What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বেলা শেষে বিচ্ছেদ (1 Viewer)

NMAiTUQ.jpg


নন্দিতা-শিবপ্রসাদের বেলাশেষে (২০১৫) সিনেমাটির প্রথমাংশ দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই। বাংলার এপার-ওপারে উঠেছিল একই প্রশ্ন—বিয়ের এত বছর পর কেউ কোনো দিন বিচ্ছেদ চায় নাকি? সিনেমার মূল চরিত্র বিশ্বনাথ মজুমদার কিন্তু তা-ই চেয়েছিলেন। তত দিনে ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিতে ভরে উঠেছে বিশ্বনাথের ঘর, স্ত্রীর সঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছেন ৪৯টি বছর। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টে সিনেমার বিশ্বনাথ-আরতি সুখী, সমৃদ্ধ দম্পতি। তবু এই দাম্পত্যজীবনের ইতি টানতে চেয়েছিলেন বিশ্বনাথ। তাঁর এই চাওয়ার প্রক্রিয়া, স্ত্রীকে উপেক্ষা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে এ কথা মানতেই হবে যে ‘শান্তিপ্রিয়’ বাঙালিকে এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল অধুনা জনপ্রিয় এ বাংলা সিনেমাটি।

কারণ নানা রকম

দীর্ঘ দাম্পত্যজীবন কাটানোর পরও বিচ্ছেদের আশঙ্কা কতটুকু, তা মেপে বলা মুশকিল। জীবনের সঙ্গে জীবনের যে ভিন্নতা, তাতে এসব সমীক্ষা করা অবশ্যই কঠিন। কিন্তু আশপাশে তাকিয়ে দেখলে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, দীর্ঘদিন এক ছাদের নিচে কাটিয়ে দেওয়ার পরও বিচ্ছেদ হচ্ছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। নানা কারণে মানুষ বহু বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলছিলাম অনিমা হকের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত অনিমা সংসার করেছেন প্রায় ২১ বছর। স্বামী ও দুই কন্যা নিয়ে সাজানো সংসার ছিল তাঁর। কিন্তু স্বামীর চারিত্রিক দুর্বলতার প্রমাণ পাওয়ার পর আর আপস করে সংসার টিকিয়ে রাখতে চাননি। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন অনিমা, ‘ডিভোর্স আমাদের সমাজে এমনিতেই ট্যাবু, তার ওপর যদি এত বছর সংসার করার পর কেউ বিচ্ছেদ চান, তবে প্রশ্ন বেড়ে যায় দ্বিগুণ।’

আবার গৃহিণী নাজমা মোস্তফা (ছদ্মনাম) স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দীর্ঘ ১৮ বছর, তবু সন্তানদের কথা ভেবে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সম্প্রতি স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন তিনি। ‘অর্থনৈতিকভাবে পুরোপুরি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। তাই কখনো ডিভোর্স করার সাহস পাইনি। এখন ছেলেরা বড় হয়েছে, উপার্জন করছে, তারাই আমাকে এই অমানবিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসার সাহস দিয়েছে।’ বললেন নাজমা মোস্তফা।

বিশ্বাসে চিড় ধরা কিংবা নির্যাতন

2NxrMba.jpg


প্রতিকী এই ছবিতে মডেল হয়েছেন উল্কা হোসেন ও কাওসার

দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বাসের ভাঙন বা নির্যাতনের কারণে এমন বিচ্ছেদের চিত্র সারা বিশ্বেই দেখা যায়। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের ঘাটতি যেখানে বেশি, সেখানেই এ কারণগুলো বেশি প্রকট। তবে আরও কিছু কারণ উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়।

ওয়্যারড ফর লাভ নামের সম্পর্কবিষয়ক গবেষণাধর্মী বইটিতে মার্কিন লেখক ও সাইকোথেরাপিস্ট স্ট্যান ট্যাটকিন বলছেন, ‘ভীষণ দৃঢ় উপাদানে তৈরি একটি প্লেটকেও যদি আপনি বারবার ছুড়ে ফেলেন, একসময় তাতে ফাটল ধরবে। ফাটলগুলোতে আপনি বারবার আঘাত করতে থাকলে শেষ পর্যন্ত সেটি ভেঙেই যাবে। বিয়ে একটি শক্ত বন্ধন বটে, কিন্তু বিভিন্ন টানাপোড়েনের আঘাতে আঘাতে বহু বছর পরও একসময় সেটি ভেঙে যেতেই পারে।’

ট্যাটকিনের মতে, সব সময় কোনো একক কারণে বিচ্ছেদ না–ও ঘটতে পারে। বহু বছরের অপূর্ণতা বা সংঘাত মিলেও গড়ে উঠতে পারে দীর্ঘ দাম্পত্যজীবনের আনুষ্ঠানিক ইতি টানার কারণ। এ ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌন চাহিদা ও হরমোনেরও ব্যাপক তারতম্য ঘটে। ট্যাটকিনের গবেষণা বলছে, সেসবও অনেক যুগলের বিচ্ছেদের কারণ হয়।

জমে ওঠা যে কষ্ট, ক্ষোভ বা হতাশার কথা ট্যাটকিন বলছিলেন, তার পেছনের গল্পগুলো হয়তো পশ্চিমা সমাজে আমাদের চাইতে খানিকটা আলাদা। সেখানে বহু বছর সংসার করার পর অনেকেই উপলব্ধি করেন, বন্ধনের দৃঢ়তা আর নেই। ফলে দুজন মিলেই হয়তো সিদ্ধান্ত নেন বিচ্ছেদের।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও সমাজকর্মী মেরি এলিজাবেথের দাম্পত্যজীবন ছিল দীর্ঘ ৪০ বছরের। গণমাধ্যমের চোখে তাঁরা ছিলেন ‘দ্য পারফেক্ট কাপল’। কিন্তু একপর্যায়ে দুজনে মিলেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন; কেননা ভিন্ন ভিন্ন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা।

তবে দীর্ঘদিন একসঙ্গে বাস করার ফলেই যে বিচ্ছেদ সব সময় দুজনের সিদ্ধান্তেই হবে, তা কিন্তু নয়। স্বামী ও স্ত্রী দিন শেষে দুই ভিন্ন ব্যক্তি, তাই তাঁদের সিদ্ধান্তের পেছনে কারণও হয় আলাদা। এ ব্যাপারে ট্যাটকিনের ভাষ্য, ‘নারীরা ৩৫-৪০ পেরোনোর পর মনে করতে শুরু করেন, তাঁরা সংসারের জন্য জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা হওয়ায় সত্যিই অনেকে পেশাজীবন ছেড়ে সন্তান পালন করেন, সংসারের কথা ভেবে নিজের শখ-আহ্লাদ ভুলে যান। ফলে সন্তানেরা বড় হয়ে যাওয়ার পর, সংসার ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের এই উপলব্ধি অনেক সময় বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

এই চিত্র এখনো উপমহাদেশের সমাজে বিরল, তবে পশ্চিমা সমাজে সত্যিই লিঙ্গভিত্তিক বঞ্চনার ক্ষোভ থেকে ইদানীং বিচ্ছেদের সূত্রপাত ঘটতে দেখা যাচ্ছে। মনোবিশারদ স্টিভ সাইবোল্ডের আবার দীর্ঘ দাম্পত্যজীবনে বিচ্ছেদের সবচেয়ে গুরুত্ববহ কারণ হিসেবে একঘেয়েমিকে চিহ্নিত করেছেন।

বন্ধন যেন হারিয়ে না যায়

এ লেখার শুরুতে বলেছিলাম বিশ্বনাথ মজুমদারের কথা। তিনিও সাংসারিক একঘেয়েমিতে ভুগেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে বিশিষ্ট অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি আক্ষেপের সুরে জানিয়েছিলেন, সারাটা জীবন স্ত্রীকে দেখেছেন সংসারের জন্য, সন্তানদের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাতে। চুলার ধারে আর ঘর গোছাতে সে এত ব্যস্ত ছিল যে নিজেরা নিজেদের মতো করে একটু সময় কাটানোর ফুরসত পাননি।

