অভিনেত্রী আশনা হাবীব ভাবনা ঘরে যা যা আছে, সেগুলোকে একটু এদিক-ওদিক করে ভাবনা তাঁর ঘরে আনেন ঈদ উৎসবের আমেজ। এবারেও তাই করেছেন। ভাবনার বাড়ির সাজসজ্জা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোর বর্ণিল ঈদ ম্যাগাজিনে।
‘ঘর সাজানো নিয়ে কখনোই বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থাকে না আমার। বরং যখন যেটা দেখতে ভালো লাগে, সেই জিনিস কিনে আনি ঘর সাজানোর জন্য। আবার কখনো হয়তো কোনো জিনিস প্রয়োজন বাসার জন্য, তখন কিনে ফেললাম সেটি।’ নিজের ঘরের সাজ নিয়ে এমন গল্প করছিলেন অভিনেত্রী আশনা হাবীব ভাবনা। বলছিলেন, ঈদুল ফিতরের দিনে ঘরের সাজে খুব বেশি বাহুল্য থাকে না। বরং ঘরে যা যা আছে, সেগুলোকে একটু এদিক-ওদিক করে ভাবনা তাঁর ঘরে আনেন ঈদ উৎসবের আমেজ।
এই প্রতিবেদনের জন্য যখন ছবি তুলতে ভাবনার বাসায় যাওয়া হলো, তখন দেখা গেল, খুব বেশি আসবাব বা জমকালো জিনিস নয়, ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন শৈল্পিক সব জিনিসকে। যেমন বসার ঘরের টেবিলজুড়ে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের অ্যান্টিকের সংগ্রহ। এই টেবিলের ওপর থরে থরে রাখা অনেক কিছুই ভাবনা পেয়েছেন বংশপরম্পরায়। আছে মায়ের দাদার সময়কার ব্যবহৃত শোপিস। দেশ-বিদেশ থেকে ভাবনা সংগৃহীত কিছু জিনিসও আছে এখানে। ‘যখন যেখানে যাই সেখানে যেটা ভালো লাগে তাই কিনি। একটু পুরোনো দিনের জিনিসপত্রের প্রতি আমার আছে বিশেষ আকর্ষণ।’ বলছিলেন ভাবনা। এ ছাড়া হাতি সংগ্রহের নেশা আছে তার। কখনো পিতলের, কখনো সিরামিকের আবার কাঠের হাতিও সংগ্রহ করেছেন তিনি। ‘এই নেশাটা আমার একবারে ছোটবেলা থেকেই’—বলেন ভাবনা।
পছন্দ করেন পুরোনো দিনের জিনিস
ভাবনার আঁকা ছবি
গত বছর করোনাকালে সাধারণ ছুটির দিনগুলোতে পুরো সময়ই বাসায় ছিলেন ভাবনা। সময় কাটাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন সৃজনশীল কাজে। এই সময় ছবি আঁকা শুরু করলেন, ছোট–বড় নানা ক্যানভাসে। এই ক্যানভাস দিয়েই সাজিয়ে তুললেন বসার ঘরের দেয়াল। এই ছবিগুলোই যেন হয়ে উঠেছে বসার ঘরের মূল প্রাণ। এই দেওয়ালের ঠিক সামনেই রাখা আছে একটি পুরোনো ট্রাংক। পুরান ঢাকায় বড় হয়েছেন ভাবনা। সেই সময় দেখেছেন বাসার প্রায় প্রতিটি ঘরেই জিনিসপত্র রাখার জন্য ট্রাংকের ব্যবহার করা হতো। সেই থেকে ট্রাংকের প্রতিও তাঁর একটা ভালোবাসা কাজ করে। ‘গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে কী জানি একটা কিনতে গিয়েছিলাম। তখন এই ট্রাংকটি চোখে পড়লে তা কিনে নিই’ বলছিলেন ভাবনা।
বসার ঘরে রেখেছেন খোলামেলা ভাব
আগেই বলেছি যে ভাবনার বাসার আসবাবে খুব বেশি বাহুল্য নেই। তার পরিবর্তে খোলামেলা একটা আবহ কাজ করছে বাসাজুড়ে। বসার ঘর লাগোয়া খাবার ঘরে শুধুই আছে খাবার টেবিল। পাশে লিভিং রুমটিতেও বসার আয়োজন ছাড়া তেমন কোনো আসবাবের ব্যবহার নেই। হালকা আসবাব আর মেঝেতে কাঠের ব্যবহার এই দুটোর সমন্বয়ে ঘরগুলো যেন খোলা প্রান্তর। সঙ্গে ল্যাম্প শেডের আলো–আঁধারির ছায়া যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।
শোবার ঘরেই সঙ্গে খোলা টেরেস
এদিকে আসবাবের বাহুল্য না থাকলেও শোবার ঘরের দেয়ালটি নজর কাড়তে বাধ্য। ভিক্টোরীয় আদলের নকশায় এই দেয়ালে প্রাধান্য পেয়েছে সাদা রং। পুরো ঘরের আবহ বদলে দিয়েছে দেয়ালটি। তবে সব ছাপিয়ে ভাবনার বাসার মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে তার শোবার ঘর লাগোয়া টেরেসটি। কৃত্রিম ঝরনাধারা, সবুজের সমারোহ, খোলা ছাদে বসার আয়োজন সবকিছুই যেন মুহূর্তে নগর জীবনের ব্যস্ততাকে ভুলিয়ে দেয়। এই জায়গার গাছপালার অংশটুকু ভাবনার মা দেখাশোনা করেন। আর কৃত্রিম ঝরনার এই আয়োজনটা হয়েছে ভাবনার পছন্দে। ‘প্রকৃতি, গাছপালা, জলের ধারার শব্দ আমাকে ভীষণ টানে। বদ্ধ জীবন মোটেও ভালো লাগে না আমার, তাই এই আয়োজন,’—বলছিলেন ভাবনা। পাশাপাশি তাঁর লেখালেখি করার জন্যও এই জায়গাটা বেশ পছন্দ বলে জানান তিনি।
এই খোলা টেরেসে বসেই গল্প করতে করতে জানা গেল, শুধু বাইরেই নয়, ঘর সাজাতেও ভাবনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ফুল, লতাপাতার প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ঈদের দিন দেখা যায় তাই আলাদা করে কিনে নয়, এই টেরাস থেকেই ফুল দিয়ে খাবার টেবিল, ঘরের বিভিন্ন কোণ সাজিয়ে তোলেন ভাবনা।
খোলা টেরেসে আছে আড্ডা মারার জায়গা