What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other বাংলা চলচ্চিত্রে লোককাহিনি (1 Viewer)

yyvpIa3.jpg


আমাদের বাংলা সংস্কৃতিতে ফোক বা লোককাহিনি বহু বহু আগে থেকেই জড়িয়ে আছে। গ্রাম বাংলার নদী, খাল-বিল, খোলা মাঠ-প্রান্তরে কোন গাছের নিচে বসা রাখালের পাগল করা বাঁশির সুর, রাতের উঠোনে জারি-সারি-ভাটিয়ালি গানের আসর যেন এক সময় বহন করতো আবহমান বাংলার রূপ, সে সময় এসব ফোক লোককাহিনি তখনকার মানুষদের রূপ রসের সুস্থ বিনোদন জুগিয়েছে।

যার প্রভাব আমাদের চলচ্চিত্রেও পড়েছিল দারুণভাবে, কল্পনায় আঁকা সেসব লোককাহিনির একেকটি চরিত্র যখন সেলুলয়েডের ফিতায় বাস্তবের রূপ নিয়ে ধরা দিয়েছে। তখন অবাক বিস্ময়ে মনের আনন্দ নিয়ে মন ভরে দর্শকেরা তা উপভোগ করেছে, বহু বহু মানুষদের সুস্থ বিনোদনের মনের খোরাক মিটিয়েছে এই লোককাহিনি নির্ভর চলচ্চিত্রগুলো। শুধু যে ফোক লোককাহিনি নির্ভর চলচ্চিত্র তা নয় পাশাপাশি কল্প রুপকথাভিত্তিক কাহিনি নিয়েও বহু চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রে!

১৯৬৫ সালে ‘রূপবান’ (০৫/১১/১৯৬৫) নামে প্রথম লোককাহিনিভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক সালাউদ্দিন সাহেব, ছবিটি সে সময়ে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল, তুমুল ব্যবসাও করেছিল ছবিটি। এক রাজ্যের দরবেশ হুকুম করেন রাজার ১২ দিনের শিশুপুত্রকে ১২ বছরের এক কন্যার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ১২ বছরের জন্য গভীর জঙ্গলে পাঠাতে হবে। রাজা দরবেশের হুকুম মতে তার রাজ্যের উজিরের ১২ বছর বয়সী মেয়ের (রূপবান) সঙ্গে তার ১২ দিনের শিশুপুত্রের বিয়ে দিয়ে বনবাসে পাঠিয়ে দেন। গভীর জঙ্গলে নানা বিপদ আপদের মধ্যে রূপবান তার ১২ দিন বয়সী স্বামীকে কোলে করে বড় করতে থাকেন। এ রকম অতি চমকপ্রদ গল্পে নির্মিত ‘রূপবান’ ছবিটি দেখতে সে সময়ের দর্শকেরা সিনেমা হলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। ছবিটি সে সময়ে এতটাই আলোড়ন তুলেছিল যে ছবির নায়িকা সুজাতা যেই বাঁশ ধরে গান গেয়েছিলেন সেই বাঁশটি পরে নিলামে উঠেছিল, এবং কোন একজন সে সময়ের ৫০০ টাকা দিয়ে তা কিনেও নিয়েছিলেন। ছবিটির অভাবনীয় সাফল্যে নির্মাতারাও ঝুঁকে পড়লেন এ ধরনের ছবি নির্মাণে, পরের বছর পরিচালক সফদার আলী ভূঁইয়া বানালেন ‘রহিম বাদশা ও রূপবান’, ইবনে মিজান ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ও ‘জরিনা সুন্দরী’, সৈয়দ আউয়াল ‘গুনাই বিবি’ ও জহির রায়হান বানালেন ‘বেহুলা’, সে বছরই পরিচালক সালাউদ্দিন তার ‘রূপবান’ উর্দুতে মুক্তি দেন!

gihV0e4.jpg


১৯৬৭ সালে পরিচালক আজিজুর রহমান প্রথম ফ্যান্টাসিকে প্রাধান্য দিয়ে রূপকথা ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেন ‘সাইফুলমূলক বদিউজ্জামান’, পরি পাহাড় পর্বত দৈত্য দানব সাত সমুদ্র তের নদী পার হওয়া ছবির নায়ককে এমন চমকপ্রদ কাহিনি ও দৃশ্যে দেখে দর্শকরাও মোহিত হয়ে উপভোগ করেছে মনভরে। এ ছবির সাফল্যেও নির্মাতারা আকৃষ্ট হন রূপকথা ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণে। একদিকে ফোক লোককাহিনি নির্ভর চলচ্চিত্র অন্য দিকে রূপকথা ফ্যান্টাসি ছবি নির্মাণে সে সময়ের পরিচালকরা যেন ব্যস্ত হয়ে ওঠেন এ ধরনের ছবিগুলো নির্মাণের। যার প্রেক্ষিতে একের পর এক নির্মাণ হতে থাকে ইবনে মিজানের ‘জরিনা সুন্দরী’, ‘পাতালপুরীর রাজকন্যা’, ‘আমীর সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী’, ‘রাখাল বন্ধু’ (সাদাকালো), ‘রঙিন রাখাল বন্ধু’, ‘সতী নাগ কন্যা’, ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’, ‘পাতাল বিজয়’, ‘সাপুড়ে মেয়ে’, ‘রঙিন জরিনা সুন্দরী’, ‘বসন্ত মালতী’, ‘নাগিনীর প্রেম’, সফদার আলী ভূঁইয়ার ‘কাঞ্চন মালা’, আজিজুর রহমানের ‘মধুমালা’, ‘শিষ মহল’, ‘কাঞ্চন মালা’, ‘আলীবাবা ৪০ চোর’, খান আতাউর রহমানের ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘অরুণ বরুণ কিরণ মালা’, রহিম নওয়াজের ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’, মহিউদ্দিনের ‘গাজীকালু চম্পাবতী’, শহীদুল আমিনের ‘রাজকুমারী চন্দ্রবান’, ‘শাহজাদী গুলবাহার’, নূরুল হক বাচ্চুর ‘কুচবরণ কন্যা’ (সাদাকালো), শফি বিক্রমপুরীর ‘আলাদীন আলিবাবা সিন্দাবাদ’, সফদার আলী ভূঁইয়ার ‘রসের বাইদানী’, ফয়েজ চৌধুরীর ‘মালকাবানু’, মাসুদ পারভেজের ‘যাদু নগর’, ‘নাগ পূর্ণিমা’, আজিজ মেহেরের ‘আকাশ পরী’, মতিউর রহমান বাদলের ‘নাগিনী কন্যা’, শামসুদ্দিন টগরের ‘মহুয়া সুন্দরী’, ‘বানজানার’, ‘সতী কমলা’, ‘রতন মালা’, মিলন চৌধুরীর ‘রঙিন সাত ভাই চম্পা’, দারাশিকোর ‘সর্পরানী’, স্বপন সাহার ‘যাদুমহল’, গাফফার খানের ‘সাগরভাসা’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘বেহুলা লখিন্দর’, সাইদুর রহমান সাইদের ‘আলোমতি প্রেমকুমার’, ‘বেদকন্যা পঙ্খীরানী’, কাজী হায়াতের ‘রাজবাড়ী’, ‘বে রহম’, এফ কবির চৌধুরীর ‘পদ্মাবতী’, ‘সওদাগর’, ‘মর্জিনা’, হারুনুর রশীদের ‘গুনাই বিবি’, মো. শাহজাহানের ‘পরীস্থান’, আবদুস সামাদ খোকনের ‘ঝিনুক মালা’, ‘শিরি ফরহাদ’, মতিউর রহমান পানুর ‘নাগ মহল’, আবদুল লতিফ বাচ্চুর ‘দ্বীপকন্যা’, তোজাম্মেল হক বকুলের ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘শঙ্খমালা’, ‘গাড়িয়াল ভাই’, ‘অচিন দেশের রাজকুমার’, ‘বাঁশিওয়ালা’, ‘নাচনেওয়ালী’, রফিকুল বারী চৌধুরীর ‘চন্ডীদাস রজকিনী’, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘নাচে নাগিন’, ‘হাতী আমার সাথী’, ‘রূপসী নাগিন’, ‘নাচ নাগিনা নাচ’, ‘নাগরানী’, মোস্তফা আনোয়ারের ‘নাগিনী সাপিনী’, ‘কাশেম মালার প্রেম’, ‘পুষ্পমালা’, এফ এ খান সবুজের ‘নয়া বাইদানী’, এ কে সোহেলের ‘খায়রুন সুন্দরী’র মতো জনপ্রিয় সব ছবিগুলো!

