What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ভেজা পাতার গল্প (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,054
তুহিন ওর হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। এইতো দুদিন আগেই রুহির সাথে ওর বিয়ে পাকাপাকি হয়েছে৷ সেদিন রুহিদের বাসায় মন খুলে কথা বলতে পারে নি তুহিন। তাই আজ একটা ক্যাফেতে রুহির সাথে দেখা করার জন্য ও প্রস্তাব দেয়। রুহি নিঃসংকোচে প্রস্তাব গ্রহণ করে৷ মূলত বিয়ের আগে এই দেখা করার কারণ হলো, তুহিনের কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই। যে প্রশ্নগুলো বিয়ের পর করলে মূল্যহীন মনে হবে৷ তাই বিয়ের আগেই প্রশ্নগুলো করা ঠিক বলে তুহিন মনে করে।

তুহিন বাবা-মার একমাত্র ছেলে। তিন বছর আগে তুহিনের বাবা গত হয়েছেন স্ট্রোক করে। এখন বিশাল বড়ো একটা ফ্ল্যাটে ও আর ওর মা থাকে। মায়ের জোরাজোরিতেই মূলত তুহিন বিয়েটা করছে৷ নাহলে বিয়ে করার ইচ্ছা ওর ছিল না। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে ও। সারাদিন অনেক কাজ থাকায় বিয়ে সাদির খেয়াল ওর মাথাই আসে না৷ কিন্তু মায়ের মন তো আর মানে না। ছেলেটাকে তার জীবন সঙ্গী না দিয়ে তো আর দুনিয়া ছেড়ে শান্তি পাবে না। তাই এবার জোর সোর করেই তুহিনের বিয়েটা ঠিক করেছে।

তুহিন খুবই শান্ত একটা ছেলে। সহজ সরল যাকে বলে। বাবার মতো সৎ চরিত্রের অধিকারী ও। মায়ের বাধ্য ছেলে যাকে বলে। তুহিন এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ওর মাকে ভালবাসে। মায়ের বিন্দুমাত্র কষ্ট ওর সহ্য হয় না৷ তুহিন দেখতে বেশ চার্মিং একটা ছেলে। গুড লুকিং ফেইস কাটিং, লম্বা চওড়া সুঠাম দেহ, সিল্কি চুল। বেশ লাগে ওকে দেখতে৷ পড়াশোনার জীবনে কম মেয়ে ওর জন্য পাগল ছিল না। কিন্তু কাউকেই ও পাত্তা দেয় নি। কারণ ওর সবটা ও ওর একমাত্র বউয়ের জন্য বাচিঁয়ে রেখেছে। তুহিনের ইচ্ছা ওর বউ হবে ওর প্রথম প্রেম, প্রথম ভালবাসা। যাকে ও অনেক অনেক বেশী ভালবাসবে।

তুহিন রিকশা দিয়ে ক্যাফের সামনে নামে। অনেক নার্ভাস লাগছে ওর। কখনো কোন মেয়েদের সাথে এভাবে একান্তে ও আগে দেখা করে নি। পড়াশোনা কিংবা কাজের স্বার্থে দু'একটা কথা বলেছে। তবে বেশী না। কিন্তু আজ ও ওর হবু বউয়ের সাথে কথা বলতে যাচ্ছে। বিষয়টা অন্যরকম লাগলেও ওকে কথা বলতেই হবে। তুহিন দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ক্যাফের ভিতর ঢুকে। ঢুকেই এদিক ওদিক তাকিয়ে এক কোণায় রুহিকে দেখতে পায় তুহিন। অফ হোয়াইট ড্রেস পরেছে একটা। কানে দুলগুলো চিকচিক করছে বাইরের আলোতে। এ যেন কোন পরী বসে আছে। তুহিন আর দেরী না করে দ্রুত রুহির কাছে যায় আর বলে,

- সরি অনেকটা দেরী হয়ে গেল জ্যামের কারণে। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।

~ না না সমস্যা নেই। আমি মাত্র এসেছি। (কিছুটা লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)

তুহিন আস্তে করে রুহির সামনে বসে। রুহি যে ওর মতোই অনেক লজ্জা পাচ্ছে তা বেশ বুঝা যাচ্ছে ওর লজ্জাসিক্ত মুখখানা দেখে। রুহি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তুহিন আড় চোখে বারবার ওকে দেখছে৷ দুজনের মাঝে বিব্রতকর এক নীরবতা। আসলে তুহিন কীভাবে যে কথা শুরু করবে তা বুঝতে পারছে না৷ গলাটা কেমন শুকিয়ে আসছে। পানি খেতে হবে ওকে। নাহলে মনে হয় মরেই যাবে। তুহিন টেবিলে রাখা পানির বোতলটা যেই নিতে যাবে ওমনি রুহির আঙুলের সাথে ওর আঙুল ছোট্ট একটা ধাক্কা লাগে। ওদের প্রথম স্পর্শ। দুজনেই দু'জনার আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে৷ রুহিও বোধহয় পানি খাবে৷ তাই বোতলটা নিতে চেয়েছিল। তুহিন বলে,

- আপনি খান আগে। সমস্যা নেই।
~ না না। আপনি আগে নিতে চেয়েছিলেন। আপনি খান তারপর আমি খাবো।
- আচ্ছা।

তুহিনের আচ্ছা বলায় রুহি আশাহত হয়। ভেবেছিল আবার ওকে নিতে বলবে। এবার ও পানির বোতলটা নিয়ে পানি খাবে। কিন্তু হলো সম্পূর্ণ উল্টো। তুহিন আচ্ছা বলে দিলো। এদিকে রুহির বুকে পানির তৃষ্ণায় হাহাকার করছে। তুহিন কি আর তা বুঝে! কিন্তু রুহিকে অবাক করে দিয়ে তুহিন যা করলো, সত্যিই রুহি মুগ্ধ হয়েছে তা দেখে। তুহিন বোতল নিয়ে দুইটা গ্লাসে পানি ঢালে। একটা রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

- একসাথেই খাই। সেটাই ভালো হবে।

রুহি যেন মরুভূমির মাঝে পানি খুঁজে পেয়েছে সেরকম খুশী লাগছে ওর। এরপর ওরা একসাথে পানি খায়। তুহিন বুঝতে পারছিল যে ওর মতোই অবস্থা হয়েছে রুহির। তুহিন ভাবছে কীভাবে কথা শুরু করবে৷ খুব লজ্জা লাগছে ওর। কিন্তু পুরুষ মানুষের বেশী লজ্জা করতে নেই। তাহলে আবার সমস্যা। ওদের পানির পর্ব শেষ হলে তুহিন আস্তে করে বলে,

- এভাবে বিয়ের আগে দেখা করতে চাওয়ার জন্য দুঃক্ষিত। আসলে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল আপনার কাছে। যেগুলোর উত্তর জানা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আপনি কিছু মনে করেন নি।

রুহি কিছুটা চিন্তায় পড়ে। কি এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে পারে তুহিন? যার জন্য এভাবে ডাকা। রুহি বলে,

~ না না কিছু মনে করে নি। আচ্ছা কি কি প্রশ্ন করবেন করুন৷ আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিব৷

- থ্যাংকস। আমার প্রথম প্রশ্ন, এই বিয়েটা কি আপনি নিজের ইচ্ছায় করছেন নাকি বাধ্য হয়ে? মানে জোরপূর্বক আরকি।

রুহি অবাক চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তুহিনকে দেখে বেশ বিচলিত মনে হচ্ছে। মানে উত্তরটা জানা ওর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। রুহি আস্তে করে বলে,

~ বিয়েটা আমি নিজ ইচ্ছায়ই করছি। কেউ জোর করে নি।

তুহিনের চোখে মুখে একঝলক হাসি ফুঁটে ওঠে মুহূর্তেই। তারপর ও আবার বলে,

- দ্বিতীয় প্রশ্ন, বর্তমানে আপনার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে? বা আপনি কাউকে ভালবাসেন?

~ না নেই।

- আমার আর কিছু জানার নেই। সরি এভাবে প্রশ্ন করার জন্য। (একটা হাসি দিয়ে)

রুহি কিছুক্ষণ তুহিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে,

~ অতীতে আমার কেউ ছিল কিনা জানতে চাইলেন না যে?

- অতীত তো অতীত। আমার কাছে অতীতের কোন মূল্য নেই বর্তমানে৷ তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতকে সুন্দর করা যেতে পারে। আমার কাছে বর্তমানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। এবার চাইলে আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন।

~ আপনি খুব সুন্দর কথা বলতে পারেন। আর আপনার চিন্তাধারা সত্যিই মুগ্ধকর।

তুহিন কিছুটা লজ্জা পায় রুহির কাছ থেকে ওর প্রশংসা শুনে৷ এটা সম্পূর্ণই আনএক্সপেক্টেড ছিল। তুহিন বলে,

- আপনি সত্যি খুব সুন্দর। বিশেষ করে এই ড্রেসটায় আপনাকে অনেক বেশী সুন্দর লাগছে।

এবার রুহি অনেকটা লজ্জা পায়। আর আস্তে করে বলে,

~ আমি ছোটকাল থেকেই গার্লস স্কুল এবং কলেজে পড়ে এসেছি। তাই ছেলেদের সাথে তেমন মেলামেশা হয় নি। কিংবা বলতে পারেন আমি চাইও নি। অনেক ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে৷ ভার্সিটিতে উঠার পর তো একজন বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু আমি কাউকেই সুযোগ দেই নি।

- কারণ?

~ কারণ আমার মন মতো আমি তখন কাউকে পাই নি।

তুহিন মনে মনে ভাবছে,

- তখন পায় নি। তাহলে কি এখন পেয়েছে?

তুহিন রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে আছে। তুহিন প্রশ্ন করে আর লজ্জা দিতে চায় না। তাই ও বলে,

- সত্যি বলতে আমার ক্ষেত্রেও একই কাহানি। তবে আমি অপেক্ষায় ছিলাম একজন বিশেষ জনের। মনে হচ্ছে আমি তাকে এবার পেয়েছি।

রুহি লজ্জায় মরে যাচ্ছে৷ দুজন দুজনকে আড়চোখে দেখছে। একটা মিষ্টি নীরবতা দুজনের মাঝে। এ নীরবতা যেন নতুনত্বের শুরুর আহবান। যথারীতি তুহিন নীরবতা শেষ করে দিয়ে বলে,

- এবার কিছু অর্ডার করি। কি খাবেন আপনি?

~ আপনার যা ভালো লাগে।

এরপর ওরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে। খাওয়ার মাঝে টুকটাক কথা হলেও বেশী একটা জমে নি। রুহি বলে উঠে,

~ আচ্ছা আমাকে এখন যেতে হবে৷ আপনি কিছু মনে না করলে আমি এখন যাই?

- অবশ্যই। চলুন আমি আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।

~ না না সমস্যা নেই আমি একা যেতে পারবো। ধন্যবাদ বলার জন্য৷

- আচ্ছা রিকশায় অন্তত উঠিয়ে দি।

রুহি লজ্জাসিক্ত ভাবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তুহিন রুহিকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে বাসার দিকে চলে আসে। বাসায় আসতেই তুহিনের মা বলে উঠেন,

~ কিরে কেমন লাগলো বউমাকে? এবার বিয়েটা করবি তো বাবা? দয়া করে আর না করিস না।

- আচ্ছা করবো। মেয়ে ভালোই আছে। আমার পছন্দও হয়েছে।

~ মাশাল্লাহ। আল্লাহ বোধহয় এবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়েছেন। দাঁড়া তোর মামাকে এখনিই জানাই। ইসস! কত্তো কাজ বাকি। তুই বস আমি আসি।

তুহিনের মা ভিতরে চলে যান তার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে। তুহিন সোফায় বসে শুধু রুহির কথা ভাবছে। মায়াবী একটা মেয়ে। একদম ওর মন মতো। রুহির মতোই কাউকে ও চেয়েছিল।

তুহিনের ফুল সম্মতি পেয়ে ওর মা আর মামা মিলে তুহিনের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। তুহিনের পুরো বিয়ের দায়িত্বটাই ওর মামার কাঁধে ছিল। দুই মামা আর ভাগিনা মিলে বিয়ের সব কাজ শেষ করে৷ কথা পাকাপোক্তর পর বিয়ের জন্য এক মাস সময় ছিল। দেখতে দেখতে সে একমাস চলে যায়৷ আগামীকাল তুহিন আর রুহির বিয়ে। বড়ো একটা কমিউনিটি সেন্টারে ওদের বিয়ের আয়োজন করা হয়৷ পরদিন বিয়েতে তুহিনের পক্ষ থেকে ওর অনেক আত্নীয় স্বজন আসে। রুহিদের পক্ষ থেকেও। বেশ জমজমাট একটা বিয়ে হয় ওদের।

রাত ১০.৩৪ বাজে। এখন বিদায়ের পালা। রুহির বাবা তুহিনের কাছে তার মেয়ের হাতটা ওর হাতে দিয়ে বলে,

- বাবা আজ থেকে আমার মেয়েটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তোমার। ওকে দেখে রেখো। ও যেন কোন কষ্ট না পায়।

- জি আঙ্কে না মানে জি বাবা অবশ্যই খেয়াল রাখবো।

- ধন্যবাদ বাবা অসংখ্য ধন্যবাদ।

রুহি ভিষণ ভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ে। এতটা সময় ধরে যে মানুষগুলোর সাথে থেকেছে, বড়ো হয়েছে আজ সে মানুষগুলোকে ছেড়ে চলে যেতে হবে৷ রুহির কান্না দেখে তুহিনের চোখটাও অজান্তে ভিজে যায়। আড়ালে চোখ মুছে রুহির হাতটা শক্ত করে ধরে৷ রুহি তুহিনের দিকে তাকায়। তুহিন ওকে শান্ত হতে বলে। রুহি ওর বাবা-মা আর ছোট ভাইকে বিদায় দিয়ে তুহিনের সাথে গাড়িতে উঠে। তুহিনের মা রুহির কাছে এসে বলে,

~ মা কাঁদে না৷ আমিও তো তোমার একজন মা। এক মায়ের কাছ থেকে এখন অন্য আরেক মায়ের কাছে যাচ্ছো শুধু। তোমার যখন ইচ্ছা হবে তুমি তোমার বাবা-মার কাছে আসবে৷ কোন সমস্যা নেই।

শ্বাশুড়ির কথা শুনে রুহি অনেকটা শক্তি পায়৷ ওর খুব ভালো লাগে৷ রুহি তুহিনের একদম কাছে বসে আছে। কেমন জানি ফিল হচ্ছে ওর। তুহিন এখনো রুহির হাতটা ধরে আছে। রুহি শুধু সেদিকেই তাকিয়ে আছে।

এরপর তুহিন রুহিকে নিয়ে ওর বাসায় চলে আসে। সাথে ওর মা, মামা-মামী আর মেহমানরা চলে আসে। রুহিকে তুহিনের রুমে মানে বাসর ঘরে রেখে আসে। তুহিন বাইরে ওর মামার সাথে বসে আছে। ওর মামা ওকে বলে,

- ভাগিনা বিড়ালটা কিন্তু আজকেই মেরে দিও ঠিক আছে। নাহলে কিন্তু সমস্যা হবে।

তুহিন অবাক হয়ে বলে,

- কি রুমের মধ্যে বিড়াল রেখে আসছেন! আবার মারতেও বলতাছেন? কাজের চাপে নিশ্চিত আপনার মাথাটা গেছে৷ যান রেস্ট নেন। সারাদিন অনেক কষ্ট করছেন।

তুহিনের মামা হাসতে হাসতে যায় যায় অবস্থা। তুহিন বোকার মতো তাকিয়ে আছে। ওর মামা আবার বলে,

- হায়রে বোকা এদিকে আয় তোকে বিড়াল মারা বুঝাচ্ছি। হাহা।

তুহিনের মামা ওর কানে কানে কি কি যেন বলে। তুহিন সেগুলো শুনে ওর পুরো মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ছোট কাল থেকেই ওর মামা ওর সাথে খুব ফ্রী। তাই তিনি কোন সংকোচ ছাড়াই তুহিনকে সব শিখিয়ে দেন৷ কিন্তু এদিকে এসব শুনে তুহিন তো লজ্জায় শেষ। বিড়াল মারা যে কি আজ ও বুঝতে পারলো। তুহিন মনে মনে বলছে,

- বিড়াল মারতে গিয়ে নিজে না মরলে আবার হয়।

তুহিনের মা আর মামী মুচকি হাসতে হাসতে এসে বলে,

- যা এখন ভিতরে৷ রুহি তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

তুহিন লজ্জায় দ্রুত বাসর ঘরে চলে যায়। আর এদিকে সবাই হাসাহাসি করছে। তুহিন রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুহির দিকে তাকায়।

চলবে..?
 
তুহিন লজ্জায় দ্রুত বাসর ঘরে চলে যায়। আর এদিকে সবাই হাসাহাসি করছে। তুহিন রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুহির দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে ও৷ রুহিকে দেখে হঠাৎই তুহিনের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কীসব চিন্তা ভাবনা মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে। মামার বিড়াল মারার কথা মনে পড়তেই ওর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তুহিনের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে দ্রুত পানির জগ আর মগটা খুঁজে বের করে। একগ্লাস পানি নিয়ে দ্রুত খেয়ে নেয়৷ বেচারার জানে জান এসেছে। কীসব উলটা পাল্টা চিন্তা করছিলো ও।

এদিকে রুহি আড় চোখে তুহিনের কান্ড দেখছিলো। মনটা ওর বেশ খারাপ থাকলেও তুহিনের কান্ড দেখে মুচকি হাসছে ও। কেমন এক অন্যরকম অনুভূতি। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, নতুন সবকিছু। হঠাৎই তুহিন রুহির দিকে তাকালে ওদের চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজনেই বেশ লজ্জা পায়। তুহিন এখনো গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে কি যে করবে ও বুঝতে পারছে না। তুহিনের মনে হচ্ছে দুইটা মোরগা আর মুরগিকে একটা খাচার ভিতর রেখে দিয়েছে। তুহিন এটা ভেবে নিজেই হাসে। নার্ভাসনেসের কারণে আজব চিন্তা ভাবনা মাথায় এসে ভর করছে৷ আসল কাজ রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছে ও। তুহিন গ্লাসটা রেখে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে রুহির দিকে এগিয়ে যায়।

এদিকে রুহি ভাবছে, উনি এভাবে হাসলেন কেন? ওনার মাথায় কি ঘুরছে? উনি কি আমার সাথে.. ছিঃ ছিঃ কি ভাবছি এসব? অবশ্য.. ধুর! উফফ গলাটা একদম শুকিয়ে গিয়েছে। একটু যদি পানি খেতে পারতাম। রুহি মনে মনে এসব কথা বলতে বলতে তুহিন এসে ওর সামনে বসে। রুহি ওর ভাবনার জগতে ডুবে থাকায় আচমকা তুহিনকে এত কাছে দেখে ও কিছুটা আঁতকে উঠে। আবার মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়।

এদিকে তুহিন ভাবছে, ওর কাছে তো এসে বসলাম। কিন্তু এখন করবোটা কি? মামার কথা মতো কি কাজ শুরু করবো? করাই যেতে পারে। উনি তো বড়োই। তুহিন
বোকার মতো কিছু না ভেবে রুহির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রুহি তুহিনকে এভাবে ওর কাছে আসতে দেখে বেচারি অনেক ভয় পেয়ে যায়। আর দ্রুত কণ্ঠে আস্তে করে বলে,

~ থামুন।

তুহিন থেমে যায়। আর বলে,

- কোন সমস্যা?
~ পানি খাবো। প্লিজ একটু পানি দিন। (খুব ভয়ে ভয়ে)

তুহিনের এবার বোধগম্য হয় আসলে ও কি করতে যাচ্ছিলো। ও একলাফে উঠে দাঁড়ায়। জিহবায় কামড় দিয়ে দ্রুত একগ্লাস পানি এনে রুহিকে দেয়। রুহি খপ করে পানির গ্লাসটা নিয়ে ডগডগ করে খায়। রুহি পানি খেয়ে গ্লাসটা তুহিনের দিকে এগিয়ে দেয়। তুহিন পানির গ্লাসটা নিতে নিতে বলে,

- সরি আসলে নার্ভাসনেসের কারণে কি যে করতে যাচ্ছিলাম বুঝতে পারিনি। আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ।

রুহি মাথা নাড়িয়ে না না বলে। তুহিন খুশী হয়। ও গ্লাসটা রেখে এসে রুহির সামনে চুপ করে এসে বসে। কিছুক্ষণ ওকে দেখে বলে,

- আপনাকে বঁধু সাজে অপূর্ব লাগছে। সত্যিই একদম মনমাতানো আপনি।

কথাগুলো বলে তুহিন আবার জিহবায় কামড় দেয়। হায় হায় এভাবে বেহায়ার মতো কি বলে ফেললো ও। রুহি আবার ওকে খারাপ ভাববে। তুহিন এসব ভেবে অস্থির হয়ে যাচ্ছে৷ এদিকে তুহিনের মুখে এরকম কথা শুনে রুহি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাও নিজেকে সামলে বলে,

~ ধন্যবাদ। আপনি আমাকে আপনি করে বলবেন না। আপনি আমার অনেক বড়ো। তুমি করে বললে ভালো হয়।

- আসলে প্রথম প্রথম তো তাই। আচ্ছা তুমি করেই বলবো।

রুহি নিচে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তুহিন মুগ্ধ হয়ে রুহির হাসি দেখে। রুহি অনেকক্ষণ যাবৎ একভাবে বসে আছে। পা দুটো ঝিম দিয়ে আছে। কষ্ট হচ্ছে ওর খুব। কি যে করবে বুঝতে পারছে না ও। তুহিনকেও কিছু বলতে পারছে না। হঠাৎই রুহিকে অবাক করে দিয়ে তুহিন বলে,

- সেই কখন থেকে বিয়ের সাজে বসে আছেন না মানে আছো। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, ভালো লাগবে। তুমি আসলে আমি যাবো।

রুহি অবাক হয়ে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মনের কথা তুহিন কীভাবে বুঝলো তা ও জানে না। হয়তো এটাই বুঝি পবিত্র সম্পর্কের উদাহরণ। রুহি খুব খুশী হয়ে আচ্ছা বলে। রুহির এভাবে খুশী হওয়া দেখে তুহিন অনেক অবাক হয়। রুহির হাসিটা তুহিনের খুব প্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন। রুহি বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে ওর লাগেজ থেকে ড্রেস নিয়ে সোজা ফ্রেশ হতে চলে যায়।

রুহি গেলে তুহিন বিছানায় গা'টা এলিয়ে দেয়। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে ওর উপর দিয়ে। কত মানুষ কত কিছু ওকে দেখতে হয়েছে। আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে কষ্ট অনেকটাই কম হতো। এসব ভাবতে ভাবতে তুহিনের চোখ কখন যেন লেগে যায়। বেচারা বিছানায় পা ঝুলিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর,

~ এই যে...শুনছেন? এই যে উঠুন। ফ্রেশ হবেন না? এই যে....

