ভোক্তা পর্যায়ে আসুস তাদের ল্যাপটপগুলোকে বিভিন্ন সিরিজে ভাগ করে বাজারজাত করে। এর মধ্যে তাদের জেনবুক সিরিজটি প্রিমিয়াম গ্রেডের ল্যাপটপের জন্য খুবই জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক কালে তাদের হাই-এন্ড জেনবুকগুলোকে অনেকে ম্যাকবুক কিলার বলছেন। এর কারণ হলো, জেনবুক সিরিজের ল্যাপটপগুলোকে তারা এমনভাবে ডিজাইন করেছে যেন একটি পাওয়ারফুল মেইনস্ট্রিম ল্যাপটপ দিয়েই আপনি ট্যাবলেট বা হাইব্রিড নোটবুকের মত পোর্টেবিলিটি পান। এরকমই একটি ডিভাইস হলো আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপ।
ম্যাকবুকের উইন্ডোজ বিকল্প হিসেবে আসুসের জেনবুক সিরিজটি বাংলাদেশেও শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা কর্পোরেট জগতে ভালো সুনাম কুড়িয়েছে।
সম্প্রতি আসুস বাংলাদেশের বাজারে তাদের জেনবুক সিরিজের লেটেস্ট ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপ Asus Zenbook 14 নামের UX433 মডেলের ল্যাপটপটি বাজারজাত শুরু করেছে। এই আর্টিকেলে ল্যাপটপটির সম্পূর্ণ একটি হ্যান্ডস-অন রিভিউ তুলে ধরবো যেন আপনারা খুব সহজেই বিবেচনা করতে পারেন ল্যাপটপটি আপনার কেনা উচিত কি না।
অঞ্চলভেদে UX433 মডেলটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন স্পেসিফিকেশনে এসেছে। বাংলাদেশে এর বেইজ ভ্যারিয়েন্ট এর দাম শুরু হয়েছে ৮৬,০০০ টাকা থেকে। দেশজুড়ে পাওয়া যাচ্ছে আসুসের সব পার্টনার আউটলেটে। প্রথমেই চলুন এক নজরে দেখি বাংলাদেশে এটা কী স্পেসিফিকেশন নিয়ে এসেছে।
আসুস জেনবুক ১৪ UX433 স্পেসিফিকেশন
- প্রসেসরঃ ইন্টেল ® কোর ™ i7-8565U/ i5-8265U
- ডিসপ্লেঃ ১৪ ইঞ্চি; ফুল এইচডি ১৯২০×১০৮০ পিক্সেল ন্যানোএজ ডিসপ্লে, ১৭৮° ওয়াইড ভিউ, ৭২% এনটিএসসি কাভারেজ
- গ্রাফিক্স কার্ডঃ ইন্টেল ® UHD Graphics 620 / এনভিডিয়া ® জিফোর্স ® MX150, ২ গিগাবাইট GDDR5
- মেমোরিঃ ৮ জিবি / ১৬ জিবি ২১৩৩ মেগাহার্টজ LPDDR3
- স্টোরেজঃ ১ টেরাবাইট PCIe ® 3.0 x4 এসএসডি / ৫১২ জিবি/২৫৬ জিবি PCIe ® 3.0 x2 এসএসডি
- ওয়্যারলেসঃ ডুয়াল ব্যান্ড 802.11ac গিগাবিট ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৫.০
- ক্যামেরাঃ থ্রিডি ইনফ্রারেড এইচডি সেন্সর
- পোর্টঃ ইউএসবি ৩.১ জেনারেশন ২ Type-C ™ (১টি), ইউএসবি ৩.১ জেনারেশন ১ Type-A (১টি), ইউএসবি ২.০ (১টি), এইচডিএমআই (১টি), মাইক্রো এসডি কার্ড রিডার (১টি), ৩.৫ মিমি কম্বো জ্যাক
- অডিওঃ হ্যারম্যান/কার্ডন স্টেরিও স্পিকার ও মাইক্রোফোন এরে
- ব্যাটারি ও পাওয়ারঃ ৫০Wh ৩ সেল লিথিয়াম পলিমার (১৪ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ), ৬৫W পাওয়ার এডাপ্টার
- আকারঃ ৩১.৯ সেমি x ১৯.৯ সেমি x ১.৫৯ সেমি
- ওজনঃ ১.০৯ কেজি
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
