devilsdong
Member
১.
লীলানগর জায়গাটি আজ থেকে দশ এগারো বছর আগেও পুরোপুরি গ্রামীন এলাকার মধ্যে পড়ত।
কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নর্থ-সেকশনের ট্রেন ধরে উত্তর বারাসতে আসতে হত। তারপর সেখান থেকে ট্রেন বদল করে হাসনাবাদ যাবার গাড়ি ধরে পৌনে এক ঘন্টা মতো যাত্রা করে চলে আসতে হত মালতিপুর নামে একটি স্টেশনে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে অথবা ভ্যানরিক্সায় বেশ অনেক কিলোমিটার অতিক্রম করলেই তবে মিলতো সুসজ্জিত সবুজে ভরা গ্রামটির দেখা।
তবে বিগত দশ বছরে মানচত্র ও পটভূমিকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে রেলের পরিধি, এসেছে নতুন অনেক গাড়ি। এখন শিয়ালদহ থেকে মালতিপুর আসার জন আর বারাসত জংশন থেকে গাড়ি বদল করতে হয় না। সরাসরি হাসনাবাদের গাড়িই আপনাকে পৌঁছে দেবে এই স্টেশনটিতে।
মালতিপুর স্টেশনে নামলেই প্র্রথমেই যা দেখতে পাবেন আপনি, তা হলো স্টেশনের বাইরেই উন্মুক্ত অবারিত সবুজ প্রান্তর!… লম্বা তালগাছ, নারিকেল গাছের ভিড়, আর শান্ত নির্লিপ্ত প্রাঙ্গনে স্নিগ্ধতার আঁচড় টেনে নীল ভেড়ি।
লীলানগরে যেতে হলে আপনাকে নামতে হবে মালতিপুর স্টেশনে। সেখান থেকে উঠতে হবে ভ্যানরিক্সায়। তবে যুগের কল্যানে এখন আপনি ভ্যানরিক্সার সাথে সাথে পাবেন মোটর-চালিত ভ্যানরিক্সা ও অটো-রিক্সোও।
দু-পাশে সবুজ গাছের ঝারি, ছোট বড় হলুদ স্কুলবাড়ি, থেকে থেকেই মুরগির পোল্ট্রি ফার্ম, সূক্ষ্ম কচুরি-পানা জমে যাওয়া ছোট ছোট সবুজ পুকুরের আনাগোনা, হাজারো রকমের পাখির ডাক। যেতে যেতে দূরে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন ছড়ানো ছিটানো কিছু ইঁটভাটা, আর অগুন্তি মাছের ভেড়ি।
তবে প্রযুক্তির উন্নতির ছাপ গত ক-বছরে মালতিপুরেও পড়েছে বলা বাহুল্য। তাই ওপরে বর্ণিত দৃশ্যমালার সাথে সাথে আপনি পাবেন বিক্ষিপ্ত কিছু বাড়ির উপরে ডিশ-এন্টেনা, মোবাইলের টাওয়ার। স্টেশনের একটু কাছে থাকলে দফায় দফায় রিচার্জ বুথ এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের বিজ্ঞাপন। তাছাড়া লীলানগর যাবার পথও এখন সম্পূর্ণ পিচে বাঁধানো, মসৃণ।
তিরিশ মিনিট-পৌনে এক ঘন্টা পর আপনি এসে উপস্থিত হবেন লীলানগরে। প্রথমেই দেখতে পাবেন এখানে আপনি মাছের আরত। নাক চেপে কিছুটা দূর অতিক্রম করলেই সবুজ ডেকে নেবে আপনাকে তার নিজস্ব ছন্দে। ইন্টারনেট, টেলিফোন, মোবাইল, কেবল টিভি সবই এখানে পৌঁছে গিয়েছে, তা সত্ত্বেও লীলানগর ধরে রেখছে কোন এক আশ্চর্য উপায়ে তার গ্রামীন সনাতনতা। রাঙ্গা, নুড়ি বিছানো পথ দিয়ে হেঁটে যাবেন আপনি দু-পাশে নানাবিধ গাছের ছাউনির আরামে হাঁটতে হাঁটতে। এক অপরূপ নৈঃশব্দে ও প্রকৃতির আন্তরিক সৌরভে স্নিগ্ধ হবে আপনার মন।
লীলানগরের সনাতনতার অন্যতম প্রতিক হচ্ছে তার জমিদারবাড়ি। এখন বদ্রিনাথের আমলেও তার শৌর্য ও মাহাত্ম কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। যদিও এখানে ওখানে খসে পড়েছে ইঁটের অবয়ব, বিশাল প্রাসাদোপম বাড়িটির পূর্ব কোণের একটি বিশেষ অংশ অশ্বথের আলিঙ্গনে প্রাচীনতা লাভ করেছে যেন একটু বেশিই অন্যদের থেকে।
পুরনো লোহার জংধরা গেটে হাত দিয়ে চাপলেই শুনতে
পাবেন আপনি যেন দীর্ঘযুগের আহ্বান বয়ে আনা সেই
পরিচিত ক্যাঁচ করে শব্দ।
তারপরই এসে পড়বেন আপনি জমিদারবাড়ির বিখ্যাত বাগানে। যেখানে প্রতিনিয়ত কুড়ি-জন মালি ও শ্রমিক নিযুক্ত বিভিন্ন জাতীয় গাছের বর্নাঢ্য, মন অবশ করে দেওয়া সমারোহের প্রাচুর্য অক্ষুন্ন রাখার জন্য।
বাগানের মাঝখান দিয়ে নুড়ি-বিছানো পথ দিয়ে হেঁটে গিয়ে আপনি হাজির হবেন বিশাল কারুকার্যমন্ডিত সদর দরজায়। যার ভিতরে যাওয়া আসা করার অধিকার মুষ্টিমেয় কিছু লোকের মধ্যেই আবদ্ধ।
এই অট্টালিকাসম বাড়িটির দু-তলায় একটি আধখোলা জানালা দিয়ে এসে পড়েছে সকালের স্নিগ্ধ রোদের আলো। জানালা দিয়ে এসে পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে তা শ্বেতপাথরের মেঝের উপরে।
জানালার ভিতরের সকালের নবীন আলোয় ও আঁধারের লুকচুরিতে ভরা ঘরের ভিতরে যদি তাকানো যায় তাহলে চোখে পড়বে একটি অন্যরকম, অভূতপূর্ব দৃশ্য।…
লীলানগর জায়গাটি আজ থেকে দশ এগারো বছর আগেও পুরোপুরি গ্রামীন এলাকার মধ্যে পড়ত।
কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নর্থ-সেকশনের ট্রেন ধরে উত্তর বারাসতে আসতে হত। তারপর সেখান থেকে ট্রেন বদল করে হাসনাবাদ যাবার গাড়ি ধরে পৌনে এক ঘন্টা মতো যাত্রা করে চলে আসতে হত মালতিপুর নামে একটি স্টেশনে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে অথবা ভ্যানরিক্সায় বেশ অনেক কিলোমিটার অতিক্রম করলেই তবে মিলতো সুসজ্জিত সবুজে ভরা গ্রামটির দেখা।
তবে বিগত দশ বছরে মানচত্র ও পটভূমিকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে রেলের পরিধি, এসেছে নতুন অনেক গাড়ি। এখন শিয়ালদহ থেকে মালতিপুর আসার জন আর বারাসত জংশন থেকে গাড়ি বদল করতে হয় না। সরাসরি হাসনাবাদের গাড়িই আপনাকে পৌঁছে দেবে এই স্টেশনটিতে।
মালতিপুর স্টেশনে নামলেই প্র্রথমেই যা দেখতে পাবেন আপনি, তা হলো স্টেশনের বাইরেই উন্মুক্ত অবারিত সবুজ প্রান্তর!… লম্বা তালগাছ, নারিকেল গাছের ভিড়, আর শান্ত নির্লিপ্ত প্রাঙ্গনে স্নিগ্ধতার আঁচড় টেনে নীল ভেড়ি।
লীলানগরে যেতে হলে আপনাকে নামতে হবে মালতিপুর স্টেশনে। সেখান থেকে উঠতে হবে ভ্যানরিক্সায়। তবে যুগের কল্যানে এখন আপনি ভ্যানরিক্সার সাথে সাথে পাবেন মোটর-চালিত ভ্যানরিক্সা ও অটো-রিক্সোও।
দু-পাশে সবুজ গাছের ঝারি, ছোট বড় হলুদ স্কুলবাড়ি, থেকে থেকেই মুরগির পোল্ট্রি ফার্ম, সূক্ষ্ম কচুরি-পানা জমে যাওয়া ছোট ছোট সবুজ পুকুরের আনাগোনা, হাজারো রকমের পাখির ডাক। যেতে যেতে দূরে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন ছড়ানো ছিটানো কিছু ইঁটভাটা, আর অগুন্তি মাছের ভেড়ি।
তবে প্রযুক্তির উন্নতির ছাপ গত ক-বছরে মালতিপুরেও পড়েছে বলা বাহুল্য। তাই ওপরে বর্ণিত দৃশ্যমালার সাথে সাথে আপনি পাবেন বিক্ষিপ্ত কিছু বাড়ির উপরে ডিশ-এন্টেনা, মোবাইলের টাওয়ার। স্টেশনের একটু কাছে থাকলে দফায় দফায় রিচার্জ বুথ এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের বিজ্ঞাপন। তাছাড়া লীলানগর যাবার পথও এখন সম্পূর্ণ পিচে বাঁধানো, মসৃণ।
তিরিশ মিনিট-পৌনে এক ঘন্টা পর আপনি এসে উপস্থিত হবেন লীলানগরে। প্রথমেই দেখতে পাবেন এখানে আপনি মাছের আরত। নাক চেপে কিছুটা দূর অতিক্রম করলেই সবুজ ডেকে নেবে আপনাকে তার নিজস্ব ছন্দে। ইন্টারনেট, টেলিফোন, মোবাইল, কেবল টিভি সবই এখানে পৌঁছে গিয়েছে, তা সত্ত্বেও লীলানগর ধরে রেখছে কোন এক আশ্চর্য উপায়ে তার গ্রামীন সনাতনতা। রাঙ্গা, নুড়ি বিছানো পথ দিয়ে হেঁটে যাবেন আপনি দু-পাশে নানাবিধ গাছের ছাউনির আরামে হাঁটতে হাঁটতে। এক অপরূপ নৈঃশব্দে ও প্রকৃতির আন্তরিক সৌরভে স্নিগ্ধ হবে আপনার মন।
লীলানগরের সনাতনতার অন্যতম প্রতিক হচ্ছে তার জমিদারবাড়ি। এখন বদ্রিনাথের আমলেও তার শৌর্য ও মাহাত্ম কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। যদিও এখানে ওখানে খসে পড়েছে ইঁটের অবয়ব, বিশাল প্রাসাদোপম বাড়িটির পূর্ব কোণের একটি বিশেষ অংশ অশ্বথের আলিঙ্গনে প্রাচীনতা লাভ করেছে যেন একটু বেশিই অন্যদের থেকে।
পুরনো লোহার জংধরা গেটে হাত দিয়ে চাপলেই শুনতে
পাবেন আপনি যেন দীর্ঘযুগের আহ্বান বয়ে আনা সেই
পরিচিত ক্যাঁচ করে শব্দ।
তারপরই এসে পড়বেন আপনি জমিদারবাড়ির বিখ্যাত বাগানে। যেখানে প্রতিনিয়ত কুড়ি-জন মালি ও শ্রমিক নিযুক্ত বিভিন্ন জাতীয় গাছের বর্নাঢ্য, মন অবশ করে দেওয়া সমারোহের প্রাচুর্য অক্ষুন্ন রাখার জন্য।
বাগানের মাঝখান দিয়ে নুড়ি-বিছানো পথ দিয়ে হেঁটে গিয়ে আপনি হাজির হবেন বিশাল কারুকার্যমন্ডিত সদর দরজায়। যার ভিতরে যাওয়া আসা করার অধিকার মুষ্টিমেয় কিছু লোকের মধ্যেই আবদ্ধ।
এই অট্টালিকাসম বাড়িটির দু-তলায় একটি আধখোলা জানালা দিয়ে এসে পড়েছে সকালের স্নিগ্ধ রোদের আলো। জানালা দিয়ে এসে পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে তা শ্বেতপাথরের মেঝের উপরে।
জানালার ভিতরের সকালের নবীন আলোয় ও আঁধারের লুকচুরিতে ভরা ঘরের ভিতরে যদি তাকানো যায় তাহলে চোখে পড়বে একটি অন্যরকম, অভূতপূর্ব দৃশ্য।…