আমাদের সামাজিক কাঠামোর দিকে ফিরে তাকালে সহজেই বোঝা যায় এ অভিযোগ কত বেশি বাস্তব আর প্রকট! দায়িত্বের বেড়াজালে পড়ে সবারই বিচ্ছেদ হয়, তা বলছি না। তবে ব্যস্ততার ফেরে যে আমরা সম্পর্কের যত্ন নিতে ভুলে যাই, সে কথা তো ভীষণ সত্যি। তাই চারপাশে সম্পর্কের ভঙ্গুরতা দেখতে দেখতে ছোট্ট কিছু বিষয় আরও একবার মনে ধারণ করে নিতেই পারেন। যাঁর সঙ্গে স্বপ্নের ঘর বাঁধলেন, যে সংসারে দুজনের অনুভব আর অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল তাকেও খানিকটা সময় দিন। কথা বলুন। ব্যস্ততা, ত্যাগ, অভ্যাসের মতো শব্দগুলোর ভিড়ের যেন যোগাযোগ, ভালোবাসা, বন্ধনের মতো শব্দগুলো হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

সিদ্ধান্ত হতে হবে সুস্থ ও যৌথ

তবুও অপূর্ণতা যদি থেকেই যায়? দীর্ঘকাল পরও যদি মনে হয়, সবকিছু শুধু ‘মেনে’ নিয়েছেন, কিন্তু ‘মনে’ নিতে পারেননি, তখন? তখনো সিদ্ধান্ত নিন ভেবেচিন্তে, নিজের ভালো থাকার কথা ভেবেই। জীবনের অনেকটা সময় একত্রে কাটিয়েছেন বলেই নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভুলে যেতে হবে, তা নয়। ডিভোর্সের পর মানসিক অবসাদে পড়াও স্বাভাবিক। আর যদি তা দীর্ঘদিনের দাম্পত্যের পর হয়, তাহলে যুক্ত হয় দীর্ঘদিনের জীবনাচরণ থেকে বেরিয়ে আসার যুদ্ধও। এ প্রসঙ্গে সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক অ্যানি অ্যান্থনিয়া বাড়ৈ বলেন, ‘প্রথমেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তকে সহজভাবে নিতে হবে। বিয়ের দীর্ঘদিন পর বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলে সন্তানের বিয়েতে, সমাবর্তনে বা যেকোনো অনুষ্ঠানে সাবেক স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যে দেখা হবে, সেটি সহজভাবে মেনে নিন। দ্বিতীয়ত, পরিবার বা বন্ধুদের থেকে দূরে সরে যাবেন না। প্রশ্নের ভয়ে তাদের এড়িয়ে যান অনেকেই। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের শরণাপন্ন হন। তৃতীয়ত, জীবনযাপনে বড় ধরনের পরিবর্তন এলে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।’

একটি বিচ্ছেদ, একটি সম্পর্কের ভাঙন গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, তবে তা কারও সারা জীবনের দুঃখ হতে পারে না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাই রবি ঠাকুরের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে নাহয় একবার মনে মনে বলেই ফেলুন, ‘ভালো–মন্দ যাহাই আসুক, সত্যরে লও সহজে!’
 
বিয়ে এক অদ্ভুত সম্পর্ক। এই মনে হয় এত কাছে। পরক্ষণেই স্বার্থের আঘাতে বহু দূরের নক্ষত্র।
 
সামান্য কারণেও আজকাল অহরহ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে, যার প্রধান কারণ সহনশীলতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া আর ধৈর্যের অভাব।
 
দাম্পত্য শুধু দুটি মানুষের মনের মিল নয়। একসাথে সুখ-দুঃখে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত চলার নামই দাম্পত্য।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top