What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (1 Viewer)

তুমি হেসো না। এরা এই রকম, কলকাতায় আমার বস একজন ছেলে। আমি তোমার ফাইলটা আজই পাঠিয়েছি, ২৪ কোটির বাজেট দিয়ে, কামিং তিন মাসে। তোমার খরচ পরবে, লাখ তিরিশেক।
এটা আমাকে ফেস করতে হবে না তোমাকে।
তোমাকে ফেস করতে হবে। সেই জন্যই তোমায় বোম্বে যেতে বলছিলাম।
বিপদে ফেললে, এ কাজ কোনো দিন করিনি।
ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
না তোমায় টেনসন নিতে হবে না, আমার একটা নতুন জগত দেখা হবে।
না না আমি ব্যবস্থা করবো।
তুমি আমার জন্য আর কতো করবে।
আমার বসকে বোলবো। দেখি না কি করে।
তোমার বন্ধুরা জানে।
না জানার কি আছে। দেবাশীষ ধোয়া তুলসী পাতা নাকি।
অদিতি, মিলি, নির্মাল্য।
সব এক গোয়ালের গরু, আপার লেবেলে শরীরটা কিছু নয়, সেখানে টাকাটাই সব।
তার মানে আমাকেও সেই হতে হবে নাকি।
তোমার মধ্যে সেই প্রটেনসিয়ালিটি আছে, কিন্তু তুমি তা নও।
কি করে জানলে।
তোমার মুখের মধ্যে তার একটা ছাপ থাকতো।
তুমি এতো বোঝো।
বুঝতে হয়েছে।
তুমি এগিয়ে যাও, আমি ঠিক সামলে দেবো।
পারবে।
দেখি না সামলাতে পারি কিনা। তুমি কবে খবর দেবে।
কামিং উইকে।
আমার নেট শেখার ব্যাপারটা।
তুমি এলেই হয়ে যাবে।
তোমায় ফোন করবো। রবিবার ফাঁকা আছো।
আছি।
দেখি বিকেলের পর আসবো। অসুবিধে নেই।
না। একটা ফোন করে নিও।
ঠিক আছে।
টিনার কাছ থেকে উঠে চলে এলাম, টিনা নীচ পযর্ন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো। লাকিলি নিচে একটা ট্যাক্সি পেয়েগেলাম, উঠে পরলাম। অমিতাভদার বাড়িতে যখন এলাম রাত দশটা বেজে গেছে। পা দিতেই দেখলাম, তিনজনে বসে গল্প করছে, আর হাসাহাসি করছে। আমি ঢুকতেই ছোটমা বললেন, আসুন স্যার, আপনার কথাই হচ্ছে।

আমি বড়মাকে, ছোটমাকে প্রণাম করে বড়মার পাশে বসলাম। মিত্রা একটা সোফা দখল করে আছে, ছোটমাও একটা সোফা দখল করে আছে।
দাদারা আসে নি।
বললোতো অফিস থেকে বেরিয়েছে। বড়মা বললেন।
হ্যাঁরে তুই কি রে।
আমি মানুষ। খুব সাধারন মানুষ।
দাওনা দাও ওর কানটি মূলে। ছোটমা বললেন।
মিত্রা চোখবন্ধ করে হাসছে।
তোর কীর্তি কলাপ শুনছিলাম মিত্রার মুখ থেকে।
মিত্রার দিকে তাকালাম, আমার! সে আর নতুন কি আছে।
একাট মেয়েকে নিয়ে গেছিস, থাকার জায়গা পযর্ন্ত ঠিক করিস নি।
আমি নিয়ে যাবার আগে কন্ডিশন করে নিয়েছিলাম, জিজ্ঞেস করো।
মিথ্যুক একেবারে বাজে কথা বলবি না। তুই আমায় বলেছিলি, ওখানে বাথরুম নেই।
সেটা আবার বলতে হয় নাকি, গ্রামে আলাদা বাথরুম থাকে নাকি, পুরো গ্রামটাই বাথরুম।
সবাই হো হো করে হেসে ফললো।
বাঁচা গেলো, তোমরা আর বিরক্ত করবে না। যাবার জন্য।
বিরক্ত করবো না মানে, এক মাসের মধ্যে বাথরুম ঠিক করবি অতো সুন্দর জায়গা খালি একটা বাথরুমের জন্য যেতে পারবো না। ছোটোমা বললেন।
একটু চা খাওয়াবে।
মিত্রা ফ্লাক্সটা নিয়ে আয়তো।
মিত্রা উঠে চলে গেলো। রান্নাঘরের দিকে। বুঝলাম, মেয়ে করিতকর্মা হয়ে উঠেছে এই কদিনে।
অনি পীর সাহেবের গল্পটা একবার বোলবি। বড়মা বললেন।
কেনো শোনো নি।
মিত্রা ঠিক মতো বলতে পারে নি।
যখন যাবে তখন দেখিয়ে দেবো।
মিত্রা ফ্ল্যাক্স আর কাপ নিয়ে এলো।
টেবিলের ওপর তিনটে কাপ রেখে চা ঢাললো। বাইরে গাড়ির হর্ন বাজলো।
এই রে এলেন সব। ছোটমা বললেন।
মিত্রা আরো দুটো কাপ নিয়ে এলো। আমি উঠে খাওয়ার টেবিলের ওখান থেকে দুটো চেয়ার নিয়ে এলাম।
মল্লিকদা ঢুকলেন।
আসুন আপনার জন্য জায়গা খালি আছে এবং কাপে চাও রেডি। ছোটমা বললেন।
মল্লিকদার সে কি হাসি, এতো সৌভাগ্য আমার।
বলতে বলতেই অমিতাভদা ঢুকলেন, সুপার্ব নিউজ, তুই কোথা থেকে খবর পাস বলতো।
সবাই আমার দিকে চাইলো। এমনকি মল্লিকদা পযর্ন্ত।
তোর নিউজটা ফলো আপ কোরলো সন্দীপ, তারপর ওরা সত্যি সত্যি প্রেস রিলিজ করলো।
তুমি ওটা ছেপেছো!
কেনো।
ওটা উইথড্র করো। ওই নিউজ কেউ ছাপে নাকি।
তুই কি করে বুঝলি।
আমি বলছি, পরে সব কথা বোলবো, তুমি আগে তোলো ওই নিউজটা।
কাগজ ছেপে বেরিয়ে গেলো।
দাঁড়াও আসছি, বলে বাইরে এলাম।

ওরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওই করছে । ইসলামভাইকে ফোন করলাম, সব কথা বললাম, ও বললো ঠিক আছে, তুই বেটা সবেতেই ঘাবরে যাস, আমি নিজের ঘারে দোষ না নিয়ে অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিয়েছি। বেশ করেছে ছাপুক। আমার বরং ভালো হবে।
 
আবার নিজের জায়গায় এলাম।
কি হয়েছিলো।
কিছু না।
কিছু না বললে হবে, তুই উঠে চলে গেলি, কার সঙ্গে ফুসুর ফুসুর গল্প করলি। মল্লিকদা বললো।
আর একটা নিউজ আসার কথা ছিলো তাই জানলাম এসেছে কিনা।
কি নিউজ।
এখানে বলতে হবে।
বল না।
বললে আপত্তি কোথায় আমরা কি নিউজের বাইরের লোক। অমিতাভদা বললেন।
মধুচক্রে মন্ত্রীপুত্র।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন। কোন মন্ত্রী রে।
তোমায় জানতে হবে না।
তুই নিউজ দিলেই আমি ছেপে দেবো নাকি।
আজকেরটা ছেপেছো কেন। নাও চা খাও।
দেখেছিস মল্লিক কেমন সাসপেন্স।
বড়মা মুচকি হেসে মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল।
সবাই মুখ নিচু করে হাসছে। আমি গম্ভীর।
তুমি চেয়ারে গিয়ে বোসো। অনি এখানে বসুক। বড়মা ঠেলে অমিতাভদাকে উঠিয়ে দিলেন। আমি বড়মার পাসে গিয়ে বসলাম।
কি ঠিক বলিনি বলো, সব একদিনে হয়ে গেলে চলবে কি করে। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
একেবারে দিবি না। তুই আসার পর থেকেই তোকে অফিস থেকে ঠেলে বার করে দিয়েছে, না।
না। আমি বললাম।
না! বড়মা বললেন।
হ্যাঁ আজ আমি স্বইচ্ছায় বেরিয়েছি, কিছু কাজ ছিলো।
অমিতাভদা কাপটা রেখে হাততালি দিয়ে উঠলো। কি এবার বলো। খালি আমি না।
এই দেখে মিত্রার কি হাসি ফুলে ফুলে উঠছে।
ওরে থাম থাম, বিষম লেগে যাবে। ছোটমা বলে উঠলেন।
নাও রেডি হয়ে নাও খেতে বসে আবার সেকেন্ড ইনিংস শুরু করবো।
তার মানে।
আরে বাবা সবে টস করে ফার্স্ট ইনিংস খেললাম, এবার সেকেন্ড ইনিংসটা খেলতে হবে না।
আমি নিজের ঘরে চলে এলাম। জামাকাপড় ছেড়ে, বাথরুমে গেলাম, দেখলাম ঘরটা আজ বেশ পরিষ্কার। মনে হচ্ছে কোনো মহিলার হাত পরেছে।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে এলাম।
দেখলাম সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
তুই মেয়েদেরও বেহদ্দ। ছোটমা বললেন।
মিত্রা মুচকি হাসলো।
আমি কথাটা গায়েই মাখলাম না, এমন ভাব করে বড়মার পাশে এসে বসলাম।
ছোটমা খাবার পরিবেশন করছেন।
আমি বললাম, একসঙ্গে নিয়ে চলে এসো।
তারপর বলবি আজকের খাওয়াটা ঠিক জোমলো না।
মল্লিকদা শুরু করে দিয়েছেন।
আমিও হাত লাগালাম।

তুই তাহলে নিউজটা দিবি না।
সন্দীপকে ফলোআপ করতে বলো।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে উঠলো।
কি তেঁয়েটে দেখেছিস। নিউজটা ভালো নিউজ। যদি কেউ তোর আগে করে দেয়।
দেবে।
তাহলে আমাদের কাগজের ক্রেডেনসিয়াল কমে যাবে।
অনি দিয়ে দে অতবার করে বলছে। বড়মা বললেন।
হাসলাম।
সাতদিন পরে পাবে। ছবি হোক।
কাকে পাঠাবি।
কি।
ফটোগ্রাফিতে।
আমাদের হাউসের।
হ্যাঁ।
তুমি সত্যি। আমাকে জেলে পুরবে নাকি।
তুই সঠিক নিউজ করলে জেলে পুরবে কেনো।
ঠিক আছে তোমায় ভাবতে হবে না। বড়মা যখন বলেছে, ঠিক সময়ে পেয়ে যাবে।
বড়মা একটা চিংড়িমাছ নিজের পাত থেকে আমার পাতে তুলে দিলেন।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।
তোকেও দিচ্ছি দাঁড়া।
দিও না পেট খারাপ করবে। অভ্যেস নেই।
বলেছে, তোর যেন কতো অভ্যেস আছে, খাস তো ওই চুনো মাছের টক আর পান্তা।
ওই খেয়ে কি বলেছিলি বোলবো সবার সামনে।
মিত্রা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
বোস বোস আমি তোর মোতো অকৃতজ্ঞ নই।
ছোটমা মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে কি বোললো মিত্রাও ফিস ফিস কের বোললো, তারপর ছোটোমার ফুলে ফুলে সে কি হাসি।
কেউ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না, আমি বুঝেছি।
তুই কি বলবি বলেছিলি।
মিত্রার দিকে তাকালাম, অফিস সম্বন্ধে তুই কতটুকু জানিস।
এতোদিন আমি দেখি নি, বকলমে সুনীতদা দেখতো। যেহেতু ও সম্পর্কে ওর ভাগ্নে হয়।
এখন যদি কাগজের স্বার্থে ওই লোকটাকে তাড়াই তোর কোনো আপত্তি আছে।
কেনো তাড়াবি। সুনীত কাজ জানে। অমিতাভদা বললেন।
তোমার কাছে পরে আসছি, তবে এই উত্তরটা তোমায় দিচ্ছি।
বল।
তোমার পেটে যদি ৫০০গ্রাম সাইজের একটা টিউমার হয়, তুমি হোমিও প্যাথিক ট্রিটমেন্ট করবে না, অপারেশন করে কেটে বাদ দেবে।
অপারেশন করবো।
আমিও তাই চাইছি।

সবাই চুপ। মল্লিকদার হাত থেমে গেছে।
 
তুই কি করে বুঝলি।
আমি যদি প্রমাণ করে দিই। আর চম্পকবাবু।
তুইতো ওদের একমাস সময় দিয়েছিস।
না জেনে অনেক বেশি সময় দিয়ে দিয়েছি।
তুই সনাতন বাবুকে ফোন করেছিলি। মিত্রা বোললো।
হ্যাঁ।
ওই ডকুমেন্টস গুলো কালকের মধ্যে দিতে পারবে ন।
তোকে ফোন করেছে কেনো। আমাকে বলতে পারতো।
তোকে বলতে পারছে না।
কেনো। আমি বাঘ না ভাল্লুক।
তা জানি না।
জানবি না মানে তুই মালিক। তোর জানা উচিত। তুইতো এর জন্য পয়সা দিচ্ছিস মাসে মাসে।
এ ভাবে ভাবি নি।
তুই কি বলেছিস।
বলেছি ঠিক আচে আমি বলে দেবো।
বেশ সাতখুন মাপ।
ওকে কাল সকালে ফোন করে বলেদিবি, আমি যা চেয়েছি সেটা কালকেই ওকে দিতে হবে। সব ঘুঘুর বাসা।
ওঃ। তুই ওকে বলছিস কেনো তুই নিজে বোলবি। অমিতাভদা বললেন।
ও নিজে দায়িত্ব নিয়েছে তাই ওকে বলতে বলছি। ঠিক আছে এরপর থেকে আমার কোন ব্যাপারে তুই ফোন রিসিভ করবি না। তুই হচ্ছিস ওদের সেল্টার। ওরা সব পেয়ে বসেছে।
অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি তো মিত্রার বাবার আমল থেকে আছো। তুমি কতটুকু জানো হাউস সম্বন্ধে।
কিছু জানি না।
তার মানে। অফিসে গেছো, নিজের চেয়ারে বসেছো, কাজ করেছো, চলে এসেছো।
তা বলতে পারিস।
মরন। বড়মা বললেন। আমাকে যে রাতে শুয়ে শুয়ে গল্প বলতে এটা করেছি সেটা করেছি।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
এখন ও যখন জিজ্ঞেস করছে বলতে পারছো না। ও নিশ্চই কোনো কিছু বুঝতে পেরেছে।
তুমি ঠিক বোলেছো। এটাতো মাথায় আসে নি।
এ ঘটনা গুলো তোমার কাছ থেকে পরে নেবো। এখন বলো চম্পকবাবুর সম্বন্ধে কি ডিসিসিন নিয়েছো।
আমরা চাইছি ওরা একটা মাস থাকুক। কি মা তুমি কি বলো।
মিত্রা মাথা দোলালো।
মল্লিক তুই বল না।
মল্লিকদা মাথাও দোলায় না মুখও তোলে না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।
একচুয়েলি তোমরা চাইছো ওদের রাখার জন্য, আর আমি দাবি করছি না রাখার জন্য। চাওয়া আর দাবি করার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
আমার কথা বলার মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার ছিলো, সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো।
আমি আর বসলাম না। মুখ ধুয়ে ওপরে চলে এলাম।
নিজের ঘরে ঢুকে আলোটা জালতে ভালো লাগলো না। রাস্তার নিওন আলোর মিহি আলো বাগানের আম গাছটার ফাঁক দিয়ে আমার ঘরে এসে পড়েছে, সেই মিহি আলোয় ঘরের অনেকটা অংশ আলোকিত। জানলার সামনে দাঁড়ালাম, হাজারো চিন্তা মাথার মধ্যে কিল বিল করছে, বিশেষ করে চম্পক, সুনীত এই দুটোকে যে করেই হোক ছেঁটে ফেলতে হবে, চম্পক এতদূর এগিয়েছে সুনীতের সাহায্য ছাড়া নয়। এতদিন অনেক কিছু ভোগদখল করেছে, কিছুতেই ও সহজে ছেড়ে দেবে না, বিষধর সাপকে একটা আঘাতেই আধমরা করে দিতে হবে, তারপর মেরে পুরিয়ে দিতে হবে। এই দুটোকে বেশিদিন রাখলে, আরো কয়েকটা জন্মে যেতে পারে আবার তাদের পেছনে সময় ব্যায় করতে হবে। না কোনো বাধা আমি মানবো না। আগামী শুক্রবার মিটিং কল করতে হবে, তার আগে ইসলামভাই-এর কাছ থেকে লাস্ট আপডেট নিতে হবে। ও বলেছে ও সব জানে। মিত্রার কি সুনীতের ওপর কোনো দুর্বলতা আছে, থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, যতই হোক ওর হাজবেন্ডের ভাগ্না বলে কথা।

