What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার চৌধুরীর ছোট্ট স্বপ্ন (1 Viewer)

rT5Do7z.jpg


অভিভূত করে দিলো অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক দর্শক শ্রোতাদের। চোখে পানি এনে দিলো অনুষ্ঠানের বিচারকদের। দ্রবীভূত করে দিলো অনেকের বুকের ভেতরটা। সেইসাথে আশা জাগানিয়ার বর্তিকা, পারবে! এরাই পারবে! এরা কারা? এরা-আমাদের `ওরে সবুজ, ওরে আমার কাঁচা'!

বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান এক মায়াবতী নারী। কিশোয়ার চৌধুরী, ডাক নাম নুপুর। এই নামটি ইতোমধ্যেই দেশে বিদেশে বাঙালিদের কাছে পরিচিত হয়ে গেছে। মেয়েটি অস্ট্রেলিয়ার কোনো এক টিভি চ্যানেলের রান্না বিষয়ক প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে । সেই অনুষ্ঠানে সে রান্না-বান্না করছে। বিচারকদের খাওয়াচ্ছে। বিচারকরাও হুম-হাম করে, "আউ" বলে, চপাৎ চপাৎ করে মনের আনন্দে চেঁটে পুটে খাচ্ছে। এর সাথে অভিভূত হওয়ার বা কাঁদার কি বিষয়! আসছি সে প্রসঙ্গে পরে।

বিশ্বের রান্না বিষয়ক টেলিভিশন রিয়েলিটি শোর মধ্যে মাস্টারশেফ অন্যতম। এটি প্রতিযোগিতা মূলক রান্নার গেম শো। অপেশাদার রন্ধন শিল্পীরা জয়ের জন্য প্রতিযোগিতা করেন। যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠানটি বানানো হয় ১৯৯০ সালে। বিবিসির জন্যে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠানটি পরিবর্তন আর পরিবর্ধন করে সাজানো হয়। এই নতুনরূপে সাজানো অনুষ্ঠানটির কাঠামো আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে বিক্রির পরিকল্পনা করা হয়। অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ৪০টি দেশ তাদের নিজস্ব মাস্টারশেফ আয়োজন করে থাকে। বিশ্বে মাস্টারশেফ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে “মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া” জনপ্রিয়তার দিক থেকে রয়েছে তালিকার শীর্ষে। ইউরোপ আমেরিকা কানাডাসহ বিশ্বের অনেক দেশে অনুষ্ঠানটি দেখানো হয়। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া কিছু কিছু দেশে তাদের ভাষায় ডাবিং করে দেখানো হয়। অনুষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়াতেও সর্বাধিক জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান। দেশের নেটওয়ার্ক-টেন নামে একটি চ্যানেলে মাস্টার শেফ অস্ট্রেলিয়া প্রচারিত হয়। ২০১০ সালে প্রচারিত মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া সিজন টু দেশটির টেলিভিশন ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি দেখা ধারাবাহিক অনুষ্ঠান। চ্যানেল টেন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় একটা টেলিভিশন ও মিডিয়া নেটওয়ার্ক।

কিশোয়ার তোমার স্বপ্নটি ছোট নয়, মা!। অনেক বড় স্বপ্ন। দেশকে নিয়ে স্বপ্ন কখনই ছোট্ট হয় না। আবার দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতে পারে সে তো আরও বড় বিশাল মাপের ব্যক্তিত্ব! দেশ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখার যোগ্যতাও অনেকের হয় না!।

এই অনুষ্ঠানের বিচারকদের প্রত্যেকের রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা। এরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে জীবন থেকে, জীবন চলার পথ থেকে। অনুষ্ঠানের তিনজন বিচারক জক জনফ্রিলো, মেলিসা লিওং আর অ্যান্ড্রু অ্যালেন- এদের কারও জীবন অতীতে মসৃন ছিল না। প্রথম দুজনের মাতৃসুত্রের নাড়ি এদেশে প্রোথিত নয়, অন্য দেশে।

