What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ডা. বিধান রায় – ভারতবর্ষের ইতিহাসের খ্যাতিমান এক চিকিৎসক (1 Viewer)

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,428
Messages
16,363
Credits
1,541,694
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
oPIL84I.jpg


ভারতবর্ষের ইতিহাসের সবচেয়ে খ্যাতিমান চিকিৎসক ডা. বিধান চন্দ্র রায় এর সম্মানে সারা ভারতে প্রতিবছর ১ জুলাই “চিকিৎসক দিবস” উদযাপন করা হয়। কিন্তু এই খ্যাতনামা চিকিৎসকের পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিলো রোগী দেখার পাশাপাশি কলকাতা শহরে পার্ট টাইম ট্যাক্সি চালানোর মধ্য দিয়ে। সে সময় হঠাৎ এক রমণীর প্রেমে পড়লেন তরুণ এই চিকিৎসক। মেয়ের বাবা ছিলেন তখনকার সময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক ডা. নীলরতন সরকার। বিধান রায়ের উপার্জনের চেয়ে তাঁর মেয়ের মাসিক খরচ অনেক বেশি, এ অজুহাতে তিনি দরিদ্র বিধানকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হয়ে বিধান রায় মাত্র ১২০০ টাকা সম্বল করে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। লন্ডনের জগদ্বিখ্যাত রয়্যাল কলেজে একযোগে এমআরসিপি ও এফআরসিএস পড়ার আবেদন করেন তিনি। টানা ৩০ বার আবেদন নামঞ্জুরের পর বিধান রায়ের জেদের কাছে রয়্যাল কলেজ হার মানতে বাধ্য হয়। আর তিনিও সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ২ বছরে রয়্যাল কলেজ থেকে একযোগে এমআরসিপি ও এফআরসিএস ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৬ বছর! তারপর কলকাতা শহরে মাত্র ২ টাকা ভিজিটে রোগী দেখা শুরু করেন।

F5s2Q0v.jpg


Source: Famous People

চিকিৎসক হিসেবে তাঁর খ্যাতি অল্প সময়ে এতোই বিস্তার লাভ করে যে, পেটের দায়ে কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সি চালানো সেই তরুণ বিধান রায় ডাক্তারি পাশ করার মাত্র ৮ বছরের মাথায় সেই শহরেই প্রাসাদোপম অট্টালিকা ও একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক বনে যান। কিন্তু তাঁর জয়রথ সেখানেই থেমে থাকে নি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্নেহধন্য হওয়ার সুবাদে ভারতের স্বাধিকার আদায়ের রাজনীতিতে যোগ দেন। বৃটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে জেলেও যেতে হয়েছে তাঁকে। ত্রিশের দশকে ব্রিটিশশাসিত কলকাতা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১৯৪২ সাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী উত্তরপ্রদেশের (তৎকালীন যুক্তপ্রদেশ) মুখ্যমন্ত্রী পদ গ্রহণের জন্য বিধান রায়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে রাজি হন নি। অবশেষে ১৯৪৮ সালে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ফলে চিকিৎসক হিসেবে বিধান রায়ের দীর্ঘদিনের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে। তখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ডাক্তারি পেশা থেকেই প্রতিমাসে তাঁর আয় হতো তৎকালীন ৪২ হাজার টাকা; বর্তমানে যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা!!! কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রয়াত ডা. নীলরতন সরকার তাঁর কন্যার পাণিপ্রার্থী দরিদ্র বিধান রায়ের এই সুদিন দেখে যেতে পারেন নি। এদিকে ডা. বিধান রায়ও চিরকুমার হিসেবেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। কখনো বিয়ে করেন নি কেন, এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য তিনি কাউকে দিয়ে যান নি, এমনকি তাঁর জীবনীকারের কাছেও না। যা-ই হোক, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি নগর পুনর্গঠনে জোর দেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কলকাতার উপকন্ঠে প্রতিষ্ঠিত হয় পাঁচটি নতুন শহর। দূর্গাপুর, সল্টলেক, কল্যাণী, অশোকনগর-কল্যাণগড় ও হাবরা। ১৯৪৮ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টানা ১৪ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এ সুদীর্ঘ সময়ে তিনি নবগঠিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। এ কারণে তাঁকে “পশ্চিমবঙ্গের রূপকার” বলা হয়। ১৯৬১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান “ভারতরত্ন” পদকে ভূষিত হন। ১৯৬২ সালের ১ জুলাই নিজের ৮০তম জন্মদিনে ক্ষণজন্মা এই চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর ডা. বিধান রায়ের সম্মানে তাঁরই নির্মিত উপনগরী সল্টলেকের নামকরণ করা হয় “বিধাননগর”। তবে নিজের প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি শহরের মধ্যে “কল্যাণী” তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিলো। ১৯৬১ সালে তাঁর তত্বাবধানে সেখানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এছাড়াও মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিমানবন্দর ও আরো অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে নবগঠিত কল্যাণীকে কলকাতা শহরের সমউচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তাঁর। কিন্তু অমোঘ মৃত্যু তাঁকে সেই সময় দেয় নি। অবশ্য ডা. বিধান রায়ের সম্মানে ২০১৪ সালে তাঁরই প্রিয় কল্যাণীতে অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স(AIIMS) স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবার সম্ভাব্য কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানে ২০২০ সাল থেকে এমবিবিএস পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কল্যাণী শহরকে ঘিরে ডা. বিধান রায়ের এতো অবসেশনের কারণ আজো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। কথিত আছে, ডা. নীলরতন সরকারের মেয়ের নাম ছিলো কল্যাণী। তরুণ চিকিৎসক বিধান রায় একদা যাকে ভালোবেসে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, পরবর্তীকালে নিজের কীর্তির মধ্যে তাকে অমর করে রেখে গেছেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top