What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other আমাদের নায়িকারা : শবনম (1 Viewer)

SoundTrack

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
530
Messages
13,427
Credits
283,140
Recipe pizza
Loudspeaker
mvFTYcq.jpg


আমি রূপনগরের রাজকন্যা
রুপের যাদু এনেছি
ইরান ,তুরান পার হয়ে আজ
তোমার দেশে এসেছি।

খুব ছোটবেলায় যখন এই গান টা “ছায়াছন্দ” অনুষ্ঠানে দেখতাম তখন ভাবতাম ইরান, তুরান কোথায়? এই মেয়েটি কি সত্যি ইরান, তুরান পার হয়ে এদেশে এসেছে? একটু বড় হয়ে জানলাম, ইরান একটা দেশ।কিন্তু তুরান কি সেই ধোঁয়াশা কাটতে আরো অনেক সময় লাগলো। নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষে হাতে আসলো ফেরদৌসি’র “শাহনামা”। সেখানে অবশেষে পেলাম তুরানের বর্ণনা। আরো কিছু বই ঘেঁটে ইরান, তুরানের মেয়েদের রূপের বর্ণনাও পেলাম। আপ্লুত হলাম এই ভেবে, যে কিশোরী মেয়েটির রুপে মুগ্ধ হয়ে ইরান, তুরান নিয়ে এতো কৌতুহল সে দূরের কেউ নয় – আমাদের বাংলাদেশের মেয়ে শবনম।

আমাদের নায়িকারা সিরিজে আজ নায়িকা শবনমের কথাই বলবো, যদিও এতো স্বল্প পরিসরে শবনমকে নিয়ে একটা লেখা দাঁড় করানো কঠিন।

১৯৫৮ সালে “রাজধানীর বুকে” সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা।জহির রায়হানের “কখনো আসেনি” সিনেমায় একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেন।”কখনো আসেনি”র পোস্টারে লেখা ছিল – যে গল্প আরো ২০ বছর পর দেখানোর কথা সেটা আমরা এখন দেখাচ্ছি। মজার বিষয় হলো “কখনো আসেনি” আজ ২০১৭ সালে রিমেক হলেও বোধ হয় একই কথা বলতে হবে।এই গল্প চিরদিনই সময়ের চেয়ে বেশি আধুনিক। ছোট্ট চরিত্র হলেও “কখনো আসেনি”র মতো মাস্টারপিস এর সাথে যুক্ত হতে পারাও একজন শিল্পীর জীবনে পরম পাওয়া।

প্রধান নায়িকা হিসেবে শবনমের প্রথম ছবি ১৯৬১ সালের আলোড়ন সৃষ্টকারী “হারানো দিন”।উত্তম-সুচিত্রার যুগে শবনম-রহমান যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তা এক অবিশ্বাস্য ব্যপার। এবং সেই সুবাদে শবনম-রহমান বাংলাদেশের প্রথম জনপ্রিয় জুটি। তাঁদের পথ ধরেই আমরা পেয়েছি রাজ্জাক-কবরী, আজিম-সুজাতা, শাবানা-আলমগীর, ফারুক-ববিতা, কাঞ্চন-দিতি, মান্না-চম্পা, শাবনাজ-নাঈম, সালমান-শাবনূর, ওমর সানি-মৌসুমী থেকে হালের শাকিব-অপুর মতো জুটি।

k66QClp.jpg


শবনম ই একমাত্র অভিনেত্রী যে ৬০, ৭০, ৮০ এই তিন দশক ও ৯০ দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত একটানা প্রধান নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এতো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত উপমহাদেশের আর কোন অভিনেত্রী নায়িকা থাকতে পারেন নি।

পাকিস্তানের ঊর্দু সিনেমায় ব্যস্ততার জন্যে খুব বেশি বাংলা সিনেমা করতে পারেন নি শবনম। তবে যেগুলো করেছেন তার প্রত্যেকটিই দর্শক সমালোচকদের কাছে সানন্দে আদৃত হয়েছে। কাজের ব্যাপারে চুজি ছিলেন বলেই তাঁর ক্যারিয়ারে ফালতু সিনেমা নেই বললেই চলে।

পাকিস্তানে তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে কাজ করেছেন ৯০ দশক পর্যন্ত। পাকিস্তানে তাঁর সর্বশেষ ছবি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। কিন্তু নিজের শেকড়কে কখনো ভুলে যান নি তিনি। পাকিস্তান থেকে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে এসে বাংলা ছবি করে যেতেন।”সন্ধি”,”শর্ত”, “সহধর্মিনী”- এইসব সিনেমা তিনি করে গেছেন উর্দু সিনেমার কঠিন ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে।

পাকিস্তানে এখনো পর্যন্ত শবনম সর্বাধিক জনপ্রিয় নায়িকা। জনপ্রিয়তায় আর কেউ তাঁর ধারে কাছে আসতে পারে নি। পাকিস্তানে চলচ্চিত্রের সর্বাধিক সম্মানজনক পুরষ্কার “নিগার এওয়ার্ড ” তিনি অর্জন করেছেন ১৩ বার। এই রেকর্ড আর কেউ ভাঙতে পারেন নি। পাকিস্তানে এখনো পর্যন্ত নাদিম-শবনম জুটিকেই সেরা জুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১২ সালে পাকিস্তান সরকার শবনমকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করেছেন। বাংলাদেশী হিসেবে অন্য একটি দেশে শবনম যে কীর্তি গড়ে এসেছেন তার তার জন্যে জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রী দুই একটি ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করলেই তাকে আন্তর্জাতিক শিল্পী বলা হয়। অথচ, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও শবনম শতাধিক পাকিস্তানী সিনেমায় অভিনয় করেছেন কিন্তু আন্তর্জাতিক হতে পারেন নি। সবই আমাদের হলুদ মিডিয়ার কারসাজি।

ZAcrMHD.jpg


প্রায় ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে শবনম কোন জাতীয় পুরষ্কার পান নি। ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “নাচের পুতুল” এ অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন কিন্তু তখন তো জাতীয় পুরষ্কার ছিলনা। পরেও বেশ ভালো কিছু চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন কিন্তু জাতীয় পুরষ্কার আর পাওয়া হয়ে উঠে নি।শবনম সর্বশেষ অভিনয় করেছেন কাজী হায়াৎ এর “আম্মাজান” সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে। কালের বিবর্তনে “আম্মাজান” বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টিকারী সিনেমার মর্যাদা পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

খুব করে চাই শবনম কে যেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে আজীবন সম্মাননা টা অতিসত্ত্বর দেওয়া হয়। উনার বয়স হযেছে, এখুনি না দিলে বেশি দেরী হয়ে যেতে পারে।

এখনো অভিনয় করতে চান শবনম। তবে নায়ক-নায়িকাদের মায়ের চরিত্রে শুধু চেহারা দেখানোর জন্য পর্দায় আসার মতো অভিনেত্রী তো তিনি নন। পরিচালকরা যদি তাঁর বয়সের সাথে মিল রেখে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তৈরী করতে পারেন তবে আবারো আমরা সিনেমায় দেখতে আবো রূপনগরের রাজকন্যাকে।

শবনম এর সুস্থ, সুন্দর আগামী আর দীর্ঘায়ু কামনা করে শেষ করছি আমাদের নায়িকারা সিরিজের শবনম পর্ব।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top