What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (2 Viewers)

না বাড়িতে পরার ক্ষেত্রে ঠিক আছে।
সত্যি করে বলো না। এখন কিন্তু মেয়েরা এই পোষাক পরে বাইরেও বেরোয়।
তোমার কথা হয়তো ঠিক, কিন্তু আমার চোখে পরে না।
ওপরেরটা সাধারণ টপ, নিচেরটাকে বলে হারেম পেন্ট।
সেটা আবার কি।
বলতে পারবো না, বাদশাহী আমলে হারেমে বাঁদীরা হয়তো এরকম পোষাক পোরতো।
হাসলাম।
হাসলে কেনো।
ওর দিকে মিট মিট করে তাকালাম।
উঃ তোমার মাথা বটে, কি ইঙ্গিত করছো বুঝতে পেরেছি। আমি এখুনি ছেড়ে ফেলছি।
না না, আমার কথায় ছেড়ো না। সবার পছন্দতো সমান নয়।
খাওয়া শেষ হলো, টিনা প্লেটগুলো তুলে নিয়ে গেলো, শরীরটা এবার ছেড়ে দিয়েছে। ঘুমতে পারলে ভালো হোতো, গোটা পাঁচেক বড় বড় হাই উঠলো, একবার ভাবলাম, টিনাকে বলি তোমার ভেতর ঘরের খাটটা একটু ছেড়ে দাও। একটু ঘুমোই।
তারপর ভাবলাম না বেশি বিরক্ত করা হয়ে যাবে, তার থেকে বরং এই সোফাটাই বেশ।
কিগো তোমার চোখটা এরকম লালা কেনো।
ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
চলো আমার খাটে শোবে চলো।
আমি টিনার দিকে একদৃষ্টে তাকালাম, ওকে দেখে খুব খুশি মনে হচ্ছে, দেবাশীষ ঠিক কথা বলেছে, মেয়েটা তোকে ভীষণ ভালোবাসে, হয়তো ঠিক কিন্তু সব ভালোবাসার পরিসমাপ্তি হয় না, আমি তো দেবাশীষের মুখ থেকেই প্রথম শুনেছিলাম, টিনা আমায় কলেজ লাইফে ভালো বেসেছিলো। এখোনকি ও ভালোবাসে।
কি ভাবছো।
তোমার খেতে চাইলাম, তুমি খেতে দিলে, আবার শুতে চাইবো, হয়তো শুতেও দেবে। মানুষের মন চাহিদার শেষ নেই ভুল কোরে যদি আর কিছু চেয়ে বসি, তখন কি করবে।
চেয়েই দেখো না দিতে পারি কিনা। টিনা মুখটা নীচু করে ফেললো।
চলো, তোমার খাটটা কয়েক ঘন্টার জন্য একটু দখল করি।
উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথাটা কেমন ঘুরেগেলো, টাল খেয়ে আবার সোফায় বসে পরলাম, টিনা আমার হাতটা ধরে ফেললো, অনিদা শরীর খারাপ লাগছে। ওর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।
না। ঠিক আছি।
আমি ওর পেছন পেছন, ওর বেডরুমে ঢুকলাম, খুব ছিমছাম ডবল বেডের একটা খাট, মাথার শিয়রে ছোটো টেবিলে কমপিউটার, একটা চেয়ার একটা আলমাড়ি, পায়ের দিকে একটা ওয়ারডোব, একটা দেয়াল আলমাড়ি। অবাক হোলাম এইটুকু ফ্ল্যাটে দুটো বাথরুম, একটা এই ঘরের সঙ্গে আর একটা বসার ঘরের সঙ্গে, ডানদিকে ছোটো একটা ব্যালকনি। শরীর আর বইছে না, শুতে পারলে বাঁচি। টিনা খুব তারা তাড়ি বিছানাটা গুছিয়ে দিয়ে একটা বালিস বার করে দিলো।
পেন্ট গেঞ্জিটা খুলে নেবে, আমার একটা কাপর দিই। অনেকটা ফ্রি লাগবে।
হাসলাম।
লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। অনেকটা ফ্রি লাগবে।
টিনা আমার মনের কথা মনে হয় বুঝতে পারলো। আমি গেঞ্জি পেন্ট খুলে ওর একটা কাপর পোরলাম, খালি জাঙ্গিয়াটা খুললাম না। টিনা পাখাটা হাল্কা ভাবে খুললো।
তুমি শোও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
টিনার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে হেসে ফেললাম। সত্যি টিনা কি করে আমার মনের কথা পট পট করে বলে দিচ্ছে।
আমি দেরি করলাম না, বিছানায় শুয়ে পরলাম, টিনা আমার মাথার শিয়রে বসে ওর শরু শরু নরম আঙুল আমার মাথায় রাখলো। যেনো পায়রার গায়ে আলতো করে কেউ হাত বোলাচ্ছে, টিনার গা থেকে একটা হাল্কা গন্ধ ভেসে আসছে, কিন্তু এটা কোনো সেন্টের গন্ধ নয়, এটা টিনার গায়ের নিজস্ব গন্ধ, আমায় মাতাল করে দিচ্ছে, আমার চোখে সারা রাজ্যের ঘুম মিহি কুয়াশার মতো ঝড়ে পরছে। এরপর জানিনা কি হয়েছে।
হঠাত একটা বিশ্রী স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেলো। কিছুতেই মনে করতে পারছিনা, কার যেন শ্মশান যাত্রা হচ্ছে, সারা শরীর অবশ, নড়া চড়া করতে পারছি না, মাথা ঘুরিয়ে চারদিক চাইলাম, ঘরে আমি একা। বারান্দার দরজাটা হাট করে খোলা, বিকেলের নরম রোদ বিছানায় এসে পরেছে, আমার গায়ে ধব ধবে সাদা একটা বিছানার চাদর, প্রথম সেন্স আসতেই নিজের কাপরটা দেখলাম, ঠিক ঠাক পরা আছে কিনা, যা ভেবেছি তাই, গিঁট খুলে সে বিছানায় লোটাচ্ছে, ভাগ্যিস জাঙ্গিয়াটা পরা ছিল, তা না হলে কি কেলোর কীর্তিটাই না হোতো। কিন্তু টিনা গেলো কোথায়। শুয়ে শুয়ে চাদর ঢাকা অবস্থাতেই, আগে কোমরে কাপরটা বাঁধলাম। তারপর চাদর সরিয়ে বিছানায় উঠে বোসলাম। টিনা টিনা বলে তিন-চারবার ডাকলাম, না কেউ কোথাও নেই, এইবার একটু ঘাবরে গেলাম, উঠে বসে রান্নাঘর বাথরুম সব দেখলাম। না টিনা কোথাও নেই। তাহলে কি টিনা, কোথাও গেলো। বাথরুমে গিয়ে মুখ হাত ধুলাম। টিনার ঘরের ঘরিটার দিকে তাকালাম, শোয়া পাঁচটা বাজে। বেলটা বেজে উঠলো, গিয়ে দেখলাম, লক করা। আবার ঘরে এসে বসলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম বাইরের দরজার লক খোলার শব্দ, বরিয়ে এলাম। দেখলাম টিনা একটা ব্যাগ হাতে ঢুকছে, সেই ঘাঘরাটা পরা, দারুন উজ্জ্বল রং, ভীষণ সুন্দর দেখতে।
কি হলো ঘুম ভেঙে গেলো।
কাপর খোলা অবস্থার কথাটা মনে পরে গেলো, লজ্জায় আমার মাথা প্রায় পায়ে ঠেকে যাবার অবস্থা।
আমি তো ভাবলাম, তুমি রাত এগারোটা বাজাবে। তাই এই ফাঁকে একটু বাজার সেরে নিলাম।
আমি টিনার দিকে তাকিয়ে হাসছি।
টিনা স্ন্টার টেবিলে ব্যাগটা নামিয়ে রেখে বসলো।
সত্যি করে বলোতো অনিদা তোমার কি হয়েছে।
আমি সোফায় বোসলাম, টিনা আমার মুখো মুখি।
কেনো।
মিত্রাদির নাম করে ওরকম চেঁচাচ্ছিলে কেনো। অফিসে কি কোনো গন্ডগোল।
না সেরকম কিছু না।
ঘুমের ঘোরে তুমি যা বলছিলে জড়িয়ে জড়িয়ে তাতে তাই মনে হচ্ছিল। মল কে। কেন তাকে ছাড়বে না।
বুঝলাম, আমার অবচেতন মন ঘুমের ঘোরে অনেক কিছু বকেছে।
তারপর জিতে গেছো। ব্যাপারটা কি।
আমি সোফা থেকে উঠে ভেতরের ঘরের খাটে এসে শুয়ে পরলাম।
টিনা আমার মাথার শিয়রে এসে বসলো। আমার মাথায় হাত রেখে বললো, তুমি কাউকে তোমার কথা বলতে পারো না। না।
আমি টিনার মুখের দিকে তাকালাম, ও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বলো না বলো, বললে একটু হাল্কা হবে।
না টিনা সব বলা যায় না।
জানি।
তবু যদি তোমায় কোনো হেল্প করতে পারি, ভালো লাগবে।
তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে শুধু নিয়ে গেলাম।
যখন চাইবো শুদে আসলে মিটিয়ে দিও।
আমার সে ক্ষমতা নেই।
তোমার কতো ক্ষমতা আছে তা তুমি নিজেই জানো না। দাঁড়াও তোমার জন্য একটু চা বানাই।
টিনা উঠে চলে গেলো, পাখাটা ধীর লয়ে মাথার ওপর ঘুরছে, আমি চোখটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্লেডটা দেখার চেষ্টা করলাম। খাট থেক রোদটা বারান্দার এক কোনে সরে গেছে। সূযর্টা এখন কমলারংয়ের থালার মতো, বোঝা যাচ্ছে, বয়স হয়েছে। এবার ঝুপ করে ওই দিগন্তে মুখ ঢাকা দেবে।
এত কি ভাবো।
টিনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
কিছু জিজ্ঞাসা করলেই খালি একমুখ হাসিতে ভরিয়ে দাও। ওঠো।
আমি বালিসটা নিয়ে একটু ভেতর দিকে সরে শুলাম। টিনা ট্রেটা বিছানার ওপর রাখলো, চা তার সঙ্গে কাঠিভাজা। খুব ভালো লাগলো খেতে, টিনা বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানতে চাইলো আমার কথা, আমিও খুব সন্তর্পনে এরিয়ে গেলাম, একথা সে কথা বলে। কখনো টিনা অভিমান ভরে আমার দিকে তাকিয়েছে, কখনো খিল খিল করে হেসে উঠেছে। চা পর্ব শেষ হতেই টিনা ট্রেটা রেখে এলো, আমি আবার বিছানায় এলিয়ে পরলাম। টিনা বারান্দার দরজাটা বন্ধ করলো, এখানে প্রচুর মসা, বন্ধ না করলে রাতে শোয়া যায় না।
এতো উঁচুতে।
মসার আবার উঁচু নীচু।
টিনা আমার মাথার শিয়রে এসে বসলো।
আমার দিকে ঝুঁকে পরে বললো, বললে না।
আমি ওর দিকে তাকালাম, তুমি আমার কাছে কি চাইবে বললে, চাইলে নাতো।
টিনা মুচকি মুচকি হাসছে। তোমার কাছে চাইবার সাহস আমার নেই।
কেনো। পাস ফিরে টিনার হাতটা ধোরলাম।
অনিদা মেয়েরা মুখ ফুটে সব জিনিষ চাইতে পারে না।
আমি টিনার চোখে চোখ রাখলাম। দেবাশীষের কথাটা মনে পরে গেলো। নিজে থেকে এগিয়ে যাবো। টিনা যদি আমাকে অন্য কিছু ভাবে।
আমি চাইতে পারি, তুমি চাইতে পারো না।
টিনা আমার মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
আমি ওর থুতনিটা ধরে মুখটা তুললাম, বলো তুমি চাইলে আমি না করবো না।
টিনা আমার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পরে মুখ লুকলো। আমি ওর খোলা চুলে হাত রাখলাম, বুকটা ভিঁজে ভিঁজে ঠেকছে। আমার বুকে মুখ লুকিয়ে টিনা ফিস ফিস করে বললো, চাইতে তো ইচ্ছে করে, কিন্তু পরের জিনিষ, নিই কি করে।
আমি বুকভরে নিঃশ্বাস নিলাম, বুকটা ফুলে উঠে আবার নেমে গেলো। আমি পরের এটা তোমায় কে বোললো।
আমি জানি অনিদা।
তুমি ভুল জানো। আমায় ধরে রাখার সাধ্যি কারুর নেই।
সেই জন্য লোভ হয়, কিন্তু সেই লোভটাকে বুকের মধ্যে গলা টিপে মেরে ফেলি।
আমি টিনার মুখটা বুক থেকে তুললাম, চোখের পাতায় শিশিরের বিন্দুর মতো জল চিক চিক করছে, কালো ডাগর চোখে অনেক চাওয়া, ফোটা কমলফুল তোলার মতো আমি ওর মুখটা তুলে ধোরলাম, থিরি থিকি করে ওর ঠোঁট দুটো কাঁপছে, দীঘির জলে আলো পরে কোমলফুলের শরীর চিক চিক করছে। আমি টিনার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, গাছের পাতায় হাওয়ার মাতন, টিনা টিনা থির থির করে কেঁপে উঠলো।
কতোক্ষণ এই ভাবে একে অপরের ঠোঁটের রস আস্বাদন করেছি জানি না। টিনা ডুকরে কেঁদে উঠলো। অনিদা…..।
আমি টিনাকে আমার বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পরলাম। টিনা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আছে, বারান্দার দিকে তাকালাম, সূয র্পাঠে বসেছে।
আমার বুক থেক মুখ তুলে আবার টিনার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, টিনার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে। এবার টিনা আর কোনো কথা বললো না, আমার জিভ নিয়ে খেলা শুরু করে দিলো। বুঝলাম জীবনে প্রথম ও রস আস্বাদন করছে, চোখ বন্ধ, আমার হাত ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করেছে, আমি জামার ওপর দিয়েই ওর বুকে হাত দিলাম, নরম তুলোর মতো বুকটা। আমি টিনাকে বুকের আরো কাছে টেনে নিলাম, টিনা কোনো কথা বলছে না, আগুনের স্পর্শে মোম যেমন ধীরে ধীরে গলে পরে, টিনার অবস্থাও অনেকটা তাই।
আমি ওকে শরীরের সঙ্গে জাপ্টে ধরে ওর টপের পেছনের চেনটা নীচে নামিয়ে দিলাম। টিনা আমার বুকে মৃদু কামর দিলো। আমি ওর খোলা পিঠে হাত রাখলাম। মিশ কালো পিঠটা আয়নার মতো ঝকঝকে, মোলায়েম তক। কালো ব্রেসিয়ারের ফিতেটা ঢিলে করে দিলাম। টিনা আমার বুকে মুখ ঘোষে না না বলছে, মুখে কোনো শব্দ নেই। আমি ওর জামাটা সামান্য তুলে ওর সুডৌল কোমলে হাত দিলাম, টিনা আবার কেঁপে উঠলো থর থর করে। আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালাম।
এবার টিনা আমার ঠোঁট দুটো তীব্র ভাবে চুষতে লাগলো, আমি খুব মোলায়েম ভাবে ওর বুকে হাত বোলাচ্ছি, টিপছি, মাঝে নিপিলের চার দিকে আঙুল বুলিয়ে নিপিলটাকে নোখের আঘাতে খত-বিক্ষত করে দিচ্ছি।
টিনা আমার কাছ থেকে ছিটকে উঠে বোসলো, চোখে বাঁকা চাহুনি, গ্রীবা বেঁকিয়ে না না করছে। আমি হাত বারিয়ে ওর বুক ছোঁয়ার চেষ্টা করলাম। টিনা আমার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেলো।
আমি স্থানুর মতো শুয়ে রইলাম। টিনা বুকের কাছে উঠে যাওয়া জামাটা টেনে নামালো। আমি ওর গভীর নাভিমূল দেখে ফেললাম, টিনা চোখ পাকিয়ে বললো, দুষ্টু।
আমি হেসেফেললাম।
টিনা পেছনে হাত বেঁকিয়ে খোলাচুল খোঁপা করলো, আমি হাত বারিয়ে ওর বুক ধরতে গেলাম, টিনা সরে গেলো। আবার চোখ পাকাচ্ছে। এ যেন বাঘ হরিন ধরছে।
আমি ইশারায় ওকে কাছে আসতে বললাম। ও না না করছে।
আমি বিছানা থেকে উঠে নেমে আসার চেষ্টা করলাম, টিনা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো। আমাকে জাপ্টে ধরে শুইয়ে দিয়ে আমার বুকে উঠলো।
রাগ হলো।
না।
তবে।
আমি কারুর কাছে জোর করে কিছু নিই না।
তুমি তো জোর করো নি, আমি চেয়েছি।
টিনা বেশ ভারি, আমার দম বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা, মুখে কিছু বললাম না, একটু নড়ে চড়ে শুলাম। টিনা আমার ঠোঁটে আঙুল রাখলো।
তুমি ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাও।
হাসলাম।
তোমার ঠোঁটটা এত লাল কেনো।
কি করবো, আমার মা নেই থাকলে হয়তো জিজ্ঞাসা করে তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম।

 
উঃ সব সময়……..টিনা আমার ঠোঁটে চুমু খেলো।
তোমার ঠোঁটদুটো কামরে খেতে ইচ্ছে করছে।
আমি তো বারন করি নি।
আমি টিনার খোলা পিঠে হাত রাখলাম।
একবারে দুষ্টিমি করবে না।
আমি দেখতে পাচ্ছি টিনার স্কার্টটা অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে, ওর হাঁটুর নীচ থেক অনেকটা অংশ অনাবৃত। আমি জামাটা ওপরে তুলে দিলাম। টিনার নরম বুকের স্পর্শ পেলো আমার খোলা বুক। টিনা লজ্জায় আমার ঘারের কাছে মুখ লোকালো। আমি টিনার ফোটা ফুলে হাত রেখেছি। বুঝতে পারছি আমার নুনু বাবাজি সারা দিতে শুরু করেছে। আমি টিনাকে জাপ্টে ধরে শুইয়ে দিয়ে ওর বুকে উঠো এলাম।
ধ্যাত।
কি হলো।
আমার কেমন কেমন যেন লাগছে।
সেক্সের সময় লজ্জা করতে নাই, তাহলে এর মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
তুমি দেখবে না। না দেখে যা করার করো।
এ মা, না দেখলে করবো কি করে।
টিনা আমার ঘাড় ধরে ওর কাঁধের কাছে চেপে ধরলো।
তুমি এই ভাবে করো।
তার থেক এক কাজ করো।
বলো।
তুমি আমার চোখ দুটো বেঁধে দাও, বেশ তাহলে আমি কিছু দেখতে পাবো না।
চোখ বাঁধলে তোমার মুখ ঢাকা পরে যাবে, আমি যে তোমার মুখ দেখতে পাবো না।
তাহলে সমাধান কি তুমি বলো।
তোমারটা খোলো আগে।
আমার কি খুলবো বলো।
ও ইশারায় আমার ড্রয়ারের কথা বললো।
তুমি তো কিছুই খোলো নি। আগে তুমি এটা খোলো, আমি ওর জামাটা ধরে উঁচুতে তুললাম।
ও জামাটা টেনে নামিয়ে দিয়ে বললো, ধ্যাত।
আমি হাসলাম।
একবারে হাসবে না। আমার নাকটা ধরে টিনা নারিয়ে দিলো।
টিনা হাসছে, চোখ বন্ধ করো। আমি চোখ বন্ধ করলাম। টিনা জামা খুললো।
চোখ খুলবো।
না।
কতোক্ষণ লাগে খুলতে।
এবার খোলো।
আমি চোখ খুললাম, টিনা দুইহাত কাঁধের ওপর রেখে বুক ঢেকেছে, ওর কনুইদুটো ওর বুকের কাছে, আমি হাত বাড়িয়ে ধরতে যেতেই খাট থেকে নেমে গিয়ে নীচে দাঁড়ালো। বাধ্য হয়ে আমি দাঁড়িয়ে পরে খাট থেকে নীচে নামলাম। কাপর খুলে খাটের ওপর, আমি ড্রয়ার পরে দাঁড়িয়ে আছি। টিনা খিল খিল করে হেসে উঠলো, নীচে নামলাম। টিনা একটু সরে গেলো, আমি ওকে কাছে টেনে নিলাম। হাত দুটো এখনো কাঁধের কাছে রেখে বুক ঢেকে রয়েছে, আমি হাত সরালাম, কালো পুরুষটু বুক, মাই নয় যেন কালো আপেল, বেশ বুঝতে পারছি, অতি সযত্নে কাউকে পুজো দেওয়ার জন্য গাছ থেকে তা পারা হয় নি। মাই-এর বোঁটা দুটো ছোটো কিন্তু বেশ ফোলা ফোলা। আমার চোখে নেশা। আমি টিনার বুকে হাত রাখলাম, টিনার দীর্ঘনিঃশ্বাস পরলো। আমি ওর ঠোঁট ছুঁলাম, তারপর গলার কাছে ঠোঁট নামিয়ে আনলাম, শেষে বুকে। আমার ঠোঁট ওর বুকের নিপিলে, জিভ দিলাম, টিনা আঃ করে উঠলো। জীবনের প্রথম পূজোর ডালি আমার জন্য টিনা সাজিয়ে রেখেছে। আমার আর একটা হাত টিনার আর একটা বুকে, আঃ। অনিদা। আমি জিভের খালায় ওকে পাগল করে তুলছি। আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলাম। হাঁটু গেড়ে বসলাম। বুক থেকে ওর পেটে সুগভীর নাভিমূলে, টিনা আমার মাথাটা চেপে ধরেছে ওর নাভিমূলে, আমি ওর ঘাঘরাটা দাঁত দিয়ে টেনে নামাবার চেষ্টা করলাম, ইলাস্টিকটা বেশ টাইট নামলো না। আমি ঘাঘরার ওপর দিয়ে ওর পুশিতে মুখ দিলাম। টিনা ছিটকে সরে দাঁড়ালো।
না না।
আমি চোখের ইশারায় বললাম কেনো।
প্লীজ।
আমি কাছে আসতে বললাম ও আমার হাত ধরে দাঁড় করালো আমার বুকে মুখ লোকালো, টিনার বুক আমার তলপেটের কাছে, বুঝতে পারছি টিনা আমার মুনুতে মুখ দিয়েছে। আমি ওর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে ওর ঘাঘরাটা তোলার চেষ্টা করলাম। পারছি না। টিনা আমাকে জাপ্টে ধরে রয়েছে।
আমি এবার কোমরে হাত দিয়ে ঘাঘরাটা টেনে নামালাম। থাই পযর্ন্ত গিয়ে থেমে গেলো, কালো পেন্টি পরেছে টিনা, সঙ্গে সঙ্গে পুশিতে হাত দিয়ে পা জড়ো করে দাঁড়িয়েছে। আমি হেসে ফেললাম, নিজের ড্রয়ারটা কোমর থেকে টেনে নামালাম, আমার নুনু বাবাজি নাচানাচি করে উঠলো। টিনা ওই দেখে এক ঝলক তাকিয়ে মাথা নত করলো। ওর পুশি থেকে হাত সরে গেলো। আমি বসে পরে ওর ঘাঘরাটা টেনে খুলে দিলাম। উঠে দাঁড়ালাম, টিনাকে বুকে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, টিনা চকাত চকাত করে আমার ঠোঁট চুষছে। একটা হাত আমার নুনুতে, খামচে খামচে ধরছে। আমি পেছন থেকে ওর পেন্টির ভেতর দিয়ে পাছুতে হাত দিলাম, কি নরম, টিনা আঃ করে উঠলো। আমি ওর পেন্টিটা একটু নামিয়ে বুকে হাত দিলাম। টিনা কিছুতেই আমার মাথা নীচের দিকে করতে দিচ্ছে না। আমার ঘারটা ধরে ঝুলে পরে আমার ঠোঁট চুষছে, চোখ বন্ধ করে। আমি ওর পেন্টির ভেতর দিয়ে ওর পুশিতে হাত দিলাম, টিনা কেঁপে উঠলো। অনুভব করতে পারছি, ওর পুশিতে চুল আছে, বড় নয়, তবে আছে। মাঝখানের চেরায় তর্জনী দিয়ে, ভগাঙ্কুরে হাত দিলাম, টিনা আমার ঠোঁটে কামড় দিলো। ওর একটা হাত আমার নুনুর চামড়া সরাচ্ছে। আমি পেন্টিটাকে থাই পযর্ন্ত টেনে নামালাম। সোজা হয়ে ওকে বুকে টেনে নিলাম। টিনা নুনুটাকে ওর পুশির ওপর ঘোষছে। আমি ওর নরম মাই টিপছি।
চারিদিক নিস্তব্ধ, পাখাটা মাথার ওপর বন বন করে ঘুরছে, তার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। ঘরটা আধো অন্ধকার। পাশের ফ্ল্যাটের আলোর রেশ জানলার ভেতর দিয়ে ঘরে ছড়িয়ে পরেছে।
চলো খাটে যাই।
টিনা চোখ বন্ধ করে আছে।
চোখ খুলবে না।
আমার কল্পনার সঙ্গে যদি না মেলে।
সব কল্পনার যে মিল খুঁজে পাবে তার কি আছে।
না অনিদা, আজ দশবছর ধরে যে কল্পনা মনে পুশে রেখেছি, তাকে আমি নষ্ট হতে দিতে পারি না।
তাহলে থাক।
না অনিদা। আমার ভালোলাগাকে তুমি এভাবে নষ্ট করে দিও না।
টিনা চোখ বন্ধ করে আছে। আমি ওকে খাটে শুইয়ে দিলাম, আস্তে আস্তে টিনার পেন্টিটা খুলে একপাশে রাখলাম। ধীরে ধীরে খাটে উঠে ওর পাশে শুলাম।
টিনা চোখ খোলো, ঘর অন্ধকার।
থাক।
আমি টিনার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, পুশিতে হাত দিলাম, টিনা পা দুটো দুপাশে সরিয়ে দিলো আমি ওর পায়ের মাঝখানে চলে এলাম। টিনার বুকে মুখ দিলাম, টিনা আমার মাথা ধরে রয়েছে, মুখে মৃদু শিতকার। আমি ওর বুক থেকে নাভি মূলে। টিনার শরীর দুলে দুলে উঠছে। ওর দিকে তাকালাম, চোখ বন্ধ। আমি নাভিমূল ছেড়ে তলপেটে মুখ দিতেই টিনা উঠে বসলো, না অনিদা এটা কোরো না। আমার হাত দুটো ধরেছে।
কেনো।
না। তুমি মুখ দিও না।
প্লিজ একবার।
না।
আমি জোর করলাম না। ওর বুকে উঠে এলাম, বুকের নিপিলে মুখ দিলাম, আস্তে করে আমার শক্ত হয়ে ওঠা নুনু, ওর পুশির ঠোঁটে ঘোষতে আরম্ভ করলাম। টিনা শুয়ে আছে, মাঝে মাঝে আমার পিঠে ওর হাত রাখছে, বুঝতে পারছি ওরা সারা শরীরে একটা আবেশ খেলা করে বেরাচ্ছে। আমি এবার হাঁটু মুরে ওর পুশির সামনে বসলাম, আন্ধকার ঘরে ওর পুশি ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছি না। হাত দিয়ে স্পর্শ করে বুঝতে পারছি ওর পুশি ভিঁজে গেছে, আমি নুনুর চামড়াটা সরিয়ে মুন্ডিটা বার করে ওর পুশির মাঝখানে রেখে ওপর নীচ করলাম, টিনা কোমর বেঁকিয়ে উঃ আঃ করে উঠলো। নিস্তব্ধ ঘরটায় একটা পিন পরলে শব্দ হবে। আমি মনে মনে ঠিক করলাম, যা করতে হবে একবারে করতে হবে, একটু একটু করে করলে হবে না। বেশ কিছুক্ষন নুনু নিয়ে ওর পুশির সঙ্গে খেলা করলাম, টিনা শুয়ে শুয়ে মাথা দোলাচ্ছে, চোখ বন্ধ, আমি আমি আমার নুনু টিনার পুশির গর্তের মুখে রেখে দুহাতে ওর পাদুটো তুলে ধরলাম, টিনা মুখে হাত চাপা দিলো। আমি কোনো মুভ করছি না, আমার নুনুর মুন্ডি ওর পুশির মুখে, এবারে সজোরে একটা চাপ দিলাম, কতোটা গেলো দেখতে পেলাম না, টিনা মা গো করে উঠলো, আমি পা দুটো ছেড়ে দিয়ে ওর শরীরে আস্তে আস্তে ঢলে পরলাম, এবার চাপ দিচ্ছি। বুঝতে পারছি যতটুকু বাইরে আছে, তা পিছলে পিছলে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। টিনার মুখে কোনো শব্দ নেই, হাত দিয়ে মুখ ঢাকা দেওয়া। আমি কোমর দোলালাম। টিনা পা দুটো জড়ো করতে চাইলো পারলো না। পা দুটো আমার পায়ের ওপর তুলে দিলো, মুখ থেক হাত সরিয়ে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জাপ্টে ধরলো। চোখ বন্ধ
আমি টিনার বুকে মুখ রাখলাম, বামদিকের মাই-এর নিপিলটা চুষতে আরম্ভ করলাম, কারুর মুখে কোনো কথা নেই। খালি চকাস চকাস শব্দ। আমি টিনার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বললাম।
টিনা।
উঁ।
চোখ খুলবে না।
টিনা চুপ।
খুব ব্যাথা লাগছে। বার করে নেবো।
টিনা মাথা দুলিয়ে না বললো।
তাহলে চোখ খোলো।
তুমি চোখ বন্ধ করো।
করেছি।
টিনা আমার মাথাটা ধরে আমার দুচোখে জিভ ছোঁয়ালো। আমার কোমর দুলে উঠলো। আঃ।
চোখ খুলবো।
খোলো।
টিনার চোখে চোখ রাখলাম। এই অাধা অন্ধকারেও দেখতে পাচ্ছি ওর চোখে পরিতৃপ্তির হাঁসি।
ভালো লাগছে।
টিনা আমায় চুমু খেলো।
তোমার।
আমি ওর কপালে চুম্বন করলাম।
লেগেছে।
একটু।
বললেনা কেনো।
তুমি কি করতে।
করতাম না।
আমি যে চেয়েছিলাম।
আমি আমার ঠোঁট দিয়ে টিনার ঠোঁট স্পর্শ করলাম।
ভেতরটা ভিঁজে ভিঁজে উঠেছে। টিনার পুশির ঠোঁট দুটো টাইট হয়ে আমার নুনুকে কামরে ধরে আছে।
কোরবো।
টিনা মাথা দোলালো।
লাগলে বলবে।
আচ্ছা।
আমার কোমর দুলে উঠলো। টিনার চোখ বন্ধ হলো। আমি দুহাতের ওপর ভর দিয়ে করতে শুরু করলাম, টিনা প্রথমে দুটো পা দুপাশে সরিয়ে দিলো, বেশ কিছুক্ষণ পর পা দুটো ওপরে তুললো, আবার দুপাশে সরিয়ে দিলো, আমি করে যাচ্ছি, টিনা মাথাটাকে পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে ঠোঁট চাটছে, মাঝে মাঝে ঠোঁট কামরে ধরছে, আমি থামি নি, করে যচ্ছি, বুঝতে পারছি বেশিক্ষণ নয়। যা হয় হোক, টিনার যদি না বেরোয় না বেরোবে আমার শরীর আর টানছে না। আমি গতি বারালাম, টিনা ফিস ফিস করে মা গো বলে উঠলো, আমাকে জাপ্টে ধরে বুকে টেনে নিলো, আমার কোমর থেমে থেমে কেঁপে উঠলো। টিনা আমার পিঠে হাত দিয়ে খামচে খামচে ধরছে, আমার ঠোঁট কামরাচ্ছে, আমার নুনু কেঁপে কেঁপে, ওর পুশি ভাঁজিয়ে দিচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ঠোঁটে ঠোঁটে খেলা করলাম। টিনা কোনো কথা বলছে না। আমি টিনার দুচোখে আমার দুহাতের বুড়ো আঙুল রাখলাম, সামন্য জল ওর চোখের কোলে।
টিনা।
কষ্ট পেলে।
না অনিদা আমার জীবনে যা চেয়েছিলাম তুমি তা পরিপূর্ণ করলে। এটা আমার আনন্দ অশ্রু।
আমি কি ভুল করলাম। তোমার এই অর্ঘ তুমি কারুর জন্য আলাদা করে রেখেছিলে।
না অনিদা তুমি আমার জীবনদেবতা। তোমাকে অঞ্জলি দেবো বলে এতো দিন সন্তর্পনে গুছিয়ে রেখে ছিলাম।
আমার নুনু ছোটো হয়ে এসেছে। শরীরে একটা অস্বস্তি হচ্ছে।
বাথরুমে যাবে না।
আর একটু শোও না।
তোমার কষ্ট হচ্ছে।
একটুও না।
আমি টিনার বুকে শুয়ে থাকলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর উঠলাম। টিনা বললো তুমি শোও আমি আগে বাথরুমে যাবো।
কেনো দুজনে একসঙ্গে যাই।

