What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আজও অমলিন ঠাকুরবাড়ির সাজ (1 Viewer)

I8TXaJ6.jpg


বাঙালি নারীর জাগরণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীর নাম৷ শুধু শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনেই নয়—ফ্যাশন এবং স্টাইলেও এই বাড়ির নারীরা ছিলেন অগ্রগামী৷ ঠাকুরবাড়ির এমন পাঁচ নারী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী, কাদম্বরী দেবী, ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ও সরলা দেবী চৌধুরানীকে নিয়ে পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষে নকশার এই আয়োজন৷ যাঁদের পোশাক—সেই পোশাক পরার ধরন, স্টাইল পরবর্তীকালে বাঙালি নারীর ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে। আজও সেই ধারা অমলিন। আজ ২৫ বৈশাখ উপলক্ষে নকশায় আগে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

‘বাইরে বেরোবার জন্যে জ্ঞানদানন্দিনী বাঙালি মেয়েদের দিলেন একটি রুচিশোভন সাজ৷ অবশ্য দেশি ধাঁচে শাড়ি পরা যে খারাপ তা নয়, তবে তাতে সৌষ্ঠব ছিল না৷ বোম্বাইয়ে গিয়ে তিনি প্রথমেই জবরজং ওরিয়েন্টাল ড্রেস বর্জন করে পারশি মেয়েদের শাড়ি পরার মিষ্টি ছিমছাম ধরনটি গ্রহণ করেন৷ নিজের পছন্দমতো একটু অদলবদল করে জ্ঞানদানন্দিনী এই পদ্ধতিটাকেই বজায় রাখলেন৷’(ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, পৃষ্ঠা-২২)

LLt7aI8.jpg


ব্লাউজের হাতায় থাকতো নকশা, মডেল: মৌসুম

Vd7jdug.jpg


সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সেই সময়ে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা দেখিয়েছিলেন আলোর পথ

চিত্রা দেবের লেখা ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল বইটি থেকে জানা যায়, বাঙালি মেয়েদের সাজপোশাক নিয়ে সে যুগে তেমন ভাবনা-চিন্তা ছিল না কারও৷ মেয়েরা তেমন একটা ঘরের বাইরে বের হতেন না৷ বাড়িতে শুধু একটা শাড়ি জড়িয়ে রাখতেন গায়ে৷ শীতকালে তার ওপরে জড়িয়ে নিতেন চাদর৷ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় ছেলে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী ছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী৷ কর্মসূত্রে সত্যেন্দ্রনাথ থাকতেন মুম্বাইতে (তখনকার বোম্বাই)৷ জ্ঞানদানন্দিনী সেখানে যাওয়ার আগে এক চিঠিতে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁকে রুচিশীল পোশাক পরে আসার কথা জানান৷ সেই সময় জ্ঞানদানন্দিনী ফরাসি এক দোকান থেকে বানিয়ে নেন ওরিয়েন্টাল ড্রেস৷ ফ্যাশনেবল এই পোশাক পরে অস্বস্তি অনুভব করছিলেন তিনি৷ তখন থেকেই বাঙালি মেয়েদের সাজপোশাক নিয়ে ভাবতে শুরু করেন জ্ঞানদানন্দিনী৷ মুম্বাই থেকেই জ্ঞানদানন্দিনী শিখে এসেছিলেন আধুনিক কায়দায় শাড়ি পরার ঢং৷ কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরার এই কায়দাটি ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা স্বচ্ছন্দেই গ্রহণ করেন৷ পরবর্তীতে শাড়ি পরার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনো জ্ঞানদানন্দিনীর বাঁ দিকে আঁচল রাখার ঢং বদলায়নি এতটুকুও৷

anEuoIt.jpg


আধুনিক কায়দায় শাড়ি পরার ঢং ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা শেখে জ্ঞানন্দিনীর থেকে

দীর্ঘদিন ধরে রবীন্দ্রচর্চা করছেন সাংবাদিক ও লেখক আবুল মোমেন৷ তিনি জানালেন, সে সময় আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলে মানুষের মধ্যে ছিল সেলাই ছাড়া কাপড় পরার চল৷ শরীরে বাতাস চলাচলের সুবিধার জন্য এ ধরনের কাপড় পরা হতো৷ বাঙালি সমাজে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরাই প্রথম ঘরের বাইরে কাজে যেতে শুরু করেন৷ চলাফেলার স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি রুচিশীলতার বিষয়টি বিবেচনা করে তাঁরা শাড়ি পরার ধরনে আনেন নতুনত্ব৷
শুধু শাড়ি পরার ধরনেই নয়, জ্ঞানদানন্দিনী শুরু করলেন শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট পরার প্রচলন৷ নানা ধরনের লেস জুড়ে দেওয়া হতো এই জ্যাকেটে৷ রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘বিলিতি দরজির দোকান থেকে যত সব ছাঁটাকাটা নানা রঙের রেশমের ফালির সঙ্গে নেটের টুকরো আর খেলো লেস মিলিয়ে মেয়েদের জামা বানানো হতো৷’ শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরা এই জামা বা জ্যাকেটই পরবর্তী সময়ে ব্লাউজ নামে পরিচিত হয়৷
বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক লেখিকা ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী৷ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশম এই কন্যার সঙ্গে জ্ঞানদানন্দিনীর বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল৷ সব কাজেই স্বর্ণকুমারী সহযোগিতা করতেন তাঁকে৷ জ্ঞানদানন্দিনীর মতো স্বর্ণকুমারীর জীবনযাপনে ছিল রুচিশীলতার ছোঁয়া৷ (সূত্র: ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, পৃষ্ঠা: ৩০)। শুধু ঠাকুরবাড়ির নয়, সেই সময় বাঙালি মেয়েদের জীবনযাপনে বেশ পরিবর্তনের জোয়ার এনেছিলেন এ দুই নারী৷

জ্যোতিরিন্দ্র সেখানে বেহালা বাজাতেন। আর রবীন্দ্রনাথ ধরতেন চড়া সুরের গান৷ ‘হু হু করে দক্ষিণের বাতাস উঠত দূর সমুদ্র থেকে৷ কিশোর রবীন্দ্রনাথের রোম্যান্টিক সৌন্দর্য চেতনাকে জাগাবার জন্য এই পরিবেশ, এই সৌন্দর্যদৃষ্টি ও কল্পনার একান্ত প্রয়োজন ছিল৷’ (ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, পৃষ্ঠা:৪৯)।

9LScaZl.jpg


ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের ছিল নিজস্ব স্টাইল ধারা

এ প্রসঙ্গে আবুল মোমেন বললেন, রবীন্দ্রনাথের মানসপটে কাদম্বরী বুনে দিয়েছিলেন সৌন্দর্যবোধের বীজ৷ কাদম্বরীর নাগরিক রুচিশীলতা মুগ্ধ করত কিশোর রবীন্দ্রনাথকে৷
মা জ্ঞানদানন্দিনীর মতো মেয়ে ইন্দিরা দেবীর উপস্থিতিও চারিদিক আলোকিত করে তুলত৷ রবীন্দ্রসংগীতের ক্ষেত্রে ইন্দিরার ছিল বিশেষ অবদান৷ ইন্দিরার ব্যক্তিত্বে ছিল কমল হিরের দীপ্তি৷ যার ছাপ তাঁর সাজসজ্জা-বাক্যবিনাস-ঘর সাজানো থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতনের আশ্রম কুটিরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল৷ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত আদর্শ জীবনটিকে তিনি তুলে ধরেছিলেন সবার সামনে৷ (সূত্র: ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল)

স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্বর্ণকুমারীর মেয়ে সরলা দেবী৷ পোশাক-আশাকেও ছিল তার রেশ৷ কোনো উৎসবে যেতে হলে সরলা স্বদেশি বেশভূষায় সেজে, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ পরিচালনা উপলক্ষে পাওয়া স্বদেশি মেডেলটি দিয়ে তৈরি করা ব্রোচ কাঁধের কাছে লাগিয়ে যেতেন৷ অপরূপ বেশে তাঁর অনুপম লাবণ্য সবাইকে মুগ্ধ করত৷ দেশের লোকের মনে স্বদেশিয়ানা আনার জন্য বাঙালি মেয়েদের মধ্যে টিপ পরা, আলতা পরার চল শুরু করেন সরলা দেবী৷
সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সেই সময়ে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা দেখিয়েছিলেন আলোর পথ৷ রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জানালেন, সমস্ত বাঙালি মেয়ের মনেই এই বাড়ির মেয়েরা বুনে দিয়েছিলেন সাহসিকতার বীজ৷ সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মেয়েদের নিজস্ব জীবনধারা, যা নিজস্ব সীমার গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বময়৷
 
Very informative post. The contribution of thakurbari towards complete enlightenment of the society is remarkable.
 
ইতিহাস পুরনো হলেও ঠাকুরবাড়ির শাড়ি বা স্টাইল এখনো নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে বহুগুন!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top