বিখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, `আমরা বাস করি বর্তমানে, অতীতেও না ভবিষ্যতেও না।’ হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, তাই আমাদের মনে হতেই পারে, এটাই ঠিক। তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। মনে হতেই পারে ভবিষ্যৎ ঘুমিয়ে আছে কালের গর্ভে, অতীত আগেই হারিয়ে গেছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা আর কার্যকারণ সবসময় এক বিন্দুতে নাও মিলতে পারে। অভিজ্ঞতা যেখানে ধোঁকা খায়, বাস্তবতা যেখানে ঝাপসা হয়ে ওঠে, সেখান থেকেই শুরু কোয়ান্টাম বলবিদ্যার। কিন্তু সময়ের প্রহেলিকা শুধু কোয়ান্টাম জগতেই সীমাবদ্ধ নয়; বৃহৎ, বিশাল মহাবিশ্বের সবখানেই ‘সময়’ ছলনার আশ্রয় নেয়।
আপনি যে অতীতে বাস করেন, তার প্রমাণ আপনি বাস্তব জীবনেই পাবেন।
সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। সেখান থেকে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড। অর্থাৎ এই মুহূর্তে যে সূর্যটা দেখছেন, যেখানে দেখেছেন, সূর্যটা আসলে ৮ মিনিট ৫২ আগে ঠিক এই জায়গায় ছিল। এখন আমরা এই জায়গায় কেন দেখছি?
কারণ আলোর গতি। আলো এক সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। এই হিসাবে সূর্য থেকে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড।
কোনো বস্তুকে আমরা তখনই দেখতে পাই, যখন বস্তুটা নিজেই আলোকিত হয় বা অন্য বস্তু থেকে আসা আলো তার ওপর পড়ে। অর্থাৎ বস্তুর ওপর থেকে আলো প্রতিফলিত হলে তবেই আমরা বস্তুটাকে দেখতে পাই। বস্তুটা নিজেই আলোর উৎস হলো প্রতিফলনের অবশ্য দরকার হয় না।
তাই দূরত্ব আর আলোর বেগের কারণে আমরা সব সময় ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড আগের সূর্যকে দেখি। বর্তমানের সূর্য কখনোই আমরা দেখতে পাব না, যদি না সূর্যের পৃষ্ঠে গিয়ে না দাঁড়াই। নানা কারণে সেটাও অবশ্য সম্ভব নয়।
এবার আরেকটু দূর আকাশে উঁকি দিতে পারি। সূর্যের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র হলো আলফা সেন্টুরাই। সেটা পৃথিবী থেকে এতটাই দূরে যে সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা আলোর এই পথ পাড়ি দিতে চার বছর লেগে যায়। তাই তারাটা যেখানে রাতের আকাশে দেখছেন, আর ভাবছেন, ওটা বুঝি এখনো ওখানেই রয়েছে, সে ধারণা ভুল। রিয়েল টাইম দেখার উপায় নেই।
মহাকাশের ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলা হচ্ছে এখন, তারাদের সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে, ব্ল্যাকহোল একে অপরের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে, কিংবা হচ্ছে সুপারনোভা বিস্ফোরণ, এসব ঘটনাগুলো ঘটছে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে।
তার মানে সেখান থেকে আলো আসতে সময় লাগছে কয়েক কোটি বছর। অর্থাৎ, এসব ঘটনা কোটি কোটি বছর আগেই ঘটে গেছে। আমরা এখন দেখছি।
এসব ঘটনা থেকে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, ঘটনার অতীতও দেখা সম্ভব।
এবার একটু দৈনন্দিন জীবনের দিকে তাকান। দিগন্তে যে মেঘমালা দেখছেন, মাঠে কৃষক কাজ করছেন, এমনকি আপনার সামনে যে মানুষটাকে দেখছেন, এদেরও কি রিয়াল টাইমে বা তাৎক্ষণিক দেখছেন! মনে হয় না।
খুব অল্প দূরত্বে থাকলেও সেখান থেকে আলো এসে আপনার চোখে পড়তে কিছুটা সময় লাগবেই। হতে পারে সেটা ১ ন্যানো সেকেন্ডের সহস্রভাগের একভাগ সময়। তবু কিছুটা সময় তো লাগছে। এমনকি আপনার নীজের হাত, পা, শরীরও একেবারে রিয়েল টাইমে দেখতে পাবেন না। খুব কম সময় হলেও লাগছে।
তাহলে যেটাকে আপনি বর্তমানে ঘটছে বলে মনে করছেন, সেটা কি আদৌ বর্তমান?
শুধু আলোর কথাই বা বলি কেন? শব্দ! এর গতি আরও কম। আলোর তুলনায় অনেক অনেক কম। সেকেন্ডে মাত্র ৩৫৫ মিটার। আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মোটেও পারে না শব্দ। তাই বজ্রপাতের ঝলক যখন দেখতে পাচ্ছেন, শব্দ শুনছেন তার থেকে বেশ কয়েক সেকেন্ড পরে। সুতরাং শব্দের ক্ষেত্রেও রিয়েল টাইম বলে কিছু নেই।
এবার আসুন আপনার অনুভূতির কথা। ধরুন আপনি মোবাইল ফোনটা স্পর্শ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে এর স্ক্রিন আলোকিত হয়ে উঠল। তার মানে কি, এটা রিয়েল টাইমে আপনি দেখলেন? রিয়েল টাইম অনুভব করলেন?
দেখার কথাতো আগেও বলেছি। স্পর্শের অনুভূতির কথাই যদি বলি, কোনো কিছু স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি অনুভূতি টের পাবেন না। এর জন্যও সময় লাগবে। কারণ, স্পর্শের যে অনুভূতি, সেটাও তৈরি হয় মস্তিষ্কে। এই খবরটা হাত থেকে মস্তিষ্কে যেতে কিছুটা হলেও সময় লাগবে।
অর্থাৎ যেটাকেই আপনি বর্তমানের ঘটনা মনে করছেন, তার কোনেটাই বর্তমানের নয়। কোনোটা খুব সামান্য অতীতের, কোনোটা আবার কোটি কোটি বছরের অতীত!
আপনার কি মনে হচ্ছে, আমি যে অতীতে বাস করার কথা বলছি, এটা কি যুক্তি-তর্কের ওপর দাঁড়িয়ে আমার নিজের মস্তিষ্ক থেকেই এসেছে? মোটেও ব্যাপারটা এমন নয়, বরং ইতালিয়ান পদার্থবিদ ও বিজ্ঞান লেখক কার্লো রোভেলি তাঁর ‘দ্য অর্ডার টাইম’ বইয়েও এমন কথা বলেছেন। লিখেছেন ‘‘নাও’ মিনস নাথিং’ নামে একটা অধ্যায়, যার অর্থ ‘‘এখন’ মানে কিছু নয়’।
তাহলে ‘বর্তমান’ আসলে কি? ‘বর্তমান’ বলে যদি কিছু নাই থাকে, তাহলে অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য কি? অতীত, যা ঘটেছে, তার স্মৃতি অর্থাৎ প্রমাণ রয়েছে আমাদের স্মৃতিকোষগুলোতে। ভবিষ্যতেও যে কিছু না কিছু ঘটবে, সে ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই। অতীতে আর ভবিষ্যতের মধ্যে যে দেয়াল রয়েছে, সেটাই তাহলে বর্তমান। কিন্তু সেই বর্তমান পরম কিছু নয়; আপেক্ষিক। দূরত্ব অনুযায়ী অতীতের একটা বিশেষ রূপকে বর্তমান হিসেবে দেখি। সূর্যর জন্য ৮ মিনিটি ৫২ সেকেন্ড, মঙ্গলের জন্য ১৫ মিনিট, আলফা সেন্টাউরির জন্য ৪ বছর, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির জন্য ২৫ কোটি বছরের অতীতকে আমরা বর্তমান হিসেবে দেখি। সুতরাং আইনস্টাইন যে দেখিয়েছিলেন, সময় প্রকৃতির কোনো মৌলিক রাশি নয়, এ সব হিসেব থেকেই তা পরিষ্কার হয়।
এই অধ্যায়ে ‘সময়’ সম্পর্কে একটি চমৎকার উদ্ধৃতি দিয়েছেন রোভেলি, বলেছেন, ‘সময় বা বর্তমানের ধারণাটা হলো, মহাবিশ্বব্যাপী জুড়ে থাকা একটা ইল্যুশন বা বিভ্রম, যা শুধু আমাদের একটি অবৈধ অভিজ্ঞতা।‘
‘এটা অনেকটা বন-জঙ্গল স্পর্শ করে থাকা রংধনুর মতো,’ বলেছেন রোভেলি, ‘যা দেখে মনে হয়, একটু সামনে এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে, কিন্তু কাছে গেলেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।’
এ যেন খ্যাপা নবনী দাসের ওই গানের মতোই, ‘তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলে আর পেলেম না…’
আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ‘দুটো ঘটনা একই সঙ্গে কি মঙ্গল ও পৃথিবীতে ঘটছে?’ আসলে এ প্রশ্নের কোনো মানে নেই। ‘একই সঙ্গে ঘটছে’ আর ‘এই মুহূর্তে’ এসবের এসব কথার কোনো অর্থ হয় না। এমনটাই দেখিয়ে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন। কার্লো রোভেলি তাঁর বইয়ে সেটাকেই আরও যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।
(তথ্যসূত্রঃ দ্য অর্ডার অব দ্য টাইম বাই কার্লো রোভেলি এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহিত, সংকলিত ও পরিমার্জিত)
আপনি যে অতীতে বাস করেন, তার প্রমাণ আপনি বাস্তব জীবনেই পাবেন।
সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। সেখান থেকে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড। অর্থাৎ এই মুহূর্তে যে সূর্যটা দেখছেন, যেখানে দেখেছেন, সূর্যটা আসলে ৮ মিনিট ৫২ আগে ঠিক এই জায়গায় ছিল। এখন আমরা এই জায়গায় কেন দেখছি?
