newsaimon80
Member
০১।
অনেক সময় অনেক কিছু নতুন ভাবে শুরু হয়। তখন অনেক কিছুই আর আগের মত থাকে না। আজকের এই গল্প এমন নতুন শুরু হওয়া এক সম্পর্কের। বন্ধুরা সবাই পড়াশুনা শেষ করে তখন চাকরি বাকরিতে ঢুকে গেছে। কেউ সরকারি আর কেউ বেসরকারী। তখনো বিসিএসের এত দাপট শুরু হয় নাই। ব্যাংক আর কর্পোরেটে ঝোক বেশি ছেলেমেয়েদের। আমিও এমবিএ শেষ করে কয়েকদিন এক এড ফার্মে ছিলাম। এক বছর চাকরির পর আর ভাল লাগল না। ছেড়ে দিলাম। ভাবলাম বিসিএস দিই, সরকারি চাকরি করি। এত মুখস্ত বিদ্যা আর লম্বা সময় অপেক্ষার ধাক্কায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম এখানেও। হতাশ হয়ে কিছুদিন বসে ছিলাম। বাসায় সবাই বলতে বলতে একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। এই সময় হঠাত করে বিজনেসের বুদ্ধি আসল। অন্যের চাকরি না করে নিজের চাকরি।
ইসলামপুর থেকে কাপড় নিয়ে সেটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই দেওয়া। এটা ছিল শুরু। মেসে থাকতাম খরচ বাচানোর জন্য পুরান ঢাকায়। এর পাশে এক হোটলে পাইকারি কাপড় কিনতে আসা লোকজন থাকত রাতে। সামনের দোকানে নাস্তা খেতে আসত সবাই। আস্তে আস্তে দুই একজনের সাথে পরিচয় হল। এই ব্যাবসার মূল মুলধন হল সুনাম। বাকিতে চলে, পরে টাকা শোধ হয়। আস্তে আস্তে আমি দুই একজনের সাথে ইসলামপুরের দোকানগুলোতে যাওয়া শুরু করলাম। অনেকে বারবার ঢাকায় আসার কষ্ট নিতে চায় না। আমি মাঝখানে জিনিস ঠিক করে দিই। মেসেঞ্জারের কাপড়ের ছবি পাঠাই, মাল বুক করে বাসে, লঞ্চে তুলে দেই। মাঝখানে দোকানদারদের ঢাকা আসার পরিশ্রম আর খরচ বাচে। এটাই আমার পারিশ্রমিক। শুরুতে তেমন লাভ নেই। দুইটা টিউশনি করতাম আর মাঝখানে এটা। বন্ধুরা যখন ব্যাংকার, বিসিএস অফিসার তখনো আমি এইসব ছুটকা কাজ করি তবে এটাই ছিল আমার অন্য শুরুর প্রথম ধাপ।
একটু করে পরিচিতি বাড়োতে লাগল। টাকা আসতে শুরু করল। তেমন কিছু না। তবে টিউশনি ছেড়ে দিতে পারলাম। পরিচিত কাউকে অবশ্য কিছু বললাম না। সবার কাছে আমি তখনো বেকার। বাসায় আমার উপর বিরক্ত হয়ে কিছু বলা বন্ধ করে দিয়েছে আগেই। অনেকদিন বাড়ি যাওয়া হয় না তাই। ভার্সিটির বন্ধুদের সাথেও আলাপ হালকা হয়ে গেল। সংগ্রামের এই সময়টা আসলে অন্যরকম। কেউ বুঝতে চায় না, অনেকে বুঝতে পারে না। আমিও কিছু বলি না। আবার অনেকে স্ট্যাটাসে এগিয়ে যায় বলে নিজেরাই এড়িয়ে যায়। শুরুতে এসব গায়ে লাগলেও এখন ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। মন দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছি। পুজি নেই এই ব্যবসার, সুনাম মূলধন। তাই সময় মত সব কিছু করা আর কথা রাখাটা খুব গূরুত্বপূর্ণ। ডেটলাইন মিস করা যাবে না। ভাল ভাবে কাজ করলে এক কাস্টমারের লিংকে নতুন কাস্টমার আসে। এভাবেই ব্যবসা বাড়তে শুরু করল। আমি অবশ্য এখনো আগের সেই মেসে থাকি। কারণ এখানে ঐ হোটেলের জন্য ইসলামপুরে কাপড় কিনতে আসা অনেকের সাথে দেখা হয় কথা হয়, নতুন কাস্টমার পাওয়া যায়। এটা বলা যায় আমার ব্যবসার চেম্বার। একটা বাইক কিনে ফেললাম। পুরান অবশ্য। পঞ্চাশ হাজার নিল। তবে ঢাকার রাস্তায় সময় আর টাকা বাচাতে এটা ভাল। এই মটরসাইকেল চালাতে গিয়ে অনেকদিন পর দেখা হয়ে গেল সাদিয়া আপার সাথে।