জক জনফ্রিলোর জন্ম স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। বাবা ইটালিয়ান, মা স্কটিশ। জকের বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর সে স্কটল্যান্ডের একটা রেস্তোরার কিচেনে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন। দুই বছর পরেই লেখাপড়া একেবারেই ছেড়ে দিয়ে স্কটল্যান্ডেরই একটা হোটেলের কিচেনে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ শুরু করেন। যখন তার মাত্র ১৭ বছর বয়স তখন সে প্রচন্ডভাবে হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়ে। হেরোইন আসক্ত জকের খিস্তি খাউরের জন্যে রেস্টুরেন্টের কাজ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। সে যখন কাজ থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসছে. রেস্টুরেন্টটির প্রধান শেফ জকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‌‌‌পৃথিবীর কোনো মান সম্মত রেস্টুরেন্টে কাজ করার যোগ্যতা তোমার নেই। কোনোদিনই তুমি কোনো ভদ্র রেষ্টুরেন্টে কাজ পাবে না, আমি বলে দিলাম'। জকের ভাষায় “That comment was like a red rag to a bull” । তার প্রতিজ্ঞা যেভাবেই হোক তাকে ভালো নামকরা রেষ্টুরেন্টে কাজ পেতে হবে। মোটামুটি ভালো একটা রেষ্টুরেন্টে কাজ পেয়েও গেল। তরুণ জক কাজ পেলো বটে, কিন্তু তার পকেটে কোনো অর্থ নেই, থাকার জায়গা নেই। সেই সারাদিনের কাজ শেষে রাতে ঐ রেষ্টুরেন্টের স্টোর রুমেরই মেঝেতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে নিলো। হেরোইন আসক্তি তার পিছু ছাড়লো না। জক জনফ্রিলো ২০০০ সালে অষ্ট্রেলিয়ার সিডনির একটা অভিজাত রেষ্টুরেন্ট থেকে হেড শেফ-এর একটা প্রস্তাব পেল। ঐ বৎসরের নিউ ইয়ারস ঈভে সে সিডনি এসে পৌছুলো। তার কাছে তখনও কয়েক পুরিয়া হেরোইন লুকানো। এয়ার পোর্টের ইমিগ্রেশনের বাইরে এসে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে রইলেন। তার ভাষায়, “I thought, ‘I’m emigrating to Australia. I will land in Australia in the year 2000 and it will be a clean sheet,’ and that was it.” তিনি হেরোইনের সাথে থাকা পুরিয়াগুলো পাশের ডাষ্টবিনে ফেলে দিলেন। সিডনির ভোরের বাতাস বুক ভরে টেনে নিয়ে । সাথে রইলো তার স্যুটকেস আর জন্মভূমি স্কটল্যান্ডের প্রতি তার ভালোবাসা। জক এখন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ও মেলবোর্নের কয়েকটি সেরা রেস্টুরেন্টের মালিক। আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। নিজেকে সফল টেলিভিশন ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

wFHBfdr.png


মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার বাছাই পর্বের প্রতিযোগিতায় কিশোয়ার, ছবি: মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইট

মেলিসা লিওং সিডনিতে সিঙ্গাপুর অভিবাসী বাবা-মার ঘরে জন্ম নেওয়া নারী, মনে প্রাণে ধারন করে তার পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব, তার আদি বাসভূমির সোদা গন্ধ তার বুকের ভেতরে। তার ভাষায় “I was always curious about my cultural heritage beyond what I knew about my family being from Singapore, with Chinese ancestry. Growing up in a predominantly white Australian community, with a few Greek and Italian families, I was always fascinated about how far and wide they knew their family tree”. অ্যাকাউন্টিং আর অর্থনীতিতে স্নাতক মেলিসা চাকরি শুরু করেন ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজিংয়ে। অধিকাংশ এশিয়ান ছেলেমেয়ের মতো মেলিসাও তার কালচার কে জেনেছে খাবারের মাধ্যমে। তাই ছোটবেলা থেকেই খাবারের প্রতি ভালোবাসা আর আগ্রহ তাকে ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজিং পেশা থেকে তাকে ফুডইন্ডাষ্ট্রিতে স্থায়ী করে দিয়েছে। সে এখন অস্ট্রেলিয়ায় একজন পরিচিত ফুড ক্রিটিক, ফুডবুক এডিটর আবার কিছু টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক।