ল্যাপটপটি হাতে নেয়ার পর আমার মনেই হচ্ছিল না এটি একটি মেইনস্ট্রিম ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপ। আগে না দেখে থাকলে লিড বন্ধ থাকা অবস্থায় আপনি একে ১২-১৩ ইঞ্চির একটি ছোট্ট হাইব্রিড উইন্ডোজ মেশিন ভেবে ভুল করবেন। আসলে এর কারণ হচ্ছে ডিভাইসটির প্রচণ্ড সরু বেজেল। অনেক কোম্পানি ল্যাপটপের ওজন কমানোর দিকে নজর দিলেও বেজেল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে দেখা যায় না। অনেকের মনে হয়তো আমার মতো প্রশ্ন ছিল যে স্মার্টফোন যদি সরু বেজেল থেকে শুরু করে একদম বেজেললেস হতে পারে তাহলে ল্যাপটপ কেন পারবে না? আসলে আসুস এই ল্যাপটপটিতে সেটিই করে দেখিয়েছে।
ল্যাপটপটির বেজেল এতটাই সরু যে শেষ পর্যন্ত এর স্ক্রিন-টু-বডি র্যাশিও দাঁড়িয়েছে শতকরা ৯২ ভাগে! আসুস তাদের এই ডিজাইনের নাম দিয়েছে “ন্যানোএজ টেকনোলজি”। সহজভাবে বলা যায় একটি নরমাল ১২-১৩ ইঞ্চি ল্যাপটপের ফ্রেমে তারা ১৪ ইঞ্চি ডিসপ্লে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমার মতো আপনিও যদি ল্যাপটপের বড় বেজেল অপছন্দ করে থাকেন, তাহলে এই ডিজাইনটির জন্য আসুসকে বাহবা দিতেই পারেন।
সাইজের পাশাপাশি আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপটি ওজনেও বেশ হালকা। ১.৫৯ সেন্টিমিটার পুরু এই ল্যাপটপের ওজন মাত্র ১.০৯ কেজি। যারা সারাক্ষণই ল্যাপটপ সাথে নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের এই ব্যাপারটি খুব কাজে দিবে।
তাছাড়া ল্যাপটপটির গড়ন একটা A4 সাইজের পেপারের মতো। তাই চাকুরীজীবী মহিলা কিংবা ভার্সিটিপড়ুয়া মেয়েরা চাইলে এটাকে আপনার মাঝারি সাইজের ভ্যানিটি ব্যাগে নিয়েও ঘুরতে পারবেন। আসুস এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে কম্প্যাক্ট ল্যাপটপ বলে দাবী করছে। হুয়াওয়ে কিংবা ডেল এর মতো কিছু কোম্পানি তাদের ফ্ল্যাগশিপ ল্যাপটপের বেজেল ছোট করতে গিয়ে ওয়েবক্যাম কে নিচের দিকে নিয়ে গিয়েছে। এতে ল্যাপটপ দেখতে সুন্দর লাগলেও ক্যামেরা নিচের দিকে হওয়াতে ভিডিও বা ছবি খুব ভালো আসে না। কিন্তু আসুস জেনবুক ১৪ UX433 এর ব্যাপারটি ভালো লেগেছে কারণ তারা বেজেল এত ছোট করার পরেও ক্যামেরা ঠিক জায়গাতেই রাখতে পেরেছে।
আর সব জেনবুকের মতোই এটা ক্ল্যাসিকাল জেন ইন্সপায়ারড ডিজাইন নিয়ে এসেছে। এলুমিনিয়াম বডির এই ল্যাপটপটির লিডের উপরের দিকটা বৃত্তাকৃতির টেক্সচার যুক্ত, অনেকটা ধাতব তৈজসপত্রে যেরকম থাকে আরকি। একে বলা হয় “স্পান মেটাল ফিনিশিং”। আলোতে নিলে এটি খুব সুন্দরভাবে আলোর প্রতিফলন ঘটায়। ফলে ল্যাপটপটি দেখতেও খুবই ইউনিক ও প্রিমিয়াম লাগে।
আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপের আইসিকল সিলভার ও রয়াল ব্লু নামক দুটি কালার ভ্যারিয়েশন এসেছে। আমার ইউনিটটি ছিল রয়্যাল ব্লু এবং এটার হিঞ্জ এর কাছে স্পিকার গ্রিল এর উপরে রোজ গোল্ড কালারের ট্রিম লাইন ছিল। দুটো কালারের কম্বিনেশনে এটাকে খুবই স্টাইলিশ ও এলিগেন্ট লাগে। আর দুটো কালার ভ্যারিয়েন্টই খুব স্ট্যান্ডার্ড যা ছেলে-মেয়ে এমনকি সব বয়সের মানুষের সাথেই ভালো মানাবে।
আসুসের সাম্প্রতিক মডেলগুলোতে ল্যাপটপের হিঞ্জ এর জন্য তারা নতুন একটি ডিজাইন উদ্ভাবন করেছে। আসুস এর নাম দিয়েছে “এর্গোলিফট” টেকনোলজি। এই ল্যাপটপটির হিঞ্জটিও নতুন এর্গোলিফট ডিজাইনে বানানো। যার ফলে আপনি ল্যাপটপটির লিড খুললে এটি ল্যাপটপটির কিবোর্ড সহ বেসটিকে প্রায় ৩ ডিগ্রি উপরে তুলে দেয়। এর ফলে বেসটি আর ভূমির সমান্তরালে থাকে না। আপনারা জানেন যে এক্সটারনাল কিবোর্ডগুলোর উপরের দিক ভূমি থেকে একটু উঁচু থাকে। এটাও অনেকটা সেরকম। আমার মতো যাদের ব্লগিং কিংবা বেশি বেশি টাইপ করতে হয় তাদের টাইপিংকে এই নতুন হিঞ্জ সিস্টেম আরো আরামদায়ক করবে।
পাশাপাশি এর কুলিং ফ্যান হিঞ্জ এর নিচের দিকে থাকায় এটি বাতাস প্রবাহের জন্য আরো জায়গা করে দেয়। সবমিলিয়ে এই ব্যাপারটি আমার কাছে ভালোই লেগেছে। তবে এই সিস্টেমের একটা সমস্যাও আছে। সেটি হলো, অসমান বা অপরিষ্কার জায়গাতে আপনার ল্যাপটপ বসালে আপনার লিড এর কোনার দিকে এই এর্গোলিফট সিস্টেম দাগ ফেলতে পারে। এটা খুব বড় বিষয় না, তবে সৌন্দর্য সচেতনরা সতর্ক থাকতে পারেন।
কিবোর্ড ও ট্র্যাকপ্যাড
সাধারণত এসব প্রিমিয়াম ল্যাপটপগুলো খুব বেশি টাইপিংয়ের উপযোগী করে বানানো হয় না। আবার আমাদের দেশে অনেকেই ল্যাপটপে টাইপ করতে এক্সটার্নাল কিবোর্ড ব্যবহার করতেই পছন্দ করেন। আমিও করি। অবশ্য এই জেনবুকটির কিবোর্ড দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ টাইপ করার পর আমার কাছে বেশ আরামদায়কই মনে হয়েছে।
ল্যাপটপে সাধারণত কি-গুলো ফ্ল্যাট হয়। তবে এর কি-গুলো একটু অবতল ধরনের। এর ফলে টাইপিংয়ের সময় একটা কি প্রেস করতে গিয়ে অন্যটায় পড়ে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া কি-গুলো পর্যাপ্ত দূরত্বে রয়েছে এবং এদের ট্রাভেল ডিস্টেন্সও ভালোই। এখনকার প্রায় সব ল্যাপটপই ব্যাকলিট কিবোর্ড নিয়ে আসে। এটিও ব্যতিক্রম নয়। আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপে ব্যাকলিট কিবোর্ড দিয়ে খুব সহজেই অন্ধকারেও টাইপ করা যায়।
অবশ্য কিবোর্ডটির নেগেটিভ দিক হচ্ছে এটি ফুল সাইজ নয়। তাছাড়া এর আপ ও ডাউন বাটন দুটি তুলনামূলক ছোট সাইজের হওয়াতে গেইম খেলার সময় একটু মুশকিল হতে পারে।
আরেকটি ব্যাপার আপনার কাছে বিরক্তিকর লাগতে পারে। সেটি হলো অন্যান্য এক্সটার্নাল বা ল্যাপটপের কিবোর্ডে যেখানে ডিলিট বাটন থাকে, এটাতে সেখানে পাওয়ার বাটন অবস্থান করছে। তাই অভ্যাসবশত আমার মতো ডিলিট চাপতে গিয়ে ভুল করে পাওয়ার বাটন চাপতেও পারেন। যদিও, একবার অভ্যাস হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না। কারণ এখনকার সময়ে প্রায় সব ল্যাপটপের পাওয়ার বাটন এই জায়গাতেই থাকে।
