What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ভাতের মাড়ের ( ফেন) পুষ্টিগুণ। (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
334
Messages
6,309
Credits
48,994
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ পরিবারই কৃষিজীবী। গ্রামীণ পরিবারের সদস্য সংখ্যার সিংহভাগই সুষম খাদ্যের অভাবে অপুষ্টির শিকার। যারা দু’বেলা পেট পুরে খেতে পায় না তারাই যে শুধু পুষ্টিহীনতায় ভোগে তা নয়। যারা সচ্ছল তারাও পুষ্টিজ্ঞানের অভাবে অপুষ্টির শিকার হয়ে থাকে। এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ পুষ্টিহীনতার কারণে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে আবার কেউ কেউ তিলে তিলে মৃত্যুর দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অজ্ঞতা অথবা অসতর্কতার কারণে রান্নার সময় খাদ্যের মূল্যবান পুষ্টি উপাদানের অপচয় হয়ে থাকে। অথচ একটু যতœবান হলে আমরা খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদানের ফায়দা পুরোপুরি হাসিল করতে পারি। এখানে ভাতের মাড়ের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা হলো।
ভাতের মাড়কে ফেন বলা হয়। ভাত রান্নার পর মাড় নিংড়িয়ে ফেলে দেয়া গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্য। কোন কোন এলাকায় মাড় গরীবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত। হতদরিদ্র লোকদের মধ্যে মাড় খাওয়ার অভ্যেস লক্ষ্য করা যায়। আকাল বা দুর্ভিক্ষের সময় মধ্যবিত্ত পরিবারেও এর কদর বেড়ে যায়। জঠর জ্বালা মেটাতে কিংবা পেট ভরার জন্য মাড় খাওয়ার প্রচলন আছে। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা মাড় দেখলেই নাক ছিটকান। অথচ মাড় পুষ্টিগুণে গরীব নয় বরং ধনী। ভাতের মাড় হলো চালের নির্যাস। চালের পুষ্টিমান ধান ছাঁটাইর সময় নষ্ট হয়, সর্বশেষ অপচয় হয় ভাতের মাড় নিংড়ানোর সময়। এভাবে ভাত পুষ্টিশূন্য না হলেও এতে পুষ্টি থাকে কম। চিন্তার বিষয় আসল জিনিসটা ফেলে দিয়ে ভাত নামক ছোবাটা আমরা খেয়ে থাকি। এর চেয়ে বোকামি আর কী হতে পারে।
মাড়ের পুষ্টিগুণ : ভাতের মাড়ে থাকে হরেক রকম পুষ্টিমান। গবেষণায় দেখা গেছে, ভাতের মাড়ে উল্লেখযোগ্য হারে ভিটামিন- বি এবং ভিটামিন-ই রয়েছে। এছাড়া এতে রয়েছে আমিষ, শর্করা, লৌহ, ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আমরা মাড় নিয়ে না ভাবলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনা বিজ্ঞানী মি. লিন ফেলে দেয়া ভাতের মাড় নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, ভাতের মাড়ে ক্যালসিয়াম, লৌহ, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, মেলেনিয়াম-এ ছয়টি উপাদান রয়েছে। তিনি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন মাড়ের মধ্যে লৌহ ১০ গুণ, ক্যালসিয়াম ৪ গুণ, ম্যাঙ্গানিজ ১২ গুণ, কপার ৬ গুণ ও মেলেনিয়াম ২ গুণ রয়েছে। এছাড়াও আছে টোকোট্রাইনোল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান। মাড়ের সাথে পুষ্টির অপচয় : আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়মে মাড় নিংড়িয়ে ফেলে দেয়ার কারণে পুষ্টির মারাত্মক অপচয় হয়।
আমরা যদি জানতাম কী পরিমাণ পুষ্টি মাড়ের সাথে চলে যায় তাহলে হয়তো কখনো এ অপচয় করতাম না। আসুন দেখে নেই মাড় নিংড়ানোর দরুণ কী পরিমাণ পুষ্টিহানি হয়ে থাকে : পুষ্টি উপাদান এবং মাড় নিংড়ানোজনিত পুষ্টিহানি (শতকরা) ক্যালরি ১৫%, আমিষ ১৫%, শর্করা ১০%, লৌহ ৫০%, ফসফরাস ৫০%, আয়োডিন ৪০%, রিবোফ্লোভিন ২৫%, নায়াসিন ২৩% এবং ক্যালসিয়াম ৫০%।
পুষ্টি রক্ষার উপায় : ১. আমরা বাঙালিরা আতপ চাল ও ডালের খিচুড়ি ও জাউ খাওয়ায় অভ্যস্ত। পুষ্টি বিবেচনায় এ ধরনের রান্নাই উত্তম। এভাবে প্রায় শতভাগ পুষ্টি রক্ষা পায়। ২. আমাদের দেশের সিলেট, চট্টগ্রাম ছাড়াও কিছু কিছু এলাকায় বটি ভাত খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এ ভাত রান্নায় চাল ও পানির অনুপাত এমন মাপে দেয়া হয় যে, চাল ফুটে ভাত হওয়ার সাথে সাথে পানি শুকিয়ে যায়। এ সহজ প্রযুক্তিতে রান্না করা হলে মাড় নিংড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। এতে পুষ্টিহানির আশংকা নেই বললেই চলে। আমরা বটি ভাত খাওয়ার অভ্যেস করে ভাতের পুষ্টি সংরক্ষণ করতে পারি। ৩. নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে ভাতের মাড়ের সাথে জলপাই বা তেঁতুলের টক, গুঁড়া চিংড়ি সমেত ডালের মতো রান্না করে খাওয়ার প্রচলন আছে। এতেও পুষ্টি রক্ষা পায়। ৪. ভাতের মাড়ের সাথে লবণ ও ঝাল সমেত স্যুপ রান্না করে খাওয়া যায়। সাধারণ স্যুপ বা থাই স্যুপের মতো চিংড়ি বা মুরগির গোশত সমেত রান্না করে একে মজাদার করা যায়।
মাড়ের ওষুধিগুণ : ভাতের মাড়ের মধ্যে রয়েছে নানা বিস্ময়কর ওষুধিগুন। * যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাদের জন্য ভাতের মাড় হিতকর। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। * ভাতের মাড়ে যথেষ্ট গ্লুকোজ থাকে। ফলে রক্তে পর্যাপ্ত শর্করা সরবরাহ করে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উপশমে ভাতের মাড় উপকারী। * মাড় কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস করে এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। * মাড় সহজপাচ্য। তাই গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য হিতকর। মাড় আলসারের ঝুঁকিও কমায়। * মানবদেহের মেলানিন ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে মাড় বাধা দেয়। তাছাড়া সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি যাতে দেহে প্রবেশ করতে না পারে তাতেও মাড় বাদসাথে । * ভাতের মাড়ে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে এন্ট্রি-অক্সিডেন্ট ও স্টেরয়েডি। খেলোয়াড়রা মাংসপেশীকে অধিক শক্তিশালী ও কর্মক্ষম রাখতে বাজার থেকে স্টেরয়েড বড়ি কিনে খান। এ বড়ি খেলে কারো কারো পার্শ্বপ্রক্রিয়া দেখা দিতে পারে এবং হিতেবিপরীত হতে পারে। অথচ ভাতের মাড়ে প্রাকৃতিক স্টেরয়েড থাকায় মাংসপেশীকে অধিক শক্তিশালী ও কর্মক্ষম রাখে অথচ এতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই।

রূপচর্চায় মাড় : জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সৌন্দর্য পিপাসু মেয়েরা ভাতের মাড় ব্যবহার করে থাকে। মুখে ভাতের মাড় মাখলে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয় এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশে বিউটি পার্লারগুলোতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান হিসেবে মাড়ের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ভাতের মাড়ে রয়েছে বহুরূপী গুণ, যা মোটেই ফেলনা নয়। পরিশেষে বলব-আমাদের দেশে অপুষ্টি হলো জাতীয় সমস্যা। আর্থিক অনটন, খাদ্য সংকট, পুষ্টি জ্ঞানের অভাব ও কুসংস্কার হলো এর মূল কারণ। মা ও শিশুরা হলো অপুষ্টির সহজ ও নির্মম শিকার । তাই সুস্থ সবল জীবন চান-সুষম খাবার রোজই খান।

(সংগৃহীত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top