টেম্পল অব সেন্ট সাভা পরিদর্শন শেষে সরাসরি চলে গেলাম কালেমেগদান পার্কে। টেম্পল অব সেন্ট সাভা থেকে সামান্য হাঁটলে নভোপাজারস্কা নামক বাস স্টপেজের দেখা পাবেন, সেখান থেকে ২৪ নম্বর বাসে চড়ে কালেমেগদান পার্কে পৌঁছানো যায়। এ পার্কটি বেলগ্রেডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র, বেশির ভাগ পর্যটক, যারা বেলগ্রেডে বেড়াতে আসেন, তাঁদের সবার প্রথম লক্ষ্য থাকে কালেমেগদান পার্ক। এ পার্কটির মূল আকর্ষণ স্মৃতিস্তম্ভ। সাভা এবং দানিয়ুব এ দুই নদীর সংযোগস্থলে ১২৫ মিটার উচ্চতায় এ পার্কটির অবস্থান। কালেমেগদান পার্কের ভেতর একটি দুর্গ রয়েছে। মূলত এ দুর্গটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। যেহেতু ভেতরে প্রবেশ করতে কোনো ধরনের টিকিটের প্রয়োজন হয় না তাই মোটামুটিভাবে এখানে সব সময় দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে।
ধারণা করা হয় বেলগ্রেড শহরের গোড়াপত্তন ঘটেছিল এ দুর্গের মধ্য দিয়ে। এ কারণে এ দুর্গটিকে বেলগ্রেড ফোরট্রেস নামেও ডাকা হয়। পুরো কালেমেগদান পার্কের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে আপনি জনবসতির বিভিন্ন নিদর্শন খুঁজে পাবেন। বিভিন্ন সময়ে বেলগ্রেড শাসন করেছে বিভিন্ন শাসকেরা। তাই এখানে আসলে আপনি রোমানদের থেকে শুরু করে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য কিংবা অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পাবেন।
সমগ্র কালেমেগদান পার্কটি লোয়ার কালেমেগদান ও আপার কালেমেগদান এ দুই অঞ্চলে বিভক্ত। আপার অংশে ১৪ মিটার উচ্চতার একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ব্রোঞ্জ নির্মিত এ স্মৃতিস্তম্ভটি ভিক্টর মেমোরিয়াল নামে পরিচিত। সার্বিয়ার ভাষায় একে ‘পোবেডনিক’ নামেও ডাকা হয়। মূলত প্রথম বলকান যুদ্ধে অটোমানদের বিরুদ্ধে সার্বিয়ার বিজয়কে স্মরণ করতে এ স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছে।
কালেমেগাদান পার্ক, বেলগ্রেড, সার্বিয়া, ছবি: উইকিপিডিয়া
বেলগ্রেড ফোরট্রেসের টাওয়ারগুলোর মধ্যে বিখ্যাত টাওয়ারটির নাম হলো নেবোইয়াসা টাওয়ার। পনেরো শতকের শুরুর দিকে স্টিফান লাজারেভিচের রাজত্বকালে এ টাওয়ারটি নির্মিত হয়েছিল। সার্বিয়ার ভাষায় ‘নেবোইয়াসা’ শব্দের অর্থ নির্ভীক। বেলগ্রেড ফোরট্রেসের এটি একমাত্র মধ্যযুগীয় নিদর্শন।
শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সে মানুষের কাছে বেলগ্রেড ফোরট্রেস অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রায়ই সেখানে একত্রিত হন এবং দুর্গের গায়ে তাদের ভালোবাসার চিহ্ন খোদাই করেন।
কালেমেগদান পার্কের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে দা লার্জ ওয়েল, মিলিটারি মিউজিয়াম এবং রুজিকা ও দা চ্যাপেল অব স্ভেটা পেটকা নামক দুটি অর্থোডক্স চার্চ। দা লার্জ ওয়েল এবং মিলিটারি মিউজিয়াম অব বেলগ্রেড সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়। এ দুই স্থান পরিদর্শন করতে হলে আপনাকে আগে থেকে টিকিট কিনতে হবে। দা লার্জ ওয়েল হচ্ছে একটি কূপ- সঠিকভাবে এখনো জানা যায়নি কবে এ কূপটি নির্মাণ করা হয়। তবে অনেকে বলে থাকেন, রোমান শাসনামলে এ কূপের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছিল। এ জন্য অনেকে একে রোমান ওয়েল নামেও ডেকে থাকেন। পরবর্তীতে অবশ্য আঠারো শতকে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের শাসনামলে এ কূপটিকে সংস্কার করা হয়েছিল।
নেজ মিহাইলোভা স্ট্রিট, শপিং করতে যারা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা
কালেমেগদান পার্ক থেকে উত্তর-পশ্চিম বরাবর কয়েক মিটার হাঁটলে আপনি বেলগ্রেডের সিটি সেন্টারের দেখা পাবেন। বেলগ্রেডের সিটি সেন্টারটি আমার কাছে আশ্চর্য রকমের সুন্দর মনে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এর সঙ্গে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা কিংবা জার্মানির অন্যতম প্রধান নগরী মিউনিখ অথবা জুরিখের সিটি সেন্টারের পার্থক্য খুঁজে বের করা কঠিন। নিশের মতো বেলগ্রেডের সিটি সেন্টারও অত্যন্ত গোছালো এবং পরিপাটি। চাকচিক্যময় সুউচ্চ ইমারত থেকে শুরু করে ম্যাকডোনালডস, কেএফসি কিংবা স্টারবাকসের মতো বড় বড় চেইনশপ সবই আছে সেখানে।
যারা শপিং করতে ভালোবাসেন, তাঁদের সবারই অন্তত এক বারের জন্য হলেও নেজ মিহাইলোভা স্ট্রিট ঘুরে দেখা উচিত। জুরিখের ব্যানহোফস্ট্রাসে, কোপেনহেগেনের স্ট্রোগেট কিংবা মিউনিখের কাউফিঙ্গারস্ট্রাসের মতো জগৎ বিখ্যাত শপিং স্ট্রিটের সঙ্গে বেলগ্রেডের নেজ মিহাইলোভা অনায়াসে পাল্লা দিতে পারবে। বিশ্বের নামীদামি সব ব্র্যান্ডের দোকান, সেটা জামা-কাপড়ের হোক কিংবা ঘড়ি অথবা জুয়েলারির হোক, নির্দ্বিধায় আপনি সেখানে খুঁজে পাবেন। বেলগ্রেডের বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনাও আপনি সেখানে খুঁজে পাবেন।
ততক্ষণে প্রায় দুপুর আড়াইটা বেজে গিয়েছে। সারা দিন ঘোরাঘুরি শেষে শরীরে ক্লান্তিও নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে ক্ষুধাও লেগেছে প্রচুর। নেজ মিহাইলোভা স্ট্রিট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে চোখে পড়ল এক ইসরায়েলি রেস্টুরেন্ট। ইসরায়েলি রেস্টুরেন্টের অভিজ্ঞতা ছিল আমার কাছে সম্পূর্ণভাবে নতুন। তাই সেখানে দুপুরে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইসরায়েলের সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে আমার আগে থেকে তেমন একটা ধারণা ছিল না। সে জন্য রেস্টুরেন্টের ওয়েটারকে বললাম ভালো কোনো একটা মেনু প্রস্তাব করার জন্য। ওয়েটারের পরামর্শ অনুযায়ী ইসরায়েলি কাবাবের অর্ডার দিই।
দুপুরের খাবারে ইসরায়েলি কাবাব
আমাদের দেশে কাবাব হচ্ছে ঝাল এবং মসলাদার একটি খাবার। সে তুলনায় আমার কাছে ইসরায়েলি কাবাবকে অত্যন্ত সাদামাটা একটি খাবার মনে হয়েছে, ইসরায়েলের সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা তুরস্কের সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসের মিল আমি খুঁজে পেয়েছি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কিংবা তুরস্কে কাবাব তৈরি করা হয় মাংসের কিমা থেকে, আমাদের দেশের মতো সরাসরি আস্ত মাংসের টুকরা সেখানকার কাবাবে তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না।
কাবাবের সঙ্গে হমুস নামক এক ধরনের সস পরিবেশন করা হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এ জাতীয় সস খুবই জনপ্রিয়। সেদ্ধ করা কাবুলি চানার সঙ্গে তিল থেকে তৈরি তাহিনি, লেবুর রস এবং রসুনের কোয়া মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তৈরি হয় হমুস। কাবাবের সঙ্গে সালাদ ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইও পরিবেশন করা হয়েছিল। ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোর মতো ইসরায়েলের সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও অলিভ ওয়েলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। ইহুদিরা পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলে। তাঁদের ভাষায় সঠিক পদ্ধতিতে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী জবাই করা পশুর মাংসকে ‘কসার’ বলে। দুপুরের খাবারের জন্য আমার প্রায় ৫০০ সার্বিয়ান দিনারের মতো খরচ পড়েছিল।
