দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে খুললে যেমন শুব্দ হয় তেমন শব্দ করেই দরজা টা খুলে গেল!
আমি চোখ মেলে তাকালাম,একটা মেয়ে ঢুকলো রুমে!
সুন্দর মেয়ে! সাদা ড্রেস পড়া!
হাতে একটা বিড়াল!
কোন পরী নাকি! বিড়াল পরী অথবা বিড়ালের দেশের রাজক্ণ্যা!
মেয়েটা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেন বলল অনেক ক্ষন ধরে তারপর যে ভাবে ঘরে ঢুকেছিল সেভাবেই চলে গেল।
কি কি বলল আমার কানে কিছুই ঢুকল না, শুধু কিছু একটা বলছে এটা বুঝতে পারলাম।
মেয়েটা চলে যাওয়া মাত্র আমার চোখ আবার বন্ধ হয়ে গেল, আমি আবার ঘুমালাম।
.
তবে যখন আমার ঘুম ভাঙল তখন মনে হল ব্যাপার টা স্বপ্নে ঘটেছে! আমি মাকেও এ ব্যাপারে তেমন কিছু বললাম না।
মেয়ের কথা বললে আবার মা উলটা পালটা কিছু ভাববে! কারণ এ বিল্ডিং এ প্রচুর মেয়ে।
তবে যে মেয়েটা আমার রুমে এসেছিল তার মতো সুন্দরী মেয়ে এ পাড়াতেও নেই!
আর অবিবাহিত ছেলেরা এসব স্বপ্ন প্রায় দেখে।
আমি ব্যাপার টা গুরুত্ত্ব না দিয়েই নিজের কাজ করতে লাগলাম।
.
তবে ঘটনা উল্টা হলো তখন, যখন বিকালের দিকে ছাদে গেলাম। ছাদের এক পাশে দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে।
কিছুক্ষন বাদে যখন মেয়েটা আমার দিকে তাকালো তখন তার চেহারা টা দেখতে পেলাম।বিকেলের আগে যে মেয়েটা আমার রুমে এসেছিল এই মেয়েটা সেই মেয়েটা!
তার মানে ব্যাপার টা বাস্তবেই হয়েছিল শুধু একটু চেঞ্জ আছে তখন মেয়েটার চোখে চশমা ছিল না তবে এখন আছে।আমার রুমে কেন গিয়েছিল জিজ্ঞেস করা দরকার। আর হ্যাঁ মেয়েটার হাতে বিড়াল ছিল তখন এখন নেই এই ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করতে হবে!
.
আমি মেয়েটার কাছে যেতেই মেয়েটা এমন ভাবে মুখটা ভেংচাল যেন আমি পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানব।আমি আরেক টু কাছে যেতেই মেয়েটা কি যেন বলে গেল। সম্ভবত ইডিয়ট টাইপ কিছু একটা।
কি হলো কিছুই বুঝলাম না!
আমি অবশ্যই মেয়েটার কোন ক্ষতি করিনি! আর আজকেই তো আমাদের প্রথম দেখা সম্ভবত!
তাহলে সমস্যা কি?
কাকে জিজ্ঞেস করবো বুঝলাম না।
তবে বাসায় যখন গেলাম তখন ছোট বোন কে জিজ্ঞেস করলাম, বিল্ডিং এ নতুন কেউ আসছে কিনা?
তখন ও বলল, রাইহা আপুর কথা বলছি কি না?
.
মেয়েটার নাম তাহলে রাইহা।মেয়েটার নামের চাইতে মেয়েটা দেখতে বেশি সুন্দর!
তবে মেয়েটা কেন এসেছিল এটার উত্তর এলো মায়ের কাছ থেকে। এই রাইহা নামের মেয়েটা নাকি বিড়াল ভালবাসে!
ওর বাসায় নাকি কয়েক টা বিড়াল থাকে। আমি নাকি ওর প্রিয় বিড়াল কে আঘাত করছি! এজন্যই বকতে আসছিল আমাকে।
আমি কখন বিড়াল কে আঘাত করেছি মনে পড়ল না।
অনেক চিন্তা করেও মনে এলোনা।
.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে যখন বিছানায় শুতে গেলাম তখন মনে পড়ল সকালের ঘটনা। দুই দিন ধরে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখি ঘরে একটা বিড়াল বিছানার ওপর শুয়ে থাকে। তাই আজ সকাল বেলা কাঁধের স্কুল ব্যাগ টা ছুড়ে মারি বিড়াল টার দিকে, এতেই হয়ত লেগেছে!
তবে মেয়েটা কিভাবে বুঝল আমি মেরেছি! বিড়াল টা বলেছে নাকি! এই মেয়ে বিড়ালের ভাষা বোঝে!
যাই হোক, এত রাগ হওয়ার কি আছে এতে?
এসব প্রাণী রোগ জীবানু ছড়ায় তাই ওভাবে ব্যাগ ছুঁড়ে মারছিলাম।
আমি রাইহার ব্যাপার টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম, কারণ এরকম মেয়ের সমন্ধে বেশি ভাবলে প্রেমে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর আমি এমন একটা মেয়ের প্রেমে পড়তে চাইনা যে বিড়াল পছন্দ করে, এরা বেশ নোংরা হয়!