কারণ আলোর গতি। আলো এক সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। এই হিসাবে সূর্য থেকে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড।
কোনো বস্তুকে আমরা তখনই দেখতে পাই, যখন বস্তুটা নিজেই আলোকিত হয় বা অন্য বস্তু থেকে আসা আলো তার ওপর পড়ে। অর্থাৎ বস্তুর ওপর থেকে আলো প্রতিফলিত হলে তবেই আমরা বস্তুটাকে দেখতে পাই। বস্তুটা নিজেই আলোর উৎস হলো প্রতিফলনের অবশ্য দরকার হয় না।
তাই দূরত্ব আর আলোর বেগের কারণে আমরা সব সময় ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড আগের সূর্যকে দেখি। বর্তমানের সূর্য কখনোই আমরা দেখতে পাব না, যদি না সূর্যের পৃষ্ঠে গিয়ে না দাঁড়াই। নানা কারণে সেটাও অবশ্য সম্ভব নয়।
এবার আরেকটু দূর আকাশে উঁকি দিতে পারি। সূর্যের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র হলো আলফা সেন্টুরাই। সেটা পৃথিবী থেকে এতটাই দূরে যে সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা আলোর এই পথ পাড়ি দিতে চার বছর লেগে যায়। তাই তারাটা যেখানে রাতের আকাশে দেখছেন, আর ভাবছেন, ওটা বুঝি এখনো ওখানেই রয়েছে, সে ধারণা ভুল। রিয়েল টাইম দেখার উপায় নেই।
মহাকাশের ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলা হচ্ছে এখন, তারাদের সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে, ব্ল্যাকহোল একে অপরের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে, কিংবা হচ্ছে সুপারনোভা বিস্ফোরণ, এসব ঘটনাগুলো ঘটছে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে।
তার মানে সেখান থেকে আলো আসতে সময় লাগছে কয়েক কোটি বছর। অর্থাৎ, এসব ঘটনা কোটি কোটি বছর আগেই ঘটে গেছে। আমরা এখন দেখছি।
এসব ঘটনা থেকে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, ঘটনার অতীতও দেখা সম্ভব।
এবার একটু দৈনন্দিন জীবনের দিকে তাকান। দিগন্তে যে মেঘমালা দেখছেন, মাঠে কৃষক কাজ করছেন, এমনকি আপনার সামনে যে মানুষটাকে দেখছেন, এদেরও কি রিয়াল টাইমে বা তাৎক্ষণিক দেখছেন! মনে হয় না।
খুব অল্প দূরত্বে থাকলেও সেখান থেকে আলো এসে আপনার চোখে পড়তে কিছুটা সময় লাগবেই। হতে পারে সেটা ১ ন্যানো সেকেন্ডের সহস্রভাগের একভাগ সময়। তবু কিছুটা সময় তো লাগছে। এমনকি আপনার নীজের হাত, পা, শরীরও একেবারে রিয়েল টাইমে দেখতে পাবেন না। খুব কম সময় হলেও লাগছে।
তাহলে যেটাকে আপনি বর্তমানে ঘটছে বলে মনে করছেন, সেটা কি আদৌ বর্তমান?
শুধু আলোর কথাই বা বলি কেন? শব্দ! এর গতি আরও কম। আলোর তুলনায় অনেক অনেক কম। সেকেন্ডে মাত্র ৩৫৫ মিটার। আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মোটেও পারে না শব্দ। তাই বজ্রপাতের ঝলক যখন দেখতে পাচ্ছেন, শব্দ শুনছেন তার থেকে বেশ কয়েক সেকেন্ড পরে। সুতরাং শব্দের ক্ষেত্রেও রিয়েল টাইম বলে কিছু নেই।
এবার আসুন আপনার অনুভূতির কথা। ধরুন আপনি মোবাইল ফোনটা স্পর্শ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে এর স্ক্রিন আলোকিত হয়ে উঠল। তার মানে কি, এটা রিয়েল টাইমে আপনি দেখলেন? রিয়েল টাইম অনুভব করলেন?
