদার ঘরে এলাম। অনিমেষ ফোন করেছিলো। তুমি কথা বলেছো। হ্যাঁ। আমাদের জন্য তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। চলো বেরিয়ে পরি। মল্লিকদার মুখটা খুশি খুশি দেখাচ্ছে। এতোক্ষণ একটা বিষ কালো মেঘে মুখটা ঢেকে রেখেছিলো। আমাকে দেখেই হেসে মুখটা নীচু করলো। বুঝলাম ছোটমা বড়মার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। এইনে তোর ফোন। দাদার হাত থেকে ফোনটা নিলাম। অফিসের গাড়িতে যাওয়া যাবেনা। ট্যাক্সিকরে যেতে হবে। অমিতাভদা আমার মুখের দিকে তাকালো। আমরা বেরিয়ে এলাম। নীচে রিসেপসনিস্ট ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে নিলেন। আমরা বাইরে এলাম। নিরঞ্জনদার ড্রাইভার এগিয়ে এলো। নিরঞ্জনদা ওনাকে এখানেই অপেক্ষা করতে বললেন। সিকুরিটির ছেলেটিকে বললাম একটা ট্যাক্সি ডেকে আন। ছেলেটি একটা ট্যাক্সি নিয়ে এলো। ইসমাইল এগিয়ে এসে বললো ছোটদা আমি যাবো না। হাসলাম। দিদিমনি কেমন আছে। ভালো। তোর ছেলে কেমন আছে। এখন একটু ভালো। আমি ফিরে আসছি একবার দেখা করিস। আচ্ছা। ট্যাক্সি আসতে আমরা তিনজন উঠে বসলাম। আমি অলি গলির মধ্যে দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে অনিমেষদার বাড়ি পৌঁছলাম। দাদা আমার ওপর গজ গজ করছে। কলকাতা শহরে আর কি কোনো রাস্তা নেই। তুই কি আমাদের রাস্তা চেনাচ্ছিস। আমি চুপচাপ। ট্যাক্সি ড্রাইভার আমার ওপর বিরক্ত হচ্ছে। মুখে কিছু বলতে পারছে না। অনিমেষদার বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি ছেড়েদিলাম। পকেট থেকে ফোনটা বার করে রতনকে একটা ফোন করলাম। অনিদা বলো। আমাক আর পাহারা দিতে হবে না। উঃ তুমি ধরে ফেলেছো। কেনো অলি গলি দিয়ে ট্যাক্সি করে এলাম বুঝতে পারলিনা। দাদা আজ তোমার পেছন ছারতে বারন করেছে। আমি তোকে বলছি তুই যা। এখান থেকে যখন বেরোবো তোকে জানাবো। খাওয়া দাওয়া করেছিস। হ্যাঁ দাদা। তোর সঙ্গে যারা আছে। তাদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে। হ্যাঁ। ওটাকে কোথায় তুললি। আমাদের হোটেলে। কাগজপত্র সব নিয়ে এসেছে। আবিদ দেখে নিয়েছে। ব্যাটা সব নিয়ে আসতে চাইছিল না। আবিদ ওর আলমাড়ির সব কাগজ নিয়ে চলে এসেছে। এক ট্র্যাঙ্ক। করেছিস কি তোরা। তোমার কোনটা দরকার কি করে জানবো। ঠিক আছে তুই এখন যা। আচ্ছা দাদা। দাদার দিকে তাকালাম। দাদা একবার চলতে চলতে থেমে আমার দিকে তাকালো। নিরঞ্জনদা দেখছে। মল্লিকদা মুচকি হাসছে। দাঁড়ালে কেনো চলো। তোকে দেখছি। দেখে লাভ নেই। বাঁচতে গেলে এসব করতে হবে। মালিক বানিয়েছো। দাদা মাথা নীচু করে আমার পাশে পাশে হাঁটছে। দোতলায় উঠে বেল বাজাতেই কাজের মেয়েটি দরজা খুললো।
আয় ভেতরে আয় তারপর তোর পিঠ ভাঙছি। অনেক বড় রাইটার হয়ে গেছিস। বৌদির গলা। এখন পিঠ ভেঙোনা আমার সঙ্গে অনেকে আছে। জুতো খুলতে খুলতে বললাম। ভেতরে ঢুকে বৌদিকে প্রণাম করলাম। আমার পেছন পেছন সবাই ঢুকলো। আমি ছাড়া এই বাড়িতে সবাই প্রথম এলেন। দাদার সঙ্গে অনিমেষদার পরিচয় আছে। এই পর্যন্ত। কাজের তাগিদে পরিচয়। সব কাগজের এডিটরের সঙ্গেই অনিমেষদার পরিচয় আছে। আমি দাদার সঙ্গে নিরঞ্জনদার সঙ্গে মল্লিকদার সঙ্গে বৌদির পরিচয় করিয়ে দিলাম। দাদা ঘরের ভেতর ছিলেন বেরিয়ে এলেন। তাহলে তুই এলি। কেনো সন্দেহ ছিলো।
তুই এখন কাগজের মালিক। কোটি কোটি টাকা তোর। আমার মতো নগণ্য মানুষকে পাত্তা দিবিকিনা সন্দেহ ছিলো। বৌদি আমি আসি যেদিন কাগজের মালিক থাকবোনা সেদিন আসবো। এ জম্মে হবে না। তুই যে ভাবে পাকে পাকে জড়াচ্ছিস। মাথা নীচু করলাম। চলুন দাদা আমরা ভেতরে যাই। ও এখানে থাকুক। দাদার সবাই অনিমেষদার সঙ্গে ভেতরে চলে গেলো। ছোটো ম্যাডাম কোথায় ? কলেজে। এসে পরলো বলে। কি রান্না করেছো। মন্ডা মিঠাই। তাহলে খাবো না। তোর জন্য স্পেশাল রান্না আছে। আলুপোস্ত ডাল ছাড়া তো কিছু খাস না। কে দেবে বলো। এখন তবু বড়মার কাছে থাকি। বিয়ে করছিস কবে। তোমাকে সব বলবো। তারমানে করা হয়ে গেছে। আমার আবার বিয়ে। কেনো মিত্রাকে পেয়েছিসতো। পেয়েছি। এই যা। বৌদির পেছন পেছন রান্না ঘরে এলাম। তোর দাদার মুখ থেকে কিছু কিছু শুনি। কালকে তোর লেখাটা পরে বলেছি। এই বার অনির কলমের ধার অনেকটা কমে যাবে। না বৌদি তা হতে দেবোনা। তুমি দেখবে। হলেই ভালো। কি করবে। খাবার গুলো একটু গরম করি। তুমি সরো আমি করে দিচ্ছি। না তোকে এখন কিছু করতে হবে না। তুইকি এখন সেই অনি আছিস। বিজনেস ম্যাগনেট বলে কথা। তুমিও বলবে। আচ্ছা বাবা বলবো না। সুরো কখন আসবে। ওর বাবা ফোন করেছিলো। বললো অনিদা আসবে আমি বেরোচ্ছি। চলো জায়গা করে নিই খিদে পেয়েছে। কাকলী। বৌদির ডাকে কাজের মেয়েটি রান্নাঘরের সামনে এলো। জায়গা করেছিস। হ্যাঁ। আমি গিয়ে ডেকে আনি তুমি ব্যবস্থা করো। সবাই একসঙ্গে বসবো। যা।
আমি ঘরে এলাম। ঘরের আবহাওয়া বলছে বেশ জটিল আলোচনা চলছে। সবার মুখচোখ তাই বলছে। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। আসুন স্যার। এইভাবে বললে আর আসবোনা। তোকে আসতে হবেই। তোর থেকে আমার ক্ষমতা বেশি। দরকার নেই ছেড়েছুরে পালিয়ে যাবো। পারতিস। যদি বাঁধা না পরতিস। একথা বলছো কেনো। দাদার মুখ থেকে সব শুনলাম বলে। ও শোনা হয়েগেছে। দেখ আমি বলিনি অনিমেষ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো তাই বললাম। তোমার দ্বারা কিছু হবেনা। তুমি খোঁচাও দেখি কিছু পাওকিনা। অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো। চলো টেবিলে বসে গল্প হবে। ওদিকে সব রেডি। ওরা সবাই উঠে এলো। বেসিনে হাতধুয়ে সবাই টেবিলে বসলো। বৌদি একে একে সবাইকে খেতে দিলেন। আমার পাশের চেয়ারে বৌদি বসেছেন। কাজের মেয়েটিকে বললেন আমি সব দিয়ে দিয়েদিচ্ছি তারপর যার যা লাগবে তুই দিস। মেয়েটি ঘার নেরে পাশে দাঁড়ালো। আমরা খাওয়া শুরু করলাম। বুঝলে মঞ্জু অনিবাবু বিয়ে করেছেন। অনিমেষদা বললো। আঁ। বৌদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। কিরে তুই যে এখুনি বললি আমার কপালে কি ওই সব লেখা আছে। তারপর কি বলেছি তোমায় সময়করে সব বলবো। তোর দাদার মতো এখানেও রাজনীতি। দাদা মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছেন। নিরঞ্জনদা গম্ভীর। আরো আছে। বাবু আরো অনেক কীর্তি করেছেন। পরে তোমায় বলবো। এখানে এসে মাস দেড়েক আগে তোমায় বলেছিলোনা বৌদি এবার আমার অনেক কাজ। বাবু সেগুলো সেরে ফেলেছেন। আমার কাছে জাস্ট পারমিসন নিতে এসেছেন। সঙ্গে তিন সাক্ষী। কিরে তোর পেটে পেটে এতো। তুই কি সাংঘাতিক। তুইতো তোর দাদার থেকে এককাঁটা ওপরে। এককাঁটা কম বললে দশকাঁটা ওপরে। একবারে হ্যাঁ বলবেনা। সেখানে আবার একটা পেঁচ মেরে রেখেছে। আমার পার্টির স্বার্থ লুকিয়ে আছে। না বলতে পারবোনা। উরি বাবা। তবে অনির দম আছে। একা লড়ছে। সংঘবদ্ধ ভাবে নয়। ওর একার ক্ষমতা। জীবনটা অনেক বেশি দেখেছে কিনা। আমি শোনার পর হ্যাঁ বলবে। আগে ওর বৌকে নিয়ে আসবে তারপর। বৌতো ওর মালকিন। মিত্রা! হ্যাঁ। তাহলে ঠিক আছে। ব্যাশ গলে গেলে। যাঃ ওই ভাবে বলোনা। ওতো বলেছিলো। দাদা মল্লিকদার দিকে চোরাচাহুনি মেরে তাকালাম। দুজনেই খুব মজা পাচ্ছে। একজন অন্ততঃ পক্ষে আছে যে অনিকে চমকাতে পারে। অনিমেষদার ফোন এলো। ধরে বললেন মিটিং ৪টের সময় আমি তার পনেরো মিনিট আগে পৌঁছে যাবো। কিরে তুই কিছু নিবিনা। না পেট ভরে গেছে। কেনো। এত কথা শুনলাম দাঁড়াও আগে হজম করি। তাহলে যে বড় বড় কথা বলিস। গ্রামের ছেলে বিড়াল ডিঙবে না। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। বাইরে বেল বেজে উঠলো। কাজের মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। সুরঞ্জনা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা কোনোপ্রকারে রেখেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। অনিদা ফার্স্টক্লাস কেউ রুখতে পারবেনা। সত্যি। তোমার নোট। তাই। ডঃ রায় কি বললো জানো। দশ বছর আগে এইরকম নোট পরেছিলাম। তুই বলিসনিতো। পাগল। তাহলে আমার দর কমে যাবেনা। দেখ কিরকম গুরু মারা বিদ্যে শিখেছে। বৌদি বললো। তোমার কথা ডঃ রায় এখনো আমাদের বলেন। গত দশবছরে কলেজ থেকে একটাও ফার্স্টক্লাস বেরোয়নি। তুই পেয়ে দেখিয়ে দে। পাবই। তোমার সব নোট জলবততরলং। বৌদি অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো। তোমার কাগজে একটা লেখার সুযোগ দেবে। ওই যে এডিটর সাহেব বসে আছেন। উনি অমিতাভ চক্রবর্তী! সুরঞ্জনা ছুটে গিয়ে দাদাকে প্রণাম করলো মল্লিকদাকে নিরঞ্জনদাকে। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। বাবা হাসছে কেনোগো অনিদা। বাবাকে জিজ্ঞাসা কর। দাঁড়াওনা আগে তোমার মতো হই। তারপর বাবার পার্টির পর্দা ফাঁস করবো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। অনিমেষদা হাসতে হাসতে বলে উঠলো অনি তাহলে একটা চেলা তৈরি করলো। একটা কিগো অনিমেষ, অফিসেও দুটো চেলা তৈরি করেছে। একবারে জমপেশ। দাদা বললো। তাইনাকি। আর বলো কেনো। অনিদা তুমি আমাকে তৈরি করোতো। ঠিকআছে কালকে থেকে লেগে পর। অমিতাভ জেঠুতো পাত্তাই দিলো না। ঠিক আছে মালিক হুকুম করবে এডিটরকে। তোর লেখা ছাপা হবেই। আবার সবাই হেসে উঠলো। কলি আমার ভাতের থালা নিয়ে আয়। মা তুমি সরে বসো। আমি অনিদার পাশে বসবো। সুরঞ্জনা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার পাশে বসলো। আজ আমার পাত ফাঁকা। তোর অনিদা বিয়ে করেছে। বৌদি বললো। উঁ হুঁ হুঁ অনিদা এটা কি করলে। তুই বিশ্বাস কর। ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে জমপেশ করে সেজে বরযাত্রী যাবো। আচ্ছা আমি বিয়ে করবো তুই জানতে পারবিনা তা হয়। মা বললো যে। মিথ্যে কথা। তুই বিশ্বাস করিস।