দেখতে যতই কিউট হোক না কেন, তাদের অভ্যাস বদলায় না।
.
তবে পরের দিন সকাল বেলা রাইহা নামের মেয়েটার সাথে আরেক বার দেখা হয়ে গেল। মেয়েটা এবারো আমাকে দেখে মুখ ভ্যাংচালো। এত সুন্দর মুখ টা ভ্যাংচানোরর জন্য অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা ওকে দেয়নি। এত সুন্দর মুখ হাসার জন্য।
তবে আমি চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করলাম স্যরি বলব।
এত সুন্দর মুখ টা আমার কারণে ভ্যাংচানো হোক তা আমি কিছুতেই চাইনা। তাই বিকেল বেলা স্যরি বলার চিন্তা ভাবনা করেই ছাদে গিয়ে রাইহার সামনে দাঁড়ালাম। ও অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল, ওর পাশে সেদিনের বিড়াল টাও ছিল।আমি ডাক দেওয়ার আগে বিড়াল টা আমাকে দেখে ম্যাঁও করে চেচিয়ে উঠল।
রাইহা মুখ ঘুরিয়ে আমাকে দেখা মাত্রই বলল,
-সমস্যা কি আপনার? আবার মিনি কে মারতে আসছেন?
.
বিড়ালের নাম তাহলে মিনি। রাইহা আরো বলল,
-এত সুন্দর একটা বাচ্চা কে ভালবাসতে পারেন না, মানুষকে কি করে বাসবেন।শুধু শুধু বড় হইছেন।
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাইহা শুধু বলেই গেল এর মাঝে অবশ্য মিনি সুযোগ পাচ্ছিল, ও মাঝে মাঝে ম্যাঁ ও ম্যাঁও করছিল। ম্যাঁও ম্যাঁও করে কি বলছিল কে জানে! হয়ত রাইহা বুঝতে পারছিল তাইতো যখনি মিনি ম্যাঁও করছিল তখনি রাইহা বেশি রেগে যাচ্ছিল। তাই যখনি রাইহা আর মিনি দুজনেই চুপ করলো তখনি আমি দেরী না করে ছাদ থেকে পলায়ন করলাম।
ছাদে থাকা খুবই রিস্কি হয়ে যাচ্ছিল।
.
বাসায় গিয়ে অনেক চিন্তা করলাম রাইহাকে কিভাবে স্যরি বলা যায়। চিঠি লিখা যায় তবে অন্য কিছু ভেবে নিলে সমস্যা। ফোন নাম্বার ও নেই।
তবে এই চিন্তার অবসান হলো আমার ছোট বোন এর মাধ্যমে ওই বলল, বিড়ালের জন্য খাবার কিনে নিয়ে রাইহার সামনে উপস্থিত হতে।
.
আমি দেরী করলাম না, সোজা রাইহার বাসার কলিং বেল বাজিয়ে দিলাম।গেট রাইহার মা খুলে দিল। এই মহিলার সাথে বিকালে আমার পরিচয় হয়েছে।
রাইহাকে নিয়েও ওনার সাথে কথা হয়েছে। উনি মনে করেন ওনার মেয়ের মানসিক সমস্যা এটা। আমার ঘটনা টাও খুলে বলাতে উনি আমাকে রাইহার রুম দেখিয়ে দিলেন।
আমি দরজায় টোকা দিতেই বিড়াল ম্যাঁও করে উঠল। দরজার পাশেই দেখি মিনি। তবে ঘরের ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, কে এসেছে মিশকি?
.
এ বাসায় বিড়াল কটা, দুটা! দুটাই দেখতে এক রকম"
মিনি আর মিশকা! আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
-আসবো?
-কে?
-আমি!
-আমি কে?
-যে মিনি কে,
এটুকু বলতেই রাইহা চেঁচিয়ে উঠে বলল,
-সমস্যা কি?
তাতেই গেট খুলে গেল। আমি আর রাইহা সামনা সামনি। আমি এবার বলার সুযোগ পেলাম, বললাম,
-দেখুন, আমি দুঃখিত!
কাল সকালের ব্যাপার টা একসিডেন্ট ছিল,
.
তখনি পাশে বসে থাকা মিনি ম্যাও করে উঠল। রাইহা কি যেন ভেবে বলল, আচ্ছা ঠিকাছে মিনি আপনাকে মাফ করে দিয়েছে।
-ধন্যবাদ! আমি মিনির জন্য কিছু এনেছিলাম!
-কি!
-কিছু খাবার!
-আসুন ভেতরে।
.
রাইহার রুম ওর মতই সুন্দর। তবে দেয়াল জুড়ে বিড়ালের ছবি, আমি গিয়ে চেয়ারে বসব তখনি চেয়ারে উপর থেকে কেউ ম্যাঁও করে উঠল।আমি চমকে উঠলাম। আরো একটা বিড়াল। আমি কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
-বাসায় কটা বিড়াল!
-ছটা!
-ছটা?