পিঠে নরম হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালাম, মিত্রা আমার পেছনে, তুই বৃথা রাগ করছিস আমার ওপর। আমি জানি তুই সারাদিন অনেক খবর জোগাড় করেছিস, তাই তুই এই কথা বলতে পারছিস। কিন্তু তোকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। তুই ভাবিস না আমরা তোর কাজে বাধা দিচ্ছি।
 
যা শুয়ে পর, আমাকে একটু একা থাকতে দে।
আমি এখানে থাকবো। বড়মা বলেছেন।
বড়মা বললেই সব হয় না, এটা আমার বাড়ি নয়। তাছাড়া অমিতাভদা, মল্লিকদা আছেন।
ওরা সবাই নিচে বসে আছেন।
কেনো।
তুইতো কথা শেষ করিস নি।
আজ আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। যা বলার আগামী শুক্রবার বোলবো।
আজ কেনো নয়।
যা বলছি শুনে যা, শুক্রবার মিটিং কল করবি। জানাবি সোমবার। আমি তোকে কিছু হোম টাস্ক দেবো, ভালো করে কাজ গুলো বোঝার চেষ্টা করবি। মাথায় রাখবি, তোর অফিস একটা ঘুঘুর বাসা। দাদা সহজ সরল, দাদার দ্বারা এ্যাডমিনিস্ট্রেসন চলবে না। তোকে তৈরি হতে হবে। যদি কাগজ বাঁচাতে চাস।
মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এই অনির সঙ্গে ওর পরিচয় নেই।
ব্যাঙ্কের সিগনেচার অথরিটি কে।
আগে ও ছিলো মাস কয়েক আমাকে দিয়েছে।
তোর কিংশুক, অরিন্দম ভালো ছেলে বলে মনে হয়।
এটাও তো ওর রিক্রুটমেন্ট।
সবই ও ও ও, তুই কি শিখন্ডি। শেয়ারটা কার তোর না ওর।
তুই বৃথা রাগ করছিস।
আমি কি কোরবো বল সব বুজে শুনে চুপ থাকতাম, তুই আসার পর একটু বল পেয়েছি।
আমাকে কেন জড়ালি এর মধ্যে মনে হয় তোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাবে।
কি বলছিস বুবুন।
আমি ঠিক বলছি। কাল থেকে টের পাবি।
সব শেষ হয়ে যাক, তুই আমাকে ছারিস না।
আমার টাকাটা কে দিয়েছে।
আমার একটা প্রপার্টি ছিলো সেইটা ওদের দিয়ে দিয়েছি, তার বিনিময়ে ওরা ট্রান্সফার করেছে।
আমাকে জানিয়েছিলি।
সে সময় তুই দিস নি।
ঠিক আছে।
ঘরের লাইটটা জলে উঠলো, পেছন ফিরে তাকালাম, সবাই ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে বাকি রইল না, ওরা সব শুনেছে।
দাদা কাছে এগিয়ে এলেন। আমার কাঁধে হাত দিয়ে মুখটা তুলে বললেন, আমাকে বল আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।
তুমি পারবে না।
আচ্ছা তুই বলেই দেখ না।
আগামী শুক্রবারের পর সব দেখতে পাবে নিজের চোখে।
তোকে বলে রাখলাম আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো চেকে সই করবি না।
আচ্ছা।
বড়মা বললেন বলনা তুই । কিছু একটা হয়েছে, যা তুই জানিস এরা কেউ জানে না।
তুমি ঠিক ধরেছো। আমি এখন কিছু বোলবো না, এরা মাইন্ড গেম খেলবে, আমি খেলবো পাওয়ার গেম। তোমরা যাও আমাকে একটু ভাবতে দাও।
তোমরা তিনজনেই এই কয়টা দিন দশটার মধ্যে অফিসে যেও, আর চোখ কান খাঁড়া রেখো। প্রয়োজনে আমি তোমাদের ফোন কোরবো। তোমরা কেউ ফোন করবে না।
আচ্ছা। কাল আমি খুব ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো।
আমি উঠে পোরবো বল তুই কখন যাবি। বড়মা বললেন।
আমার জন্য ব্যস্ত হবে না।
বড়মার মুখটা শুকিয়ে গেলো। ওরা সবাই চলে গেলো।

আমি অনেকক্ষণ জানলার ধারে দাঁড়িয়েছিলাম, ঘুম এলো না। সকাল হতে বেরিয়ে এলাম, আমাকে একমাত্র দোতলার বারান্দা থেকে মিত্রা দেখল, বুঝতে পারছি মিত্রা খুব কষ্ট পাচ্ছে, তবু আমি পেছন ফিরে তাকালাম না, সোজা গেট পেরিয়ে চলে এলাম। বড়মাকে দেখতে পেলাম না।
এই কদিন অফিসের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযগ রইলো না। সাতদিনে সাতঘন্টা গিয়েছি কিনা সন্দেহ। রবিবার অনাদিরা এসেছিলো, ওদের সঙ্গে বসতে পারি নি, মিত্রার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি, মিত্রা ওদের সঙ্গ দিয়েছে। আমার সঙ্গে ফোনে একবার কথা হয়েছে। সনাতনবাবু খেপে খেপে সমস্ত কাগজপত্র দিয়েছেন, একবারে দিতে পারেন নি। হিমাংশুকে কাগজদিয়ে বলেছি এই বছরের পরিস্থিতি জানা, ও কাগজপত্র দেখে অবাক হয়ে গেছে, বলেচে অনি আমার পক্ষে একে রিকভার করা সম্ভব নয়, তবে চেষ্টা কোরবো, অমিতাভদার বাড়িতে যাই নি বললেই চলে, আমি এ কদিন ইসলামভাই-এর সঙ্গে থেকে সমস্ত ডকুমেন্টস জোগাড় করলাম, রাতে আমার ফ্ল্যাটে থেকেছি। ইসলামভাইকে একদিন অভিমান করে বলেছিলাম, তুমি সব জানা সত্বেও এই কাজ করলে কেনো, ইসলামভাই হাসতে হাসতে বলেছিলো, তোর মালিক হওয়ার আগেই কাজ গুলো সাল্টেছি। তুই মালিক হওয়ার পর একটাও অন্যায় কাজ করিনি। জানি তুই আমার কাছ, আসবি জিজ্ঞাসা করবি। আমি তোর চরিত্রটা জানি। তবে তোকে কথা দিচ্ছি, ওরা এগুলো কোনোদিন পাবে না। সব অরিজিন্যাল আমার কাছে, এখনো আমার টাকা বাকি, দিলে পাবে, তুই যা ভালবুঝবি এবার কর, আমি তোর মতে মত দেবো। আমি তাজ্জব বনে গেলাম সুনীত-চম্পকবাবুর কান্ডে। মাঝে একদিন দামিনী মাসির কাছে গেছিলাম। আমার পৌঁছোবার আগেই ইসলামভাই গিয়ে দামিনীমাসীকে সব বলে এসেছে। দামিনী মাসী বলেছে, ও যদি তোর কাজ না করে আমাকে বলবি, আমি ঝাঁটামেরে ওকে কলকাতা থেকে বিদায় কোরবো, ওর মতো কত ইসলামকে আমি দেখলাম। আমি মাসির কথায় হেসেছি। টিনা, অদিতি, দেবাশীষ নির্মাল্য, মিলি আমায় কামিং তিন মাসের জন্য ১২০ কোটির টাকার এ্যাডপ্যাকেজ জোগাড় করে দিলো, ওদের বললাম, তোরা আমাকে অন্যান্য এ্যাডহাউসের ব্যাপারে সাহায্য কর। ওরা কথা দিয়েছে। যত দিন এগিয়েছে, আমাকে দেখে মিত্রার মুখ শুকিয়ে গেছে, আমার কান্ডকারখানা দেখে শেষে ও ভয় পেয়ে গিয়ে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, একদিন রাতে প্রচন্ড কাঁদলো। আমি চলে এলাম।
মিত্রা আমার কথা মোতো এই কদিন কাজ করেছে, এই কয়দিনে ও যেন পাঁচবছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে। মিত্রার কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সুনীতদা এবং চম্পকবাবু ইরেগুলার আমি ওকে চুপচাপ থাকতে বলেছি। শুক্রবার আমি মিটিং আরম্ভ হওয়ার এক ঘন্টা আগে অফিসে ঢুকলাম, বুঝতে পারলাম অফিসে একটা চাপা উত্তেজনা, চারিদিকে ফুস ফুস গুজ গুজ। নিউজরুমে গেলাম, মল্লিকদা কাছে এলো, কিরে সব ঠিক আছে তো। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। ওরা মলদের (মলরা আমাদের হাউসের ৫ পার্সেন্ট শেয়ার হোল্ডার) হাত করেছে। হাসলাম।
তুই হাসছিস কেনো।
তুমি হাসির কথা বললে তাই।
ওরাও তো শেয়ার হোল্ডার।
তো।
আমার মাথায় কিছু আসছে না।
সব আসবে এতদিন বহাল তবিয়েতে ছিলে। তাই কিছু বোঝার দরকার পরে নি।
তুই ঠিক থাকলেই সব ঠিক।
আমি বেঠিক কোথায়।
কি সব করেছিস, তোর ওপর সবাই খেপচুয়াস।
একচুয়েলি মউচাকে ঢিল পরেছে। একটু আধটু হুল ফুটবেই, তাই বলে কি মধু খাবো না।
হেঁয়ালি রাখ। দাদার প্রেসার বেরে গেছে, কাল ভীষণ শরীর খারাপ হয়েছিল।
আমাকে খবর দাওনি কেনো।
দাদা বারন কোরলো।
তাহলে বোলছো কেনো।
তোর বড়মা, ছোটমা কাঁদছে আর ঠাকুর ঘরে বসে আছে।
আজকের পর আর বসতে হবে না।
ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
কি হলো।

