What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other বাপ্পারাজ : একাই একশো (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,016
Credits
220,387
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
tHYicgy.jpg


বিখ্যাত বাবার ছেলে হওয়ার একটা ঘোর বিপদ আছে।ছেলেটি যা কিছু করুক না কেন লোকে বলবে আরে সে তো অমুকের ছেলে।বাপ্পারাজের ব্যাপারটাও তাই।তার নিজের জাত প্রতিভায় সে যতোই উজ্জ্বল হোক না কেন লোকে বলে ও তো নায়করাজের ছেলে।নায়করাজের সুপুত্র বাপ্পারাজ।অভিনয়ে তার জুড়ি মেলা ভার।সেদিক থেকে একটা কথাই আসে মন থেকে ‘বাপকা বেটা বাপ্পারাজ।’

বাপ্পার মূল নাম রিয়াজুল করিম।সিনেমায় আসার সময় বাপ্পার সাথে ‘রাজ’ (নায়করাজের সাথে মিল রেখে) যোগ করেই ‘বাপ্পারাজ’ হয়েছে।ভীষণ আকর্ষণীয় সুন্দর নাম।শুরুটা ১৯৮৬ থেকে।বাবা নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচালনায় ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ সিনেমায় কাজ করে।ক্যারিয়ারের প্রথম কাজই এক্সপেরিমেন্টাল।সাহিত্য থেকে সিনেমা।তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধায়ের গল্প থেকে সিনেমা নির্মাণ করেন রাজ্জাক।শাবানার মতো শক্তিমান অভিনেত্রীর সাথে দেবর-ভাবীর রসায়ন তুলে ধরাটা মোটেই সহজ ছিল না।কিন্তু বাপ্পা দেখিয়ে দেয় তার প্রতিভা।সে যাত্রায় তার অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়।গানের মধ্যে ‘আমার সাধ না মিটিল/ আশা না পুরিল/ সকলই ফুরায়ে যায় মা’ দর্শককে মুগ্ধ করেছিল।গানে বাপ্পার কান্নার অভিনয় অপূর্ব ছিল। ব্যক্তিগতভাবে বাপ্পার এ সিনেমাই তার অভিনীত আমার দেখা প্রথম সিনেমা।গ্রামের ক্লাবে দেখেছিলাম।

বাপ্পার সিনেমার সংখ্যা অনেক।অনেক নামের মধ্যে সবগুলো বলাটা দরবেশের কাজ বটে।স্মরণে যা আসে বলছি –
‘ঢাকা-৮৬, রাজা মিস্ত্রী, প্রতিশ্রুতি, আজকের হাঙ্গামা, আজকের সন্ত্রাসী, হারানো প্রেম, প্রেমের সমাধি, জ্বিনের বাদশা, প্রফেসর, বুক ভরা ভালোবাসা, ভুলোনা আমায়, প্রেমের নাম বেদনা, মা যখন বিচারক, রাগ অনুরাগ, কথা দাও, বিদ্রোহী বধূ, প্রেমশক্তি, বাঘিনী কন্যা, বিশ বছর পর, কত যে আপন, বাংলার কমান্ডো, মিথ্যার মৃত্যু, ত্যাজ্যপুত্র, আখেরি মোকাবেলা, পাগলীর প্রেম, প্রেমগীত, তপস্যা, সন্তান যখন শত্রু, বাবা কেন চাকর, মনের সাথে যুদ্ধ, জীবন সীমান্তে, কার্তুজ।’