রুহির মিষ্টি ডাকে তুহিন চোখ মেলে তাকায়। চোখ খুলে রুহির মিষ্টি মুখখানা খুব কাছে দেখতে পায়৷ সাথে একটা মনমাতানো মিষ্টি ঘ্রাণ তুহিনের নাকে এসে লাগছে। ঘ্রাণটা রুহির কাছ থেকেই আসছে। তুহিন যেন এক অজানা ঘোরের মধ্যে পড়ে যায়৷ রুহির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে শুয়ে আছে। এদিকে রুহি লজ্জায় মরে যাচ্ছে। তুহিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুহির কেমন জানি লাগছে। তুহিনকে দেখে মনে হচ্ছে, ও ওর মাঝে নেই। রুহি আস্তে করে আবার বলে,

~ ফ্রেশ হবেন না? উঠুন।

রুহির কথায় তুহিনের হুশ হয়৷ একলাফে উঠে বসে। আবার ভুল করলো ও। তুহিনই বোধহয় একমাত্র জামাই যে বউকে রেখে বাসর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছে। তুহিন লজ্জায় কিছু বলতে পারতে না। দ্রুত উঠে এদিক ওদিক করে কোন রকম নিজের পোশাকটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তুহিনের কান্ড দেখে রুহি হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ঠিক সেখানে শুয়ে পড়ে যেখানে তুহিন শুয়ে ছিল। রুহি শুয়ে শুয়ে তুহিনকে ফিল করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। পরক্ষণেই ও লজ্জা পেয়ে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুলগুলো মুছতে থাকে।

তুহিন ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে প্রথমেই নজর যায় রুহির দিকে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে ও। নীল রঙের একটা শাড়ী পরেছে রুহি। ওর বোধহয় নজর পড়ে নি যে ওর সুন্দর কোমল কোমড়খানা বের হয়ে আছে। তুহিন হা করে শুধু রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনে প্রথম কোন নারীকে এত কাছ থেকে দেখছে ও। তুহিনকে বের হতে দেখে রুহি ওর দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে তুহিন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তবে তুহিনের দৃষ্টি একটু নিচের দিকে। রুহি তুহিনের দৃষ্টি ফলো করে তাকিয়ে দেখে ব্যাটা মন ভরে ওর কোমড় দেখছে। রুহি একে তো প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছে দুয়ে তো তুহিনকে মনে মনে বকা দিচ্ছে ও। রুহি দ্রুত ওর সুন্দর কোমড়খানা ঢেকে ফেলে। আর সাথে সাথে তুহিন সক খায়। ইসস! আর দেখতে পারবে না এই মজার দৃশ্য। তুহিন মন খারাপ করে যেই রুহির দিকে তাকায়, তুহিন দেখে রুহি আড় চোখে কিছুটা রাগীভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারার হাত থেকে ভয়ে তোয়ালেটা নিচে পড়ে যায়। দ্রুত উঠিয়ে রুহিকে সরি বলে বিছানায় গিয়ে বসে। রুহি এ দৃশ্য দেখে মিটমিট করে হেসে আর চুল বেঁধে বিছানায় এসে বসে।

দুজন দু'প্রান্তে বসে আছে। দুজনের মাঝে এখন আবার সেই নীরবতা। জ্যোৎস্না রাতের ঠান্ডা হাওয়া জানালা দিয়ে ওদের রুমে প্রবেশ করছে। হাওয়ার তোড়ে রুমের পর্দাগুলো দোল খাচ্ছে। তুহিন বসে বসে ভাবছে,

- আচ্ছা এখন কি করবো? মামার কথা তো ভুলেও মানা যাবে না। এমনিই অনেক ভুল করেছি। মামার কথা মানতে গেলে নির্ঘাত আজকে বউয়ের হাতে মার খেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করবো। থাক ঘুমিয়ে পড়ি তার চেয়ে। সেটাই ভালো হবে।

এদিকে রুহি আবার ভাবছে,

~ আচ্ছা উনি চুপচাপ বসে আছে কেন? আমি কি বেয়াদবি করে ফেললাম? উনি আমার স্বামী। আমার সব কিছু দেখার অধিকার উনার আছে। উফফ! আমিও না। উনি বোধহয় রাগ করেছেন। নাহ! উনাকে সরি বলি।

- এক....

~ আম...

রুহি আর তুহিন একসাথেই কিছু বলতে নেয়। কিন্তু বলতে পারে না। তুহিন আবার বলে উঠে,

- কিছু বলবে?

~ আগে আপনি বলুন। তারপর আমি।

- উহুম লেডিস ফাস্ট। তুমি আগে বলো।

~ না মানে সরি বলতে চাচ্ছিলাম। আসলে তখন হয়তো এমন করাটা আমার ঠিক হয়নি। আপনি আমার স্বামী। আপনি চাইলে আমার...

তুহিন রুহির কথা শুনে লজ্জায় ওর শরীর গরম হয়ে গিয়েছে। তুহিন দ্রুত রুহিকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

- আরে না না কি বলছ তুমি। বরং আমি সরি। সেই কখন থেকে উল্টাপাল্টা করেই যাচ্ছে। আমি সরি।

~ আরে না না। আমি কিছু মনে করি নি। আপনি সত্যি খুব ভালো।

তুহিন মুচকি হাসে। রুহি যে কত্তো ভালো তা ও বুঝতে পারছে। রুহি আবার চুপ হয়ে যায়। তুহিন আস্তে করে বলে,

- আজ বাইরে জ্যোৎস্না। শহরটা চাঁদের আলোতে অন্যরকম ভাবে সেজে আছে। তুমি দেখবে?

রুহি তুহিনের সাহিত্যিক রূপটা দেখে মুগ্ধ হয়। আর বলে,

~ হ্যাঁ দেখবো।
- তাহলে আমার সাথে আসো।

তুহিন বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দার দিকে যায়। ওকে ফলো করে রুহিও ওর সাথে যায়। রুহি বারান্দায় এসে একদম থ হয়ে যায়। সত্যিই অসম্ভব সুন্দর লাগছে চারদিকটা। ঠান্ডা একটা বাতাস এসে ওর মুখে ওর পুরো শরীরে লাগছে৷ তুহিনের ঠিক বারান্দা বরাবর চাঁদটা। তাই বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চাঁদের আলোতে রুহির চোখগুলো চিকচিক করছে। রুহির মায়াবী মুখখানা যেন আরো মায়াবী হয়ে উঠছে। তুহিন পাশে দাঁড়িয়ে শুধু রুহিকে দেখছে। এ যেন এক সুন্দর স্বপ্ন। তুহিন চায় না এই স্বপ্নটা কখনো যেন শেষ হোক। রুহি তুহিনের দিকে তাকিয়ে দেখে তুহিন ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ রুহি লজ্জা পায়। তুহিন বারান্দায় রাখা দুটো চেয়ারের একটাতে গিয়ে বসে। আর বলে,

- তুমি চাইলে বসতে পারো।

রুহি আস্তে করে এসে তুহিনের পাশে এসে বসে। খুব ভালো লাগছে ওর। তুহিনের মতো একজনকে ও জীবনে সঙ্গী হিসেবে চেয়েছিলো। সেটাই ও পেয়েছে। তুহিনের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো ওর কথা না ভেবে নিজের দৈহিক ইচ্ছাটাকে পূরণ করতো। রুহির খুব খুশী হয়। কারণ তুহিন খুব ভালো একটা মানুষ। তুহিন বলতে শুরু করে,

- পছন্দ হয়েছে জায়গাটা?
~ জি।
- এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের একটা জায়গা। মন খারাপ কিংবা ভালো থাকলে আমি এখানে এসে বসি। রাতের শহরটা আমার খুব ভালো লাগে। সবাই ঘুমিয়ে থাকে। মনে হয় এই শহরের রাজা শুধু আমি। এই শহরটা শুধু আমার। আর আজ থেকে এই রাজার রাণী তুমি।

তুহিন আবার জিহবায় কামড় দেয়। একটু বেশীই রোমান্টিক হয়ে গেল ও। রুহি আস্তে করে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ আপনি বেশ সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন।
- হাহা। ধন্যবাদ। (একটু হেসে)

দুজনের মাঝে আবার নীরবতা। তুহিন আড় চোখে রুহিকে দেখছে। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে বউকে দেখার মজাই আলাদা। রুহি যেই আড় চোখে তুহিনকে দেখতে যায় ওমনি ওদের চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজনেই বেশ লজ্জা পায়। তুহিন দ্রুত বলে উঠে,