তুই কি অফিসে এসেছিস।
 
হ্যাঁ।
একবার আসবি।
এখন না, ১১টার সময়।
আমার কিছু কথা ছিলো তোর সঙ্গে।
কি বিষয়ে।
আজকের মিটিং-এর বিষয়ে।
নিজে নিজে ঠিক কর সব।
মিত্রা চুপ করে গেলো।
ফোনটা কেটে দিলাম। নিজের কয়েকটা কাজ করে নিলাম, সন্দীপ আমার ধারে কাছে এলো না। অন্যান্য ছেলেগুলোরও কোনো বালাই নেই। তারা জানে কাজ করছি, মাসা মাসে মাইনে পেলেই হলো।
হিমাংশুর ফোন।
তোদের অফিসে ঢুকছি।
মিত্রার ঘরে গিয়ে বোস।
তুই কখন আসছিস।
জাস্ট দশমিনিট পর।
সব রেডি।
হ্যাঁ।
ঠিক এগারোটায় আমি মিত্রার ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম, দেখলাম, আমার জায়গাটা মিত্রার ঠিক পাশেই। আমার একদিকে মল্লিকদা, আর এক দিকে অমিতাভদা। আমার ঠিক অপরজিটে মলরা, চম্পকদা, সুনীতদা আর সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।
প্রথেমে সনাতনবাবু কামিং ৬ মান্থের বাজেট কি হবে তা পরে শোনালেন। তাতা এ্যাডের বাজেট দেখে চম্পকবাবুর মুখ শুকিয়ে গেলো। পর পর সব ডিপার্টমেন্টের কি কি টাকা ঠিক করা হয়েছে, তা পরে শোনানো হোলো। সবারই মুখ শুকিয়ে গেছে। মিত্রা প্রথমে মল বাবুকে বাজেটের ওপর বলতে বললেন।
মলবাবু বললেন, ম্যাডাম আমি ৫ ভাগ শেয়ার হোল্ড করে আছি। আমার কোন কথা নেই। আপনি বরং বলুন আমরা মেনে নেবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার কিছু বলার আছে।
আমি শুরু করলাম।
আমি পোনেরো দিন হলো কোম্পানীর মালিক হয়েছি। তাতে হিসাবে অনেক গরমিল দেখলাম, আপনারা দুজনে কেউ তা জানেন।
মল এবং মিত্রা দুজনেই অস্বীকার করলো।
এবার চম্পকবাবুর দিকে তাকালাম।
চম্পকবাবু গত ৬ মাসে আমাদের এ্যাডের যা বাজেট ছিলো তার কত এসেছে।
টার্গেট ৯০ ছিলো ৫০ এসেছে।
কত কমিশন বাদ গেছে।
১৩ কোটি।
এনটারটেনমেন্টের পেছনে কত খরচ হয়েছে।
৬ কোটি। তুমি কি এই জন্য মিটিং ডেকেছো নাকি।
আপনি এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো।
তুমি উত্তেজনার সৃষ্টি কোরছো।
আপনার এ্যাডডিপার্টমেন্ট গত ৬ মাসে ৬ কোটি টাকা এন্টারটেনমেন্টের পেছনে খালি খরচ করেছে।
আচ্ছা আগামী ৬ মাসের বাজেট ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি।
এ নিয়ে আপনি কি বলেন।
এটা এ্যাবসার্ড।
আপনার রেসিও অনুযায়ী এই এ্যাড যদি পাওয়া যায় তাহলে ১০০ কোটি কমিশন এবং এনটারটেনমেন্টর পেছনে খরচ হবে। তাই তো।
চুপচাপ।

চম্পকবাবু উত্তর দিন।
এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেস করে বাজেট কোরেছো।
আপনি বাজেট করে যা এনেছেন তা কি ঠিক।
তুমি কি বলতে চাও।
গত সপ্তাহে আপনি এনটারটেনমেন্টের নামে, দেড়লাখটাকার একটা বিল জমা দিয়েছিলেন। খেপে খেপে সেই টাকা আপনি নিয়ে নিয়েছেন। টাকাটা আপনি কোথায় খরচ করলেন।
তোমাকে তার কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি।
আমি আপনার চাকরিটা খেতে পারি, শুধু তাই নয়, এই ঘর থেকে আপনাকে শ্রীঘরে ঢোকাতে পারি। জামিন অযোগ্য মামলায় আপনাকে ফাঁসাতে পারি, কালকে কাগজে সুন্দর করে একটা আর্টিকেল লিখতে পারি, উইথ ফটোগ্রাফ। যাতে আপনার সাধের সংসার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আপনি কোন অপসন বেছে নেবেন।
সবাই দেখলাম একটু নরে চরে বসলেন, মল আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সুনীতবাবুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, দাদা, মল্লিকদার মাথা নীচু।
আমার হিসেব অনুযায়ী কোম্পানী আপনার কাছে ৬ কোটি টাকা পায়।
এটা অন্যায় ভাবে আমার ওপর প্রেসার করা হচ্ছে।
তারমানে আমি যা বলছি তার কিছুটা মেনে নিচ্ছেন। পুরোটা নয়।
চুপচাপ।
তাহলে আর একটা কথা বলি।
অনি থাক।
কেনো। থাকবে কেনো। তুই বল, আমার শোনার দরকার আছে। অমিতাভদা বললেন।
উনি আমাদের হাউসের এ্যাড অন্যজায়গায় দিতেন। সেখান থেকে বেশি কমিশন পেতেন।
কি চম্পক অনি ঠিক কথা বলছে। অমিতাভদা বললেন।
চম্পকদা অমিতাভদার কাছে ছুটে এসে পায়ে ধরে ফেললেন, আমায় ক্ষমা করুন দাদা, আপনার ওপর অনেক অন্যায় করেছি, আমি সত্যি বলছি, মল আর সুনীতের পাল্লায় পরে এসব করেছি, ওরাও সব ভাগ পেয়েছে দাদা আমি একা নিই নি, আপনি অনির হাত থেকে আমাকে বাঁচান, আমি জানি ওর কাছে সব ডকুমেন্টস আছে, আপনি এই হাউসের সবচেয়ে সিনিয়র পার্সেন আপনার কথা অনি ফেলতে পারবে না।
কি হে মল। চম্পক কি বলে।
উনি প্রমান করতে পারবেন।
তাই নাকি মলবাবু। আমি বললাম।
আপনি কোনো কথা বলবেন না। আমি চম্পকের সঙ্গে কথা বলছি।
আপনার বাড়িতো রাজস্থানে, চৌমহিনি, ট্যাঙ্করোড....। আপনার ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট এতোক্ষণে সিল হয়ে যাবার কথা। একটা ফোন করুন তো আপনার ব্যাঙ্কে।
এটা আপনি কি করছেন অনিবাবু।
তাহলে সত্যি কথা বলুন।
কিছু দিয়েছে, যত সামান্য।
বাইপাসের প্রোমোটিংয়ে কত ঢেলেছেন।
ওটা আমার মাদার বিজনেস।
হিমাংশু জেরক্সটা মলের হাতে দে। অরিজিন্যাল আমার কাছে।
হিমাংশু জেরক্সটা এগিয়ে দিলো।
মল উঠে এসে আমার হাত জড়িয়ে ধরলো। পারলে আমার পায়ে পরে যায়। আপনি এতো বড় ক্ষতি আমার করবেন না। আমি একেবারে মরে যাবো। আমি বুঝে গেছি সব।
ব্যবসায়ী মানুষ তাড়াতাড়ি আপনাকে বুঝতেই হবে।
অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা সব মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে ব্যাপারটা কি হোলো, মল এরি মধ্যে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছে। ঘরের অন্য ডিপার্টমেন্টর সকলের মুখ থমথমে।

