What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

BCS বাংলাদেশ (1 Viewer)

Nnur

Exclusive Writer
Story Writer
Joined
Mar 6, 2018
Threads
25
Messages
160
Credits
3,564
বিসিএস স্বপ্নে অবহেলিত দেশ
বিসিএস ক্যাডার হওয়া যে কোন তরুণের প্রধানতম স্বপ্ন। কেনই বা হবে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নের এত বড় জায়গা আর কোথায়? কিছুদিন পর পর শত শত ক্যাডার পদ পূরণে দেশ ডাকছে মেধাবী তরুণদের। যেমন বড় জায়গা মর্যাদার ব্যাপারেও তেমনি তার কমতি নেই। ক্ষমতা, সম্মান, জীবনের পূর্ণতা কী নেই তাতে! তাইতো পরিবারের চাপ সামলাতে কিংবা নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে মেধাবী তরুণদের ক্যাডার পদ প্রাপ্তিতে নিরলস চেষ্টার যেন কমতি নেই।
যদিও নিন্দুকেরা বাঁকা চোখে দেখে, ইয়ং জেনারেশনের বিসিএস পাগলামি দেখে ভাঁড়ামি ভেবে কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করে, নিজে না আসতে পারার ক্ষোভে হিংসের আগুনে পুড়ে সমালোচনা করে, আমি এ স্রোতের গতিকে স্বাভাবিক ভাবেই দেখি। বরঞ্চ মেধাবীরা এই মহান পেশায় আসার সুযোগ পেলে দেশ উপকৃত হবে এ কথাই অনস্বীকার্য। তবুও বলব বিসিএসই কেন হবে জীবন গড়ার একমাত্র স্বপ্ন? দেশের প্রয়োজনে তরুণদের স্বপ্ন বিস্তার নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে।
বিসিএস ক্যাডাররা দেশের মূল চালিকা শক্তির বড় জ্বালানী। তাই বলে দেশটা কিন্তু শুধু বিসিএস ক্যাডাররাই চালায় না। এখানে কৃষক, মজুর, জেলে, ব্যবসায়ী, প্রবাসী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ বা আরও নানান পেশার মানুষের মধ্যে কার অবদান নেই? তাহলে বাকি সব জায়গায় কী কম মেধাবীরা এসে ঠেলে ঠুলে দেশকে সামনের দিকে নেবার বৃথা চেষ্টা চালাবে? নাকি বিসিএস ক্যাডাররা সেগুলোও দেখবে? কেই প্রশ্ন করতেই পারেন, সবাই তো আর বিসিএসে টিকে যাচ্ছে না। বাকি মেধাবীরা অপর জায়গায় গিয়ে তাদের ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করি তারা অনেক কিছু গভীরে দেখার সুযোগ পাই। অনেক শিক্ষার্থী এখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ চায়। কি বিষয় পেল, সে বিষয়ে আদৌ তাদের ভাল লাগার কিছু আছে কিনা সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। মুখ্য হলো যে কোন একটি স্নাতক সার্টিফিকেট। বিসিএস দিয়ে পরবর্তী স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে নেয়া যাবে। বিসিএসে টিকে গেলে আর কী লাগে। ক্লাসে পড়াশুনাতেও তেমনি তার প্রভাব রয়েছে। অমনোযোগী শিক্ষার্থীটি যখন ক্লাসের পিছনের সারিতে বসে বিসিএস গাইড খুলে বসে থাকে, তখন তার মেধা আহরণের সুযোগ কী হয়ে উঠে? নাকি কে কোন সালে মারা গেল, কোন দেশের মূদ্রার নাম কি, রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানী ছিলেন কিনা এমন সব উত্তর জানার নামই বিকশিত মেধা? আমি হলফ করে বলতে পারি, ক্লাসের ৫০% এরও অধিক শিক্ষার্থী চায় কোন রকমে পাশ করে বের হয়ে যেতে। দ্বিতীয় শ্রেণি-মানের একটি সার্টিফিকেট জুটলেই যথেষ্ট। এর বেশি একাডেমিক জ্ঞান অর্জন করতে গেলে যে বিসিএস মিস হয়ে যেতে পারে! কত অবান্তর ভাবনা।
বাস্তবে এই ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায়। অবসর প্রাপ্ত বিসিএস ক্যাডাররা যখন টিভি টকশোতে আসেন তখন তাদের মেধার ঝলক বুঝা যায়। তারা কিন্তু আজকালকার ক্যাডারদের মতো দেশ-বিদেশ ট্রেনিং করার বা অন্য অনেক সুযোগ পাননি। অথচ তাঁরা মেধার আলোতে শাণিত। এর উৎস কোথায়? নিশ্চিত একাডেমিক জ্ঞান। তাঁর গভীর মনোযোগে পড়া হতো পাঠ্য বই, পড়া হতো নানান রকম গল্পের বই। আর আজকের তরুণরা পড়ে বিসিএস গাইড। করে বিসিএস কোচিং। ফলে সংক্ষিপ্ত উত্তর জানা ছাড়া বিশ্লেষণাত্বক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ তারা হাত ছাড়া করে। গভীর জ্ঞান অর্জনের অভ্যাস তাদের হয়ে উঠে না। সেই মানুষটি তুলনামূলক ভাবে মেধাবী হলেও, ক্যাডার হয়ে চাকুরী করেন মাত্র। জ্ঞানেণ্বেষণের তৃষ্ণা তাঁর একাডেমিক জীবনেই ক্ষয়ে রেখে গেছেন। তাছাড়া চাকুরী জীবনে একাডেমিক ও মুক্তচিন্তা বিকাশের বই পড়ার সুযোগ আর হয়ে উঠে না। এতসব বলে ঢালাও সমালোচনা করলাম হয়তো। কিন্তু শতভাগ সত্যি না হলেও বেশ করেই হচ্ছে তা। সেটা জাতির জন্য উদ্বেগের বিষয়।
আরও একটি বাজে দিক নিয়ে বলি। যেহেতু প্রায় সকল স্নাতক, স্নাতকোত্তর পাশ তরুণদের স্বপ্ন বিসিএস, তারা সবাই এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুদ্ধে শামিল হয়। সফল হয় তার খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ। যারা পারে না তারা অপেক্ষায় থাকে পরবর্তী বারের যুদ্ধের জন্য। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে যুবক-যুবতীরা দেশের উন্নয়নে যথাযথ পরিমাণে অংশীদারি হতে পারে না। ফের যদি বিফল হয় তবে তো আরও শেষ। সে উদ্দমতা হারায়। সেই হারানো উদ্দমতা তাকে অন্য ফিল্ডেও উচ্ছ্ল হতে দেয় না। সে যেখানেই যায় বিমলিন চিত্তে সেবা দেয়। তাও যদি সেই সুযোগ পায়। আবার সুযোগ পেলেও অনেকেই আর তার আশার ধারে কাছের যোগ্য জায়গা খুঁজে পায় না। কারণ বিসিএস পাশের অপেক্ষায় অপেক্ষায় বেলা শেষ। ফলে ভাগ্যে যা জুটে তাতেই থিতু হওয়া ছাড়া উপায় কি? কোন রকমে উপায় ধরা মানুষেরা আরও বেশি বিমলিন হয়ে যায়। অন্য কিছু কম মেধাবীর সাথে মিশে সে নিজেও কর্ম স্পৃহা হারায়। যা দেশের জন্য এক অশনি সংকেত।
আরও অনেক নেতিবাচক দিকই আছে যা সহজেই বলা যাবে। কিন্তু আমি এত লিখে মহান পেশার প্রতি আগ্রহীদের আঘাত করতে চাই না। যদিও বিসিএসকে ছোট করে দেখানো আমার উদ্দেশ্য নয়। বরঞ্চ এ পেশার মানুষদের প্রতি আমার যথাযথ সম্মান রয়েছে। কেবল দেশের স্বার্থেই কথাগুলো বললাম। তাছাড়া বিসিএস নিজে এমন কিছু নয় যা জনশক্তির শক্তিকে দেশের জন্য ব্যবহারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা চলে, নীতিনির্ধারণের অভাব এ জন্য দায়ী। দায়ী প্রচার প্রচারণার। যেহেতু দেশের উন্নয়নে বিসিএস ক্যাডার একমাত্র শক্তি নয় এবং সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেও না, তাই সবাইকে বিসিএস ক্যাডার হবার স্বপ্ন-মুখী করা উচিত হচ্ছে না। এ স্রোতের বিপরীতে অন্য সম্ভাবনাগুলো তরুণদেরকে চেনাতে হবে, তাদের উদ্যোক্তা বানাতে হবে, কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় মেধাবীদের টানতে হবে। মেধাবীদের সকল পেশায় সম-হারে প্রাণশক্তি সহকারে পৌঁছে দিতে হবে। সেটাই হবে পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজের দায়িত্ব। তাতেই হবে দেশের কল্যাণ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top