না।
 
টিনা বাথরুমে চলেগেলো, ঘাঘরাটা নিয়ে। ঘরটা অন্ধকার, আমি উঠে কাপরটা জড়িয়ে নিলাম। হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে আলোটা জাললাম। বিছানায় লাল দাগ দেখলাম। টিনা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। ওকে কাছে টেনে নিয়ে জাপ্টে ধরলাম। ঠোঁটে চুমু খেয়ে বিছানার দিকে দেখালাম। ও মুচকি হেসে বোললো। আমার প্রথম অর্ঘ।
টিনার বাড়ি থেকে যখন বেরোলাম, তখন সাতটা বাজে, টিনা নীচ পযর্ন্ত এলো, আমি ট্যাক্সি ধরলাম, ফোনটা অন করতেই, অনেক গুলো ম্যাসেজ ঢুকলো। মিস কল অনেক গুলো। ম্যাসেজ গুলো পরলাম, কয়েকটা ম্যাসেজ বাদ দিলে সবই ম্যাসেজ সেন্টার থেকে পাঠানো। মিত্রার ম্যাসেজটা খুললাম। খুব ছোটো লেখা, “আমি কি তোর কেপ্ট যখন ডাকবি চলে যেতে হবে’’। একবার দুবার তিনবার পরলাম। বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। মিত্রা এ ধরনের কোনো ম্যাসেজ আমায় করতে পারে, এটা ধারনা ছিল না। অনেকক্ষণ ভাবলাম কেনো মিত্রা এটা করলো। কোনো উত্তর পেলাম না। হয়তো প্রচন্ড রাগ, কিংবা অভিমান। এ দুটো হওয়া স্বাভাবিক। সমস্ত ঘটনা ও এখনো পুরোপুরি জানে না। এটা আমার একটা স্বভাব। আমি কাউকে কোনো কথা না বলে কাজ করি, আমার টেনসন কারুর ওপর চাপিয়ে দিতে চাই না।
টিনার বাড়ি থেকে যে মন নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম, সেই মনে কিছুটা হলেও কালি লাগলো। মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
কি বাপ কোথায় হাওয়া খাচ্ছ।
বাইপাসে আছি, বাড়ির দিকে যাচ্ছি।
বলো কি অভিপ্রায়।
একটা সঠিক খবর দিতে পারবে।
বলো।
মিত্রা কোথায় জানো।
ফোন করো পয়ে যাবে।
এর জন্য তোমায় ফোন করার দরকার আছে।
ঠিক। এতটা তলিয়ে দেখিনি। দাঁড়াও দাদাকে জিজ্ঞাসা করি।
আমি ফোন করে জানতে চাইছি, এটা বলার দরকার নেই, সেটা কি বলে দিতে হবে।
একেবারেই না।
কিছুক্ষণ ফোন ধরে রইলাম।
শোন তুই বেরিয়ে যাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বেরিয়ে গেছে, দাদাকে বলে গেছে, আজ রাতে আমাদের বাড়িতে যাবে না। কোথায় গেছে দাদা জিজ্ঞাসা করে নি।
কার গাড়ি নিয়ে গেছে। ইসমাইল না রবীন।
ইসমাইল তো অফিসে রয়েছে, রবীনকে নিয়ে গেছে।
আচ্ছা।
মিত্রাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলাম, দেখলাম স্যুইচ অফ।
বড়মাকে ফোন করলাম।
বলুন ছোটো সাহেব। বুঝলাম ছোটোমা ধরেছে।
এই সম্বোধনে কবে থেকে ভূষিত হোলাম।
কেনো মিত্রা বললো।
কখন।
তা তিনটে সাড়ে তিনটে হবে।
কি বললো।
সে ওর কাছ থেকে জেনে নাও। তুই কখন আসছিস।
ও কি আজ রাতে আসার কথা কিছু বলেছে।
আজ ওর অনেক কাজ পরে গেছে আসতে পারবে না।
বুঝেছি।
কি।
তুমি বুঝতে পারবে না। বড়মাকে একবার দাও।
ধর।
কি রে অনি।
শোনো চেঁচামিচি করবে না। আমার অনেক জ্বালা। বুঝেছো।
আবার কি হলো।
সে অনেক কথা। কাল সকালে তোমায় গিয়ে বলবো।
আসবি না।
সুযোগ পাচ্ছি কোথায়।
কি হয়েছে বল।
বললাম তো কাল সকালে গিয়ে বলবো।
সে কি রে আমি যে গাদা খানেক রান্না করছি।
করো না, কাল সকালে ঠিক পৌঁছে যাবো।
ওঃ তোকে নিয়ে মহা মুস্কিল।
তোমরা নিজেরাই তো আমায় মুস্কিলে ফেললে।
কেনো।
আমাকে এ সবের মধ্যে জড়ালে কেনো।
চুপচাপ।
খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হোলো তার হেলে গরু কিনে।
হেলে গরু কে।
তুমি জিজ্ঞাসা করছো।
তুই উপমা দিলি আমি জিজ্ঞাসা করলেই দোষ।
মিত্রা।
তার আবার কি হলো।
সে অনেক কথা।
আমি তোদের ব্যাপার স্যাপার বুঝিনা বাপু।
কাল বুঝবে। ট্রেনটার অনেক বগি, বুঝলে, ডি রেলড হয়ে গেছে। লাইনে তুলতে একটু সময় লাগবে।
তোর হেঁয়ালি আমি বুঝি না।
ঠিক আছে কাল সকালে গিয়ে বোঝাবো।
ঠিক আছে তাই হবে।
রবীনের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই খুঁজে দেখলাম, ইসমাইলের ফোন নম্বরও নেই। মল্লিকদাকে আবার ফোন করলাম। বললাম দেখতো ধারে কাছে ইসমাইল আছে কিনা, থাকলে আমার ফোন নম্বরে ওকে একবার ফোন করতে বলো।
আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে ইসমাইল ফোন করলো, বললাম তুমি রবীনের ফোন নম্বর জানো।
হ্যাঁ দাদা জানি।
দাও।
ও রবীনের ফোন নম্বর দিলো।
আমি বললাম ঠিক আছে।
রবীনকে ফোনে ধরলাম। প্রথমে ও চিনতে পারে নি তারপর বলতেই বললো হ্যাঁ দাদা কি বলো।
তুই কোথায়।
পাক র্স্ট্রীটে।
ম্যাডাম কোথায়।
ক্লাবের ভেতরে।
কখন এসেছিস।
এই তো ঘন্টা খানেক আগে।
দুপুরে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলি।
চুপচাপ।
কথা বলছিস না কেনো।
ম্যাডাম বারন করেছে।
ঠিক আছে।
না না বলছি।
বল।
প্রথমে গেলাম, নিউ মার্কেট, ওখান থেকে পেয়ারলেস ইন, তারপর এখানে।
সত্যি কথা বলছিস।
হ্যাঁ অনিদা।
ভেবে বল।
মাঝে সাহেবের কাছে গেছিলাম।
কে সাহেব।
ম্যাডামের হাসবেন্ড।
ও।
পেয়ারলেস ইনে কে কে ছিলো।
ম্যাডাম আর সাহেব ছিলো।
সাহেব কি কোলকাতায়।
তাহলে উনি কোথায় থাকবেন। উনি তো কলকাতাতেই থাকেন।
কোথায় থাকে।
কেনো আপনি জানেন না।
আমি তোর মতোই। গ্রামের ছেলে, এতো খবর রেখে কাজ কি বলতো।
না অনিদা আপনি গ্রামের হলে কি হবে, গিয়ে দেখলাম তো।
কোথায় থাকে বললি না তো।
সিঁথির ওখানে।
তুই চিনিস।
অনেকদিন আগে একবার গেছিলাম।
কোথায় বলতো।

 
গোপাললাল ঠাকুর রোডে একটা মন্দিরের পাশে।
সাহেবের এখানের চেম্বারটা কোথায়।
রক্সি সিনেমার পাশে।
ও। আর নার্সিং হোমটা।
ওটা সাহেবের না।
তাহলে।
ওটা ম্যাডামের সঙ্গে, আর একজন আছেন, চিনি না।
আজ কি সাহেব ম্যাডামের বাড়িতে যাবেন।
না না।
কেনো
ম্যাডামের সঙ্গে তো সাহেবের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
কবে!
সে তো অনেক দিন।
তাহলে ম্যাডাম গেছিলেন।
তা বলতে পারবো না।
আজ ম্যাডাম অনেকদিন পর ক্লাবে এলেন না।
হ্যাঁ, প্রায় দেড়মাস।
কি করে রে ক্লাবে।
কি আর বলবো অনিদা তুমি তো সব জানো।
এই দেখো, আমি জানলে তোকে জিজ্ঞাসা করবো।
তুমি ম্যাডামকে একটু বাঁচাও।
আমি বাঁচাবার কে। আমি তোর ম্যাডামের কাছে কাজ করি, এই যা।
তুমি ম্যাডামের সঙ্গে কলেজে পরেছো।
সে তো বহুদিন হয়ে গেছে। একটু দাঁড়া।
ট্যাক্সিটাকে রুবির কাছে ছেড়ে দিলাম।
হ্যাঁ বল।
ম্যাডাম আজ বেহুঁস হয়ে ফিরবে।
কেনো।
তুমি জানো না এখানে আসে কেনো মানুষ।
খালি মদ খেতে।
তা নয়তো কি। আজ আমার কপালে দুঃখ আছে।
কেনো।
ম্যাডাম বেহুঁস হয়ে ফিরবে।
তুই কি করবি।
আমি মাসিকে বলেছি থাকার জন্য।
কেনো মাসি কি রাতে থাকে না।
না ওরা সব রাতে চলে যায়।
ম্যাডাম একা থাকে।
হ্যাঁ।
অতো বড় বাড়িতে একা।
হ্যাঁ। তুমি জানতে না।
না।
আমিতো বাইরে বাগানের ওই মালিদের কোয়ার্টারে থাকি।
রাতে আর কে থাকে। দুজন মালি , দারোয়ান আর আমি।
এই ভাবে কতদিন আছিস।
যেদিন থেকে আমি এলাম সেদিন থেকে।
তুই কত বছর আছিস।
ছ’বছর।
তোর ম্যাডামকে গাড়িতে কে তুলবে।
এখানে বারের মেয়েরা আছে ওরা তুলে দেবে ধরে ধরে, বাড়িতে মাসি।
ও।
আজকে অফিসে কোনো গন্ডগোল হয়েছে।
কি মিটিং ছিলো। সে তো তুমি ছিলে।
দুর ওই মিটিংয়ে থাকে নাকি কেউ। আমি রাগ করে চলে এসেছি।
সেই জন্যই ম্যাডাম তোমায় খুঁজছিলেন। আমাকেও বললেন তুই দেখেছিস। তুমি কোথায় অনিদা।
আমি বাইপাসে বাস ধোরবো বলে দাঁড়িয়ে আছি।
তোমায় ম্যাডাম খুব ভালোবাসে।
এটা আবার তোকে কে বললে।
আমি জানি। না হলে তোমার কথায় আমাদের গ্রামে যায়।
ঠিক আছে সাবধানে ম্যাডামকে বাড়ি নিয়ে যাস।
আচ্ছা।
মাথাটা কোনো কাজ করছে না। সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। মিত্রা আমার খুব ক্লোজ, কিন্তু আমি অনেক কিছু এখনো জানি না। মিত্রা আমার কাছে কি চায়। শুধু শরীর, না আরো কিছু। মায়ের চেনটা ওকে পরাতে গেছিলাম, ও ফিরিয়ে দিয়েছিলো। ওকে সেদিন বুঝতে দিই নি, তবে খটকা একটা আমার মনে লেগেছিলো। সত্যি যদি মিত্রা আমাকে ভালোবাসে, তাহলে সেদিন ওটা ও গ্রহণ করলো না কেনো। ও বলেছিলো মিঃ ব্যানার্জী একটা বাস্টার্ড। ও ওর জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। তাহলে আজ মিঃ ব্যানার্জীর কাছে ও গেলো কেনো। কিসের তাগিদে। মিত্রা বলেছিলো, মিঃ ব্যানার্জী এখানে থাকেন না। রবীন যা বললো, তাতে মিঃ ব্যানার্জী কলকাতায় থাকেন। নার্সিংহোমের মালিক কে মিত্রা বলেছিলো, মিঃ ব্যানার্জী পঞ্চাশ সতাংশের মালিক। কিন্তু রবিন উল্টো কথা বলছে। একাকিত্ব মিত্রার বিগড়ে যাওয়ার একটা মূল কারণ। এছাড়া আর কোনো কারণ। কলেজ লাইফে মিত্রাদের বাড়ি গেছি। ওদের পয়সা ছিলো, কিন্তু কত পয়সা ছিলো, যাতে মিত্রা এরকম একটা কাগজের পঁচাত্তর শতাংশের মালিক হয়ে যেতে পারে। সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
এখন কি করবো। মিত্রার বাড়ি যাবো, না বাড়ি ফিরে যাবো। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম। একটা উত্তরই আমার কাছে ভেসে আসছে। ও আমাকে এতো কটি টাকার মালিক বানিয়েছে। অনেকে চেয়ে পায় না, আমি অনাহূতের মতো তা পেয়েছি। হয়তো এর মধ্যে দিয়ে ওর কিছু উদ্দেশ্য সিদ্ধি হতে পারে, তবু আমার কাছে এটা অনেক, এই কারনেই ওর পাশে আমার দাঁড়ানো উচিত।
আমি একটা ট্যাক্সি ধরলাম, সোজা চলে এলাম মিত্রার বাড়িতে। গেট দিয়ে ঢুকতেই দারোয়ান এগিয়ে এলো। ও অনিবাবু, মা তো ফেরেন নি।
কে আছে ভেতরে।
বুড়িমাসি আছে।
ও।
গট গট করে ভেতরে চলে এলাম। শুনশান। ভুতুরে বাড়ির মতো মনে হচ্ছে। চারিদিকে লাইট জলে আছে, তবু কেমন অন্ধকার অন্ধকার। পোর্টিকোর নীচে এসে দাঁড়াতেই বুড়িমাসি এগিয়ে এলো।
তুই কখন এলি।
এই তো এখুনি। মিত্রা কোথায়।
কোথায় আবার। যেখানে যাবার সেখানে গেছে। মেয়েটা এই করতে করতেই একদিন শেষ হয়ে যাবে।
মাথা নীচু করলাম।
তুইতো ওর বন্ধু শোধরাতে পারিস না। বড়লোকের যত সব…….
কি হয়েছে কি আমাকে খুলে বলো।
কি বলবো। ছোটো থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি, তাই ছেড়ে যেতে পারছি না।
তুমি আমায় আগে দেখো নি।
দেখেছি, মনে থাকে কখনো। কতদিন আগের কথা। চা খাবি।
দাও।
বুড়িমাসি চলে গেলো। আমি নিচের হলঘরে সেন্টার টেবিলের চারধারে রাখা সোফার একটা দখল করে বসলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম, দশটা বাজে।
বুড়িমাসি চা নিয়ে এলো।
ওরা কখন ফিরবে।
ঠিক আছে নাকি। একটা দেড়টা দুটো কখন ফেরে।
চায়ে চুমুক দিলাম।
এই মেয়েটা কতো ভালো ছিল, কত হাসি খুসি, এখন দেখ। মায়া পরে গেছে, আর কত্তাবাবুর জন্য রয়েছি, না হলে কবে ছেড়ে চলে যেতাম, ঝাঁটা মারো ওরকম কাজে।
তুমি রাগ করছো কেনো। ওর হয়তো কোনো কাজ থাকতে পারে।
ছাই কাজ আছে, মদ গিলতে গেছে, আমাদের বস্তির গুলো ধেনো খায়, ওরা একটু দামি খায়, সব এক।
তোমায় কে বললো।
ওই তো মর্কট রবীন। ও ও একটা তেঁয়েটে।
কেনো গো।
আর বলিস কেনো, ওপর থেকে মায়ের বোতোল চুরি করে এনে খায়।
তুমি কিছু বলো না।
অনেক আছে একটু আধটু নিলে খতি নেই। খাক, কি করবে। বউটা মরে গেলো। বাচ্চাটা দাদু দিদার কাছে থাকে।
আবার বিয়ে করলো না কেনো।
বিয়ে করলে এখানে ঝি গুলোর সঙ্গে ফস্টি নস্টি করবে কি করে।
মিত্রা জানে না।
মা আমার সাক্ষাত দেবী। ওই একটু খারাপ রোগে ধরেছে, মদ খাওয়া। তুই তো ওর বন্ধু পারিস না এই রোগটা ছাড়াতে।
তুমি তো বললে ছোট থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছো। তুমিও তো বলতে পারো।
বলে বলে থুতুতে আঁঠা জম্মেছে, বরটাই তো ওকে সব্বনাশের পথে নিয়ে গেলো।
সেটা আবার কে।
ওই যে গো ডাক্তার।
যাঃ, তুমি বাজে কথা বলছো, ডাক্তার ভালো মানুষ। মিত্রা আমাকে আলাপ করিয়ে দিয়েছে।
ভালো মানুষ, নষ্ট চরিত্রি। একটা বউ থাকতে আর একটা বিয়ে করে। মা আমার লক্ষী প্রতিমে। তাও ঘর করছিলো, তারপর সব নিয়ে, দিলে তাড়িয়ে।
আমি চুপচাপ। বুড়ীমাসির দিকে তাকিয়ে রয়েছি।
সে অবস্থাতো তুমি দেখো নি, মা ঠকরনের জন্য সব হয়েছে।
কেনো।

 
মাঠাকরনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, বড় ডাক্তার, বিদেশে থাকতো, অনেক পয়সা, তাই বিয়ে দিয়েছিলো। কত্তাবাবু কত বারন করেছিলো, কে জানতো দোজ বরে। ওর একটা মেম বউ আছে, যখন জানা জানি হলো, তখন ডাক্তার গুছিয়ে নিয়েছে। মা তো আমার একবার বিদেশে গেছিলো, সেখানেই তো সব নিজের চোখে দেখে এসেছে।
ডাক্তারের বয়স ওর থেকে বেশি।
হবে না লোভ, সম্পত্তি পাবে না। বাবুর একমাত্র মেয়ে অগাধ সম্পত্তি। সেই জন্য বুড়ো বয়েসে এখানে এসে একটা বিয়ে করলে। বউ থাকতেও।
এখন থাকে কোথায়।
সিঁথিতে।
মেমকে নিয়ে।
না না ওটাকে ছেড়ে দিয়েছে।
তাহলে তো মিত্রার সঙ্গে থাকতে পারে।
থাকবে কি করে, সে তো জজসাহেবের কাছে লিখে দিয়ে এসেছে। থাকবে না বলে।
মিত্রা যে মাথায় সিঁদুর দেয়।
মা এখনো বিশ্বাস করে ডাক্তার তার স্বামী। প্রথম বিয়ে তো। ভুলতে পারে না। তাছাড় কি যানো তো, গায়ে হলুদ মাখলে আর কুমীরে ধরে না।
আমি চুপ।
তুমি দেখো তো ওকে একটু ভালো করতে পারো কিনা।
আমি কি ভগবান।
তোমার দেশের বাড়িতে গেছিলো। এসে কত গল্প করলো। সেই আগের মাকে যেন ফিরে পাচ্ছিলাম, আমাকে বললো তোমায় একবার নিয়ে যাবো বুড়ীমাসি। তা আমি বললুম বেশ নিয়ে যাস, যাবো খোন। বেশ কয়েক দিন ভালো ছিল। আবার শুরু করলে।
খুব উতসুক হচ্ছিলো বুড়ী মাসিকে নার্সিংহোমের কথাটা জিজ্ঞাসা করতে, কিন্তু বুড়ীমাসি যদি সন্দেহ করে, কিন্তু আমার মনের বাঁধ ভেঙে পরলো, এ সুযোগ আর আসবে না। আমার ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলো অনি এ সুযোগ তুই ছাড়িস না।
বুড়ীমাসি কাঁদছিলো, কাপরের খুঁট দিয়ে চোখের কোন মুছছিলো। আমি সোফা থেকে নীচে বুড়ীমাসির কাছে গিয়ে বসলাম, তুমি কাঁদছো কেনো।
জানো মা আমার সাতদিন ঠিকমতো খেতে পারে না, শুতে পারে না, অফিসে নাকি গন্ডগোল কাকে নিয়ে।
অফিসে গন্ডগোল, কই জানিনা তো।
তুমি জানবে কি করে। ওই মিনসের একটা ভাগ্নে ওখানে আছে, সেই গন্ডগোল করেছে। মা আমার বার বার তার কাছে গেছিলো, বলেছে আমার দ্বারা কিছু হবে না।
তোমাকে অফিসের কথা সব বলে না।
বলে । যখন মন ভালো থাকে।
তুমিতো ওর কাছে থাকতে পারো রাতে।
থাকি তো, আমারতো সংসার আছে। সেখানে সাতটা পোষ্য।
ডাক্তারের তো নার্সিংহোম আছে, আরো টাকার কি দরকার।
রাখো তোমার নার্সিংহোম। ওটা ডাক্তারের ছেলের নামে, সে বিদেশে থাকে, ডাক্তার দেখাশোনা করে, সে বলেছে মাকে বিয়ে করবে।
ডাক্তারের ছেলে।
হ্যাঁগো প্রথম পক্ষের সেই মেমসাহেবের ছেলে।
মিত্রা কি বলে।
আমরা মেয়ে মানুষেরা তা পারি সম্পর্কে ছেলের সঙ্গে বিয়ে করতে। যতই ছাড়াছাড়ি হোক।
ডাক্তার কি বলে।
তার তো ভারি মজা, সম্পত্তি পাবে। সম্পত্তিনয়তো বিষ।
এই বাড়িটা কাদের। এটা তো মিত্রাদের নয়, আমি তো ওই বাড়িতে গেছিলাম।
হ্যাঁ, আনন্দ চ্যাটার্জী লেনে। ওটা বড়বাবু নিয়েছেন, বাবুকে কাগজের ভাগ দিয়েছেন, আর এটা মা ঠাকরনের বাপের বাড়ির ভাগ। সেই নিয়েই তো মাঠাকরনের এত দেমাক।
তোমার বাড়িটা যেনো এখানে কোথায়।
মদনমোহনতলা, হেঁটে গেলে দশ মিনিট।
তুমি বাড়ি যাও না।
যাই তো, সকাল সকাল আসি, মার দেখা শোনা করি, তারপর মা বেরিয়ে গেলে চলে যাই আবার বৈকালের দিকে আসি। রাত পযর্ন্ত থেকে চলে যাই।
আমার সম্বন্ধে মিত্রা তোমায় কিছু বলে নি।
খারাপ কিছু বললে তোমায় এতো কথা বলি।
বাইরের গেটে হর্ন বেজে উঠলো। বুড়ীমাসি উঠে দাঁড়ালো, এলেন রাজ্য জয় করে।
ঘড়ির দিকে তাকালাম, সাড়ে বারোটা বাজে।
আমি সোফায় বসলাম।
বুড়ী মাসি পোর্টিকোর দিকে এগিয়ে গেলো। গাড়ি এসে দাঁড়ালো। মুখ বারিয়ে দেখলাম, পেছনের সিটে মিত্রা হেলে পরে আছে, নিঃসার দেহ। রবীন দরজা খুলে দিলো, এসো ধরে নিয়ে যেতে হবে তো।
আজকে তো দেখি একেবারে ঘুমিয়ে পরেছে।
তুমি এসো তো।
তুই ঠেলা মারিস কেনোরে মুখপোড়া।
বুড়িমাসি, ঘরের দিকে আসছে, আসতে আসতেই বললো ও অনি আয় তো বাবা একটু ধর।

আমি উঠে দাঁড়ালাম, রবীন আমাকে দেখে চমকে গেলো। ও বুঝতে পারে নি আমি এই সময় এখানে থাকতে পারি। আমি বুড়ীমাসিকে বললাম, তুমি ওপরে গিয়ে মিত্রার ঘরের দরজাটা খোলো। আমি নিয়ে যাচ্ছি, কারুর দরকার পরবে না। হয়তো আমার কন্ঠস্বরে এমন কিছু ছিলো বুড়ীমাসি আমার দিকে একবার তাকালো, তারপর শুর শুর করে ওপরে উঠে গেলো।
 
আমি আসতে রবীন সরে দাঁড়ালো, ওর মুখ থম থমে। মাথা নীচু করে আছে। রবীনকে বললাম, তুই ওপাশের দরজাটা খোল। রবীন খুলে দাঁড়ালো, আমি মিত্রার বগলের তলা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে টেনে বারকরে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলাম, আমার বুকের কাছে ওর মুখ ভক ভক করে গন্ধ বেরোচ্ছে, ওকে আঁকুড় করে ধরে ওপরে নিয়ে এসে বিছানায় শোয়ালাম, পায়ের জুতো খুললাম, বুকের কাপর ঠিক ঠাক করে বুড়ীমাসির দিকে তাকালাম, একটা কাজ করতে পারবে।
বল।
তেঁতুল আছে।
আছে, সেতো অনেক পুরোনো। কি করবি।
নিয়ে এসো, একটা চামচে নিয়ে আসবে একটু বড় দেখে আর একটা বাটি।

বুড়ীমাসি চলে গেলো। আমি বাথরুমে গেলাম, বালতি, মগ, আর টাওয়েল নিয়ে এলাম, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বার করলাম। মিত্রার হাতে চিমটি কাটলাম, না কোন সাড় নেই, ওর গালে আস্তে আস্তে থাপ্পর মারলাম, মরার মতো পরে আছে। হাতদুটো দু পাশে ছড়ানো। কাপরটা হাঁটুর ওপর উঠে গেছিলো, আমি টেনে নামালাম, বুড়ীমাসি ঘরে ঢুকলো। আমি বাটিতে তেঁতুল রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ভাল করে চটকে নিলাম, জলটা বাটিতে রেখে, তেঁতুলটা বুড়ীমাসির হাতে দিয়ে বললাম ধরো, আমাকে চামচেটা দাও, বুড়ীমাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চামচেটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
আমি বালতিটা এগিয়ে নিলাম, মগটা বালতি থেকে নামিয়ে রাখলাম, মিত্রার মাথার শিয়রে বসে ওর মাথাকে আল গোছে কোলে তুলে নিলাম, গালে চাপ দিতেই মিত্রা হাঁ করলো, আমি বুড়ীমাসির দিকে তাকিয়ে বললাম, বাটিটা এগিয়ে দাও, বুড়ীমাসি আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে। বাটিটা এগিয়ে দিলো, আমি চামচে করে জিভটা টেনে ধরে ওকে তেঁতুল জল খাওয়ালাম, মিনিটখানেকের মধ্যে রি-এ্যাকসন শুরু হলো, হর হর করে বমি করতে শুরু করলো, বুড়ীমাসি নাকে কাপর চাপা দিয়েছে, আমি বালতিটা ওর মুখের কাছে ধরে আছি, কিছুক্ষণ পর বমি বন্ধ হলো, আমার পেন্টেও ছিটকে পরেছে ওর বমি মাটিতেও ছিটকে পরলো, আবার একটু তেঁতুল জল গুললাম, আবার বমি, তারপর বাথরুমে গিয়ে বালতি পরিষ্কার করে, ঠান্ডা গরম জল মিশিয়ে নিয়ে এলাম, বুড়ীমাসিকে বললাম, ওর কাপর খুলে একটু গাটা মুছিয়ে দেবে,আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি বুড়ীমাসি আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো, তুমি দাও, তুমি রুগীর সেবা করছো, এতে পাপ হয় না।
আমাকে ওর রাতের পোষাকটা এনে দাও।
বুড়ীমাসি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি যতটা সম্ভব ঢাকা ঢুকি দিয়ে ওর সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলাম, কাপর খুলিয়ে ওকে নাইট গাউন পরিয়ে দিলাম, ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়ে গায়ে একটা পাতলা চাদর টেনে দিলাম, ঘরটা ভালো করে মুছে, বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে এলাম, বুড়ীমাসি মিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি যাই মাসি।
এত রাতে কোথায় যাবি।
কাজ আছে।
না তোকে যেতে হবে না।
না মাসি। যেতে হবে, তুমি এক কাজ করো, ঘন্টা খানেক বাদে ও উঠে পরবে, কিছু খেতে চাইলে গরম দুধ দিও কয়েকটা বিস্কুট, আর কিছু দিও না।
চলে যাবি।
হ্যাঁ।
নিচে নেমে এলাম, রবিন বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমাকে একটা ট্যাক্সি ডেকে দিতে পারবি।
এত রাতে কোথায় যাবে দাদা।
দেখি।
চলো আমি তোমায় ছেড়ে দিয়ে আসি।
অনেক রাত হলো, তোকে শুতে হবে তো।
এরকম রাত অনেক হয় দাদা।
চল তাহলে। বুড়ীমাসিকে বলে আয়।
দরকার লাগবে না।
আমি গাড়িতে এসে বসলাম। দারোয়ানের মনে হয় নাইট ডিউটি থাকে, ও দরজা খুলে দিলো। রাস্তা ঘাট শুনশান, কেউ কোথাও নেই।
কোথায় যাবো দাদা।
অফিসে চল।
এখন।
হ্যাঁ।
রবিন কোনো কথা বললো না। মিনিট পনেরোর মধ্যে অফিসে চলে এলাম, আমি ওকে ভেতরে ঢুকতে বারন করলাম, বললাম আমায় রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যা।
ও আমার কথা মতো তাই করলো। হাঁটতে হাঁটতে গেটে এলাম, আমাকে দেখে সিকিউরিটি গার্ডের ছেলেটা এগিয়ে এলো। কোথায় যাবেন।
খুব ক্লান্তি লাগছে, মনটা ভীষণ ভারি ভারি লাগছে। ওর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিলো না। বাধ্য হয়ে প্রেস কার্ডটা বার করলাম।
ও দরজা খুলে দিলো। আমি সোজা প্রেস রুমে চলে এলাম। ছেলেটি আমায় বাধা দিচ্ছিলো, আমি বললাম তুমি সঙ্গে এসো। কি বুঝলো জানি না, ও আমার পেছন পেছন এলো। লাস্ট নাইট এডিসন বেরোচ্ছে। সকালে মিটিংয়ে দেখা সার্কুলেসনের সেই ছেলেটি দেখেই ছুটে এলো। স্যার।
সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে, সিকিউরিটি গার্ডের ছেলেটি মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আজ কতো সার্কুলেসন হয়েছে। ওরা বললো। এখন কি লেট নাইট এডিসন চলছে। হ্যাঁ। একটা কাগজ টেনে নিয়ে দেখলাম, অমিতাভদা আমার একটা পুরনো ফিচার ছেপেছে, ট্রেনের কাগজ চলে গেছে, হ্যাঁ, কলকাতারও কিছু বিটের কাগজ গেছে। অতীশবাবু এগিয়ে এলেন, বললাম সব ঠিক চলছে তো। অতীশবাবু একেবারে গদো গদো, হ্যাঁ ছোটবাবু, আজ থেক মনে হয় আমি অনি থেকে ছোটবাবু হয়ে গেছি। এদের রকম সকম দেখে তাই মনে হচ্ছে। সব ঠিক আছে দেখবেন আর কোনো সমস্যা হবে না।
আমি ওপরে উঠে চলে এলাম। নিউজরুমে তিনচারজন ইতি উতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্প করছে, টেলেক্স মেসিনটা গঢ় গঢ় করে চলছে। আমাকে দেখে ছেলেগুলো কেমন নড়ে চড়ে বসলো, আমি আমার টেবিলে গেলাম, এই ছেলেগুলোকে আমি ঠিক চিনি না। তবে এরা আমায় চেনে, আমার সারকিটটা এই হাউসে খুব কম। একজনকে ডেকে বললাম, লাইটটা একটু জেলে দেবে। হ্যাঁ অনিদা বলে ছুটে চলে গিয়ে লাইটটা জেলে দিলো, আমি ড্রয়ার থেকে নিউজপ্রিন্টের প্যাডটা নিয়ে বললাম, হ্যাঁরে ক্যান্টিন খোলা আছে।
আছে।
আশেপাশে তো কাউকে দেখছি না।
বলো না কি আনতে হবে এনে দিচ্ছি।
ডিম টোস্ট পাওয়া যাবে এত রাতে। আর একটু চা।
একটি ছেলে, জলের বোতল এগিয়ে দিলো, আমি ছিপিটা খুলে ঘট ঘট করে জল খেলাম। ওরা চা নিয়ে এলো ডিম টোস্ট বানিয়ে নিয়ে এলো। একজনকে বললাম, দেখতো আর্ট ডিপার্টমেন্টে কেউ আছে কিনা। আমার কথা শেষ হোলো না, একজন ছুটে বেরিয়ে গেলো। ফিরে এসে বললো, দ্বীপায়নদা আছে। আমি ডিমটোস্ট খেতে খেত বললাম, এই যা, দেখ আমি একলা খাচ্ছি, তোদের জন্য নিয়ে আয়। না না তুমি খাও আমরা তো খেয়েছি। আমি বললাম, তা হয় না, তখন একজন দৌরে গিয়ে ক্যান্টিনে বলে এলো, কিছুক্ষণ পর ক্যান্টিন থেকে একটা ছেলে এসে খাবার দিয়ে গেলো। আমি পয়সা মিটিয়ে দিলাম, দ্বীপায়ন এসে হাজির। আমায় দেখ একগাল হেসে বললো, কনগ্রাচুলেসন, অনিদা।
কেনো দ্বীপায়ন।
তুমি আমাদের বস হলে।
আমায় দেখে কি তাই মনে হচ্ছে।
তোমায় দেখে কারুরি কোনো দিন সেরকম মনে হবে না।
তাহলে।
তবু।
জীবনে অব্যয় গুলো বাদ দাও। যদি, তবে, কিন্তু, বটে এসব কথা বলবে না। বোল্ড হও, সবার শেষ কথা কাজ। তোমাকে কেউ মনে রাখবে না, তোমার কাজটাকে সবাই মনে রাখবে। কাজের মধ্যে দিয়ে তুমি।
দ্বীপায়ন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
শোনো আমার মোবাইলে কতকগুলো ছবি আছে। একটু প্রিন্ট করে দিতে পারবে।
অবশ্যই।
চলো তোমার ঘরে যাচ্ছি।
ঠিক আছে তুমি এসো।
দ্বীপায়ন চলে গেলো।
আমি উঠে বাথরুমে গেলাম। ফিরে এসে ট্যাক্সিডার্মির আর্টিকেলটা লিখলাম, ছেলেগুলোকে বললাম, তোরা পরতো কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা, দ্বীপায়নের ঘরে গেলাম। ছবি গুলো প্রিন্ট করালাম, দ্বীপায়ন অবাক, ছবি গুলো দেখে, দাদা তুমি তো প্রফেসনাল ফটোগ্রাফারকে হার মানাবে।
না রে আমার গুন নয়, এই মোবাইলটার গুন।
তুমি যাও আমি ছবিগুলো কারেকসন করে প্রিন্ট নিয়ে যাচ্ছি।
আচ্ছা।
আমি আবার নিউজ রুমে চলে এলাম। ছেলেগুলো আমায় দেখেই বললো, অনিদা সুপার্ব হয়েছে। তুমি এরকম ভাবে লেখ কি করে বলোতো, একটা নিরস সাবজেক্ট তুমি কি সুন্দর গল্প লিখেছো।
হাসলাম। ওদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
আমার গল্পকরার বিষয় কাগজ কাগজের লেখা, জীবনের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে শেয়ার করে নিলাম, ওরা আমার গল্প যত শোনে তত অবাক হয়ে যায়, আমাকে বললো, তুমি কিছু সাবজেক্ট দাও না অনিদা লিখি, আমি ইনস্টেন্ট কয়েকটা সাবজেক্ট ওদের দিলাম, কিভাবে লিখতে হবে ,কোন এ্যাঙ্গেলে লেখাটাকে টুইস্ট করে দাঁড় করাতে হবে, তা বললাম, ওদের চোখমুখে বিস্ময়, দেখে বুঝলাম আমাদের অফিসের সিনিয়াররা ওদের সঙ্গে এই ভাবে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না।
একটি ছেলে বলে উঠলো অনিদা আমরা লিখলে তুমি কারেকসন করে দেবে।
কেনো দেবনা, তোরা লিখিস আমি সময় মতো কারেকসন করে দেবো।
কালকে থেকেই শুরু করছি, বিশ্বাস করো প্রত্যেকদিন এই নিউজ লিখতে লিখতে একেবারে হেজে গেছি।
হাসলাম।
নিউজটাকে নিরস সাবজেক্ট ভাবছিস কেনো, নিউজ তথ্য, তথ্য কেউ পরে, তোকে নিউজটাকেই একটা ফিচারের আকারে প্রেজেন্ট করতে হবে, দেখবি, নিউজটা অনেক বেশি গ্রহণ যোগ্য হবে।
তোমাকে মাঝে মাঝে বিরক্ত করবো।
দুর অনিদাকে পেলে তো বিরক্ত করবি, আমিই তো অনিদাকে ছয়মাস আগে দেখেছিলাম। তারপর আবার অনিদার ঘারে আরো দায়িত্ব পরলো। আর একজন বললো।
আমি হেসে বললাম, নারে এবার থেকে অফিসে সময় দেবো।
দ্বীপায়ন এলো ছবি গুলো নিয়ে। আমার হাতে পৌঁছবার আগেই ওরা কারাকাড়ি করে দেখে নিলো। আমি দ্বীপায়নকে বললাম, ছবি গুলো ঠিক ঠাক দাঁড়িয়েছে তো।
কি বলছো অনিদা এরথেকে ভালো ছবি হয় না।
আমি বললাম গ্যাস খাওয়াচ্ছ।
তোমায়।
একটি ছেলে আমার হাতে ছবিগুলো দিল, দেখলাম, আমি যা তুলেছিলাম, তার থেকেও অনেক বেশি পরিষ্কার এবং সুন্দর দেখাচ্ছে।
কিরে ওই লেখার সঙ্গে এই ছবিগুলো যাবে।
যাবে মানে, দৌড়বে।
হাসলাম। একটা খাম নিয়ে আয়।
ওরা দৌড়ে গিয়ে মল্লিকদার টেবিল থেকে একটা খাম নিয়ে এলো। আমি খামের মধ্যে ছবি এবং লেখাটা ঢুকিয়ে খামটা স্টেবেল করলাম, ওপরে লিখে দিলাম, টু দ্য এডিটর ইন চিফ।
খামটা অমিতাভদার টেবিলে রেখে আসবি।
দাদার ঘর বন্ধ।
তুমি আমায় দাও, সকালে যারা আসবে তাদের বলে দেবো। দাদার টেবিলে রেখে দেব। আর একজন বললো।
রাখ তাহলে খামটা।
লেখাটা কবে বেরোবে।
সে তো এডিটর মহাশয় জনবে।
ওরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
তোমার লেখা……
ভুল কথা, এখানে আমি সাংবাদিক, উনি সম্পাদক, উনি যদি মনে করেন কাগজের স্বার্থে এটা যাওয়া উচিত তাহলে যাবে, না হলে যাবে না।
তুমি এই ভাবে ভাবো।
না ভাবলে এগোনো যাবে না।
ওরা চুপ চাপ।
সার্কুলেশন থেকে নিউজ রুমে কাগজ এলো, হুরো হুরি পড়ে গেলো, নিজেদের লেখাটা বেরিয়েছে কিনা দেখার জন্য, প্রথম প্রথম আমারও এরকম হোতো। আমাকে ওরা একটা কাগজ এনে দিলো, ভালো করে উলটে পাল্টে দেখলাম, কাগজটা আবার স্বমহিমায় ফিরে আসছে। কাগজটাকে আরো ভালো করা যায়, একটু গেটআপ আর আধুনিকিকরণ। মনে মনে হাসলাম, মিত্রার ঘারে যা লোনের বোঝা এখন বছর খানেক এইসব চিন্তা ভাবনা করা যাবে না। তারপর ঋণ শোধ হলে ভেবে দেখা যাবে।
কটা বাজে রে।
পৌনে পাঁচটা।
না এবার যেতে হবে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, চলি রে।
আবার কবে দেখা হবে।
পাগলা আমি তো রেগুলার আসি, তোর ইচ্ছে থাকলেই দেখা হয়ে যাবে।
নিউজরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
সেই ছেলেটি নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই স্যালুট করলো। হেসেফেললাম।