আপনি যা বলবেন আমি করে দেবো। এটা শো হলে আমার ৩০০ কোটি টাকা খতি হয়ে যাবে।
 
আমার দুটো জিনিষ চাই, মির্জা গালিব স্ট্রীটের জায়গাটা, আর তোমার ৫ পার্সেন্ট শেয়ার।
সুনীতদা উঠে দাঁড়িয়ে ধপ করে বসে পরলেন, সবাই দেখলো ব্যাপারটা, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, হিমাংশু চল লালাবাজার।
না না এটা কোনো সমাধান হোলো। আপনি জোর জবরদস্তি করছেন।
কি সুনীতদা জোর জবরদস্তি না হকের জিনিষ। কোনটা। আমি বেশি সময় দিতে পারবো না। আমার কথা মানবেন না তিনজনকেই ভেতরে পুরবো।
অমিতাভদা উঠে দাঁড়ালেন, তুই কি আরম্ভ করেছিস বলতো।
আমি কি সেটার প্রমাণতো পাচ্ছ। আমি চাইলেও এরা এ ঘর থেকে আমাকে বেরতে দেবে না, ওই দরজায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকবে তিনজনে। ওদের প্রাণের পাখি আমার কাছে। তোমরা তো বলতেই দিলে না।
সুনীতদা এগিয়ে এলেন তুই যা বলবি তাই কোরবো। তুই বল কি করতে হবে।
খালি সই করতে হবে।
আজকেই করতে হবে।
হ্যাঁ। ডিড তৈরি আছে, পরে নাও সই করো।
হিমাংশু ডিড ওদের হাতে দিয়ে দাও।
হিমাংশু ডিড ওদের এগিয়ে দিলো।
আপনি এটা ঠিক কাজ করছেন না অনিবাবু।
মল তোমার কাছে এখনো ৫০ কোটির হিসাব চাই নি।
সেটাও কি আমি একা লিয়েছি। সবাই লিয়েছে। মল এবার নিজের ফরমায় এলো বাংলা হিন্দী।
কারা কারা নিয়েছে।
চম্পক আছে, সুনীত আছে, কিংশুক আছে, অরিন্দম আছে, ম্যায় সনাতন ভি আছে।
আমি তোমার কাছ থেকে বুঝছি আর তুমি ওদের কাছ থেকে বুঝে নাও।
এটা কি বলছো অনি। সনাতনবাবু বললেন।
কেনো।
নোওয়ার সময় অনির কথা মনে পরে নি।
সবার মাথা নত।
সই না করলে সবকাটাকে তোলতাই করাবো। হিমাংশু দুটো ডিড আছে দেখে শুনে সই করাবি। রেজিস্টারার ম্যাডাম এসেছে।
হ্যাঁ।
এখানেই রেজিস্টার করাবি। সাক্ষী সাবুদ, অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা। আমি নিউজরুমে গিয়ে বসছি। আধাঘন্টা সময় দিলাম। তারপর আবার মিটিং স্টার্ট হবে।
মল আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। তুমি ক্যাশ লাও।
আমার এক কথা।
তাহলে আমিও তোমায় বললাম, আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো না।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম, ভয়েস অন কোরলাম।
কি রে অনি, মল নাকুর নুকুর করছে। ও শালা মেড়ো আছে। ও জানে না তোর বুদ্ধির কাছে ওরা বাচ্চা।
কারগলা শুনতে পাচ্ছ।
মল আমার দিকে ফ্যাকাসে চোখে তাকিয়ে আছে, ও যার ওপর নির্ভর করে এতোক্ষণ দাপাদাপি করছিলো সেটা যে এই ব্যাক্তি সেটা ও বুঝে ফেলেছে।
তুমি কথা বলো।
মলের গালে, চম্পকদার গালে, সুনীতদার গালে কে যেন কোষে থাপ্পর মারলো।
দে।......কি মল বাবু।
হ্যাঁ বল ইসলামভাই।
অনি যা বলছে চুপচাপ করে নিন, আপনার ভালো হবে, অনিকে আপনার থেকেও বেশি দিন দেখেছি, ও খারাপ ছেলে নয়। আর শোনেন চম্পক আর সুনীতকেও বলে দিন। ও যা বলে আজ থেকে যেনো কথা শুনে চলে, আমি অনিকে রিকোয়েস্ট করেছি, ওদের চাকরি যাবে না, ওর কথা যেন শোনে। না হলে বিপদ আছে। অনিকে দেন।

হ্যাঁ বলো।
তুই কাল দামিনীবুড়ীর কাছে গেছিলি।
হ্যাঁ।
কেনো ইসলামভাই-এর ওপর বিশ্বাস ছিলো না।
মনটা ভালো লাগছিলো না।
ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে উঠলো।
আজ গিয়ে বলে আসবি।
ঠিক আছে।
ফোনটা বন্ধ করলাম, সবাই কথা শুনলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, দামিনী মাসীর গল্পটা একমাত্র মিত্রা জানে, ও মাথা নীচু করে আছে।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘরের বাইরে দেখছি প্রচুর লোকের আনাগোনা। আমায় দেখতে পেয়ে, পরি কি মরি করে পালাচ্ছে। আমি সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলাম, চায়ের কথা বলতেই ওরা তুড়ন্ত চা নিয়ে চলে এলো, আমি ফোনটা বার করে, বড়মাকে ফোন করলাম।
হাঁপাচ্ছ কেনো।
ঠাকুর ঘর থেকে দৌড়ে এলাম। জানি তুই ফোন করবি।
তোমার ঠাকুর কি বোললো।
তুই জিতবি।
তাই হয়েছে।
হ্যাঁরে অনি সত্যি তুই জিতেছিস।
হ্যাঁ।
তুই ছোটর সঙ্গে কথা বল।
দাও।
জানিস অনি এই কটা দিন মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো। তুই ভাল আছিসতো, মনটা খালি কু গাইতো।
আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি।
জানি। কাল দাদার শরীরটা ভীষণ খারাপ ছিলো।
জানি।
তুই জানিস।
হ্যাঁ।
তুই কি সাংঘাতিক ছেলে রে।
পরে ফোন কোরবো।
সন্দীপ কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারি নি। মিটি মিটি হাসছে। তুই সত্যি বস।
কেনো।
বোড়ের চালে রাজা কিস্তি মাত।
হাসলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো।
হিমাংশুর ফোন।
সই কমপ্লিট।
হ্যাঁ।

তোকে সই করতে হবে।
 
যাচ্ছি।
তুই নিউজরুমে থাক, সেকেন্ড ইনিংসটা খেলে আসি।
সন্দীপ হাসলো।
ঘরে এসে দেখলাম, একটা হুলুস্থূলুস কান্ড চলছে। আমি হিমাংশুকে বললাম, দে কোথায় সই করতে হবে। হিমাংশু দেখিয়ে দিলো, সই করে দিলাম, রেজিস্টারার ম্যাডাম তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঘরেই ছিলেন, সব কাজ ওখানেই হয়ে গেলো। সত্যি সব গল্পের মতোই মনে হচ্ছে আমার কাছে। নিজের জায়গায় বসলাম। মলের দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে কিছু করবেন না মল সাহেব। গত পাঁচ বছরে ব-কলমে অনেক কামিয়েছেন, আমি তাতে হাত দিলাম না। খুব সামান্যই নিলাম আপনার কাছ থেকে, আমার ভাগটা এখানে এসে বুঝিয়ে দেবেন, আমি আপনার কাছে কোনদিন যাবো না। যদি যাই করেকুরে নেবো। আপনি এখন আসুন, আজ থেকে আপনি আমাদের হাউসের বন্ধু।
আমার কাগজপত্র।
যেখান থেকে নিয়ে এসেছিলাম। সেখানেই রেখে দেবো।
মল আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
আমারতো প্রচুর লস হলো।
আমি কিন্তু লাস্ট ফাইভইয়ার্সের ক্লেম করিনি।
আমি বুঝতে পারছি আপনি এখন অনেক কিছু করতে পারেন।
সবই যখন বোঝেন, তাহলে কাঁদুনি গেয়ে লাভ, আসুন আপনি বাকিটা সেরে ফেলি।
মল গট গট করে বেরিয়ে গেলো।
সনাতনবাবু, কিংশুকবাবু, অরিন্দমবাবু আপনাদের টাকাটা।
স্যার কিছুটাকা খরচ করে ফেলেছি, যেটা আছে সেটা কালকে দিয়ে দেবো।
আপনারা সব ভালো ভালো ঘরের ছেলে এসব ঘোটালাতে জরালেন কেনো।
সবার মাথা নত।
সনাতন বাবু আপনি বয়স্কমানুষ এ কি করলেন।
সনাতন বাবু কিছু বললেন না। মাথা নীচু করে বসে আছেন।
সুনীতদা।
তুই আর কিছু বলিসনা অনি। এই কদিনে বাড়িতে, বাড়ির বাইরে, অফিসে, অনেক কিছু শুনেছি আর বলিস না।
এইবার কাজটা কি ঠিক মতো হবে।
কথা দিচ্ছি, আমার এক্তিয়ারের বাইরে আমি কোনোদিন যাবো না।
তোমার আর চম্পকবাবুর নতুন কাগজের তাহলে কি হবে।
সবাই চুপচাপ।
বলো।
বলতে হবে তোমাদের এদের সকলের সামনে।
তুইতো মলের কাছ থেকে সব লিখিয়ে নিলি।
এই মেয়েটাকে ঠকাতে তোমাদের ইচ্ছে হলো।
চুপচাপ।
কতোটাকা দেনা করেছো এই মেয়াটার। তুমি না ওর আত্মীয়।
আমার ভুল হয়েছে।
সাত খুন মাপ।
চম্পকদা, কমিসনটা ২০ কিংবা ২৫ নয় ১৩ পার্সেন্ট এটা ঠিক।

হ্যাঁ।
আমার কিন্তু কামিং ৬ মাসে ৩০০ কোটি চাই। কোথা থেকে আসবে আমি জানি না।
আমি পারবো না।
না পরলে তোমার সম্পত্তিগুলো লিখে দিতে হবে।
চুপচাপ।
আমি তোমাদের কামিং থ্রি মান্থের জন্য ১২০ কোটি টাকা দেবো। বাকি ১৮০ কোটি তোমরা জোগাড় করতে পারবে।
কেউ যেন চম্পকদার গালে চড় মারলো। মাথা তুললেন চম্পকদা। চেষ্টা কোরবো।
এই নাও ১২০ কোটির ড্রিল। কাগজটা চম্পকদার দিকে ছুঁড়ে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে। অমিতাভদা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না, আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খেলেন।
এবার তোমরা আমায় শাস্তি দিতে পার, আমি এই সাতদিনে অনেক অপরাধ করেছি, আজ স্বীকার করছি এই সব কান্ড কারখানা করার জন্য, আমি এই হাউস থেকে দুটো জিনিষ চুরি করেছি। একটা প্যাড, আর একটা স্টাম্প, বাকি একটা ডিরেক্টরের স্টাম্প আমি বানিয়ে নিয়েছিলাম। অন্যায় করেছি।
ওরা সবাই চুপচাপ।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম, কাগজগুলো গুছিয়ে নিয়ে দাদার বাড়িতে পৌঁছে দিবি, আমি রাতে ভালো করে একবার দেখে নেবো।

আমি উঠে বেরিয়ে চলে এলাম। দাদা, মিত্রা, মল্লিকদা তিনজনে একসঙ্গে অনি বলে ডেকে উঠলো। আমি পেছন ফিরে তাকালাম না।
 
অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম দামিনী মাসির কাছে। ও পাড়ায় কম বেশি সবাই আমাকে চেনে, তাই কেউ বিরক্ত করে না, আমি ওপোরের ঘরে আসতে দেখলাম দামিনী মাসির ঘরে তালা। পাশের ঘর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো, এপারার মেয়েদের যেমন দেখতে হয়, এই দুপুর বেলাতেও সেজেগুজে অপেক্ষা করছে, আমায় কাছে এসে বললো, দাদা তুমি চলো, আমার ঘরে, মাসি কাছাকাছি কোথাও গেছে, এখুনি চলে আসবে। একটু ইতস্ততঃ করছিলাম, তুমি চলো না, এখন কেউ আসবে না আমার কাছে, এলে ভাগিয়ে দেবো। ও আমার হাতটা ধোরে টানা টানি করছিলো। ওর গলা শুনে পাশের ঘরগুলো থেকে আরো কয়েকটা মেয়ে বেরিয়ে এলো। আরে অনিদা তুমি এই সময়, কিছু একটা হয়েছে।
নারে এমনি এসেছিলাম মাসির কাছে।
লক্ষী, মাসি না আসা পযর্ন্ত তোর ঘরে নিয়ে গিয়ে বসা অনিদাকে।
কখন থেকে বলছি কিছুতেই যাবে না।
ঠিক আছে চলো ।
ঘরটা আগের থেক অনেক বেশি ডেকরেটেড, তার মানে লক্ষীর খরিদ্দারদের মালকরি ভালই, দেখলাম এসিও লাগানো আছে, এই ঘরটা একসময় মেরিনা বলে একটা মেয়ে থাকতো, লক্ষ্ণৌ থেকে এসেছিলো, ইসলামভাই এই মেয়েটির ঘরে প্রতিদিন আসতো, সেখান থেকেই পরিচয়, তারপর মেয়েটি একদিন মার্ডার হয়ে গেলো, কি করে হোলো কেনো হোলো, তা জানি না। সেই কটা দিন ইসলামভাই পাগলের মতো হয়ে গেছিলো, মেয়েটি ইসলামভাইকে ভালোবেসে ফেলেছিলো, ইসলামভাইও মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলো আমি মদ এনে দিতাম, তখন আমি সবে মাত্র সাংবাদিকতায় ঢুকেছি। ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম নিয়ে পরছি। হোস্টেল পাই নি। কলকাতার রাস্তাঘাট সেইরকম একটা চিন্তাম না। ঘুরতে ঘুরতে এই পাড়ায় চলে এসেছিলাম। একটি মেয়ে আমাকে হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়েছিলো, তারপর যা হয়, আমি ভয় পেয়ে চেঁচামিচি করতে দামিনী মাসি এসেছিলো, আমার মুখটা দেখে দামিনী মাসির কি মনে হয়েছিলো জানি না, আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন, বললেন কেনো এসেছিলাম। আমি মাসিকে মিথ্যে কথা বলিনি। সব সত্যি বলেছিলাম, আমি পড়াশুনো করছি, হোস্টেল ছেড়ে দিতে হবে, মেয়েটিকে রাস্তায় দেখা হতে বললাম, আমায় একটা ঘর জোগাড় করে দিতে পারেন, ও নিয়ে এসে.....সেইদিন থেকে দামিনীমাসি নিজের ঘরের এক কোনে থাকার জায়গা করে দিয়েছিলেন, প্রথম কয় মাস সেখানে ছিলাম, তারপর ছাদের ঘরে। যখন রোজগার করতে পারলাম, তখন দামিনী মাসিকে ভাড়াদিতাম।
টিউসিনি করে নিজের পেট চালিয়েছি, সেই সময় এই পাড়ার বহুমেয়ের ছেলে-মেয়েদের আমি পড়াতাম, একসময় মাস্টার মসাই উপাধিতেও ভূষিত হয়ে পরেছিলাম। তারপর একদিন অমিতাভদা নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়িতে। না আমার কোনো অসুবিধে হয় নি, প্রথম প্রথম একটা সেকি ভাব ছিলো তারপর সব অভ্যাস হয়ে গেছিলো। সত্যি কথা বলতে কি এদের এখানে এলে আমার মধ্যে কোনোদিন সেক্সভাবটাই জাগতো না, কেনো জাগতো না বলতে পারবো না, আমি এপারার গুড বয় হিসাবেই ছিলাম।
কিরে তুই এই সময়। দামিনী মাসি।
তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম।
ও বুঝেছি, মক্কেলটা বলেছে বুঝি।
মাথা নাড়লাম, হ্যাঁরে লক্ষী কোথায় গেলোরে।
কেনো। একটি মেয়ে কাছে এগিয়ে এসে বোললো।
ছেলেটাকে একা বসিয়ে দিয়ে কোথায় মারাতে গেছে।
ওই ঘরে আছে।

