What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চীনের উইঘুর নির্যাতন নিয়ে মুসলিম বিশ্ব চুপ কেন? (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Tpo8qFn.jpg


২০১০ সালে নরওয়ে যখন চীনের ভিন্নমতাবলম্বী কারাবন্দী লিও জিয়াওবোকে সম্মাননা প্রদর্শন স্বরূপ শান্তিতে নোবেল দিয়েছিল, তখন নরওয়ের সাথে সব ধরণের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চীন। লিও চায়নার একচ্ছত্র অধিপতি কম্যুনিস্ট পার্টির অপশাসন নিয়ে বেশ সরব ছিলেন। কম্যুনিস্ট পার্টির একজন মুখপাত্র সেসময় লিও জিয়াওবোর কর্মাকান্ডকে “ব্লাসফেমি” হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

“ব্লাসফেমি” বা ধর্ম নিন্দা শব্দটি সাধারণত ব্যবহার করা হয় ঈশ্বর কিংবা ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি কেউ নিন্দা জ্ঞাপন করলে। কিন্তু কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্র “ব্লাসফেমি” শব্দটি দিয়ে কোন ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনকে ইঙ্গিত করেননি বরং চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতি জিয়াওবোর নিন্দাকেই বুঝিয়েছিলেন। চীনে কম্যুনিস্ট পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য এতটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, এটা মোটামুটি একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের গণ্ডি ছাড়িয়ে ধর্মের মতো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অর্থাৎ এই মতাদর্শের কোন সমালোচনা করা যাবে না, যেন এটা একটা ঐশ্বরিক বিধান!

সারা বিশ্বে প্রতিনিয়তই এই ধরণের চরমপন্থি ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের শিকার হচ্ছে অপেক্ষাকৃত গরীব এবং মুসলিম সম্প্রদায়। আবার একই সাথে দেখা যায় ধর্মীয় বিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে অনেক স্বৈরাচারী নেতা নিজেদের ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করে রাখছেন।

১৯৮৯ সালে “দ্য স্যাটানিক ভার্স” নামক বইয়ে ইসলামের প্রচলিত কিছু ভিত্তিকে ব্যঙ্গ করায় সালমান রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করেছিল ইরান। প্রকৃতপক্ষে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ছিলেন ইরানের একজন স্বৈরশাসক, যিনি নিজেকে মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধি হিসেবে দাবী করতেন। সালমান রুশদি বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে খোমেনি সেসময় মূলত নিজের ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করার প্রচেষ্টাতেই ছিলেন। আবার ২০০৫ সালের দিকে যখন ডেনমার্কের পত্রিকা “জিলল্যান্ডস-পোস্টেন” মুহম্মদ (সঃ) এর কয়েকটি কার্টুন প্রকাশ করেছিল তখন এর বিরুদ্ধে আদতেই বৈশ্বিক একটি নিন্দার ঝড় উঠেছিল। সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিশর এবং সিরিয়ার স্বৈরশাসক হোসনে মোবারক এবং বাশার আল-আসাদ সেই বিতর্ককে কেন্দ্র করে পুরো ডেনমার্কের বিরুদ্ধেই বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

এই সব স্বৈরশাসকরা যতটা না ইসলামের পক্ষে কাজ করেছেন, তার চেয়ে বেশি তারা সচেষ্ট ছিলেন মানুষের ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের দুর্নীতি এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের ইস্যুকে মাটি চাপা দিতে। এমন আরও কিছু উদাহরণের দিকে লক্ষ্য করলে মনে হয় ধর্ম এবং রাজনীতি যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

সাম্প্রতিক কালে চায়নার কিছু কর্মকান্ড যেন সেই “ধর্মীয় বিদ্বেষকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি” করার বিষয়টিকে আরো নগ্নভাবে সবার সামনে এনেছে। বর্তমানে পরাশক্তি হিসেবে উত্থানের কারণে চায়নার বিরুদ্ধে অনেক দেশই মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস করে না। এমনকি কোন কোন দেশে মনে হয় যেন চায়নার বিরুদ্ধে কথা বলা নিয়ে অলিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞাই জারি করা আছে!

যে মুসলিম বিশ্ব একসময় নিজেদের ধর্মীয় নবীর কার্টুন প্রকাশিত হওয়ার কারণে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল, যে মুসলিম বিশ্ব ধর্মীয় ঘটনাকে ব্যঙ্গ করার জন্য একজন উপন্যাসিককের মৃত্যুদণ্ড কামনা করেছিল, আজ যখন চায়নার জিংজিয়াং প্রদেশে উইঘুরে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অমানুষিক নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে, তখন সেই মুসলিম বিশ্ব একদমই চুপ হয়ে আছে! এ যেন এক অদ্ভুত দৃশ্য!

একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম ভয়ংকর অপরাধ আমাদের ঠিক চোখের সামনেই করা হচ্ছে অথচ আমরা সবাই দেখেও যেন না দেখার ভান করে আছি। চাইনিজ কম্যুনিস্ট পার্টি যেন সেই মাওবাদী যুগের সর্বগ্রাসী ভীতিকেই আবার পুনরুদ্ধার করছে। চাইনিজ স্কলার এন্ডিয়ান জেনজের জানিয়েছেন, চায়নায় উইঘুরের মুসলিমদের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য তাদের বংশ বৃদ্ধিতেও হস্তক্ষেপ করছে কম্যুনিস্ট পার্টি। উইঘুরের মুসলিম নারীদের জোর পূর্বক বিভিন্ন গর্ভ নিরোধক ডিভাইস ব্যবহার করতে বাধ্য করছে তারা।

এমন অমানবিক একটি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যদি কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে, তবে তাদের পরিণাম হয় অন্য দশ লাখ উইঘুরবাসীদের মতোই। যেই উইঘুরবাসীদের চায়না সরকারের কথিত “রি-এডুকেশন” নামক ক্যাম্পে ভয়াবহ নির্যাতন করা হচ্ছে। বিবিসি’র একটি তদন্তে দেখা গেছে, “রি-এডুকেশন” ক্যাম্পে উইঘুর শিশুদেরকে তাদের বাবা-মা থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে তারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কোন ধারণা ছাড়াই বড় হয়।

এ কথা খুবই বাজে শোনালেও সত্য যে, পশ্চিমা বিশ্ব যদি মুসলিমদের ওপর চায়নার বর্তমান নৃশংসতার একশ ভাগের এক ভাগও প্রদর্শন করে, তাহলে বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোর ক্ষোভ বোমার মতোই ফেটে পরবে। যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি রুশদি, জিল্যান্ডস-পোস্টেন এবং চার্লি হেড্ডোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, তারা সবাই যেন চীনের ব্যাপারে নীরব থাকার প্রতিজ্ঞা করেছে। এসব দেশ শুধুমাত্র নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বুঝেই মুসলিম সংহতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়!

২০১৯ সালের জুলাই মাসে পশ্চিমা দেশগুলো জাতিসংঘে চীনের জিংজিয়াং প্রদেশে “নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক” দল পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। কিন্তু ইসলামের রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর বিরোধিতায় তা করা যায়নি।

ইরান মাঝেমধ্যে চীনের সমালোচনা করে দুই একটা বক্তব্য প্রদান করলেও, তারা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশী। তাই তারা চীনের বিরাগভাজন হতে চায় না।

যে মুসলিম বিশ্ব এক সময় শুধুমাত্র একটি কার্টুন প্রকাশ করাকে মেনে নিতে পারেনি, এখন তারাই উইঘুরে মুসমিলদের উপর হাজারো নির্যাতন নিয়ে দিব্যি চুপ করে বসে আছে। বাস্তবিক দৃশ্য দেখলে মনে হয়, যেন এদের অনেককেই চায়না কিনে নিয়ছে। চীন বর্তমানে জাতিসংঘে পশ্চিমা বিরোধী এক প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর। এছাড়া চায়নার অবকাঠামো গত উন্নয়ন প্রকল্প “বেল্ট অ্যান্ড রোড” কর্মসূচীর আওতায় মুসলিম এই দেশগুলোর অনেকেই কোটি কোটি ডলার লাভবান হচ্ছে!

চীনের বিরোধিতা করার ফলাফল নরওয়ে যেমন ২০১০ সালে পেয়েছিল, ঠিক তেমনই অস্ট্রেলিয়া এখন কিছুটা আঁচ করতে পারছে। অস্ট্রেলিয়া কোভিড-১৯ এর উৎস সম্পর্কে আন্তর্জাতিক তদন্তের অনুরোধ করার পর থেকে চীনের সাইবার আক্রমণ এবং বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়। ব্যাপারটি যেন এমন যে, চায়না থেকে যে কোন ধরণের সুবিধা নিতে হলে তাদের কোন প্রকার সমালোচনা করা যাবে না!

ঠিক একই রকম চিত্র তুরস্কের এরদোগানের ক্ষেত্রেও, যিনি কিনা নিজেকে একজন মুসলিম নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন। তিনি যেখানে আশেপাশের দেশে মুসলিম অধিকার ক্ষুণ্ণ হলেই তীব্র বিরোধিতা করেন, সেখানে চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর করা অত্যাচারের বিষয়ে তাকেও কিছুটা নীরবতা পালন করতে দেখা যায়।

চীনের দিক থেকে অন্য কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন ধরণের মন্তব্য পরিলক্ষিত করা যায় না। বিষয়টি যেন কিছুটা এমন যে, “তোমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা যেমন কিছু বলব না, ঠিক তেমনই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে তোমরাও কেউ বলবে না।”

১৯৯০ সালে সালমান রুশদী যখন তার জীবন নিয়ে সংশয়ের মধ্যে ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “ধর্মের ধারণাটি যে কোন সংস্কৃতির সবচাইতে রক্ষণশীল ধারনাগুলোর মধ্যে একটি। কেননা এই ধারণাটি যে কোন ধরণের অনিশ্চয়তা, অগ্রগতি এবং পরিবর্তনকে একটি ভয়ংকর অপরাধে রূপান্তর করে দিতে পারে।”

[দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে অনূদিত]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top