‘সম্পর্ক’ শব্দটা অনেক কৌতূহলী। বিষয়টি যেমন কঠিন, তেমনই সহজ। অনেকের কাছে সম্পর্কটা একটা শৃঙ্খল মনে হয় মাঝেমধ্যে। আবার অনেকে বিষয়টি বেশ জমিয়ে উপভোগ করেন। যুগে যুগে এ বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, আবার একে কাটাছেঁড়া করে বিশ্লেষণের টেবিলেও বসানো হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত যে বৈষয়িক সম্পর্ক, তা হলো দাম্পত্য। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, কোনোটারই যেন কমতি নেই।
দাম্পত্য একটি চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক
দাম্পত্য একটি চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক। তারপরও এখানে দুটো মানুষের নৈমিত্তিক কিছু আচারের বিষয় আছে। আধুনিক সমাজে এখন কমবেশি সবাই মনে করে, দুজন মানুষ একসঙ্গে ঘুরলে, হাসলে, সামাজিক মাধ্যমে সুখী সুখী ছবি দিলেই মনে হয় তাঁরা অনেক সুখী দম্পতি। অথচ বাস্তবে এর সম্ভাবনা শূন্যও হতে পারে, যা সবার ধারণার বাইরে।
সবার দৃষ্টির অগোচরে হয়তো সেই তথাকথিত বহুল আলোচিত সুখী দম্পতিই নিজেদের পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী, হতভাগা মনে করেন। হয়তো তাঁরা এই মিথ্যা অভিনয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন, কিন্তু সামাজিক মর্যাদা, অহমের বাইরে গিয়ে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কিছু করতে না পারার যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত তিক্ততার মাত্রা বাড়িয়েই তুলছেন।
দূরত্ব সমস্যা তৈরি করে
হয়তো দুজনের কথাই হয় না প্রতিদিন ঠিকমতো, নিজেদের মতো করে একটু সময় কাটানো হয় না, আর তার বিপরীতে একজন অন্যজনের নামের পেছনে অপছন্দ আর অভিযোগের বিশাল এক তালিকা বানিয়ে বসে আছেন। আর এই বিমূর্ততার সুবিধা নেওয়ার জন্য অন্য অনেকেই ওত পেতে বসে আছে। আমাদের এই বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবির বিপরীতে আমরা আমাদের পূর্বসূরিদের মনে মনে হিংসাও করি। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে আমরা আলোচনাও করি, হাসি আবার অবাকও হই এই ভেবে যে তারা কীভাবে এত দিন ধরে সম্পর্ক মধুর রেখেছেন।
সম্পর্ক দুজন মানুষের মধ্যে একটি বন্ধন। এ বন্ধন মজবুত করার দায়িত্ব দুজনকেই নিতে হবে। তার জন্য অনেক কিছু করাটা খুব বেশি জরুরি নয়। ছোট ছোট কিছু কাজেই সম্পর্ককে দৃঢ় করা যায়। মনে রাখতে হবে, এটা একটা বিনিয়োগ। একজন মানুষের সঙ্গে ভালো এবং মজবুত বন্ধন করার বিনিয়োগ। তার জন্য ‘সময়’ হলো দুজনের জন্যই সারা জীবনের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।
সময় দিতে হবে একে অপরকে
আপনি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বা কোনো নতুন ব্যবসা করেন, তখন আপনি সেখানে প্রচুর সময় দেন, বিষয়ের গভীরে যান, ভালো করে জানার চেষ্টা করেন, কোনো নতুন ব্যবসা তৈরির ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী, বাজার, ক্রেতা সবার সঙ্গেই যথেষ্ট সময় নিয়ে কাজ করেন। দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও জিনিসটা তা–ই। দুজনে একসঙ্গে সময় কাটানো, গান শোনা, গল্প করা, হুট করে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া দাম্পত্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে, যা এক ছাদের নিচে থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
মুঠোফোনে তো আমরা সারা দিন কতশত বার্তা পাঠাই কতজনকে। আপনজনকে মাঝেমধ্যে ভালোবাসার বার্তা পাঠাতেই পারি। অনেকে মনে করেন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। অথচ ছোট ছোট জিনিসেও তা দারুণভাবে উজ্জীবিত রাখা যায়। ‘ভালোবাসি’ শব্দটি মনে ও কাজে উদ্দীপনা দেয়। প্রতিদিন অন্তত কয়েকবার আপনার সঙ্গীকে মন থেকে ‘ভালোবাসি’ বলার অভ্যাস করুন। তাতে নিজেরও ভালো লাগবে। অন্যকে তার নিজের জায়গাটুকু দিন।
হোক সবকিছু একসঙ্গে
একসঙ্গে ঘুম থেকে উঠুন, সম্ভব হলে সকালে একসঙ্গে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। ছোট ছোট অনুভূতি প্রকাশ করুন এবং তারটাও মন দিয়ে শুনুন। সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করুন। মতামত নিন এবং তার মতামতকে যে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করছেন, তা তাঁকে দেখান। প্রয়োজন হলে তা প্রকাশ করুন। ছোট ছোট অনুভূতি, সমস্যা ঘটনা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন এবং দুজনে মিলে সমাধান করুন।
সফল সম্পর্ক মানে এই নয় যে এখনো কোনো মতবিরোধ নেই। মতবিরোধ থাকতেই পারে। তবে তা যুক্তি দিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে সমাধান করুন। সব ক্ষেত্রে জয়ী হওয়ার মনোভাব পাল্টে সঠিককে যৌক্তিকতার বিবেচনায় মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, এটা জীবনের সবচেয়ে দামি বিনিয়োগ, যার ওপর জীবনের বাজির তাস লাগানো। মনোযোগ দিলে জয় আপনারই।
* সৈয়দা জুলফা হক