দেখলাম ছুটতে ছুটতে লক্ষী এলো।
খদ্দের এসেছিলো।
না।
তাহলে।
মেয়েটি মাথা নীচু করে চুপচাপ।
ছেলটাকে একটু জলটল দিয়েছিস।
না মানে।
ও খদ্দের নয় বলে।
দেখলে অনিদা দেখলে।
আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিনি বলো।
তুমি বৃথা রাগ কোরছো মাসি।
তুই থাম। সব সময় পোঁয়ায় কুটকুটানি, দেবো একদিন লঙ্কা ডোলে বুঝবি। তোর বাবু এসেছিলো।
না।
এলে ধোন চুষে আগে নোট নিবি। তারপর কাপর খুলবি। আয় অনি, এদের শেখাতে শেখাতেই শেষ হয়ে গেলাম।
মাসির ঘরে গেলাম। মাসিকে সব বললাম। মাসি বললো এবার অনি তুই মালিক হলি। আমার ভীষণ ভালো লাগছে, তুই হচ্ছিস আসল হীরে, ওই ক মাসে তুই বয়ে যেতে পারতিস, যাসনি, তোর লক্ষে অবিচল ছিলি, আমার ছেলেটার একটু ব্যবস্থা করে দে।
বলো , কি করতে হবে।
আর কতদিন মদ আনবে , যে কোন একটা কাজ। কতো কাজ আছে তোর অফিসে।
তুমি ভজুকে ডাকো।
এখুনি।
হ্যাঁ। ওর জন্য কিছু করতে পারলে, আমারও ভালো লাগবে।
দামিনী মাসি গলা হাঁকরে লক্ষীকে একবার ডাকলো, লক্ষী ছুটে চলে এলো, আঁচোলের গিঁট খুলে লক্ষীকে একটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বললো, মিষ্টি নিয়ে আয়, আমি আমার বাবুকে খাওয়াবো। আমার বাবুকে দেখেছিস, তোদের মতো নয়। লক্ষী হাসছে, আমিও হাসলাম।
মাসি কম করে নিয়ে আসতে বলো।
কেনো রে, তোর কি চিনি হয়েছে।
ওঃ তোমার সঙ্গে পারা যাবে না।
পারবি কি করে, ১৬ বছরে এসেছিলাম, এখন ৬৬ দুদিন পর মরে যাবো। ৫০ বছর এই এঁদো গলিতে কাটিয়ে দিলাম।
লক্ষী ভজুকে দেখলে একবার পাঠিয়ে দিস তো।
লক্ষী চলে গেলো।
তুই বোস একবার রাউন্ড মেরে আসি।
দামিনী মাসি কার ঘরে কে আছে দেখতে গেলো। না হলে পয়সা মার যাবে। ভজু দামিনী মাসির কত নম্বর ছেলে , দামিনী মাসি নিজেই জানে না। তবে ভজু একটু এ্যাবনর্মাল বলে দামিনী মাসি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। শুনেছিলাম দামিনী মাসির নাকি গোটা পোনেরো ছেলে মেয়ে, তখন সেই ভাবে প্রোটেকসন ছিলো না বলে, এতো ছেলে মেয়ে, এখন তো কত প্রোটেকসন। ঘরে ঢুকে ভজু আমাকে দেখে নাচানাচি শুরু করে দিলো।
পয়সা দাও।
দেবো, তুই আমার কাছে থাকবি।
ভজুর সে কি আনন্দ, আমায় নিয়ে যাবে, আমি যাবো। মা মারে জানো, খেতে দেয় না।
ভজু আমার থেকে বছর তিনেকের ছোটো, ব্রেনটা ঠিক মতো ডেভালপ করেনি। কিন্তু ও সব বোঝে, এ তল্লাটে তুমি খাটতে পারলে খাবার পাবে, না হলে তোমায় ক্রিমিকিটের মতো মরে পরে থাকতে হবে। এখানে কেউ কারুর নয়। আমার কপাল ভালো, আমি এখানে টিঁকে গেছিলাম।
লক্ষী প্লেটে করে খাবার সাজিয়ে নিয়ে এলো। প্রায় ১০ রকমের মিষ্টি। পেছন পেছন মাসি ঢুকলো, এই তো নাংয়ের মতো সাজিয়ে দিয়েছিস। এবার ঠিক আছে।
মাসি এতো খেতে পারবো না। লক্ষী তুমি কাছে এসো।
লক্ষী কিছুতেই আসবে না।
আমি বললাম তুমি এসো না আমি বলছি মাসি তোমায় কিছু বলবে না। আমি লক্ষীকে দুটো, ভজুকে দুটো মাসিকে দুটো দিয়ে নিজে খেলাম। আসার সময় মাসির হাতে তিনটে হাজার টাকার নোট গুঁজে দিলাম। মাসির চোখ চক চক করে উঠলো, লক্ষীকে দেখিয়ে দেখিয়ে বললো, দেখ গতর না দিয়ে ইনকাম, পারবি।
আমি মাসির দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি থামবে।
ভজুর কি করলি।
ভজু আমার সঙ্গে থাকবে বলেছে।
কবে নিয়ে যাবি।
তুমি আমাকে মাস খানেক সময় দাও। তবে ভজু আজ থেকেই আমার কাছে কাজ করছে ধরে নাও।
সে কি রকম বাপু।

উঃ তুমি এটা নিয়ে ভাবছো কেনো। আমি আগামী সপ্তাহে একবার আসবো। ফোন নং তো রইলো।
 
ওরে ও লক্ষী, অনি শিব ঠাকুররে শিব ঠাকুর, একটা পেন্নাম ঠোক অন্ততঃ।
মেয়াটা ঠক করে আমাকে পেন্নাম করলো।
আমি ভজুকে বললাম চলো।
এখন।
না এখন না আগামী সপ্তাহে।
তুমি মাকে বলে যাও আমাকে যেনো না মারে।
খানকির ছেলে তোমায় পূজো করবে।
ওঃ মাসি। নিচে চলে এলাম। সিঁড়ি দিয়ে আসার সময় দেখলাম, অন্ততঃ প্রায় কুড়ি জোড়া চোখ আমার দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে।
নিচে এসে টিনাকে ফোন করলাম।
হ্যাঁ বলো অনিদা।
তুমি কোথায়।
বাড়িতে।
অফিসে যাও নি।
না।
শরীর খারাপ।
সব দিন অফিস যেতে ভালো লাগে না।
আসবো নাকি।
সত্যি।
সত্যি নাতো কি, মিথ্যে।
চলে এসো।
আজকে থেকে ক্লাস করাবে।
অবশ্যই।
একটা ট্যাক্সি ধরলাম। ঘন্টা খানেক সময় লাগবে যেতে । ট্যাক্সিতে উঠে প্রথমে বড়মাকে ফোনেধরলাম, ফোন ধরেই বড়মা বললেন, কিরে অনি কি হয়েছে।
কি কোরছো।
খেতে বোসবো।
এতো বেলায়।
আমায় কে বেড়ে দেবে বল। নিজেরটা নিজে বেড়ে নিতে হয়।
তোমার আমার একি অবস্থা।
তুই খেয়েছিস।
না এখনো জোটে নি।
চলে আয় একসঙ্গে খাবো।
তুমি অনিকে এতো ভালোবাসো কেনো বলোতো।
অনি যে আমার পেটের ছেলে নয়।
জানো অনেক দিন পর আজ নিজেকে অনেক হাল্কা বোধ হচ্ছে।
জানি, তোর দাদা ফোন করে সব বললো।
কি বললো।
শুনতে ইচ্ছে করছে।
হুঁ।
চলে আয়।
এখন না রাতে যাবো।
তুই এখন কোথায়।
ট্যাক্সিতে, একটা কাজে যাচ্ছি।
খালি কাজ কাজ কাজ, তোর আর তোর দাদার কাজ একটা ম্যানিয়া।
মিত্রা ফোন করেছিলো।
হ্যাঁ।
চুপচাপ।
কথা বোলছোনা কেনো।
তুই ওকে বাঁচিয়ে দিলি।

শুধু ওকে নয়, সমস্ত কাগজের স্টাফকে। এইবার বলো, এই সাতদিন তোমার সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলিনি বলে তুমি এখন কষ্ট পাচ্ছ।
 
একবারে না।
তাহলে সাতখুন মাপ।
ওরে শয়তান, তুই ঘুরিয়ে কথা আদায় করছিস।
তোমার কাছ থেকে করবো নাতো কার কাছ থেকে করবো।
চলে আয় না।
না, অনেক ঋণ করেছি এক একে শোধ করতে হবে। রাতে যাবো।
তখন তুই তোর দাদার সঙ্গে কথা বলিস নি।
ভালো লাগছিলো না। বিশ্বাস করো, কারুর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিলো না।
তোর দাদা কষ্ট পেয়েছে।
রাতে গিয়ে সব ঠিক করে দেবো।
রাতে কি খাবি।
তোমায় কিছু করতে হবে না। আমি কিনে নিয়ে যাবো।
না কেনা কিনির দরকার নেই, আমি রান্না কোরবো।
ছোট কোথায়।
ব্যাঙ্কে গেছে।
আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিলাম, হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম, ও বললো সব ঠিক আছে। মল তোর ওপর একটা রিভেঞ্জ নিতে পারে।
হাসতে হাসতে বললাম, ওর আর একটা ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে, সেটা যদি শো করাই ওকে ভারতের পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে হবে। খবরটা ওর কানে পৌঁছে দিস।
কি বলছিস।
আমার দয়া মায়া একটু কম। ছোটো থেকে একা একা বড় হয়েছি, যাক শোন তুই এবার এ্যাকাউন্টসে হাত দে।
কাজগুলো গুছিয়ে নিই, আগামী সপ্তাহ থেকে হাত দেবো।
আচ্ছা।
সন্দীপকে ফোন করলাম।
গুরু এত স্মুথ কাজ অনেক দিন পর দেখছি।
কেনো।
কি বলবো বস, সবাই অমিতাভদার পারমিশন ছাড়া কোনো কাজই করছে না।
তাই নাকি।
তুই বুড়োটাকে মেরে দিবি।
কেনো।
এখনো দেখছি, চম্পকদা, সুনীতদা, ম্যানেজমেন্টের সব ঘিরে বসে আছে।
গম্ভীর সব।
না রে হাসাহাসি করছে। সেই আগের অবস্থা।
এনজয়কর।
সন্দীপ হো হো করো হেসে উঠলো। তুই কোথায়।
সোনাগাছিতে।
ভ্যাট।
একটু খোঁজ খবর নে জানতে পারবি।
ঠিক আছে, কিন্তু আমার এই বুদ্ধিতে কুলোবে না।
হাসলাম। তোর চাকরি পাকা।
হ্যাঁ গুরু তোমার দয়ায় টেনসন মুক্ত হলাম।
ঠিক আছে। রাখছি।
মিত্রাকে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ করলাম, আমি রাত ৮টার মধ্যে অমিতাভদার বাড়ি ঢুকছি, অবশ্যই চলে আসবি।
টিনার হাউসিংএর সামনে এসে, ট্যাক্সিটাকে ছেড়ে দিলাম। ধীর পায়ে লিফ্ট বক্সের সামনে এলাম। লিফ্ট নিচেই ছিলো আমি যথাস্থানে বোতাম টিপলাম। হুস করে ওপরে চলে এলাম। শরীরটা কেমন যেন ছেড়ে দিয়েছে। এই সাতটা দিন আমার ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ে ডালপালা অক্ষত থাকলেও, তার একটা রেশ সারা শরীরে। এটা আমি বুঝতে পারছি।
টিনা দরজা খুলে আমার সামনে দাঁড়ালো। একঝলক মুক্ত বাতাস আমার চোখে মুখে ছড়িয়ে পরলো। টিনাকে আজ কালো লাগছে না। বরং ওর চোখে মুখে রং ছড়িয়ে পরেছে। আমাকে দেখে ও একটু অবাক হলো। ওর চোখ তাই বলে। ভেতরে এসো।
আমি ভেতরে গেলাম। সোফার ওপর নিজেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
তোমার কি শরীর খারাপ অনিদা।
না।
তাহলে এরকম দেখতে লাগছে তোমায়। অফিসের কোনো সমস্যা।
ছিলো, মিটিয়ে দিয়েছি।
দাঁড়াও বলেই টিনা ভেতরের ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর একগ্লাস এ্যাপেল জুস নিয়ে এলো।
আগে এটা খাও।
আমি দ্বিধা করলাম না। ঘট ঘট করে সব খেয়ে নিলাম। আমার খাওয়া দেখে টিনা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। খাওয়া শেষ হতে টিনা গ্লাসটা আমার হাত থেকে নিয়ে, সেন্টার টেবিলে রেখে, আমার মুখো মুখি সোফায় বসলো।
কি হয়েছে অনিদা, আমায় বলো।
না কিছু হয় নি।
তোমার চোখ মুখ বলছে, তুমি বহুরাত ঘুমোও নি।
তা বলতে পারো। একটা বড় কাজ ছিলো, জীবনে প্রথম মালিক হোলাম কিনা।
হেঁয়ালি রাখো।
হাসলাম। তোমার বাথরুমটা ব্যাবহার করতে পারবো।
অবশ্যই।
আমি স্নান কোরবো।
ঠিক আছে আমি সমস্ত ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
টিনা বাথরুমে গিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে এলো।
কি খাবে বলো।
হাল্কা কিছু খাবো।
লাইট করে নুডলস তৈরি করে দিই।
দাও।
আমি বাথরুমে গেলাম। গেঞ্জি পেন্ট খুলে নেংটো হয়ে ভাল করে স্নান করলাম। টিনার বাথরুমটা বেশ গোছানো, ছোট, কিন্তু দারুন, চারিদেক সাদা, একটু দাগ পরলেই চোখে পরে যাবে। একটু শীত শীত করছে। বুঝলাম ভতরটার রসদ কমে এসেছে।
দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
এ কি এটা পরলে কেনো।
কেনো।
তোমার জন্য একটা কাপর বার করে রেখেছি।
থাক।
মেয়েদের বলে পরবে না।
কাপরটা দেখলাম কোথায়।
ভেতরের ঘরে।
চিরুনিটা দাও, অনেক দিন দেওয়া হয় নি। মনে হয় চুলগুলো জট পরে যাবে।
কতো দিন কাটো নি।
প্রায় মাস ছয়েক।
কেটো না।
কেনো।
তোমাকে এই অবস্থায় বেশ ভালো লাগছে। কাটলে মুখটা ছোটো ছোটো লাগবে।
ভবছি পনিটেল কোরবো।
এ মা, না না। একেবারে না। টিনা মুখ ভেটকালো। খাবার নিয়ে আসি।
নিয়ে এসো।
টিনা প্লেটে করে সাজিয়ে নিয়ে এলো, আমি অবাক হলাম, নুডুলসের সঙ্গে ডিম ভেজেছে, ছোটো ছোটো পাঁপড় ভেজেছে।
এতো খাবো না। তুমি একটা প্লেট নিয়ে এসো।
না তোমাকে খেতেই হবে।
একটা প্লেট নিয়ে এসো না। আমার কথার মধ্যে মনে হয় ওজোন ছিলো, টিনা রান্নাঘর থেকে প্লেট নিয়ে এলো।
দুটো ভাগ করো, সমান মাপে, যদি কম বেশি হয় কমটা আমি খাবো।
উঃ তুমি পারোও বটে।
টিনা আমার অপরজিট সোফায় বোসে, খাবার ভাগ কোরলো, দুজনে একসঙ্গে খেলাম, টিনার সঙ্গে অনেক কথা হোলো, সেই কলেজ লাইফ থেকে, ও শুনেত চাইলো সেই দিনকার তাজ হোটেলের অসমাপ্ত কথা, আমি গল্প গুলো ওকে বোললাম, ও হাসতে হাসতে সোফায় গড়িয়ে পরে।
তুমি এরকম দুষ্টু ছিলে।
দুষ্টু ঠিক নয়, বলতে পারো ওটা বয়সের একটা ধর্ম, তখন নতুন করে জগত সংসারকে চিনতে শিখছি, একটা লিডারশিপ পাওয়ার ইচ্ছে মনের মধ্যে সব সময় বাসা বেঁধে থাকতো।
তাই বলে এরকম হ্যারাসমেন্ট। যাক আমার ভাগ্যভালো কালো বলে তোমার হাত থেকে রেহাই পেয়ে গেছি।
তুমি কালো বলে নিজেকে ছোটো করছো কেনো।
না গো অনিদা ঠিক বলছি।
কথা ঘোরানোর চেষ্টা করলাম। আচ্ছা টিনা তুমি য়ে পোষাকটা পরে আছো এটার নাম কি।
কেনো।
এমনি ইচ্ছে হোলো জিজ্ঞাসা করলাম।

তোমার সব জিজ্ঞাসার মধ্যে একটা কারন থাকে। খুব অড লুকিং লাগছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top