শ্রোতার হৃদয়ে দিলরুবা খানের কণ্ঠ পৌঁছে গেছে বহু আগে। ‘পাগল মন’, ‘রেললাইন বহে সমান্তরাল’, ‘ভ্রমর কইয়ো গিয়া’র মতো মাইলফলক ছোঁয়া গানের এই শিল্পীর কাছে পৌঁছায়নি সেসবের যথাযথ সম্মান ও সম্মানী। যে গাইতে ডেকেছেন, গানের প্রতি ভালোবাসা থেকে তাঁর ডাকেই সাড়া দিয়েছেন শিল্পী। আয় করেছেন অন্যরা, দিলরুবা পাননি কিছুই! জন্মদিনে আক্ষেপ নিয়ে সেসব প্রসঙ্গ তুলেও জানালেন, তবু তিনি গেয়েই যাবেন।
দিলরুবা খানের আজ জন্মদিন। বড় আয়োজন করে কখনোই জন্মদিন উদযাপন করতেন না তিনি। কেবল আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা হতো। এ বছর সেসব হবে না কেবল মহামারির কারণে। তবে ফোনে বহু মানুষের শুভেচ্ছা তাঁকে আপ্লুত করেছে। শিল্পী বলেন, ‘মানুষ যে আমাকে মনে করছে, এতেই আমি আনন্দিত। ফেসবুকে আমার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। মহামারিতে মানুষ খুব কষ্টে আছে। এ সময় জন্মদিন উদযাপন করা চলে না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে যত দিন বাঁচব, গান নিয়েই থাকব।’ ফেসবুক বন্ধুদের শুভেচ্ছায় কতটা আনন্দিত তিনি? জানতে চাইলে এই শিল্পী বলেন, ‘আমার কেন যেন মনে হয়, এরাই আমার আত্মার আত্মীয়। এই সময়ে এসে কে কার আত্মীয় হতে পারে? আমি কিন্তু আমার ভক্তদের খুব ভালোভাবে, অনেককে পারিবারিকভাবে চিনি-জানি। এই আত্মীয়দের শুভেচ্ছাবার্তা আমার কাছে অনেক আনন্দের।’
প্রয়াত শিল্পী জানে আলম, দিলরুবা খান ও চন্দনা মজুমদার
দিলরুবা খানের গাওয়া ‘পাগল মন’ গানটির মূল অংশটুকু বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা হয় একটি সিনেমায়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর এ গানের মেধাস্বত্ব নিয়ে ওঠে বিতর্ক, আইনের দ্বারস্থ হন শিল্পী। কী হয়েছিল শেষ পর্যন্ত? দিলরুবা খান বলেন, ‘আমার জানা ছিল না যে শেষ পর্যন্ত গানের মালিকানা আসলে সুরকারের। যে লিখল বা যে গাইল, শেষ পর্যন্ত তারা কিছুই না। তাদের অনুমতি লাগে না। গীতিকার না লিখলে সেটা সুর করার প্রশ্নই ওঠে না। শিল্পী না গাইলে গানটি মানুষের কাছে পৌঁছে না। অথচ এ দুই পক্ষ গানের মালিকানাই পেল না। আমি খুব মন খারাপ করে বিষয়টি মেনে নিয়েছি। রীতিমতো নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।’ এ ঘটনার পর নিজের গাওয়া গান নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি কেন? তিনি বলেন, ‘সব মানুষ আমাকে ঠকিয়েছে। আমাকে দিয়ে গান গাইয়ে নিয়েছে, কোটি কোটি ভিউ হয়েছে, অনেক টাকা রোজগার করেছে। কেউ কোনো দিন ধন্যবাদ দিয়ে বলেনি যে আপা, আসেন এক কাপ কফি খেয়ে যান। তোজাম্মেল হক বকুল “পাগল মন” গানটা চাইল, গাইলাম, ছবির নামটা পর্যন্ত বদলে ফেলল, আমাকে কিছুই দেয়নি। “রেললাইন বহে সমান্তরাল”গানটির জন্য কেউ বাবু ভাইয়ের স্ত্রীকে একটা টাকাও দেয়নি। এ অঙ্গনের কিছু মানুষ কেবল নিতেই জানে, দিতে জানে না।’
দিলরুবা খান। ছবি:ফেসবুক
দিলরুবা খানের বাবা সৈয়দ হামিদুর রহমান রাজশাহী ও রংপুর বেতারের শিল্পী ছিলেন। তিনি চাইতেন না মেয়ে গান করুন। তিনি বলতেন, সৈয়দ বংশের মেয়েরা গান করেন না। বাবার অমতে, আবদুল আলীমের পরিবারের অনুপ্রেরণায় শিল্পী হয়ে উঠেছেন দিলরুবা খান। তবে তিনিও চাননি তাঁর মেয়ে শিমুল খান গান করুন। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে আমি বলেছিলাম, এ দেশে গান করে কোনো লাভ নেই। কেবল ঠকতে হয়। আমি চাইলে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারতাম। যাইনি, কারণ আমি দেশকে ভালোবাসি। গান আমার রক্তে মিশে আছে। গান করে যদি সম্পদ গড়তে চাইতাম, তাহলে আমি আজ অনেক সম্পদশালী হতে পারতাম। কিন্তু গানটা আমি ভালোবেসে করেছি। সে কারণে আজ আমার তেমন কিছুই নেই।’
দিলরুবা খান
সবকিছু স্থবির হয়ে আছে। গান করা হচ্ছে না দিলরুবা খানের। ঈদের মতো একটি উৎসবে তাঁর নতুন গান থাকবে না, এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল তাঁর। কিন্তু সে আক্ষেপ দূর করে দিয়েছেন তাঁর সংগীতস্বজনেরা। ফকির হযরত শাহর কথা ও সুরে নতুন একটি গান মুক্তির প্রস্তুতি চলছে। শিল্পী জানান, ভিডিওর জন্য শুটিং হয়ে গেলেই গানটি প্রকাশিত হবে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে। সর্বশেষ সেখানে প্রকাশিত হয়েছে দিলরুবার গাওয়া ‘ভুল নিলামে বিকাইয়াছি মন’ শিরোনামে একটি গান।