What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review দর্শককে একই সময়ে দুটি দিক দেখতে বাধ্য করে ‘রেহানা মরিয়ম নূর (1 Viewer)

ffITQAO.jpg


(৭ জুলাই ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়ে গেল বাংলাদেশ থেকে প্রথম অফিশিয়াল সিলেকশন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর। সেদিনই ডেবোরা ইয়ং-এর রিভিউ প্রকাশ করে হলিউড রিপোর্টার। বাংলা মুভি ডেটাবেজ পাঠকদের জন্য লেখাটি বাংলায় তুলে ধরা হলো।)

eax8JPv.jpg


কেন্দ্রীয় চরিত্রের পূর্ণনাম – রেহানা মরিয়ম নূর-ই চলচ্চিত্রের শিরোনাম। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত মর্মার্থের রেশ রয়ে যায় চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্য অবধি। রেহানা একটি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। বিধবা এই তরুণী অধ্যাপকের প্রথম শ্রেণী পড়ুয়া একটি মেয়ে রয়েছে। শুরুতেই মেডিকেলের এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় রুলারের পেছনে নকল লেখার দায়ে বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে তার নৈতিকতা প্রদর্শন করেন। কিন্তু এটা কেবল ছাত্রীর পক্ষ নিয়ে তার সহকর্মী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রস্তুতি-পর্ব। কুকুর যেমন করে হাড়ের দিকে তেড়ে যায়, তিনিও তেমনভাবে সেই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ওঠে-পড়ে লাগেন।

এটি কাহিনিকার-পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র (প্রথমটি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’), যা কেবল একজন একরোখা নারী মননের বহিঃপ্রকাশই নয়, এটি এমন একজন নারীর প্রতি প্রশংসায় নত হওয়া যে যৌন নিপীড়নের মতো একটি ঘটনায় তার সিদ্ধান্তে অনড় এবং পিছপা হয় না। আর এই কাজটাই আজমেরী হক বাঁধন ঐকান্তিকতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার নাছোড়বান্দা স্বভাবের জন্য তিনি যেমন বীরত্বের স্বাদ পান, তেমনভাবে করুণার পাত্র হন। যার ফলে নারীবাদীরা তাকে সহজে মেনে নেয় না, একইভাবে যৌন নিপীড়নকে যারা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন তাদের জন্যও অস্বস্তিকর।

বাংলাদেশি মেডিকেল কলেজে যৌন নিপীড়ন বহুল প্রচলিত ও অনায়াসেই চোখে পড়ে। যেখানে অধ্যাপক আরেফিন (কাজী সামি হাসান) শিক্ষার্থীদের ভুলের বিরুদ্ধে সহজ পন্থা অবলম্বন করেন এবং হালকা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেন, সেখানে রেহানা তাদের কঠোর শাস্তি দেন। রেহানা অধ্যাপক আরেফিনের অফিস থেকে কান্নারত অবস্থায় বের হওয়া ছাত্রী অ্যানির দিকে তাকান, তখন তার পরনের সাদা ওড়না অন্তরের পবিত্রতার বয়ান করে। তিনি আঁচ করতে পারেন যে ভেতরে খারাপ কিছু হয়েছে এবং তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

snRZBns.jpg


গল্প এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রেহানা অযাচিত হয়ে এই ঘটনায় নাক গলাতে থাকেন। তিনি বলেন, “আমি এই ঘটনার সাক্ষী এবং আমি চুপ থাকতে পারি না।” তিনি অ্যানিকে সেই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের নিকট নালিশ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। অ্যানি তাতে অস্বীকৃতি জানালে রেহানা সিদ্ধান্ত নেন তিনি নিজেই ধর্ষিত হয়েছেন বলে দাবি করবেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সেই অধ্যাপককে দিয়ে দোষ স্বীকার করিয়ে নেওয়া এবং তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোন কলেজ ছাত্রীর সাথে এমন ঘটনা না ঘটে।

এ পর্যন্ত অধিকাংশ দর্শকই রেহানাকে সমর্থন দেবেন, তবে প্রকাশ্যে ফাঁসির ব্যাপারে তার উৎসাহ নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে। তবে এই তরুণীর হৃদয়ের দীর্ঘ পরিবর্তন চলচ্চিত্রের দ্বিতীয়ার্ধ্বে নারীকে অবদমন, তার উদ্বিগ্নতা ও সহিংসতায় রূপ নেয়।

রেহানার জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তার প্রায়ই উপেক্ষিত কন্যা ইমু (আফিয়া জাহিন জাইমা)। ইমু ইতিমধ্যে তার একগুঁয়েমি দেখিয়েছে, যা সে তার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে। তাদের এই একগুঁয়েমির দ্বৈরথ এক হৃদয় বিদারক জয়হীন প্রতিযোগিতা। এটা খুবই স্পষ্ট যে রেহানা তার সন্তানের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায় এবং তাদের মনস্তত্ত্বের জন্য দুজনকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

smZbtGB.jpg


বলা যায়, চলচ্চিত্রের মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন নিয়ে কোন নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নেই, যার ফলে দর্শক একই সময়ে দুই দিক থেকে দেখতে বাধ্য করে। যেমন; রেহানার ভাই যখন ইমুকে রেহানার কাছে রেখে আসতে যায়, তখন সে জানে যে ইমু সেখানে গেলে রেহানা তার প্রত্যাশা পূরণ করবে না, তখন সে প্রশ্ন করে, “তুমি কি এটা তার জন্য করছ, নাকি নিজের জন্য?”

চলচ্চিত্রটি নাটকীয়তায় মোড় নিতে থাকলে মনে হয় সাদ বাঁধনকে পরিচালনা করা ও পথ দেখানোর ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তি। সাদ ও চিত্রগ্রাহক তুহিন তমিজুল কারিগরি দিক থেকে দৃঢ় অবস্থান নেন, বিশেষ করে প্রতিটি দৃশ্যে গাঢ়, ঘোলাটে নীল রঙের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে, যেন নিরুত্তাপ ও নিরানন্দ এই রঙ দৃশ্যগুলোর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। রেহানার একমুখী মন ও আবিষ্টতাকে ব্যক্ত করতে কেবল চেহারাকেই ফোকাস করা হয়েছে, এবং পেছনের দৃশ্যাবলি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। ক্যামেরা কাজ খুবই সহজাত এবং কখনোই পুরোপুরি স্থির রাখা হয়নি।

পরিশেষে, রেহানা মরিয়ম নূর একটি দৃঢ়ভাবে বোনা মনস্তাত্ত্বিক জীবনবর্ণনা যা বিতর্কের সৃষ্টি করতে বাধ্য করবে।

পূর্ণ কলাকুশলী

প্রযোজনা কোম্পানি: পটোকল, মেট্রো ভিডিও

অভিনয়শিল্পী: আজমেরী হক বাঁধন, আফিয়া জাহিন জাইমা, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, সাবেরি আলম

পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সম্পাদক: আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ

প্রযোজক: জেরেমি চুয়া

সহ-প্রযোজক: রাজিব মহাজন, সাইদুল হক খন্দকার

নির্বাহী প্রযোজক: এহসানুল হক বাবু

চিত্রগ্রাহক: তুহিন তমিজুল

ব্যবস্থাপক: আলি আফজাল উজ্জ্বল

অভিনয়শিল্পী নির্বাচক: ইয়াছির আল হক

বিশ্ব পরিবেশনা: ফিল্মস বুটিক

দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট

* লিখেছেন: Mahbubul Hoq Wakim
 

Users who are viewing this thread

Back
Top