বর্ষায় শিশুদের নানা সমস্যা হয়। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ, সর্দি–কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণ এ সময় বেড়ে যায়। এ ছাড়া ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ে। এর সঙ্গে রয়েছে করোনাভাইরাস মহামারি। কাজেই এ সময় শিশুর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।
ডায়রিয়া
খাওয়ার পানি বা খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা পানি দূষিত হলে শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। বর্ষার জলাবদ্ধতায় ব্যবহার্য পানি অনিরাপদ হয়ে ওঠে। রোটা ভাইরাস, হেপাটাইটিস এ, কলেরা, সালমোনিলা ইত্যাদি জীবাণুর সংক্রমণে ডায়রিয়া দেখা দেয়। শিশুর যদি ২৪ ঘণ্টায় তিন বা ততোধিকবার পাতলা পায়খানা হয়, তবে তা ডায়রিয়া। এর ফলে শিশুর পানিশূন্যতা দেখা দেয়। কাজেই ডায়রিয়ার শুরু থেকেই খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ পান করানো, শিশুর খাওয়ার পানি ও খাবার তৈরিতে নিরাপদ পানির ব্যবহার, রোটা ভাইরাসপ্রতিরোধী টিকা প্রয়োগ করে শিশুকে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
ইনফ্লুয়েঞ্জা
আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি-কাশি ও রোগীর ব্যবহার্য দ্রব্যাদির সংস্পর্শ থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়ায়। তাই শিশুকে সর্দি-কাশির রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশু যেন ঘন ঘন চোখ, মুখ, নাক স্পর্শ না করে এবং খাওয়ার আগে সাবানপানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুকে পানি, দুধ বা তরল খাবার দেওয়ার আগে হালকা গরম পানিতে পাতলা কাপড় চুবিয়ে তা সরু শলাকার মতো করে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার করে দিলে খাবার খেতে সুবিধা হয়। কাশি প্রশমনে মধু, তুলসীপাতার রস, লেবুমিশ্রিত কুসুম গরম নিরাপদ পানি খাওয়ানো যায়। জ্বর হলে শিশুর ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ এবং বারবার তরল পানীয় পান করানো উচিত। শিশু যদি বেশি জ্বরে ভোগে, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা বুকের দুধ পানে অসমর্থ হয়, দ্রুত শ্বাস নিতে থাকে, বুকের নিচের অংশ দেবে যায়, তাহলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর
জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। বর্ষায় পানি জমে বলে এ সময়টা এ মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত সময়। আক্রান্ত শিশু প্রথম কয়েক দিন উচ্চমাত্রার জ্বরে ভোগে। মেরুদণ্ডের ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা; কখনোবা মাড়ি, মলপথে রক্তপাতসহ হোমোরেজিক ডেঙ্গু প্রকাশ পায়। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। ঘন ঘন পানীয় বা তরল খাবার খাওয়াতে হবে। রক্তপাত দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাড়ি, অফিস–আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুলের টব, ডাবের খোসা, ক্যানের খালি পাত্র, গাড়ির টায়ার বা হাঁড়িতে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
করোনা মহামারির এই সময়ে শিশুর সুরক্ষায় আরও বেশি সচেতন হতে হবে। শিশুর যদি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও আন্ত্রিক সমস্যার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
* অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল