ব্রিটিশ সামারের আনন্দঘন সময়ের স্মৃতিকে প্রশমিত করতেই হয়তো ক্রিসমাস আসে সাজ সাজ রব নিয়ে। পত্রপল্লবহীন বৃক্ষ আর ক্ষীণ সূর্যের ধূসর ব্রিটিশ শীতের মাঝামাঝি এই সময়ে গোটা ব্রিটেনে চলে আলোর ঝলকানি আর উৎসবের আমেজ। ক্রিসমাসের আগের দিন, অর্থাৎ ক্রিসমাস ইভ হলো সোজা বাংলায় চাঁদরাত, যে রাতে চারপাশের ছড়িয়ে পড়ে বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার।
সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়াটারলু স্টেশন, ছবি: উইকিপিডিয়া
এমনই এক উৎসবময় হিম হিম ক্রিসমাস ইভের সকালে আমি আর মৌনী রওনা হই লন্ডনের অদূরে বর্তমান রানি এলিজাবেথের ব্যক্তিগত বাসভবন উইন্ডসর ক্যাসলের অভিমুখে। কর্মব্যস্ত যে রাজভবনে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ তাঁর আয়েশি ছুটির দিনগুলো উপভোগ করেন।
সকাল ১০টায় সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়াটারলু স্টেশন থেকে সাউথ-ওয়েস্টার্ন লাইনের ট্রেনে চেপে যাত্রা শুরু করলাম নয় শ বছরের পুরোনো উইন্ডসর ক্যাসলের অভিমুখে।
সাধারণ দিনে লন্ডনের ওয়াটারলু থেকে উইন্ডসর যেতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। কিন্তু ক্রিসমাস ইভ বলে কথা। তাই ট্রেনের গতিও শ্লথ। ফলে প্রায় দেড় গুণ সময়ে আমাদের ট্রেন পৌঁছাল উইন্ডসর স্টেশনে। স্টেশন থেকে নেমেই সারি সারি প্রাচীন স্থাপনা যেন প্রাচীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঝান্ডা বহন করছিল। স্টেশন থেকে মিনিট পনেরো হেঁটে গেলেই প্রায় সাত শ বছরের পুরোনো বিখ্যাত ইটন কলেজ।
প্রায় সাত শ বছরের পুরোনো বিখ্যাত ইটন কলেজ, ছবি: উইকিপিডিয়া
ব্রিটেনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ওয়ার্লপোল থেকে শুরু করে উইলিয়াম গ্ল্যাডস্টোন, অ্যান্থনি ইডেন, ডেভিড ক্যামেরন এবং বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ আরও ডজনখানেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এই ইটন কলেজের ছাত্র। কথায় বলে, ইটন কলেজ নাকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তৈরির কারখানা। তবে শুধুই কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী? এই কলেজে পড়েছেন পৃথিবীর অন্যতম প্রেমের কবি শেলি, ঔপন্যাসিক জর্জ অরওয়েল, ক্রিস্টোফার লি-সহ বিভিন্ন পেশার অগুনতি জগৎ বিখ্যাত মানুষ, যাঁরা গোটা বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের জ্ঞান-গরিমায়।
এমনকি যাঁর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, সেই ভাইসরয় লর্ড কার্জনও পড়েছেন এই ইটন কলেজে। ঐতিহাসিক এই কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মনে হলো ইতিহাসের পথ ধরে চলে গেছি কয়েক শ বছর পেছনে। আর আমার আশপাশ ধরে হাঁটছেন ইতিহাসের নন্দিত মানুষেরা, যাঁদের আবিষ্কার, লেখা, রাজনীতি আর গবেষণার মাধ্যমে মানবসভ্যতার উৎকর্ষ সাধন হয়েছে শতকের পর শতক ধরে।
প্রায় হাজার বছরের পুরনো এই উইন্ডসর প্রাসাদ, ছবি: উইকিপিডিয়া