- চলো এখন গিয়ে শুয়ে পড়ি। না হয় তোমার ঠান্ডা লাগবে৷

শুয়ে পড়ি কথাটা শোনা মাত্রই রুহির হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে যায়। বুকের ভিতর দুম দুম করে যে শব্দ হচ্ছে তা ও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। জীবনে প্রথম ও ওর পরিবার ছাড়া একটা ছেলের সাথে ঘুমাবে। অবশ্য সে তো ওর স্বামী। কিন্তু তাও ওর কেমন জানি লাগছে। রুহির মাথায় অনেক কিছু এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। তুহিনের সাথে রুমে এসে বিছানার সামনে ও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ততক্ষণে তুহিন বিছানায় উঠে বসে পড়েছে। রুহি তুহিনের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে৷ আসলে ও এখনো প্রস্তুত না। ওকে একটু সময় দিতে হবে। কিন্তু ও ভয়ে মুখ ফুটে সে কথাটা তুহিনকে বলতে পারছে না। রুহি মনে মনে ভাবে, সে তো আমার মনের মতো। যদি সে আমাকে আজকেই চায় আমি তাকে সব দিয়ে দিব৷ তাতে আমি প্রস্তুত থাকি আর না থাকি। এটা তো তার হক। রুহি নিজেকে কিছুটা সাহস দেয়। এরমধ্যেই তুহিন বলে উঠে,

- আসো এখানে শুয়ে পড়ো।

তুহিনের এভাবে কথা শুনে রুহির বুকটা এমনভাবে ধরপর করছে যেন মনে হচ্ছে ফেটে যাবে৷ রুহি আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসে৷ তুহিন বিছানার বাম দিকে ছিল। রুহি ডান দিকে থেকে উঠে বসে৷ রুহি যে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে৷ মাথার ভিতর অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে সমানে৷ মনে হচ্ছে অজ্ঞানই হয়ে যাবে৷ হঠাৎই তুহিন "রুহি" বলে ডাক দেয়৷ রুহি রীতিমতো কেঁপে উঠে। আস্তে আস্তে ভয়ে ভয়ে তুহিনের দিকে তাকায়৷ আর মনে মনে বলতে থাকে, আজকে আমি শেষ। রুহি তুহিনের দিকে তাকালে ও মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

- শোনো তুমি আজ অনেক বেশী ক্লান্ত আমি জানি৷ তোমার সুন্দর চেহারাটাই তা বলে দিচ্ছে৷ তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো। আমি মাঝে কোলবালিশ দিয়ে দিলাম। যাতে রাতে তোমার কোন ডিস্টার্ব না হয়। শুভ রাত্রি।

তুহিন আস্তে করে শুয়ে পড়ে। রুহি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না কোন কিছুই। ও কি স্বপ্ন দেখছে নাকি। নিজের মনকে বিশ্বাস করানোর জন্য হাতে একটা ছোট্ট চিমটি কাটে রুহি। আস্তে করে আহ করে উঠে৷ না এটা স্বপ্ন না। এটা সত্যি। এরপর ও চুপচাপ শুয়ে পড়ে। ও ডান দিকে শোয়ায় তুহিনের পিছনটা ও দেখতে পারছে। অবশ্য মাঝের কোলবালিশটা ও একটু নিচে নামিয়ে দিয়ে ছিল। যাতে তুহিনকে দেখতে পারে। তুহিন যে এত্তো ভালো মনের মানুষ রুহি কল্পনাও করে নি। তুহিন রুহিকে বুঝার চেষ্টা করেছে।

একটা মেয়ে বিয়ের দিনের আগ থেকে তাকে অনেক কিছুর প্রস্তুতি নিতে হয়। এর ফলে তার উপর মানসিক এবং শারীরিক দুটোরই চাপ পড়ে। বিশেষ করে বিয়ের দিন তো মেয়েটার মন অনেক খারাপ থাকে। সেই ছোটকাল থেকে যাদের সাথে বড়ো হয়েছিল মেয়েটা তাদেরকে ছেড়ে স্বামীর ঘরে আসাটা সত্যিই কষ্টকর। একজন নারীকে তার জীবনের পদে পদে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। যা পুরুষরা কখনোই পারবে না। এত ধকল সহ্য করার পর যদি বিয়ের দিন রাতে মেয়েটার উপর শারীরিক জোর দেওয়া হয় তাহলে সত্যিই তার কষ্টের আর শেষ থাকে না। অধিকাংশ মেয়েই বিয়ের দিন রাতে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারে না। কিন্তু আমাদের পুরুষজাতি তা মানতে নারাজ। সে তার চাহিদা পূরণের জন্য একটিবার মেয়েটার মনের কথাভাবে না৷ স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই তাকে ভোগ করে৷ যেটা একদমই ঠিক না। যদি স্ত্রী তার সম্মতি দেয় তাহলে সে তাকে ভোগ করতে পারবে। অন্যথায় সেটা তার মনের বিরুদ্ধে হবে৷ আর আমাদের দেশে এটাই বেশী হয়।

তুহিন শিক্ষিত একজন ছেলে হওয়ায় সে তার ইচ্ছাটাকে দামিয়ে রুহির অবস্থাটাকে বুঝার চেষ্টা করেছে। যেটা উত্তম কাজ ছিল। একজন স্বামী হিসেবে এটাই ওর দায়িত্ব ছিল, স্ত্রীকে বোঝা। রুহির খুব গর্ববোধ হচ্ছে তুহিনের মতো একজনকে ওর স্বামী হিসেবে পেয়ে। রুহি তুহিনকে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে,

সকালের স্নিগ্ধ রোদের আলো জানালা ভেদ করে তুহিনের মুখের ওপর এসে পড়ে। তুহিন আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। ও একটু নড়াচড়া করতে নিলে নিজেকে কেমন আবদ্ধ আবদ্ধ মনে হয়। কেমন একটা ফিল হয় ওর, যে বেশ নরম কিছু একটা ওর বুকের মাঝে আছে। ও তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। সাথে একটা পরিচিত কড়া মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে৷ তুহিন আস্তে আস্তে নিচে তাকিয়ে দেখে রুহি ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। সাথে সাথেই তুহিনের...

চলবে..
 
তুহিন আস্তে আস্তে নিচে তাকিয়ে দেখে রুহি ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। সাথে সাথেই তুহিনের চোখগুলো ডিমের মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায়। বেচারার অবস্থা এখন অনেক খারাপ। কীভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না। রুহির ঘুম ভাঙার আগে তুহিন আস্তে আস্তে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। রুহি ওকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। তুহিন যে এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রুহি ঘুম থেকে উঠলে ওকে এভাবে দেখলে নিশ্চিত খারাপ ভাববে৷ এটা ভেবে তুহিন আরও অস্থির হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু ও বুঝতে পারছে না যে এরকম হলো কীভাবে! তুহিন আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ও ওর জায়গায়ই আছে। উল্টো রুহি ওর কাছে এসেছে। মাঝের কোলবালিশটার নাম গন্ধও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আপাতত।

তুহিন কিছুটা শান্ত হয়৷ রুহিকে এবার ঠিক মতো অনুভব করার চেষ্টা করে। শত হলেও একমাত্র বউ ওর। এটুকু অধিকার খাটানোই যেতে পারে। তুহিন রুহিকে আরেকটু কাছে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রুহিও অজান্তেই তুহিনকে একদম কাছে টেনে আরাম করে জড়িয়ে থাকে। তুহিন মুচকি হাসছে৷ এ এক অন্যরকম অনুভূতি। একমাত্র যারা বিয়ে করেছে মূলত তারাই এই মধুর সুখটা পেতে পারে। তুহিন এখন এই সুখটাই পাচ্ছে।