-হুম,মিনি মিশকি, গোল্টু,মোল্টু,টিনি, ডোরেমন!
এদের মধ্য গোল্টু মোল্টু দুই ভাই। এরা সারাদিন বাইরে থাকে রাতে এসে ঘুমায়!
-ওহ, খুব ভাল।
(আমি অবশ্য অবাক হলাম বিড়াল গুলো দেখতে প্রায় একই রকম, মনে থাকে কিভাবে কোন টার নাম কি)
.
আমি খাবারের প্যাকেট টা রাহিয়া হাতে দিয়ে বললাম,
-নিন!
.
বিড়ালের খাবার সংগ্রহ করা খুবই কষ্টের!
বিড়ালের প্রিয় খাবার কি?মাছের কাঁটা!
কিন্তু বাসি মাছের কাঁটা কই পাই! ছোট বোন যখন শুনল বিড়াল দের জন্য আমি মাছের কাঁটা খুঁজছি তখন ও বলল,
-এসব নিয়ে গেলে রাইহা ঘরেই ঢুকতে দেবেনা।
এটা শুনে আমি বললাম,
-বিড়াল তো এগুলাই খায়!
-রাস্তার বিড়াল খায়, ভাল কিছু নিতে হবে!
-কি!
-আমি জানিনা!
তারপর ফ্রিজ থেকে মাছ বের করে নিয়ে এসেছি। রাইহা মাছ দেখে বলল,
-মাছ! এত ভাল খাবার এরা খুব কম খায়!
-সমস্যা নাই! একদিন খেলে কিছু হবেনা!
-আচ্ছা,
.
রাইহা আমাকে ঘন্টা খানেক ধরে বিড়ালের ব্যাপারে বলল, বিড়ালের বেঁচে থাকা, রোগ। বোরিং লাগলেও উঠতে পারছিলাম না। চাইছিলাম রাইহা বলতেই থাকুক।
সেদিন রাতের খাবার রাইহাদের বাসাতেই খেয়ে এলাম।
এর পর থেকে মিনি নিয়মিত আমার বেডে এসে শুয়ে থাকত,মাঝে মাঝে মিশকিকেও আনত। আমি চুপচাপ দেখতাম।আমি কিছুতেই রাইহার সামনে খারাপ হতে চাইছিলাম না।
.
তবে এই বিড়াল গুলো খুব ঝামেলার ও ছিল! এদের জন্য যদিও রাইহার সাথে আমার পরিচয় কিন্তু এদের কারণেই রাইহার সাথে আমার কিছু হচ্ছিল না!
এক বিকেলে রাইহাকে বললাম,
-চলো কোথাও ঘুরতে যাই!
রাইহা রাজী ও হয়ে গেল।কিন্তু সাথে করে নিয়ে এলো ওর প্রিয় বিড়াল মিনিকে।
যে সব খানে ম্যাঁও ম্যাঁও করে! রোমান্টিক কিছু বলার শুরুতেও! আর তখন রাইহার মিনির দিকেই মনোযোগ দেয়!
আমি শিউর আমার সাথে রাইহার কিছু হয়ে গেলেও, ও আমার চাইতে এই বিড়াল টাকেই বেশি ভালবাসবে।
প্রেমের পর পারসোনাল টাইম বলেও কিছু থাকবেনা, সব হবে বিড়াল টাইম।
.
আরেক দিন বিকালে রাইহা কে জিজ্ঞেস করলাম,
-আচ্ছা, তোমার ভবিষ্যৎ প্লান কি?
ও কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল,
-বিড়াল দের জন্য একটা অরফানেজ খোলা!
-বিড়াল দের অরফানেজ!
-হ্যাঁ, এটা খুব দরকার!
-আর অন্য কোন প্লান নাই? মানে প্রেম ভালবাসা!
-হ্যাঁ, সবই তো বিড়ালের জন্য!
.
সেবার আমার প্রথম মনে হয়েছিল, আমি বিড়াল হলে খারাপ হত না। রাইহার ভালবাসা টুকু পেতাম আর কিছু না পেলেও!
.
আমি কোন ভাবেই কিছু করতে পারছিলাম না!
এই মেয়েকে পটাতে কি করতে হবে মাথায় আসছিল না তবে এ থেকে উদ্ধার করল এলাকার মন্টু ভাই। ওনাকে আমরা লাভ গুরু হিসেবে জানি। মন্টু ভাই বলল,এসব মেয়ে যা পছন্দ করে সেগুলো কে শুধু গুরুত্ত্ব দিলেই হবে।
আমিও ব্যাপার টা কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। রাইহা যতটা বিড়ালের খেয়াল রাখছিল আমি তার চাইতে বেশি রাখা শুরু করলাম তবে সমস্যা ছিল একটা কিছুতেই আমি বিড়াল গুলোর নাম ঠিক ঠাক মনে রাখতে পারছিলাম না ওলট পালট হয়ে যাচ্ছিল। তবে সব কিছু মিলে রাইহা আমার উপর খুশি ছিল। আমিও এটাই চাইছিলাম।
.
তবে কিছুদিন বাদে রাইহা ওর বিড়ালের যে কোন সমস্যাতে আমার উপর ভরসা করতে লাগলো।এর ফলে এই সব বজ্জাত বিড়াল দের নিয়ে আমাকে ডাক্তারের কাছেও যেতে হত।
রাইহা সুন্দর করে এসে বলত,
-নাহিদ, একটা হেল্প করে দিবা প্লিজ!
.
আমি তো এক পায়ে রাজি হতাম। মনে মনে বলতাম, তুমি চাইলে পদ্মা মেঘনা একদিনে দিব পারি,আর হেল্প তো কোন ব্যাপার না।
তারপর রাইহা আসল বোম ফাঁটিয়ে বলত,
-একটু মিনিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাও, আমার ক্লাস আছে।
.
বিড়াল গুলোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব রকমের কঠিন কাজ ছিল। এরা আমার হাত মুখে আচড় দিয়ে দিত। তবে বাড়ি ফিরে আসার পর যখন রাইহা সেই আচড় গুলো ছুঁয়ে দিয়ে বলত, মিনি খুব শয়তান। তুমি অনেক ভাল।
তখন মন খুশিতে নেচে উঠত। মনে হত পার ডে বিড়াল গুলো অসুস্থ হোক! এভাবেই মাস চারেক যাওয়ার পর মনে হল, বিড়াল গুলোর মা আছে বাবাও তো দরকার! তাই এক বিকালে মিনিকে দিয়ে এক চিঠি পাঠিয়ে দিলাম রাইহার কাছে যে ওকে বিয়ে করতে চাই!
প্রেমের সময় আর নেই!
.
রাইহার জবাব হ্যাঁতেই এলো, তবে তার সাথে আমার মাথায় কিছু চিন্তাও এলো। রাইহাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম,
-ও আমাকে ভালবাসে কিনা?
তখন ও যেটা বলল, সেটা ভয়ানক ছিল।
ও বলল,
-আমার বিড়াল গুলো তোমাকে পছন্দ করে, তাই আমার অপছন্দ করার কোন কারণ নেই!
.
প্রথমে মনে হল মেয়েটার মাথায় সমস্যা নেই তো!
বিয়ের পরে প্রথমেই ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে।
পশু পাখির সংস্পর্শ এ রোগ ছড়ায়, পড়েছিলাম।তবে এরকম পড়িনি যে বিড়াল পছন্দ করে তাই বিয়েতে রাজী হতে হবে যতই হোক বিয়ে তো জীবন মরণের ব্যাপার।
তবে বিয়ের পর ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি,বিয়ের রাতেই রাইহা ঘটনাটা খোলাসা করেছিল।যখন আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
বিড়ালের কারণেই ও আমাকে পছন্দ করে কিনা! আমার প্রশ্ন খানা শুনে পাক্কা পাঁচ মিনিট হেসে তারপর ও উত্তর করল, বলল,
-পাগল নাকি। আমি শুধু চাইছিলাম তুমিও যেন আমার বিড়াল গুলোকে গুরুত্ত্ব দাও!
-ওহ, আমি তো ভাবছিলাম তোমার মাথায়
-কি ভাবছ?
-না কিছুনা, ঘুমাও!
সেবার জোর বাঁচা বেঁচে গেছিলাম।তবে তার পর থেকে সিরিয়াসলি ভাবে বিড়ালকে গুরুত্ত্ব সহকারে দেখে শুরু করলাম।
.
এখনো আমি খুব একটা বিড়াল পছন্দ করিনা কিন্তু এই বিড়াল জাতি অজ্ঞাত কারণে আমাকে পছন্দ করে!
যতটানা রাইহা কে পছন্দ করে!
সারাদিন আমার পিছনেই ঘুর ঘুর করে। রাইহা সামনে না থাকলে আমি মাঝে মাঝেই বিড়াল গুলোর শাস্তির ব্যাবস্থা করি। তবে সেই সাথে ভালবাসার চেষ্টাও করছি এই বিড়াল জাতিকে! কারণ আমি মোটেই চাইনা এই বিড়াল জাতির কারণে রাইহা আমার উপর রেগে যাক। আর বিড়াল জাতির প্রতি এক দিক দিয়ে আমি কৃতজ্ঞ কারণ এই বিড়ালের কারণেই রাইহা সাথে আমার সমর্পক শুরু!
.
আর পাড়ার মন্টু ভাই তো বলেই দিয়েছে,
তুমি যাকে ভালবাসবে তার সব কিছুকেই ভালবাসবে। তার ভাল টাকে তার মন্দ টাকে!
তার পছন্দকে, তার অপছন্দকেও!
তার প্রিয় বিড়াল গুলোকেও, সে যেমন করে তার বিড়াল গুলোকে ভালবাসে তুমিও তেমন করেই ভালবাসবে।
.
তাই আমিও বাসি, যেমন রাইহা কে ভালবাসি তেমন টা বিড়ালগুলোকে ভাল না বাসলেও চেষ্টা তো করেই যাচ্ছি। সফলতা একদিন আসবে নিশ্চয়।
তবে যে ভাবে বাসায় বিড়াল বেড়েই চলেছে, তাতে সফলতার হার খুব কম দেখা যাচ্ছে!
