সারা পৃথিবী জুড়ে এখন একটাই চর্চা, একটা ম্যাজিক ড্রাগ এসেছে যা দিয়ে ক্যান্সার সেরে যাবে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা সার্জারী ছাড়াই। সত্যি কি তাই দেখা যাক। যে ট্রায়াল টি প্রকাশিত হয়েছে সেটি কি বলছে?
১২ জন রোগী যারা রেক্টাম বা মলদ্বার এর ক্যান্সার এ আক্রান্ত এবং স্টেজ ২ বা ৩ এবং যাদের মিসম্যাচ রিপেয়ার জিন ডেফিসিয়েন্ট তাদের এই ইমুনোথেরাপি ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করে দেখা গেছে সবার ই কম্পলিট রেস্পন্স এসেছে মানে ক্যান্সার টা আর শরীর এ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কতদিন অব্দি? প্রথম জনের ২৫ মাস, শেষ জনের ৬ মাস।
এবার আসুন দেখি একটু কাঁটাছেড়া করে।
১. মাত্র বারোজন এর ডাটা,
২. তারা সকলেই মিসম্যাচ রিপেয়ার জিন ডেফিসিয়েন্ট, সমস্ত মলদ্বার এর রোগীর মধ্যে মাত্র ৫ % থেকে ১০% এই ধরনের রোগী। মানে এই ট্রায়াল থেকে ৯০% মলদ্বার ক্যান্সার রোগী বাদ পরেছেন।
৩। রেডিয়েশন কেমোথেরাপি ও সার্জারী র মাধ্যমে এই স্টেজ এ সম্পুর্ন সুস্থ হওয়ার হার ও কিন্তু খুব বেশি। ১০০% না হলেও কাছাকাছি। এমনকি অনেক রোগী কে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি একসাথে দিয়ে তারপর অপারেশন না করলেও অসুখটা সম্পুর্ন সেরে যায়।
৪, মাত্র ৬ থেকে ২৫ মাস এর তথ্য, অন্তত তিনবছর তথ্য না পেলে সুস্থ সত্যিই হয়েছেন কিনা রোগী বলা যায় না। ( যদিও আমরা অন্তত পাঁচ বছর রোগী সুস্থ আছে কিনা দেখে কোন ট্রায়াল এর সাফল্য বিচার করি )
৫. বর্তমানে প্রচলিত রেডিয়েশন কেমোথেরাপি ইমুনোথেরাপি, সার্জারী র মাধ্যমে এমনকি স্টেজ ফোর ক্যান্সার কেও কয়েক বছর সুস্থ রাখা যায়। কাজেই এই থেরাপি টি বেশি কার্যকর কিনা সেটা বলার সময় আসেনি।
এবার দেখি কি কি বিষয় ইন্টারেস্টিং?
১. ১২ জন এর মধ্যে সবাই এর ক্যান্সার আপাতত নেই, এইটে অভিনব। যদিও বারোর বদলে বাইশ বা বত্রিশ বা বারোশো রোগীর ক্ষেত্রে সেটা একইরকম হয় কিনা সেটাই দেখার।
২. এই অসুধ টা যদি কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি র মত একই দক্ষতা য় ও কাজ করে তবুও এটি বেটার কেননা এর সাইড এফেক্ট কম।
এবার দেখা যাক এই যে কাগজে, টি ভি তে এত প্রচার এর কি কুফল? সব মিডিয়াই খবর টা কে এমন উত্তেজক ভাবে পেশ করছে যাতে একটা উত্তেজনা তৈরি হয়। কিন্তু সে উত্তেজনা টা বিজ্ঞানী মহলে বা চিকিৎসক মহলে আপাতত সীমাবদ্ধ থাকা উচিত কেননা বহু রোগী বা রোগী র পরিজন এতে মানসিক ভাবে বিভ্রান্ত হতে পারেন। প্রচলিত যে চিকিৎসা ক্যান্সার কে সারিয়ে তোলে তা গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত হতে পারেন, মুল্যবান সময় নষ্ট করতে পারেন। মানুষ মনে করবেন সব ক্যান্সার ই বোধহয় এই অসুধে সেরে যাবে, কিন্তু এটা যে কেবল মলদ্বার এর ক্যান্সার এর মাত্র ৫% থেকে ১০% রোগী র ওপর পরীক্ষা হয়েছে এটা জানা জরুরি। এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ ক্যান্সার হলে বিকল্প চিকিৎসার চেষ্টা করে মুল্যবান সময় নষ্ট করেন তাই সঠিক তথ্য তাঁদের জানা প্রয়োজন। শেষে বলি ইমুনোথেরাপি নতুন নয়। ক্যান্সার সেল একটা মুখোশ পরে থাকে তাই শরীরে র ইমুনিটি তাকে ধরতে পারে না। ইমুনোথেরাপি এই মুখোশ টার সাথে যুক্ত হয়ে এই মুখোশ টা খুলে দেয় তাই আমাদের শরীর এর ইমুনিটি ক্যান্সার সেল শনাক্ত করে মেরে ফেলে।
ইমুনোথেরাপি অবশ্যই একটা নতুন দিশা এবেছে ক্যান্সার চিকিৎসায়। সেই দিন টার আশায় আমরা সবাই আছি যেদিন একটা বড়ি বা ইঞ্জেকশন এ ক্যান্সার সেরে যাবে, কিন্তু এই ডস্টারলিম্যাব ট্রায়াল এর প্রেক্ষিতে সেই দিনটা এসেছে বলার সুযোগ এখনি পাচ্ছি না।আর হ্যাঁ এই চিকিৎসা র খরচ আপাতত দেড়কোটি টাকা।
ডাঃ সায়ন পাল
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
১২ জন রোগী যারা রেক্টাম বা মলদ্বার এর ক্যান্সার এ আক্রান্ত এবং স্টেজ ২ বা ৩ এবং যাদের মিসম্যাচ রিপেয়ার জিন ডেফিসিয়েন্ট তাদের এই ইমুনোথেরাপি ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করে দেখা গেছে সবার ই কম্পলিট রেস্পন্স এসেছে মানে ক্যান্সার টা আর শরীর এ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কতদিন অব্দি? প্রথম জনের ২৫ মাস, শেষ জনের ৬ মাস।
এবার আসুন দেখি একটু কাঁটাছেড়া করে।
১. মাত্র বারোজন এর ডাটা,
২. তারা সকলেই মিসম্যাচ রিপেয়ার জিন ডেফিসিয়েন্ট, সমস্ত মলদ্বার এর রোগীর মধ্যে মাত্র ৫ % থেকে ১০% এই ধরনের রোগী। মানে এই ট্রায়াল থেকে ৯০% মলদ্বার ক্যান্সার রোগী বাদ পরেছেন।
৩। রেডিয়েশন কেমোথেরাপি ও সার্জারী র মাধ্যমে এই স্টেজ এ সম্পুর্ন সুস্থ হওয়ার হার ও কিন্তু খুব বেশি। ১০০% না হলেও কাছাকাছি। এমনকি অনেক রোগী কে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি একসাথে দিয়ে তারপর অপারেশন না করলেও অসুখটা সম্পুর্ন সেরে যায়।
৪, মাত্র ৬ থেকে ২৫ মাস এর তথ্য, অন্তত তিনবছর তথ্য না পেলে সুস্থ সত্যিই হয়েছেন কিনা রোগী বলা যায় না। ( যদিও আমরা অন্তত পাঁচ বছর রোগী সুস্থ আছে কিনা দেখে কোন ট্রায়াল এর সাফল্য বিচার করি )
৫. বর্তমানে প্রচলিত রেডিয়েশন কেমোথেরাপি ইমুনোথেরাপি, সার্জারী র মাধ্যমে এমনকি স্টেজ ফোর ক্যান্সার কেও কয়েক বছর সুস্থ রাখা যায়। কাজেই এই থেরাপি টি বেশি কার্যকর কিনা সেটা বলার সময় আসেনি।
এবার দেখি কি কি বিষয় ইন্টারেস্টিং?
১. ১২ জন এর মধ্যে সবাই এর ক্যান্সার আপাতত নেই, এইটে অভিনব। যদিও বারোর বদলে বাইশ বা বত্রিশ বা বারোশো রোগীর ক্ষেত্রে সেটা একইরকম হয় কিনা সেটাই দেখার।
২. এই অসুধ টা যদি কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি র মত একই দক্ষতা য় ও কাজ করে তবুও এটি বেটার কেননা এর সাইড এফেক্ট কম।
এবার দেখা যাক এই যে কাগজে, টি ভি তে এত প্রচার এর কি কুফল? সব মিডিয়াই খবর টা কে এমন উত্তেজক ভাবে পেশ করছে যাতে একটা উত্তেজনা তৈরি হয়। কিন্তু সে উত্তেজনা টা বিজ্ঞানী মহলে বা চিকিৎসক মহলে আপাতত সীমাবদ্ধ থাকা উচিত কেননা বহু রোগী বা রোগী র পরিজন এতে মানসিক ভাবে বিভ্রান্ত হতে পারেন। প্রচলিত যে চিকিৎসা ক্যান্সার কে সারিয়ে তোলে তা গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত হতে পারেন, মুল্যবান সময় নষ্ট করতে পারেন। মানুষ মনে করবেন সব ক্যান্সার ই বোধহয় এই অসুধে সেরে যাবে, কিন্তু এটা যে কেবল মলদ্বার এর ক্যান্সার এর মাত্র ৫% থেকে ১০% রোগী র ওপর পরীক্ষা হয়েছে এটা জানা জরুরি। এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ ক্যান্সার হলে বিকল্প চিকিৎসার চেষ্টা করে মুল্যবান সময় নষ্ট করেন তাই সঠিক তথ্য তাঁদের জানা প্রয়োজন। শেষে বলি ইমুনোথেরাপি নতুন নয়। ক্যান্সার সেল একটা মুখোশ পরে থাকে তাই শরীরে র ইমুনিটি তাকে ধরতে পারে না। ইমুনোথেরাপি এই মুখোশ টার সাথে যুক্ত হয়ে এই মুখোশ টা খুলে দেয় তাই আমাদের শরীর এর ইমুনিটি ক্যান্সার সেল শনাক্ত করে মেরে ফেলে।
ইমুনোথেরাপি অবশ্যই একটা নতুন দিশা এবেছে ক্যান্সার চিকিৎসায়। সেই দিন টার আশায় আমরা সবাই আছি যেদিন একটা বড়ি বা ইঞ্জেকশন এ ক্যান্সার সেরে যাবে, কিন্তু এই ডস্টারলিম্যাব ট্রায়াল এর প্রেক্ষিতে সেই দিনটা এসেছে বলার সুযোগ এখনি পাচ্ছি না।আর হ্যাঁ এই চিকিৎসা র খরচ আপাতত দেড়কোটি টাকা।
ডাঃ সায়ন পাল
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