দেখার কথাতো আগেও বলেছি। স্পর্শের অনুভূতির কথাই যদি বলি, কোনো কিছু স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি অনুভূতি টের পাবেন না। এর জন্যও সময় লাগবে। কারণ, স্পর্শের যে অনুভূতি, সেটাও তৈরি হয় মস্তিষ্কে। এই খবরটা হাত থেকে মস্তিষ্কে যেতে কিছুটা হলেও সময় লাগবে।
অর্থাৎ যেটাকেই আপনি বর্তমানের ঘটনা মনে করছেন, তার কোনেটাই বর্তমানের নয়। কোনোটা খুব সামান্য অতীতের, কোনোটা আবার কোটি কোটি বছরের অতীত!
আপনার কি মনে হচ্ছে, আমি যে অতীতে বাস করার কথা বলছি, এটা কি যুক্তি-তর্কের ওপর দাঁড়িয়ে আমার নিজের মস্তিষ্ক থেকেই এসেছে? মোটেও ব্যাপারটা এমন নয়, বরং ইতালিয়ান পদার্থবিদ ও বিজ্ঞান লেখক কার্লো রোভেলি তাঁর ‘দ্য অর্ডার টাইম’ বইয়েও এমন কথা বলেছেন। লিখেছেন ‘‘নাও’ মিনস নাথিং’ নামে একটা অধ্যায়, যার অর্থ ‘‘এখন’ মানে কিছু নয়’।
তাহলে ‘বর্তমান’ আসলে কি? ‘বর্তমান’ বলে যদি কিছু নাই থাকে, তাহলে অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য কি? অতীত, যা ঘটেছে, তার স্মৃতি অর্থাৎ প্রমাণ রয়েছে আমাদের স্মৃতিকোষগুলোতে। ভবিষ্যতেও যে কিছু না কিছু ঘটবে, সে ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই। অতীতে আর ভবিষ্যতের মধ্যে যে দেয়াল রয়েছে, সেটাই তাহলে বর্তমান। কিন্তু সেই বর্তমান পরম কিছু নয়; আপেক্ষিক। দূরত্ব অনুযায়ী অতীতের একটা বিশেষ রূপকে বর্তমান হিসেবে দেখি। সূর্যর জন্য ৮ মিনিটি ৫২ সেকেন্ড, মঙ্গলের জন্য ১৫ মিনিট, আলফা সেন্টাউরির জন্য ৪ বছর, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির জন্য ২৫ কোটি বছরের অতীতকে আমরা বর্তমান হিসেবে দেখি। সুতরাং আইনস্টাইন যে দেখিয়েছিলেন, সময় প্রকৃতির কোনো মৌলিক রাশি নয়, এ সব হিসেব থেকেই তা পরিষ্কার হয়।
এই অধ্যায়ে ‘সময়’ সম্পর্কে একটি চমৎকার উদ্ধৃতি দিয়েছেন রোভেলি, বলেছেন, ‘সময় বা বর্তমানের ধারণাটা হলো, মহাবিশ্বব্যাপী জুড়ে থাকা একটা ইল্যুশন বা বিভ্রম, যা শুধু আমাদের একটি অবৈধ অভিজ্ঞতা।‘
‘এটা অনেকটা বন-জঙ্গল স্পর্শ করে থাকা রংধনুর মতো,’ বলেছেন রোভেলি, ‘যা দেখে মনে হয়, একটু সামনে এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে, কিন্তু কাছে গেলেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।’
এ যেন খ্যাপা নবনী দাসের ওই গানের মতোই, ‘তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলে আর পেলেম না…’
আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ‘দুটো ঘটনা একই সঙ্গে কি মঙ্গল ও পৃথিবীতে ঘটছে?’ আসলে এ প্রশ্নের কোনো মানে নেই। ‘একই সঙ্গে ঘটছে’ আর ‘এই মুহূর্তে’ এসবের এসব কথার কোনো অর্থ হয় না। এমনটাই দেখিয়ে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন। কার্লো রোভেলি তাঁর বইয়ে সেটাকেই আরও যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।
(তথ্যসূত্রঃ দ্য অর্ডার অব দ্য টাইম বাই কার্লো রোভেলি এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহিত, সংকলিত ও পরিমার্জিত)
আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য ধন্যবাদ। আশাকরি ফোরামের সাথে থাকবেন এবং একে অন্যকে উৎসাহ যোগাবেন।