What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকান্ড (1 Viewer)

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,428
Messages
16,363
Credits
1,541,694
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
CYo4WSb.jpg


ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী, স্বাধীন ভারতের ৩য় প্রধানমন্ত্রী। সেই সাথে ভারতের প্রথম ও একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী। পদবী গান্ধী হওয়ায় অনেকেই মহাত্মা গান্ধীর সাথে ইন্দিরা গান্ধীর যোগ খোঁজেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন নেহেরু পরিবারের সন্তান। পিতামহ মতিলাল নেহেরু ছিলেন একজন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা। পিতা জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। পার্সি বংশোদ্ভূত প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক ফিরোজ জাহাঙ্গীর গান্ধীকে বিয়ে করে তিনি ইন্দিরা নেহেরু থেকে ইন্দিরা গান্ধীতে পরিণত হোন। ইন্দিরার দুই ছেলে সঞ্জয় গান্ধী ও রাজীব গান্ধীও রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন। এর মধ্যে রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদেও জায়গা করে নিয়েছিলেন।

ইন্দিরা গান্ধীর শিক্ষা জীবন কেটেছে জেনেভার ইকোলে ইন্টারন্যাশনাল, শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী এবং অক্সফোর্ডের সামারভিল কলেজে। বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ই তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রিতে সম্মানিত করেছে। তাঁর উজ্জ্বল শিক্ষা জীবনের সুবাদে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে বিশেষভাবে সম্মান জানিয়েছে।

w5o83a4.jpg


বাবা জওহরলাল নেহ্রুর সাথে ইন্দিরা গান্ধী

ইন্দিরার বয়স যখন মাত্র চার তখনই তার বাবা এবং তার দাদা কারাবন্দি হন৷ কারণ তারা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী৷ বলা প্রয়োজন, মহাত্মা গান্ধী ইন্দিরার রাজনৈতিক জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিলেন৷ ১৯৩৬ সালে ইন্দিরার মা কমলা নেহেরু পরলোক গমন করেন৷ ইন্দিরা হয়ে পড়েন ভীষণভাবে একা৷ যার কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি বাপ-দাদার রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়েন৷ তিনি ব্রিটিশদের ভারত দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন৷

১৯৪১ সালে অক্সফোর্ড থেকে ফিরে এসে ইন্দিরা গান্ধী পিতার সাথে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময়ই ইন্দিরার সম্পর্ক হয় ফিরোজ জাহাঙ্গীর ঘান্ডি ওরফে ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে৷ পার্সিক ধর্মাবলম্বী ফিরোজকে পিতা জওহরলাল নেহেরু মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। পরবর্তীতে নিজের পদবী “ঘান্ডি” (GHANDY) বদলে “গান্ধী” (GANDHI) করে নিয়েছিলেন ফিরোজ। ১৯৪২ সালে ইন্দিরা বিয়ে করেন ফিরোজকে৷

১৯৫৫ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে ইন্দিরা দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির জাতীয় সংহতি পরিষদের সভানেত্রীর পদও তিনি অলঙ্কৃত করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সংসদীয় পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হন | ১৯৫৬ সালে তিনি নিযুক্ত হন সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হন ১৯৫৯ সালে। পরবর্তী এক বছর তিনি ঐ পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন।

সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন ইন্দিরা গান্ধী৷ তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত টানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিহত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

1dyKnk8.jpg


২০১১ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশ সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’য় ভূষিত করে।

কর্মজীবনে বহু কৃতিত্ব ও সাফল্যের নজির রেখে গেছেন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭২ সালে তাঁকে ভারতরত্ন ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিতে তিনি লাভ করেন মেক্সিকান অ্যাকাডেমি পুরস্কার (১৯৭২)। ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ওপিনিয়ন-এর এক জনমত সমীক্ষার নিরিখে ১৯৬৭ এবং ১৯৬৮ সালে পরপর দু’বার ‘বিশ্বের সেরা মহিলা’ খেতাবে সম্মানিত হন। একইভাবে ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্যালাপ পোল সার্ভের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে সম্মান জানানো হয়। প্রাণী ও জীবজন্তুর প্রতি তাঁর বিশেষ যত্নের স্বীকৃতিতে আর্জেন্টাইন সোসাইটি তাঁকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন (১৯৭১)। ২০১১ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশ সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’য় ভূষিত করে।

অপারেশন ব্লু স্টার এবং একটি মর্মান্তিক হত্যা

জারনাইল সিং ভিন্দ্রাওয়ালের নেতৃত্বে একটা সময় পাঞ্জাবে উগ্রবাদী শিখদের উৎপাত বাড়তে থাকে। তারা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড “খালিস্তান” এর দাবিতে সহিংস আন্দোলন শুরু করে পাঞ্জাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আগে ইন্দিরা গান্ধী পাঞ্জাবের অমৃতসরে শিখদের পবিত্র স্বর্ণ মন্দিরে সামরিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। ১৯৮৪ সালের ১ জুন থেকে ৮ জুন পরিচালিত সেই অভিযান অপারেশন ব্লু স্টার নামে পরিচিত। ভারতের সরকারি হিসেবে এতে জারনাইল সিং ভিন্দ্রাওয়াল সহ ৮৯৩ জন শিখ বিদ্রোহী নিহত হয়। এই ঘটনাটি শিখদের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন আরও উসকে দেয়। তারা ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার ছক কষতে থাকে গোপনে।