aOF6gRO.jpg


বাপ্পাকে নিয়ে একটা প্রচলিত গালগল্প আছে।বলা হয় সে কখনও নায়ক হতে পারেনি।একদম ডাহা মিথ্যা কথা।বাপ্পা অনেক সিনেমাতেই নায়ক ছিল।প্রথমদিকের অনেক সিনেমাতেই ছিল যেগুলো তাকে ক্যারিয়ারের শক্ত অবস্থান এনে দিয়েছে।’চাঁপা ডাঙার বউ, প্রেমের সমাধি, ঢাকা-৮৬, প্রেমশক্তি, রাজা মিস্ত্রী, প্রফেসর, প্রতিশ্রুতি, আজকের সন্ত্রাসী’ এরকম অনেক সিনেমাতেই নায়ক ছিল।নায়কের অভিনয় যেমন পারফেক্ট হওয়া উচিত তার সবটাই দেখিয়ে নায়ক হয়েছে বাপ্পা।প্রত্যেক অভিনেতার অভিনয়ের একটা না একটা স্ট্রং দিক থাকে।বাপ্পার ছিল strong sad acting
quality. এই অভিনয়ে বাপ্পার ধারেকাছেও কেউ নেই।বিশেষ করে কান্নার অভিনয় অনবদ্য।এখানে একটা বিশেষ দিক হচ্ছে, কাঁদতে কাঁদতে দারুণভাবে একটা আধটুু হাসি দিতে পারে বাপ্পা যা শুধু তার পক্ষেই সম্ভব।উদাহরণ –
* তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থেকো (প্রেমের সমাধি)
* আমি তো একদিন চলে যাব (ভুলোনা আমায়)
* তোমরা সবাই থাকো সুখে (প্রেমের নাম বেদনা)
এছাড়া কান্নার গানে আরো আছে –
* আমার ভাগ্য বড় আজব জাদুকর (সন্তান যখন শত্রু)

n4HfFWd.jpg


বাপ্পার সিনেমার মধ্যে যে সিনেমাগুলো তাকে ঢালিউডে স্মরণীয় করেছে তেমন কিছু সিনেমার বিশ্লেষণ জরুরি।

* চাঁপা ডাঙার বউ – পারিবারিক বন্ধন ও দূরত্বের মধ্য দিয়ে আবার মিলন ঘটানোর গল্প।শাবানার দেবর থাকে বাপ্পা।দেবর তার বৌদিকে মায়ের মতো জানে।শাবানার সাথে মায়ের মতো সম্পর্ককে ভুল বোঝে তার বড়ভাই এটিএম শামসুজ্জামান।শেষে ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ হয় এবং মিলন ঘটে।
* প্রেমের সমাধি – বাপ্পাকে নায়ক চরিত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আনে।মাটির পুতুলে দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার মধুর প্রেম চলে।তারপর বিচ্ছেদ।একসময় পুরনো প্রেমিকার বাড়িতেই তার জায়গা হয়।শেষে জীবন বিসর্জন দিতে হয়।
মর্মান্তিক পরিণতিতে শেষ হয়।সিনেমার গল্প খুব সাধারণ কিন্তু অভিনয় অসাধারণ।’তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থেকো’ এ গান একটা ইতিহাস।
* জ্বিনের বাদশা – ভিলেজ পলিটিক্স এর বাস্তব ঘটনা দেখানোর অসাধারণ সিনেমা।নির্বাচন নিয়ে এলাকার চেয়ারম্যানের পলিটিক্সকে রুখতে ভিন্নভাবে এগিয়ে যায় রতনবাহিনী।এই রতনই বাপ্পারাজ।জ্বিনের পোশাক পরে ভয় দেখায় চেয়ারম্যান এটিএম শামসুজ্জামানের দলকে।বাপ্পার চাচা খলিল নির্বাচনে দাঁড়ায় এবং জয়ী হয়।
* হারানো প্রেম – খলনায়কের চরিত্রে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে এ সিনেমা ছিল বাপ্পার বিগ প্রজেক্ট।অসাধারণ পারফরম্যান্স।
* ঢাকা – ৮৬ – মামা-ভাগ্নে থাকে রাজ্জাক-বাপ্পারাজ।তাদের জীবনের প্রেম ও নাটকীয়তা নিয়ে এ সিনেমা।বাপ্পার ‘পাথরের পৃথিবীতে কাঁচের হৃদয়’ এ গানের জন্য বিখ্যাত সিনেমা।
* বাবা কেন চাকর – পারিবারিক গল্পে একজন বাবার প্রকৃত অবদানকে সন্তান অস্বীকার করলে অশান্তি নামে।পরে আবার পরিবারের সে বন্ধনকে টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করতে হয় সন্তানকে।বাপ্পা ট্যাক্সি ড্রাইভার হিশেবে পরিবারে অবদান রাখে।ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
* ভুলোনা আমায় – শাবনূরের প্রেমিক বাপ্পা অনবদ্য অভিনয় করে ব্যর্থ প্রেমিকের।এ সিনেমার ‘আমি তো একদিন চলে যাব’ এ গানটি দেশের সিনেমার বিপুল জনপ্রিয় গান।
* প্রেমের নাম বেদনা – এ সিনেমাও একজন ব্যর্থ প্রেমিকের আখ্যান।পূর্ণিমাকে না পাওয়ার বেদনায় মদের নেশায় পেয়ে বসে বাপ্পাকে।মৃত্যু হয়।এ সিনেমার ‘তোমরা সবাই থাকো সুখে’ দেশের সিনেমার আরেকটি মাইলফলক।
* সন্তান যখন শত্রু – অভিনয়সমৃদ্ধ সিনেমা।অ্যামেজিং অভিনয় ছিল বাপ্পার।শেষ সিকোয়েন্সে বাড়ির উঠোনে সবাইকে বসিয়ে রেখে দেরি করে বের হয় ঘর থেকে।বাড়ির দলিল, ছোটভাই ফেরদৌসের মামলা সমস্যা, মাকে নিয়ে দলাদলি এসব সমস্যার সমাধান একাই করে উপস্থিত তথাকথিত গণ্যমান্যের সামনে।বাপ্পার ঐ সিকোয়েন্সের অভিনয় তুলনাহীন।’আমার ভাগ্য বড় আজব জাদুকর’ গানটি বুকের ভেতরে গিয়ে মেশে।গানের আগে মা ডলি জহুর বাড়ি ছেড়ে যাবার সময় বাপ্পা গরুরগাড়ির পিছে দৌড়ে দৌড়ে ‘মা মা’ করে মিনতি করে।ঐ অভিনয়ে যে কারো চোখ ভিজে আসবে।সিনেমাটি রাজ্জাকেরই ‘সৎভাই’ সিনেমার রিমেক।
* জীবন সীমান্তে – অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এইডস রোগী সনাক্ত হয় বাপ্পা।তারপর নিজের দুর্বিষহ জীবন থেকে প্রেমিকা সুমিকে দূরে সরিয়ে দেয়।মর্মান্তিক গল্পের সরকারি অনুদানের এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমা।

