What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected আলো - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,068
Credits
81,248
Thermometer
Sari
Strawberry
Glasses sunglasses
T-Shirt
Calculator
১.

সেকালটাই ছিল মজার কাল। সবেতেই মজা। বাড়িতে চোর পড়লেও মজা। চোরেরাও ছিল অন্যরকম। প্রকৃতই অভাবী মানুষ। পেটের দায়ে চোর। ছিচকে চোর। ঘটি, বাটি, গামছা, জামা, লোহার বালতি, তোলা উনুন, কেরোসিন তেলের বোতল, হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাইতেই সন্তুষ্ট। কোনওক্রমে রান্নাঘরে ঢুকতে পারলে সেই মাঝরাতেই হাপুসহুপুস করে খানিক পায়েস খেয়ে নিলে।
কোনও ইজ্জত ছিল না তাদের। চরিত্রে আত্মসম্মান বোধটাই অনুপস্থিত। সেকালের চোর ধরা পড়লে গণপিটুনিতে মরত না। ভোর হওয়ার আগেই চড়চাপড় দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হত। সে ছিল শান্তির কাল।

একদিন মাঝরাতে চোর এসেছে! জ্যাঠামশাইয়ের ঘরে। খাটের কাছে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখছে, ঘুম কতটা গভীর! জ্যাঠামশাইয়ের ভরাট মুখে অসাধারণ এক জোড়া গোঁফ ছিল, ইংরেজিতে। যাকে বলে, 'হ্যান্ডলবার মুস্ট্যাশ।' গোঁফ জোড়া দেখে চোর মুগ্ধ। আলতো করে টেনেছে।
জ্যাঠামশাই ঘুমোতে-ঘুমোতেই বলছেন—আসল, আসল। বিরক্ত না করে ডিবেতে কাশীর জর্দা দেওয়া পান আছে, দুটো খিলি মুখে পুরে চলে যা।

চোর বললে—কত্তা, রাতে খাওয়াই জোটেনি। শুধু-শুধু পান খেয়ে কী করব!

খুব রেগে গিয়ে জ্যাঠামশাই বলছেন—হতচ্ছাড়া! রাতের খাবারটাও জোটাতে পারিস না, চুরি করতে এসেছিস!
বালিশের তলা থেকে একটা পাঁচ টাকার নোট বের করে চোরকে দিয়ে বললেন—নে ধর।
পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে চোখ বুজিয়ে।

চোর বললে কত্তা, মাথাটা একটু তুলুন না, দেখি বালিশের তলায় আর কী আছে!

জ্যাঠামশাই বললেন—সমান দুভাগ করেছি। বউয়ের তবিল থেকে দশ ঝেড়েছিলুম, তোর পাঁচ আমার পাঁচ। একেবারে ন্যায়বিচার। ওই পাঁচ-ও দিতে পারি যদি আমার পা-দুটো টিপে দিস!

সে আমি দিচ্ছিখন। তোমার ঘরে খাবারদাবার কিচ্ছু নেই?

গাছপাকা দুটো আতা আছে তাকে। খবরদার ঘরের মেঝেতে বিচি ফেলবি না।

রাত আড়াইটের সময় আতা খেয়ে চোর পা টিপতে বসল। আবার জিগ্যেস করল কাল কী এই টাইমে আসব?

দুঃখ মেশানো গলায় জ্যাঠামশাই বললেন—সুখের দিনের আজই শেষ রাত্তির। কাল সকালেই ফিরে আসছেন বাপের বাড়ি থেকে। তুই বরং একটা কাজ করতে পারিস, এক ফাঁকে এসে বলে যেতে পারিস, টাকা দশটা তুই নিয়েছিস।

চোর বলল—মাপ করো কত্তা। মা ঠাকুরুনকে আমরা খুব চিনি। টাকা তুমি ফিরিয়ে নাও।
আর আতা!

কত্তা! সে তো খেয়ে ফেলেছি। এই লাইটারটা কাল চুরি করেছিলুম। তুমি রাখো। যা হয় কোরো।

২.

আর একদিন এক চোর মাঠের ওপর দিয়ে দৌড়োচ্ছে, পেছন-পেছন আমার বলশালী কাকাবাবু ছুটছেন, ব্যায়ামবীর। তার পেছনে আমরা। ওপাশে চোর মুখ ঘুরিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে, এপাশে আমার কাকাবাবু। মাঝখানের ব্যবধান হাত পঞ্চাশ। এতক্ষণ হচ্ছিল দৌড়ের অলিম্পিক। এবার রেস্টলিং।
দুজনেই দুজনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে।

চোর বলছে–কী হল! হিম্মত থাকে এসে ধরো।

কাকাবাবু বললেন—হিম্মত থাকে তো তুই আয় না।

চোর বললে—কোনও দিন শুনেছ, চোর এসে সাধ করে ধরা দিচ্ছে! চোর সবসময় পালায়, আর চোর পালালে তোমাদের বুদ্ধি বাড়ে।

- তা পালা, থামলি কেন হঠাৎ! চোর আর ছুঁচো এই দুটোকে আমি ধরি না। আমার ঘেন্না করে। নে নে, ছোট-ঘোট।

- আর কত ছুটব! প্রায় এক মাইল হল, সেই গজার মোড় থেকে দৌড় শুরু হয়েছে।

কাকাবাবু বললেন—তুই তো ব্যাটা আচ্ছা অধার্মিক। চোরের ধর্মই হল পালানো।

- এতক্ষণে এটা তো বুঝেছ, আমি তোমার চেয়ে জোরে দৌড়োই। ইচ্ছে করলে পালাতে পারি।

- তা পালাচ্ছিস না কেন?

- কী করে পালাব? তোমাদের বাগানে কৃষ্ণকলির ঝোপে আমার মাল পড়ে আছে যে!

- তোর চোরাই মাল আমাদের বাগানে! নিয়ে যা, নিয়ে যা।

চোর আর কাকাবাবু দুজনে গল্প করতে-করতে ফিরে এলেন, যেন হলায়-গলায় বন্ধু। দাওয়ায় বসে কাকাবাবু বললেন—আয় বোস, একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক। দৌড়টা বেশ ভালোই হল কী বল? তামাক সাজতে পারিস?

- তা আর পারি না!

- যা, ওইধারে সব আছে। টিকে, দেশলাই, দুটো-কো, অম্বুরি তামাক। ভালো করে সেজে আন।

দুজনে আয়েস করে তামাক খেতে লাগলেন। ওদিকে ভোর হতে শুরু করেছে। এই চোর কালু কিছুদিনের মধ্যেই কাকাবাবুর ব্যবসায় কাকাবাবুর ডান হাত হয়ে গেলেন। আরামবাগে। কাকাবাবুর বিরাট কাপড়ের আড়ত। কালীবাবু বিশ্বাসী ম্যানেজার। ভীষণ খাঁটিয়ে।

বেশ কিছুদিন পরে কাকাবাবু বললেন কালু, এইবার একটি ভালো মেয়ে দেখে তোর বিয়ে দেবো।

কালু বলল—আবার! ওই চক্করে আর পা দিচ্ছি না।

- সে কী রে! বিয়ে করিছিলি? বউ কোথায়?

- চুরি হয়ে গেছে।

এখন তাই ভাবি, এই হাইটেক যুগে এইরকম সৎ চোর আর দেখতে পাওয়া যাবে না। আর রসিক গৃহস্থ! আমার দাদু, চোরের কাঁঠাল কাঁধে করে চোরের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন!
 
দারুণ লেখা এমনটা সঞ্জীব বাবুই পারেন
 
গল্পটি সংগ্রহের জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। ভীষণ আনন্দ পেয়েছি গল্পটি পড়ে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top