দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকালে খাবারের তৃপ্তিটাই নষ্ট হয় না, বিরক্তিও লাগে। সুস্বাদু খাবার, বিশেষ করে মাংস বা আঁশজাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁতের ফাঁকে কিছু অংশ ঢুকলে অস্বস্তি লাগে, খোঁচাখুঁচি করাও চরম বিব্রতকর।
দাঁতের কন্ট্যাক্ট পয়েন্ট ঠিক থাকলে খাবার ফাঁকে সহসা আটকায় না। কিন্তু ডেন্টাল ক্যারিজ, দাঁত ও চোয়ালের হাড়ের অসামঞ্জস্য, দাঁত ফাঁকা, ক্রটিপূর্ণ কৃত্রিম দাঁত, দীর্ঘ সময় প্রতিস্থাপিত ক্যাপ, গঠনগত অস্বাভাবিকতাসহ বিভিন্ন কারণে এ কেন্দ্র নষ্ট হতে পারে। তখন সহজেই খাবার ভেতরে ঢুকে যায়।
খাবার জমে প্রথম দিকটা তেমন বড় ধরনের কষ্ট দেয় না। কিন্তু পরে জমাকৃত খাবারের সঙ্গে অসংখ্য জীবাণু, খাদ্যকণা মিশে দাঁতের ফাঁকে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন: মুখে দুর্গন্ধ, মাড়ি ফুলে যাওয়া, রক্ত পড়া, মাড়ি ও হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, দাঁতের শিকড় উন্মুক্ত হয়ে শিরশির অনুভূতি, ব্যথা, খাবারের স্বাদ নষ্ট, দাঁতের ফাঁকে পকেট তৈরি, দাঁতের মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত, দাঁত নড়া, দাঁত পড়ে যাওয়া থেকে নানা জটিলতার তৈরি হয়। দুই দাঁতের ফাঁকে এটা হয় বলে প্রথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় না। মজ্জা আক্রান্ত হলে ব্যথা হওয়ার পর বোঝা যায়।
করণীয়
যাদের দাঁতের ফাঁকে খাবার ঢোকার প্রবণতা আছে, তাদের সাধারণ পদ্ধতিতে টুথব্রাশ করলে সেই খাবার বের হবে না। অনেকে আবার খাবার বের করতে বেশি জোরে ব্রাশ করে দাঁতের প্রতিরক্ষা অ্যানামেল নষ্ট করে। বেশির ভাগ মানুষ প্রচলিত কাঠের টুথপিক, ধাতব কাঠি অনেকে আবার সেফটিপিন, ওষুধের স্ট্রিপ বা হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন। এ থেকে মাড়ির মধ্যে প্রদাহ তৈরি হয়, ফাঁকা বড় হতে থাকে, দাঁতের ধারক কলা নষ্ট হয়। দাঁতের ফাঁকের খাবার নিরাপদে বের করার মাধ্যম হচ্ছে ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, ইনহেলার ব্যবহারকারী, কিডনি, লিভার বা হার্টের রোগী, শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথ ওয়াশ বা কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করতে হবে।
ফাঁকা বড় হয়ে গেলে ফিলিং চিকিৎসাপদ্ধতিতে এটা স্বাভাবিক করা যেতে পারে। এ ফিলিংকে ক্লাস টু ফিলিং বলা হয়। সাধারণ ফিলিংয়ের চেয়ে একটু সংবেদনশীল। ভালো চিকিৎসা উপাদান বা অভিজ্ঞ চিকিৎসক না হলে ফিলিংটি নষ্ট হতে পারে সহজেই। একাধিক দাঁত এলোমেলো থাকলে অর্থডোন্টিক চিকিৎসার প্রয়োজন পড়তে পারে, যাতে করে দাঁত সুন্দর ও সুসজ্জিত হয়। ক্যাপের স্থানে এমনটা হলে ক্যাপ পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে।
[FA]pen[/FA] লেখক: ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, দন্ত বিশেষজ্ঞ