What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

"Carpet Sahib": জিম করবেট দ্য হান্টার (1 Viewer)

robinhood

Moderator
Staff member
Moderator
Joined
Mar 19, 2018
Threads
59
Messages
752
Credits
6,903
Lipstick
Television
Birthday Cake
আপনারা জানেন, আগে আমাদের বাংলাদেশ সহ পুরো ভারতেই অনেক অনেক বন-জঙ্গল ছিলো। আর এসব বনে বনে ঘুরে বেড়াতো ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব বাঘ, নেকড়ে আর হায়েনার দল। এসব প্রাণী হিংস্র হলেও আঘাত না পেলে শুধু শুধু মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে হ্যাঁ, কিছু দুষ্টু প্রাণী তো থাকেই। তারা ছিলো যেমন হিংস্র তেমনি ভয়ংকর। এসব প্রাণীদের শিকার করাটাও ছিলো অনেক কঠিন। আর এ কাজটিতেই প্রচণ্ড সাহস ও সাফল্য অর্জন করেছিলেন একজন; ২৫ জুলাই তার জন্মদিন, আর তার নাম, জিম করবেট।

ভারতের উত্তরাখণ্ড অঙ্গরাজ্যের একটি শহরের নাম নৈনিতাল। 'তাল' মানে হ্রদ বা সরোবর। হ্রদের ধারে অধিষ্ঠাত্রী দেবী নয়না বা নৈনি থেকে নৈনিতালের নামকরণ। নৈনিতালের আকাশ সবসময়ে মেঘে ঢাকা আর অরণ্যে পাখিদের কিচিরমিচির। নৈনিতালের দক্ষিণে রয়েছে বিস্তীর্ণ সবুজ সমভূমি আর উত্তরে তাকালে দেখা যায় বরফাবৃত হিমালয়ের চূড়া। এখানেই জিম করবেটের জন্ম।
nLPLPz8.jpg

জিম করবেটের পুরো নাম এডওয়ার্ড জেমস করবেট। তবে, তাকে জিম করবেট নামেই সবাই চেনে। করবেট ১৮৭৫ সালের ২৫ জুলাই ভারতের নৈনিতালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন আইরিশ, নৈনিতালে পোস্টমাস্টারের চাকরি করতেন। করবেট ছিলেন বাবা-মার চতুর্থ সন্তান। জিম করবেটের বাবার নাম ক্রিস্টোফার গার্নি; মায়ের নাম মেরী জেন। তার বড় ভাইয়ের নাম টমাস বা টম। করবেট চার বছর বয়সেই বাবাকে হারান। বড়ো ভাই টম পোস্টমাস্টারের চাকরি পান। তিনিই পরিবারের অভিভাবক হন। করবেটের পিতা নৈনিতালের আয়ারপাটায় ‘গার্নি হাউস’ নামে যে বাড়ি তৈরি করেন সেখানেই জন্ম হয় করবেটের।
 
করবেট ছোটবেলা থেকেই শিকার করতেন। বড়ো হয়ে নামকরা শিকারি হয়ে উঠলেন। তবে, তিনি এসব কাহিনী মোটেও লিখতে চাননি। কিন্তু বন্ধুরা আর চারপাশের লোকজন তাকে অনুরোধ করলেন, লিখে ফেলুন না আপনার শিকারের কাহিনী। আর তিনি লিখতে বসেই আগে ভাবলেন রোমাঞ্চ প্রিয় শিশুদের কথা। তারপরই তিনি সহজ করেই লিখে বসলেন ভয়ঙ্কর সব মানুষখেকোদের কথা, যাদের তিনি শিকার করেছেন। তার ‘ম্যান ইটার্স অব কুমায়ূন’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালে। বইটি দ্রুত সারাবিশ্বে শিকারকাহিনী হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর প্রকাশক তাকে পেয়ে বসেন। আবারও লিখে দিতে হবে। কি আর করা। আবারও বসে গেলেন লিখতে। লিখে ফেললেন ‘ম্যান ইটিং লেপার্ড অফ রুদ্রপ্রয়াগ’ (১৯৪৮), ‘মাই ইন্ডিয়া’ (১৯৫২), ‘জাঙ্গল লোর’ (১৯৫৩), ‘দ্য টেম্পল টাইগার অ্যান্ড মোর ম্যান ইটার্স অফ কুমায়ন’ (১৯৫৪) এর মতো অসাধারণ সব শিকার কাহিনীগুলো।

