দাঁত আমাদের মুখের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কেবল সৌন্দর্যের বিচারেই নয়, বরং সাধারণ স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে সুস্থ দাঁত, সবল মাড়ি অত্যাবশ্যক। বিভিন্নভাবে আমাদের দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন ১. দন্তক্ষয় বা ক্যারিজ, ২. আঘাত ইত্যাদি।
এখন দন্তক্ষয় বা ক্যারিজ অনেক দিন যাবৎ চিকিৎসাবিহীন থাকলে যেসব সমস্যা তৈরি হতে পারে, তা হলো—
- পালপাইটিস বা দাঁতের নার্ভের প্রদাহ
- নেকরোটিক পালপাইটিস বা পুঁজের সমস্যা
- অস্থিতিশীল কাঠামোর জন্য দাঁত ভেঙে যাওয়া।
মোট কথা, যদি দাঁতে ক্ষয় থাকে এবং তা ঠিকমতো চিকিৎসা করানো না হয়, তবে শেষ পর্যন্ত দাঁত ভেঙে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়ত, আঘাতের কারণে দাঁত ভেঙে যাওয়া। এখন যে কারণেই দাঁত ভাঙুক না কেন, যদি আঘাতের কারণে দাঁতের সঙ্গে চোয়ালের হাড় না ভাঙে, তবে চিকিৎসাব্যবস্থা মোটামুটি একইভাবে করা হয়ে থাকে।
দাঁত ভাঙার চিকিৎসার জন্য প্রথমে যেকোনো ডেন্টাল সার্জন পুরো মুখের একটি এক্স-রে করতে দেন, যা সাধারণত ওপিজি নামে পরিচিত। এই এক্স-রেতে মোটামুটিভাবে দাঁতের সব কাঠামো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। এই এক্স-রে দেখেই সাধারণত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে যে দাঁত ফেলে দিতে হবে, নাকি রুট ক্যানেল করে রেখে দেওয়া যাবে।
যদি দাঁতের কাঠামো খুব বেশি নষ্ট বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ফেলে দেওয়াটাই যুক্তিসংগত। যদি দাঁতের কাঠামো স্থিতিশীল থাকে এবং দাঁতের গোড়ায় কোনো রকম ইনফেকশন না থাকে, তবে রুট ক্যানেল করে পরবর্তী সময়ে দাঁতের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য ফাইবার পোস্ট, পোস্টকোর বিল্ড–আপ করে ক্রাউনিং বা মুকুট পরিয়ে দাঁতের আগের আকৃতি ফেরানো যাবে। এই দাঁত প্রাকৃতিক দাঁতের মতো অতটা শক্তিশালী না হলেও ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত প্রাকৃতিক দাঁতের মতোই কাজ করে থাকে।
আর যদি রুট ক্যানেল করে দাঁত রাখা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে দাঁত ফেলে মোটামুটি তিন মাসের মতো অপেক্ষা করতে হয়। এরপর খালি জায়গায় পাশের দুই দাঁত রুট ক্যানেল করে ফ্রিজ করা যেতে পারে। আর যদি কেটে ফ্রিজ করতে না চান, সে ক্ষেত্রে খোলা-লাগানো দাঁত বা আরপিডি; অথবা সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা ইমপ্ল্যান্ট করা যেতে পারে। আঘাতজনিত দাঁত ভাঙা আমরা প্রতিহত করতে না পারলেও একটু সচেতন হলেই ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়ের কারণে দাঁত ভাঙা প্রতিহত করা সম্ভব। বছরে অন্তত দুবার ডেন্টিস্টের কাছে দাঁতের চেকআপ করানোর পাশাপাশি আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে দাঁত দিয়ে আমরা খাওয়াদাওয়া করি, যার ওপর আমাদের সৌন্দর্য ও সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই দাঁতের যাতে কোনো অবস্থায়ই অবহেলা করা যাবে না। কেবল সকালে নাশতার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে—এ দুই সময়ে দাঁত ব্রাশ করার মাধ্যমেই ৮০ শতাংশের ওপর দাঁতের সমস্যা প্রতিহত করা সম্ভব।
* সজীব মিয়া | ডা. নির্মল শর্মা, ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন, ল্যাবএইড ডেন্টাল ক্লিনিক, ঢাকা