আরো ভালো হয় যদি উইন্ডোজ সেটিংসটা একটু পরিবর্তন করে নেন যাতে পাওয়ার বাটনে একবার চাপ লাগলেই ল্যাপটপটি স্লিপ মোডে চলে না যায়। তাছাড়া এতে ব্রাইটনেস, ভলিউম, লক, রিফ্রেশ ইত্যাদি টগল করার জন্য ফাংশন বাটনগুলো চাপলেই হবে।
আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপটির সবচেয়ে ইউনিক দিক হচ্ছে এর ট্র্যাকপ্যাডটি। হ্যাঁ, সত্যিই। এটি আর দশটি সাধারণ ল্যাপটপের ট্র্যাকপ্যাডের মতো নয়। এটাকে আসুস ট্র্যাকপ্যাড না বলে বলছে নাম্বারপ্যাড। কেননা এটা একই সাথে ফুল সাইজ কিবোর্ডের সাইডে থাকা ডেডিকেটেড নাম্বার প্যাডের কাজ করবে, আবার গতানুগতিক ট্র্যাকপ্যাডের কাজও করবে।
ট্র্যাকপ্যাডটির সার্ফেস পাঁচ স্তরের গ্লাস দিয়ে ঢাকা। এর নিচের দিকে রয়েছে কিছু এলইডি যেগুলো জ্বলন্ত অবস্থায় নাম্বারপ্যাড সংখ্যাগুলো প্রদর্শন করে। ট্র্যাকপ্যাডটির উপরে থাকা একটি টাচ সেন্সর দিয়ে এই ফিচার বন্ধ ও চালু করা যায়। এতে ইন্টিগ্রেট করা আছে আসুসের বিশেষ ড্রাইভার সফটওয়্যার যা আপনার ট্র্যাকপ্যাডটি টাচ করার ধরন থেকে বুঝে নিবে আপনি কি আসলে নম্বর টাইপ করতে চাচ্ছেন নাকি কার্সর নড়াচড়া করাবেন। যারা নিজেদের ল্যাপটপে ডেডিকেটেড নাম্বারপ্যাডের অভাবে ভুগছিলেন তারা এটা ট্রাই করে দেখতে পারেন।
ডিসপ্লে, অডিও এবং সেন্সর
ল্যাপটপের প্রোডাক্টিভিটির বড় জায়গাজুড়ে আছে এর ডিসপ্লে। আর ডিসপ্লের ব্যাপারে আমি আবার একটু বেশিই খুঁতখুঁতে স্বভাবের। এই জেনবুকটিতে আছে ১৪ ইঞ্চি ফুল এইচডি রেজ্যুলেশনের আইপিএস এলইডি প্যানেল। এর ডিসপ্লেটি ম্যাট। এর উপরে আলাদা প্রোটেক্টিভ কোন গ্লাস এর আবরণ নেই। আমি ব্যাক্তিগতভাবে ম্যাট ডিসপ্লে পছন্দ করি কারণ এতে বাইরের আলোর প্রতিফলন হয় না। ফলে যেকোনো স্থানে খুব সহজেই ডিসপ্লেটি ব্যবহার করতে পারবেন এবং একটি ন্যাচারাল ফিল পাবেন।
এতে ১৭৮ ডিগ্রি ভিউইং এঙ্গেল থাকায় পাশ থেকে দেখলেও কালার শিফটিং পাবেন না। ৭২% এনটিএসসি ও প্রায় ৯৭% এসআরজিবি কাভারেজ থাকায় আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপের ডিসপ্লের কালারগুলো খুবই এক্যুরেট পেয়েছিলাম। ডিসপ্লেটির ব্রাইটনেস মাঝারি মানের। তবে ল্যাপটপ যেহেতু বাইরের সূর্যালোকে খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না তাই কোন সমস্যা হবে না বলা যায়।