ব্রিটেনে রাজপরিবারের রয়েছে বারো শ বছরের পুরোনো ইতিহাস। এর আগে ইংল্যান্ড বিভক্ত ছিল কয়েকটি রাজ্যে; যেমন কিংডম অব উইসেক্স, কিংডম অব নর্দামব্রিয়া ইত্যাদি। তবে ৮৭১ সালে শাসনভার গ্রহণ করা উইসেক্সের স্যাক্সন কিং আলফ্রেড দ্য গ্রেট অবিভক্ত ইংল্যান্ডের স্বপ্ন দেখেন। চেষ্টা শুরু করেন সব রাজ্যকে একত্র করে গোটা ইংল্যান্ডকে একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করার, যাতে অন্য কোনো ঔপনিবেশিক শক্তি এবং আদিবাসী ডেইনসরা আক্রমণ করতে সাহস না পায়। এর প্রায় পাঁচ দশক পর তারই পৌত্র কিং এথলস্টেনের হাত ধরে ৯২৫ শতাব্দীতে আলাদা সব রাজ্যকে নিয়ে তৈরি হয় ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র। যাত্রা শুরু করে আজকের রয়্যাল ফ্যামিলি।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা ইটন কলেজ থেকে চলে এসেছি রাজপ্রাসাদের কাছে। বিশাল রাজপ্রাসাদ। প্রচুর হাঁটতে হবে ইতিহাসের গলিঘুপচিতে। পেটে খিদে থাকলে পূর্ণিমার চাঁদকেও ঝলসানো রুটি মনে হয়, ইতিহাস তো কোন ছার। তাই সিদ্ধান্ত হলো মধ্যাহ্নভোজনের। ক্রিসমাস ইভের ভিড়কে পাশ কাটিয়ে আমরা ঢুকে পড়ি একটি পর্তুগিজ রেস্টুরেন্টে। ঝলসানো মুরগি, স্যালাড আর শেষ পাতে ক্যারট কেক দিয়ে উদরপূর্তি সেরে ভিন্ন এক অনুভূতি নিয়ে আমরা এগোতে থাকি ইংল্যান্ডেশ্বরীর বাসভবনের দিকে।
ভিড়কে পাশ কাটিয়ে আমরা ঢুকে পড়ি একটি পর্তুগিজ রেস্টুরেন্টে, ছবি: মৌনি চক্রবর্তী
প্রাসাদের একেবারেই সামনে রয়েছে ব্রিটেনের সব থেকে জনপ্রিয় রানি ভিক্টোরিয়ার একটি ভাস্কর্য। হ্যাঁ। সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া, যিনি বহুবার বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন ব্রিটিশ শাসনামলে। কলকাতায় যাঁর নামে রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। রানি ভিক্টোরিয়া ব্রিটেনের শিল্প প্রসার, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বিশেষত, সাম্রাজ্যের দুর্দান্ত প্রসারের সঙ্গে জড়িত। মৃত্যুর আগে তিনি ভৌগোলিকভাবে এমন বিস্তৃত একটি সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। অর্থাৎ সাম্রাজ্যের এক অংশে রাত হলে আরেক অংশে তখন দিন। যদিও সাম্রাজ্যের এমন বিস্তৃতিতে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পাশাপাশি রয়েছে আগ্রাসন আর নির্যাতনের ইতিহাস।
রানিকে পাশ কাটালেই বিশাল রাজফটক। ঢুকতেই বার কয়েক সিকিউরিটি চেকের পর আমরা এসে দাঁড়ালাম মূল ফটকে। সঙ্গে নিলাম হেডফোনের মতো একটি ডিভাইস, যা একে একে ধারাবিবরণী দিয়ে যাচ্ছিল উইন্ডসর ক্যাসলের ইতিহাস আর আভিজাত্যের। আমার কাছে গোটা স্থাপত্যকে মনে হয় ভারতীয় পৌরাণিক ইতিহাসের রাজ্য খাণ্ডবপ্রস্থের মতো। যেখানে পাঁচ হাজার বছর আগে কুরু-পাণ্ডবদের বাদানুবাদের ইতি টানার লক্ষে ময়দানব নামের এক স্থাপত্যশিল্পীর ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছিল ইন্দ্রপ্রস্থ নামের আভিজাত্যপূর্ণ রাজভবন। এমন আভিজাত্যপূর্ণ ভবন আর রত্নখচিত স্থাপত্য ভূভারতে এর আগে আর কেউ দেখেনি। শুনেছি ওই প্রাসাদই নাকি ছিল কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধের আঁতুড়ঘর।
প্রাাসাদের প্রবেশমুখে মৌনি
এই প্রাসাদে চোখধাঁধানো সব সরঞ্জাম। প্রতিটি আসবাবে অভাবনীয় শিল্পের ছোঁয়া। কয়েক শ বছরের পুরোনো একেকটি চিত্রকর্ম। গোটা বিশ্বকে শাসন করা ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদে এসব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তা যে দেখা হবে, তার জন্য মোটেও অপ্রস্তুত ছিলাম না। আমরা ইতিহাসের পথ ধরে হাঁটছি আর দেখছি অতীতে এই ক্যাসল যেসব রাজাকে ধারণ করেছিল, তাঁদের তৈলচিত্রসহ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার নানা উপাদান।
গোটা প্যালেসে এক হাজার কক্ষ। যদিও সব কক্ষে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার নেই, তবু হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাওয়ার জোগাড়। আফসোস হলো, কারণ, ক্যাসলের ভেতরের কোনো ছাদের নিচে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। কী আর করা, যত দূর সম্ভব দুচোখ মেলে অপুর মতো হাঁ করে উপভোগ করছিলাম ব্রিটিশ রাজতান্ত্রিক ইতিহাসের আর্কাইভ।
দূর থেকে প্রাসাদ
একটা জায়গায় এসে দেখলাম উইন্ডসর ক্যাসলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। তাতে লেখা প্রায় এক হাজার বছর আগে নরম্যান মহাযোদ্ধা উইলিয়াম দ্য কঙ্করার তৈরি করেছিলেন এই ক্যাসল, যা পরবর্তী সময়ে কিং হেনরি প্রথম তাঁর শাসনামলে এই ক্যাসলকে রাজপ্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করেন। ক্যাসলটি মূলত লন্ডনে পশ্চিমের পথ রক্ষার জন্য নির্মিত হয়েছিল। রাজধানীর সন্নিকটে এবং একটি রাজকীয় শিকারের বনাঞ্চলের নিকটবর্তী রাজকীয় আবাসের জন্য একটি আদর্শ অবস্থান হিসেবে তৈরি করা হয়।
কিংস প্যালেসের প্রবেশমুখ, ছবি: মৌনি চক্রবর্তী
আমরা ধীরে ধীরে এগোচ্ছি। একেকটি চেয়ার, ঝাড়বাড়ি, বিশাল ডিনার টেবিল, ফুলদানি প্রতিটি বিষয়ে রয়েছে রাজকীয় স্পর্শ। ঘুরতে ঘুরতে একসময় এসে দাঁড়াই তিরানব্বই বছর বয়স্ক রানি এলিজাবেথের প্রতিকৃতির সামনে, যিনি সম্রাট ষষ্ঠ জর্জের কন্যা। গ্রেট ব্রিটেন এবং কমনওয়েলথের সব থেকে দীর্ঘ সময় ধরে রানির আসনে আসীন হয়ে আছেন তিনি। গত আটষট্টি বছর ধরে রাজকার্য পরিচালনা করা জনপ্রিয় এই রানি দেখেছেন অনেক উত্থান-পতন। অনেকেই তাঁর পুত্রবধূ ডায়ানার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অভিযোগের তির ছুড়েছেন তাঁর দিকে, তবু ব্রিটিশ জনগণের আনুগত্য রয়েছে তাঁর প্রতি। রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। রাজকার্য পরিচালনা বলে কথা। মাথা গরম করলে হয়? শক্ত হাতে সেসব অভিযোগ খণ্ডন করে প্রতিদিন ইতিহাস গড়ে চলেছেন রানি এলিজাবেথ।
এদিকে এক বছর ধরে রাজপরিবারে চলছে ভাঙনের সুর। যদিও রাজপরিবারে এমন ভাঙন নতুন নয়। ভালোবাসার জন্য রানি এলিজাবেথের বড় চাচা এডওয়ার্ড অষ্টম রাজা হওয়ার এক বছরের মধ্যে রাজত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন রানি এলিজাবেথের পিতা সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ, যাঁর মৃত্যুর পর মাত্র ২৭ বছর বয়সে অভিষেক হয়েছিল রানি এলিজাবেথের। এর বহু বছর পর স্বাধীন জীবনযাপনের জন্য রাজপরিবার ছেড়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয় প্রিন্সেস ডায়ানা।
উইন্ডসর প্রাসাদের সেন্ট জর্জেস হল: এখানে হয়েছিল ডায়ানাপুত্র হ্যারি ও মেগানের বিয়ের অনুষ্ঠান, ছবি: উইকিপিডিয়া
সাম্প্রতিক সময়ে ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেলের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে বাকিংহাম প্যালেস ছাড়েন ডিউক অব সাসেক্স ডায়ানাপুত্র প্রিন্স হ্যারি। যদিও বৈষম্যের বিষয়টি মীমাংসিত নয়। এসব কারণে করোনাকালে রাজপরিবারে বয়ে গেছে বহু ঝড়। ফলত রাজপরিবারে অবাঞ্ছিত হয়েছেন রাজকুমার হ্যারি। তুলে নেওয়া হয়েছে তাঁর রাজনিরাপত্তা। প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রতি আমেরিকার গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের মতো ভয়ংকর অভিযোগ তুলেছেন হ্যারি-মেগান দম্পতি। কিন্তু ব্রিটেনের রাজপরিবার সেই অভিযোগে অসত্য নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
তবে আরাম-আয়েশ আর প্রাচুর্যে ভরপুর রাজকীয় জীবন যে সব সময় সুখের নয় অষ্টম এডওয়ার্ড, ডায়ানা, হ্যারি কিংবা মেগানের গৃহত্যাগে সেটা অনেকটাই স্পষ্ট।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা এক জানালার কাছে পৌঁছাই, যেখান থেকে স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হয় বিখ্যাত ইস্ট টেরাস গার্ডেন, যাকে রাজবাগান বললে ভুল হবে না। যে বাগানে রানি এলিজাবেথ সপ্তাহান্তিক ছুটির দিনগুলোতে হেঁটে বেড়ান। এমন সুসজ্জিত বাগান জীবনে দ্বিতীয়বার দেখব কি না জানি না। কিন্তু আবারও বাদ সাধল সেই ছাদ। কারণ, আমরা ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে দেখছিলাম; আর আগেই বলেছি প্যালেসের নিয়মানুযায়ী ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা নিষিদ্ধ।
প্রাসাদের ছাদে কামানের পাশে মৌনি
হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে পৌঁছালাম প্যালেসের ছাদের ওপরে, যেখানে সারি সারি কামান দাগানো রয়েছে, যাতে বহিঃশত্রুদের খতম করা যায় আক্রমণ শাণানোর আগেই। ছাদে উঠে প্রথমেই যে কাজটা করলাম, তা হলো ছবি তোলা। এর মধ্যেই ব্রিটিশ উইন্টারের নাতিদীর্ঘ দিনের আলো নিবু নিবু। এদিকে মুঠোফোনের ব্যাটারিও যায় যায় অবস্থায়। তবু দ্রুত কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলাম।
রাজরক্ষীদের নিয়মমাফিক কুচকাওয়াজ
এর মধ্যেই দেখি রাজরক্ষীদের একটি দল কুচকাওয়াজ করে আমাদের দিকে আসছে। মনে মনে ভাবলাম, ব্যাটারা কি, ছবি তোলার দায়ে আমাকে বন্দী করতে আসছে। মনে মনে একটু রোমাঞ্চ অনুভব করতেই দেখি আমার পাশ দিয়ে হনহনিয়ে তারা চলে গেল। হয়তো রুটিন ওয়ার্ক ছিল। আমিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসতে লাগল প্রায় হাজার বছরের পুরোনো উইন্ডসর ক্যাসলের চৌহদ্দিতে। জ্বলে উঠল সারি সারি আলোর বহর, যে আলো হয়তো ঢেকে দেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগ্রাসন এবং দাসপ্রথার কালোছায়া অথবা উদযাপন করবে অযুত যুদ্ধে নিযুত প্রাণের বিনিময়ে তৈরি আজকের গ্রেট ব্রিটেনের ইতিহাস।
ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসে প্রাসাদে
এদিকে মূল ফটকের সামনে ব্রিটেনের নিমন্ত্রিত ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন ক্রিসমাস ইভের রাজকীয় উৎসবে যোগদান করতে। পরিচারকের ছোটাছুটি জানান দিচ্ছে ক্রিসমাসের রাজসভার আয়োজনের পরিধি। ঘড়ি বলছে, আমাদেরও বেরোতে হবে, গল্পের নয়, বাস্তবের রানির প্রাসাদ থেকে।
রাজার প্রাসাদের সামনে সস্ত্রীক লেখক
প্যালেসের ফটকে এসে ঘাড় ঘুরিয়ে শেষবারের মতো দেখে নিই রাজবাড়ির আঙিনা। সুবিশাল উঁচু প্রস্তরের ওপরে প্রাসাদের পুরু প্রাচীরের গায়ে গায়ে আলোকসজ্জা, লর্ড, লেডি, ব্যারোনেসদের সারি আর ইতিহাসের গল্পগাথা ও এখনো টিকিয়ে রাখা আভিজাত্যে মনে হচ্ছিল গোটা আয়োজন যেন উইলিয়াম দ্য কঙ্কারের যুদ্ধজয়ের উদযাপনের জন্য।
* লেখক: অসীম চক্রবর্তী | পিএইচডি গবেষক ও প্রভাষক, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, এংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