হঠাৎই রুহির ঘুম ভেঙে যায়। ওরও নিজেকে আবদ্ধ আবদ্ধ ফিল হয়। পুরো ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই ও বুঝতে পারে, ও তুহিনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। রুহি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কি করলো এটা ও! অবশ্য ওর খুব ভালো লাগছে। অন্যরকম এক অনুভূতি। গরম উষ্ণতা, তুহিনের স্পর্শ সব মিলিয়ে ওর খুব ভালো লাগছে৷ এদিকে রুহি জানে না যে তুহিন জেগে আছে৷ রুহি আস্তে আস্তে তুহিনকে ছেড়ে নিজেকে আলাদা করে৷ তুহিন রুহিকে উঠতে দেখে ঘুমের অভিনয় করে রয়। রুহি নিজেকে ছাড়িয়ে তুহিনের মুখের দিকে তাকায়। মেয়েটা বেশ লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু ওর খুব ভালো লাগছে তুহিনকে দেখতে। এই মানুষটাকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে। রুহির খুব ইচ্ছা করছে তুহিনের কপালে একটা ছোট্ট চুমু এঁকে দিতে। কিন্তু ওর ভয় যদি তুহিন জেগে যায়! তাই ইচ্ছাটাকে দামিয়ে তুহিনের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রুহি উঠে পড়ে। বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়৷

রুহি গেলে তুহিন আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। চুলে হাত দিয়ে রুহির স্পর্শগুলো অনুভব করার চেষ্টা করে ও। তুহিনও মুচকি হাসে। মেয়েটা বড্ড মিষ্টি। ভালো না লেগে আর উপায় নেই৷ তুহিন চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বলে,

- তাহলে কি আমি রুহির প্রেমে পড়েই গেলাম? হয়তো।

রুহি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তুহিন উঠে বসে আছে। তুহিনকে হঠাৎ দেখে রুহি চমকে যায় আর সাথে অনেক লজ্জাও পায়। কারণ গত সারারাত এই মানুষটার বুকের সাথে ও মিশে ছিল। তার স্পর্শ, তার অনুভব এখনো যেন ওর সাথে মিশে আছে৷ রুহি দ্রুত মুখ মুছে তোয়ালেটা বারান্দায় রেখে রুমে এসে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে তুহিনকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,

~ আপনাকে চা/কফি বানিয়ে দিব?
- না না। একেবারে নাস্তা করবো।
~ আচ্ছা। তাহলে আমি নাস্তা বানিয়ে আসি।
- আচ্ছা।....আর শোনো...
~ জি বলুন।
- তোমাকে শাড়ীতে বেশ লাগছে৷ একদম খাটি বাঙালি রূপসী মেয়ে।

রুহির মুখখানা লজ্জায় গোলাপি হয়ে যায়। ও আস্তে করে বলে,

~ ধন্যবাদ। আপনিও অনেক কিউট৷

বলেই দৌড়ে পালিয়ে যায় রুহি৷ তুহিন বসে বসে হাসছে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে ও ভাবতে ভাবতে বলে,

- আরে আমি তো ছেলে। আমি আবার কিউট হলাম কীভাবে! ও কি বলল এটা। পাগলি একটা। হাহা৷

তুহিন হাসতে হাসতে ফ্রেশ হতে চলে যায়৷ রুহি দৌড়ে রান্নাঘরে চলে আসে। এসে দেখে তুহিনের মা মানে রুহির শ্বাশুড়ি। রুহি দ্রুত তাকে সালাম দেয়৷

~ আলাইকুম আসসালাম বউমা। এত সকালে উঠলে যে!
~ মা নাস্তা বানাবো তো তাই।
~ ধুর! কি বলো তুমি! বাড়ির নতুন বউ তুমি। কদিন পর বানিয়েও। আমিই বানাচ্ছি নাস্তা৷ তুমি বরং আমার নাতির ব্যবস্থা করো গিয়ে তাড়াতাড়ি। (মজা করে)

রুহি মনে মনে বলে, মা আর ছেলে দুজনে মিলে আমাকে লজ্জা দিয়ে দিয়ে শেষ করবে। রুহি উত্তরে বলে,

~ মা কি যে বলেন আপনি। এখন থেকে বাসার সব দায়িত্ব আমার৷ আপনি বরং রেস্ট নিন। আজ থেকে আমি নাস্তা বানাবো।
~ সত্যি বলছো?
~ জি মা।
~ কিন্তু তুমি সব খুঁজে পাবে তো?
~ পাবো সমস্যা নেই। আমার উপর ছেড়ে দিন৷
~ আচ্ছা৷ দেখি তাহলে আমার বউমার রান্নার হাতটা কেমন।

রুহি মুচকি হাসে। তুহিনে মা চলে গেলে রুহি আঁচলটা কোমড়ে গুজে নাস্তা বানাতে শুরু করে। দেড় ঘন্টার মধ্যে নাস্তা বানিয়ে ফেলে ও। ডাইনিং রুমে খাবার পরিবেশন করা মাত্রই তুহিনের মামা আর মামী চলে আসেন৷ মামা আসতে আসতে বলেন,

- এ মা এত সুন্দর মজার ঘ্রাণ আসে কোথা থেকে রে? ওরে বাবা, এ দেখি আমাদের বাসা থেকেই। আজ কি এমন রান্না হলো নাস্তায়?

তুহিন আর ওর মা একসাথে খাবার টেবিলের কাছে আসে। তুহিনের মা খুশী হয়ে বলে উঠেন,

~ আজ যে আমাদের বউমা রান্না করেছে।
- তাই নাকি? তাহলে তো আর দেরি না করে খেতে বসা যাগ। ভাগনে তাড়াতাড়ি খেতে বস। নাহলে তোর মামী সব খেয়ে ফেলবে মজা পেয়ে। হাহা।
~ দেখছেন আপা কি বলে এসব আপনার ভাই। আমি এতও খাই না৷ তুমিই বেশী বেশী খাও।
~ হাহা। সবাই বস। একসাথে খাই। রুহি মা তুমিও তুহিনের পাশে বসো। তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখতে ভালোই লাগে।
~ আচ্ছা৷

রুহি সবাইকে নাস্তা বেড়ে দিয়ে তুহিনের পাশে বসে। তুহিন সহ সবাই খেতে শুরু করে। মামা কিছুক্ষণ খেয়েই,

- বাহ! বা বা বাহ! উফফ! কি মজা হয়েছে না ভাজিটা অমৃত। এত মজার ভাজি আমি আগে কখনো খাই নাই। রুহি ১০০/১০০০ দিলাম তোমাকে।

রুহি লজ্জা পাচ্ছে খুব৷ তবে মামার চেয়ে ও বেশী খুশী হতো যদি প্রশংসাটা তুহিন করতো। কিন্তু ব্যাটা চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছে শুধু। রুহি তুহিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ও শুধু খেয়েই যাচ্ছে। যেন দুনিয়ার কোন হুশ ওর নাই। রুহি বুঝলো না কি হলো।

~ বউমা তোমার রান্নার হাত বেশ পাকা। সত্যিই আমরা সবাই মুগ্ধ। এই তুহিন আজ তুই বউমাকে নিয়ে কিন্তু ঘুরতে যাবি। ও যেখানে যেতে চায় নিয়ে যাবি। ঠিক আছে?

- এ...হ্যাঁ হ্যাঁ। আচ্ছা নিয়ে যাবো।

তুহিন খাওয়ার মধ্যে এতটাই ডুবে ছিল যে মায়ের উত্তর দিতে গিয়ে ও আটকে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে মামা-মামী আর তুহিনের মা তাদের রুমে চলে যায়। এখন শুধু তুহিন আর রুহি আছে। রুহি টেবিল পরিস্কার করছিল। তুহিন ওকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ওরা দুজনে এখন রান্নাঘরে৷ রুহির কেমন জানি লাগছে। তুহিন ওর পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। বাট রুহির মনে হচ্ছে মুখ ফুটে বলতে পারছে না। রুহির কাজ শেষ হলে তুহিন বলে,

- একটা কথা বলার ছিল।

রুহি একটু ঘাবড়ে যায়। ও মনে মনে ভাবছে, ওনার কি আমার রান্না পছন্দ হয়নি? তাই বোধহয় তখন কিছু বলেন নি। রুহি মুখটা মলিন করে বলে,

~ জি বলুন।
- আসলে তোমার রান্না এত্তো মজা হয়েছে যে খাওয়ার সময় কিছু বলতেই পারিনি। শুধু মন ভরে খেয়েছি। তাই এখন বলছি, তোমার রান্না অনেক অনেক মজার হয়েছে। আমাকে এভাবে সবসময় রান্না করে খাওয়াবে তো রুহি?