বাপ্পার আরো কিছু গান জনপ্রিয়।যেমন-

* জীবনের নৌকা চলে পাল তুলে – প্রেমের সমাধি
* কালসাপ ঢুকেছে আমার বাসর ঘরে – বাঘিনী কন্যা
* বুকে ধরে রাখব ছবি আঁকব – বিদ্রোহী বধূ
* তোমার চোখটা টানা টানা – পাগলীর প্রেম
* গীতি আমার গীতি – তপস্যা
* দুচোখে তুমি ছাড়া – প্রফেসর

বাপ্পার নায়িকা কম নয়, বেশ লম্বা তালিকা। অরুণা বিশ্বাস, রণ্জিতা, সুনেত্রা, অন্তরা, জিনাত, শিল্পী, কবিতা, শাবনাজ, মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা, কাজল, সুমি, তামান্না প্রমুখ।সবার বিপরীতেই স্বচ্ছন্দ।প্রধান নায়িকা হিশেবে কবিতা, শাবনাজ তাদের সাথে কেমিস্ট্র জমত বেশ।

বাপ্পা বাণিজ্যিক ও এক্সপেরিমেন্টাল দুই ধরনের সিনেমাতেই কাজ করেছে।নিজের সক্ষমতা বারবার প্রমাণ করেছে।তার ‘প্রেমের সমাধি’ থেকে কলকাতায় ‘বকুল প্রিয়া’ নির্মিত হয়।’সন্তান যখন শত্রু’-র কলকাতা ভার্সেনও মূল চরিত্রে ছিল বাপ্পা।

একজন বাপ্পারাজ এভাবেই তার অভিনয়ের অনবদ্য দক্ষতা দিয়ে সিনেমার পর্দাকে শাসন করে গেছে।তার নিজের সময়ে সে রাজত্ব করেছে।আজকের যে দর্শকরা তার সময়কে দেখেছে বা অনাগত দিনের যে দর্শকরা তাকে সিনেমায় দেখবে তাদের সবার চোখের সামনে ‘বাপ্পারাজ’ নামটি একজন অলরাউন্ডার অভিনেতার কথা মনে করাবে।যার বাবা দেশের সিনেমার ‘নায়করাজ’ হওয়ার পরেও নিজের যোগ্যতায় যে উজ্জ্বল।একজন ‘বাপ্পারাজ’-এর জন্য এর থেকে গর্বের আর কী হতে পারে!..
 

Users who are viewing this thread

Back
Top