বর্ষা ঋতু—সৃষ্টি, উর্বরতা, শক্তি, সৃজনশীলতা ও জীবনের প্রতীক। বারি বা পানি জীবন ও প্রাণের আদি উৎস। ভূপৃষ্ঠের চার ভাগের তিন ভাগই পানি। পানি জমাট অবস্থায় রয়েছে মেরু অঞ্চলে, বায়বীয় বা বাষ্পীয় অবস্থায় রয়েছে মেঘমালায় এবং পানির তরল অবস্থার বিরাট মজুত আছে সাগর ও মহাসাগরে। এই সাগর শব্দটি পবিত্র কোরআনে ২৫টি সুরায় ৪০ বার রয়েছে।
পৃথিবী বাসযোগ্য হওয়ার জন্য পানি ও নদ-নদীর অপরিহার্যতা বিষয়ে আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘বল তো! কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তার স্থিতির জন্য পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন? অতএব, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৬১)।
মেঘ ও বৃষ্টিপাত সম্পর্কে কোরআন মাজিদে রয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ দ্বারা মৃতপ্রায় ধরিত্রীকে পুনর্জীবিত করেন; তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান; এতে ও বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং আকাশ পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৬৪)। ‘আর তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২)।
বৃষ্টিপাত আল্লাহর নিয়ামত। সময়মতো সঠিক পরিমাণে বৃষ্টি হলে চাষবাসে, ফল-ফসল ও শস্য উৎপাদনে সহায়ক হয়। বৃষ্টির মিষ্টি পানি মৎস্য প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি তথা বন্যা ও খরা মানুষের কর্মফল। মানুষ যদি প্রকৃতির সঙ্গে সঠিক আচরণ করে, প্রকৃতি কখনো বিরূপ আচরণ করবে না
ঝড়ঝঞ্ঝা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহা গভীর সমুদ্রতলের অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, গাঢ় অন্ধকার স্তরের ওপর স্তর, যদি একজন মানুষ হাত বাড়ায় তা আদৌ সে দেখতে পাবে না, আল্লাহ যাকে আলো দান না করেন তার জন্য কোনো আলো নেই।’ (সুরা-২৪ নূর, আয়াত: ৪০)।
নদী ও সাগর বিষয়ে এবং মিষ্টি পানি ও লোনাপানি সম্বন্ধে কোরআন কারিমে বিশদ আলোচনা রয়েছে, ‘তিনি প্রবাহিত করেন দুই সাগর যারা পরস্পর মিলিত হয়; এ দুটির মাঝে রয়েছে এক অন্তরায়, তারা একের ওপর আর এক আপতিত হয় না। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? এ উভয়ের মধ্য হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? এবং এই সমুদ্রে যাওয়া-আসা বড় পর্বতসদৃশ জাহাজগুলো তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন।’ (সুরা-৫৫ আর-রহমান, আয়াত: ১৭-২৪)। ‘তিনিই দুই সাগরকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয়, মিষ্ট এবং অপরটি লোনা এবং দুঃসহ; উভয়ের মধ্যে তৈরি করেছেন এক অন্তরাল এবং এক নিষেধ দেয়াল (অনতিক্রম্য)।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৫৩)।
সাগরের নৌযান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি কি দেখ না যে ধরণীপৃষ্ঠে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশের মেঘমালাকে স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্ঠে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৬৫)।
সাগর জলের নিয়ামতরাশি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা মৎস্য খেতে পারো এবং তা থেকে বের করতে পারো (মণি-মুক্তা) অলংকারাদি, যা তোমরা পরিধান করো। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে তা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পারো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১৪)। ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমুদ্রের (মৎস্য) শিকার ও তার খাদ্য; তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগের জন্য।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৯৬)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে প্রশ্ন করল, “হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সমুদ্র বিহার করি। আমাদের সঙ্গে যৎসামান্য পানি থাকে। তা দিয়ে যদি আমরা অজু করি, তাহলে পিপাসার্ত হয়ে যাব। আমরা কি তাহলে সাগর থেকে অজু করব?” রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “এর পানি পবিত্র এবং এর মৃত হালাল।”’ (তিরমিজি, হাদিস: ৬৯; আবু দাউদ, হাদিস: ৮৩)।
বৃষ্টিপাত আল্লাহর নিয়ামত। সময়মতো সঠিক পরিমাণে বৃষ্টি হলে চাষবাসে, ফল-ফসল ও শস্য উৎপাদনে সহায়ক হয়। বৃষ্টির মিষ্টি পানি মৎস্য প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি তথা বন্যা ও খরা মানুষের কর্মফল। মানুষ যদি প্রকৃতির সঙ্গে সঠিক আচরণ করে, প্রকৃতি কখনো বিরূপ আচরণ করবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জলে-স্থলে যে বিপর্যয়, তা মানুষের হাতের কামাই।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম