‘অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে,
গিরি-মল্লিকা দোলে কুন্তলে কর্ণে,’
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘ঝর্ণা’ কবিতায় ‘স্বপ্নের সখী’ ঝরনার প্রতি কবির অনুরাগসিক্ত কাব্য সাহিত্যপ্রেমীর চোখে অপূর্ব, সেই একই রূপময় কুন্তল বা কেশরাজি বাঙালি নারীরও চাওয়া। চুল—তা কালের বিবর্তনে, ফ্যাশনের হালচালে ছোট হোক কি বড় হোক, হয় যেন তা প্রাণবন্ত, ঘন, নিবিড়। পরিচিত-অপরিচিত বেশ অনেকের কাছেই শোনা গেছে, করোনা সংক্রমণের পর চুল পড়ছে অতিরিক্ত। দেশের বাইরেও এমন খবর পাওয়া গেছে।
ভাইরাসজনিত জটিলতায় চুল পড়ছে, নাকি মহামারিকালে মানসিক চাপ এর পেছনে দায়ী, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করার জন্য এ লেখা নয়। বরং সহজসাধ্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে চুল পড়ার সমস্যার সমাধান নিয়ে নকশার এ আয়োজন। হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী জানালেন দারুণ সব উপায়।
শ্যাম্পু-কন্ডিশনারবৃত্তান্ত
- মৃদু প্রকৃতির শ্যাম্পু কিংবা প্রাকৃতিক শ্যাম্পু বেছে নেওয়া ভালো। আর্দ্রতা ধরে রাখে, এমন শ্যাম্পুই ভালো। আর বাজার থেকে কেনা শ্যাম্পু সরাসরি ব্যবহার না করে ১ টেবিল চামচ শ্যাম্পু, ২ চা-চামচ লেবুর রস ও ১ চা-চামচ পানি মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই শ্যাম্পু করে ফেলুন।
- ঘরে তৈরি শ্যাম্পু ব্যবহার করলে এত সব মেশানোর হ্যাপা নেই। গরম পানিতে ৪-৬টি রিঠা ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সকালবেলায় রিঠা ধোয়া পানিটাই কিন্তু আপনার শ্যাম্পু। চাইলে এটিও প্রস্তুত করে দিন সাতেকের জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন কাচের বয়ামে।
- কন্ডিশনার ব্যবহারে চুল পড়া বাড়তে পারে। কন্ডিশনার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো।
- সপ্তাহে এক দিন নিমপাতা জ্বাল দেওয়া পানি কাজে লাগাতে পারেন শ্যাম্পু করার পর শেষবার পানি দিয়ে চুল ধোয়ার পরিবর্তে। এর জন্য নিমপাতা নিন ৪ কাপ, সঙ্গে নিন ২ লিটার পানি। জ্বাল করতে করতে পানির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক হয়ে এলে (রংটা ঘন সবুজ হবে) এই পানি চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। শ্যাম্পু শেষে চুল ধোয়ার সময় শেষবার যে পানিটুকু দিয়ে চুল ধোয়া হয় (ফিনিশিং ওয়াটার), সেইটুকুর পরিবর্তে এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নতুন করে পানি দিয়ে চুল ধোয়ার আর দরকার হবে না।
- পুষ্টিকর খাবার চাই সুস্থ চুলের জন্য। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং নানা ধরনের খনিজ উপাদান রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অহরহ ভিটামিনজাতীয় ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়।
- পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই। চাইলে ডিটক্স পানিও খেতে পারেন।
- মানসিক চাপ দূরে সরিয়ে রেখে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার, প্রতিদিন রাতে।
- নিয়মিত চুল আঁচড়াবেন অবশ্যই। আঁচড়ালেই চুল পড়ে, এমনটা ভেবে আঁচড়ানো কমিয়ে দেওয়া যাবে না একেবারেই। চুল আঁচড়ানোর জন্য মোটা দাঁতের চিরুনি বেছে নিন।
- প্রতিদিন ঘুমের আগে মাথার পেছন থেকে সামনের দিকে চিরুনি চালিয়ে চুল আঁচড়ান। এরপর আবার সামনে থেকে ও পেছন থেকে আঁচড়ান।
- প্রতিদিন গোসলের আগে শুকনা হাতে আলতোভাবে মাথার ত্বক নাড়িয়ে নাড়িয়ে মালিশ করুন। তবে বৃত্তাকার গতিতে আঙুল ঘোরাবেন না, কিংবা চাপ প্রয়োগ করে মালিশ করবেন না।