nXLPGln.jpg


বাংলা চলচ্চিত্রে এই ফোক লোককাহিনি ও কল্প রুপকথাভিত্তিক চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সফল পরিচালক ছিলেন জনাব ইবনে মিজান সাহেব। তার বেশির ভাগ ছবির বৈশিষ্ট্যই ছিল এই ঘরানার, সঙ্গে এফ কবির চৌধুরী, আজিজুর রহমান, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, শামসুদ্দিন টগর, তোজাম্মেল হোসেন বকুলসহ আরো বহু নির্মাতারা এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।

দুর মাঠে রাখালের বাঁশির সুরে পাগল পারা রাজকন্যা, সমুদ্রগর্ভে অপরূপ কোন রূপসীর প্রেমে রাজকুমার, বিশাল দৈত্যের হাতের মুঠোয় আস্ত এক রাজপ্রাসাদ, চাদর বিছিয়ে আকাশ দিয়ে উড়ে উড়ে পরীদের রাজ্যে যাওয়া, পানির নিচে মানুষের বসবাস, সুন্দরী পরীদের আস্তানা, সামান্য বেদে কন্যার সঙ্গে রাজকুমারের প্রেম, বিশাল বিশাল রাজ প্রাসাদ, বিভিন্ন জীব জন্তুর সঙ্গে ঢাল তলোয়ারের ঝনঝনানি আর নায়ক নায়িকাদের আলো ঝমঝমের বাহারী পোশাকে যেন এ ধরনের প্রতিটি ছবিকেই করতো উজ্জ্বল আলোকিত!

নিম্নে এ ধরনের কিছু ছবি সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো:

রাখাল বন্ধু: ১৯৬৮ সালে পরিচালক ইবনে মিজান তৈরি করেন এক চমকপ্রদ কাহিনি নিয়ে চলচ্চিত্র ‘রাখাল বন্ধু’ (১০/০৩/১৯৬৮)। অভিনয়ে ছিলেন মরহুম আজিম, সুজাতা, সুচন্দা মান্নান, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এক দরিদ্র রাখালের বাঁশির সুরের প্রেমে পড়ে রাজকন্যা, প্রতিদিন রাখালের বাঁশির সুরের টানে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে আসে সে। একসময় তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। শুরু হয় রাজা, রাজকন্যা আর গরিব রাখালের দ্বন্দ্ব। ছবিটি সে সময়ে দারুণভাবে সাড়া জাগিয়েছিল, হয়েছিল ব্যবসায়িকভাবে সফল। পরবর্তীতে পরিচালক ইবনে মিজান আবার সাত্তার ও জিনাতকে নিয়ে ‘রঙিন রাখাল বন্ধু’ (১০/০৯/১৯৮৬) নামে ছবিটির রিমেক করেন!

সুয়োরানী দুয়োরানী: ১৯৬৮ সালে পরিচালক রহিম নেওয়াজ তৈরি করেন ফ্যান্টাসি ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’ (০৮/০৮/১৯৬৮)। অভিনয়ে ছিলেন সুচন্দা, রাজ্জাক, বেবী জামান প্রমুখ। রাজ্যের এক গহীন জঙ্গলে হরিণ শিকার করতে গিয়ে রাজা এক রাক্ষসী নারীর কবলে পড়েন এবং সেই রাক্ষুসীর কারণে কীভাবে তার রাজার প্রথম স্ত্রী ও তার পুত্রকে দেশ ছাড়া হতে হয় তা নিয়েই চলচ্চিত্রটি (তথ্য দোহা ভাই)। ছবিটি রূপকথার হলেও মিথ্যা বা মন্দের জয় যে কখনোই হয় না, ভালো বা সত্যের জয় অনিবার্য, তারই পরিচয় পাওয়া যায়।

বেদের মেয়ে: নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে’ (১৩/০৬/১৯৬৯) ছবিতে ছিলেন আজিম, সুজাতা, রোজি ও নারায়ণ চক্রবর্তী। বেদে বহরে বেড়ে ওঠা এক সুন্দরী কন্যার সঙ্গে রাজার ছেলে প্রেম-বিরহের ঘটনাই ছিল মূল গল্প।

বেদের মেয়ে জোছনা: বাংলা চলচ্চিত্রে লোককাহিনি নির্ভর ছবির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তোলে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ (০১/০৬/১৯৮৯), যা সাদাকালো ‘রূপবান’কেও হার মানিয়েছিল। বেদে বহরের সুন্দরী কন্যার সঙ্গে রাজার ছেলের প্রেম উপাখ্যান নিয়ে বহু ছবি নির্মাণ হলেও ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ আজও সর্বোচ্চ জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে দলিলপ্রাপ্ত। ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আজও রেকর্ড সৃষ্টি করে আছে। ছবিটি চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী সমীকরণের সব ওলট পালট করে দেয়। একেবারে সীমিত বাজার থেকে ছবিটি অভাবনীয় সাফল্যে ভেসে যায়, ৫০টি প্রিন্ট অনেক বছর দেশের প্রতিটি হলে কয়েকবার করে প্রদর্শিত হয়। দেশের সর্ববৃহৎ সিনেমা হল যশোরের ‘মনিহারে’ টানা ছয় মাস দেখানো হয়, আবার রাজশাহীর ‘উপহার’ হলেও পাঁচ মাসের বেশি চালানো হয়েছিল। তাছাড়া দেশের প্রায় সকল হলেই ছবিটি মাসকে মাস চলার রেকর্ড ছিল। জনপ্রিয়তা এতটাই দাঁড়িয়েছিল যে অনেক হলেই চারটি শোর পরিবর্তে পাঁচটি করে শো চালাতেও নাকি হয়েছিল!

OUngF1h.jpg


এ ছবিটির পাশাপাশি অর্থাৎ একই বছরে (১৯৮৯) মুক্তি পায় ফোক ফ্যান্টাসি ছবির রাজা ইবনে মিজান পরিচালিত ‘সাপুড়ে মেয়ে’, ‘আলাল দুলাল’ ও ‘সাগর কন্যা নামের তিনটি ফোক-ফ্যান্টাসি ভিত্তিক ছবি। পরিচালক সাইদুর রহমান সাইদ বানান ‘আলোমতি প্রেমকুমার’, তবে ছবিগুলো কোনটিই ‘বেদের মেয়ে জোছনা’কে টপকাতে পারেনি।

টপকাতে না পারলেও ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র এমন সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে নব্বই দশকে নির্মাতাদের মধ্যে ফোক ছবির নির্মাণে ব্যাপক প্রতিযোগিতা দেখা যায়। যার অধিকাংশ আগের করা রিমেক বা রঙিন আকারে করা। গল্পে তেমন নতুনত্ব না থাকলেও আগের গল্পগুলোকেই ঘষে মেজে রঙিনরূপে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছিল। নব্বই দশকের শুরুতেই পরিচালক শামসুদ্দিন টগর সাহেব নির্মাণ করেন ‘রতনমালা’, ছবিটিকে তিনি অনেকটা মডার্নভাবে উপস্থাপন করেন। এক দরবেশের অভিশাপে ছবির নায়ক রতন সাপ হয়ে যায়, একপর্যায়ে ছবির নায়িকা নাগিন কন্যার দ্বন্দ্ব শুরু হয়, বেদে সর্দার শেষে তাদের মিল করে দেয়!

নব্বই দশকে এ ধারার যেসব ছবি নির্মিত হয় তার মধ্যে আছে মোস্তফা আনোয়ারের ‘কাশেম মালার প্রেম’, ‘কান্দো কেন মন’ জিল্লুর রহমানের ‘মোহনবাঁশি’, স্বপন চৌধুরীর ‘মনিকাঞ্চন’, শাহজাহান আকন্দের ‘কুচবরণ কন্যা মেঘবরণ কেশ’, ফয়েজ চৌধুরীর ‘রাজার মেয়ে বেদেনী’, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর ‘আয়না বিবির পালা’, তোজাম্মেল হক বকুলের ‘রঙ্গিলা’, ‘গাড়িয়াল ভাই’, ‘শঙ্খমালা’, ‘বাঁশিওয়ালা’, ‘অচিন দেশের রাজকুমার’, পাগল মন’, জিল্লুর রহমানের ‘বনবাসে বেদের মেয়ে জোছনা’, আলমগীর কুমকুমের ‘জেলের মেয়ে রোশনী’, কাজী মোরশেদের ‘প্রেম যমুনা’, মতিউর রহমানের ‘প্রেমের মরা জলে ডুবে না’, ‘মোহনমালা’, জীবন রহমানের ‘গহর বাদশা বানেছা পরী’, শফিউল আজমের ‘বিষের বাঁশী’, মতিন রহমানের ‘চাঁদকুমারী চাষার ছেলে’, এম এ খানের ‘মধু পূর্ণিমা’, এম এ কাশেমের ‘বাহরাম বাদশা ও বি এইচ নিশানের ‘রাজারানী’।

gsxOrFD.jpg


পরিচালক এ কে সোহেল ও মৌসুমী

এ ধারার সর্বশেষ সফল ছবি ‘খায়রুন সুন্দরী’(১৬/০৭/২০০৪), পরিচালক ছিলেন এ কে সোহেল। ছবিটি জামালপুরের এক বেদনাবিধুর কাহিনি থেকে নির্মিত, ৮৮টি ছবি মুক্তির মধ্যে এই ‘খায়রুন সুন্দরী’ সেরা ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র হিসেবে উঠে এসেছিল। সবকটি গানও ছিল দারুণ জনপ্রিয়, গ্রাম-গঞ্জ, হাটে-বাজারে সব জায়গাতেই শোনা যেতো বিখ্যাত গান ‘খায়রুন লো, তোর লম্বা মাথার কেশ, চিরুল দাঁতের হাসি দিয়া পাগল করলি দেশ, খায়রুন লো’। প্রধান চরিত্র খায়রুনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল মৌসুমী, সঙ্গে ফেরদৌস দিলদার ও এটি এম শামসুজ্জামান। খায়রুনরূপী মৌসুমীর রূপ সঙ্গে ছবির করুণ কাহিনি আর পাগল করা সব গানে ছবিটি দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল দেশের সব হলে। তবে ছবিটির মূল দর্শক ছিল নারীরা। সে সময় বেশ বন্যাও বয়ে যাচ্ছিল বিভিন্ন জেলাতে, তারপরও নারীরা বন্যার পানি উপেক্ষা করে নৌকা, ভেলা, কোমর পানি পাড়ি দিয়েও সিনেমা হলে গেছে। বন্যাও আটকাতে পারেনি ‘খায়রুন সুন্দরী’র দর্শকদের, শতকরা ৬০% থেকে ৭০% মহিলা দর্শকের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল হলগুলোতে। এমনও শোনা গেছে, মহিলা দর্শকের ভিড় সামলাতে না পেরে শেরপুরের কাকলী সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ নাকি শুধুমাত্র মহিলা দর্শকদের জন্য শোর ব্যবস্থা করেছিল, যেন বানের পানি আর মহিলাদের চোখের পানিতে ভাসছিল ‘খায়রুন সুন্দরী’।

ErX9x0X.jpg


এক সময়ের এই ফোক-ফ্যান্টাসি লোককাহিনি নির্ভর ছবিগুলো হল থেকে মানুষদের মনের ভেতর রং মাখিয়ে দিয়েছিল, বহু বহু মানুষের ভালো লাগার ভালোবাসার নাম হয়ে ছিল। আজ আর রাখালের বাঁশির সুরে কোন রাজকন্যার ঘুম হারাম হয় না, বসে না রাতের উঠোনে জারি-সারি, পালাগানের আসরভ হলের বিশাল পর্দায় ভেসে ওঠে না কোন ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির চলমান চিত্র। আধুনিকতায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়, তারপরও লোককাহিনির সেইসব চলচ্চিত্র বন্দী থাকবে যুগ থেকে যুগান্তরে মানুষের মনের পাতায়!

(লেখার কিছু তথ্য সংগৃহীত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top