অ্যান্ডি অ্যালেন মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ আসরের বিজয়ী। অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথওয়েলসে জন্ম নেওয়া অ্যান্ডি অ্যালেন নিজেও ছিল ২০১২ সালের অস্ট্রেলিয়া মাস্টারশেফ-এর প্রতিযোগী। ২৪ বৎসর বয়সের যুবক তখন ছিল শিক্ষানবিশ ইলেকট্রিশিয়ান। শিক্ষক বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া অ্যান্ডির তেমন একটা উপার্জন ছিল না । তার ইলেক্ট্রিশিয়ান শিক্ষানবিশের শেষ পর্যায়। আর একটা পরীক্ষা বাকী। পরীক্ষাটা পাশ করলেই সে প্রফেশনাল ইলেকট্রিশিয়ান হবে। এরই মাঝে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ আসরের অডিশন। পরীক্ষা না দিয়ে চলে এলেন সিডনি। অডিশনে অংশ নিলেন। বাছাই হলো প্রতিযোগী হিসাবে। শৈশব থেকেই রান্নার প্রতি আগ্রহ। অংশ নিলেন। বিজয়ী হলেন। হাতে পুরস্কারের বেশ কিছু অর্থ আসলো। ভাবলেন অনেক, সিদ্ধান্ত নিলেন। জীবনের সমস্ত সঞ্চয় নিয়ে সিডনি চলে এলেন। রেস্তোরা ব্যবসায় ইনভেস্ট করলেন। অমানুষিক পরিশ্রম করলেন। কখনও কিচেনের থালাবাটি হাড়ি পাতিল ধোয়ার কাজে, কখনও শেফ হিসাবে। এখন সে সিডনির নাম করা রেসটুরেন্ট Three Blue Ducks এর যৌথ মালিক। সঞ্চিত অর্থ কয়েক মিলিয়ন ডলার।

এখন আসি আসল প্রসঙ্গে যা দিয়ে শুরু করেছিলাম। টিভি অনুষ্ঠান আমার খুব বেশি দেখা হয় না। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ান টিভি চ্যানেলগুলোতে আমার দেখার মতো তেমন অনুষ্ঠানও চোখে পড়ে না। বাসার উনি বললেন, আমার কন্যা বললো- চ্যানেল টেন-এ মাস্টার শেফ-এর অনুষ্ঠানটি দেখ। এবার প্রতিযোগীদের ভিতর একজন বাংলাদেশি আছেন। বাংলাদেশি মেয়ে অংশ নেবে কোনো অনুষ্ঠানে- আর অনুষ্ঠানটি দেখব না, তা হতেই পারে না। মাস্টার শেফ অস্ট্রেলিয়া ২০২১ এর প্রথম পর্ব। অনুষ্ঠানটি দেখছি দুরু দুরু বুকে। কি করবে মেয়েটি? টিকবে তো নাকি প্রথমেই বাদ পড়ে যাবে! বেশ কয়েকজন প্রতিযোগীর রান্না প্রদর্শনের পর মেয়েটির পালা এল। কি চমৎকার মিস্টি চেহারা। এমন চেহারাই তো বাঙালি নারীর হওয়ার কথা। নাকে নাক ফুল চিরন্তন বাঙালি নারীর চেহারা। তার রান্না নিয়ে বিচারকদের সামনে এসে দাড়াতেই বিচারক মেলিসা এগিয়ে এসে একপর্যায়ে জিজ্ঞাসা করে , “কি স্বপ্ন নিয়ে এসেছো এই অনুষ্ঠানে”?