আমি চোখ মেলে তাকালাম,একটা মেয়ে ঢুকলো রুমে!
সুন্দর মেয়ে! সাদা ড্রেস পড়া!
হাতে একটা বিড়াল!
কোন পরী নাকি! বিড়াল পরী অথবা বিড়ালের দেশের রাজক্ণ্যা!
মেয়েটা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেন বলল অনেক ক্ষন ধরে তারপর যে ভাবে ঘরে ঢুকেছিল সেভাবেই চলে গেল।
কি কি বলল আমার কানে কিছুই ঢুকল না, শুধু কিছু একটা বলছে এটা বুঝতে পারলাম।
মেয়েটা চলে যাওয়া মাত্র আমার চোখ আবার বন্ধ হয়ে গেল, আমি আবার ঘুমালাম।
.
তবে যখন আমার ঘুম ভাঙল তখন মনে হল ব্যাপার টা স্বপ্নে ঘটেছে! আমি মাকেও এ ব্যাপারে তেমন কিছু বললাম না।
মেয়ের কথা বললে আবার মা উলটা পালটা কিছু ভাববে! কারণ এ বিল্ডিং এ প্রচুর মেয়ে।
তবে যে মেয়েটা আমার রুমে এসেছিল তার মতো সুন্দরী মেয়ে এ পাড়াতেও নেই!
আর অবিবাহিত ছেলেরা এসব স্বপ্ন প্রায় দেখে।
আমি ব্যাপার টা গুরুত্ত্ব না দিয়েই নিজের কাজ করতে লাগলাম।
.
তবে ঘটনা উল্টা হলো তখন, যখন বিকালের দিকে ছাদে গেলাম। ছাদের এক পাশে দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে।
কিছুক্ষন বাদে যখন মেয়েটা আমার দিকে তাকালো তখন তার চেহারা টা দেখতে পেলাম।বিকেলের আগে যে মেয়েটা আমার রুমে এসেছিল এই মেয়েটা সেই মেয়েটা!
তার মানে ব্যাপার টা বাস্তবেই হয়েছিল শুধু একটু চেঞ্জ আছে তখন মেয়েটার চোখে চশমা ছিল না তবে এখন আছে।আমার রুমে কেন গিয়েছিল জিজ্ঞেস করা দরকার। আর হ্যাঁ মেয়েটার হাতে বিড়াল ছিল তখন এখন নেই এই ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করতে হবে!
.
আমি মেয়েটার কাছে যেতেই মেয়েটা এমন ভাবে মুখটা ভেংচাল যেন আমি পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানব।আমি আরেক টু কাছে যেতেই মেয়েটা কি যেন বলে গেল। সম্ভবত ইডিয়ট টাইপ কিছু একটা।
কি হলো কিছুই বুঝলাম না!
আমি অবশ্যই মেয়েটার কোন ক্ষতি করিনি! আর আজকেই তো আমাদের প্রথম দেখা সম্ভবত!
তাহলে সমস্যা কি?
কাকে জিজ্ঞেস করবো বুঝলাম না।
তবে বাসায় যখন গেলাম তখন ছোট বোন কে জিজ্ঞেস করলাম, বিল্ডিং এ নতুন কেউ আসছে কিনা?
তখন ও বলল, রাইহা আপুর কথা বলছি কি না?
.
মেয়েটার নাম তাহলে রাইহা।মেয়েটার নামের চাইতে মেয়েটা দেখতে বেশি সুন্দর!
তবে মেয়েটা কেন এসেছিল এটার উত্তর এলো মায়ের কাছ থেকে। এই রাইহা নামের মেয়েটা নাকি বিড়াল ভালবাসে!
ওর বাসায় নাকি কয়েক টা বিড়াল থাকে। আমি নাকি ওর প্রিয় বিড়াল কে আঘাত করছি! এজন্যই বকতে আসছিল আমাকে।
আমি কখন বিড়াল কে আঘাত করেছি মনে পড়ল না।
অনেক চিন্তা করেও মনে এলোনা।
.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে যখন বিছানায় শুতে গেলাম তখন মনে পড়ল সকালের ঘটনা। দুই দিন ধরে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখি ঘরে একটা বিড়াল বিছানার ওপর শুয়ে থাকে। তাই আজ সকাল বেলা কাঁধের স্কুল ব্যাগ টা ছুড়ে মারি বিড়াল টার দিকে, এতেই হয়ত লেগেছে!
তবে মেয়েটা কিভাবে বুঝল আমি মেরেছি! বিড়াল টা বলেছে নাকি! এই মেয়ে বিড়ালের ভাষা বোঝে!
যাই হোক, এত রাগ হওয়ার কি আছে এতে?
এসব প্রাণী রোগ জীবানু ছড়ায় তাই ওভাবে ব্যাগ ছুঁড়ে মারছিলাম।
আমি রাইহার ব্যাপার টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম, কারণ এরকম মেয়ের সমন্ধে বেশি ভাবলে প্রেমে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর আমি এমন একটা মেয়ের প্রেমে পড়তে চাইনা যে বিড়াল পছন্দ করে, এরা বেশ নোংরা হয়!
দেখতে যতই কিউট হোক না কেন, তাদের অভ্যাস বদলায় না।
.
তবে পরের দিন সকাল বেলা রাইহা নামের মেয়েটার সাথে আরেক বার দেখা হয়ে গেল। মেয়েটা এবারো আমাকে দেখে মুখ ভ্যাংচালো। এত সুন্দর মুখ টা ভ্যাংচানোরর জন্য অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা ওকে দেয়নি। এত সুন্দর মুখ হাসার জন্য।
তবে আমি চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করলাম স্যরি বলব।
এত সুন্দর মুখ টা আমার কারণে ভ্যাংচানো হোক তা আমি কিছুতেই চাইনা। তাই বিকেল বেলা স্যরি বলার চিন্তা ভাবনা করেই ছাদে গিয়ে রাইহার সামনে দাঁড়ালাম। ও অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল, ওর পাশে সেদিনের বিড়াল টাও ছিল।আমি ডাক দেওয়ার আগে বিড়াল টা আমাকে দেখে ম্যাঁও করে চেচিয়ে উঠল।
রাইহা মুখ ঘুরিয়ে আমাকে দেখা মাত্রই বলল,
-সমস্যা কি আপনার? আবার মিনি কে মারতে আসছেন?
.
বিড়ালের নাম তাহলে মিনি। রাইহা আরো বলল,
-এত সুন্দর একটা বাচ্চা কে ভালবাসতে পারেন না, মানুষকে কি করে বাসবেন।শুধু শুধু বড় হইছেন।
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাইহা শুধু বলেই গেল এর মাঝে অবশ্য মিনি সুযোগ পাচ্ছিল, ও মাঝে মাঝে ম্যাঁ ও ম্যাঁও করছিল। ম্যাঁও ম্যাঁও করে কি বলছিল কে জানে! হয়ত রাইহা বুঝতে পারছিল তাইতো যখনি মিনি ম্যাঁও করছিল তখনি রাইহা বেশি রেগে যাচ্ছিল। তাই যখনি রাইহা আর মিনি দুজনেই চুপ করলো তখনি আমি দেরী না করে ছাদ থেকে পলায়ন করলাম।
ছাদে থাকা খুবই রিস্কি হয়ে যাচ্ছিল।
.
বাসায় গিয়ে অনেক চিন্তা করলাম রাইহাকে কিভাবে স্যরি বলা যায়। চিঠি লিখা যায় তবে অন্য কিছু ভেবে নিলে সমস্যা। ফোন নাম্বার ও নেই।
তবে এই চিন্তার অবসান হলো আমার ছোট বোন এর মাধ্যমে ওই বলল, বিড়ালের জন্য খাবার কিনে নিয়ে রাইহার সামনে উপস্থিত হতে।
.
আমি দেরী করলাম না, সোজা রাইহার বাসার কলিং বেল বাজিয়ে দিলাম।গেট রাইহার মা খুলে দিল। এই মহিলার সাথে বিকালে আমার পরিচয় হয়েছে।
রাইহাকে নিয়েও ওনার সাথে কথা হয়েছে। উনি মনে করেন ওনার মেয়ের মানসিক সমস্যা এটা। আমার ঘটনা টাও খুলে বলাতে উনি আমাকে রাইহার রুম দেখিয়ে দিলেন।
আমি দরজায় টোকা দিতেই বিড়াল ম্যাঁও করে উঠল। দরজার পাশেই দেখি মিনি। তবে ঘরের ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, কে এসেছে মিশকি?
.
এ বাসায় বিড়াল কটা, দুটা! দুটাই দেখতে এক রকম"
মিনি আর মিশকা! আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
-আসবো?
-কে?
-আমি!
-আমি কে?
-যে মিনি কে,
এটুকু বলতেই রাইহা চেঁচিয়ে উঠে বলল,
-সমস্যা কি?
তাতেই গেট খুলে গেল। আমি আর রাইহা সামনা সামনি। আমি এবার বলার সুযোগ পেলাম, বললাম,
-দেখুন, আমি দুঃখিত!
কাল সকালের ব্যাপার টা একসিডেন্ট ছিল,
.
তখনি পাশে বসে থাকা মিনি ম্যাও করে উঠল। রাইহা কি যেন ভেবে বলল, আচ্ছা ঠিকাছে মিনি আপনাকে মাফ করে দিয়েছে।
-ধন্যবাদ! আমি মিনির জন্য কিছু এনেছিলাম!
-কি!
-কিছু খাবার!
-আসুন ভেতরে।
.
রাইহার রুম ওর মতই সুন্দর। তবে দেয়াল জুড়ে বিড়ালের ছবি, আমি গিয়ে চেয়ারে বসব তখনি চেয়ারে উপর থেকে কেউ ম্যাঁও করে উঠল।আমি চমকে উঠলাম। আরো একটা বিড়াল। আমি কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
-বাসায় কটা বিড়াল!
-ছটা!
-ছটা?
-হুম,মিনি মিশকি, গোল্টু,মোল্টু,টিনি, ডোরেমন!
এদের মধ্য গোল্টু মোল্টু দুই ভাই। এরা সারাদিন বাইরে থাকে রাতে এসে ঘুমায়!
-ওহ, খুব ভাল।
(আমি অবশ্য অবাক হলাম বিড়াল গুলো দেখতে প্রায় একই রকম, মনে থাকে কিভাবে কোন টার নাম কি)
.
আমি খাবারের প্যাকেট টা রাহিয়া হাতে দিয়ে বললাম,
-নিন!
.
বিড়ালের খাবার সংগ্রহ করা খুবই কষ্টের!
বিড়ালের প্রিয় খাবার কি?মাছের কাঁটা!
কিন্তু বাসি মাছের কাঁটা কই পাই! ছোট বোন যখন শুনল বিড়াল দের জন্য আমি মাছের কাঁটা খুঁজছি তখন ও বলল,
-এসব নিয়ে গেলে রাইহা ঘরেই ঢুকতে দেবেনা।
এটা শুনে আমি বললাম,
-বিড়াল তো এগুলাই খায়!
-রাস্তার বিড়াল খায়, ভাল কিছু নিতে হবে!
-কি!
-আমি জানিনা!
তারপর ফ্রিজ থেকে মাছ বের করে নিয়ে এসেছি। রাইহা মাছ দেখে বলল,
-মাছ! এত ভাল খাবার এরা খুব কম খায়!
-সমস্যা নাই! একদিন খেলে কিছু হবেনা!
-আচ্ছা,
.
রাইহা আমাকে ঘন্টা খানেক ধরে বিড়ালের ব্যাপারে বলল, বিড়ালের বেঁচে থাকা, রোগ। বোরিং লাগলেও উঠতে পারছিলাম না। চাইছিলাম রাইহা বলতেই থাকুক।
সেদিন রাতের খাবার রাইহাদের বাসাতেই খেয়ে এলাম।
এর পর থেকে মিনি নিয়মিত আমার বেডে এসে শুয়ে থাকত,মাঝে মাঝে মিশকিকেও আনত। আমি চুপচাপ দেখতাম।আমি কিছুতেই রাইহার সামনে খারাপ হতে চাইছিলাম না।
.
তবে এই বিড়াল গুলো খুব ঝামেলার ও ছিল! এদের জন্য যদিও রাইহার সাথে আমার পরিচয় কিন্তু এদের কারণেই রাইহার সাথে আমার কিছু হচ্ছিল না!
এক বিকেলে রাইহাকে বললাম,
-চলো কোথাও ঘুরতে যাই!
রাইহা রাজী ও হয়ে গেল।কিন্তু সাথে করে নিয়ে এলো ওর প্রিয় বিড়াল মিনিকে।
যে সব খানে ম্যাঁও ম্যাঁও করে! রোমান্টিক কিছু বলার শুরুতেও! আর তখন রাইহার মিনির দিকেই মনোযোগ দেয়!
আমি শিউর আমার সাথে রাইহার কিছু হয়ে গেলেও, ও আমার চাইতে এই বিড়াল টাকেই বেশি ভালবাসবে।
প্রেমের পর পারসোনাল টাইম বলেও কিছু থাকবেনা, সব হবে বিড়াল টাইম।
.
আরেক দিন বিকালে রাইহা কে জিজ্ঞেস করলাম,
-আচ্ছা, তোমার ভবিষ্যৎ প্লান কি?
ও কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল,
-বিড়াল দের জন্য একটা অরফানেজ খোলা!
-বিড়াল দের অরফানেজ!
-হ্যাঁ, এটা খুব দরকার!
-আর অন্য কোন প্লান নাই? মানে প্রেম ভালবাসা!
-হ্যাঁ, সবই তো বিড়ালের জন্য!
.
সেবার আমার প্রথম মনে হয়েছিল, আমি বিড়াল হলে খারাপ হত না। রাইহার ভালবাসা টুকু পেতাম আর কিছু না পেলেও!
.
আমি কোন ভাবেই কিছু করতে পারছিলাম না!
এই মেয়েকে পটাতে কি করতে হবে মাথায় আসছিল না তবে এ থেকে উদ্ধার করল এলাকার মন্টু ভাই। ওনাকে আমরা লাভ গুরু হিসেবে জানি। মন্টু ভাই বলল,এসব মেয়ে যা পছন্দ করে সেগুলো কে শুধু গুরুত্ত্ব দিলেই হবে।
আমিও ব্যাপার টা কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। রাইহা যতটা বিড়ালের খেয়াল রাখছিল আমি তার চাইতে বেশি রাখা শুরু করলাম তবে সমস্যা ছিল একটা কিছুতেই আমি বিড়াল গুলোর নাম ঠিক ঠাক মনে রাখতে পারছিলাম না ওলট পালট হয়ে যাচ্ছিল। তবে সব কিছু মিলে রাইহা আমার উপর খুশি ছিল। আমিও এটাই চাইছিলাম।
.
তবে কিছুদিন বাদে রাইহা ওর বিড়ালের যে কোন সমস্যাতে আমার উপর ভরসা করতে লাগলো।এর ফলে এই সব বজ্জাত বিড়াল দের নিয়ে আমাকে ডাক্তারের কাছেও যেতে হত।
রাইহা সুন্দর করে এসে বলত,
-নাহিদ, একটা হেল্প করে দিবা প্লিজ!
.
আমি তো এক পায়ে রাজি হতাম। মনে মনে বলতাম, তুমি চাইলে পদ্মা মেঘনা একদিনে দিব পারি,আর হেল্প তো কোন ব্যাপার না।
তারপর রাইহা আসল বোম ফাঁটিয়ে বলত,
-একটু মিনিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাও, আমার ক্লাস আছে।
.
বিড়াল গুলোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব রকমের কঠিন কাজ ছিল। এরা আমার হাত মুখে আচড় দিয়ে দিত। তবে বাড়ি ফিরে আসার পর যখন রাইহা সেই আচড় গুলো ছুঁয়ে দিয়ে বলত, মিনি খুব শয়তান। তুমি অনেক ভাল।
তখন মন খুশিতে নেচে উঠত। মনে হত পার ডে বিড়াল গুলো অসুস্থ হোক! এভাবেই মাস চারেক যাওয়ার পর মনে হল, বিড়াল গুলোর মা আছে বাবাও তো দরকার! তাই এক বিকালে মিনিকে দিয়ে এক চিঠি পাঠিয়ে দিলাম রাইহার কাছে যে ওকে বিয়ে করতে চাই!
প্রেমের সময় আর নেই!
.
রাইহার জবাব হ্যাঁতেই এলো, তবে তার সাথে আমার মাথায় কিছু চিন্তাও এলো। রাইহাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম,
-ও আমাকে ভালবাসে কিনা?
তখন ও যেটা বলল, সেটা ভয়ানক ছিল।
ও বলল,
-আমার বিড়াল গুলো তোমাকে পছন্দ করে, তাই আমার অপছন্দ করার কোন কারণ নেই!
.
প্রথমে মনে হল মেয়েটার মাথায় সমস্যা নেই তো!
বিয়ের পরে প্রথমেই ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে।
পশু পাখির সংস্পর্শ এ রোগ ছড়ায়, পড়েছিলাম।তবে এরকম পড়িনি যে বিড়াল পছন্দ করে তাই বিয়েতে রাজী হতে হবে যতই হোক বিয়ে তো জীবন মরণের ব্যাপার।
তবে বিয়ের পর ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি,বিয়ের রাতেই রাইহা ঘটনাটা খোলাসা করেছিল।যখন আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
বিড়ালের কারণেই ও আমাকে পছন্দ করে কিনা! আমার প্রশ্ন খানা শুনে পাক্কা পাঁচ মিনিট হেসে তারপর ও উত্তর করল, বলল,
-পাগল নাকি। আমি শুধু চাইছিলাম তুমিও যেন আমার বিড়াল গুলোকে গুরুত্ত্ব দাও!
-ওহ, আমি তো ভাবছিলাম তোমার মাথায়
-কি ভাবছ?
-না কিছুনা, ঘুমাও!
সেবার জোর বাঁচা বেঁচে গেছিলাম।তবে তার পর থেকে সিরিয়াসলি ভাবে বিড়ালকে গুরুত্ত্ব সহকারে দেখে শুরু করলাম।
.
এখনো আমি খুব একটা বিড়াল পছন্দ করিনা কিন্তু এই বিড়াল জাতি অজ্ঞাত কারণে আমাকে পছন্দ করে!
যতটানা রাইহা কে পছন্দ করে!
সারাদিন আমার পিছনেই ঘুর ঘুর করে। রাইহা সামনে না থাকলে আমি মাঝে মাঝেই বিড়াল গুলোর শাস্তির ব্যাবস্থা করি। তবে সেই সাথে ভালবাসার চেষ্টাও করছি এই বিড়াল জাতিকে! কারণ আমি মোটেই চাইনা এই বিড়াল জাতির কারণে রাইহা আমার উপর রেগে যাক। আর বিড়াল জাতির প্রতি এক দিক দিয়ে আমি কৃতজ্ঞ কারণ এই বিড়ালের কারণেই রাইহা সাথে আমার সমর্পক শুরু!
.
আর পাড়ার মন্টু ভাই তো বলেই দিয়েছে,
তুমি যাকে ভালবাসবে তার সব কিছুকেই ভালবাসবে। তার ভাল টাকে তার মন্দ টাকে!
তার পছন্দকে, তার অপছন্দকেও!
তার প্রিয় বিড়াল গুলোকেও, সে যেমন করে তার বিড়াল গুলোকে ভালবাসে তুমিও তেমন করেই ভালবাসবে।
.
তাই আমিও বাসি, যেমন রাইহা কে ভালবাসি তেমন টা বিড়ালগুলোকে ভাল না বাসলেও চেষ্টা তো করেই যাচ্ছি। সফলতা একদিন আসবে নিশ্চয়।
তবে যে ভাবে বাসায় বিড়াল বেড়েই চলেছে, তাতে সফলতার হার খুব কম দেখা যাচ্ছে!