আসুস জেনবুক ১৪ UX433 নোটবুকে ব্যবহার করা হয়েছে বিখ্যাত অডিও ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার হারম্যান/কার্ডনের স্পিকার ড্রাইভার। অডিওফাইলদের জানার কথা হারম্যান/কার্ডনের স্পিকারগুলো যে কতটা ভালো মানের হয়। পাশাপাশি এতে আসুসের সনিকমাস্টার টেকনোলজি আছে। এই ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যারে বিভিন্ন প্রিসেট অডিও কনফিগারেশন দেয়া আছে যা ব্যবহার করলে আপনি ভালো মানের সাউন্ড কোয়ালিটি পাবেন বলে আশা করা যায়। এমনিতে সাউন্ড যথেষ্ট ক্লিয়ার। ল্যাপটপের ডিফল্ট স্পিকার হিসেবে আপনি বেইজ ও ট্রেবলও ভালোই পাচ্ছেন। লাউডনেসের কথা চিন্তা করলে সর্বোচ্চ ভলিউমে ৮০ ডেসিবেলের মতো সাউন্ড পাবেন।
আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপে আছে ৭২০ পিক্সেলের এইচডি ওয়েবক্যাম ও সাথে কিছু আইআর সেন্সর। সব মিলিয়ে এটি ত্রিমাত্রিক ফেইস রিকগনিশন ক্যামেরা হিসেবে কাজ করবে যার মাধ্যমে আপনি উইন্ডোজ হ্যালো ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড ছাড়াই উইন্ডোজ ও বিভিন্ন সার্ভিসে লগইন করতে পারবেন।
এই বাজেটে অন্যান্য কোম্পানি ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলেও এতে থাকছে না ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। তবে থ্রিডি ইনফ্রারেড ক্যামেরা সেন্সর দেয়াতে এটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।
পারফর্মেন্স
এবার আসা যাক ল্যাপটপটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, মানে এর হার্ডওয়্যার ও পারফরমেন্স সেক্টরে। রিভিউর শুরুতে এর স্পেসিফিকেশন দেখে বুঝতেই পারছেন যে ল্যাপটপটিতে আপনি অষ্টম প্রজন্মের ইন্টেল কোর i5 কিংবা i7 প্রসেসর পাচ্ছেন। পাশাপাশি ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী আপনি ৮ জিবি বা ১৬ জিবি র্যাম ও ৫১২ জিবি বা ১ টেরাবাইট পর্যন্ত এসএসডি স্টোরেজ পাবেন। এছাড়া UX433 মডেলটি আপনি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া যেমন পাবেন তেমনি ২ জিবি এনভিডিয়া এমএক্স ১৫০ জিপিইউ সহ-ও পাবেন। অর্থাৎ বেশ কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট থেকে আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী ভ্যারিয়েন্টটি আপনি কিনতে পারবেন। আমাদের রিভিউ ইউনিটটি ছিল মডেলটির একটি মধ্যম ক্ষমতার বিল্ড যাতে লেটেস্ট কোর আই৫ প্রসেসর, ৮ জিবি র্যাম ও ৫১২ গিগাবাইট এসএসডি স্টোরেজ ছিল। তাছাড়া এতে এমএক্স ১৫০ মডেলের ২ জিবি গ্রাফিক্স চিপ যুক্ত ছিল।
সত্যি কথা বলতে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড থাকলেও এটা গেমিং পিসি নয়। তবে এই ল্যাপটপটিতে আপনি চাইলে বেশ কিছু লেটেস্ট গেইম লো কিংবা মিডিয়াম সেটিংসে ভালোভাবেই চালাতে পারবেন। অপেক্ষাকৃত পুরোনো ও কম চাহিদাসম্পন্ন গেমগুলো আপনি ইচ্ছা করলে ফুল এইচডি রেজুলেশনে হাই সেটিংসেই খেলতে পারবেন। তাছাড়া এর গ্রাফিক্স মেমোরি মাত্র ২ জিবি হলেও এটি ডিডিআর৫ মেমোরি হওয়াতে তুলনামূলক ভালো গেমিং পারফর্মেন্স পাবেন। তবে গ্রাফিক্সের কাজের জন্য আসুস জেনবুক ১৪ UX433 নোটবুকটি ভালোভাবেই কাজ করতে সক্ষম।