রুহি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুহিনকে মাঝে মাঝে ও বুঝতে পারে না। লোকটা এত ভালো কীভাবে হয়! খুশীতে ওর চোখ ছলছল করছে। চোখের কোণায় নোনা জলের আনাগোনা। রুহি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তুহিন বলে উঠে,

- একি! কাঁদছো কেন?

রুহি কিছু বলে না৷ আসলে বলতে পারে না। তুহিন কিছু না ভেবেই রুহির একদম কাছে এসে ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

- বাসার কথা মনে পড়ছে বুঝি? চলো তোমাদের বাসা থেকেই আজ ঘুরে আসি৷ তাহলে তোমার ভালো লাগবে৷

রুহি এবার সত্যিই কেঁদে দেয় বাচ্চাদের মতো। এত সুখ যেন ওর সহ্য হয় না। তুহিন কিছুটা বিচলিত হয়ে রুহির চোখ মুছতে মুছতে বলে,

- আহহা! কাঁদছো কেন? কি হয়েছে?
~ আপনি অনেক অনেক ভালো জানেন? এটা খুশীর কান্না। আর হ্যাঁ আমি আপনাকে এভাবে সবসময় রান্না করে খাওয়াবো। আপনি খাবেন তো?

তুহিন আবার রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে,

- বোকা মেয়ে। অবশ্যই খাবো। সুন্দরী বউয়ের মজার রান্না। না খেয়ে থাকা যায় নাকি? হাহা।

রুহি তুহিনের বুকে হাসে। ও তুহিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে৷ তুহিনও রুহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। দুজনের চোখ বন্ধ। দুজন অজানা এক অনুভূতিতে হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু হঠাৎই,

~ উহুম উহুম। (মামী)

হঠাৎ মামী এসে পিছন থেকে উহুম উহুম করে উঠে। তুহিন আর রুহি লাফিয়ে উঠে। লজ্জায় দুজনে দিকে চলে যায়৷ তুহিন রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লেও বেচারি রুহি আটকা পড়ে মামীর খপ্পরে। মামী পিছনে হাত রেখে টিটকারি করতে করতে রুহির কাছে এসে বলে,

~ হুমম...জামাইকে নিয়ে রান্নাঘরে তাহলে রোমান্স চলে হ্যাঁএএএ? আহরে আমি এসে তো রোমান্সটা শেষ করে দিলাম। ইসসস!

রুহি লজ্জায় অজ্ঞান হয়ে যাবে৷ তাই সরি বলে দ্রুত চলে আসে ওর রুমে। আর মামী হাসতে থাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। রুহি রুমে এসে দেখে তুহিন অস্থির হয়ে আছে৷ রুহি আসতেই তুহিন ওর কাছে এসে বলে,

- সরি সরি। আসলে আমার জন্য তোমাকে...

রুহি তুহিনকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

~ কিছু হয় নি। সমস্যা নেই। (একটা লজ্জাসিক্ত হাসি দিয়ে)

তুহিন চুপ করে তাকিয়ে থাকে রুহির দিকে। রুহি একটু তুহিনের দিকে তাকাতেই তুহিন আবার বলে উঠে,

- তাহলে আজ আমরা তোমাদের বাসায় যাচ্ছি। আমি বাবাকে কল দিয়ে বলে দিচ্ছি। তুমি রেডি হয়ে নেও।

~ আচ্ছা৷

তুহিন বাইরে চলে গেলে রুহি রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তুহিন ওর মামা আর মাকে বলে রুহির বাবাকে কল দিয়ে জানায় যে ওরা আসছে৷ অবশ্য নিয়ম অনুযায়ী সেখানেই যাওয়ার কথা। তাই কোন সমস্যা হয় নি। তুহিন সোফায় বসে অপেক্ষা করছিল রুহির জন্য। কিন্তু হঠাৎই ওর ফোন কল আসে। রুহি কল দিয়েছে৷ তুহিন দ্রুত কল রিসিভ করতেই রুহি বলে উঠে,

~ আমাদের রুমে একটু আসতে পারবেন প্লিজ?
- এখনি আসছি। (চিন্তিত কণ্ঠে)

তুহিন অজানা ভয়ে দ্রুত ওর রুমে যায়। দরজায় নক দিতেই রুহি দরজা খুলে। তুহিন ভিতরে ঢুকে দরজা দিয়ে অস্থির হয়ে বলে,

- কি হয়েছে? কোন সমস্যা?

তুহিন দেখে রুহিকে কেমন জানি লাগছে। কারণ রুহি ওর পিঠে এক হাত দিয়ে আছে৷ আর খুব লজ্জা পাচ্ছে। তুহিন আবার বলে,

- তুমি পিছনে হাত দিয়ে আছো কেন? কি হয়েছে প্লিজ বলো?

রুহি খুব লজ্জা নিয়ে আস্তে করে ঘুরে বলে,

~ এটা লাগাতে পারছি না। প্লিজ একটু হেল্প করুন।

তুহিন হা করে তাকিয়ে আছে। সাথে অস্থিরও হচ্ছে৷ কারণ এ কাজ ও করবে কীভাবে! কারণ...

চলবে..
 
তুহিন দেখে রুহিকে কেমন জানি লাগছে। কারণ রুহি ওর পিঠে এক হাত দিয়ে আছে৷ আর খুব লজ্জা পাচ্ছে। তুহিন আবার বলে,

- তুমি পিছনে হাত দিয়ে আছো কেন? কি হয়েছে প্লিজ বলো?

রুহি খুব লজ্জা নিয়ে আস্তে করে ঘুরে বলে,

~ এটা লাগাতে পারছি না। প্লিজ একটু হেল্প করুন।

তুহিন হা করে তাকিয়ে আছে। সাথে অস্থিরও হচ্ছে৷ কারণ এ কাজ ও করবে কীভাবে! জীবনেও যে কাজ করে নি সেটা করবে কীভাবে! বিয়ের পর বউ প্রথম কিছু বলেছে। সেটা না করতে পারলে মান ইজ্জত থাকবে না। তুহিন আস্তে আস্তে রুহির দিকে এগিয়ে যায়। একদম ওর পিঠের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বেচারা কি যে করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎই রুহি খুব লজ্জা নিয়ে বলে,

~ প্লিজ তাড়াতাড়ি হুকটা লাগিয়ে দিন৷ আমার প্রচন্ড লজ্জা করছে।
- আচ্ছা আচ্ছা।

তুহিন চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ফিরে রুহির পিঠে হাত রেখে হুকটা খোঁজার চেষ্টা করে। যার ফলে রুহির নরম পিঠে ওর হাতের স্পর্শে ভরে যায়৷ রুহি যেন আর পারছেই না। তুহিন শেষমেশ হুকটা পেলে দ্রুত লাগিয়ে দিয়ে বাইরে চলে আসে। হাপিয়ে গিয়েছে ও। এরকম স্পর্শকাতর কাজ এ আগে কখনো করে নি৷ বাইরে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় দ্রুত।

এদিকে রুহি কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ হারিয়ে গিয়েছে। তুহিনের স্পর্শগুলো এখনো ওর অনুভব হচ্ছে। ও মিটমিট করে হাসছে শুধু। এরপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে চলে আসে। রুহিকে দেখে তুহিন চোখ ফেরাতে পারে না। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ রুহিকে। রুহি হালকা একটু মেকাপ করেছে। কারণ ও এমনিই অনেক সুন্দর। তুহিনকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর মামা বলে উঠে,

- কিরে ভাগনে হা করে তাকিয়েই থাকবি নাকি বের হবি?

