What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ব্ল্যাক ডেথ মহামারির সময় চিকিৎসকেরা কেন এমন পোশাক পরতেন (1 Viewer)

মানবসভ্যতা প্রতিদিন একটু একটু করে বদলে যেতে যেতে আজকের রূপ পেয়েছে। এ বদল চলমান এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কিছু ঘটনা আছে, যা এক ধাক্কায় সভ্যতাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিল। সেসব যুগান্তকারী ঘটনা নিয়ে আমাদের এ আয়োজন...

ব্ল্যাক ডেথ

BHQTZvD.jpg


প্লেগ আক্রান্তদের সমাধিস্থ করছে মানুষ, উইকিপিডিয়া

চতুর্দশ শতকে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় ভয়ংকর এক রোগ ছড়িয়ে পড়ে।ইউরোপের প্রায় এক–তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায় ওতে। এ ছাড়া এশিয়া ও আফ্রিকায় মৃত্যুবরণ করে লাখ লাখ মানুষ। ইতিহাসের ভয়াবহতম এই মহামারি পরিচিত ব্ল্যাক ডেথ নামে। ইউরোপে ১৩৪৬–১৩৫৩ সাল পর্যন্ত চলে এই মহামারি। আর ধারণা করা হয়, এতে প্রাণ হারিয়েছিল ৭.৫–২০ কোটি মানুষ!

KJxqTZU.jpg


ইউসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়া এবং ওরিয়েন্টাল র‌্যাট ফ্লি, উইকিপিডিয়া

অনেক দিন পর্যন্ত ব্ল্যাক ডেথের কারণ বা রোগের নাম অজানাই ছিল। এখন আমরা জানি, রোগটির নাম বিউবনিক প্লেগ। ইউসিনিয়া পেসটিস নামের এক ব্যাকটেরিয়াই ছিল এর মূল হোতা। এই ব্যাকটেরিয়ার পোষক ছিল আবার ওরিয়েন্টাল র‌্যাট ফ্লি নামের একপ্রজাতির মাছি। ভয়ংকর মাছিগুলো ইঁদুরকে কামড়ানোর ফলেই ছড়িয়ে পড়েছিল প্লেগ। তা মহামারির আকার ধারণ করলে আসে ব্ল্যাক ডেথ নামটি। তবে নামটি কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর থেকে ব্যবহৃত হয়।

উৎপত্তি নিয় প্রশ্ন

oONZtrl.jpg


তিয়েন শান পার্বত্যাঞ্চল, উইকিপিডিয়া

ব্ল্যাক ডেথের উৎপত্তি নিয়ে আছে নানা মুণির নানা মত। ধারণা করা হয়, অতি সংক্রামক ব্ল্যাক ডেথের শুরুটা হয়েছিল বর্তমান সময়ের চীন ও কিরগিজস্তান সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা তিয়েন শান পার্বত্যাঞ্চল থেকে। চীন তখনকার দিনে একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যকেন্দ্র হওয়ায় পৃথিবীর নানান দেশ থেকে সিল্ক রোড ধরে সেখানে ক্রেতা–বিক্রেতারা জড়ো হত। পরবর্তী সময়ে এই বণিকেরা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। স্রেফ ইঁদুর দিয়েও তা ছড়াতে পারে বলে অনেকের বিশ্বাস।

ইউরোপে যেভাবে ছড়াল

U0ehhkw.gif


ইউরোশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে যেভাবে প্লেগ ছড়িয়েছিল, উইকিপিডিয়া

ইউরোপে এই রোগের আবির্ভাব ১৩৪৭ সালে। ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত ব্ল্যাক ডেথ ইউরোপে ধ্বংসলীলা অব্যাহত রাখে। প্লেগ এশিয়া থেকে সম্ভবত যায় কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্রে। এখানে অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন মঙ্গোলীয় সেনারা। তাঁরা কাফা শহর অবরোধ করার সময় প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্য শহরের দেয়ালে রেখে দিতেন প্লেগে আক্রান্ত সেনাদের লাশ। আর এই বন্দর ছিল ইতালির আরেক বন্দরনগর জেনোয়ার অধিকারে। তো জেনোয়ার বাণিজ্য জাহাজগুলোই পরে রোগটি নিয়ে যায় সিসিলি শহরে। সেখানে থেকে ছড়ায় গোটা ইউরোপে।

খারাপ বাতাস

তখনো চিকিৎসাবিজ্ঞান এতটা উন্নত হয়নি। এমনকি ব্যাকটেরিয়াও ছিল অনাবিষ্কৃত। মানুষ ভাবত, খারাপ বাতাস এসব রোগের কারণ। চিকিৎসকদের একমাত্র উপায় ছিল ভেষজ উপাদান এবং রক্তমোক্ষণ (শরীরের কিছুটা রক্ত ফেলে দিয়ে একপ্রকার চিকিৎসা)। কিন্তু এসব ব্যবস্থা প্লেগের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র ভূমিকা পালন করতে পারেনি। মানুষ বলত, পাপের শাস্তি হিসেবে ঈশ্বর এই কালো মৃত্যু পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তারা এ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করত। কিন্তু ভয়ংকর এই রোগ তাণ্ডবলীলা থামায়নি।

অদ্ভুত পোশাক

WLOvh9S.jpg


প্লেগ ডক্টরদের কিম্ভূতকিমাকার পোশাক, উইকিপিডিয়া

প্লেগ রোগে যাঁরা চিকিৎসা দিতেন, তাঁদের বলা হতো ‘প্লেগ ডক্টর’। এই চিকিৎসকেরা পরতেন অদ্ভুত পোশাক। অদ্ভুত না বলে কিম্ভূতকিমাকার কিংবা ভয়ংকর বললেও ভুল হবে না। তাঁরা মুখে পরতেন পাখির ঠোঁটের মতো একধরনের মুখোশ। গায়ে থাকত লম্বা, কালো আলখেল্লা। হাতে বিচিত্র দস্তানা। মাথায় কালো ক্যাপ। আর ওই মুখোশের ভেতর থাকত নানান ধরনের ভেষজ উপাদান। তাঁদের ধারণা ছিল, এর ফলে তাঁরা প্লেগ থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।

এরপর যা ঘটেছিল

w7PA8be.jpg


১৬৭৫ সালে অজানা শিল্পীর আঁকা ছবিতে লন্ডনের আগুন, উইকিপিডিয়া

১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর লন্ডন শহর এক ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়ে। ইতিহাসে এটা ‘গ্রেট ফায়ার অব লন্ডন’ নামে পরিচিত। এই আগুন একটানা ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। আগুনে লন্ডন শহরের পাঁচ ভাগের চার ভাগ পুড়ে গেলেও মারা যায় মাত্র ১৬ জন। এত কিছুর পরও এই আগুনের ভালো দিক হলো, লন্ডনের এক লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী প্লেগ রোগের সমাপ্তি ঘটে।

১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু নামে পরিচিত একপ্রকার ইনফ্লুয়েঞ্জায় প্রায় পাঁচ কোটি লোক মারা যায়, যা ছিল তখনকার পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ।

এর আগে যা হয়েছিল

২৫০ সালের দিকে রোমান সাম্রাজ্য সাইপ্রিয়ান প্লেগের কবলে পড়ে। সংক্রমণ বেশি হলে গুটিবসন্তসদৃশ এই রোগে রোমে রোজ পাঁচ হাজারের মতো মানুষ মারা যায়। এর চেয়ে মারাত্মক অবস্থা হয়েছিল অবশ্য কনস্টান্টিনোপলে (এখনকার ইস্তাম্বুল)। ৫৪১ সালে জাস্টিনিয়ান প্লেগে সেখানে দিনে মৃত্যুসংখ্যা ১০ হাজার পর্যন্ত উঠেছিল!

ব্ল্যাক ডেথ কি এখনো আছে?

8wRMjCH.jpg


১৯৭০–১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের যেসব অঞ্চলে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, উইকিপিডিয়া

ব্ল্যাক ডেথ মহামারি শেষ হয় চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। তবে প্লেগ রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। প্রতি শতাব্দীতেই এই রোগে কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা এবং পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার ফলে প্লেগ তেমন কোনো প্রভাব অবশ্য ফেলতে পারেনি। অ্যান্টিবায়োটিকে এটি নিরাময়যোগ্য হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর দুনিয়াজুড়ে গড়ে এক–তিন হাজার মানুষ প্লেগে আক্রান্ত হয়।

ব্ল্যাক ডেথ যেভাবে পৃথিবী বদলে দিল

G9N5c5z.jpg


বিখ্যাত ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী পিটার ব্রয়োগলের ছবিতে মধ্যযুগীয় ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথের পরিণাম, উইকিপিডিয়া

ব্ল্যাক ডেথ ইউরোপ ও এশিয়ার সামাজিক কাঠামো ভেঙে ফেলেছিল। অনেক পরিবার হয়েছিল নিশ্চিহ্ন। অনেক শহর পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে। এর ফলে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়েছিল। আক্রান্ত অঞ্চলে মানুষ কমে গিয়েছিল। শ্রমনির্ভর পৃথিবীতে দেখা দিয়েছিল শ্রমিকের সংকট। ফলে জীবিত মানুষদের সবকিছু শুরু করতে হয়েছিল নতুনভাবে।

সূত্র: হানড্রেড ইভেন্ট দ্যাট মেড হিস্ট্রি এবং হিস্ট্রি
 

Users who are viewing this thread

Back
Top