যারা গেমিং বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো কাজগুলো করবেননা তারা চাইলে অপেক্ষাকৃত কম দামে আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া ভ্যারিয়েন্টটি কিনতে পারেন। গাড়িতে বসে অফিসের প্রেজেন্টেশন রেডি করা, কিংবা পথে ঘাটে ব্রেকিং নিউজ সাবমিট করার জন্য পারফেক্ট একটি ল্যাপটপ বলা যায় একে। এসব কাজগুলো আপনি ল্যাপটপটির বেইজ ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে অনায়াসেই করে নিতে পারবেন।
মাইক্রোসফট অফিস কিংবা ওয়েব ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে ল্যাপটপটি খুব বেশি গরম হয় না। বেশিরভাগ সময় তাই কুলিং ফ্যান বন্ধই থাকে। তবে গেমিংয়ের সময় কুলিং ফ্যান খুব দ্রুত ঘোরার কারণে একটু আওয়াজ লক্ষ্য করেছি। যদিও তা খুব বেশি নয়েজি না।
স্টোরেজ হিসেবে এতে M.2 এনভিএমই মডিউল ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ল্যাপটপটি অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পন্ন। তবে এর স্লট একটাই। তাই কম স্টোরেজের ভ্যারিয়েন্ট কিনে পরে স্টোরেজ বাড়াতে চাইলে আপনাকে আগের এসএসডি’টি বাদ দিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে র্যাম মডিউলটি মাদারবোর্ডে সোল্ডার করা থাকায় এটা আপগ্রেডেবল না। তাই আগে থেকেই চিন্তা করে প্রয়োজনীয় স্পেসিফিকেশনের ভ্যারিয়েন্টটি কেনার পরামর্শ রইলো।
পোর্ট ও কানেক্টিভিটি
জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপটি খুব স্লিম হলেও ইনপুট ও আউটপুট পোর্টের ক্ষেত্রে আসুস কোন কার্পণ্য করেনি। দুটি ফুল সাইজ ইউএসবি পোর্ট দেয়া আছে এতে। এর মাঝে একটি ইউএসবি ২.০ ও অন্যটি ইউএসবি ৩.১। এই সময়ে এসেও ল্যাপটপে ইউএসবি ২.০ পোর্ট কেন দিলো আপনার মনে হয়ত সেই প্রশ্ন আসতে পারে। তবে ভালো দিক হলো এতে ইউএসবি ৩.১ জেনারেশন ২ সাপোর্টেড টাইপ সি পোর্টও দেয়া আছে যা আরো দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে। এছাড়া এক্সটার্নাল ডিসপ্লে বা প্রজেক্টরের জন্য এতে একটি ফুল সাইজ এইচডিএমআই পোর্ট ও অডিও আউটপুট এর জন্য ৩.৫ মিমি এর স্ট্যান্ডার্ড পোর্ট আছে। এতে বিল্ট ইন মাইক্রো এসডি কার্ড রিডার ও আছে। ক্যামেরায় ব্যবহার করার বড় মেমোরি কার্ড এটাতে লাগাতে পারবেন না। শুধু ফোনের মেমোরি কার্ডই লাগানো যাবে।
ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটির জন্য এতে আছে হাই স্পিড এসি ওয়াইফাই চিপ এবং ব্লুটুথ ৫.০। ইথারনেট পোর্ট না থাকায় অনেকে হয়তো একটু ঝামেলা পোহাতে পারেন। তবে এটার সলিউশনও আসুস দিচ্ছে আপনাকে। বক্সেই পেয়ে যাবেন একটি ইউএসবি টু ইথারনেট কনভার্টার!