yWgXtSL.jpg

করবেট তার লেখায় নিজের জীবনের সব কথাই লিখে গেছেন। তার লেখা থেকে জানা যায়, বড় ভাই টমের উৎসাহে তিনি শিকার করতে শুরু করেন। ছোটো জিমকে শিকারে নিয়ে যেতেন টম। বন্দুক কাঁধে করে দুভাই বেরিয়ে পড়তেন শিকারে। একবার এক বুনো ভল্লুক শিকারে গিয়ে ছোটো জিম করবেটকে এক জায়গায় একটি বন্দুকসহ অপেক্ষা করতে বলে টম শিকারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। ঘন অন্ধকারে ছোটো জিম দেখতে পেলেন কিছু প্রাণী নড়াচড়া করতে করতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয় পেলেন জিম। দৌড়ে পালাবার পথও নেই। প্রাণীগুলো কাছে চলে আসলে জিম টের পেলেন সেগুলো আর কিছু নয়, ভয়ংকর মানুষখেকো নেকড়ে। ছোট্টো জিম তো ভয়েই আড়ষ্ট হয়ে গেলো! কি করে কি করে! দূর থেকে তার অবস্থা দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়লেন বড়ো ভাই টমও। শেষতক জিম মোটেই নড়াচড়া করলেন না। বরং বন্দুক উঁচিয়ে ধরলেন। কিন্তু নেকড়েগুলো তাকে আক্রমণই করলো না। সাহস ফিরে পেলেন জিম। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন গুলি চালাবেন। সাহসী জিম সাহস দিয়েই জয় করলেন জংগলের ভয়। টম ফিরে এসে জিমকে শুধালেন, সে ভয় পেয়েছে কিনা। জিম উত্তর দেবে কি! এত্তোক্ষণে তার হুঁশ হলো যে, সে শিকারে এসেছে!

নৈনিতালের স্কুলে পড়ার সময়ই বন্দুক চালানোয় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন জিম। সে সময় নৈনিতালে প্রচণ্ড শীত পড়তো। আর বণ্যপ্রাণীর আক্রমণের ভয়ে বন্দুক চালনা শিখে নিতে হতো অভিজাত পরিবারের সব সন্তানকেই। কারণ তখন শিকারটাই ছিলো অবসর কাটানোর সময়।
 
জিম নৈনিতালের স্কুলে লেখাপড়া শেষ করে ১৮৯৫ সালে বেঙ্গল অ্যান্ড নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়েতে চাকরি নিলেন। রেলওয়ের ইঞ্জিনে তখন খনিজ কয়লার বদলে কাঠও ব্যবহার করা হতো। সেই কাঠ সরবারহের ভার পড়ে তার ওপর। তিনি কাঠ কাটতে চলে যেতেন ভাবরের জঙ্গলে। এ কাজ শেষে তিনি ফুয়েল ইন্সপেক্টর, মালগাড়ির গার্ড, গুদামরক্ষক, সহকারী স্টেশনমাস্টারের চাকরিও করেন। এসব কাজ করতে করতেই তিনি বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে গেরিলা যুদ্ধে ট্রেনিং দেন।

তার কর্মজীবনেই তিনি প্রথমে মানুষখেকো চম্পাবতের বাঘিনী শিকার করেন। সেটা ১৯০৭ সালের ঘটনা। নিছক শিকারের রোমাঞ্চ আর আনন্দ পাবার জন্য যারা যারা শিকার করেন তেমন শিকারি ছিলেন না জিম করবেট। তিনি অপ্রোয়জনে কোনো প্রাণীই শিকার করতেন না। তিনি কেবল সেসব প্রাণীই শিকার করতেন যে প্রাণীগুলোর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তো, মানুষের জন্য মূর্তিমান ত্রাস হয়ে পড়তো যেগুলো। এসব প্রাণীর নাম মুখে আনতেও মানুষ ভয় পেতো সেসময়। তারা ভাবতো এগুলো এমনই ভয়ঙ্কর, যে এদের নাম মুখে আনলেও সর্বনাশ হবে। আর এ প্রাণীগুলোও সত্যি সত্যিই ছিলো ভয়ঙ্কর। যাকে সামনে পেতো তাকেই খেয়ে ফেলতো। যেমন তাদের চেহারা তেমনি তাদের আচরণ। জিম এদের আচরণ প্রত্যক্ষ করতেন, তারপর এদের মতো করেই চিন্তা করতেন। যেনো একদম ওদের মনের কথাই পড়ে ফেলতেন তিনি। এরপর প্রয়োজন হলে সরাসরি সামনে গিয়ে শিকার করতেন। তার শিকারে যেমন চাতুর্য ছিলো তেমনিই ছিলো দূরন্ত সাহস।

বছরের পর বছর ধরে বিশাল এলাকা জুড়ে ত্রাস হয়ে উঠতো এসব প্রাণীগুলো। এই মানুষখেকো বাঘ আর চিতাগুলো শত শত মানুষ ও গবাদি পশু হত্যা করে মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেই অচল করে দিয়েছিলো। শুধু তাই নয়, এদের যারা শিকার করতে ফাঁদ পাততো বা শিকারের চেষ্টা করতো, সেসব ফাঁদও কি কৌশলে যেন এড়িয়ে যেতো এ প্রাণীগুলো। এগুলো ছিলো ধূর্ত আর ভয়ঙ্কর। সবাই যখন ব্যর্থ হতো তখনই ডাক পড়তো জিম করবেটের। যেমন করেই হোক এটাকে শেষ করতে হবে। জিমও ছিলেন শিকারী হিসেবে তেমনই সাহসী। তিনিও চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসতেন। তিনি শুধু এলাকাবাসীর বা সরকারের অনুরোধেই শিকারে বেরোতেন। আর তিনি যখনই শিকারে নেমেছেন তখনই তাতে সফল হয়েছেন। তার শেষ মানুষখেকো শিকারের ঘটনা ছিলো থাক এর বাঘিনী শিকার; ১৯৩৮ সালে। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণেও তার বিরাট ভূমিকা ছিলো। ভারতের সব বন, এমনকি সরকারি সংরক্ষিত বন, যেখানে ঢোকার আগে অনুমতি নিতে হয় সেখানেও তার ছিলো অবাধ প্রবেশাধিকার। কেননা, তার মতো শিকারি কোনো বনে ঢুকলে বনের তো আর কোনো ক্ষতি হবে না বরং বন এবং বনের আশ পাশের মানুষগুলোর উপকারই হবে।

১৯৪৭ সালে জিম করবেট আফ্রিকার কেনিয়ার অন্তর্গত নিয়েরিতে চলে যান। সেখানে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল কেনিয়াতে থাকার সময় তিনি লিখে শেষ করেন ‘ট্রি টপস’ নামের বইটি। এর ১৩ দিন পরই তিনি পৃথিবী ছেড়ে যান। তাকে সমাহিত করা হয় সেন্ট পিটার্স অ্যাংকলিন চার্চ সিমেট্রিতে। এপ্রিল ১৯, ১৯৫৫ তার মৃত্যুর তারিখ।

z5cAqwu.jpg
z5cAqwu.jpg

z5cAqwu.jpg

ChTzusz.jpg
 

Users who are viewing this thread

Back
Top