qlByXzo.png


চূড়ান্ত পর্বের পরিবেশনায় কিশোয়ার, ছবি: মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ফেসবুক পেজ

আবেগাপ্লুত কিশোয়ার বড় বড় চোখে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মেলিসার দিকে। বলে, ‘আমার স্বপ্নটা খুব সাধারণ, বাংলাদেশি খাবার তেমন একটা উপস্থাপন করা হয় না। আবার যাও হয়, তা ভারতীয় খাবারের সাথে মিশে যায়। আমার বাবা-মা প্রায় ৭০ বছর বয়সী। কিন্তু তাঁরা এখনো বাংলাদেশে রেখে আসা ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে রাখতে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। …. রান্না নিয়ে আমার স্বপ্ন হলো বাংলাদেশি একটি রান্নার বই লিখে যাওয়া। কারণ, আমি যদি এটা আমার সন্তানের জন্য রেখে না যাই, তবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া বাংলাদেশের সেই ঐতিহ্য আমার সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে।’

দেশের প্রতি কিশোয়ারের এই ভালোবাসা হৃদয় স্পর্শ করে মেলিসা আর জোকোর। তাদের অস্তিত্বেও বুঝি নাড়া দেয় তাদের মাতৃভূমির টান তাই বোধ অস্ফূট কন্ঠে মেলিসা ছলোছলো চোখে বলে, অপূর্ব সুন্দর স্বপ্ন। কিশোয়ারের মাছ আর কাঁচা আমের টক দেখে জক জনফ্রিলোর মন্তব্য ছিল, “আমি কল্পনা করতে পারছি এই রেসিপিটি তৈরি করা কতটা কঠিন। তবে এ বছরের আমার খাওয়া এটাই সেরা রেসিপি”।

জনৈকা নন্দিতা চক্রবর্তী The Indian Weekly তে ২২ এপ্রিল ২০২১ সংখ্যায় লিখেছেন, দীর্ঘ ১৩ বৎসর ধরে অনুষ্ঠানে কখনও কল্পনাতেও আনিনি যে এই অনুষ্ঠানে একদম খাটি বাংলাদেশি বা বাঙালি খাবার দেখতে পাব।

আনন্দ বাজার পত্রিকায় লিখেছে, “বাঙালি মানেই মাঝের ঝোল। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বসে যদি বাঙালিদের রান্নাবান্না নিয়ে আড্ডা জমে, তা হলে মাছের ঝোল থাকে একেবারে প্রথম সারিতে। তবে যাঁর কথা হচ্ছে, সেই বাঙালি নারী মাছের ঝোলের প্রতি তাঁর ভালবাসা অন্য স্তরে নিয়ে গিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় বসে মাছের ঝোল রেঁধে খাইয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন”।

GzRQ9Zn.png


বাছাই পর্বে কিশোয়ারের রান্না, ছবি: মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ফেসবুক পেজ

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নের বাসিন্দা কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। মেলবোর্নের মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে কমার্সে স্নাতক করা নারী লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব আর্টস থেকে স্নাতোকোত্তর করা এখন নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিজনেস ডেভেলপার হিসাবে কাজ করছে। কিশোয়ার চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়া এবং সমাজসেবার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত মুখ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কামরুল হোসাইন চৌধুরী ও লায়লা চৌধুরীর মেয়ে। এ দেশের পরিবেশে, এদেশের কালচার দেখে বড় হওয়া নারীটি তার বুকের ভিতর ধরে রেখেছে বাংলাদেশের জন্যে আবেগভরা ভালোবাসা। তাইতো বাংলাদেশ শব্দটা বলার সাথে সাথে তার চোখ ফেটে পানি আসে, গলা বুজে আসে, বাচ্চা মেয়ের মতো ফুপাতে থাকে। খাবারের পরিচয় দিতে গিয়ে সে “আমের ভর্তা” শব্দটা ই বলেছে। সে নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছে, তিনি এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশি খাবার ও স্বাদকে তুলে ধরতে চান। তিনি বাংলাদেশের স্থানীয় খাবারগুলোকে অস্ট্রেলিয়ার খাবারের মানচিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য জায়গায় পৌঁছে দিতে চান। কিশোয়ারের বিশ্বাস, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি খাবারগুলোকে তেমন একটা উপস্থাপন করা হয় না। এগুলো আরও মনোযোগ ও প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে।

কি চমৎকার কথা। দেশকে নিয়ে, মাতৃভূমিকে নিয়ে! কয়জন পারে এভাবে কথা বলতে! আর চাইলেই কি এভাবে কথা বলা যায়! এভাবে বলার জন্যে প্রয়োজন হয় দেশের প্রতি বুক ছেড়া ভালোবাসা ! কিশোয়ার দেখিয়ে দিলো দেশকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। দেশের প্রতি ভালোবাসা কিভাবে ছড়িয়ে দিতে হয় সকলের মাঝে। কিশোয়ার আমাদের শিখিয়ে দিলো।

আমরা কারা! আমরা ‍‍‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‍"এই ‌‌‌‍আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাচা"র দল। যাদের অনেকেরই কাজ, প্রবাসে দেশের বদনাম করা। যারা অনেকেই তিন কাল পার করে দেশ থেকে এসে এককাল নিয়ে কিংবা জীবনের অর্ধেক দেশে পার করে দেশের আলো বাতাসে বড় হয়ে, দেশের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এদেশে এসেছি, এসেই মনে হয়েছে বাংলাদেশ বসবাস যোগ্য কোনো দেশ নয়। এই আধমরাদের অনেকের আড্ডায়ই মুখরোচক বিষয় থাকে দেশ প্রসঙ্গ। অবশ্যই পজিটিভ কিছু কখনই না। দেশ প্রসংগ মানেই- দেশের ইতিহাস বিকৃতি, স্বাধীনতা ও মানবতা বিরোধীদের বিচাররের বিরোধীতা, ভারতীয় আগ্রাসন, আর দুর্নীতি। এই আধমরাদের একটা শ্রেণি স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে শুরু করে, দেশের উন্নয়ন- যে কোনো ইস্যুতেই নেতিবাচক মন্তব্যের জন্যেই যেন মুখিয়ে থাকেন। আবার অনেকেই মনে করেন আমরা তো আর বাংলাদেশি নই, আমরা অস্ট্রেলিয়ান বা আমেরিকান, কানাডিয়ান, বা ব্রিটিশ। বাংলাদেশ নিয়ে শুধু শুধু সময়ের অপচয় কেন হে বাপু! এদের অনেকের কাছেই বাংলাদেশের জন্ম ইসলাম ধর্মের জন্যে অভিশাপ, রাজাকার আল-বদরদের যোদ্ধাপরাধের শাস্তিতে তাদের চোখে মুখে, শোকের ছায়া নেমে আসে । এদের কেউ কেউ দেশে যেয়ে ঈদের নতুন চাঁদ দেখার মতো ঢাকায় "র" এর একটা অফিস দেখে এসেছেন সেই গল্প করেন, কেউ বলেন একটা না তিনি দুইটা দেখেছেন্, কেউ বলেন না তিনি তিনটা দেখেছেন। এই শ্রেণির কারো কারো সামনে যদি পাকিস্তানকে নিয়ে সমালোচনামূলক কথা বলা হয়, তাদের মুখ হয়ে যায় গ্রামে কাঠের উনুনে ধান সিদ্ধ করার হাড়ির তলার মতো। এরা আজও বিশ্বাস করেনা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, শহীদ বুদ্ধিজীবিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। একটা তলাহীন ঝুড়ির দেশ উন্নয়নশীল দেশের সারিতে এসে গিয়েছে একথা অনেকের আড্ডায়ই আলোচনা হয় না।

নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহসী পদক্ষেপ, “ডেল্টা প্ল্যান” “পায়রা বন্দর” প্রকল্পের মতো আকাশচুম্বী, স্বপ্নছোঁয়া উন্নয়ন মেট্রোরেল এগুলোর কিছুই এসব আড্ডায় আসে না, জায়গা পায় না। নিজেদের আড্ডায় দেশের কোনো কিছুই যেখানে স্থান পায় না সেখানে কম্যুনিটির বাইরের মানুষের কাছে, এদের মিডিয়াতে, দেশকে তুলে ধরার সময় কোথায়! অনাবশ্যক তো বটেই।

লেবু কচলাতে কচলাতে তেতো হয়ে যায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে বলতে বলতে লিখতে লিখতে লেবু নয় আমার এই প্রবাস জীবন কুইনাইন করে ফেলেছি। বিরাগভাজন হয়েছি, পরিবার পরিজনকে পুরাতন বন্ধুবান্ধবহীন করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। এখন এদের কথা কানে তুলি না, কানে এলেও মনে মনে আউড়ে যাই.. “জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন...” । আমি জানি, আমার আশা, আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই শ্রেণির এই আধমরাদের আস্তাকুড়ে ফেলে দেবে। আমরা যারা রক্তভরা বিফস্টেক খেতে খেতে "বাংলাদেশের সালুনের" গীবত গাই, আমের ভর্তা দিয়ে মাছ রান্না করে মাস্টারশেফ এর বিচারকমন্ডলীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কিশোয়ার, আমাদের তরুণিমার প্রতিনিধি।

কিশোয়ার তোমার স্বপ্নটি ছোট নয়, মা!। অনেক বড় স্বপ্ন। দেশকে নিয়ে স্বপ্ন কখনই ছোট্ট হয় না। আবার দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতে পারে সে তো আরও বড় বিশাল মাপের ব্যক্তিত্ব! দেশ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখার যোগ্যতাও অনেকের হয় না!। তুমি নিজেই তো "দেশ"। পরমকরুণাময়ের কাছে দোয়া করি, প্রার্থণা করি তোমার স্বপ্ন পুরণ হোক। আমাদের দেশজ সংস্কৃতিকে বুকে আকঁড়ে রেখ, আমাদের খাবার, আমাদের কালিনারী অত্যন্ত বিজ্ঞান ভিত্তিক, অত্যন্ত স্বাদের । দেখবে আমাদের ভাষা , আমাদের সংস্কৃতি কত সুন্দর, কত মধুর। আমাদের ভাষা সংস্কৃতিকে ভালোবাস দেখবে তোমাদের জীবন কত সুন্দর হয়ে উঠবে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, বাংলাদেশকে কখনও গালি দিও না। তোমাদের প্রবাসে জন্ম নেয়া সন্তানদের অথবা তাদের সন্তানদেরও মাতৃভূমি কিন্তু বাংলাদেশ। দেশটা এখন হয়তো গরীব অর্থনৈতিকভাবে। কিন্তু তোমাদের মত সন্তান যে জননীর আছে সেকি আসলেই গরীব ? জননীর দুর্নাম, জননী জন্মভূমিকে “বসবাসের অযোগ্য ” বলে আস্তাকুড়ে ফেলে দেওয়ার ঘৃন্য মানসিকতা যাদের, তাদের উপর বজ্র- কঠিন হুংকারে গর্জে ওঠো। আজ থেকে তোমাদের বুকের ভিতর, তোমাদের চেতনায়, তোমাদের মননে তোমাদের রক্তে একটি গানই বেজে উঠুক

……….

তোরে হেথায় করবে সবাই মানা।

হঠাৎ আলো দেখবে যখন

ভাববে এ কী বিষম কাণ্ডখানা।

সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,

শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,

সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে

লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।

আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা।

* সাদিকুল আওয়াল, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
 
আমার কেন যেন মনে হয় দেশ থেকে বেড় হয়ে কিছু করলে নামডাক হয় কিন্তু একই কাজ দেশে করলে কোনো নাম হয় না। হতে পারে আমার চিন্তা ভুল
 

Users who are viewing this thread

Back
Top