ছবির নাম ‘'Two",
পরিচালক সত্যজিৎ রায়।
কালো সাদায় মাত্র ১২ মিনিটের নির্বাক ছবি। এক অমূল্য, অতুলনীয় সৃজন। আমেরিকার PBS, পাবলিক ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের অনুরোধে ১৯৬৪ সালের নির্মাণ, সে দেশের দর্শকদের জন্যে, ভারতীয় জীবনের প্রবহমানতায় বিশ্ব বিবেক আলোড়িত করা একটি উপস্থাপনা।
ছবিটির বিষয়বস্তু খানিকটা এই রকম।
মাঝখানে একটি জানলা। জানলার দুপারে দুই শিশু, এপারে ধনী ঘরের ছেলে, ওপারে পথে দাঁড়ানো দারিদ্র কুন্ঠিত এক বস্তিবালক। তাদের সাক্ষাৎ ও কথোপকথন। তারা দুই ভুবনের প্রতিনিধি, দুটি আলাদা দর্শন, দুই বিপরীত বিন্দুতে তাদের জীবনসন্ধান। একজনের বেশবাস শোভন ও সাবলীল, দামী দামী আধুনিক খেলনাপাতির অঢেল সংগ্ৰহ, মনে করে নেওয়া যেতে পারে সে ধনী, প্রথম বিশ্বের প্রাচুর্যের প্রতিভূ, অন্যের মলিন পোশাক, বিমর্ষ চোখ, হাতে কখনও বা ঘুঁড়ি, কখনও কুড়িয়ে পাওয়া বাঁশি। বস্তিবালক.... অনিবার্য ভাবেই অনাদৃত, দরিদ্র তৃতীয় দুনিয়ার বিপর্যস্ত জীবনের একটি ছোট্ট টুকরো। তখন ভিয়েতনামের যুদ্ধ চলছে -- কেউ কেউ বলেন, নীরবতা দিয়ে সত্যজিৎ যথেষ্ট সরব বিরুদ্ধতা করেছেন সেই যুদ্ধের। ছবিটিতে দুই বালকের তীব্র, অসম প্রতিযোগিতা। প্রাসাদের পদতলে বিড়ম্বিত বস্তির পরাজয় হতেই থাকে, হতেই থাকে। এমনকি তার ঘুঁড়ি ওড়ানোর মধ্যে যে মুক্তির আহ্লাদটুকু ছিল তাও খেলনা ছররা দিয়ে ছিঁড়েখুঁড়ে নামিয়ে দেয় ধনীর গোপাল। মুক্তি আর আকাশের অধিকার একমাত্র তাদেরই হাতে, আর কেউ সেখানে হাত বাড়ালে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বটাও তাদেরই। তৃতীয় দুনিয়ার আহ্লাদের আতিশয্য প্রথম বিশ্বের কাছে অসহ্য, অনায্য আবদার, অতএব যে কোনো মূল্যে দমনীয়। ছেঁড়াঘুঁড়ির বিপন্ন বালকের দু চোখে পরাজয় নেই, আছে অস্থির সময়কে অতিক্রম করার অভিলাষ। পরাজয়ের বশ্যতা না মেনে, সে ফিরে যায় বটে বস্তির বিশৃঙ্খল ঘরে। কিন্তু নতুন প্রত্যাবর্তনের তাগিদে সে ছটফট করে। জানলার এপারে ধনীর দুলাল তার খেলনা বন্দুক আর দুন্দুভি নিয়ে বিকট দুম দাম আওয়াজে তোলপাড় করছে, তার উত্তরে ওপারের পথশিশুটি হাতে তুলে নিয়েছে তার কুড়িয়ে পাওয়া বাঁশের বাঁশি, হৃদয় নিঙড়ানো ফুঁয়ে বাজাচ্ছে আনন্দ ভুবনের সুর। বাঁশিটির মধুময় অন্তরপ্লাবী আহ্বানধ্বনির উচ্ছ্বসিত উচ্চতার অন্তরালে ঢাকা পড়ে যায়, হারিয়ে যায় দুন্দভির অশান্ত আওয়াজ। মন ভাসানো সেই বাঁশি যেন এক শান্ত ও শান্তির বিশ্বের জয়ঘোষণা।
চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে এই ছোট্ট, প্রায় বিস্মৃত ছবিটি সত্যজিতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি, 'পথের পাঁচালী' ছবি ত্রয়ীর সঙ্গে এর নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হওয়ার যোগ্য।
সাদা কালো, নিঃশব্দ, নির্বাক ছবি তাঁর শ্রদ্ধার অর্ঘ্য, পুরনো পেছনে ফেলে আসা ছবি নির্মাণের সংগ্ৰাম মুখর অতীত অধ্যায়ের উদ্দেশ্যে।
````````````````````````````````
পরিচালক সত্যজিৎ রায়।
কালো সাদায় মাত্র ১২ মিনিটের নির্বাক ছবি। এক অমূল্য, অতুলনীয় সৃজন। আমেরিকার PBS, পাবলিক ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের অনুরোধে ১৯৬৪ সালের নির্মাণ, সে দেশের দর্শকদের জন্যে, ভারতীয় জীবনের প্রবহমানতায় বিশ্ব বিবেক আলোড়িত করা একটি উপস্থাপনা।
ছবিটির বিষয়বস্তু খানিকটা এই রকম।
মাঝখানে একটি জানলা। জানলার দুপারে দুই শিশু, এপারে ধনী ঘরের ছেলে, ওপারে পথে দাঁড়ানো দারিদ্র কুন্ঠিত এক বস্তিবালক। তাদের সাক্ষাৎ ও কথোপকথন। তারা দুই ভুবনের প্রতিনিধি, দুটি আলাদা দর্শন, দুই বিপরীত বিন্দুতে তাদের জীবনসন্ধান। একজনের বেশবাস শোভন ও সাবলীল, দামী দামী আধুনিক খেলনাপাতির অঢেল সংগ্ৰহ, মনে করে নেওয়া যেতে পারে সে ধনী, প্রথম বিশ্বের প্রাচুর্যের প্রতিভূ, অন্যের মলিন পোশাক, বিমর্ষ চোখ, হাতে কখনও বা ঘুঁড়ি, কখনও কুড়িয়ে পাওয়া বাঁশি। বস্তিবালক.... অনিবার্য ভাবেই অনাদৃত, দরিদ্র তৃতীয় দুনিয়ার বিপর্যস্ত জীবনের একটি ছোট্ট টুকরো। তখন ভিয়েতনামের যুদ্ধ চলছে -- কেউ কেউ বলেন, নীরবতা দিয়ে সত্যজিৎ যথেষ্ট সরব বিরুদ্ধতা করেছেন সেই যুদ্ধের। ছবিটিতে দুই বালকের তীব্র, অসম প্রতিযোগিতা। প্রাসাদের পদতলে বিড়ম্বিত বস্তির পরাজয় হতেই থাকে, হতেই থাকে। এমনকি তার ঘুঁড়ি ওড়ানোর মধ্যে যে মুক্তির আহ্লাদটুকু ছিল তাও খেলনা ছররা দিয়ে ছিঁড়েখুঁড়ে নামিয়ে দেয় ধনীর গোপাল। মুক্তি আর আকাশের অধিকার একমাত্র তাদেরই হাতে, আর কেউ সেখানে হাত বাড়ালে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বটাও তাদেরই। তৃতীয় দুনিয়ার আহ্লাদের আতিশয্য প্রথম বিশ্বের কাছে অসহ্য, অনায্য আবদার, অতএব যে কোনো মূল্যে দমনীয়। ছেঁড়াঘুঁড়ির বিপন্ন বালকের দু চোখে পরাজয় নেই, আছে অস্থির সময়কে অতিক্রম করার অভিলাষ। পরাজয়ের বশ্যতা না মেনে, সে ফিরে যায় বটে বস্তির বিশৃঙ্খল ঘরে। কিন্তু নতুন প্রত্যাবর্তনের তাগিদে সে ছটফট করে। জানলার এপারে ধনীর দুলাল তার খেলনা বন্দুক আর দুন্দুভি নিয়ে বিকট দুম দাম আওয়াজে তোলপাড় করছে, তার উত্তরে ওপারের পথশিশুটি হাতে তুলে নিয়েছে তার কুড়িয়ে পাওয়া বাঁশের বাঁশি, হৃদয় নিঙড়ানো ফুঁয়ে বাজাচ্ছে আনন্দ ভুবনের সুর। বাঁশিটির মধুময় অন্তরপ্লাবী আহ্বানধ্বনির উচ্ছ্বসিত উচ্চতার অন্তরালে ঢাকা পড়ে যায়, হারিয়ে যায় দুন্দভির অশান্ত আওয়াজ। মন ভাসানো সেই বাঁশি যেন এক শান্ত ও শান্তির বিশ্বের জয়ঘোষণা।
চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে এই ছোট্ট, প্রায় বিস্মৃত ছবিটি সত্যজিতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি, 'পথের পাঁচালী' ছবি ত্রয়ীর সঙ্গে এর নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হওয়ার যোগ্য।
সাদা কালো, নিঃশব্দ, নির্বাক ছবি তাঁর শ্রদ্ধার অর্ঘ্য, পুরনো পেছনে ফেলে আসা ছবি নির্মাণের সংগ্ৰাম মুখর অতীত অধ্যায়ের উদ্দেশ্যে।
````````````````````````````````