What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চিতাবাঘ কেন শিকার গাছে ঝুলিয়ে খায়? (3 Viewers)

ছোটভাই

Super Moderator
Staff member
Super Mod
Joined
Mar 4, 2018
Threads
775
Messages
51,102
Credits
371,053
Sunflower
T-Shirt
Sari
Sari
Thermometer
Tomato
136.jpg
মনে করুন, তিন বন্ধু করিম, রহিম এবং মফিজ একসাথে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। তারা প্রত্যেকেই কম বেশি উপার্জন করেন। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী হচ্ছেন করিম, অপর দুজনের তুলনায় উপার্জনও করে অধিক। তবে তিনি তার উপার্জনের একটি বড় অংশ নিজে ভোগ করতে পারেন না। কেন? অনেক ভাবার পর করিম তার উপার্জনের সমস্ত টাকা বাসার উঁচু আলমারির উপর রাখতে শুরু করলেন। তিনি এই কাজ করলেন রহিমের সামনেই তবে মফিজের অগোচরে। কারণ রহিম খাটো হওয়ায় আলমারির উপরে নাগাল পাবে না। তাই তিনি জানলেও সমস্যা নেই। কিন্তু মফিজ লম্বা হওয়ায় তাকে জানানো যাবে না।
 
হঠাৎ করেই করিমকে টাকাপয়সা আলমারির উপরে রাখতে দেখে রহিম যথারীতি কারণ জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে করিম বললেন, “তুমি কি ভেবেছো বন্ধু, আমার উপার্জিত অর্থ তোমরা লুকিয়ে লুকিয়ে আত্মসাৎ করবে আর তা আমি জানব না?”

Leop_Billy-680x544.jpg

আফ্রিকান চিতা
এ উপমাটি চিতাবাঘের জন্যই। তবে এর মর্ম বুঝতে হলে আপনাকে জঙ্গলে যেতে হবে। তিন বন্ধুর বাসাটিকে একটি জঙ্গল মনে করুন, যেখানে সবরকমের পশুপাখিই আছে। করিমকে মনে করুন একটি চিতা, রহিমকে হায়েনা এবং মফিজকে সিংহ। গল্পের মতোই চিতাবাঘ তার উপার্জন তথা শিকার উঁচু স্থানে তুলে রাখতে ভালোবাসে, হায়েনা আর সিংহের হাত থেকে বাঁচাতে। তবে রহস্য বাকি আছে আরেকটু। উঁচুতে তুলে রেখেও তার শেষ রক্ষা হয় না যখন তার স্বপ্রজাতির বিপরীত লিঙ্গের আগমন ঘটে। হ্যাঁ, নিজের শিকারকে উঁচু স্থানে, বিশেষ করে গাছে উঠিয়ে রাখতে ভালোবাসে স্ত্রী চিতাবাঘ। আর পুরুষ ভালোবাসে স্ত্রী চিতার শিকার পুনরায় শিকার করতে।
২০১৩ সালে মার্কিন গবেষক ড. গাই বাম দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল পার্কের ‘সাবি স্যান্ড গেম রিজার্ভ’ নামক স্থানে ভ্রমণে যান। এটি আবার আফ্রিকার বিগ ফাইভ-এর অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। বিগ ফাইভ বলতে সিংহ, চিতা, জলহস্তি, হাতি এবং আফ্রিকান বুনো মোষকে বোঝানো হয় যেগুলো শিকার করা বেশ কষ্টসাধ্য।
 
তিনি সেখানে অপ্রত্যাশিত এক দৃশ্যের মুখোমুখি হলেন। একটি গাছের প্রায় ৪/৫ মিটার উঁচুতে ঝুলে আছে এক মৃত জিরাফ। জিরাফটির ঝুলে থাকার ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছিল এটি আপনা আপনি গাছে ওঠেনি, কেউ এটিকে ঝুলিয়ে রেখেছে। কিন্তু আধখাওয়া জিরাফকে গাছে ঝোলাবে কে? উত্তরটি পেলেন রিজার্ভের একজন গাইডের কাছ থেকে, যার কাছে এই দৃশ্য মোটামুটি পরিচিত। উত্তর চিতাবাঘ।
137.jpg

সাবি স্যান্ডস গেম রিজার্ভ
আধখাওয়া জিরাফটি দেখে অনুমান করা যায়, সেটির ওজন ৩০০ কেজি বা এর কাছাকাছি হবে কমপক্ষে, যা একটি চিতার ওজনের ৪/৫ গুণ। তবে আফ্রিকান চিতার শক্তিমত্তা নিয়ে যথেষ্ট জানাশোনা থাকার কারণে এ ব্যাপারে অবাক হননি বাম।
তার কাছে চিন্তার বিষয় ছিল শিকারকে গাছে ঝোলানোটাই। এ বিষয়টিকে নিজের গবেষণার বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেললেন বাম। বাঘ রক্ষায় কাজ করে যাওয়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্যানথেরার অধীনে বাম ও আরো তিনজন মিলে শুরু করলেন গবেষণাটি। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য অবশ্য ছিল পশুদের ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম বা পরাশ্রয়িতা। দীর্ঘ ৪ বছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় গবেষণাটির চূড়ান্ত ফলাফল।
 
গবেষণায় দেখা যায় যে, চিতাবাঘ মূলত এর শিকারকে চুরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতেই গাছে বা সুবিধাজনক কোনো উঁচু স্থানে তুলে রাখে। এক্ষেত্রে চিতার শিকার চুরি করে মূলত সিংহ আর হায়েনা। শুধু চুরিই নয়, কখনো বা ডাকাতের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয় এই দুই প্রাণী। আর ছিনিয়ে নিয়ে যায় চিতার কষ্টার্জিত শিকার। ছিনিয়ে নেবার কাজটি অনেকসময় পুরুষ চিতাও করে থাকে। মূলত, গাছে শিকার তুলে রাখাটা স্ত্রী চিতার মধ্যেই দেখা যায় বেশি। পুরুষ চিতা এ কাজ কলেভদ্রে করে থাকে। ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত মোট ১০৪টি চিতার ২,০৩২টি পৃথক পৃথক শিকারের উপর পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গবেষকগণ।
138.jpg

শিকার কামড়ে ধরে গাছে চড়ছে একটি চিতা
গবেষণায় প্রথমেই উঠে এসেছে চিতার শিকার হারানোর প্রবণতা। দেখা গেছে যে, চিতাবাঘ তার প্রতি ৫টি শিকারের মাঝে ১টি হয় সিংহ নয় হায়েনার কাছে হারাচ্ছে। কিন্তু শিকারকে গাছে ঝোলালেই এ সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে শতকরা ৬৭ ভাগ! তবে সব শিকারকে তো আর গাছে তোলা যায় না। একটি চিতা এর ওজনের অর্ধেক থেকে দেড়গুণ ওজনের শিকারকে গাছে তোলে। এর কম বা বেশি ওজনের শিকারগুলোকে মাটিতে সাবাড় করে। আর এর চেয়ে অধিক ওজনের শিকার যতদূর সম্ভব খেয়ে ফেলে যায়। যদিও গবেষক বামের অভিজ্ঞতা বলছে, ৩০০ কেজি ওজনের জিরাফও গাছে ঝুলিয়েছে চিতা।
 
যা-ই হোক, শিকারকে গাছে ঝুলিয়ে রাখার অদ্ভুত ব্যাপারটি যথেষ্টই যুক্তসঙ্গত হয়ে আসে গবেষণার ফলাফল জানবার পর। গবেষণায় একটি মজার ব্যাপার পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, হায়েনাদের একটি বিরাট অংশই চিতাদেরকে আড়াল থেকে অনুসরণ করে! কারণ কষ্ট করে শিকার ধরার চেয়ে একটি চিতার উপর লক্ষ্য রাখলে মুফতে খাবার পাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। চিতা প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী শিকার করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট প্রাণীগুলোকে শিকার করেই ভুরিভোজ সম্পন্ন করে। কিন্তু যেগুলো আকারে বড় হয়, সেগুলোকে ১-৩ দিনে খায়। তবে বিপত্তি ঘটে এই বড় শিকারের ক্ষেত্রেই। প্রথমবার খেয়ে রেখে যাবার পরই কোনো হায়েনা বা সিংহ সেটি নিয়ে কেটে পড়ে!
Panthera_pardus_-Ngala_Game_Reserve_Limpopo_South_Africa_-with_kill_in_tree-8-680x452.jpg

শিকার গাছের উঁচু ডালে তুলে রেখে দিয়েছে একটি চিতা
এক্ষেত্রে সিংহকে অনেকটাই সংযত আচরণ করতে দেখা গেছে গবেষণাটিতে। সাধারণত চিতা আশেপাশে না থাকলে সিংহ শিকারটি নিয়ে যায়। কিন্তু হায়েনার আচরণ বেশ হিংস্র। দীর্ঘক্ষণ আড়ালে ওঁত পেতে থাকার পরও যখন দেখা যায় চিতার অবস্থান পরিবর্তন হবার কোনো লক্ষণ নেই, তখন প্রকাশ্যে এসে নিজের অবস্থান জানান দেয় হায়েনা এবং কেড়ে নেয় চিতার শিকারটি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্মুখ যুদ্ধে হায়েনার কাছে পরাজয় বরণ করে শিকার রেখেই পালায় চিতাটি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণও করে। হায়েনাটি নেহায়েত ছোট এবং দুর্বল হলে তবেই যুদ্ধে জয় লাভ করে চিতা।
Capture-12-680x379.jpg

চিতাটির শিকারে ভাগ বসাতে এসেছে একটি হায়েনা, চলছে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব
শিকার নিয়ে মাঝে মাঝে ১০ মিটার উঁচু গাছেও উঠে যায় চিতাবাঘগুলো। তবে মানবসমাজের মতো বাঘেদের সমাজেও আছে নারী পুরুষ বৈষম্য। একটি পুরুষ চিতাবাঘ যখন তার শিকারকে গাছের কোনো শাখায় নিয়ে ঝোলায়, তখন সিংহ ছাড়া তার সে শিকার চুরি করতে আর কেউ আসে না। তবে নারী চিতার শিকারকে পুরুষ চিতা হরহামেশাই কেড়ে নেয়। শারীরিকভাবে সবল হওয়ায় পেশীশক্তি প্রয়োগ করেও এই ছিনতাই রুখতে পারে না নারী চিতাবাঘ। দেখা গেছে, একটি নারী চিতা শিকার গাছে তোলার পর শতকরা ১০ ভাগ শিকার সিংহের কাছে হারায়। আর ৪০ ভাগ হারায় স্বপ্রজাতির কাছে, অর্থাৎ পুরুষ চিতার কাছে!
 
শিকারকে গাছে তুলে ঝুলিয়ে রাখা শুধু নিজ স্বার্থ রক্ষার্থেই করে না একটি চিতা। বরং নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক শাবকগুলোর খাবারের সরবরাহ মজুদ রাখাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য হয়। অনেকসময় একনাগাড়ে এক সপ্তাহও কোনো শিকার মেলে না। সেক্ষেত্রে গাছে ঝুলিয়ে রাখা শিকারটি তার শাবকগুলোকে বাঁচানোর শেষ ভরসা। একটি নারী চিতা তার যত শিকার হারাবে, সন্তান প্রতিপালনের সক্ষমতা তার তত কমে যাবে। অন্যদিকে, গাছে ঝুলিয়ে রাখলে মৃত প্রাণীটি দ্রুত পচে যায় না। তাই তা একাধিক দিন আহারের সংস্থান করে সেটি। কিন্তু গাছে ঝোলানোর প্রধান কারণ অবশ্য শিকারকে চুরির হাত থেকে রক্ষা করাই।
yyNwyEk-680x330.jpg

শিকারকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি চিতা ও হায়েনা
গাছে তোলার পরও শতকরা ৫ ভাগ শিকার হায়েনার কাছে হারায় চিতা। এক্ষেত্রে হায়েনা গাছে উঠতে না পারলেও, গল্পটা হয়ে যায় কাক আর শিয়ালের গল্পের মতোই। শিকার নিয়ে গাছে বসে আরাম করে খেতে খেতে নিচে যখন কোনো হায়েনাকে দেখতে পায় চিতা, তখন সে খাওয়া ভুলে গিয়ে দম্ভভরা গর্জন করে ওঠে অনেক সময়। আর তাতেই শেষ হাসি হাসবার সুযোগ পেয়ে যায় হায়েনা। শিকারটি গাছে থেকে মাটিতে পড়ে গেলে মুহূর্তেই সেটি নিয়ে উধাও হয় হায়েনা!
 
139.jpg

শিকার ছেড়ে শেষতক সিংহের হাত থেকে বাঁচতে প্রাণ নিয়ে পালাচ্ছে একটি চিতা
সবশেষ বলা চলে, চিতাবাঘের শিকার গাছে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাপারটি প্রাণিজগৎ এবং প্রাণীদের পরাশ্রয়িতা নিয়ে নতুন গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। সাধারণ হায়েনার মাঝে পরাশ্রয়িতার হার অনেক বেশি। হায়েনাদের পরাশ্রয়িতাই চিতাবাঘকে বাধ্য করে শিকার গাছে তুলে রাখতে। তবে এ ব্যাপারটি ঘটে যে স্থানে প্রতিযোগীর সংখ্যা বেশি হয়। ভারতের চিতাবাঘগুলোর শিকার গাছে তোলার হার মাত্র ৫ ভাগ, যেখানে আফ্রিকান চিতা নিজেদের ৫১ ভাগ শিকারই গাছে ঝুলিয়ে রাখে। কারণে ভারতের চেয়ে আফ্রিকায় একটি চিতার শিকার হারানোর সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। প্যানথেরার এই গবেষণাটি ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব অ্যানিম্যাল ইকোলজি’তে প্রকাশিত হয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top