 
স্যার ভুল হয়ে গেছে।
কেনো।
আপনাকে তখন।
তুমি তো ঠিক কাজ করেছো, আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে, তুমি কি করতে।
ছেলেটি মাথা নীচু করে আছে।
তোমার ডিউটি তুমি করেছো। আমার ডিউটি আমি করেছি। এই ভাবে কাজ করবে।
ছেলেটি মাথা নীচু করে ঘার দোলালো। তারপর মাথা তুলে বললো, স্যার আপনার গাড়ি রেডি আছে।
আমার! কেনো।
সার্কুলেসন বাবু বলে গেছেন।
না না আমি চলে যেতে পারবো, তোমরা গাড়িকে অন্য কাজে লাগাও।
বেরিয়ে এলাম।
একটা ট্যাক্সি ধরলাম। পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। মোবাইলটা বার করে, দেবীশীষদের গ্রুপটাকে একটা ম্যাসেজ করলাম, “সুপ্রভাত তোমাদের দিনটা ভাল কাটুক”। কলকাতার সকাল আস্তে আস্তে জেগে উঠছে, চায়ের দোকান গুলোয় ভিড়, সকালের মর্নিং ওয়াকারদের সৌজন্যে। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা, মোড়ে মোড়ে কাগজের হকারদের ভিড়। কাড়াকাড়ি মারামারি। আবার মিত্রা, মিঃ ব্যানার্জীর কথা মনে পরে গেলো বুড়ীমাসি, রবিনের কথা মনে পরে গেলো, কিছুতেই আমি মেলাতে পারছি না। মেমসাহেব বউ, তার ছেলে, মিত্রাকে বিয়ে করার প্রস্তাব, সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। কেনই বা মিত্রা কাল গেলো মিঃ ব্যানার্জীর কাছে, কেনই বা মিত্রা মিঃ ব্যানার্জীকে আড়াল করতে চাইছে, সব কেমন যেন ঘন কুয়াশার মতো লাগছে আমার কাছে। এবার মনে হচ্ছে এই জটটা খুলতে হবে আমাকে, আরো অনেক কিছু আমার জানার বাকি, বুড়ীমাসি কিছু জানে। ওই সব বলতে পারবে।
অমিতাভদার বাড়ির গেটে যখন পৌঁছলাম, পৌনে-ছটা বাজে। ট্যাক্সি থেকে নামতেই, গেট খুলে অমিতাভদা বেরিয়ে এলেন। দাদা নিয়ম করে বাড়ির বাগানে এই সময়টা হাঁটেন, কেউ ওঠে না। বাগানে হাঁটার ফাঁকেই যতটা সম্ভব পরিষ্কার করেন।
আমাকে দেখেই বললেন কিরে কোথা থেকে। এত সকালে।
গেছিলাম একটু।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তুই কোথাও গেছিলি।
উঃ তুমি হাঁটো, হাঁটার সময় কথা বলতে নেই। সবাই উঠেছে।
না।
ঠিক আছে। আমি গট গট করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। আমার ঘর খুলে প্রথমে জামা পেন্ট খুলে বিছানার ওপরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গামছা নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলাম। দাঁত মেজে ভালো করে স্নান করে ফ্রেস হলাম। শরীরটা অনেক হাল্কা লাগছে। বাথরুম থেকে বেড়োতেই দেখলাম, বড়মা ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন।
মর্নিং ম্যাডাম। কথা রেখেছি।
সে তো দেখতে পাচ্ছি।
তাহলে, অনি যা বলে তা করে। আলনা থেকে পাজামা পাঞ্জাবীটা টেনে বার করলাম।
সারারাত কোথায় থাকা হয়েছিল শুনি।
বাবা, এতো মাস্টারনীর মতো কথা।
হ্যাঁ তোর কোনো মাস্টারও নেই মাস্টারনীও নেই। আজ থেকে আমিই মাস্টারনী হবো।
তা ভালো তা ভালো।
চুপচাপ। আমি পাজামা পাঞ্জাবী গলালাম।
তা বড়সাহেব বুঝি ঠেলে তুলে দিলেন, যাও তোমার ছেলে পৌঁছে গেছে।
বড়মা উঠে এলেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমার মাথা খা, বল তুই কোথায় ছিলি সারারাত।
এই তো, এই সব দিব্যি টিব্বি দিলে অনি ফুরুত হয়ে যাবে।
ঠিক আছে দিব্যি দেবো না। বল তুই কোথায় ছিলি।
আরে বাবা অনির কিছু কাজ আছে সেগুলো করছিলো।
সে তো বুঝলাম, আবার কিছু গন্ডগোল।
একেবারে না।
ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।
আসুন আসুন…..
খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
স্বাভাবিক। ছোটমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, কাল রাতে শুয়ে শুয়ে সমস্ত নিউজ পরে ফেলেছো।
তোর নিউজ। বয়েই গেছে।
তাহলে।
ধর, আমার এখন অনেক কাজ। তোর সঙ্গে গল্প করার সময় নেই।
ছোটমার চোখে চোখ রাখলাম, শেয়ানে শেয়ান চেনে, ছোটমা আমার চোখে চোখ রাখতে পারল না। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। বড়মা বড় সাধা সিধে, কিছু বোঝালে বোঝে, ছোটমা বুদ্ধি রেখে কাজ করে।
যাই তুই যখন বলবি না, ছোটকে জিজ্ঞাসা করি।
যাও।
চায়ের কাপটা হাতে করে, জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। সেই আমগাছ, মাথায় ঝাঁকরা চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাশেই পেয়ারা গাছ, দুটো টিয় পাখি পাকা পেয়ারা খাচ্ছে, ঠোঁট দুটো অসম্ভব লাল। মাঝে মাঝে টেঁ টেঁ আওয়াজ করছে, সারারাত জাগলাম, একেবারে ঘুম পাচ্ছে না। শরীরটা বেশ সতেজ লাগছে। কোথাথেকে একটা কাক উড়ে এসে টিয়াটার সঙ্গে ঝগড়া করতে শুরু করলো, দুজনের সে কি ঝগড়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দখছিলাম, ভীষণ মজা লাগছে শেষে কাকটা উড়ে চলে গেলো, বোধ হয় দলবল ডাকতে গেলো, টিয়াটাও খাওয়া শেষ হতে উড়ে চলে গেলো। মাঝা মাঝে যখন সময় পাই আমি এই জানলাটার সামনে এসে দাঁড়াই, এই পক্ষী কুলের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করি। লোকে এসব কথা শুনলে পাগল বলবে।
ঘুরে ফির সেই এক কথা বার বার মনে পরে যাচ্ছে। মিত্রা, মিঃ ব্যানার্জী, অদ্ভুত সাইকলজি, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, তবু মিত্রা মাথায় ডগ ডগে সিঁদুর মেখে ঘুরে বেরায়, বুড়ীমাসি দারুন কথা বলেছে গায়ে হলুদ মাখলে কুমিরে ধরার ভয় নেই, কথাটা রামকৃষ্ণ পরমহংসের, কথামৃতে পরেছিলাম। বিনোদিনী দাসীকে বলেছিলেন রামকৃষ্ণ, কিন্তু সে তো বিনোদিনী, গনিকার কন্য ছিলেন, তাহলে কি মিত্রা। দুর কি সব চিন্তা করছি, কথার পৃষ্ঠে কথা সাজিয়ে নিজেই নিজের জালে ফেঁসে যাচ্ছি।
বুবুন।
চমকে তাকালাম। মিত্রা।
ওই নাম ধরে ডাকার অধিকার তোর নেই।
ঘরের দরজার সামনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। চোখটা যেন কাঠকয়লার টুকরো, গন গন করছে। এত সকালে মিত্রা এ বাড়িতে! ধীর পায়ে এগিয়ে এলো আমার কাছে।
কেনো গেছিলি।
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না, একটা কিছু বলার দরকার আছে, কাল থেক অনেক কিছু শুনেছি, এই সুবর্ন সুযোগ ওকে আঘাত করার, আসল সত্য আমাকে জানতেই হবে, মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, নিজের কেপ্টের কাছে গেছিলাম, দেখলাম শরীর খারাপ ফিরে এলাম।
সপাটে আমার গালে একটা থাপ্পর মারলো মিত্রা। ঘরের গেটের মুখে তখন বড়মা ছোটমা, মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো, আমার পাঞ্জাবীটা মুঠো করে ধরেছে মিত্রা। বুকে মাথা ঘোষছে, ওরা অবাক, এরকম ঘটনা কখনো ঘটতে পারে ওরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি। আমি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বড় হওয়ার পর জীবনে প্রথম কেউ আমার গালে থাপ্পর মারলো, তাও আবার যে সে কেউ নয় মিত্রা। যার জন্য আমি রাতকে দিন দিনকে রাত করেছি। গেটের মুখে ওরা চারজন স্থানুর মত দাঁড়িয়ে আছে ওরা ঠিক মেলাতে পারছে না ব্যাপারটা। সকলে স্তম্ভিত।
মিত্রা।…..মিত্রা…..মিত্রা।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পরছে, আমি ওকে জাপ্টে ধরলাম, মিত্রার চোখ বন্ধ, চোখের কোলে জল, আমি ওকে জাপ্টে ধরে ওর গালে আস্তে আস্তে থাপ্পর মারলাম, না কোন সেন্স নেই। মাথাটা বুক থেকে হেলে পরল, মল্লিকদা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা, ছুটে এসে ধরে ফেললো, মিত্রা আমার পাঞ্জাবীটা মুঠো করে ধরে আছে। কিছুতেই মুঠো খুলতে পারলাম না, চড় চড় করে পাঞ্জাবীটা ছিঁড়ে গেলো, আমি ওকে আঁকুড় করে ধরে এনে আমার বিছানায় শুইয়ে দিলাম, ছোটমাকে বললাম, তাড়াতাড়ি ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা জল কিংবা বরফ নিয়ে এসো, মল্লিকদাকে বললাম, দেখোতো আমার টেবিলে কোনো চামচে আছে কিনা, ছোটমা ছুটে বেরিয়ে গেলেন, অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখোতো একজন ডাক্তারকে পাও কিনা।
কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘরের মধ্যে যেনো হুর হুরি পরে গেছে, বড়মা স্থানুর মতো একধারে দাঁড়িয়ে আছেন, কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছেন, মল্লিকদা বাথরুম থেকে মগে করে জল আনলেন, আমি ওর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম, না কোন সেন্স নেই। মল্লিকদা চামচেটা এগিয়ে দিলেন, আমি মিত্রার গালটা টিপে ধরে, চামচেটা ঢোকাবার চেষ্টা করলাম, দাঁতে দাঁত লেগে আছে, ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাপরটা কোমর থেকে ঢিলে করে ওর শায়ার দরিটা খুলে দিলাম, বুকের কাপরটা ঢেকে টপ টপ করে ব্লাউজের বোতাম গুলো খুলে দিলাম, আঁকুড় করে বুকের সঙ্গে ধরে, ওর ব্রার হুকটা আলগা করে দিলাম, মল্লিকদাকে বললাম, টাওয়েলটা একটু ভিজিয়ে এনে দাও তো, মল্লিকদা ছুটে টাওয়েলটা ভিজিয়ে এনে দিলো, আমি খুব সন্তর্পনে মিত্রার শারা শরীর ভালো করে মুছিয়ে দিলাম, ছোটমা ঠান্ডা জলের বোতল আর বরফ নিয়ে এসেছে, আমি আলনা থেকে আমার একটা গেঞ্জি টেনে নিয়ে ওর মধ্যে বরফের টুকরো দিয়ে ওর ঘারের তলায় দিয়ে দিলাম, বাড়িতে কোনো এন্টাসিড আছে, থাকলে দাও তো, মল্লিকদা বললেন, তোর ছোটমা খায়, আমার কথা মুখ থেকে বেরলো না, ছোটমা ছুটে চলে গেলেন, কার্মোজাইনের বোতলটা নিয়ে এলন, আমি মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে, জোর করে চামচে ঢুকিয়ে ওর দাঁতের পাটি খুললাম, জিভটা টেনে বের করে, চামচে দিয়ে কার্মোজাইম খাওয়ালাম, ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয় সবাই দেখছে, আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, একমিনিটের জন্য একটু বেরোও তো তোমরা, ওরা বেরিয়ে গেলো, আমি মিত্রার কাপরের ভেতর হাত ঢুকিয়ে পেন্টিটা টেনে খুলে আমার আলনায় একটা জামার তলায় রাখলাম, ওদের বললাম এবার এসো। ওরা ঘরে এলো, মিত্রা চোখ বন্ধ করে মরার মতো পরে আছে, অমিতাভদা ডাক্তার নিয়ে এলেন, ভদ্রলোককে আগে দেখেছি, দাদারি বন্ধু, উনি ভালো করে দেখলেন, প্রসার মাপলেন, প্রেসার হাই, বাঃ ট্রিটমেন্টতো ভালই করেছো দেখছি, বরফটা খুব কাজ দিয়েছে বুঝলে অমিতাভ, নাহলে একটা অঘটন ঘটতো। ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
একটা কাগজ পেন দাও তো, দুটো ইঞ্জেকসন লিখে দিচ্ছি নিয়ে এসো এখুনি, দিয়ে যাই, খুব স্ট্রেন পরেছে বুঝলে, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, তাই ফেন্ট হয়ে গেছে, বিশ্রাম দরকার, ডোন্ট মুভ। সাতদিন। তারপর কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া , হাওয়া বদল চাই। উনি ইঞ্জেকসন লিখে দিলেন, আমি বেরিয়ে গেলাম কাগজটা নিয়ে, নিচে রবিন ছিলো ওকেই নিয়ে গেলাম, ইঞ্জেকসন নিয়ে এলাম, রবীন ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা কি হলো, ম্যাডাম ওপরে গেলেন, একটা হৈ হৈ তারপর ডাক্তার এলো, বেচারা জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না। ডাক্তারবাবু ইঞ্জেকসন দিলেন মিত্রার দুহাতে দুটো, এখন ঘুমবে, ওর ঘুমের দরকার বুঝলে অমিতাভ, আর একজন সর্বক্ষণের পাহারাদার দরকার। আমি বৈকালে একবার আসবো।
বড়মা এগিয়ে এলেন, ও সামন্ত ঠিক বলছো, ভয়ের কিছু নেই।
না সেরকম তো কিছু বুঝলাম না, স্ট্রেইনটা কেউ নিয়ে হজম করতে পারে কেউ পারে না, তখন উল্টো একসন, সেনস্লেস। মেয়েটি কে।
অমিতাভদা বললেন, আর বলো কেনো আমার অফিসের মালকিন।
বলো কি। ইন্টারেস্টিং। তোমার বাড়িতে এসে সাত সকালে অজ্ঞান।
এর মধ্যেও ছোটোমা ফিক করে হেসে ফেললো।
হ্যাঁ। সে অনেক কথা , তোমায় পরে একদিন গল্প করবো।
আগে তাও সময় পেতে এখন তো দেখি তুমি আমার থেকেও বিজি।
অমিতাভদা আমায় দেখিয়ে বললেন, যত নষ্টের গোড়া হচ্ছে এই অনি।
না । এ বললে তো শুনবো না। গুড প্রিকোয়েসন নিয়েছে, না হলে এ সব কেস যখন তখন অঘটন ঘটাতে পারে।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। একেবারে এপাশে মল্লিকদার ঘরের সামনে। ওরা আমার ঘর দখল করে রাখলেন বেশ কিছুক্ষণ, বুঝতে পারছি আমি বেড়িয়ে আসার পর বেশ জমিয়ে গল্প হচ্ছে, হাসাহাসি হচ্ছে, ছোটমা একবার বেরোলেন, চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে ঘরে ঢুকলেন, আমাকে এককাপ চা দিয়ে গেলেন, আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন, যাওয়ার সময় বলে গেলেন, তোলা থাকলো। বাগানে এখন রোদের ঝলকানি, রবীন গাড়ির একটা পাল্লা খুলে তেড়ে ঘুমোচ্ছে। কিই বা করবে কালকে শুতে শুতে রাত হয়েছে। আবার সাত সকালে মালকিনের তাড়ায় বেড়িয়ে এসেছে।
ওই কথাটা বলতে মিত্রা আমাকে তেড়ে একটা চর মারলো, কথাটা ও সহ্য করতে পারে নি, তাহলে ম্যাসেজটা লিখতে গেলো কেনো। আমি মোবাইলটা খুলে কালকের ম্যাসেজটা দেখলাম, একবার দুবার তিনবার পরলাম, নিচের টাইমটা দেখলাম, এটা তো খেয়াল ছিলো না, যে টাইমে ম্যাসেজ করেছে মিত্রা সেই টাইমটা বলছে ও তখন মিঃ ব্যানার্জীর চেম্বার থেকে সবে বেরিয়েছে। ইস খুব ভুল করেছি, এই বোকামি করলাম কেনো। আমার আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, কালকে এমন কিছু ওখানে ঘটেছে যা মিত্রা মেনে নিতে পারে নি, আমাকেও বলতে পারছে না, তার জন্য কালকে ক্লাবে গিয়ে আকন্ঠ মদ গিলেছে।
মনটা ভারি হয়ে উঠলো একটা ছোট্ট ভুলে কি থেকে কি হয়ে গেলো। কেনো বলতে গেলাম ওই কথা, না বললে এ ঘটনা ঘটতই না। নিজেকে নিজে দোষী সাব্যস্ত করলাম, অনি আজ এই ঘটনার জন্য তুমি দায়ী। এর দায় তুমি অস্বীকার করতে পারো না। এর শাস্তি তেমাকে পেতে হবে।
এই ছোকরা, শোনো এদিকে।
ফিরে তাকালাম।
ডাক্তারবাবু আমাকে ডাকছেন।
আমি এগিয়ে এলাম।
তোমার কথা সব শুনলাম অমিতাভর মুখে। গুড। তোমার বান্ধবীর এখন রেস্টের দরকার, আর ওকে সঙ্গ দিতে হবে। এটাতো এই বুড়ো-বুড়িরা পারবে না। এর দায়িত্ব তোমার।
ছোটমা মুচকি মুচকি হাসছে।
ভালো হয়েছে। ও বলেছিলো আমার কাছে কয়েকদিন থাকবে। ওর দাদাটা ওকে খাটিয়ে মারলে। বড়মা বললেন।
দেখলে, দেখলে ডাক্তার কি বলি বলোতো, সরষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে।
ওঃ তুমি এসব বুঝবে না। শোনো আমি বৈকালে একবার আসবো। আজ বিছানা ছেড়ে একেবারে উঠবে না। বুঝলে। আর একটা কথা, যখন সেন্স আসবে তখন একটা জার্ক হতে পারে, আমি পাশেই থাকি একবার খবর দেবে, আর যদি সে রকম না হয় তাহলে যেমন চলছে তেমন চলবে, আমি ডিউ টাইমে আসবো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
তুমি লেগে পরো, তোমার কাজে।
জমাটা খোল। ছোটোমা হাসতে হাসতে বললেন।
আমি একবার ছোটমার মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে মাথা দোলালাম। খুলছি।
ওরা নিচে চলে গেলো, আমি আমার ঘরে গেলাম। মিত্রার নিথর দেহটা বিছানার সঙ্গে মিশে আছে। হাত দুটো দুপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি হাত দুটো আস্তে করে জড়ো করে ওর পেটের ওপর রাখলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। কাপরের তলা দিয়ে বুকটায় একটু হাত বুলিয়ে দিলাম, এই খাঁচাটায় কতো কষ্ট আত্মগোপন করে আছে। মিত্রা চোখ খুলছে না। মাথার চুল গুলো মাথার শিয়রে ছড়িয়ে রয়েছে, বরফের টুকরো গুলো আর ঘারের তলায় নেই, ছোটমা মনে হয় সব ঠিক করে দিয়েছে। আমি মিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। বুকের ভেতরটা ষন্ত্রণা করছে। একটা নিষ্পাপ মেয়র জীবন কি ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিলো। ভাবতেই সিউরে উঠছি। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে রইলাম।
ছোটমা এলেন খাবার নিয়ে, বললাম খেতে ভালো লাগছে না।
খা , না খেলে যুদ্ধ করবি কি করে , তোর তো সব সময় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।
তুমিও বলবে।
কেনো, আমি ছাড়া কি আর কেউ বলেছে।
চুপ করে গেলাম।
একটু খা, এত কষ্ট করে বানালাম।
না। তুমি রেখে দাও। পারলে একটু চা বানিয়ে দাও।
ছোটমা খাবারটা টেবিলে রেখে, আমার কাছে এগিয়ে এলেন। মাথাটা বুকে চেপে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, মন খারাপ করিস না, ঠিক হয়ে যাবে ।
আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। ছোটমার বুকে মুখ গুঁজে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম, আমি কোনো অন্যায় করি নি।
কে বলেছে তুই অন্যায় করেছিস। পাগল।
তোমরা সকলে আমাকে দোষ দাও।
কে তোকে দোষ দেয়, বল তুই। তুই তোর মতো নিজের খায়ালে কাজ করিস, কত বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করিস, কাউকে না জানিয়ে নিজের মাথায় সব ঢুকিয়ে নিস, কাউকে কিছু বলিস না। আমরাও তোকে ভালোবাসি, আমাদেরও ভয় করে। রাতের বেলা ঘুমতে পারি না। আমাদেরও হারাবার ভয় আছে অনি। তোকে সেটা বুঝতে হবে। কাঁদিস না।
আমি ছোটমার আঁচলে মুখ মুছে, মাথা নীচু করে বসে রইলাম।
নে খেয়ে নে।
না ছোটমা ভালো লাগছে না। তুমি একটু চা দাও।
ঠিক আছে আমি ঢেকে রেখে যাচ্ছি, তোর ইচ্ছে হলে খাস।
ছোটমা অনিচ্ছা সত্বেও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকালাম, চোখের পাতা একটুও নড়ছে না। স্থির। আমি ওর নাকের কাছে আঙুল নিয়ে গিয়ে রাখলাম, না নিঃশ্বাস পরছে, বুকে কান দিয়ে শুনলাম, ধক ধক করছে। পায়ের তলায় হাত দিলাম, না এখনো গরম আছে। কত চিন্তা মাথার মধ্যে বাসা বাঁধছে। সবই কু-চিন্তা কোনটাই ভালো নয়। দাদা এলেন, অফিসে বেরোবেন। তুই তাহলে থাক। কি করবি। তোর কাগজ পত্র সব দেখলাম, রাতে ফিরি কথা বলবো। আমারও অনেক জানা বাকি তোর কাছ থেকে, তুই তো কালকে সব ম্যাজিক দেখালি, কিছু বুঝলাম, কিছু বুঝলাম না, আমি, মল্লিক বেরোচ্ছি, রাতে তাড়াতাড়ি ফিরবো। সেরকম হলে ফোন করবি।
মাথাটা নীচে নামিয়ে রাখলাম, দাদার দিকে তাকাতে পারছি না।

 
কিছু ভাবিস না, যা বুঝলাম এইকদিন একটু টেনসন গেছে তোদের দুজনেরি, তুই নিতে পেরেছিস ও নিতে পারে নি, বড় কাজ করতে গেলে, এরকম একটু আধটু হয়। ঠিক আছে আসি। আর শোন রবিনকে নিয়ে যাচ্ছি, গিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেবো।
অফিসে কাউকে আবার বলতে যেও না।
না না বলবো না।
সনাতানবাবুকে জিজ্ঞাসা করো ওরা চেক গুলো জমা দিয়েছে কিনা, আমাকে একবার ফোন করতে বোলো।
তাহলে আমি আর জিজ্ঞাসা করবো কেনো, কিছু বললে তোকে ফোন করতে বলবো।
আচ্ছা।
মল্লিকদা হাত নাড়লেন দাদার পেছনে দাঁড়িয়ে।
আমি হাত নাড়লাম।
ওরা চলে গেলো।
মনে হলো মিত্রার ঠোঁট দুটো যেন সামান্য নরে উঠলো। মুখটা ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলাম, না আমি ভুল দেখেছি। আমার চোখের ভুল। আবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, ঠায় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। কতোক্ষণ বসে ছিলাম জানি না। ছোটমা ঘরে ঢুকে বললেন, এবার তুই একটা বাইরে যা আমি বসছি।
আমি টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বারান্দার এক কোনে চলে এলাম, কটা বাজে, সূযর্টা ঠিক মাথার ওপর, একটা সিগারেট ধরালাম, কিছুতেই ভালো চিন্তা মাথায় আসছে না, যতো ভুলে থাকার চেষ্টা করি, ততই যেনো আমার মাথায় চেপে বসছে, পায়ে পায়ে ছোটমার ঘরে ঢুকলাম, এ ঘরে আমি খুব একটা আসি না। মনে করতে পারছি না শেষ কবে এসেছি। ছোটমার ঘরটা বেশ সাজানো গোছানো। খাটটায় টান টান করে চাদর পাতা, খুব শুতে ইচ্ছে করছিলো, নিজের মনকে বললাম, না। খাটের পাশে ছোট্ট একটা টেবিল, ওখানে চোখ আটকে গেলো। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম, আমার মায়ের ছবি। মিত্রা নিয়ে এসেছিলো। ছোটমা একদিন কথায় কথায় বলেছিলো “আমাকে তোর মায়ের একটা ছবি দিস তো”। তার মানে মিত্রা সেই ছবিকে কপি করে ছোটমাকে প্রিন্ট করে দিয়েছে। মনটা ভারি হয়ে উঠলো। আমি টেবিলটার সামনে গিয়ে মাটিতে বাবু হয়ে বসলাম, কিছুতেই চোখ বন্ধ করে মায়ের মুখটা মনে করতে পারছি না। ভেতর ভেতর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, মনে মনে বলে ফেললাম, মা আমি কি অপরাধ করেছি বলতে পারো, যার জন্য আমাকে এত কষ্ট পেতে হয়। কোনো সাড়া মিললো না। ছবি ছবিই থেকে গেলো। কতোক্ষণ ওইখানে ওইভাবে বসেছিলাম মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে জানি না। নরম হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালাম, ছোটমা দাঁড়িয়ে আছেন, চোখের পাতা ভারি ভারি, চল মিত্রা উঠেছে, আমি এর আগে দুবার এসেছিলাম, তোকে বিরক্ত করি নি।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
এই ছোট্ট বুকটায় এতো কষ্ট হাসি মুখে ধরে রাখিস কি করে।
আমি ছোটমার বুকে মুখ লোকালাম।
পাগল। কালরাতে তুই এতোকান্ড করেছিস, সেটা বললেই তো সব মিটে যেতো। তুইও কষ্ট পেলি মেয়েটাকেও কষ্ট দিলি। সাথে সাথে বড়মাকে কষ্ট দিলি, ছোটমাকে কষ্ট দিলি। নিচে গিয়ে বড়মাকে একবার দেখ, সে কি করছে। সে মুখে কিছু বলতে পারে না। তোর মায়ের মুখটা দেখেছিস, ঠিক তার মতো তোর বড়মার মনটা, বুঝিস না। কাল তুই আসিসি নি, তোর বড়মা খায়ও নি। নিজেও খেলি না কাউকে খেতেও দিলি না। তোদের দুটো পাগল-পাগলীকে নিয়ে বড়ো সমস্যা।
আমি ছোটমাকে জাপ্টে ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
যা নিজেরা নিজেদের সমস্যা মেটা, আমি নিচে গিয়ে বড়কে সামলাই, সে তো অতিষ্ঠ করে মারছে। আমার যত জ্বালা। সকাল থেকে এককাপ চাও তাকে খাওয়াতে পারি নি। যা ও ঘরে যা। কথা শেষ হলে বলবি একসঙ্গে খাবো।
আমি ছোটমার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ছোটমা নিচে নেমে গেলো।
আমি আমার ঘরের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম, মিত্রা দুহাঁটু জড়ো করে, মাথা নীচু করে বসে আছে। অগোছালো কাপর, খোলা ব্রেসিয়ারের ফিতে, পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে, আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম, ওর মাথায় হাত রাখলাম। ও আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। কোনো কথা নেই খালি কাঁদছে, ঝর ঝর করে কাঁদছে। আমি ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছি, মনে মনে বললাম তুই যত পারিস কাঁদ তাহলে যদি কিছুটা হাল্কা হোস। আমার বুক ভিঁজে গেছে।
মিত্রা মুখ তোল। আর কাঁদিস না।
মিত্রা কিছুতেই মুখ তুলছে না। আমি জোর করে ওর মুখ তুললাম, ও চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
চোখ খুলবি না।
আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে নিজেও কেঁদে ফেললাম। কতোক্ষণ দুজনে জাপ্টা জাপ্টি করে বসেছিলাম জানি না।
ছোটমা কখন ঘরে এসেছে, তাও জানি না। এবার ওঠো অনেক হয়েছে।
আমরা দুজনে দুজনকে ছেড়ে দিলাম।
খিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি রেডি হও। মিত্রা তুই স্নান করেছিস।
মিত্রা ঘাড় দুলিয়ে বললো না।
যা উঠে পর, স্নান সেরে নে। কোথায় করবি নিচে না এঘরে।
এখানেই করে নিচ্ছি।
ঠিক আছে।
তোর যে ব্যাগ এখানে রাখা আছে, সাখান থেকে কাপর বার করে দেবো, না আমার একটা পরে নিবি।
তোমার একটা দাও।
ছোটমা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না, মিত্রাও আমার মুখের দিকে তাকাতে পারছে না, মাথা নীচু করে রয়েছে।
যা ওঠ। আমি এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরলাম, ও আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। অগোছালো কাপরটা ঠিক করার চেষ্টা করলো।
থাক আর কাপর গোছাতে হবে না, যা খেল দেখাচ্ছিস।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসার চেষ্টা করলো।
ছোটমা, ঘরে ঢুকলো, আমি ওকে ছেড়ে দিলাম।
ছোটমা বলে উঠলেন ধর ধর ওকে ছেড়ে দিলি কেনো, ছোটমার কাছে লজ্জার আর কি রাখলি।
দুজনেই মুচকি হাসলাম।
ছোটমা কাপর-শায়া-ব্লাউজ, রেখে বেরিয়ে গেলো।
আমি ফিস ফিস করে বললাম, কি রে আমায় স্নান করিয়ে দিতে হবে নাকি।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকালো। নাও বলছে না হ্যাঁও বলছে না।
বুঝলাম আমায় যেতে হবে।
ওকে টেবিলটা ধরে দাঁড়াতে বললাম, আমি বাইরের দরজাটা বন্ধ করলাম। ফিরে এসে, ওকে আবার ধরলাম। বাথরুম করবি।
হ্যাঁ, আমার তলপেটটা ভীষন টন টন করছে সোজা হতে পারছি না।
আমি ওকে ধরে বাথরুমের ভেতর নিয়ে গেলাম, বললাম কমডে বোস। আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি।
ও বললো আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পর ও ডাকলো, ভেতরে আয়।
কেনো।
আমার ভীষণ শীত করছে।
গিজারটা চালিয়ে নে।
না, আমি স্নান করবো না, তুই গাটা মুছিয়ে দিবি আয়।
দাঁড়া যাচ্ছি।
টাওয়েলটা জড়িয়ে নিয়ে বাথরুমের ভেতরে গেলাম।
মিত্রা শায়া পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
শায়া পরে দাঁড়িয়ে কি করছিস।
পটি করলাম।
ধুয়েছিস ভালো করে।
হ্যাঁ। তোর মতোন নাকি।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি।
গা মুছবো টাওয়েল কোথায়। তুই তো পরে আছিস।
তাহলে খুলে দাঁড়াই।
দাঁড়া। আমার পেন্টি কোথায়।
জিভ বার করে ফেললাম।
কিরে কোথায়।
আমার আলনায়।
তুই কি সবার সামনে আমার পেন্টিটাও খুলেছিলি।
না ওদের ঘর থেকে বার করে দিয়েছিলাম।
তুই সত্যি আমার আর কিছু বাকি রাখলি না।
তুইই বা বাকি কি রাখলি। ছোটোমা সব জেনে ফেলেছে।
জানুক। আজ না হয় কাল জানতো।
দাদাকে কি জবাব দিহি করবো।
সে বড়মাকে দিয়ে ম্যানেজ করবো।
তুই করবি, আমি পারবো না, এটা মনে রাখিস।
দাঁড়া আর একটা টাওয়েল নিয়ে আসি।
না এটা খোল।
পাগলামো করিস না।
খোল না।
ঠিক আছে দাঁড়া টানা টানি করিস না। শায়া খোল, আমি গিজার অন করলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই জল গরম হয়ে গেলো। আমি টাওয়েল খুলে, ভালো করে ওর গা মোছাতে লাগলাম।
উঃ কি গরম রে বাবা, গা পুরে যাবে একটু ঠান্ডা জল দে না।
বক বক করিস না। অনেক সুখ উপভোগ করছিস, কাল থেকে আমাকে খাটিয়ে মারছিস এর শোধ আমি তুলবো। মনে রাখিস।
যখন সময় আসবে তুলিস।
বগল তোল।
মিত্রা বাধ্য মেয়ের মতো বগল তুললো। দু একবার আমার নুনুতেও হাত দিলো, আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম, আচ্ছা আচ্ছা হাত দেবো না। তুই এখন নার্স আমি এখন পেসেন্ট।
গা মুছিয়ে টাওয়েলটা জড়িয়ে বললাম, বেরিয়ে আয় এসে কাপর পর। ছোটোমা এরি মধ্যে বার তিনেক রাউন্ড দিয়ে গেছে।
তুই কি করে জানলি।
ও যে কি সাংঘাতিক জানিস না।
তুই টাওয়েল পরলি আমি লেংটো হয়ে বেরোবো।
বেরো না কে দেখবে। বাইরের দরজা বন্ধ আছে।
তোরটা খুলে দে।
নে, ওকে টাওয়েলটা খুলে দিয়ে বাইরে এসে পাজামা পরলাম।
ও টাওয়েলটা জড়িয়ে বাইরে বেরোলো।
আমার পেন্টিটা দে।
দাঁড়া বলে পাজামার গিঁটটা বেঁধে, আমার আলনার তলা থেকে পেন্টিটা বার করে দিলাম।
ও দিকে ফিরে তাকা।
উঃ লজ্জাবতী লতা।
আমি ফিরে দাঁড়ালাম।
কিরে আমার ব্রেসিয়ার।
পরতে হবে না। খালি গায় ছোটমার ব্লাউজ পর।
যাঃ।
আর জালাস না। তোকে কেউ এসময় দেখতে আসবে না। সাতদিন তুই এখানে গ্যারেজ।