Rbw9jQ9.jpg


অপারেশন ব্লু স্টারের একটি চিত্র; Photo: indiatoday

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শিখদের প্রতিশোধের উত্তাপ টের পেয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেছিল যেন তার নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্য থেকে শিখদের সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু ইন্দিরা তাতে সায় দেন নি।ইন্দিরা গান্ধীর জীবনীকার ইন্দর মালহোত্রা বলেন, গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে মিসেস গান্ধীর ওপরে এরকম একটা হামলা হতে পারে। তারা সুপারিশ পাঠিয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রীর আবাস থেকে সব শিখ নিরাপত্তা-কর্মীদের যেন সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সেই ফাইল যখন ইন্দিরা গান্ধীর টেবিলে পৌঁছায়, তখন ভীষণ রেগে গিয়ে তিনি নোট লিখেছিলেন, অর্থাৎ, “আমরা না ধর্মনিরপেক্ষ দেশ?”

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর অন্যান্য কর্ম ব্যস্ত দিনের মতোই ব্যস্ততা দিয়ে দিনটি শুরু হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর। সেদিন তার সাক্ষাৎ করার কথা ছিল ব্রিটিশ অভিনেতা উস্তিনভের সঙ্গে। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর ওপরে একটা তথ্যচিত্র বানাচ্ছিলেন সে সময়। আর সন্ধেবেলায় ব্রিটেনের রাজকুমারী অ্যানের সম্মানে একটা ডিনার দেওয়ার কথা ছিল।

উস্তিনভের সাথে সাক্ষাৎ করার প্রস্তুতি নিয়ে ইন্দিরা যখন তার ১ নং সফদর জং রোডের বাড়ি থেকে ভেতরের রাস্তা দিয়ে ১ নং আকবর রোডে তার অফিসে যাচ্ছিলেন এমন সময় তার দুই নিরাপত্তারক্ষী সৎবন্ত সিং ও বিয়ন্ত সিং ইন্দিরাকে লক্ষ্য করে মোট ৩৩ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এর মধ্যে ত্রিশটি গুলি ইন্দিরার শরীরকে বিদ্ধ করে। মোট ২৩ টি গুলি তার শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়।

ঘটনার আকস্মিকতায় অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মী তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই করতে পারে নি। বিয়ন্ত সিং আর সৎবন্ত সিং নিজে থেকেই নিজেদের অস্ত্র মাটিতে ফেলে দিয়এছিল। বিয়ন্ত বলেছিল, “আমাদের যা করার ছিল, সেটা করেছি। এবার তোমাদের যা করার করো।”

Hs9qjNI.jpg


অভিযানের পর বিধ্বস্ত স্বর্ণ মন্দির দেখতে মানুষের ভিড়

এদিকে মাটিতে পড়ে থাকা ইন্দিরাকে ধরাধরি করে সাদা অ্যাম্বাসেডর গাড়ির পিছনের আসনে রাখেন আর কে ধাওয়ান আর নিরাপত্তা কর্মী দিনেশ ভাট। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস হসপিটালে। গাড়ি থেকে তাকে নামানোর সময়ে ওই অবস্থা দেখে সেখানে হাজির ডাক্তাররা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।

একজন চিকিৎসক মুখের ভেতর দিয়ে একটা নল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যাতে ফুসফুস পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে। মস্তিষ্কটা চালু রাখা সব থেকে প্রয়োজন ছিল তখন। ৮০ বোতল রক্ত দেওয়া হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীকে। শরীরে যে পরিমাণ রক্ত থাকে, এটা ছিল তার প্রায় ৫ গুণ।

ডাক্তার গুলেরিয়া বলেছিলেন,

“আমি তো দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম যে উনি আর নেই। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইসিজি করতে হয়েছিল। তারপরে আমি ওখানে হাজির স্বাস্থ্যমন্ত্রী শঙ্করানন্দকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এখন কী করণীয়? ঘোষণা করে দেব আমরা যে উনি মৃত? তিনি না বলেছিলেন। তখন আমরা মিসেস গান্ধীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই।”

তিনি যে আর নেই, সেটা সকলেই বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু তবুও ‘এইমস’এর আটতলার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। দেহরক্ষীদের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হওয়ার প্রায় চার ঘণ্টা পর, দুপুর দুটো ২৩ মিনিটে ইন্দিরা গান্ধীকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি প্রচারমাধ্যমে সেই ঘোষণা করা হয়েছিল সন্ধ্যা ছ’টার সময়ে।

DyqRbAD.jpg


ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরের দিন পত্রিকার শিরোনাম

ইন্দিরা গান্ধীর আগ্রহ ছিল বিভিন্ন বিষয়ে। জীবনকে তিনি দেখতেন একটি সুসংহত চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে যেখানে সমস্ত দিক এবং বিষয় পৃথক পৃথকভাবে না থেকে সামগ্রিক হয়ে উঠত। জীবনকে তিনি কখনই বিচ্ছিন্ন কোন কিছু হিসেবে কল্পনা করতেন না, বরং তিনি জীবনকে দেখতেন বহুবিধ বিষয়ের এক সমষ্টি হিসেবে। এধরণের চিন্তাধারাই হয়তো পরবর্তীতে তাঁর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরিণতিতে এক মর্মান্তিক মৃত্যুর স্বীকার হতে হয় এই মহীয়সী নেত্রীকে।
 
আসলে তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটই ইন্ধিরার বিপক্ষে ছিল
 

Users who are viewing this thread

Back
Top