অলি আরবি শব্দটির আক্ষরিক অর্থ অভিভাবক। যদিও অলি বলতে সাধারণত অধ্যাত্মসাধক বা দরবেশকে বোঝায়। সুফিবাদে অলি বলতে শুধু কামিল দরবেশকেই বোঝানো হয়ে থাকে, যদিও অলিদের মর্যাদারও তারতম্য আছে। সুফিদের মতে, অলি হতে হলে শরিয়ত ও তরিকত ধারায় ব্যুৎপত্তি ও অনুশীলন অপরিহার্য।
শরিয়ত ও তরিকত উভয়ই পালন করে যিনি মারিফত ও হকিকত লাভ করেন, তিনিই হচ্ছেন যথার্থ অলি। যিনি আল্লাহভীরু এবং আল্লাহর উপদেশ-নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে চলেন, তিনিই অলি। কোনো কোনো সময় আল্লাহর কৃপায় তাঁর কেরামত প্রকাশ পায়, যদিও তিনি তা গোপন রাখতেই সচেষ্ট থাকেন। সাধনার দ্বারা পুরুষের মতো স্ত্রীলোকও অলি হতে পারেন। সুফিদের বিশ্বাস, আল্লাহর পৃথিবীতে সব সময়ই অলি বিরাজমান। সব অলি নিজেকে প্রকাশ করেন না। কেউ কেউ অজ্ঞাতবাসে থাকতে পছন্দ করেন। তরিকতপন্থীদের অনেকে মনে করেন, বিশ্বের আধ্যাত্মিক প্রশাসনের দায়িত্ব অলিদের ওপর ন্যস্ত।
বাংলাদেশের অলি ও আউলিয়ারা বেশির ভাগই চিশতিয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়া তরিকার অনুসারী। কালব বা আত্মার উন্নতিকল্পে অলিরা জিকির, নির্জনতা, মুরাকাবা, তওবা ও তাওয়াক্কুলের ওপর জোর দেন। আধ্যাত্মিক সমুন্নতি অনুযায়ী অলিদের স্তরভেদ আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ অলি যিনি, তিনি হচ্ছেন গাওস, তার পরের স্থান যাঁর, তিনি কুতুব। আবদুল কাদের জিলানিকে এ দেশে অনেকে গাওসুল আজম বলে শ্রদ্ধা করেন।
সূত্র: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ‘যার যা ধর্ম’, পৃষ্ঠা ৩৩, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা।
* মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা