ঘুরতে কে না ভালোবাসে। যান্ত্রিকতার শহর ছেড়ে সবাই চায় প্রকৃতির মধ্যে একটু হারিয়ে যেতে। করোনাকালে যদিও তা এখন সম্ভব হচ্ছে না। চাইলেও এখন পারছে না কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসতে। তাই বলে কি ঘরে থেকে কোনো বিনোদন নেওয়া যাবে না? ছকে বাঁধা জীবনে একটু বৈচিত্র্য আনতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসে পড়ুন মুভি দেখতে। গৎবাঁধা কোনো মুভি নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে চেয়েছেন কোনো সিনেমা বা টিভি সিরিজ দেখে। চলুন, এমন কিছু সিনেমার কথা জেনে আসি যা আপনাকে ভ্রমণে প্রাণিত করবে।
দ্য সিক্রেট লাইফ অফ ওয়াল্টার মিটি (২০১৩)
ওয়াল্টার মিটি (বেন স্টিলার) ‘লাইফ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকায় কাজ করেন। তাঁর ঘটনাহীন জীবন দুঃসাহসিক কাজ আর বীরত্বের দিবাস্বপ্ন দিয়ে ভর্তি। একদিন বিখ্যাত এক ফটোগ্রাফার কিছু ছবির রিল পাঠান ওয়াল্টারের পত্রিকায়, যেখানে বলা থাকে, ২৫ নম্বর ছবিটি অবশ্যই লাগবে পত্রিকার কভারের জন্য। ওয়াল্টার সেই ছবি অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে না পাওয়ায়, শেষমেশ সেই ফটোগ্রাফারের সন্ধানে বের হয়ে পড়েন। তাঁর নিস্তেজ জীবনধারার বাইরে বেরিয়ে এসে, ঘুরতে থাকেন সেই ফটোগ্রাফারের খোঁজে। গ্রিনল্যান্ড থেকে আইসল্যান্ডের পাহাড়ের পাশঘেঁষা রাস্তায় স্কেট করা থেকে শুরু করে আফগানিস্তানের বরফে ঢাকা পর্বতমালা পার হতে থাকেন ওয়াল্টার। তাঁর সাদামাটা জীবন যেন নিমেষে বদলে যায়। বেন স্টিলারেরই পরিচালনা করা এই সিনেমা অসাধারণ সুন্দর একটি গল্প!
সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং: ৭.৩/১০
ইনটু দ্য ওয়াইল্ড (২০০৭)
ক্রিস্টোফার ম্যাকান্ডলেসের জীবনের সত্য ঘটনার ওপর তৈরি করা এই মুভি। ১৯৯২ সালে ক্রিস্টোফার (এমিল হার্শ) কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন, নিজের জমানো ২৫ হাজার ডলার দাতব্য কাজে দিয়ে আরণ্যকের উদ্দেশে বের হয়ে পড়েন। ধনী পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও লাভজনক কোনো পেশায় না গিয়ে এই পথ বেছে নেন সিনেমার প্রধান চরিত্র। আমেরিকার পথে চার মাস ঘুরে অবশেষে আলাস্কায় পৌঁছান ক্রিস্টোফার। শন পেনের লেখা এবং পরিচালনায় ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি সমালোচক ও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ।
সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০
দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরিজ (২০০৪)
কিংবদন্তি বৈপ্লবিক নেতা চে গুয়েভারার যৌবনকালের সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে স্প্যানিশ ভাষার এই সিনেমা। চে গুয়েভারার নিজের লিখা বই ‘দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরিজ’ থেকেই সিনেমাটি নির্মিত। চে এবং তাঁর বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদো একটি মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পুরো দক্ষিণ আমেরিকা পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে। মেডিকেল কলেজের শেষ সেমিস্টারের আগের ছুটিতে দুই বন্ধু মোটরসাইকেলে চড়ে ব্রাজিল থেকে পেরু পাড়ি দেন।
পথে দুই বন্ধুর সঙ্গে অনেক ঘটনা ঘটে। তাঁরা অনেক অসমতা আর গরিবের দুর্দশা দেখেন পুরো মহাদেশে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে গরিবদের অসমতা দেখে চের জীবন বদলে যায়। সামাজিক সমস্যা আর এই অসমতার কারণে তরুণ মেডিকেল ছাত্র চের ভেতর বিপ্লবের চারা জন্মায়। ওয়াল্টার সালেসের পরিচালনায় সিনেমাটি দক্ষিণ আমেরিকার অনেকগুলো দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে।
সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০
ইট প্রে লাভ (২০১০)
এলিজাবেথ গিলবার্টের লেখা একই নামের বেস্টসেলার বই থেকে নির্মাণ করা হয়েছে সিনেমাটি। তিনি বইটি লিখেছেন নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে। একটি ব্যর্থ বিয়ের পর লিজ গিলবার্টের (জুলিয়া রবার্টস) মনে হতে থাকে, তাঁর একটি বিরতি প্রয়োজন। অফিস থেকে এক বছরের ছুটি নিয়ে ভ্রমণে বের হন লিজ। ভ্রমণের উদ্দেশ্য, নিজেকে খুঁজে পাওয়া। এই যাত্রা তাঁকে নিয়ে যায় ইতালি, ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে ভারত পর্যন্ত। রায়ান মারফির পরিচালনায় এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন জুলিয়া রবার্টস, হাভিয়ের বারদেম এবং জেমস ফ্র্যাঙ্কো। সিনেমায় দেখানো সব দৃশ্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে মুভি দেখার পরপরই হয়তো আপনি কাগজ–কলম নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করতে বসে যেতে পারেন।
সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং: ৫.৮/১০
দ্য দার্জিলিং লিমিটেড (২০০৭)
বাবা মারা যাওয়ার পর এক বছর তিন ভাইয়ের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিন ভাইয়ের একজন ফ্রান্সিস (ওয়েন উইলসন) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পাওয়া আঘাত থেকে সেরে ওঠার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে পিটার (অ্যাড্রিয়েন ব্রডি) আর জ্যাকরা (জেসন) আছেন পারিবারিক সমস্যা নিয়ে। শেষমেশ তিন ভাই মিলে দেখা করে ঠিক করেন, পুরো ভারত ভ্রমণে বের হবেন। নিজেদের মধ্যে বন্ধন অটুট রাখার চিন্তা করে তিন ভাই মিলে উঠে পড়েন বিলাসবহুল এক ট্রেনে। ওয়েস অ্যান্ডারসনের পরিচালিত এই সিনেমা কল্পনায় ভ্রমণের আনন্দ দেবে নিঃসন্দেহে।
সিনেমাটির আইএমডিবি: ৭.২/১০
জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা (২০১১)
তিন বন্ধু কবির (অভয় দেওল), ইমরান (ফারহান আক্তার) ও অর্জুন (হৃতিক রোশন) নিজেদের কলেজ জীবনেই ঠিক করেন যে, তাঁরা ব্যাচেলর ট্রিপে স্পেনে যাবেন। এই ভ্রমণের মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে, তিনজন একটি করে দুঃসাহসিক কাজ ঠিক করে রেখেছে, যা অপর দুজনকে করতেই হবে, যত ভয়ংকরই হোক না কেন! যথাসময়ে কবিরের ব্যাচেলর ট্রিপে তিন বন্ধু স্পেনে যাত্রা শুরু করে। এই ভ্রমণ তাঁদের নিয়ে যায় বার্সেলোনার কোস্টা ব্রাভা থেকে থেকে ভ্যালেন্সিয়ার টমাটিনা উৎসবে। সেখান থেকে সেভিয়ায়। তিনজনেরই জীবন পরিবর্তিত হয়ে যায় এই ভ্রমণে। স্পেনের প্রাকৃতিক দৃশ্য পরিচালক খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন বড় পর্দায়।
সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০
* সাহিদা আক্তার