ব্যাটারি ব্যাকআপ
এবার আসা যাক ল্যাপটপের জন্য অন্যতম চিন্তার বিষয় এর ব্যাটারি ব্যাকআপ সেকশনে। আসুস দাবি করছে জেনবুক ১৪ UX433 নোটবুকে থাকা ৩ সেলের ৫০ ওয়াট-আওয়ার এর ব্যাটারিটি ১৪ ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। কোম্পানিটি হয়তো ল্যাপটপের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস খুবই কম ও অন্যান্য ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি বন্ধ করে বেসিক কাজের কথা বিবেচনা করে এটা বলেছে। তবে মাঝারি ব্রাইটনেসে মুভি দেখা কিংবা অন্যান্য অফিসের কাজে আপনি অনায়াসেই ৮-৯ ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। তবে গেম খেললে ব্যাটারি ব্যাকআপ বেশিক্ষণ পাবেন না।
বলাই বাহুল্য, জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপের সাথে আসুস ৬৫ ওয়াটের একটি চার্জার প্রোভাইড করছে।
উপসংহার
রিভিউ তো হয়েই গেলো, এবার সিদ্ধান্তে আসা যাক। ৮৬০০০ টাকা থেকে শুরু হওয়া এই ল্যাপটপটির দাম বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কম না। আর যদি এটার আরো শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট নিতে চান তাহলে গুণতে হবে লাখেরও বেশি। সত্যি কথা বলতে ল্যাপটপটি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য। যারা অফিসের কাজে ব্যবহার করবেন এবং পোর্টেবিলিটি, স্টাইল ও ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ চান তারা কোনো কিছু চিন্তা না করেই আসুস জেনবুক ১৪ UX433 নিতে পারেন।
তবে আপনি যদি গেমার হোন তাহলে এই নোটবুকটি আপনার জন্য নয়। এটা ঠিক যে এটাতে আপনি কিছু গেম খুব ভালোভাবেই চালাতে পারবেন। তবে এই বাজেটে অন্য কোনো গেমিং ল্যাপটপ কিনে নিলে আপনি আরো ভালো পারফর্মেন্স পাবেন। অন্যদিকে যাদের বাসায় রাফ ইউজের জন্য শক্তিশালী ডেস্কটপ আছে এবং শুধু ক্লাসে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ম্যাকবুক অল্টারনেটিভ খুঁজছিলেন তাদের জন্য এটা হতে পারে একটি পারফেক্ট চয়েজ। এটাও জেনে রাখা ভালো যে এটার ইউনিক ট্র্যাকপ্যাড কিংবা প্রিমিয়ামনেস না চাইলে আপনি অনেক কম খরচে একই পারফর্মেন্স দিবে এমন ল্যাপটপ পাবেন বাজারে। তবে এটার প্রাইস সেগমেন্টে এটা নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার অপশন।
আপনি কি কিনবেন আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপ? কেমন লাগল ডিভাইসটি? কমেন্টে জানাতে পারেন।