সেন্টের ‘সি’ থেকে এসেছে এর প্রতীক
বাংলাদেশে এক শ পয়সায় যেমন এক টাকা হয়, একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এক শ সেন্টে হয় এক ডলার। এটা নিশ্চয়ই সবার জানা। সেন্টের প্রতীকের দিকে তাকালে দেখা যায়, ছোট হাতের ইংরেজি ‘সি’ বর্ণটির মাঝবরাবর আড়াআড়িভাবে একটি রেখা আছে। যেমনটা আছে ডলারের প্রতীকে ইংরেজি বড় হাতের ‘এস’ বর্ণের মাঝবরাবর উল্লম্বভাবে। সেন্ট শব্দটির প্রথম বর্ণ ‘সি’। এই ‘সি’ দিয়েই তৈরি হয়েছে সেন্টের প্রতীক। তাহলে ডলারের প্রতীকে শব্দটির প্রথম বর্ণ ‘ডি’ দিয়ে হলো না কেন?
ডলারের প্রতীক নিয়ে আছে একাধিক গল্প
ডলারের প্রতীক এমন কেন হলো, তা নিয়ে অনেক জনশ্রুতি আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত উদাহরণটাই খেয়াল করুন। যুক্তরাষ্ট্র, অর্থাৎ ইংরেজিতে যেটি ‘ইউনাইটেড স্টেটস’—সংক্ষেপে ইউএস। এই সংক্ষিপ্ত রূপের দুটি বর্ণ হলো ‘ইউ’ ও ‘এস’। এই দুই বর্ণ দিয়েই নাকি শুরুর দিকে ডলারের প্রতীক লেখা হয়েছিল। তখন নাকি ‘এস’ বর্ণের ওপর ‘ইউ’ বসিয়ে দেওয়া হতো। কালের বিবর্তনে ‘ইউ’-এর নিচের অংশ অদৃশ্য হয়ে যায়। এতে ‘এস’ বর্ণের ওপর রয়ে যায় ‘ইউ’-এর অবশিষ্টাংশ, যা দেখতে দুটি উল্লম্ব রেখার মতো। পরবর্তী সময়ে সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য সেখান থেকে নাকি একটি রেখা বাদ দেওয়া হয়। আদতে এই ব্যাখ্যা সত্য নয়। কারণ, মার্কিন ডলার চালু হওয়ার আগে অন্য এক মুদ্রার ক্ষেত্রে ডলারের প্রতীক ব্যবহৃত হতো।
ওপরের ব্যাখ্যাটি কিন্তু আমেরিকা থেকে আসেনি, বরং তা চালু হয়েছিল ইউরোপে। ষোড়শ শতাব্দীতে স্পেনের বেশ কজন অভিযাত্রী দক্ষিণ আমেরিকার জমিতে বিপুল পরিমাণে রুপা খুঁজে পান। দক্ষিণ আমেরিকার ওই অংশগুলো পরবর্তী সময়ে মেক্সিকো, পেরু ও বলিভিয়া দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যাহোক, রুপার আধিক্যের কারণে স্পেন তখন অধিক মাত্রায় রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন করে, যাকে তাদের ভাষায় ‘পেসো দে ওচো’ বা সংক্ষেপে ‘পেসো’ বলা হতো। যার অর্থ আট খণ্ড। পেসো চালু করার সময় ইউরোপে রুপার সরবরাহ কমতে শুরু করে। ফলে এই স্পেনীয় পেসো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রাথমিক মুদ্রায় পরিণত হয়।
‘ইয়াআকিমস্থেলার’কে সংক্ষেপে ডাকা হয় ‘থেলার’, উইকিপিডিয়া
স্পেনীয় পেসোর আগে আরেকটি মুদ্রার বেশ সুখ্যাতি ছিল, যার নাম ‘ইয়াআকিমস্থেলার’। সংক্ষেপে একে ডাকা হয় ‘থেলার’ নামে। আর এখান থেকেই আসে ‘ডলার’ শব্দটি। যেহেতু ইয়াআকিমস্থেলারের জায়গা দখল করে বসে পেসো, তাই পেসোর ডাকনাম হয়ে যায় ‘স্প্যানিশ ডলার’।
মার্কিন উপনিবেশগুলো বিকশিত হতে শুরু করলে স্পেনীয় আমেরিকান ও ইংরেজ আমেরিকানদের মধ্যে বাণিজ্য অবাধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা তখন লেনদেনের হিসাব সহজভাবে লেখার জন্য পেসো শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করতে শুরু করে। এ জন্য ‘পি’ বর্ণের ওপরের দিকে ‘এস’ বর্ণ বসিয়ে একটি প্রতীক তৈরি করা হয়। প্রতীকটি ব্যবহার করতে করতে ‘পি’ ও ‘এস’ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় একসময়। ফলে ‘এস’ বর্ণের সঙ্গে ‘পি’ বর্ণের শুধু উল্লম্ব রেখাটি টিকে থাকে। বুঝতেই পারছেন, যা দেখতে বর্তমান ডলার প্রতীকের মতোই।
ডলার প্রতীকের উৎপত্তি নিয়ে দুই মতবাদ, প্রথমটাই সঠিক বলে ধরা হয়, উইকিপিডিয়া
ডলারের প্রতীকটি প্রথমবারের মতো কোনো নথিতে লিপিবদ্ধ হয় ১৭৭০ সালে। তখনো কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নাম যুক্তরাষ্ট্র হয়নি! অর্থাৎ এটাই প্রমাণিত হয় যে ডলার প্রতীক ইউনাইটেড স্টেটসের সংক্ষিপ্ত রূপ ইউএস থেকে আসেনি। আর প্রতীকটি স্পেনীয় মুদ্রার জন্য ব্যবহৃত হলেও এর ব্যবহার শুরু করেছিল মার্কিনরাই। তা ছাড়া এক ডলারের মান যেহেতু এক পেসোর সমান, তাই পরবর্তী সময়ে তা মার্কিন ডলারের প্রতীক হয়ে যায় সহজেই।
* সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট