What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর - ‘রথচাইল্ড পরিবার’ (1 Viewer)

SoundTrack

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
530
Messages
13,427
Credits
283,140
Recipe pizza
Loudspeaker
হয়তো শুনে অবাক হবেন আজ প্রায় ২০০ বছর ধরে ইংরেজ সরকার ১৮১১ সালে ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের মধ্যকার যুদ্ধে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে লড়ার নিমিত্তে তৎকালীন জার্মানের ইহুদী এক পরিবারের কাছ হতে ধার করা অর্থ সাম্প্রতিক ২০১৫ সাল অবধি পরিশোধ করে আসছে। নাম জানতে চান কে সেই ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক পরিবার ? কি তাঁদের ইতিহাস ? কেনোই বা ইংরেজ সরকার আজও তাঁদের কাছে কর্জ পরিশোধ করছে ?

তবে ফিরে যাই অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন অর্থের সমার্থক শব্দ হিসেবে কেউ যদি বলতো রথচাইল্ড পরিবার তবে একটুও বাড়তি হবে না কারণ এ পরিবারের উৎপত্তি যার হাতে তিনি ছিলেন একজন ইহুদী বংশোদ্ভূত জার্মানী ব্যাংকার এবং রথসচাইল্ড ব্যাংকিং ডাইনেস্টির প্রতিষ্ঠাতা, যাকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠাটা পিতাও বলা হয়ে থাকে। যিনি ছিলেন ফোর্বস ম্যাগাজিনের সর্বকালের ২০ জন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৭ নম্বর স্থানে। জন্ম তার ১৭৪৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী মাসে জার্মানের ফ্রাঙ্কফুর্টে। তাঁর নাম “মায়ের আমশ্চেল রথসচাইল্ড”। তিনি ব্যবসায়িক মূলধন সরবরাহ, রেলওয়ে, সুয়েজ খাল নির্মানের জন্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিলেন। যার অর্থসম্পত্তির অর্থমূল্য প্রায় ৩০০ বিলিয়নের কাছাকাছি।

পিতা ‘আমশ্চেল মসেস রথসচাইল্ড’ ছিলেন পণ্য কেনাবেচা এবং মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসা এবং ছিলেন হেসে’র রাজপুত্র ওয়েলহেলমে’র নিজস্ব সংগ্রহীতব্য মুদ্রার সরবরাহকারী। তখনকার যুগে ইহুদীদের বৈধগতভাবে ছোটস্থানে বসবাস করা লাগতো খ্রিস্টানদের হতে দূরত্ব বজায় রেখে, এমনকি তারা খ্রিস্টানদের ছুটিরদিনে, রবিবারেও তাদের গ্রামে থাকার অনুমতিপ্রাপ্ত ছিল না।

আটজন সন্তানসহ তারা ছিলেন একই পরিবারের ৩০ জন সদস্যের একটা বড় পরিবার যাদের দোকানের উপর বিদ্যমান ছিল মাত্র ৩.৪ মিটার পুরত্বের একটা দেয়ালসমেত। তার মাতাপিতার মৃত্যু হয় মাত্র ১২ বছর বয়সেই। তার মাতাপিতার ইচ্ছে ছিল তাঁদের ছেলে একজন শ্রেষ্ঠ তোরাহ মাস্টার (রাব্বি) হবেন ইহুদী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে। ১৩ বছর বয়সে সে সিদ্ধান্ত নেয় হ্যানওভারে একটি ব্যাংকিং ফার্মে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগদানে এবং খুব অল্পসময়েই সে ব্যাংকিং সেক্টরের অভ্যন্তরীণ সবকিছু রপ্ত করে নেয়।

হয়তো পরে অন্য আর্টিকেলে ‘মায়ের আমশ্চেল রথসচাইল্ড’ সম্পর্কে জানা যাবে তবে এর আগে জানা যাক তার ছেলে ‘নাথান রথসচাইল্ড’ এর সাফল্যগাঁথা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য। নাথান ছিলেন আমশ্চেল দম্পত্তির চতুর্থ পুত্র যে পরবর্তীতে বড় সাফল্য লাভ করে তারই কূট বুদ্ধিমত্তার দাপটে। কেনো কূট বুদ্ধিমত্তা বলা হয়েছে তা নিচের বর্ণনাতেই বুঝা যাবে।

তখনকার যুগে রথসচাইল্ড এন্টারপ্রাইজই ছিল প্রথম ব্যাংক যা দেশের সীমানা অতিক্রম করে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। নাথান ছিলেন সম্মুখভাগে, যিনি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ছড়িয়ে দেয়ার অগ্রদূত। নাথান একজন মধ্যস্থতাকারী অর্থখাতের রুপে দেখা দেয় যা ইউরোপের রাজাদের হয়ে খরিদে, জাতীয় ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার এবং দেশের অবকাঠামোতে অর্থায়ন যেমন রেলপথ যা শিল্পবিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করেছিলো।

১৭৯৮ সাল…।। মায়ের রথসচাইল্ডের সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাধর এবং কর্মঠ ছিলো নাথান মায়ের রথসচাইল্ড। মাত্র ২১ বছর বয়সে ফ্রাঙ্কফুর্ট ছেড়ে পাড়ি জমান ম্যানচেস্টার। পিতা মায়ের আমশ্চেল রথসচাইল্ড প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হওয়া সত্ত্বেও খুব সাধারণভাবে নাথান ইংল্যান্ডে স্থানান্থর হয়ে মাত্র ২০ হাজার ডলার মূলধন নিয়ে একটা বুননশিল্প কেনাবেচার ব্যবসা স্থাপন করে যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১.৯ মিলিয়ন ডলারের সমান। পাশাপাশি ২৭ বছর বয়সে সে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে স্টক কেনাবেচা শুরু করলো। ইতিমধ্যে সে একটি ব্যাংক স্থাপন করে যার নাম ছিল N.M Rothschild & Sons. Ltd. নামে। ফার্মটি দেশটির চলমান ৭ টি পুরাতন ব্যাংকের অন্যতম যা আজও রথসচাইল্ড পরিবার কর্তৃক পরিচালিত যার ২০১৪ সালের শেষের দিকে নীট লাভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার যা অন্যান্য রথসচাইল্ড ব্যাংকের মতোই পুরো ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত। N.M Rothschild & Sons. Ltd. সরকারকে অর্থায়ন করতো যুদ্ধকালীন সময়ে।

তার দুরন্তর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পায় ১৮১১ সালে নেপোলিয়নের সাথে ইংল্যান্ডের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। তাঁর প্রতিষ্ঠান সে সময়কালে ব্রিটিশ সরকারকে বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহায়তা এবং ভর্তূকি প্রদানে সহায়তা করতো যা ব্রিটিশ সরকার তাঁদের সাহায্যকারী মিত্রদের পাঠাতো এবং ব্রিটিশ সেনাদলের ফান্ডের কাজে ব্যবহৃত করত। বলতে গেলে একপাক্ষিক ব্রিটিশ যুদ্ধের সহায়তায় সাহায্য করতো নাথানের প্রতিষ্ঠান।

NdYhdqR.jpg


Source: National Vanguard

কিন্তু মজার বিষয় হলো একইসাথে সে প্রতিপক্ষ দল নেপোলিয়নকেও অর্থ সহায়তা প্রদান শুরু করলো গোপনে যেহেতু ফ্রান্সেরও তাদের সৈণ্যদের অর্থপ্রদানের নিমিত্তে অর্থের খুব প্রয়োজন ছিলো। নাথান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুপাক্ষিক যুদ্ধকে তার ব্যবসা সম্প্রসারণের সম্বল হিসেবে ব্যবহার করতে লাগলো। তার মুল উদ্দেশ্য ছিলো দু পক্ষকে অর্থের যোগান দিয়ে দু পক্ষ হতেই সুবিধা গ্রহণ করা।

দিন ছিল জুলাই মাসের ১৮ তারিখ, ১৮১৫ সাল। ইংরেজ সরকারের নিজস্ব এজেন্ট কুরিয়ার জানালো যে নেপোলিয়ন Waterloo তে পরাজিত হতে যাচ্ছেন। তবে ইংরেজ সরকার নেপোলিয়নের পরাজিত হওয়ার খবর অবিশ্বাস্য মনে করে উড়িয়ে দিয়ে কুরিয়ার সংবাদ প্রত্যাখ্যান করলো এবং এটাকে মিথ্যে সংবাদ বলে অভিহিত করলো। এহেন মুহূর্তে, ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ ভয়াবহতার সম্মুখীন দেখে রথসচাইল্ড তাদের সকল বন্ড বিক্রি করতে আরম্ভ করলো এবং সবার কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য করতে আরম্ভ করালো যে নেপোলিয়ন যুদ্ধে জিতেছেন এবং খুব শীঘ্রই ইংরেজ সরকারের বন্ডের মূল্যহীন হয়ে পড়বে তাই বেঁচে দেয়াই শ্রেয়। যেহেতু রথচাইল্ড প্রতিষ্ঠানের বিশ্বস্ত এবং সম্মানী বিনিয়োগকারী হিসেবে সুনাম ছিলো তাই ইংরেজরা সহজেই তার কথা শুনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে যার ফলাফল গণহারে বন্ড বিক্রি করা শুরু করে যার ফলে নিমেষেই লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে এক বিরাট ধ্বস নামিয়ে আনে। ঠিক যেনো এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল নাথান এবং খুব দ্রুত তার নির্দেশে রথসচাইল্ড এজেন্টরা খুব কম মূল্যে বেঁচে দেয়া সেসব বন্ড সংগ্রহ করে নেয় এবং ইংরেজ সরকার যুদ্ধক্ষেত্রের সত্যতা জানার আগেই রথসচাইল্ড প্রতিষ্ঠান ইংল্যান্ডের সেন্ট্রাল ব্যাংক, “ ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড “ এর কর্তৃত্ব দখলে নিয়ে নেয়।

বলাবাহুল্য যে তার এ কাজের দরুন বহু মানুষের কষ্টে সঞ্চিত অর্থ এবং জীবিকা বিসর্জন দিতে হয়েছিলো অনিচ্ছাসত্ত্বেও। যতোদিনে ইংল্যান্ডের শাসকেরা ঘটনার সত্যতা বুঝতে পেরেছিলো ততোদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো। নিরুপায় হয়ে জার্মানের “রেড শিল্ড” (রথসচাইল্ড) এর হাতে সবকিছু হস্তান্তর করতে তারা বাধ্য ছিলো যেহেতু কারো কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণই ছিলো না নাথানের এহেন কর্মকান্ডের।

তারই ঠিক দুইদিন পরে ওয়েলিংটন দূত নিশ্চিত করে নেপলিয়নের পরাজয়ের কথা কিন্তু ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জ পুরোপুরি নাথানের দখলে চলে এসেছিলো। আরো মজার বিষয় হলো, ২০১৫ সাল অবধি আজও ইংরেজ সরকার রথসচাইল্ড পরিবারকে অর্থ পরিশোধ করছে যা নেপোলিয়ন যুদ্ধক্ষেত্রে ধার করা হয়েছিলো। হ্যা, আজ প্রায় ২০০ বছর ধরে সে কর্জ আজও পরিশোধ করতে হচ্ছে ইংল্যান্ড সরকারের।

নাথান তৎকালীন সময়ের কর্মকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরই একটি বাণী ছিলো,

“ Buy on the sounds of cannons, sell on the sound of trumpets. ”

যদিও নাথান তার জীবনকালে ইহুদী সম্প্রদায়ের জন্যে অনুদান দিয়েছিলেন। পরে তার পরিবার অনুদান কার্যক্রম ইউরোপ এবং ইংল্যান্ডের অন্যান্য জনপদের মাঝেও বিস্তৃত করেন। বর্তমানে তাঁদের অধীনে প্রায় ৩০ টি ফাউন্ডেশন চলমান যার মধ্যে পাবলিক লাইব্রেরী, এতিমখানা, হসপিটাল, বৃদ্ধাশ্রম, শিক্ষার নিমিত্তে গড়া স্পেশাল ফান্ড যার মধ্যে লন্ডনে অবস্থিত “ The Jew’s Free School “ অন্যতম। তাছাড়াও অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স এবং ইসরায়েলেও ছড়িয়ে পড়েছে তাদের এই ব্যবস্থা।

নাথানকে দোষী সাব্যস্ত করতে যদিও আইন খুঁজে প্রমাণ যা ছিলো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তাই তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন ফোর্বস ম্যাগাজিনের অন্যতম সেরা ব্যবসায়ীদের স্থানে। ব্যবসায়িক ভাষায় তিনি ছিলেন সফল কিংবদন্তীদের তালিকায়। তিনি ছিলেন একাধারে একজন দাতা, সফল ব্যবসায়ী এবং তৎকালীন দাসত্ব প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন ব্যক্তি।

দিনটি ছিলো ২৮ জুলাই ১৮৩৬ সাল যেদিন নাথান মায়ের রথসচাইল্ড মৃত্যুবরণ করেন তবে এর আগেই পৃথিবীর বুকে রথসচাইল্ড পরিবারের যে ভিত্তিটা গেঁথে দিয়ে যান তা আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে দ্বিদশকে এসেও।
 
ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের মধ্যকার যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইংরেজ সরকারের ভাগ্যকে যারা ২০০ বছর ধরে কয়েদ করে রেখেছিলো তারাই ব্রাজিলকে পর্তুগাল হতে আলাদা করতে এগিয়ে এসেছিলো। একদিকে পুরো ইংরেজদের ভাগ্যকে যারা হাতের পুতুল করে নাচিয়েছিলো সেই আবার ব্রিটিশ সরকারকে ঋণ খেলাপি হওয়ার মুখ হতে উদ্ধার করে এনেছিলো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আর সাথে ছিলো সুয়েজ খাল খরিদের জন্য আঠারো শতকে ব্রিটিশ সরকারকে দেয়া পুরো ৪ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার অভূতপূর্ব কাহিনী। এমনই অজানা অনেক চমকপ্রদ বিষয়গুলো আসলেই বিস্ময়ের জন্ম দিবে, জানতে ইচ্ছে হবে এর পিছনে থাকা শক্তিধর অবয়ব কে যাদেরকে বিশ্বের বহু যুদ্ধের পিছনে দাঁড়িয়ে কলকাঠি নাড়ানোর জন্যে দায়ী করা হয়। জ্বী, রথসচাইল্ড পরিবার সম্পর্কে এবারের শেষ পর্বে আরও কিছু জানা যাক।

সময় ছিলো ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর।ব্রাজিল সাম্রাজ্য চাচ্ছিলো পর্তুগালের প্রভুত্ব হতে নিজেদের মুক্ত করতে। প্রায় দুশো বছর পূর্বে সেই নাথান মায়ের রথসচাইল্ড এগিয়ে এসেছিলেন ব্রাজিলের পক্ষে। বিভিন্ন ধরণের প্রচেষ্টার পর ব্রিটিশ সরকারের চাপে শেষমেশ পর্তুগাল সরকার ব্রাজিলকে স্বাধীনতা দিতে সম্মতি জানালো এই শর্তে যে ব্রাজিলের নতুন রাজ্য দ্বারা পর্তুগালের সাম্রাজ্যের যে সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং ক্ষতিসাধণ হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একদিকে স্বাধীনতার স্বাদ পেতে মরিয়া ব্রাজিল পড়ে গেলো দোটানায় কারণ ২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেয়ার মতো অর্থ তাদের ছিলনা সেই মুহুর্তে তাছাড়া বাকি দেশের পরিপার্শ্বিক অবস্থা গুছিয়ে নিতেও বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।

এইদিকে স্বাধীনতা লাভের পরেও পর্তুগালের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে ব্রাজিলের কারণ অন্যান্য ইউরোপীয়রা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার বলে দিয়েছে তারা তখনই ব্রাজিলের পক্ষে সম্মতি দিবে যখন তাদের সাথে পর্তুগালের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে।

এ মুহুর্তে ত্রানকর্তা হিসেবে এগিয়ে এলেন নাথান রথসচাইল্ড। ১৮২৫ সালে তিনি ঋণ সহায়তা গৃহীত করলেন ব্রাজিলকে তাদের স্বাধীনতা পর্তুগাল হতে সুরক্ষিত করতে। শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণের চুক্তির টাকাই নয় বরং রেলপথ এবং দেশের কাঠামো পুনর্গঠনেও সেই সময় এই অর্থ ব্যাপক সাহায্য করে।

d7435e6.jpg


লিওনেল নাথান দে - Source: Fine Art America

এরই ভিত্তি ধরে এগিয়ে যায় নাথান রথসচাইল্ডের বড় পুত্র লিওনেল নাথান দে রথসচাইল্ডের সাফল্যগাঁথা। তার বাবার মতোই ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে তার কর্মকান্ড ছিলো চোখে পড়ার মতো। তেমনই এক অভাবনীয় সাফল্য ছিলো সুয়েজ খাল খরিদের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারকে পাক্কা ৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা করে।

সময়টা ছিলো ১৮৭৫ সাল। ইতিমধ্যে ১৮৬৯ সালে চালু হওয়ার পর ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া সুয়েজ খালের শেয়ার কিনে নিই তবে ফ্রান্সের মধ্যে খালের শেয়ার অতিদ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। পরক্ষণে ব্রিটিশ সরকার পর্যবেক্ষণ করে সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের চলমান প্রকল্প তাদের ভূরাজনৈতিক এবং আর্থিক সংকল্প ঝুঁকির শংকায় ফেলছে।

তৎকালীন মিশরের শাসক ইসমাইল পাশা অভ্যন্তরীণ ঋণের দায়ে নিজের দেশের ভাগে থাকা সুয়েজ খালের লোহিত সাগর এবং মেডিটেররানেয়ান সাগরের সংযোগস্থল হিসেবে চিহ্নিত ওই অংশটুকু বিক্রি করতে উদ্যত হয়। সুযোগ এটাকে কাজে লাগাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটিশ গভমেন্টের ভারপ্রাপ্ত বেঞ্জামিন ডিসরায়লিকে কোন ধরণের কাগজাদি চুক্তি ব্যতীত বন্ধু হিসেবে ৪ মিলিয়ন ডলার অগ্রীম ঋণ প্রদান করেন যার বর্তমান আর্থিক মূল্য প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার।
মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই সেই ঋণ যদিও পরিশোধ করা হয় কিন্তু উইলিয়ান গ্লাডস্টোন দ্বারা ডিসরায়লিকে অভিযুক্ত করা হয় ব্রিটেন শাসনতন্ত্রের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে কারণ তাঁর কাছে সুয়েজ খালের হিস্যা কেনার পক্ষে রথসচাইল্ড কোম্পানী থেকে অর্থ সহায়তা সম্পর্কে সভা হতে কোন ধরণের সম্মতির পক্ষেসুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায়। আজ অবধি যদিও সুয়েজ খালের অধিকাংশ শেয়ার ফ্রান্সের অধীনস্থ।

আরেকটি মজার তথ্য জেনে নেয়া যাক

সময় ১৮৯৫। পুরো আমেরিকা জুড়ে দেখা দিয়েছিলো ইতিহাসের অন্যতম অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা যার একমাত্র কারণ ছিলো বিদেশীরা মন্দার ভয়ে তাদের স্টক বিক্রি করে দিচ্ছিলো এবং তাদের রক্ষিত ডলারকে স্বর্ণে রুপান্তর করছিলো যা আমেরিকার বাইরে চলে যাচ্ছিলো যার ফলস্বরুপ ১৮৯০ – ১৮৯৪ এর মধ্যে বিদেশীরা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মতো স্বর্ণে রুপান্তর করে ফেলে ফলশ্রুতিতে ১৮৯৩ এর শেষের দিকেকোষাগারে সংরক্ষিত স্বর্ণের পরিমাণ কমে ৬০ মিলিয়নে চলে আসে এবং দৈনিক ২ মিলিয়নেরও বেশি স্বর্ণ মুদ্রা দৈনিক খালাস হতে লাগলো। ১৮৯৪ এর ফেব্রুয়ারীর দিকে আমেরিকার সরকারের কাছে আর মাত্র ৩ সপ্তাহের স্বর্ণ সংরক্ষিত ছিলো। ঋণখেলাপি হওয়া সময়ের ব্যাপার। সরকার ভীতসন্ত্রস্ত ঋণখেলাপি হওয়ার আশংকায় কারণ ঋণের বিপরীতে থাকা সংরক্ষিতস্বর্ণের পরিমাণ কমে যেতে লাগলো। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লেভল্যান্ড ব্যাপারটা জানতো কিন্তু তবুও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন ঋণখেলাপি হতে বাঁচতে। শেষমেষ তিনি নাথানিয়েল মায়ের রথসচাইল্ডের সাহায্যের শরণাপন্ন হলেন জে.পি.মরগানের মাধ্যমে। প্রেসিডেন্ট ক্লেভল্যান্ডজে.পি.মরগান এবং নাথানিয়েল রথসচাইল্ডের বেইল-আউট টীমকে বললেন যেনো স্বর্ণ দেশের ভিতরেই রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়। সরকার ইতিমধ্যে সাড়ে ৩ মিলিয়ন আউন্স স্বর্ণ ১৭.৮০ ডলার প্রতি আউন্স বেইল-আউট টিম হতে কিনে নিতে সম্মত হয় যার বদলে ৬২.৩ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ৩০ বছর মেয়াদী বন্ড যার রাউন্ডিং ৪% হারে। ৬২.৩ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ৩০ বছর মেয়াদী বন্ডের পরিবর্তে তখন ৬৫.১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ হয়ে গিয়েছিলো রথসচাইল্ডের কাছে। মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে প্রস্তাবিত মূল্যে বন্ডগুলো ২০ মিনিটের ভিতরেই বিক্রি হয়ে যায়। এই বন্ড বিক্রির পরে প্রায় ১২৫ পর্যন্ত গিয়ে টেকে। এই ৩০ বছর মেয়াদী বন্ড ১৯২৫ সালেও ১০০ তে পুনরায় খরিদ করা হয় এর আসল মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। এভাবেই মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই আমেরিকার ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছিলো রথসচাইল্ডের হাতে।

আর্থিক দিক বাদ দিয়ে তাদের পারিবারিক কিছু ঘটনা আছে যার কিছুটা রীতিনীতি, কিছুটা শখ

তেমনই এক রীতিনীতির মধ্যে পড়ে তাদের পরিবারের রক্তের সম্পর্কের ভেতরেই বিয়ে সম্পন্ন করার রীতিনীতি। এর একটা মাত্রই কারণ ছিলো যাতে তাদের বংশবৃদ্ধির সম্প্রসারণ একই পরিবারের ভেতরেই হয় যাতে করে ব্যবসার সম্প্রসারোণ শুধুমাত্র তাদের নিজেদের মধ্যেই হয়ে থাকে এবং অর্থবিত্তকে ধরে রাখার, বাইরের কারোও হাতে কুক্ষিগত না হওয়ার এর চেয়ে ভালো উপায় হয়তো আবিষ্কৃত হয় নিই তৎকালীন সময়ে।

শখ বলতে, রথসচাইল্ড সদস্যদের মধ্যে লর্ড ওয়াল্টার ছিলেন প্রাণীবিদ্যায় আসক্ত। শৈশবে তিনি বিভিন্ন প্রকার প্রাণী আর কীটপতঙ্গ সংগ্রহ করতেন। অনেকটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দিলেও ১৯০৮ সালে তার মা-বাবা কর্তৃক স্থাপিত প্রাণীবিদ্যা বিষয়ক যাদুঘরের স্থাপনার পর তিনি ছিলেন মুক্ত, সে সময়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন পুরো বিশ্বের বিভিন্ন প্রাণীর প্রজাতির সম্পর্কে জানতে। এমনকি তিনি কমিশনভিত্তিক গবেষক নিয়োগ দিয়েছিলেন তার পক্ষ হয়ে এ কাজ করতে। তিনি বিখ্যাত ছিলেন তার জেব্রা কর্তৃক বাহিত যানবাহনের জন্যে কারণ তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন চাইলেই যেকোনো প্রাণীকেই শিক্ষায় দীক্ষিত করা যায়।

সাল ১৮৮০ সাল। রথসচাইল্ড কোম্পানী Rio Tinto নামক অস্ট্রেলিয়ান খনি খননকারী কোম্পানীর সাথে যোগ দেয় যে কোম্পানী গঠিত হয় ১৮৭৩ সালে। রথসচাইল্ড কোম্পানী যোগ দেয়ার পর তাদের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে তারা খনিজ মূল্যবান ধাতু, তামা, তেজস্ক্রিয় ধাতু, কয়লা, হিরেসহ আরো বহুকিছু উৎপাদন করে।

শুধুমাত্রই কি তারা আর্থিক লেনদেনে ন্যস্ত ছিলেন? ইতিমধ্যে তাদের খনি আহরণ ব্যবসায়ে সম্পৃক্ততা দেখেছি তবে এটা হয়তো অনেকেরই অজানা যে তারা মধ্য পানীয়ও প্রস্তুত করতো। প্রায় ১৫০ বছর ধরে বলতে গেলে। শুরুটা হয় নাথানিয়েল রথসচাইল্ডের হাত দিয়ে “Château Mouton Rothschild“ কোম্পানীর মাধ্যমে।
 
Nl1e97F.jpg


Château Mouton Rothschild - Source: Bordeaux Investment Wines

এবার আসুন ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিসের উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই। ১৮৫৫ সালে ব্যারন ডে রথসচাইল্ড “ Château de Ferrières“ নির্মাণ করেন। প্রায় এক শতাব্দী এ বাড়ির মালিকানা পুরুষদের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছিলো।

জার্মান সম্রাট উইলিয়াম রথসচাইল্ড ম্যানশন সম্পর্কে বলেছিলেন, “ রাজারা পর্যন্ত এমন দালানের ব্যয় বহন করার ক্ষমতা রাখে না। শুধুমাত্র রথসচাইল্ডদের দ্বারায় এটা করা সম্ভব। “

১৯৭৫ সালে গায় দে রথসচাইল্ড এ বিশাল সাম্রাজ্য বাড়িটি ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিসের নামে দান করে দেন।

রথসচাইল্ডদের মধ্যে ডেরেক ডে রথসচাইল্ড ছিলেন পরিবেশবাদী এবং এ হতে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রায় ১২ হাজার বোতল দিয়ে একটি “ক্যাটামারান” যা একধরণের জলযান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিনি সেটা নিয়ে ৮ হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছিলেন তার ক্রু’দের নিয়ে। রিসাইক্লিং জিনিসপাতি দিয়ে জলযান বানানো অসম্ভব বলে যারা মনে করতো ডেরেক রথসচাইল্ড তাদের ভুল প্রমাণ করেছিলেন।

হয়তো অনেকেরই অজানা বিষয়টা যে, সম্রাট ফ্রান্সিস আই কর্তৃক মায়ের আমশ্চেল রথসচাইল্ডের পাঁচ সন্তান – আমশ্চেল মায়ের, স্যালমন মায়ের, নাথান মায়ের, ক্যালম্যান মায়ের এবং জ্যাকব মায়ের “অভিজাত/বুনিয়াদি/সম্ভ্রান্ত” (Noble) পদবী লাভ করেছিলেন যার কারণে তাদের পরবর্তী বংশধরেরা “de” অথবা “von” পদবী ব্যবহার করতো “Rothschild” এর আগে তাদের পদবী বুঝানোর জন্যে।

Qq44ejk.jpg


মায়ের আমশ্চেল রথসচাইল্ডের পাঁচ সন্তান - Source: Shut Racism

নাথান মায়ের রথসচাইল্ড দিয়ে যে পরিবারটার জন্ম হয়েছিলো তাঁরই মৃত্যুতে এতটুকু ম্লান হতে দেয় নিই তার পরিবার, তার বংশধরেরা। ততোধিক পরিশ্রম, মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে গড়ে তুলেছে এক বিশাল সাফল্যের ভিত, অবদান রেখেছেন পৃথিবীর অনেক দিকে পুনর্গঠনে, অবদান রেখেছে আর্থসামাজিক কল্যাণে, কারো ভাগ্যের পতন তাদের হাতে ঘটে থাকলেও তার চেয়ে বেশি গঠন হয়েছিলো এই পৃথিবীর অন্যতম বিত্তশালী এ পরিবারের মধ্য দিয়ে। যে শির একবার উঁচু করে দাঁড় করিয়েছে তা আর নুয়ানোর মতো নয় বরং আজন্ম উঁচু করেই থাকবে।
 
ভাই এরা কি!!
রাজা বাদশাহ সরকাররা দেশ চালায়, এরা তাদের চালাচ্ছে
দারুণ জিনিষ জানলাম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top