মামার কথায় সবাই হাসে। রুহি আর তুহিন লজ্জা পায়৷ তারপর ওরা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। তুহিনের অফিসের গাড়ি আছে। এটা ওকে অফিস থেকে সবসময় ব্যবহারের জন্য দিয়েছে। সে গাড়িতে করেই তুহিন আর রুহি যাচ্ছে৷ গাড়িতে দুজন চুপচাপ বসে আছে৷ আসলে একটু আগে হুক লাগানোর সেই ব্যাপারটার জন্য ওরা নিজেদের মাঝে খুব লজ্জা পাচ্ছে৷ রুহি মনে মনে বলে,

~ উফফ! নিজে নিজে কত্তো চেষ্টা করলাম কিন্তু লাগলোই না। উনি না জানি কি ভাবছেন আমাকে। তারজন্য এখন চুপচাপ বসে আছেন।

তুহিন ভাবছে,

- মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে কেন। আমি না হয় একটু বিব্রতবোধ করছি। ওতো একটু কথা বলবে। বোকা মেয়ে একটা। যাই হোক ওর হাতটা ধরে রাখি।

তুহিন আর কিছু না ভেবে রুহির হাতটা ধরে। আচমকা রুহির হাত তুহিন ধরায় রুহি ভয় পেয়ে যায়। পরে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়। এবং হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। তুহিন শক্ত করে হাতটা ধরে আছে। যেন ওর কাছ থেকে
কেউ রুহিকে না নিতে পারে। রুহির খুব ভালো লাগছে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই অনেক মধুর আর ভালবাসাপূর্ণ হয়। এতে করে তাদের বন্ডিংটা আরো ভালো হয়।

গাড়ির চাকা ঘুরতে ঘুরতে একসময় ওরা রুহিদের বাসায় পৌঁছে যায়। রুহিদের আত্নীয় স্বজন ওদের রিসিভ করে বাসায় নিয়ে যায়। আর এরপর শুরু হয় জামাই আদর। তুহিনের জন্য অনেক কিছু রান্না করেছে ওর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। এছাড়া রুহিকে পেয়ে তারা ত অনেক খুশী। দুপুরে জমপেশ খাওয়া দাওয়ার পর বিকেলে ওরা বিদায় নিয়ে বাসার দিকে চলে আসে। বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। রুহির মন খুব খুশী এখন। তুহিনের প্রতি ওর টান এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে।

তুহিন বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ওদের রুমে বসে আছে। রুহি আগেই ফ্রেশ হয়ে তুহিনের জন্য এককাপ চা নিয়ে আসে। এনে তুহিনের হাতে দেয়৷ তুহিন রুহির কাছ থেকে চা নিয়ে বলে,

- তোমার চা কোথায়?
~ না মানে সবাইকে দিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে।
- এখানে বসো। তুমি কিছু মনে না করলে এই চা'টা আমরা ভাগাভাগি করে খাই। ঠিক আছে?

রুহি বেশ অবাক হয়। আর বলে,

~ না না সমস্যা নেই। আমার এখন চা খেতে ইচ্ছা করছে না। আপনি খান তাতেই হবে।
- মোটেও না। আমি যা বলেছি সেটাই।
~ আচ্ছা। (মনে মনে অনেক খুশী হয়ে)

তুহিন চায়ে ফু দিয়ে একটু ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। তারপর রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

- নেও একটা চুমুক দেও।

রুহি লজ্জা নিয়ে এক চুমুক চা খায়৷ ও তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি এক চুমুক খাওয়ার পর তুহিন একটা হাসি দিয়ে চায়ের কাপটা মজা করে ধরে ও এক চুমুক খায়। আর খেয়ে একটা মনমাতানো রিয়েকশন দেয়৷ রুহি মিটমিট করে হাসে আর লজ্জা পায় তার জামাইয়ের কান্ড দেখে৷ এভাবে ওদের চা খাওয়া শেষ হয়। রুহি দ্রুত চায়ের কাপ নিয়ে রুম ছাড়ে। মেয়েটা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে। তুহিন বসে বসে হাসে।

রাত ১০ টা প্রায়। হঠাৎই আকাশে মেঘের গর্জন। একটা বৃষ্টি বৃষ্টি ঘ্রাণ বাতাসের মাঝে। তুহিন শুয়ে শুয়ে ফোন চালাচ্ছে। মাত্র রাতের খাবার খেয়ে ও এসেছে। আর রুহি নিচে সব পরিস্কার করছে। আধা ঘণ্টা পর রুহিও চলে আসে। রুমে এসে সোজা ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে বসে। আর সাথে সাথেই অনেক বড়ো একটা বাজ পড়ে। রুহি ভয়ে কানে হাত দিয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে থাকে। বাজের সাথে সাথেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করে অনেক জোরে। যাকে বলে মুশলধারার বৃষ্টি। সাথে বিদ্যুৎ ত চমকাচ্ছেই। রুহি খুব ভয় পাচ্ছে৷ তাই আর আয়নার সামনে না বসে তুহিনের কাছে চলে আসে। তুহিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ফোন পাশে রেখে দেয়। আর বলে,

- আসো ঘুমিয়ে পড়ি। অনেক রাত হয়েছে।
~ আচ্ছা। (খুশী হয়ে)

ওরা রুমের লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু যেভাবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো তাতে প্রতি মুহূর্তেই ওদের রুম পুরো আলোকিত হয়ে যাচ্ছিলো। রুহি খুব ভয় পাচ্ছে। তুহিন সবটা বুঝতে পারছে। তাই ও আস্তে আস্তে রুহির কাছে যায়। রুহিকে ওর দিকে ঘুরিয়ে ওর চোখের দিকে তাকায়। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহির কেমন জানি লাগছে৷ আশেপাশের সব ভুলে গিয়েছে ও। ওর সামনে শুধু এখন তুহিন। তুহিন আস্তে করে বলে,

- বেশী ভয় করছে?

রুহি অসহায় ভাবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তুহিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

- আমার কাছে এসে ঘুমাও। তাহলে আর ভয় করবে না৷

রুহি যেন এটাই চাচ্ছিলো। কিন্তু ও লজ্জা পাচ্ছে৷ কেমন জানি লাগছে ওর৷ কিন্তু আবার জোরে বাজ পড়লে রুহি সাথে সাথে তুহিনের বুকের সাথে মিশে যায়৷ আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তুহিন হাসি দিয়ে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রুহি শান্ত হয়। রুহির কাছ থেকে আসা মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আর বৃষ্টি মুখর ওয়েদার তুহিনকে রুহির ঘোরে ফেলে দেয়৷ ও আস্তে করে রুহির মুখখানা বের করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রুহি লজ্জায় তুহিনের দিকে তাকাতে পারছে না৷ তাও ও সাহস করে তাকায়। তুহিনকে বেশ অন্যরকম লাগছে৷ কেমন নেশাওকাতর৷ তুহিন রুহির কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দেয়৷ রুহির পুরো শরীরে এক অন্যরকম শিহরণ অনুভব হয়৷ ও চোখ বন্ধ করে থাকে। তুহিন রুহিকে ওর করে নিতে চায়। রুহি তা বুঝতে পারে। তাই রুহি কোন বাঁধা দেয় না৷ ওরা দুজন দুজনের সাথে মিশে যায় আস্তে আস্তে। হারিয়ে যায় অজানা এক অনুভূতিতে। আর এদিকে পুরো শহরের শুকনো পাতাগুলো ভিজছে অঝোর বৃষ্টিতে। কাল সকালে এগুলোই হবে ওদের ভেজা পাতার গল্প।

- সমাপ্ত।
 
অসাধারণ একটি গল্প।পড়ে সত্যিই মনটা ভরে গেল।এমন লক্ষ্মী একটা মেয়েকে বউ হিসেবে সবাই চায়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top