 
কি আনন্দ।
ওর দিকে কট কট করে তাকালাম।
আচ্ছা বাবা পরে নিচ্ছি।
ও কাপর পরে নিলো, দরজা ঘট ঘট করে উঠলো।
আমি গিয়ে দরজা খুললাম।
কি রে, তুই কি ওর কাপরও পরিয়ে দিলি। ছোটমা চোখ বড় বড় করে বললেন।
দুজনেই মাথা নীচু করে দাঁরিয়ে আছি।
খিদেয় পেট জ্বালা করছে। তাড়াতাড়ি আয়।
ছোটমা চলে গেলো।
তোর জন্য আজ কেসের পর কেস খাচ্ছি।
হ্যাঁরে পাউডার নেই।
আমার কি বউ আছে। না আমি মাখি। দাঁড়া।
আমি আমার দেওয়াল আলমারি থেকে একটা পাউডার কৌটো বার করে দিয়ে বললাম এই নে।
ও কৌটটা খুলে দুবার ঝাঁকালো, পরলো না। তারপর মুখটায় হাত দিয়ে আমার দিকে ঘুরে বললো। এটা কোনো দিন ব্যাবহার করেছিস।
কি জানি মনে পরে না।
কবে কিনেছিস।
তা মনে করতে পারি না।
এটা এখনো খোলা হয় নি।
দে ফুটো করে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি কর।
তুই ফুটো করে দে।
আমি টেবিলের ওপর থেকে একটা আল পিন দিয়ে ফুটো করার চেষ্টা করলাম, ফুটো হলো বটে, কিন্তু পিনটা হাতে ফুটে রক্ত পাত ঘটলো। মিত্রা ছুটে এসে, আমার আঙুলটা মুখে দিয়ে চুষতে শুরু করলো।
এটা কি করছিস।
ও আঙুলটা মুখে নিয়ে গঁ গঁ করে কিছু বললো।
ওঃ ছার না। এটুকুতে আমার কিছু হয় না।
ও আঙুলটা ভাল করে দেখে, ছেরে দিয়ে গায়ে পাউডার দিলো।
যেতে পারবি, না কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
যেতে পরবো।
চল।
নিচে এলাম, বড়মার মুখটা গম্ভীর, বুঝলাম ভীষণ অভিমান বুকে পোষণ করে রেখেছে। মনে মনে চিন্তা করলাম, আজ আমাকে নিজেকে কনফেস করতে হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি বড়মার পাশে বসলাম, ছোটমার পাশে মিত্রা। খাওয়া শুরু করলাম, খেতে খেতেই বললাম সেদিন তুমি পীর সাহেবের গল্পটা শুনতে চেয়েছিলে না।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন, হ্যাঁ। তোর মনে আছে এখনো।
নিশ্চই।
মিত্রা সেদিন বলতে পারলো না।
আমি বলতে শুরু করলাম, সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো, হাত গুটিয়ে বসে থাকলো, শেষে বললাম, এর একবছরের মাথায় আমার জন্ম, বার্থডেটটা বললাম।
মানে সেই ফিস্টের দিন তোর জন্মদিন ছিলো। তার মানে তুই আমার থেকে ছমাসের বড়। মিত্রা বললো।
আজ থেকে দাদাবলে ডাকবি। নাম ধরে ডাকবি না।
হুঁ বয়েই গেছে।
ছোটমা মুচকি হাসলো।
না না থাক ওর মুখে তোর নামটা শুনতে ভালো লাগে। বড়মা বললেন।
কি এবার বল।
আমি চুপচাপ।
তার ঠিক চারবছরের মাথায় মা-বাবা দুজনেই কলেরায় মারা যায়, দুজনকে গ্রামের লোকেরা পাশাপাশি চিতায় পুরিয়েছিল। তারপর থেক মনাকাকার আশ্রয়ে। টিল টু ডে।
বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
তাকিয়ে আছো কেনো।
তুই এই সময় বললি।
কেনো।
একটু প্রণাম করতাম।
কোথায়।
বাগানে গিয়ে ওই অশ্বথগাছটাকে মনে করে।
ঠিক আছে তোমায় নিয়ে যাব। অশ্বত্থগাছটা এখনো আছে।
আমরা যাব না।
আমাদের দুজনের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তোমরা ইন্টারফেয়ার করবে না।
হুঁ।
গত সাত দিনের ঘটনা তুমি জানতে চেয়েছিলে।
সে বললি কোথায়। বড়মা অভিমান ভরা শুরে আমায় বললেন।
খাওয়া শুরু করো। থামলে চলেবে না। আমায় একটু ভাত দাও। গত সাতদিনে ভাত জোটে নি।
ও ছোটো দে দে। দেখ ছেলের কান্ড। আমায় ফোন করে বললে কিনা এই বিরিয়ানি খেয়েছি, এই পোলাও খেয়েছি।
তোমায় তো তবু বলেছে। আমার সাথে কথা বলেছে কিনা জিজ্ঞাসা করতো। আমায় মানুষ বলেই মনে করে না। মিত্রা বললো।
একবারে চুপ থাকবি।
সে কি রে। তোর মালকিন বলে কথা। ছোটোমা বললেন।
থামো তুমি।
ছোটমা আমার পাতে ভাত দিলো। তোর মল্লিকদা পাবদা মাছ এনেছে খাবি।
দাও। একটা নয় দুটো।
বাবাঃ সাতদিনের খাওয়া তুই একবারে খাবি নাকি।
গ্রামের ছেলে, আমাদের পাতে বিড়াল ডিঙোতে পারে না।
মিত্রা মুচকি হাসলো, বড়মা বলে উঠলো থাম।
আমি খেতে খেত আবার শুরু করলাম।
সমস্ত ঘটনা একে একে খুলে বললাম, এমনকি কাল রাতে কোথায় ছিলাম কি করেছি সব, কোনো কথা গোপন করলাম না। বড়মা, ছোটমা, মিত্রার চোখ কপালে উঠে গেছে। ওদের চোখে সব যেনো হাজার পাওয়ারের সব বাল্ব জ্বলছে। বড়মা আমার মাথায় হাত রাখলেন। এঁটো হাতে আমায় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। অনি আমি বলছি তোকে কেউ কোনো দিন হারাতে পারবে না। মিত্রার মুখ থালার সঙ্গে মিশে গেছে। ছোটমা মুখ নীচু করে আছে।
বাকিটা মিত্রার কাছ থেকে তোমরা জানো, আমার আর কিছু বলার নেই। এরপর তোমরা যদি বলো আমি অন্যায় করেছি, তাহলে আমাকে শাস্তি দাও, আমি মাথা পেতে নেবো।
মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, দাদার ফোন।
ধর।
মিত্রা ফোনটা ধরলো।
বুঝলাম দাদা ওর শরীরের খোঁজ খবর নিলো। ও হাঁ হুঁ করে ফোনটা বড়মার দিকে এগিয়ে দিলো। বড়মা ফোন ধরেই বললো, এই সময় ফোন না করলে হোতো না।
কেনো।
আমরা এখন অনির গল্প শুনছি।
ও কি করে গেছে জানো।
কেনো তোমায় বাঁশ দিয়েছে।
না। কাল আর্টিকেলটা বেরোলে, সরকারে একটা হৈ হৈ পরে যাবে।
জানি।
তুমি জানো।
ও আমার ছেলে আমাকে সব বলেছে, কোনো কথা গোপন করে নি।
বুঝলাম অমিতাভদা হতাশ হলেন।
নে ধর। মরন, ফোনের আর সময় পেল না।
আমার দিকে ঘুরে বললো, হ্যাঁরে ওই তিনটেকে শাস্তি দিবি না।
না। অমিতাভদা, মিত্রা, মল্লিকদার কথায় ওদের রেখেছি। পরে দেখা যাবে। তোমাদের সেদিন বলেছিলাম, পাওয়ার গেম খেলবো, খেলেছি।
ওগুলোকে তাড়া।
ওটা মিত্রার ডিসিসান।
ও কি বলবে। মেয়ে মানুষ। তোর মতো কি ও চালাতে পারবে।
চালাতে হবে। মালিক হবে, লোকের ওপর বিশ্বাস করলে, কটি কটি টাকার লোন হবে। যা হয়ে আছে।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাকাশে দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।
তোর ইসলামভাইকে একটু দেখাবি।
ওরা লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকে। সামনে আসে না।
তাহলে তোর সঙ্গে ওর দেখা হয় কি করে।
ফোন আছে ফোন করি, সময় এবং জায়গা বলে দেয় চলে যাই। তাছাড়া ওর সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয়, এখন আমি জানি, ও কখন কোথায় থাকে। ওর সার্কিটের অনেকেই আমাকে নামে চেনে।
তুই এ সব করছিস তোর যদি কোনো বিপদ হয়।
হলে হবে, তার মোকাবেলা করতে হবে। তবে কি জানো এদের সঙ্গ ছাড়া জগত সংসার চলবে না।
যাঃ যতসব মনগড়া কথা।
তুমি যতোসব মন্ত্রী আমলা দেখছো, ম্যায় পুলিস পযর্ন্ত এদের তেল দেয়। ইসলামভাই আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে।

 
কিছুক্ষণ চুপচাপ। চারিদিক নিস্তব্ধ। যে যার মতো খেয়ে চলেছে।
মিত্রা।
উঁ।
তুই তোর জায়গাটা কাকে রেজিস্ট্রি করেছিলি জানিস।
না।
তোর জমি কাকে দিচ্ছিস তা জানবি না।
ও তো বললো সই করে দাও, তাহলে শেয়ারটা অনির নামে ট্রান্সফার হয়ে যাবে, সই করে দিলাম।
বেশ গদ গদ হয়ে সই করে দিলি।
থাম তুই, বক বক করিস না, মেয়ারা একা চলতে পারে কখনো। বড়মা বলে উঠলেন।
তোমাকে বোঝা মুস্কিল তুমি একবার এদিকে ঝোল টানছো, আর একবার ওদিকে ঝোল টানছো।
দেবো কান মুলে, আবার কথা।
বড়মা বাঁহাত তুললো। মিত্রা মুচকি হেসে কিল তুলে বলছে দাও না দাও, মুখে বোলো না।
ছোট তুমি কি বলো।
সত্যি তো তুই এই কদিন হলো ওর কাছে এসেছিস, ওর বুদ্ধিতে যতটুকু কুলিয়েছে, ততটুকু করেছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ।
ওর কোনো দোষ নেই। মিত্রার ওই দোষটা দোষ না, তোর মতো ওরও কোনো আশ্রয় নেই। আমরা সবাই এই পৃথিবীতে আশ্রয় খুঁজি জানিস, কেউ পাই কেউ পাই না। তখনই হতাশা আমাদের গ্রাস করে, আমরা দিশেহারা হয়ে দৃষ্টি কটু কাজ করি।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, ছোটর কাছে গিয়ে নীচু হয়ে একটা পেন্নাম ঠুকলাম।
এটা কি করলি।
তোমার কাছ থেকে একটা নতুন জিনিস শিখলাম। তাই।
পাগল।
আজকের খেওয়াটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো, ঘড়ির দিকে তাকালাম, দেখছো, চা খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
সত্যি তো, ও ছোটো দেখেছিস, কথা বলতে বলতে কত বেলা হয়ে গেলো বলতো।
শান্তি।
কথা বলিস না আর, সাতদিনেরটা এক দিনে হজম করা যায়। এবার থেকে প্রত্যেক দিন বলবি। বড়মা বললেন।
আচ্ছা।
উঠে পরে বেসিনের কাছে চলে গেলাম, ছোটমা টেবিল পরিষ্কার করছে, আমি মুখ ধুলাম, মিত্রা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ও আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে আছে, আমি ছোটমার আঁচলে মুখটা মুছে, ওপরের দিকে হাঁটা লাগালাম, ছোটমা রে রে করে উঠলো।
রান্না ঘর থেকে বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো, কি হলো রে ছোটো।
দেখনা অনি আমার কাপরে মুখ মুছে চলে গেলো।
মুখপোড়া।
যেতে যেতে দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম, মিত্রা মুখ ধুতে ধুতে মুচকি মুচকি হাসছে।
নিজের ঘরে গেলাম, সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। বড়মাকে সব কথা বমি করার পর বেশ হাল্কা হাল্কা বোধ হচ্ছে। মিত্রা ঘরে এলো, একটা কাজ করবি।
বল।
বড়মার কাছ থেকে গোটা পাঁচেক লবঙ্গ নিয়ে আয় না।
সিগারেট খা।
ভালো লাগছে না।
দাঁড়া। মিত্রা বেরিয়ে গেলো।
আমি জানলাটার সামনে এসে দাঁড়ালাম, পশ্চিম আকাশ গাড় কমলা রংয়ের, ভদ্রলোককে আর দেখা যাচ্ছে না।
এই নে।
মিত্রা কাছে এগিয়ে এলো। আমি ওর হাত থেকে একটা লবঙ্গ তুলে নিয়ে মুখে দিলাম। ওর মুখেও একটা গুঁজে দিলাম। ও আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
কি দেখছিস।
মিত্রা আমার গালে হাত দিলো।
হেসে ফেললাম।
আমাকে জাপ্টে ধরে আমার বুকে মুখ গুঁজলো। আবার কি হলো।
তুই আমাকে মার।
পাগলামো করিস না। তোকে নিয়ে আমার বড় জ্বালা।
কি করবো বল, তোর কাছে যখন আশ্রয় চাই তুই দিচ্ছিস না কেনো।
আমি তো ভগবান নই যে চাইলেই পাবি।
আমি তোকে আমার ভগবান বলে মানি।
ঠিক আছে চল একটু বাগানে ঘুরে আসি। বাড়িতে একটা ফোন করে বলে দে তুই যাবি না। না হলে ওরা আবার চিন্তা করবে।
বুড়ীমাসির সঙ্গে কালকে ঝগড়া করেছি।
তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে।
কালকে হয়েছিলো।
ঠিক আছে চ নিচে যাই।
দুজনে মিলে নিচে এলাম। দেখলাম, রবীন গাড়ির ভেতর বসে বসে চা খাচ্ছে। আমায় দেখে বললো, দাদা তোমার জন্য আজকে ফুল রেস্ট পেলাম।
ভাল করেছিস। চা খেয়ে নিয়ে একটা কাজ কর।
বলো।
বুড়ামিসাকে গিয়ে বলবি। মিত্রা সাতদিন এখানে থাকবে। ওর শরীরটা খারাপ। সকালে ডাক্তার এসেছিলো।
রবিন আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
আমি সারা দিন এখানে থাকলাম কিছু জানতে পারলাম না।
কেনো তোকে নিয়েই তো সকালে ইঞ্জেকসন কিনতে গেছিলাম।
সেটা ম্যাডামের জন্য।
তাহলে কার জন্য। গাধা।
রবিন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর শোন বুড়ীমাসি যদি আসতে চায়, কাল সকালে নিয়ে আসিস। গাড়ির দরকার হলে আমি ফোন করে দেবো। ঠিক ঠাক ভাবে থাকিস। বেচাল হলে আমি কিন্তু খবর পেয়ে যাবো।
না দাদা আর হবে না।
রবিন চা খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
এসে দেখলাম মিত্রা পেয়ারা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে একটা ভাঙা বেঁকারি দিয়ে পেয়ারা পারার চেষ্টা করছে।
কি করছিস তুই! আবার একটা বিপদ ডাকবি নাকি, এরা তাহলে আমাকে ফাঁসি কাঠে ঝোলাবে।
আমাকে একটা পেয়ারা পেরে দে।
বাধ্য হয়ে গাছে উঠে গোটা সাতেক পেয়ারা পেরে দিলাম।
কয়েকটা কাপরে জড়িয়ে রাখলো, একটা নিজে খেতে শুরু করলো। তুই একটা খা।
ওর হাত থেকে পেয়ারা নিয়ে কামড় দিলাম।
অনেকক্ষণ বাগানের এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরলাম, অনেককথা বললাম, সন্ধ্যে হয়ে এলো। ফোনটা বেজে উঠলো। টিনার ফোন।
বলো টিনা।
তুমি কোথায়।
বাড়িতে।
বাড়িতে এখন।
তোমাদের মিত্রাদির শরীর খারাপ পাহারা দিচ্ছি।
কি হয়েছে।
সংক্ষেপে বললাম। টিনা দাদার বাড়ির এ্যাড্রেস চাইলো। আমি দিলাম। লোকেসন বলতে বললো, বললাম। ও ফোনটা রেখে দিলো।
দুজনে ওপরে চলে এলাম, আসার সময় নিচে আওয়াজ দিয়ে এলাম, ওপরে যাচ্ছি। ছোটমা বড়মা দুজনে বসে গল্প করছিলেন, ঘোরা হলো। মিত্রা মুখটা দেখিয়ে একগাল হাসলো। আয়। মিত্রা ভেতরে গেলো। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি, কোঁচর থেকে পেয়ারা বার করে একটা ছোটমার হাতে দিলো, একটা বড়মার হাতে দিলো, আর দুটো বড়মাকে দিয়ে বললো, একটা দাদার জন্য একটা মল্লিকদার জন্য।
ওই পাগলটা গাছে উঠেছিলো। ছোটমা বললেন।
আমি উঠি নি, উঠতে বাধ্য হয়েছি।
গাল ভরা কথা বলিস না। বড়মা বললেন। এখনো হনুমান হওয়ার সখ জাগে।
মিত্রা হসলো, আমি আর দাঁড়ালাম না, এরপর আরো চোখা চোখা ডায়লগ বেরোতে পারে। আমি ওপরে চলে গালাম, সারাদিন শুই নি, ঘুমও পায় নি। কিন্তু এখন কেমন কেমন যেন লাগছে। শরীরটা ঠিক বইছে না, ইজি চেয়ারে বসে শরীরটা ছেড়ে দিলাম, একথা ওকথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, জানি না।
হঠাত হৈ হৈ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। কইরে মর্কটটা। বললো তোকে পাহারা দিচ্ছে। ঘরের মধ্যে হুড়মুড় করে ওরা ঢুকে পরলো। দেবাশীষ, টিনা, অদিতি, মিলি, নির্মাল্য।

 

Users who are viewing this thread

Back
Top