দুপুরের খাবারের শেষে বেরিয়ে পড়লাম নিকোলা টেসলা মিউজিয়ামের উদ্দেশ্যে। গত শতকের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে নিকোলা টেসলা একজন। অলটারনেটিং কারেন্ট থেকে শুরু করে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবিষ্কার হয়েছে তাঁর হাতে। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়া প্রতিবেশী এ দুই রাষ্ট্রের মাঝে বৈরিতার আরও একটি বিষয় হচ্ছে নিকোলা টেসলা।
অলটারনেটিং কারেন্টের উদ্ভাবক নিকোলা টেসলার স্মরণে নির্মিত টেসলা মিউজিয়ামের সামনে লেখক, ছবি: সংগৃহীত
নিকোলা টেসলার জন্ম ১৮৬৫ সালের ১০ জুলাই স্মিলিয়ান নামক স্থানে। সে সময় স্মিলিয়ান ছিল অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে। তখন সার্বিয়া কিংবা ক্রোয়েশিয়া নামে পৃথক কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না। বর্তমানে স্মিলিয়ান ক্রোয়েশিয়ার অন্তর্গত ছোট্ট একটি গ্রাম। এ কারণে ক্রোয়েশিয়ানদের দাবি অনুযায়ী নিকোলা টেসলা ছিলেন একজন ক্রোয়েশিয়ান। অন্যদিকে নিকোলা টেসলার বাবা এবং মা উভয়ই ছিলেন অর্থোডক্স খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী। সার্বিয়া, মন্টেনেগ্রো, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা এবং ক্রোয়েশিয়া এ চার দেশের মানুষের ভাষা বলতে গেলে প্রায় কাছাকাছি ধরনের, পার্থক্য কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসে। ক্রোয়েশিয়ার অধিবাসীরা ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী। সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর অধিবাসীরা অর্থোডক্স চার্চের অনুসরণ করে। এ কারণে সার্বিয়ানরা মনে করে, নিকোলা টেসলা ছিলেন একজন সার্বিয়ান।
বেলগ্রেডে অবস্থিত সার্বিয়ার বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয়েছে নিকোলা টেসলা এয়ারপোর্ট। তাঁর স্মরণে বেলগ্রেডে একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যেহেতু আমি পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, তাই এ জাদুঘরটির ঘুরে দেখার জন্য আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। কিন্তু সপ্তাহে প্রতি সোমবার এ জাদুঘরটির বন্ধ রাখা হয়। তাই ভেতরে প্রবেশের সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। এ কারণে আজও আমার মাঝে অনুতাপ কাজ করে।
যেহেতু সার্বিয়ার একটা বড় অংশ সুদীর্ঘকাল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল, তাই সার্বিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অটোমান শাসনকালে তৈরি করা অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। সার্বিয়ার বর্তমান জনসংখ্যার শতকরা তিন ভাগ ইসলাম ধর্মের অনুসারী যারা নিজেদের এথনিক সার্ব হিসেবে দাবি করে। সার্বিয়ার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অটোমান শাসনামলে নির্মিত অন্যান্য স্থাপনার মতো অনেক মসজিদই ধ্বংস করে ফেলা হয়। বেশ কিছু মসজিদ আছে যেগুলোকে পরবর্তীতে অর্থোডক্স চার্চে রূপান্তর করা হয়েছে।
১৫৭৫ সালে নির্মিত বায়রাকলি চামি, বর্তমানে এটি বেলগ্রেডের একমাত্র অফিশিয়াল মসজিদ
এ ছাড়াও যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধের সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা ও কসোভোর সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরে উগ্র জাতীয়তাবাদী সার্বরা দেশটিতে টিকে থাকা অনেক মসজিদ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে অবশ্য এদের মধ্যে কয়েকটি মসজিদকে পুনরায় সংস্কার করা হয়েছে। সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে এক সময় আড়াই শ এর বেশি মসজিদের অস্তিত্ব ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন কেবল একটি মসজিদ টিকে আছে। বেলগ্রেডে এটি একমাত্র অফিশিয়াল মসজিদ এখন।
আনুমানিক ১৫৭৫ সালে নির্মিত এ মসজিদটিকে বায়রাকলি মসজিদ নামে ডাকা হয়। সব মিলিয়ে বেলগ্রেডে বসবাসরত মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০,০০০ এর ওপরে। এত বিশাল সংখ্যক মুসল্লির নামাজ আদায়ের জন্য একটি মসজিদ যথেষ্ট নয় বলে বেলগ্রেডে বসবাসরত মুসলিম জনগোষ্ঠীর সদস্যরা শহরটিতে নতুনভাবে আরও একটি মসজিদ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে অতি ডানপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক জোটগুলোর বিরোধিতায় তাঁদের সে দাবিটি আলোর মুখ দেখতে পারছে না।
বেলগ্রেড ডায়েরির সমাপ্তি টানলাম ওয়াটার ফ্রন্টের মধ্য দিয়ে। মিস্টার লাজারের ছেলে স্টিভান আমাকে ওয়াটার ফ্রন্ট এলাকাটি ঘোরার পরামর্শ দিয়েছিল। স্টিভানের ভাষায়, ওয়াটার ফ্রন্ট এলাকাটি না কি পুরো সার্বিয়ার মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। বাস্তবেও তাই। যখন সেখানে পা রাখলাম আমার কাছে কেন যেন দুবাই কিংবা নিউ ইয়র্কের মতো অনুভূতি কাজ করল।
ওয়াটার ফ্রন্ট
ওয়াটার ফ্রন্ট এলাকায় পা রাখতে না রাখতে চোখের সামনে ভেসে উঠল বিভিন্ন সুরম্য অট্টালিকা। কোনো কোনো অট্টালিকা ১৫ থেকে ২০ তলা উঁচু। বেলগ্রেডের বেশির ভাগ ফোর ও ফাইভ স্টার হোটেলের অবস্থান এ এলাকায়। সে সঙ্গে রয়েছে নামীদামি বিভিন্ন পানশালা। পার্টি উদ্যাপন করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ বেলগ্রেডে জড় হন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সার্বিয়ায় সিগারেট এবং অ্যালকোহলিক বেভারেজের দাম অনেক সস্তা। এ দুটি জিনিস ছাড়া সার্বিয়াতে ওয়াটার ফ্রন্ট এলাকাটি অনেকটা আমাদের দেশের হাতিরঝিল এলাকার মতো।
লোমিনা স্ট্রিটের বাসায় লাজারের সঙ্গে লেখক, ছবি: সংগৃহীত
কর্মব্যস্ত মানুষ সারা দিন পরিশ্রমের পর একটু প্রশান্তির আশায় গোধূলি লগ্নে সেখানে হাজির হন। সন্ধ্যার পর এ এলাকাটি অপরূপ হয়ে উঠে। সাভা নদীর কুলকুবিদায়লগ্নে লোমিনা স্ট্রিটের বাসায় মিঃ লাজারের সঙ্গে লেখকল ধ্বনি এবং সেই সঙ্গে নদীর তীরের মৃদুমন্দ বাতাস উপভোগ করতে বেলগ্রেডের স্থানীয় জনগণ এখানে হাজির হন। সাভা নদীর ওপর নির্মিত ওয়াটার ফ্রন্ট ব্রিজটি ইউরোপের সেরা স্থাপত্যকলার নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। এ ব্রিজটি বেলগ্রেডের দুই অংশকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। রাতের বেলা এ ব্রিজে বর্ণিল আলোকসজ্জার দেখা মেলে। সাভা নদীর আশপাশে থাকা সুউচ্চ ইমারাতগুলো থেকেও ভেসে আসে বিভিন্ন বর্ণের আলো। এক কথায় রাতের বেলা এ জায়গাটির সৌন্দর্য অনন্যসাধারণ।
পরের দিন সকাল সাতটার দিকে স্লোভেনিয়ায় ফেরার বাস। মিস্টার লাজারকে আগে থেকে জানিয়ে রেখেছিলাম যে আমি খুব ভোরে বেরিয়ে পড়ব। পর দিন দেখলাম তিনি নিজেই আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুললেন, এক সঙ্গে সকালের নাশতা করলাম। যাওয়ার আগে তাঁর ছেলে স্টিভানকে অনুরোধ করে মিস্টার লাজারের সঙ্গে স্মৃতি হিসেবে একটি ছবি নিলাম। স্টিভানও সকাল আটটায় বেরিয়ে যাবে তার স্কুলে। ওয়াটার ফ্রন্টের খুব কাছেই বেলগ্রেডের সেন্ট্রাল বাস স্টেশনের অবস্থান। লোমিনা স্ট্রিট থেকে মাত্র তেরো মিনিট হাঁটার পথ। এরপর প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার যাত্রা।
লেখক: রাকিব হাসান | শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা।